নিয়তি পর্ব -১১

#নিয়তি
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
#পর্ব—–১১

_____________________

সন্ধা হয়ে গেছে তুর্জ বাড়ি ফিরেনি, আর এদিকে নন্দিনির শরিল ব্যাথা বিষেশ করে পেট চেপেই বসে ছিলো সারা দিন রুমে,

সপ্না দুএক বার এসেছিলো, খুব জ্বর এসেছে দেখতে পেলো নন্দিনির তাই আর শিলা বেগম কে না জানিয়ে পারল না,
শিলা বেগম খুব চিন্তায় পরে গিয়েছিলো তাই ডাক্তার ডাকতে গেলে সপ্না বাধা দিয়ে বললো মা জদি মহিলা ডাক্তার খবর দিতেন ভালো হয় আর কি, শিলা বেগম আর দ্বিতিয় পশ্ন পরেন নি কারন মেয়ে মানুষ কত সমস্যাই থাকতে পারে, হয়তো আমি শাশুরি বলে আমায় বলা হয় নি তবে সপ্না জানে!!!!!!

ডাক্তার এসে ঔষধ দিয়ে গেছে, তবে নন্দিনির অবস্থা দেখে বলেছিলো আপনি এডভোকেট তুর্জের বৌ না!!!

নন্দিনি ব্যাথায় জরজরিত তাই উওর দেয়া সম্ভব হয় নি, তবে সপ্না হ্যা বলে সমত্তি দিয়েছিলো,

