কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ৬+৭

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৬.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে আলভী।অনেক সময় পেরিয়ে গেছে তুতুলের দেখা নেই।রিঝের সাথে গেলো যে এখনো এলো না।এতো দেরি করার তো কথা না।তবুও দেরি!!অপেক্ষা শব্দটা একদম বিরক্তির।আলভীর বিরক্তির সাথে ভয়ও কাজ করে।তার মতে, তার বোন বাচ্চা,ছোট।তাই সব সময় চিন্তিত সে।ছোট থেকে বোনকে সে অনেক বেশি ভালোবাসে।জন্মের পর থেকে মায়ের চাইতে সেই বেশি দেখাশুনা করেছে তুতুলের।তুতুল যখন জন্মায় তখন তার মা অনেক অসুস্থ ছিলো।আলভীর এখনো মনে আছে তুতুল যখন খুব ছোট তখন দোলনা থেকে চুরি করে তাকে নিজের রুমে নিয়ে আসতো সে।সে নিজেই তুতুলের থেকে বেশি বড় না।তবুও তুতুলকে নিয়ে তার ঘুমাতে ভালো লাগত।তুতুলের নামটাও তার দেওয়া।ছোট থাকায় তুতুলের শরীর একদম তুলতুলে ছিলো।তাই আলভী ওর নাম দেয় তুতুল।অদ্ভুত ভাবে তুতুল কাঁদলে আলভীর খুব কান্না পায়।খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।কেনো যেনো চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পরে।সে জানে না।এ যেনো অন্যরকম অনুভুতি।মায়ার অনুভুতি।

শীতকাল প্রায় চলে এসেছে।রাস্তায় এখন কুয়াশা খেলা করে।দূর থেকে হাত ধরে দু’জন মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখে আলভী সচেতন চোখে তাকালো।১০ টায় তার অফিস।৯ টা প্রায় বাজে বাজে।এর মাঝে তুতুলের চিন্তা মাথায় ঘুরছে।আলভী একটু এগিয়ে গেলো।রিঝ তুকুলের একটা হাত ধরে নিয়ে আসছে।তুতুল পা ঝারছে।পায়ে হালকা ব্যথা হচ্ছে তার।রিঝ তুতুলের হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আছে।তুতুল মাঝে মাঝেই অসহ্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।রিঝ এতে পাত্তা দেয় না।সামনের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে হাঁটছে সে।আলভী দৌড়ে আসে।তুতুলকে নিজের দিকে টেনে নেয়।হাতের রক্ত দেখে আর্তনাদ করে বলে,
“ এগুলো কিভাবে হয়েছে??তুই ব্যথা পাইলি কিভাবে??”

রিঝ কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,
“ বান্দরের মত লাফালাফি করলে আরো অনেক ব্যথা কপালে আছে।”

আলভী বিকট রাগ নিয়ে রিঝের দিকে তাকালো।রিঝ চোয়াল শক্ত করে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে দাড়ালো।ভাবটা এমন যেন সে যা বলেছে সত্য বলেছে,মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসে না।তুতুলের দিকে কটকট চোখে তাকিয়ে আছে সে।আলভী ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“ রিঝ তোকে আমি আমার বোনের দায়িত্ব দিয়েছি।তোর ভরসায় ওকে তোর সাথে দিলাম।ও ব্যথা পেলো কিভাবে??তুই কোথায় ছিলি??দায়িত্ব না নিতে পারলে নিলি কেনো ওকে??”
“ তোর বোনের দায়িত্ব নিয়েছি ভালো কথা।কিন্তু ওর সাথে যে ১২০টা শয়তান আছে ওদের দায়িত্ব তো আর আমি নিয়ে যাই নি।সো এর জন্য আমাকে দোষ দেওয়া মোটেও উচিত না আলভী।”
“ একদম আমার বোনের নামে বাজে কথা বলবি না।”
“ স্যালারি দেছ??”
“ মানে কি??”
“ মাসে কয় টাকা দেছ??যে তোর বোনের নামে উল্টাপাল্টা কথা বলবো??আদরে আদরে বান্দর করে রেখেছিস।যতসব।ভাই পৃথিবীতে কি তোর বোন একাই আছে??আর কারো বোন নেই??”
“ হ্যাঁ আমার বোন একাই আছে।আর কারো থাকলে আমার কি??আমার তো একটাই না!”
“ আমাদের তো দুই তিন চারটা করে না??তোর বোন ফাইজলামিতে সেরা।শয়তান তো মনে হয় রঞ্জে রঞ্জে ঘুড়ে।

তুতুল চোখ তুলে রিঝের দিকে তাকায়।রিঝের চোখ কঠিন।সাথে সাথে আবার ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয় সে।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বলল,
“ দেখলি ভাইয়া আমার নামে কি সব বলে উনি।উনি কত খারাপ দেখ??”
“ হ্যাঁ।আমি যে খারাপ এটা আমি জানি।কিন্তু তুমি যে শয়তানের নানী এটা তোমার ভাই জানে??জানলে অবশ্যই আমার দোষ দিতো না।”

আলভী তেড়ে আসে।আবার থেমে যায়।বুঝে রিঝের মাথা গরম।তা না হলে সে তর্ক বিতর্ক করতো না।রিঝ শান্ত মেজাজে চুপ থাকা পছন্দ করে।কিন্তু রাগ উঠলে কি করে সে নিজেও জানে না।আলভী রিঝের সামনা সামনি দাড়িয়ে শান্ত ভাবে বলে,
“ রিঝ ভালো হবে না বলে দিলাম।আমার বোনরে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবি না কয়বার বলবো??।”

রিঝ গটগট করে হেঁটে সামনে চলে যায়।কি মনে করে আবার পিছনে এসে আলভীর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।আলভী প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ ফিরে এলি কেনো??”

রিঝ কপালে ভাজ ফেলে কাঁটা ভ্রু কুঁচকে আরো কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।এরপর বলে,
“ হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিস।আর ব্যথার মেডিসিন একটা খাওয়াবি।হাতে অনেক ব্যথা হবে কিছুক্ষণ পরে।পিছঢালা রাস্তায় পরেছে তো।সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন কথা পারলে লাফালাফি ধাপাধাপি বন্ধ করতে বল।”
“ আমার তুলতুল মোটেও এমন না।তুই জানোছ না ওর স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি সবাই বলে ও অনেক শান্ত।ভদ্র।চুপচাপ থাকে।এমন কি আমাদের আত্নিয়স্বজনরাও বলে তুল মাটির মত।শুধু তুই ওর নামে বিচার দিলি।তার মানে তুই ভুল জানোছ।আমার বোন বাসায় একটু দুষ্টামি করে কিন্তু অন্যকারো সাথে না।”

আলভীর কথা শুনে রিঝ দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নেয়।বিড়বিড় করে বলে,
“ ওর সব লাফালাফি ঝাপাঝাপি আমার সামনেই কেনো যে হয়!!”
“ কি বিড়বিড় করোছ??”
“ ভাবি তোর বোন কত ভালো!!ওয়াও!”

