নিয়তি পর্ব -১৫

#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব–১৫
__________________

কলিং বেলের আওয়াজে নন্দিনি সবার আগে গিয়েই দরজা টা খুলে দিলো,

তবে দরজা খুলে নন্দিনি কিছুটা বিচলিত, তুর্জের হাতে এটা কার লাগেজ?

তুর্জকে কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই এনি পিছন থেকে এসে নন্দিনিকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে!!!

তবে অবাক শুধু নন্দিনি নয়, বাড়ির সকলেই অবাক, এনিকে এখানে কেন আনল এত রাতে,? তাও ব্যাগ পএ সাথে,,,

নন্দিনির মুখে কোন কথা নেই তবে চোখে যে শত পশ্ন জমেছে তা তো তুর্জ তো ঠিকই দেখতে পারছে..

তবে সপ্না তুর্জের কাছে এসে বললো ও এখানে কেন? কিছুটা রাগি স্বরেই।
তুর্জ মাথা নত করেই জবাব দিলো, এনি এখানে থাকবে গেস্ট রুমটা রেডি করিয়ে দাও ভাবি..

সপ্না আর নন্দিনির সব গুলিয়ে জাচ্ছে,
এনি এখানে থাকবে মানে??
ওর থাকার সমস্যা হলে হোটেল বা কোন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দে, তা বাড়িতে কেন.

শিলা বেগমের চোখ গরম করা পশ্নে তুর্জ বার বার নিজের জিব্বাহ দিয়ে ঠোট ভিজাচ্ছে, সোহাম কোন শব্দ করছেনা, জেনো মুখে তালা মেরে রেখেছে কেও…

তুর্জ শিলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো মা এনি হোটেলে নয় এবাড়িতেই থাকবে কারন ওর অধিকার আছে…..

সপ্না আরেকটু এগিয়ে এসে সোহামের দিকে একবার তাকিয়ে আবার তুর্জকে পশ্ন করলো,কিসের অধিকার??

শিলা বেগমও তুর্জের কথা বুজতে পারছেনা এই ছেলেটা কি বলছে।
তুর্জ এত জনের পশ্নের জবাব না দিতে পেরে, সোজা বলে দিলো, ও এই বাড়ির বৌ হবে তাই ওর অধিকার আছ, কারো কোন পশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য নই, ও আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।

নন্দিনি তুর্জের কথায় দুকদম পিছিয়ে গেলো, কি বলছে উনি.. এনি কার বৌ কে বিয়ে করবে??
শিলা বেগম প্রায় কাদোঁ কাদোঁ, এই প্রথম তার ছেলে এমন ব্যাবহার করছে তা মেনে নেয়ার মত নয়,
আর বাচ্চা এটা মোটেও বুশ্বাস যোগ্য নয়।

…..
সবাই নিরবতায় বিরাজ মান, কারন কি বলবে তার ভাষা খুজছে,

.. এনি তু্র্জের কাছে এসে ওর শার্টে হাত বুলাতে বুলাতে বললো তুর্জ আমি গেস্ট রুমে শুবো না……

নন্দিনির চোখে আগুনের গোলা বেশ দেখা জাচ্ছে, স্যার থেকে সোজা নাম ধরে ডাকছে তাহলে কি তুর্জ এনিকে… না না কি ভাবছি এই লোকটা এত নিচ নয়, নিজের বৌ ঘরে থাকতোও উনি নিজের আয়ত্বে থাকে,আর অন্য মেয়ের পশ্নই আসেনা,তবে কেন এমন বলছে তা বুঝা টা বেশ দায়।

তুর্জ এনিকে ছারিয়ে বললো তাহলে কোথায় ঘুমাবে।.

এনিও খুশিতে গদ গদ হয়ে বললো তোমার রুমে,….

আমার রুমে মানে?? নন্দিনি এবার এনির চুল ছিরার প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত।
তবে তুর্জ সব সামাল দিয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে, শুয়ে পরো,

এনি আবার তুর্জের কাছে এসে বললো, তুমিনা তেতুল এনেছো তা কই দাও,
কথাটা শুনতেই তুর্জ হাতের ব্যাগে রাখা তেতুল টা পিছনে নিয়ে গেলো,
কারন সেই দুপুর থেকে খুজে খুজে ভালো তেতুল নিয়ে এসেছে নন্দিনির জন্য, শুধু নন্দিনির জন্য, তা কিছু তেই এনিকে দিবেনা,

তুর্জ খুব ভং করেই বললো না না তেতুল খাবেনা এতে রক্ত সল্পতা দেখা দিতে পারে,
তাই ফল খাও এই সময় ফল খুব উপকারি,
এনিও তুর্জের কথায় শায় দিয়ে তুর্জের রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে,

নন্দিনি ঝাড়ু হাতে নিয়ে দরজার সামনে এসে দারিয়ে বলছে আর এক পা এগুবি তর ঠ্যাং ভেংগে দেবো।
আর আপনি এই একটা পি এ কে আমাদের বেড রুমে কেন জায়গা দিচ্ছেন…

ওটা আমার তুলির আর আপনার রুম আর কারো নয়, এই মেয়ে জদি ওই রুমে ঢুকে তাহলে খোদার কসম একে আজ এখানেই মাটি চাপা দিয়ে দেবো,

নন্দিনির এই রাগের সাথে পরিচিত সবাই, এনিও কিছুটা ভয় পেলো,
ভয় পেয়ে তুর্জকে ডাক দিয়ে বললো না না আমি গেস্টরুমেই থাকব, একটা রুমের জন্য আমি আর আমার বাচ্চার ক্ষতি হতে দেব না..