গাইনি ডক্টর ফারহানা “”” একটু অবাক এমন শিক্ষিত এমন সোজা মানুষ টার এমন রুপও আছে!!!

~~~~~

শিলা বেগম চিন্তা করছে ছেলেকে নিয়ে এদিকে নন্দিনির অবস্থ্যা ভালোনা। তুর্জটা কোথায় ফোনটাও বন্ধ***

“” রাতে নন্দিনির রুমেই সপ্না খাবার নিয়ে গিয়েছিলো,
নন্দিনিকে কিছুই খাওয়াতে পারেনি সপ্না তাই ওর জন্য সুপ রান্না করে আনলে একটু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে।

নন্দিনির শরিল খারাপের মাঝেও তুলিকে ভুলেনি,

সপ্নার কাছে বার বার জানতে চাইছে তুলি কোথায়!!!!!

সপ্না রুম থেকে বেরিয়ে একটু পর তুলিকে নিয়ে রুমে আসে, নন্দিনি যেমন তুলিকে পেয়ে খুশি তার চেয়ে তুলি তার মাকে পেয়ে খুশি,

তুলিকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্ষন আদর করেছে নন্দিনি, তবে সপ্না আজকের জন্য তুলিকে নিজের কাছে রাখতে চাইলো নন্দিনি মানা করে দেয়,

ভাবি এখন আমি কিছুটা ভালো, তুলিকে নিয়ে গেলে অসুস্থ হব, ও আমার কাছেই থাক-

সপ্না আর অমত করেনি, অনেক রাত হয়েছে তাই সপ্না চলে গেলো নিজের রুমে।
তুলির সাথে শুয়ে শুয়েই খেলা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে মা মেয়ে, তবে তুলির বাবার খুজটা এখন পাওয়া হল না,
নন্দিনি এক বার ও জানতে চায় নি তুর্জের কথা………..

রাত ১ টা পার হয়ে ঘড়ির কাটা ২ টার দিকে ছুটছে, সোহাম আর শিলা বেগমের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে,
সোহাম তুর্জের ফ্রেন্ড আরো অনেক কে কল করেছে তবুও তুর্জের খুজ পেলোনা।

সোহামকেও বের হতে দিচ্ছেনা শিলা বেগম, বহু রাত হয়েছে এই রাতে জাবে কোথায়?
একটু পর দরজায় আওয়াজ পরলো, শিলা বেগম দ্রুত পা চালিয়ে দরজা খুলতেই তুর্জকে দেখতে পেলো,

তুর্জকে ভালো করে লক্ষ করে দেখতে পেলো তার হাতে ব্যান্ডেজ!!

সোহামের পশ্ন মায়ের পশ্নে তুর্জ চুপ হয়ে আছে,

কিরে এতক্ষন কোথায় ছিলি আর হাতে কি হয়েছে??

তুর্জ ছোট্ট উওর দিলো কিছু হয় নি কাজ ছিলো, বলেই তার রুমে চলে গেলো,

তুর্জের চোখ লাল হয়ে আছে সে আজ খুব কেদেছে কারন এমন আচরন সে করতে চায় নি , নন্দিনির এমন কথায় তার প্রচন্ড রাগ হয় তাই রাগের বশে এমনটা করে ফেলেছিলো,আর তার জন্য খুব অনুতপ্তও হয়েছে, এই হাতে নন্দিনিকে আঘাত করায় এই হাতটাকে বিরাট বড় শাস্তি দিয়েছে সে।
তবে তা তো নন্দিনিকে এজীবনে বিশ্বাস করাতে পারবেনা তুর্জ……

রুমের রজা আস্তে করে খুলে এক পলকে চেয়ে রইলো ঘুমন্ত দুজন প্রানপ্রিয় মানুষের দিকে,
তুলি আর নন্দিনি,

ডিম লাইলের আলোতে চোখ জুরিয়ে দেখতে পারছে না তাই কাছে জেতেও বেশ মন চাইছে, তবে নন্দিনির জেগে জাওয়ার ভয়তো আছেই!!!!”

তুর্জ ধিরে ধিরে তুলির কাছে এসে তুলি আদর করে তুলির পাশেই শুয়ে পরলো,
তবে বার বার নন্দিনির মুখটা দেখতে মন চাইছে, তাই একটু কাছে গিয়ে নন্দিনিকে দেখলো খুব ভালো করেই দেখলো,

ভালো করে দেখার পর কিছু দাগ চোখে পরলো,
এতটা নির্দয় কবে থেকে হলাম! আমি এই মেয়েটাকে এত কষ্টইবা কেন দিলাম!!!

নন্দিনির গলার দাগটায় ঠোটের ছোয়া পরতেই চোখ মেলে ধর ফরিয়ে উঠে নন্দিনি, তবে সেও খুব ভালো করে জানে এটা কার স্পর্ষ!! উঠেই ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয় তুর্জ কে!!!

তুর্জ প্রায় পরে জাওয়ার মতই তাই ব্যালেন্স রাখতে হাতটা দিয়ে খাটে ভর সামলাতেই আহ!! করে উঠে তবে নন্দিনি সেই আওয়াজে কান দেয় নি,