তুতুলের দিকে তাকাতেই তুতুল ডান চোখ টিপ মারে।রিঝ ভড়কে যায়।চশমা ঠিক করে কঠিন চোখে তাকায় তুতুলের দিকে।তুতুলে চোখ নামিয়ে নিচে রাখে।রিঝ নিজের গেটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাটে।ঠোঁট কামড়ে একটা গোপন হাসি হাসে।রিঝের এই হাসি তার সব হাসির থেকে ভিন্ন।অদ্ভুত!একদম একান্তে নিজের হাসি তার।এই হাসি সে সব সময় গোপনে হাসে।কিছু গোপনীয়তা গোপন অনুভুতির হয়।একদম নিজের আপন অনুভুতি।
রিঝ তুতুলের সম্পর্ক টম এন্ড জেরির মত দেখায়।তবুও সেটা নয়।তুতুল জেরি হতেই পারে।কিন্তু রিঝ টম নয়।তুতুলের সাথে কোমড় বেঁধে সে ঝগড়া করতে চায় না।কিন্তু তুতুল যেনো অদ্ভুত আনন্দ পায় রিঝকে বিরক্ত করতে পারলে।এই আনন্দ একদম আলাদা।তাই সব সময় নতুন নতুন পদ্ধতি খুঁজতো রিঝকে জ্বালানোর জন্য।কিন্তু ইয়াজ নামের ব্যক্তি তুতুলকে অদ্ভুত তৈরি করে ফেলেছে।এই ব্যক্তির সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেও তুতুল আগের মত ছিলো।কিন্তু তারপরই পরিবর্তন।যা এখন ঠিক হয়েছে।আগের তুতুলকে পেয়েই হয় তো এই গোপন হাসি।
তুতুল মনে মনে দারুন খুশি।রিঝকে সে আজকে অনেক বিরক্ত করেছে।সকালের ঘুম নষ্টের অভিযোগে এগুলো কমই পড়ছে বলে তার মনে হচ্ছে।আরো মজা দেখাতে ইচ্ছে করছে।তুতুল ভাইয়ের বুক ঘেষে মাথা রাখে।আলভী মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উপরে নিয়ে আসে।
_______________
রহমান বাড়ির সবাই ডাইনিং রুমের টেবিলে বসে সকালের ব্রেকফাস্ট করছে।সবাই খাবারে মনযোগী।কেউ একটা শব্দও মুখ থেকে বের করছে না।চামচ ছুরির টুং টুং শব্দটাও হচ্ছে না।নিঁখুত শব্দ বিহিন ভাবে যে যার খাবার শেষ করছে।খাবার টেবিলে কথা বলা একদম পছন্দ না শাহ আলম সাহেবের।রিঝও বাবার এই গুনে গুনি।সেও অকারনে কথা বলা পছন্দ করে না।আনাসের বলতে ইচ্ছে করে।এই খাবারের সময়ই সবাই এক সাথে হয়।তার মাঝে রিঝ মাঝে মাঝে নিজের রুমে খায়।রায়হান মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।হঠাৎ ছোট ফুটবল ছুটে আসে একদম রিঝের প্লেটে।রিঝ তীর্যক চোখে রায়হানের দিকে তাকায়।রায়হান মুখটা কালো করে মাথা নিচু করে।কানে ধরে একটা পা উচিয়ে বল,
“ স্যরি ছোট্ট মামা।”

রিঝ বাম হাতে চোখের চশমা ঠিক করে বলল,
“ কথায় কথায় কানে ধরবা না।কানে ধরা ভালো না।পা নামাও।আর ওয়াসরুমে যাও।ফ্রেস হও।ফুটবল পরে খেলবে।ঠিক আছে??”

রায়হান খুশিতে হেসে উঠে।ছোট মামা তেমন কথা বলে না।সব সময় মুখটা কঠিন করে ঘুরে বেড়ায়।মাঝে মাঝে হাসে।রিঝ মুচকি হেসে বলটা রায়হানের হাতে দেয়।রায়হান হাত দিয়ে ইশারা করে।রিঝ মাথা নিচু করে।টপ করে খোঁচা খোঁচ দাড়ি যুক্ত গালে চুমু বসিয়ে দেয় এক দৌড়।অর্ধেক পথে দাড়িয়ে বলে,
“ ছোট্ট মামা তোমার হাসি আমার অনেক প্রিয়।”

আবার দেয় দৌড়।রিঝ মুচকি হাসি দিয়ে উঠে পরে।খাওয়া আর হবে না।বেসিনে হাত ধুয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতে নেয়।আয়শা পিছনে ডাকে না।সামনে গিয়ে বললেন,
“ দাড়া।একটা গুরুত্বপূর্ন কথা ছিলো।”

রিঝ সোফায় বসতে বসতে বলল,
“ বলো।”
“ আনাসের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।”

আড়াআড়ি চোখে রিঝ আনাসের দিকে একবার তাকায়।আনাস ফোন নিয়ে বিজি এমন একটা ভাব করছে।যদিও তার কান সব শুনছে।রিঝ বলল,
“ দাভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখবা এতে আমার সাথে কিসের কথা বলার আছে।”
“ আরে অনেক কথাই আছে।তুই পরের সাপ্তাহে কবে সময় দিতে পারবি বল।”

রিঝ মৃদু হেসে শান্ত কন্ঠে বলল,
“ আমার অত সময় নেই।তোমরা যাও।আর মেয়েকে দেখার কি আছে।রুচিকাকে তো আমরা চিনি।”
“ হুম চিনি।তবুও দিন তারিখ ঠিক করার ব্যাপার আছে না।”
“ তো তুমি যাও,দাভাই তো যাবেই।বাবা আর আদ্রিকেও নিয়ে যাও।”

আয়শা ধীরেসুস্থে ছেলের পাশে বসলেন।তারপর বললেন,
“ তোকেও যেতে হবে।পরিবারের সব কাজে পরিবারের সব মানুষের থাকা প্রয়োজন।”

রিঝ মায়ের দিকে তাকালো।আয়শার চেহারায় অনেক ইচ্ছে।রিঝ উঠতে উঠতে বলল,
“ আচ্ছা কবে যাবে বলে দিও।আমি সময় বের করে নিবো।”

আয়শা খুশিতে গদগদ হয়।রিঝ ঝুকে বসে।যানে তার মা এখন কপালে চুমু আঁকবে।আয়শা ছেলের কপালে চুমু দিতেই রিঝ বেরিয়ে পড়লো।আজকের দিনে দুই’টা চুমু পড়েছে।আর না পড়লেই উত্তম।গাড়ির কাছে এসে দেখে আনাস আগে থেকে তার গাড়িতে উঠে বসে আছে।রিঝ কঠিন গলায় বলল,
“ দাভাই তুই আমার গাড়িতে কেনো??নিজের গাড়ি কই??”
“ আছে আছে।একটু উঠছি মাত্র।হামলাই পড়ছ কা??”