শিলা বেগম ছেলের এমন ব্যাবহারে বেশ আহত হয়েছেন, তাই চুপ চাপ দেয়ালে ঠেস দিয়ে দারিয়ে আছে…
সপ্না এনির হাত চেপে ধরে বললো কি বললি ডাইনি তর বাচ্চা মানে??

এনি নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো, ওমা বাচ্চা মানে এই বংশের প্রদিব আর কি….
সপ্না দারানো থেকে ধপ করে মাটিতে বসে পরেছে,
।নন্দিনি প্রায় বেহুস এই নাটকের মানে কি আগা গুরাই খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা,

মাথায় চেপে ধরে নন্দিনি পরে জাওয়ার ন্যায়, তুর্জ দৌরে ধরতে গেলোও তুর্জকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে।

শিলা বেগমের আত্বনাথে বাড়ি সব্দ,… বৌ মা… বলেই চিৎকার দিয়ে তুর্জের দিকে তেরে আসে,সোহাম নন্দিনিকে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেছে,
…….

তুর্জের গালে বেশ কয়েকটা চড় পরেছে, তবে তুর্জ কোন রিয়েক্টনা করলেও শিলা বেগম নিজেই কাদঁছে, কারন এই প্রথম বার সন্তানের গায়ে হাত তুলেছে তিনি।

এনি এই পরিস্থিতিতে নিজেকে এখান থেকে শরিয়ে নেয়াই উওম মনে করল, নয়তো শিলা বেগম যা রেগে আছে এতে নিজের গালেও তবলা বাজাতে পারে।

এনি লাগেজটা টানতে টানতে গেস্টরুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো,

সপ্না বহু কষ্টে শিলা বেগম কে থামিয়েছে,
তাও শিলা বেগম তুর্জের হাত টেনে দরজার কাছে নিয়ে বললো যা বেরিয়ে বাড়ি থেকে তর মত কুলাংগারে মা হওয়ার চেয়ে মা না হওয়াই ভালো আজ থেকে আমার এক ছেলে শুধু সোহাম, তুই মরে গেছিস আমার জন্য…

তুর্জ কান্না গলায় মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে ডাক দিয়ে বললো… মা…
তুর্জকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো সায়মা মারা জাওয়ার পর কত মেয়ে দেখিয়েছি তুই বিয়ে করতে রাজি না তো নাই আটকে ছিলি।

তার পরও জোর করে নন্দিনিকে ঘরে আনি,তাও তুই ওকে আপন করে নিস নি,
আজ যখন সব ঠিক তুই আবার বাবা হবি জেনেও এমন কাজ কি করে করলি রে তুর্জ..?

তুর্জ মাকে কিছু বলতে যেয়েও সপ্নার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছে না,
তুর্জ আবার ভিতরে ঢুকে বললো মা তুমি যাই বলো আমি রাগ করব না, তুমি বলতেই পারো,

শিলা বেগম আরে রেগে গিয়ে বললো তাহলে নন্দিনির কি হবে তার গর্ভে তর সন্তান তার কি করবি.. বল জবাব দে..

তুর্জের মুখ থেকে কোন কথাই বের হল না, সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলো তুর্জকে দেখে সোহাম মাথা নত করে এদিক ওদিক তাকিয়ে বের হতে গেলে তুর্জ হাত দিয়ে রাস্তা আটকে ধরে বললো বাহ পালিয়ে জেতে পারো দেখছি ভালো করেই…
তুমি কাপুরুষ ভাইয়া…

সোহাম আর এক দন্ড দারায় নি,
রুম ছেরে বেরিয়ে গেছে,

তুর্জ তেতুলের আচারটা নন্দিনির বালিশের পাশে রেখে ওর বুকে হালকা ভর দিয়ে শুয়ে পরেছে।
সে দিন কতইনা রাগ করেছিলো তেতুলের জন্য, আর আজ আনলাম মনে হয় না ওর গলা দিয়ে নামবে। কারন কাজই এমন করেছি,

তুলিকে নিয়ে শিলা বেগম সোফায় বসে আছে সপ্নাও শিলা বেগমের পাশে বসে আছে,

রাতে এক ফুটা ঘুমায়নি শিলা বেগম, সেই সোফায় বসে ছিলো, সপ্না তার শাশুরিকে বুঝিয়েও রুমে পাঠাতে পারল না,

