#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব….১৬
_________________
সোহাম কিছু না ভেবেই নন্দিনির পিছু নিয়েছে,
নন্দিনির ট্যাক্সির স্পিড খুব বেশি আর এত জ্যামে, আটকে থাকতে থাকতে গাড়িটি মিলিয়ে জাচ্ছে প্রায়,
সোহাম বু্দ্ধি করে গাড়ির নাম্বারটা নোট করে নেয়,আর তুর্জকো ফোন দিয়ে সব জানায়, তুর্জ বেশ চিন্তিত হন্ত দন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, এনি তুর্জকে আটকাতে চেয়েছিলো, আজ তো আমরা বিয়ে করব তুমি কোথায় যাচ্ছে?
এনিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তুর্জ বেরিয়েছে।
কিছু দূর জাওয়ার পর সাইড কাটিয়ে সোহাম গাড়িটিকে হারিয়ে ফেলে,
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশ দেখলো নাহ ট্যাক্সিটি কোথাও নেই!! তাহলে গেলো কই?
নন্দিনির নাম্বারে ১০০ ফোন হবে সোহাম আর তুর্জ দিয়েছে, রিং হলেও ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করছেনা,
সোহাম অনেক খুজার পর গাড়িটি না পেয়ে, আবার গাড়িতে বসে সোজা ড্রাইভ শুরু করল,
কারন দারিয়ে থেকে লাভ নেই একটু এগিয়ে দেখা যাক পাওয়া জায় কিনা!!!!!
অনেক খুজার পর প্রায় ঘন্টা খানেক পর,
ট্যাক্সিটার দেখা মিললো ট্যাক্সিটা এদিকে ফিরে আসছে….
সোহাম গাড়ি থেকে নেমে ট্যাক্সিটা কে দার করিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই লোকটা উওর দিলো, হো উনারে তো ঐ হাসপাতালে নামাইয়া দিছি,….
সোহাম দুকদম পিছিয়ে গিয়ে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে বসে পরলো,
নন্দিনি হাসপাতালে কেন এসেছে? তার মানে নন্দিনি… না না এটা হতে দেয়া যাবেনা ..
তুর্জ সোহামের মোবাইল লোকেশন ট্যাগ করে ছুটছে.
আর সোহাম হাসপাতালের ভিতর ঢুকে নন্দিনির সন্ধান করছে..
এত বড় হাসপাতের কোন কোনায় আছে কে জানে, তাই নিচতলা থেকে প্রতেকটা ডাক্তারের রুম আর কেবিন চেক করছে…
তুর্জো ইতি মধ্যে চলে এসেছে সোহামকে কল দিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে নন্দিনির খুজ করছে,
তুর্জ ঘেমে একাকার নাহ নন্দিনি এমনটা করতে পারেনা ও আমার সন্তানকে শেষ করতে পারেনা,
একবার দেখা দাও নন্দিনি প্লিজ সবটা তোমায় শুনতেই হবে, আমি আর যে পারছিনা তোমার কান্না সজৎ করতে…..
পুরো হাসপাতাল খুজা শেষ তার পরও কেবিন গুলো একে একে চেক করছে…..
এর মধ্যে দেখা হয় ডক্টর ফারহানার সাথে, তুর্জ ওনার কাছে জানতে চাওয়ার আগে উনি নিজে থেকেই বললো ১০৪ নং কেবিনে আছে,
অপারেশন সুন্দর মতই হয়েছে টেনশন নিবেন না..।।
ফারহানার কথা শুনে তুর্জ স্তব্দ তাহলে নন্দিনি শেষ করে দিয়েছে আমার রাজকন্যাটাকে…..
পা আর চলছেনা তুর্জের, এত ক্ষন পাগলের মত ছুটেছে তাও এতটা ক্লান্ত হয় নি, তবে এবার পা থেমে আসছে ডক্টরের কথা শুনে।
সোহাম এসে তুর্জকে ধরে কেবিনে নিয়ে গেছে,
সোহাম ও কিছু বলছেনা আজ যদি নন্দিনি এমন কিছু করে ফেলে তাহলে এ মুখ আর কাউকে দেখাবো না কাউকে না,
কেবিনের ভিতর ঢুকে তুর্জ দেখলো আধ শোয়া হয়ে আছে নন্দিনি,
আর কিছু না ভেবেই নন্দিনির দুগাল চেপে ধরে চোখেরা পানিতে নিজেকে ভাসিয়ে বললো,
কি করলে এটা নন্দিনি কি করলে এমনটা কেন হল একবার আমায় সব বলার সোজগ তো দিতে….
সোহাম চার পাশটা চোখ বুলিয়ে তুর্জকো ধাক্কা দিয়ে কিছু ইশারা করলো,
নন্দিনি তুর্জের হাত ছারিয়ে উঠে দারিয়েছে…
তুর্জের চোখ কপালে… নন্দিনির বাবা সালাম সাহেব আরেকটা বেডে শুয়া হাতে স্যালাইন পুশ করা, আরেক হাতে ব্যান্ডেজ!!!