রিঝ রেগে যায়।তার দেরি হচ্ছে।দেরি শব্দ তার পছন্দ না।সব কাজ সঠিক সময়ে করাই তার পছন্দ।আজ এমনেই অনেক কথা বলেছে তাই আর ভালো লাগছে না।ভ্রু দু’টি তীক্ষ্ন করে বেঁকে নেয় সে।আনাস বলল,
“ আজকে সকালে কই ছিলি সেটা বল??”
“ কই ছিলাম মনে কি?প্রতিদিন যেখানে যাই সেখানে।দেখ দাভাই সর আমি অফিস যাবো।”
“ তো আমি কি বলছি যেতে দিবো না??আলবাদ যাবি।কিন্তু তুতুলের সাথে জগিং করতে গেলি কেন??”
“ ইচ্ছে হয়েছে তাই।”
“ আমারও এখন ইচ্ছে করছে তোর গাড়িটা নিয়ে লুচির সাথে দেখা করতে যেতে।সো বাই।”

রিঝ হতবাক ভঙ্গীতে দু’হাত উচিয়ে দাড়িয়ে থাকে।আনাস সাই করে গাড়ি নিয়ে উধাও।রিঝের আজকের দিনই খারাপ।ইচ্ছে করছে পৃথিবীকেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে।সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে।রিঝ বাইক নিয়েই অফিসের দিকে যায়।
____________________
সূর্য একদম তুতুলের মাথার উপরে।আজ দীর্ঘসময় বাদে সে ভার্সিটিতে এসেছে।দুইটা ক্লাস করেই চলে যাবে ভেবেছিলো।কিন্তু তা আর হলো না।সব ক্লাস করে তার এখন ক্লান্ত লাগছে।তার উপরে আলভীর খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং পড়েছে।তাই সে তুতুলকে নিতে আসতে পারে নি।তাই সে একা যাচ্ছে।রিক্সা খুজে পাচ্ছে না।তাই হাঁটছে।তুতুলের বন্ধুমহল শূন্য।ছোট থেকে একটু অন্যরকম হওয়াই তার তেমন কোনো বন্ধু নেই।আবার অনেকেই আছে।তবে সব ক্লাসের।প্রিয় কেউ নেই।স্কুল লাইফের সে ঘটনার পরে তুতুল খুব কম মিশতো মেয়েদের সাথেও।ছেলেদের সাথে তো সে মিশতোই না।সে হিসেবে তার বন্ধুমহল শূন্য।তুতুল রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাটঁছে।যখন মানুষ একা হয় তখন অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পরে।তুতুলেরও মনে পড়ছে।তাই মনটা খারাপ।

রিঝের বন্ধুমহল অসংখ্য।বন্ধুদের তার জীবনে কোনো অভাব নেই।ভালো,অনেক ভালো,অনেক অনেক ভালো বন্ধুই আছে তার জীবনে।কিন্তু ব্যস্ততার জন্য সে তেমন সময় দিতে পারে না কাউকে।ভার্সিটি শেষে তো দেখাই হয় নি কারো সাথে তার।সবাই দেখা করে।আড্ডা দেয়।তাকেও ডাকে কিন্তু সে যায় না।সব সময় কাজের বাহানা।তাই এবার তাকে অদ্ভুত ভাবে বন্ধুরা ফাঁসিয়ে তাদের কাছে নিয়ে এসেছে।মানুষের সব প্রিয়দের মাঝে যেমন প্রিয় থাকে রিঝের বন্ধুমহলের রামিম তার কাছে তেমন।রিঝ খুব রেগে আছে এই রামিমের উপরে।রামিম চোখ নিচু করে রেখেছে।এতো সব প্ল্যানে সে নীরব দর্শক ছিলো।সব করেছে আসমা আর হিমেল মিলে।আকাশও তাদের সহকারী।
“ দেখ ফাইজলামিরও সীমা থাকে।এগুলো কেমন ফাইজলামি??আর রামিম তোর না এক্সিডেন্ট হইছে??যা হসপিটালে যা।হারামী সবকটা।”

রামিম ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,
“ আমার দোষ নাই দোস্ত।তুই তো আমাদের সাথে দেখাই করতে আসছ না।তাই ওরা এগুলো করছে।”
“ তাই বলে মিথ্যা বলবি??মিথ্যা সহ্য হয় না আমার।”

আকাশ ফোন করে রিঝকে বলেছে রামিমের খুব ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়েছে।রাস্তায় আছে তাড়া।দ্রুত চলে আসতে বলেছে।রিঝ নিজের সব কাজ ফেলে ছুটে এসেছে।এসে দেখে সবাই আরাম করে চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে পা দুলাচ্ছে।তখন থেকেই রিঝের মাথা রাগে দপদপ করছে।ইচ্ছে করছে সব কটাকে মেরে সত্যি সত্যি হসপিটালে পাঠিয়ে দিতে।আসমা হাসি হাসি মুখে বলল,
“ আরে এসব বাদ দে।দেখ যেভাবেই হোক দেখা তো হলো।কত দিন পরে তোরে দেখতাছি দোস্ত।একটা হাগ করি??”

রিঝ দূরে সরে যায়।হাত নেড়ে বলে,
“ দূরে,দূরে যা।একদম জাপটাজাপটি করবি না।গায়ে পড়া স্বভাব যায় নাই তোর??”

আসমা মুখ গোমড়া করে বলে,
“ যাই বো ও না।কি করবি??সবার আগে তোর গায়ে পড়মু হারামী।”

রিঝ নাকটা কিঞ্চিত উচিয়ে বলে,
“ ওই হাবলা না তোর বয়ফ্রেন্ড।যা ওর গায়ের উপড়ে পর।তাও আমারে রেহাই দে।”

আসমা গিজ গিজ করে পাশে বসে।অনেক দিন পর সব বন্ধু একসাথে হয়েছে।তাই একটা ছোট খাটো আনন্দ মহল তৈরি হয়েছে।পৃথিবীর সবচাইতে কম কথার মানুষও বন্ধুদের সাথে অনেক কথা বলে।রিঝও তেমনই।বন্ধুদের সাথে তার অদ্ভুত বন্ধন।কথার মাঝে আসমা দূরে হাত ইশারা করে বলল,
“ ওই ওই দেখ।দূরের মাইয়াটারে চিনা চিনা লাগে।”

সবাই সেদিকে তাকায়।রিঝই প্রথমে বলল,
“ ও তুতুল।”

আসমা লাফিয়ে উঠে বলল,
“ কি কছ দোস্ত??এই মাইয়া তুতুল??বাপরে কি কিউট।”

রিঝ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“ ওরে ডাক তো।”

রামিম বলল,
“ তুই ডাক।ও কি আমাদের চিনে??ডাকলে আসবে না।উল্টা দৌড় লাগাবে।”
“ আরে আমি ডাকলে আসবে না।ঝগড়া করবে।বকবক করবে।অনেক কাহিনী।ওর সাথে আমার দুই মিনিটের শান্তির কথা নেই বললেই চলে।যাতো আসমা।”

আসমা দৌড়ে তুতুলের সামনে এসে দাড়ায়।তুতুল ভারী অবাক হয়ে তাকায়।আসমা হাত টেনে ধরে বলে,
“ চলো আমার সাথে।”
“ কে আপনি??আমি আপনাকে চিনি না।আপনার সাথে যাবো কেনো??”

