নিস্বার্থ ভালোবাসা পর্ব ১

ডক্টরের সামনে বসে আছে শুভ্রতা। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে জানতে পেরেছে সে কোন দিন মা হতে পারবে না। হাতের রিপোর্টটা শক্ত করে চেপে ধরে টলমল পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।

শুভ্রতা:৩ দিন পর আমার বিয়ে রিদের সাথে। আমি কী করে রিদকে বিয়ে করবো? রিদ আমাকে বিয়ে করে কখনো সুখী হতে পারবে না।

একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসে শুভ্রতা। বাসায় ঢুকেই রিদের সামনে পড়ে যায়।

রিদ:শুভ্রতা কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

শুভ্রতা:বিয়ে করছো বলে কী আমাকে কিনে নিয়েছো? কোথায় যাব কতক্ষণ থাকবো সব তোমাকে বলতে হবে।

রিদ: আজব একটা সিম্পল কোয়েশন করছি তাতে এতো রেগে যাওয়ার কী হয়েছে?

শুভ্রতা: আমি রুমে যাচ্ছি রেস্ট নিবো কেউ যাতে ডিস্টার্ব না করে।

শুভ্রতা হনহন করে রুমে এসে অনেক জুড়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে।

শুভ্রতা: আমি তোমার সাথে এমন করতে চায়নি। কিন্তু আমার যে কিছু করার নাই তোমাকে নিজের থেকে দূরে সরাতেই হবে। তুমি আমার সাথে কখনো সুখী হতে পারবে না। নিজের স্বার্থের জন্য কী করে ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবন অসুখী দেখবো। আমাকে শক্ত হতেই হবে।

এইদিকে

রিদ: মামুনি শুভ্রতার আবার কী হলো এমন বিহেভ করলো কেনো?

মামুনি: চিন্তা করিস না রিদ বিয়ের আগে মেয়েদের মনে একটু ভয় কাজ করে। হয়তো এই ভয় থেকে তোর সাথে এমন বিহেভ করছে।

(শুভ্রতা পুরো নাম শুভ্রতা খান। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। রিদ তার কাজিন। ছোট বেলায় এক্সিডেন্টে শুভ্রতার বাবা-মা মারা যায় তারপর থেকে রিদের বাবা-মার কাছে থাকে। রিদের বাবা-মা নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করছে শুভ্রতাকে। রিদ আর শুভ্রতার বিয়েটা পারিবারিকভাবে ঠিক হলেও তারা দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে।)

শুভ্রতা ১ ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচছিল তখন কেউ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তার বুঝতে অসুবিধা হয়নি এটা কে। কারণ এই স্পর্শ যে তার চেনা।

শুভ্রতা: আমাকে ছাড়ো রিদ ভাইয়া।

রিদ: উহু।

রিদ শুভ্রতার চুলে মুখ ডুবিয়ে দেই। শুভ্রতা ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করতে থাকে কিন্তু রিদের ছাড়ার কোনো নামই নেই।

শুভ্রতা: রিদ ভাইয়া আমার কাছে থাকলে আমি দুর্বল হয়ে যাব। না না আমাকে দুর্বল হলে চলবে না। নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে হবে। (মনেমনে)

শুভ্রতা নিজের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আচমকা এমন ধাক্কার জন্য রিদ প্রস্তুত ছিল না তাই দু কদম পিছিয়ে যায়। রিদ অবাক হয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছে জেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে।

শুভ্রতা: ছুঁবে না আমাকে। আমার থেকে ১০০ হাত দুরে থাকবে। তোমার ছোঁয়া তোমার উপস্থিতি আমার অসহ্য লাগে।

রিদের চোখে পানি টলমল করছে তার শুভ্রতার কাছে তার ছোঁয়া অসহ্য লাগছে। রিদ শুভ্রতার দুই হাত ধরে বলে,

রিদ: এই শুভ্রতা তুই এমন করছিস কেনো? কী হয়েছে তোর? দেখ ৩ দিন পরে আমার আর তোর বিয়ে।

শুভ্রতা: কীসের বিয়ে আমি তোমাকে কোনো বিয়ে-টিয়ে করছি না। যেখানে তোমার ছোঁয়া আমার অসহ্য লাগে সেখানে তোমাকে বিয়ে করা যাস্ট ইম্পসিবল।

রিদ এবার শুভ্রতার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।

রিদ: আমার ছোঁয়া তোর অসহ্য লাগলেও তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আমাকেই বিয়ে করতে হবে।

শুভ্রতা: কেনো আমার মতো একটা এতিম মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে চাইছো?

রিদ এবার নিজের রাগ আর কনট্রোল করতে পারলো না শুভ্রতাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়। ছোটবেলা থেকেই শুভ্রতাকে কেউ এতিম বললে রিদ অনেক রেগে যায়।

রিদ: তুই এতিম বা একশ বাচ্চার মা হ তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি জানি তুই শুধু আমার।

রিদ রেগে হনহন করে শুভ্রতার রুম থেকে চলে যায়। শুভ্রতা ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করে।

শুভ্রতা: রিদ ভাইয়া আমি ১০০ বাচ্চার মা কী করে হবো আমি তো কোনোদিন মাই হতো পারবো। আমার যে সেই ক্ষমতা নেই আমি একজন অসম্পূর্ণ নারী।

————————–

শুভ্রতা: বাবাই (রিদের বাবা) আর মামুনি (রিদের মা) তোমাদের আমার কিছু বলার আছে।

( রিদের বাবা রাইহান খান আর মা আনিকা খান)

রাইহান: কী বলবি বল?

শুভ্রতা: আব ইয়ে

আনিকা: কী আমতা আমতা করছিস বল?

শুভ্রতা: আমি রিদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই না।

আনিকা: শুভ্রতা তুই এসব কী বলছিস? তুই মজা করছিস তাই না।

শুভ্রতা: আমি কোনো মজা করছি না।

আনিকা: তুই তো রিদকে ভালোবাসিস তাহলে বিয়ে করবি না কেনো?

শুভ্রতা: আমি রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসি না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

রিদ এতক্ষণ ধরে নিরব দর্শক হয়ে সব কথা শুনছিলো। এবার সোফা ওঠে দাঁড়িয়ে
শুভ্রতার হাত ধরে টানতে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে এসে একটা রুমে এনে ফ্লোরে ছুড়ে মারে।

চলবে….

#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here