কহিনুর বেগমও পাশে বসে আছে….
কিছু বুঝে উঠবে তার আগেই নন্দিনি তুর্জের হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসে,
এনে তুর্জ ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে বলে,কি মনে করেছেন আমার বাচ্চা নষ্ট করে দেব তাও আপনার কারনে?
ধোকা আপনি দিয়েছেন আর কষ্ট পাবে কেন আমার বাচ্চা তা তো হবে না,
গাড়িতে উঠার পর মায়ের কল আসে বাবার ছোট্ট একটা অপরেশন হয়েছে হাতের কব্জিতে,
মা একা এসেছে আপনার ফোন বন্ধ পেয়ে আমায় কল দিলে আমি এখানে চলে আসি,
তুর্জ এবার বুজতে পারছে ফারহানা সালাম সাহেবের কথা বলছিলো, কারন নন্দিনিকে আগে থেকেই চিনে তিনি…..
সোহামের মুখে চিতল হাসি, তবে তুর্জের চেয়ে বেশি নয়, নাহ নন্দিনি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি…
ভিতরে গিয়ে সালাম সাহেবের সাথে আর কহিনুর বেগমের সাথে একটু কথা বলে হাল চাল জেনে নিলো,
তবে সালাম সাহেব তুর্জের আর নন্দিনির কি হল তা বুঝতে পারছেনা,
নন্দিনি চুপ করে বসে আছে, তুর্জকে এখান থেকে চলে জেতে বলছে বার বার তাও সে একচুল নরছেনা,
মাথা নত করে দারিয়ে আছে..
তুর্জ নন্দিনির হাত ধরে বললো একটা শেষ অনুরুধ রাখবে?
এত করুন স্বরে তুর্জের মধুর বাক্য তো কখনোই নন্দিনি ফেলতে পারেনি তাহলে আজ কি করে পারবে—
তুর্জ নন্দিনিকে একটু বাইরে আসতে বললো, নন্দিনিও চুপচাপ বাহিরে বের হয়ে গেলো,তুর্জ নন্দিনিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকো বেরিয়ে একটু খুলা জায়গায় আসে,,,
গাছের ছায়া তলে নন্দিনিকে বসিয়ে ওর পাশে নিজের বসে রয়েছে,
নন্দিনির চোখ পাশের বিলটায় হাসেঁরা সাতার কাটছে…
তুর্জ এবার নিশ্বাস নিয়ে নিলো কারন সব সত্য আজ বলবেই, এক দম শুরু থেকেই বলবে…
তার বলার আগেই নন্দিনি বিলের দিকে তাকিয়েই বললো কেন করলেন এমনটা??
কেন? আমার অপরাধটা কি বলবেন.. আমি আপনায় ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম, আর আপনি সেই একটু একটু গড়ে উঠা ভালোবাসার গলা টিপে হত্যা করলেন!!
আমি আপনায় প্রথম মানতে পারিনি, কারন আমার মনে অন্য কারো বাস ছিলো,
আর আপনিও তো আমায় মেনেনিতে পারেন নি, তো কই আমিতো এমন কিছুই করিনি,তাহলে কেন আপনি এমনটা করলেন বলুন…
তুর্জ মাথা নত করে চোখের পানি ঝরাচ্ছে,
তুর্জ নন্দিনির পেটে হাত রেখে বললো বিশ্বাস করো নন্দিনি আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি, তোমায় আমি ঠকাতে পারিনা, তুমি জেমন আমায় আকরে ধরতে চাইছো আমিও তেমন তোমায় আকরে ধরে বাচঁতে চাইছি, এই আমি আমার অনাগত সন্তানের কসম খেয়ে বলছি, আমি তোমায় ভালোবাসি বড্ড ভালো বাসি, আমি চেয়েছিলাম সবটা তোমায় খুলে বলতে কিন্তু বাড়িতে তা সম্ভব হত না, আর তুমি যখন চলে আসছিলো আমি বাধা দেইনি কারন ভেবেছিলাম তোমাদের বাড়িতে গিয়ে সবটা বলে দেবো।
নন্দিনি হা হয়ে তাকিয়ে আছে তুর্জের দিকে, না এই মানুষটা কখনো নিজের বাচ্চার কসম খেয়ে মিথ্যা বলবে না,
নন্দিনি তুর্জকে আবার পশ্ন করলো তাহলে এনির গর্ভের বাচ্চা কার? আর আপনি কেন এনিকে বিয়ে করতে চাইছিলেন কেন??
তুর্জের উচু চোখ গুলো আবার নিচু হয়ে গেছে,কি করে সত্যিটা বলবে তা নিয়ে টেনশন করছে,
নন্দিনি আবার তুর্জকে পশ্ন করতেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো, সব কিছুর উওর আমার কাছে পাবে নন্দিনি, নন্দিনি কোন দেরিনা করে পরক্ষনে পিছনে ফিরে তাকালো মানুষটা কে দেখতে….