আসমা উল্লাস নিয়ে বলল,
“ আমি আসমা।রিঝ আছে না ও আমার বন্ধু।”

তুতুলকে কিছু বলতে না দিয়ে আসমা ওর হাত টেনে নিয়ে যায় রিঝের সামনে।ভার্সিটির পিছনের দিক এটা।কিছু ছোট ছোট দোকান আছে।আর গাছপালা।অনেক বেঞ্চ।অনেক ছেলেমেয়ে বসে আছে এদিকে।তুতুলকে আগে দেখেও না দেখার ভান করে রিঝ বলল,
“ তুমি এখানে???”
“ এটা আমার ভার্সিটি।ভাইয়া আসে নাই তাই পিছনের দিক দিয়ে যাচ্ছি।কিন্তু আপনি কাজে ফাঁকি দিয়ে এখানে বসে আছেন কেনো??ফাঁকিবাজ।”

সবাই হা করে তাকায়।রিঝ পাল্টা জবাবে বলে,
“ তুমি নিজে ফাঁকিবাজ।আর হাত দেখি।”

তুতুল হাত পিছনের দিকে নেয়।ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“ দেখবেন না কি ব্যথা দিবেন??আপনারে চিনা আছে।শয়তান লোক।সকালে ভাইয়া বকাদিছে তো এখন প্রতিশোধ নিবেন তাই না??”
“ শয়তানের নানী।” মিনমিনে গলায় বলল রিঝ।

মায়শা থামিয়ে বলল,
“ বাপরে থামো তোমরা।চলো তুমি আমাদের সাথে বসো।গল্প করি।”

তুতুল মায়শার সাথে বসে।একটু দুরে।রামিম রিঝের পিঠ চাপড়ে বলল,
“ ওর না বিয়ে হয়ে গেছে??”

রিঝ কঠিন চোখে তাকায়।রামিম এর অর্থ বুঝেনা।রিঝ তুতুলের দিকে তাকিয়ে।নিজের কপালে ডান হাত দিয়ে রেখার মতো টেনে বলে,
“ বিয়ে যার সাথে কপালে লেখা আছে তার সাথেই হবে।ওর সামনে ফালতু কথা গুলো বলিস না।মন খারাপ করবে।”

রামিম আরো পাশ ঘেঁষে গোল হয়ে বসে।আকাশ,হিমেল,আসমাও একসাথে মাথা যোগ করে।তারপর রিঝকে প্রশ্ন করে,
“ ওর কি ব্রেকাপ হয়ে গেছে??”
“ হুম।আর তোরা এতো চিপকাই আছস কা??দূরে যা।”

রামিম উঠে দাড়িয়ে উল্লাস করে একটা নাচ দেয়।সাথে বাকিরাও।তাদের দেখে মনে হচ্ছে ব্রেকাপ পৃথিবীর সবচাইতে আনন্দের বিষয়।তুতুল কিছুই বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে থাকে।আর ভাবে এই বড় ভাইয়া গুলো কি পাগল??সবাই একদফা লাফালাফি করে বসে পরে।হাপাতে হাপাতে আরো আরো কাপ ভর্তি চা অর্ডার করে।সবার সাথে তুতুল পরিচিত হয়েছে।গল্প করছে।তার অনেক ভালো লাগছে।তুতুল হাসছে।কথা বলছে।রিঝ আড়চোখে চশমার ফ্রেম থেকে তাকায়।হাসলে অনেক মেয়েকে সুন্দর লাগে।আবার অনেককে কাদঁলে সুন্দর লাগে।রিঝের মনে হয় তুতুলকে কাঁদেও সুন্দর লাগে হাসলেও সুন্দর লাগে দুইটা একসাথে করলে তো আরো সুন্দর লাগে।অদ্ভুর ব্যক্তিত্ব তার।আকাশ তুতুলের পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,
“ রিঝকে তোমার কি মনে হয়??মানে কেমন ছেলে??”

তুতুলও ফিসফিস করে বলে,
“ আহাম্মক আর শয়তান টাইপের লোক উনি।একদম ভালো না ভাইয়া।দূরে থাকেন।ভালো হবে।”

আকাশ বিষম খায়।সে তো এমনেই জানতে চাইছে।ফিলিংস বুঝতে চাচ্ছে।তুতুল আরো বলে,
“ আরে ভাইয়া আপনি তো উনারে চিনেন না।আপনারা কেউ চিনেন না।উনি যে কি শুধু আমি জানি।”

আকাশ নিচু গলায় বলল,
“ কি??”
“ শয়তান!!”

আকাশ দ্রুত উঠে রিঝের পাশে চলে আসে।তারপর বলে,
“ তুলাপাখি তোরে একটুও পছন্দ করে না দোস্ত।বাপরে তুই না কি শয়তান??ওর মনে হয়।”

রিঝ হাসে।সবার মাঝে শুধু তুতুল আপনি ডাকছে সবাইকে।তাই আসমা বলে,
“ তুতুল তুমি আমাদের তুমি করেই ডাকো।”

তুতুল বললো,
“ শুধু আপুদের ডাকতে পারবো।ভাইয়াদের না।”

রামিম ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কেনো??”

তুতুল বলার আগে রিঝ বলল,
“ ও সব ছেলেদের আপনি বলতে পারে না।পরিচিত ছাড়া।বাদ দে।”

মায়শা তুতুলকে নিয়ে আশেপাশে ঘুরে।সুন্দর পরিবেশ পিছনের দিকে।দূরে একটা বেঞ্চিতে বসে তারা।মেয়েরা দু’জন হলেই দুনিয়ার গল্প।মায়শা তার আর রামিমের প্রেম কাহিনী শুনায়।তুতুলের ভালো লাগে না।ভালোবাসা,প্রেম,বিয়ে,সম্পর্কের প্রতি তার ঘৃনা জন্মে গেছে।বিশ্বাস উঠে গেছে।জীবনেও আর বিশ্বাস ফিরে আসবে না তার মতে।আশেপাশের কেউ এগুলো নিয়ে কথা বললেও তার ভালো লাগে না।বিরক্ত লাগে।রাগ লাগে।মন খারাপ হয়।পুরানো স্মৃতি মনে পরে।

রামিম রিঝের পিঠ চাপড়ে বলে,
“ তোরেও তো আপনি ডাকে।তুই তো ওর অনেক পরিচিত।”
“ আপনি শুনতে আমার ভালো লাগে।”

রামিম নাকচ করে বলে,
“ তুমিটাই সুন্দর।”

রামিমের কথায় রিঝ চোখ তুলে তাকায়।চায়ের কাপটা নাড়াতে নাড়াতে বলে,
“ আমার ওর মুখে আপনিটা শুনতেই ভালো লাগে।”
“ আপনি অনেক দূরের দূরের মনে হয়।এর জন্যই তো কাছে যাইতে পারছ না।”
“ আমার মনে হয় আপনি শব্দটায় যাদু আছে ।ম্যাজিক যাকে বলে।ওর আপনি সম্বোধন আমার কাছে সেই ম্যাজিকের মত।এই ছোট শব্দটিতে আমার মনে হয় মিশে আছে মিষ্টি অনুভুতি।বুকে কম্পনের জন্ম দিতে সময় লাগে না এই শব্দের।ও যখন আপনি বলে ডাকে আমার সমস্ত সত্তা নড়েচড়ে আমাকে জানান দেয় সে ডাকছে।সমস্ত অস্তিত্য জুড়ে শীতল হওয়া বয়ে চলে।হৃৎপিণ্ডের শব্দ ভয়ংকর ভাবে বাজে।সব কিছু জানিয়ে দেয় সে তোমাকে মনে করছে!মন মানে বুঝছ???মন!!মন থেকে ডাকছে।এই সম্বোধন আমার কাছে প্রচন্ড দামি।সম্মানের সাথে অনুভুতিকে মিলিয়ে দারুন সম্বোধন।তাই আমি চাই সারা জীবন ও আমাকে আপনি করেই সম্বোধন করুক।আমি ভালোবাসি ওর সম্মানিত আপনি হতে।এতেও সার্থকতা আছে।গভীর সার্থকতা।সবাই চাইলেও সেই সার্থকতা খুঁজে পায় না।আমি পেয়েছি।তাই আমিই সার্থক।”