তাই সপ্নাও আর রুমে জায় নি, সোহাম নিজের রুমের দরজায় ঠেস দিয়ে দারিয়ে রয়েছে, চোখ তুলে কারো দিকে তাকাচ্ছেও না,,

সব কিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে বাড়িতে যা হচ্ছে তা হওয়ার ছিলো না, তাহলে কেন এমনটা হচ্ছে।

…~~~
সকালে নাস্তার টেবিলে কেউ নেই, সপ্না রান্না শেরে সবাই কে ডেকেছে, সোহাম বসেছে ঠিক তবে খাবারের প্লেটটা ওর থেকে ২ হাত দূরে রেখে,

নন্দিনি উঠে চুপ চাপ তুলিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।

তুর্জ চেয়ারটা টান দিয়ে বসতেই শিলা বেগম মুখ অন্য দিক ফিরিয়ে বসলো,
তুর্জ খাবার প্লেটে নিতে নিতে বললো, কি হয়েছে কেউ মরে গেলেও তো এমন শোক সভা হয় না, তো আজ কি হয়েছে…?

শিলা বেগমের মুখে তালা, নন্দিনির চোখের মুখের দিকে তাকাতেই পারছেনা,

সপ্না রাগে গজ গজ করতে করতে বললো বা বাহ এত বড় কান্ড করে ফেললে আর এখন বলছো কি হয়েছে,

আজকের মধ্যে এনিকে বাড়ি থেকে বের করবে তুমি.. কথা শেষ করতে না করতেই তুর্জের পাশের চেয়ারে বসে পরেছে এনি,

তুর্জ এনির দিকে তাকিয়ে বললো রেডি হয়ে নাও আমরা আজকেই বিয়ে করবো…

সোহাম আর চুপ থাকতে পারল না, কারন এতকিছু মানা তার পক্ষে সম্ভব নয়,সোহাম চিৎকার দিয়ে তুর্জকে বললো এসব বন্ধ আর সত্যি…

আর কিছু বলতে চেয়েও বলা হল না তুর্জ সোহাম কে থামিয়ে দিয়ে, আবার বলতে লাগলো এনি এখানেই থাকবে,
আর ওর কোন অসন্মান যেনো না হয়, ওর গর্ভে এই বাড়ির অংশ আছে,
আমি আর কারো কোন কথাই শুনতে চাই না,
নন্দিনি চুপ করে বসে আছে মুখে কোন রিয়েক্সন নেই।

এত বড় ধোকা কি করে পারল উনি, একবার বলে আমায় ভালোবাসে আবার এমন কান্ড করেছে।

কত নিচু লোক কে মন দিতে চলেছিলাম উনি তো নিলয়ের চেয়ে জঘন্ন্য।।।
মনে মনেই বিলাপ করে চলছে নন্দিনি।

তুর্জ নিজের বক্তব্য শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো, কারো গলা দিয়ে খাবার না নামলেও এনি বেশ করে খাচ্ছে,
সপ্না নন্দিনির কাছে খাবার এনে ধরে বললো খেয়ে নাও বোন খেয়ে নাও, এই অবস্থায় না খেয়ে থাকলে শরিল খারাপ করবে…

নন্দিনি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো আর শরিল।
যাকে ভালোবাসলাম সে হারিয়ে গেলো ,
আর যাকে ভালোবাসার চেষ্টা করে জাচ্ছি সে তো আজ মরেই গেছে,
কথাটা বলেই নিজের রুমে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেলো,
কোন কথা না বলেই নিজের পার্সটা আর এক লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পরলো,
তুর্জ বাধা দিতে দিয়েও দিলোনা কারন কোন মুখে আটকাবে, আরো চিৎকার করে নিজের অবস্থা খারাপ করবে,।
এটাই ভালো হয় ওর বাড়ি চলে গেলে ওখানে গিয়ে ওকে সব খুলে বলতে পারব,…..

নন্দিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে শিলা বেগমও আটকায় নি, কারন হল কোন কারনে আটকাবে সপ্না চোখের পানি ফেলা ছারা কিছুই করতে পারছেনা, শুধু চেয়ে তামাসা দেখছে।

তুলিকে চুমুদিয়ে বললো ক্ষমা করিস মা আমায়, আর ভাবি রোজ একবার তুলিকে নিয়ে বের হবেন প্লিজ, আমি ওকে ছারা থাকতে পারব না…

বলেই বেরিয়ে গেলো, একটা টেক্সি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।সোহাম ও নন্দিনির পিছু নিলো, কারন সবটা নন্দিনিকে জানাতে হবে, নয়তো অনেক গুলো প্রান হারাতে পারে…..

সোহাম বেরিয়ে আর নন্দিনির নাগাল পেলো না,
তাই নিজের গাড়িটা নিয়ে ছুটলো,
সোহাম কিছুটা অবাক নন্দিনি তার বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে উল্টো পথে কেন যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে????

চলবে।

💓

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here