ভাইয়া… আপনি কি করে মানে কি, আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা…
মাথায় এক হাতে চাপ দিয়ে নন্দিনি বসে আছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার এই দুইভাই মিলে আমায় পাগল করে ছারবে একদিন।
সোহাম নন্দিনির কাছে আসতেই তুর্জ কিছটা দূরে দারিয়ে পরে,
নন্দিনি তুর্জের মত ভাই পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার, আমার সংসার যাতে না ভাংগে তাই নিজের সংসারও ভাংতে রাজি হয়ে গেছে।
নন্দিনি চোখ সরু করে সোহামের দিকে তাকিয়ে রয়েছে…
সোহাম নিজেকে শক্ত করে বললো এনি আমার পি এ নয়…..
নন্দিনি আবার পশ্ন করে মানে???
মানে হল এনির ভাই আমার পি এ ছিলো, এনির ভাইয়ের একসিডেন্ট হলে এনিকে চাকরিটা দেই, কারন তাদের ফ্যামেলিতে আর কেও ছিলোনা কামানোর জন্য…
তার পর….
নন্দিনির জানার আগ্রহে সোহাম আবার বললো, পরে আর কি এনির সাথেই এদিক ওদিক ছুটা ছুটিতে দিন চলে জায়,
আসলে আমি ধিরে ধিরে ওর প্রতি আসক্ত হয়ে পরেছিলাম, তবে ওতোটা নয় জতটায় ভালোবাসা জায়।
তার পর ও নিজেকে খুব নগন্ন মনে হচ্ছিলো, আর সপ্নার কাছে অপরাধি মনে হচ্ছিলো..
তবে আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি, খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আমি খুব বড় ভুল সেই ভুলের কারনে আজ আমি সপ্নাকে মুখ দেখাতে পারছিনা, আর সপ্না জদি সব জানতে পারে ও আমায় কখনো ক্ষমা করবেনা, আর আমায় ছেরে চলে জাবে হয়তো দুনিয়া থেকে ওও।
……
সোহামের চোখের পানি চিক চিক করছে.. গলা দিয়ে আর কোন শব্দ বের হচ্ছেনা..
তুর্জ সোহামের কাধে হাত রেখে নন্দিনির কাছে এসে বললো,
এনি মোটেও ভালো মেয়ে নয় সে ভাইয়া কে ফাসিয়েছে, কিছু ছবি দেখিয়ে বার বার ব্ল্যাক মিল করে জাচ্ছে টাকা দামি গয়না , এসবের বায়নাও শুরু করে দিয়েছে,
তাই রাতের পর রাত ভাইয়া দুঃখে মদের আড্ডা খানায় রাত পার করেছে…
এনি সেদিন জখন ভাইয়াকে ছবি দেখিয়ে ধম্কাচ্ছিলো আমি সব শুনি..
বিয়ের জন্য বেশ চাপ দিচ্ছিলো কারন সে নাকি মা হতে চলছে…
তবে আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম বাচ্চাতো বাহানা সে চায় এ বাড়ির বৌ হয়ে রাজ করতে,কারন সোহাম ভাই বেশ কামাতে লেগেছে..
তাই বুদ্ধি খাটিয়ে আরো বেশি টাকার লুভ দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করতে বললেই রাজি হয়ে গেলো…
আর বাকি সব তোমার সামনে…
নন্দিনি সব শুনে দাড়িয়ে পরে,এত বড় কান্ড হয়ে গেছে আর কিছুই টের পাইনি.
তাহলে কি সত্যি আপনি এনিকে বিয়ে করবেন..
তুর্জ নন্দিনির হাত ধরে বললো কখনোই না ওর লোভটা বাহিরে এনে সব খুলাসা করতে হবে..
আর আদোকি এই বাচ্চা ভাইয়ার কিনা তার সন্দেহ আছে..
তাই ছবিগুলো সব হাতে নিয়ে ওকে জব্দ করতে হবে…
নন্দিনি মুখে হালকা হাসি এনে বললো আমিও আপনাদের পাশে আছি..
সোহাম নন্দিনির কাছে হাত জোর করে বিনতি করে বললো প্লিজ সপ্নাকে কিছু জানিয়ো না, আমি ওকে হারাতে চাই না প্লিজ………
সোহাম কে আশ্শাশ দিয়ে তুর্জের পাশে দারিয়ে আছে নন্দিনি , ইচ্ছা করছে উনার চুল গুলো সব ছিরে নেই…
তুর্জ নন্দিনির দিকে তাকিয়ে আছে..
সেহাম সেখান থেকে চলে গেছে সালাম সাহেবের কাছে…
তুর্জ নন্দিনির কাছ ঘেসে বললো,
আজ কি একটু কাছে পাবো…
এত দিনে একবারও তো কাছে ডাকোনি এবার কি ডাকবে আমায় কাছে,এখনকি মনের ঘরে জায়গা হয় নি..
নাকি আরো অপেক্ষা করতে হবে???
নন্দিনি কোন উওর না দিয়ে মুখটা বাকিয়ে চলে গেলো হাসপাতালের ভিতরে,
তুর্জ সেই কখন থেকে নন্দিনির চলে জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে….
চলবে….★★