রিঝ থামলো।ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে সামনে তাকালো।রিঝের কথায় রামিম কপাল কুঁচকে নিলো।কাঠের বেঞ্চিতে পা নাচিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয় সে।চুমুকে চুমুকে চায়ের কিছুটা অংশ শেষ করে একটু দূরে বসে থাকা হাস্যজ্জল লম্বা চুলের তুতুলের দিকে তাকায়।হেসে হেসে কথা বলছে সে।মাথার উপরে বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে কিছু কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি।
ঠিক তার মাথার উপরে।হাত নাচিয়ে কথা বলতে বলতেই তুতুল পাপড়ি গুলো মাথার উপর থেকে তুলে নেয়।অদ্ভুত ভাবে তুতুল পাপড়ি গুলো নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।রামিম হাসলো।রিঝের দিকে তাকিয়ে দেখে সেও তার দৃষ্টি জোড়া মেলে তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে মুগ্ধতা।রামিম বুঝেনা!এতো মুগ্ধতা কই থেকে যে আসে।রামিমের ডান পাশের আসমা কাঁধ দিয়ে হালকা ধাক্কা দেয় রামিমকে।মিটমিট করে হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে রামিমকে বললো,
“ রিঝের প্রেম দেখে আমার মাথা ঘুরায় দোস্ত!!কতো ভালোবাসে কিন্তু সব ফুঁসসসসসসস।তুতুল তো ওরে দেখতেই পারে না।আর ও!!বুঝতেই দেয় না নিজের মনের কথা।তাল মিলিয়ে ঝগড়া করে।আমি আমার জীবনে কাউরে দেখিনি এমন করে ভালোবাসতে।বুঝ হওয়ার পর থেকে অনুভুতি।আর কি সুন্দর গোপন করে রাখছে সব??কিন্তু দুঃখ লাগে।হালা পুরাই লেইট পার্টি।কেমতে এমন প্রেম হয় ক তো?আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছ্যাকা খাইয়া বেঁকা হইবো কখনো ভাবছি বল??শালা ভয়ংকর প্রেমিক!আগে ভাবতাম সব কবিদের কাব্যিক কথা ,রিঝেরে না দেখলে বাস্তবতাই বুঝতে পারতাম না।কেমতে পারে কো চাই???”

আসমার কথায় প্রচন্ড বিরক্ত হলো রামিম।তার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে আসমা।তাই চুপ করে গেলো।রামিম হালকা হেসে রিঝের পিঠ চাপড়ে বললো,
“ আমার চোখ ও তোরে না দেখলে মনে হয় সার্থক হতো না।আমিতো তোর প্রেমের দিওয়ানা হয়ে গেছিরে।”

চমকিত চোখে ঘাড় কাত করে তাকালো রিঝ।চোখের চশমাটা নাকের ডগায় এসে নেমেছে তার।মাথার সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে কপালের উপরে।হাতের একটা আঙ্গুল উঁচিয়ে চশমা ঠেলে দিতে দিতে রিঝ কাঁধ ঝাড়া দিয়ে বললো,
“ ছিঃ ছিঃ তোর গার্লফ্রেন্ড জানে তুই যে ইদানিং মেয়ে রেখে ছেলেদের প্রেমে পড়ছ???ভাইরে ভাই তুই শেষে কিনা গে এর লিষ্টে নাম লেখাচ্ছিস???ছিঃ দোস্ত!ছিঃ!বুয়েটে পড়াই বৃথা তোর।শেষে কি না!!!”

রিঝের কন্ঠে রসিকতা।বন্ধ মহলের সবাই এক তালে হেসে উঠে।বেঞ্চের সাথে যেন পরিবেশটাও দুলে উঠেছে।রামিম রেগে রিঝের বাহুতে ঘুষি দিতে শুরু করে।তার সাথে তাল মিলিয়ে হামলে পরে আশেপাশের বাকি বন্ধুরা।বেঞ্চ ছোট হওয়ায় সবাই ধারাম ধারাম করে নিচে মাটিতে গড়িয়ে পরে।একটা সময় হাসির ঝঙ্কানিতে মারামারি থেমে যায়।কিন্তু হাসি থামে না।আসমার হাসিটাই জোড়ে শুনা যাচ্ছে।ছেলেরা তেমন শব্দ করে হাসছে না।দীর্ঘ ২বছর পরে রিঝের সাথে সবার দেখা।আনন্দে উপছে পড়ছে সবাই।রামিম হাপাতে হাপাতে বললো,
“ শালা কি পাগলের প্রেমে পড়লি তুই??দেখ কৃষ্ণচূড়ার যে ঘ্রাণ হয় না তাও জানে না।কেমন ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত সে।আর তোরে পারলে খুন করে।”

রামিমের কথায় চোখ তুলে সবাই সামনে তাকায়।তুতুল যেন একা একাই কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির সাথে হাসছে।হালকা হেসে রিঝ মাটিতে গোল করে পা বিছিয়ে বসে বললো,
“ ও সবই জানে।তবুও নাকি ঘ্রাণ খুঁজে পায়।আমারে কি বলে জানছ??বলে রিঝ ভাই আপনিও একবার মন থেকে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করুন দেখবেন ঘ্রাণ পাবেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি ফুল অপছন্দ করি।তবুও এই পাগলের পাল্লায় পরে আমি কিন্তু ওর সামনে নেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সত্যি বলতে আমি ঘ্রাণ তো দূরে থাক গন্ধও পাই না।”

রিঝ নিজে নিজে হাসলো।তার বন্ধুরা হাসলো না।সবাই যেন রিঝের হাসির মাঝের দুঃখ খুঁজতে ব্যস্ত।মৃদু একটা হাসি দিয়ে রামিম বললো,
“ আমার এই চোখ আসলেই তোর একতরফা ভালোবাসা না দেখলে সার্থক হতো না।কিভাবে পারছ বলতো???আমার দ্বারা বছরের পর বছর একতরফা ভালোবাসা ইম্পসিবল একটা ব্যাপার।তুই কি আদো ওকে পাবি???”