কোন রকম বিছানা ছেরে উঠেই রুমের লাইট অন করে নন্দিনি,লাইট অন করাতে তুর্জ অবাক হয়ে দেখছে ওকে কারন গলায় বিস্রি একটা দাগ বসে গেছে যা মনে হয় না সহজে মুছবে..চিন্হটা।.

আর মুখেও বেশ আছে তবে আর কোথায় কোথায় আছে তা জানা নেই,
তুর্জ মন দিয়ে দেখছে নন্দিনিকে , তবে বেশি ক্ষন আর দেখা হল না, কারন নন্দিনি রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে, তুর্জের কাছে এসে নন্দিনি বললো কি হল আবার চাই নাকি!!!!

তাহলে ডাকলেই পারতেন এত নাটকের কি ছিলো।
এবারের কথা গুলোও তুর্জ হজম করতে পারলোনা,( এত তেতু কথা কেন বলে মেয়েটা) তাও বহু কষ্টে রাগটা সাইডে রেখে নন্দিনির কাছে এগিয়ে বললো, না চাই না —

ওহ চাইনা তাহলে এলেন কেন??

নন্দিনির পশ্নে তুর্জ নন্দিনির দুহাত চেপে ধরে খাটে বসিয়ে দিলো আর বললো জদি মন চায় ২ মিনিট সময় দাও কিছু বলার আছে আমার।
নন্দিনির সম্মতি আছে কিনা তা তুর্জ বুঝতে পারছেনা, তবে ওর চুপ হয়ে ঘার ফিরিয়ে বসে থাকাকে সম্মতিই ভেবেই বললো,
শুনো তুমিতো জানো আমার স্ত্রী সায়মা কে খুব ভালোবাসি আর বাসবো, আমি ভাবিনি অন্য কাওকে আমি সায়মার জায়গায় বসাতে পারব, তবে তুমায় না ভালোবেসে পারলাম না, তুমি এমন একটা মেয়ে যে কেউ তুমায় ভালোবাসতে বাধ্য,
গল্পের লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা।
নন্দিনি তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বললো তাই নাকি কই সবাইতো ভালোবাসলোনা অথচ ছলনা করেছে।

নন্দিনির কথা তুর্জ গায়ে মাখলোনা, কারন হয়তো অভিমান করে তুর্জকেই বলেছে, তবে আসলেই কি,নাকি অন্য কারোর ছলনার কথা বলেছে????

তুর্জ ফ্লোরে নন্দিনির পায়ের কাছে হাটু গেরে বসে ওর দুহাত আগলে ধরে আবার বললো,

সায়মা মারা জাওয়ার পর আর বিয়ে করতে চাইনি কারন ২ টা ছিলো ১ তুলির সতৎ মা আসলে ওর কষ্ট হবে।
২ আমি সায়মার জায়গাটা কাওকে দিতে চাইনা,
তবে ২ টা সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছি, তুলি কে তুমি যেভাবে আগলে রেখেছো তাতে আমি নিশ্চিন্ত আমি রই বা না রই তুমি রবে ওর পাশে।
২য় টা সায়মার জায়গাটার কথা।

তবে কেন জানি ঐ জায়গার আরেকটু জায়গা হয়েছে আর ঐ জায়গাটা তোমায় দিতে খুব ইচ্ছা করছে,
প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ কোন দিন আমি আর স্বামির অধিকার নিয়ে তোমার কাছে আসব না, যেদিন নিজে থেকে ডাকবে সেদিনই আসব,, দরকার হলে আমি অনেক দূরে চলে জাবো তুমি শুধু তুলিকে দেখে রেখো।

নন্দিনি তুর্জের কথা শুনছে তবে অন্য দিকে ফিরে তার যে কোন উওর দেয়ার ক্ষমতা নেই!!!

তুর্জ নন্দিনির আরেকটু কাছে এসে বললো নন্দিনি চলেনা দুজনে সব ভুলে একটা সংসার সাজাই তুমি আমি আর আমাদের মেয়েকে নিয়ে!!

কি পারিনা আমি সায়মার জায়গার পাশে ঠিক ওতটুক জায়গা রেখেছি তুমি আসবেকি সেই জায়গায়!!

ভালোবাসবে কি আমায়??
নন্দিনি তখনো চুপ ওর চোখ বেয়ে শুধু পানি ঝরছে কি করে বাসবে, ভালোবাসার নামটা শুনলেই তো ঘূন্না হয়, তাহলে কি করে সেই ঘেন্না উনাকে দেবো?

তুর্জ উঠে দাড়িয়ে নন্দিনিকে বললো ঠিক আছে বলতে হবে না, আমি অপেক্ষা করব,
বলেই চুপ করে শুয়ে পরলো,

নন্দিনি সেই বসেই আছে অনেক কথা বলতে চেয়েও পারলেনা তুর্জের কথার জবাব দিতে কেন পারলে না কেন?
নিজের পশ্নের উওর নিজেই খুজে না পেয়ে হতাশ হয়ে শুয়ে পরলে, এতটাই আনমনা হয়ে ছিলো নন্দিনি তাই হয়তো দেখতে পায়নি তুর্জের বালিশের এক কোনায় শুয়ে পরেছে।

শুয়ে চোখ বুঝতেই একরাজ্জ্যের ঘুম তাকে গ্রাস করেছে,