রিঝ হাসলো।চোখ ঘুরিয়ে সাদা স্কার্ট পড়া,গলায় উড়না ঝুলানো তুতুলের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বললো,
“ পাবো বলে ভালোবাসিনি দোস্ত।ভালো রাখবো বলে ভালোবেসেছি।তা আর কই হলো।সেই তো দুঃখ তার জীবনে হানা দিয়ে চলেই এলো।বাদ দে আজকে অন্য আমির অনেক পার্সোনাল কথা তোরা ছলেবলে বের করে নিলি হারামির দল।”

সবাই আবার হাসে।কিন্তু আকাশের অনেক কৌতুহল।সাথে চিন্তা।সে তো সিঙ্গেল তাই চায় অন্য কেউ যাতে না থাকে।রিঝে তো মোটেও না।তবে তুতুলকে যা দেখলো এতে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
“ কিভাবে এই ভাঙ্গা হৃদয় জোড়া লাগাবি দোস্ত???ভাঙা হৃদয় কিন্তু কাঁচের মত হয়।”আকাশের ভারী কন্ঠ।
জবাবে কিছুই বললো না রিঝ।দৃষ্টি তার সামনে।মনে মনে বিড়বিড় করে বলে সে,
“ তোমাকে হাসলে সত্যি সুন্দর লাগে।”
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৭.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
গল্পের শেষে সবাই উঠে পরে।সবার মাথায় অনেক প্ল্যানিং।তারা ঘুরতে যাবে।রিঝ পাত্তা দিচ্ছে না।শুধু কাজের বাহানা দেখাচ্ছে।তুতুল সবার আগে লাফিয়ে বলে দিয়েছে সমুদ্রে যদি ঘুরতে যায় তাকে যাতে সঙ্গে নেয়।সে সমুদ্র ভালোবাসে।কত কত বার যে গেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই।তবুও সে যাবে।তার তো ইচ্ছে সমুদ্রের মাঝে একটা কাঁচের মহল বানাবে।ঢেউ যখন উপচে এসে কাঁচে বাড়ি খাবে তুতুল তখন কাঁচের সাথে ঠেসে বসে দেখবে।কিন্তু সমুদ্র ভালোবাসলেও সে সাঁতার পারে না।তাই পানিতে একদম নামে না।অনেক দূরে দাড়িয়ে দেখে।পানিও ছুঁয়ে দেখে না।দূরে দাড়িয়ে সাগর দেখে সে তৃপ্ত।সবাই রাস্তার পাশে এসে দাড়ায়।বিদায় জানানোর সময় লাগে বিপদ।রামিম আর আসমা তুমুল ঝগড়া শুরু করে।তাদের ঝগড়ার মূল কারন ধাক্কা।আসমা খিটখিট করে বললো,
“ ধাক্কাটা তুই আগে দিছস।”
“ মোটেও না।তুই নিজে দিয়া এখন সাধু সাজছ??”

আসমা ফস করে শ্বাস ফেলে।নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে,
“ দেখ,ছোট বোনের সামনে রাগাইছ না।চুপ থাক।তা না হলে তোর চুলগুলো একটাও মাথায় থাকবো না।”

আসমার কথায় রামিম হতাশ গলায় বলল,
“ আমার গার্লফ্রেন্ডও আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস রাখে না।সেখাতে তুই যখন তখন চুল টানোছ এইডা কিন্তু মোটেও ভালো না আসমা।চুলে হাত দিবি না।”
“ ওকে স্যরি বল।”

রামিম ভারী অবাক হলো।এমন কথা যেন সে জীবনে প্রথম শুনেছে এমন একটা ভাব নিয়ে বলল,
“ স্যরি??এটা আবার কি?”

বলেই আবার একটা ধাক্কা লাগায়।আসমা রাস্তায় সবার সামনে রামিমের চুল টানা শুরু করে।রামিম হার মানতেই হয়।চেঁচিয়ে বলে,
“ স্যরি মেরি মা ছাড়।”

আসমা ছেড়ে দেয়।হাসিতে ফেটে পরে সবাই।তুতুল সবার থেকে বিদায় নেয়।সামনে হাঁটে রিক্সা খুঁজতে।রিঝ বাইক নিয়ে তুতুলের সামনে পথ আটকে দাড়ায়।সবাই নিজের পথে যাওয়া ভুলে উৎসুক জনতার মতো তাকিয়ে থাকে।রিঝ শান্ত গলায় আস্তে করে বলে,
“ উঠে বসো।আমি আজ আর অফিসে যাবো না।বাসায় যাবো।”

রিঝের কথায় তুতুল তার দিকে তাকায়।সন্দেহ নিয়ে বলে,
“ আপনি আমাকে লিফট দিচ্ছেন??মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নেই তো??”
“ সব সময় তোমার এমন মনে হয় কেনো??ঝগড়া কি তোমার জীবনের একমাত্র লক্ষ??”
“ হ্যাঁ।আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ সারা জীবন আপনার সাথে ঝগড়া করবো।”

আসমা পিছন থেকে গলা উঁচিয়ে বলল,
“ তাহলে তো সারা জীবন একসাথে থাকতে হবে।”

দু’জনে চমকে পিছনে তাকায়।রিঝ ঝাঁকিয়ে বলে,
“ তোরা এখনো দাড়াই আছস কা??”

হিমেল হেসে বলল,
“ আগে তোরা যা আমরা ধীরে ধীরে যাবো।”

তুতুল সবার দিকে তাকায়।সবাই কেমন এলোমেলো ব্যবহার করছে।হাসছে।মিটমিট করে কিসব বলছে।কানে কানে ফিসফিস করছে।কৌতুহলি চোখে সবাইকে দেখে সে।রিঝের তাড়া,
“ উঠবে না কি আমি চলে যাবো??”
“ চলে যান।আমি নিজে নিজে যেতে পারবো।” তুতুলের সহজ গলা।

কথাটা বলেই পাশে আশা রিক্সায় উঠে পরে সে।রিঝের দিকে তাকিয়ে দাম্ভিক শ্বাস ফেলে।রিক্সা সামনে এগিয়ে যেতেই সব বন্ধুরা ছুটে আসে।আকাশ হতাশ গলায় বলে,
“ ভাই পাত্তাই দিলো না??”

আকাশের প্রশ্নটি বেহুদা মনে হলো রিঝের কাছে।বিরক্ত গলায় বলল,
“ পাত্তা চাইছে কে ওর কাছে।”
“ পাত্তা না দিলে প্রেম হইবো কেমতে??”আকাশের আফসোসের সুর

রিঝ বাইট স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“ প্রেম করতে চায় কে??আমি তো না।চললাম বাই।”

সবাই একে অপরের দিকে তাকায়।রামিম বলে,
“ রিঝের কিন্তু কষ্ট হয়??”

আকাশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
“ কেনো??”

আসমা মাঝ পথে বলে,
“ আরে মনের কথা লুকিয়ে রাখা সহজ না।অনেক কষ্ট হয় মনে হয় বেচারার।”

রামিম কিছু বলতে নেয় আকাশ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
“ রিঝ আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে।বন্ধু হিসেবে ও একদম পারফেক্ট।এবার সময় এসেছে আমাদেরও উচিত ওর জন্য কিছু করার।”
“ হুম করতে তো হবেই।রাস্তা ফাঁকা আছে।কোন সময় না জানি আবার মাঝ পথে কে টপকাই পরে আল্লাহ মালুম।”

মায়শা আর হিমেল একটু দূরে দাড়িয়ে কথা বলছে।তারা এসব আলোচনায় নেই।দু’জনের মাঝে অদ্ভুত বন্ধুত্ব।আসমা আড়চোখে মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে।পরে আবার ধুর বলে নিজেদের মতো কথা বলছে।আসমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় সে নয় মায়শা হিমেলের গফ।সবাই মিলে এক ভয়ংকর প্ল্যানিং করেছে।এবার জিত তাদের হতেই হবে।রামিম হাত রাখে তার উপরে আকাশ আসমা হাত রাখে।উল্লাস করে তারা।মাঝে হিমেল আর মায়শাকে অনেক ডাকার পরে আসে।
_______________
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।তুতুল এখনো ঘুমাচ্ছে।আজ সে মহান কাজ করেছে।ইয়াজের একটা ছবি তার কাছে ছিলো।সেই ছবিকে ইচ্ছে মত কুচি কুচি করেছে।তারপর ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছে।সেই থেকে তার প্রশান্তির ঘুম হচ্ছে।মনটা হালকা হালকা লাগছে।ছিড়ার সময় তার একটা কষ্ট অবশ্য হয়েছে।তবে ছিড়ে ফেলার পরে খুব ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে সে সয়ং ইয়াজকেই ছিড়ে ফেলেছে।কিছু কষ্টকে মানুষ নানা ছলে মুছে ফেলতে চায়।কিন্তু অতীতকে মুছে ফেলা যায় না।গেলে তুতুল নিশ্চুয়ই মুছে দিতো।দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে।তুতুল মাথার নিচের বালিশটা কানে চেপে ধরে।উপুত হয় আবার ঘুম দেয়।রিঝকে দেখে চমকে যায় আমিনা আক্তার।সন্ধ্যায় হঠাৎ কেনো এসেছে??ভেবে পায় না তিনি।হেসে উঠে তিনি বললেন,
“ ভেতরে এসো।”

রিঝ ভেতরে আসে।হৌসাইন সাহেব ড্রয়িং রুমেই বসে আছে।রিঝ সালাম করলো।রিঝকে নিজের পাশে বসতে বললেন তিনি।রিঝ পাশে বসতে বসতে বলল,
“ তুতুলের নতুন টিচার তো তাকে পড়াতে আসছে না।আপনি বলেছেন।তাই আমি ভাবছি ওকে একটু হেল্প করবো।কারন ওর সেমিস্টার ফাইনাল সামনে।”

হৌসাইন সাহেব গম্ভীর মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বলল,
“ তাহলে তো ভালই।তুমি যে আমার সেদিনের কথা রেখেছ এতেই ভালো লাগছে।ধন্যবাদ বাবা।”
“ কাকাই আপনি ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করছেন কেনো?আমিও তো আপনির ছেলের মতো।তবে কাকাই একটা সমস্যা আছে??”

হৌসাইন সাহেব চোখ তুলে রিঝের দিকে তাকালেন।রিঝ একটু পাশ ঘেঁষে বলল,
“ কাকাই আপনার মেয়ে যদি এটা জানে আমার মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবে।”

তুকুলের বাবা হু হা করে হেসে উঠে।রিঝও ঠোঁট টিপে হাসে।আমিনা বেগম চা ,হাতে তৈরি নাস্তা নিয়ে রিঝের সামনে রাখে।রিঝ শুধু চায়ের কাপ হাতে নেয়।এই একটা জিনিস সে প্রচুর পরিমানে খেতে পারে।রিঝ চা খোর।প্রতিদিন দুকাপ না খেলে তার মাথা ব্যথা হয়।ঝিম ঝিম করে।হৌসাইন সাহেব বললেন,
“ ও তোমাকেই যা একটু ভয় পায়।অন্য কাউকে তেমন পায় না।আর তুমি একজন বুয়েটের স্টুডেন্ট।বেস্ট।তুতুলের মন মানসিকতা তেমন ভালো নেই।তাই অপরিচিত কাউকে এখন টিচার হিসেবে রাখতে চাচ্ছি না।আলভীও পড়াতে চায়।তুতুল তখন বাহানা দিয়ে বলে,ঘুম পাচ্ছে।আর পড়া হয় না।আর আলভী তো তুতুলের সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করে।বুঝতেই পারছো।”

রিঝ মাথা নাড়ায়।তুতুলের HSCপরীক্ষার সময়ও রিঝ তাকে পড়িয়েছে।এরপরে আর সময় হয়নি।চাকরি নিজের পরীক্ষা সব নিয়ে সে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো।দুরত্ব সেখান থেকেই।রিঝ উঠে দাড়ায়।তুতুলের রুমে এসে দাড়ায় সে।তুতুলের রুমের রং সাদা।সাদার উপরে লাল লাল ছোট ফুল।একটা বিছানা।একটা ছোট সাদা টেবিল।বড় বড় পুতুল।একটা তিন পাটের সাদা আলমারি।একটা সাদা ড্রসিং টেবিল।একপাশে ওয়াসরুম।আর সম্পূর্ন্য রুম জুড়ে প্রজাপতি আর প্রজাপতি।অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে চাঁদ তারা।রিঝের ভালো লাগে না তুতুলের রুম।কারন তার সাদা রং পছন্দ না।রিঝ লাইট জ্বালায়।তুতুল উপুত হয়ে চাদর গায়ে শুয়ে আছে।মুখের উপরে একটা বালিশ,পায়ের নিচে একটা,দুইপাশে দুইটা কোলবালিশ।একটা মানুষের জন্য এতো বালিশ!!!তুতুল চিৎকার করে উঠে।চোখ বুজে বলে,
“ ভাইয়া লাইট বন্ধ কর।”

রিঝ দরজার সাথে ঠেসে দাড়ায়।পায়ের সাথে পা রাখে।বুকে হাত গুঁজে নেয়।তুতুল আবার চিৎকার করে বলে,
“ ভাইয়া ভালো হবে না বলে দিলাম।আমি ঘুমাইতেছি।জিস্টার্ব করছ কা।”
“ কোন দেশের মহারানী যে কেউ এসে ডিস্টার্ব করবে তোমাকে??”

কন্ঠটা অদ্ভুত।না কি সে ঘুমের মাঝেও রিঝের গলা শুনতে পাচ্ছে সে জানে না।মাথায় বালিশ চেপে তুতুল বলল,
“ কেরে ভাই ঘুমের মাঝেও এসে ঐ শয়তান ডিস্টার্ব করে।বিরক্ত লাগে।”
“ তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম উঠো তা না হলে আমি পানি মেরে উঠাতে বাধ্য হবো।সময় শুরু এখন থেকে।”

তুতুল চোখমুখ কুঁচকে নিলো।হঠাৎ মনে হচ্ছে সত্যি এসেছে।কিন্তু এতো সন্ধ্যায় কেনো আসবে??আবার ভাবে আজকে সারাদিনে কম জ্বালাইছে??আসতেই পারে।আগের মতো হয়েগেছে রিঝ ভাই।তুতুল লাফিয়ে উঠে বসে।দুই হাতে চোখে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“ আপনি কি শান্তি দিবেন না??”
“ না।”রিঝের সহজ গলা।

তুতুল ভাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সত্যি তো এসেছে।রিঝ হুংকার দিয়ে বলল,
“ পাঁচ মিনিট শেষ হতে চলেছে।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসো।”
“ কেনো??”
“ পড়তে বসবে তাই।”
“ মানে কি আপনি না বলছেন জগিং করলে আর পড়াতে আসবেন না।তাহলে এখন কেনো এসেছেন??হোয়াই??”
“ সকালের কথা সকালেই শেষ।এখন নতুন কথা হচ্ছে সূত্র সব পারো??”
“ কিসের সূত্র??”
“ বইয়ের??”