~~~~~~~ সকালে ঘুম ভাংতেই।
~~~~~~ নিজেকে কিসে যেনো জরানো মনে করলে…

ভালো করে চোখটা মেলে দেখলো- এটা কিসের কাপর মুখের সামনে এই ছোট্ট ছোট্ট চুলের মত এগুলা কি???

হাজার পশ্ন মাথায় নিয়ে মাথাটা হালকা উঠিয়ে দেখলো এটা তো তুর্জের বুকের লুম!!!

আমি এখানে কখন শুলাম ছি ছি কাল এত কিছু বলার পর ভেবেছিলাম একটু মনসত্ব আছে, কিন্তু না উনিতো সেই ছোট লোকই রয়ে গেলো,

এবার নিজেকে তুর্জের বন্ধন থেকে ছারাতে চেষ্টা করছে এমন ভাবে চেপে শুয়ে আছে বা বাহ মনে হয় হাত না কোন শেকলের প্যাচ লেগে আছে।

নন্দিনি তুর্জের হাতে চিমটি দিতেই আহ করে উঠে পরে, তুর্জ হালকা হাসি দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই নন্দিনি বললো ছোট লোক সমসময় ছোট লোকই থাকে ! কথাটা বলেই বিছানা ছেরে উঠে গেলো,
আসলে তুর্জ কিছুই বুঝতে পারল না, কালতো সে নিজেই শুয়ে ছিলো আমার পাশে এখন আবার এমন কথা বললো কেন??

”~~
নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত সপ্না, নন্দিনির আগমনে নন্দিনির দিকে না ফিরেই বললো তুমি এলে কেন? এই শরিল খারাপ নিয়ে?

নন্দিনি হালকা হাসি দিয়ে বললো ভাবি আমি ঠিক আছি এখন অনেকটাই ভালো!!!

সপ্না আর দ্বিতিয় বার কিছু বললো না কারন অনেক বেলা হয়েছে নাস্তা বানানের কাজ সারতে হবে,

ঝট পট নন্দিনির হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বললো চা টা মাকে দিয়ে এসো —–

“””””
দরজাটা ধাক্কার শব্দে চেয়ার বসেই এক নজর দেখেনিলো কে এসেছে.
নন্দিনিকে দেখে আবার চোখ বুঝে রইলো, শিলা বেগম।
নন্দিনি চা টা শিলা বেগমের দিকে বাড়িয়ে বললো মা আপনার চা….

শিলা বেগম চা টা হাতে নিয়ে, এক চুমুক দিয়ে আবার চা টা রেখে বললো তোমার সাথে কথা আছে বৌ মা ।
নন্দিনিও চুপ করে দারিয়ে আছে শিলা বেগমের কথা শুনার আশায়,
শিলা বেগম একটা ধির নিশ্বাস নিয়ে বললো দেখো ছোট বৌ মা বড় আশা নিয়ে তোমায় এ বাড়িতে এনেছি, সায়মা মারা জাওয়ার পর তুর্জ আবার বিয়েতে মত দেয় নি তবুও অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি তুর্জকে,কারন তুলির একটা মা চাই আর তুর্জের নিশ্ব জীবনে একটা মানুষ চাই সেই অন্ধকার কুচানোর। তোমার বাবার ও খুব পছন্দ হয় তুর্জকে।

কিন্তু আমি কিছু জিনিস লক্ষ করছি তোমার আর তুর্জের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে,
পরশু অনেক রাতে নেশা করে বাড়ি ফিরেছে তুর্জ,
আবার কাল নাস্তা সেরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে আর ফিরেছে রাত শেষে!!

আমি জানতে চাইনা কি হচ্ছে বা হয়েছে, কোন ইচ্ছাও নেই জানার , তুর্জ এত রাত করে কখনো বাড়ি ফিরেনি, সেদিন আমি জেগেই ছিলাম ওকে নেশা গ্রস্থ দেখে আর তখন সামনে এসে দাড়াইনি।

এখন আমি শুধু এটাই চাই যাই আছে তোমাদের দুজনের মাঝে তা ঠিক করে নাও, আমি কিন্তু অন্য কিছুর আভাস পাচ্ছি যদি তাই হয়!..
তোমায় সারা জীবন চোখের পানি ফেলতে হবে বৌ মা…

নন্দিনির চোখ বড় বড় হয়ে মুখ হা হয়ে আছে মা এমন কেন বললো কি কারন হতে পারে,

শিলা বেগমের রুম থেকে বেরিয়েও নন্দিনির মন শান্ত নেই, আসলে উনি কি বলতে চাইছেন উনি কিসের আভাসই বা পাচ্ছে??

~~~
নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত, তুলিকে খাইয়ে নন্দিনি তুলিকে কোলে নিয়েই খেতে বসেছে,

তুর্জের হাতের ব্যান্ডেজটা দেখে সপ্না জিজ্ঞাস করে তুর্জ তোমার হাতে কি করে ব্যাথা পেলে, বাধনের উপর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তুর্জ হাতটা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করেও লোকাতে পারল না কারন সবার নজর তো ওর দিকেই,

নন্দিনির চোখ তুর্জের হাতের দিকে পরতেই তার বুকটা কেপে উঠলো, একি উনার হাতে কি হয়েছে!! অনেক রক্ত এখনও লেগে আছে, বা হাতে চামচ দিয়ে কোন মতই খাবার মুখে তুলছে তুর্জ, সবাই নন্দিনির দিকে বাকা ভাবেই তাকিয়ে আছে,
তবে এই তাকিয়ে থাকার মানে সে খুব ভালো বুঝতে পারছে….

তবে নন্দিনির পক্ষে তুর্জকে খাওয়ানো সম্ভব নয়……

সোহাম কিছু বলার আগেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো…….

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here