রিঝ নিজের হাতের বইটা দেখিয়ে বলল।তুতুলের কাঁদো কাঁদো অবস্থা।এই বুঝি এখনি কেঁদে দিবে।তাহলে কি সত্যি তার পড়তে হবে??রিঝ তো জিনা হারাম করে দিবে।পড়া না পাড়লে নতুন নতুন শাস্তি!এখন তো সে বড় হয়েছে।এখনো কি শাস্তি দিবে??তুতুল চোখ ছোট করে মৃদু গলায় বলল,
“ আমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছি আপনি কি আমাকে মারবেন??”
“ আমি তোমাকে কখনোই মারি না তুতুল বেহুদা কথা বলবে না।”

তুতুল ভেবে আবার বলে,
“ ও সেটা তো সত্য।কিন্তু অন্যশাস্তি গুলোও দিবেন না কারন আমি বড়।”

রিঝ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো।বলল,
“ তুমি বড়!!সেটা তো জানি।তাই তো ছোট থেকে বড়দের মত শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।তাই শাস্তির নিয়ম পরিবর্তন হবে না।যাও দ্রুত আসো।”
তুতুলের খুব করে গালি দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু গালির ভাষাগুলো আজ বিলুপ্ত।মনে পড়ছে না।মনে করার জন্য সে ঝিম মেরে বসে ছিলো।কিন্তু রিঝের ধমকে দ্রুত ওয়াসরুমে গেলো।তুতুলের দৌড় দেখে রিঝ হাসলো।
____________________
তুতুল বিছানায় বসে পড়বে।রিঝের মানতে হলো।রিঝ চেয়ারে বসে।তুতুলকে সে পড়া দিয়েছে।তুতুলের বিরক্ত লাগছে।এতো পড়তে কার ভালো লাগে!তার তো একটুও ভালো লাগছে না।উল্টা বিরক্ত লাগছে।তুতুল একটু পর পর বলছে,
“ রিঝ ভাইয়া আমার ঘুম পাচ্ছে।”

রিঝ চোখ রাঙ্গানী দিতেই আবার সোজা হয়ে বসে।আবার কিছুক্ষণ পরে বলে,
“ পানির তৃষ্ণা লাগছে!”

রিঝ একটা বই পড়ছে।আড়চোখে একবার তাকিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।তুতুল চুক চুক করে পানি খায়।আবার বলে,
“ রিঝ ভাইয়া আমার ক্ষুধা লাগছে দুপুর থেকে কিছু খাই নাই।”

রিঝ প্রচন্ড বিরক্ত।ইচ্ছে করছে একটা চড় দিতে।চোখ বুজে রাগ নিয়ন্ত্রন করে বলল,
“ সিরিয়াসলি পড়ো।তা না হলে কান ধরে দাড় করাবো।তখন ঘুম,তৃষ্ণা,ক্ষুধা সব উড়ে পালাবে।”

তুতুল ফস করে শ্বাস ফেলে।রাগে নাক লাল হয়ে আছে তার।রাগ নিয়ে বালিশের উপরের বইটা একবার তুলে আবার শব্দ করে রাখে।ফস ফস করতে করতে বাঁকা থেকে সোজা হয়।খোলা চুলগুলো খোঁপা করে।পা ভাঁজ করে বসে।মনোযোগ দিয়ে পড়ে।রিঝ চশমা ঠিক করার সময় আড়চোখে তুতুলকে দেখে।বইয়ের ফাঁক দিয়ে তুতুলকে দেখতে তার ভালো লাগছে।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।লাইটা তুতুলের একদম মুখের উপরে পড়ছে।আলো এসে উজ্জ্বল করছে গলা,ঘাড়,কাঁধ।খালি লম্বা গলাটায় রিঝের চোখ আটকা পরে।বিশেষ করে ঘাড়ের পাশটায় ভেসে থাকা নীলছে রগগুলোতে।তুতুল যখন গলা উচিয়ে পড়া মুখস্ত করছে রগগুলো তখন উঠানামা করছে।রিঝ চোখ সরিয়ে নেয়।অদ্ভুত ভাবে শরীর কেঁপে উঠে।চোখ বুজে নেয় সে।বুকে তোলপাড় হচ্ছে।

তুতুল রিঝকে চোখ বুজে থাকতে দেখে বলল,
“ স্যরজি আপনারও কি ঘুম পাচ্ছে??তাহলে এক কাজ করি আপনার ছুটি।যান ঘুমান।আমিও ঘুমামু।”
“ তুতুল চুল খুলে দেও।” রিঝের কঠিন গলা।

তুতুল ভারী অবাক।কথার কিছুই বুঝলো না সে।হা করে তাকিয়ে থাকে রিঝের দিকে।রিঝ আবার বলল,
“ চুল খুলতে বলছি।”

তুতুল খোঁপা খুলে দেয়।কিন্তু কেনো বলছে সে বুঝতে পারে না।রিঝ পানি খায়।তারপর আবার বইয়ের পাতায় মন দেয়।কিন্তু চোখ উল্টেপাল্টে ঘুরে যেন তুতুলের কাছেই যায়।কালো কোঁকড়া চুল,ঠোঁটের পাশে তিল,পড়ার সময় মুচকি হাসি।আলোতে সে হাসির সাথে খোলা চুল একত্রে মিশে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।ঘুমথেকে উঠেছে তাই যেন আরো সতেজ দেখাচ্ছে।রিঝ চোখ সরিয়ে নেয়।তুতুলের দিকে না তাকিয়ে বলে,
“ মাথায় উড়না দেও।”

তুতুল এবার বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ পারবো না।”

রিঝ নিজে উঠে গেলো।পাশে এসে উড়নাটা গলা থেকে খুলে নিলো।ভালো করে মেলে মাথায় জড়িয়ে দিলো।তুতুল সামনে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখে।অদ্ভুত দেখাচ্ছে।আগেও তো সে মাথায় কাপড় দিয়েছে।অনেক দিয়েছে।এখনও দিতো।কিন্তু সবকিছুর চাইতে আজ ভিন্ন কিছু অনুভব হচ্ছে।রিঝ সরে এসে আবার বইয়ে মন দেয়।তুতুল নিজেরে ঝাকিয়ে নিজের মাথায় ছোট করে থাপ্পড় মারে।বিড়বিড় করে বলে,
“ নিজে এক পাগল আমাকেও পাগল বানাতে এসেছে।রিঝের বাচ্চা রিঝ।”

কিছু সৌন্দর্য্য শুধু নারী কেন্দ্রীক হয়।পুরুষ চাইলেও সেই সৌন্দর্য্য নিজের মাঝে ধারন করতে পারে না।তারা অবশ্য করতেও চায় না।সেই সৌন্দর্য্য শুধু অনুভবে আনন্দ।রিঝের কাছে তুতুলের মাথার ঘোমটাটা ঠিক তেমন।সৌন্দর্য যেনো নুয়ে এসে পরেছে মুখের উপরে।সাদা উড়নাটা মাথায় অনেক চুল ঢেকে রেখেছে।দু’পাশে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে এসে পরছে।বাঁকা চুল।ঢেউ খেলানো।প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশ করা যায় না।কারন তার জন্য শব্দ ভান্ডার শূন্য।তুতুল আড়চোখে তাকায়।রিঝ চোখের ভাষা পালটায়।কঠিন করে ইশারা করে বুঝায় পড়তে।তুতুল মুখ বাঁকিয়ে শব্দ করে পড়ে।রিঝ হাসে।সে হাসি তুতুলের চোখের আড়ালে থেকে যায়।

#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here