নীড়ের খোজে পর্ব -০৪

#নীড়ের_খোজে♥
পর্বঃ০৪
#জান্নাতুল_বিথী

রুম জুড়ে পায়চারী করছি আমি।কিছুতেই ঘুম আসছে না।সারাদিন গাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম তারপর এখানে এসেও মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তাই এখন ঘুম আসছেনা।কারো সাথে গল্প করতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু কার সাথে গল্প করবো?হঠাৎ মাথায় গল্প করার চিন্তা আসায় আমি হত*বাক হয়ে যাই।আমি কারো সাথে গল্প করতে চাইছি এটা আধও বিশ্বাস যোগ্য?
আমি তো সেই মেয়ে ছিলাম যে ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতাম।অপ্রয়োজনীয় কাজ গুলাও সৎ মা আমাকে দিয়ে বারবার করাতো।মাঝে মাঝে মনে হতো আমি এইবাড়ির বেতন*মুক্ত কর্মচারী।এসএসসি পরীক্ষার পর সৎ মা তুলি আর তুহান কে পড়াতে বলতো।তাই সন্ধ্যার পর তাদের দুজনকে পড়াতাম।দুপুর বেলা যখন সবাই বিশ্রাম নিতো তখন আমি বসে পড়তাম।রাত জেগে পড়া-লেখা করতে পারতাম না।সৎ মা বলতো ঘরের লাইট জ্বালালে বিল বেশি উঠতো তাই লাইট জ্বালিয়ে পড়তে পারতাম না।গ্রীষ্ম কালে যখন সবাই ফ্যান চালিয়ে আরাম করতো তখন আমি ভ্যাঁ*পসা গরমে পড়ে থাকতাম।এক সময় দেখা যায় আমার রুম থেকে ফ্যানটাও খুলে ফেলা হয়।পুরোনো কথা মনে পড়তেই চোখ চিকচিক করে উঠে।
.
ঘরের দরজা হালকা ফাঁক করে বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখি কোনো ঘরে আলো জ্বলে কিনা।অতঃপর চোখে পড়ে আমার রুমের এর রুম পরেই লাইট জ্ব*লছে।রুমটা শৈবালের।তখন এই রুম থেকে বের হয়ে আমার সাথে কথা বলেছিলো।রাত প্রায় আড়াইটা বাজে।মানুষটা এতো রাত অবধি জেগে কি করছে দেখার ইচ্ছে জাগলো।তাই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাই।রুমের সামনে এসে কাপা হাতে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।উঁকি দিয়ে দেখি সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে কোলের উপর একটা বালিস নিয়ে তার উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে।কানে হেডফোন তাই দরজা খোলার আওয়াজ হয়তো শুনতে পায়নি।দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছি আমি ভেতরে যাওয়া কি ঠিক হবে আধো?আমার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ শৈবাল বললো,

‘উঁকি জুঁকি না দিয়ে ভেতরে আসতে পারো।’

তার কথা শুনে আমি থত*মত খেয়ে যাই।এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে আস্তে ভেতরে গিয়ে খাটের এক কোনায় গিয়ে দাড়াই।চারদিকে তাকিয়ে চারপাশটা একটু দেখে নেই।রুমের দেওয়াল গুলো পিংক কালার।দেওয়ালে শৈবালের কয়েকটা ছবি টানানো।রুম টা কিছুটা অগোছালো। যেমন বিছানার উপর দুইটা বই একটা নোটপ্যাড পড়ে আছে,টি-টেবিলের উপর একটা বই পড়ে আছে।ডিভানে একটা টি-শার্ট আর টাওয়েল পড়ে আছে।ড্রেসিং টেবিলের উপরো খানিকটা এলো*মেলো হয়ে আছে।সব মিলিয়ে যা বুঝলাম তা হলো জামাই আমার খানিকটা অগোছালো। ভাবনার মতো করেই তাকে প্রশ্ন করি,

‘আপনি কিছুটা অ*গোছালো তাই না।’

প্রশ্ন শুনে শৈবাল এমন ভাবে উত্তর দিলো যেনো তার আগে থেকেই জানা ছিলো আমি এমন প্রশ্ন করবো।সে বললো,

‘কিছুটা না।অনেকটাই।’

‘কিন্তু ছেলেরা তো সাধারনত অনেক গোছালো টাইপের হয় তাই না?’

‘না।বাস্তবে ছেলেরা অনেকটাই অগোছালো।তাদের গুছিয়ে দেয় তাদের মা অথবা বউ।আর তুমি যেটার কথা বলছো সেটা শুধু গল্প-উপন্যাসেই মানায়।এক্ষেত্রে কার কি ধারনা আমার জানা নেই।আমি জাস্ট আমার ধারনাটা তোমাকে বলছি।’

কী সহজ সরল তার স্বীকারোক্তি।আমি তী*ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে পরখ করি।গায়ের রং উজ্জল শ্যামবর্ন।গাল ভর্তি খোচা খোচা দাড়ি,চুল গুলো প্রয়োজনের থেকেও একটু বড় যার ফলে চুল গুলোতে চোখ প্রায় ডেকে আছে।চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা।চুল গুলো বড় হওয়াতেই যেনো তার সৌ*ন্দর্য বেড়ে গেছে।এক মনে বসে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে।তার চোখে চশমা দেখে সর্ব প্রথম আমার মনে যে ভাবনাটা এসেছিলো তা হলো লোকটা অনেক ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট।আমাকে তার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো,

‘আমাকে দেখা শেষ হলে বসতে পারো।কথা আছে তোমার সাথে।’

তার প্রথম কথাটা শুনে ল*জ্জা পেয়ে কিছুটা নড়েচড়ে উঠি আমি।অতঃপর শেষ কথাটা শুনে সিরিয়াস হয়ে বসে পড়ি খাটের এক কোণে।কথা বলতে আমাকে প্রস্তুত দেখে শৈবাল ও কিছুটা নড়ে চড়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘তুমি তো বেশ সু*ন্দরী তোমার পেছনে এলাকার কয়টা ছেলে ঘুরছে বলো তো?’

শৈবালের এরুপ কথায় আমি হত*ভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি?মানে সিরিয়াসলি?লোকটা এতো সিরিয়াস হয়ে এমন একটা কথা বলছে?আমি তো ভেবেছিলাম কতো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে জানি।আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে শৈবাল বলে,

‘কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?বলো?’

‘আপনাকে কে বললো আমি সুন্দরী?আজ পর্যন্ত এমন কথা কেউ বলেনি।আপনি বলছেন কিভাবে?’

‘যেভাবে বলা উচিত?’

‘মানে?’

‘মানে সিম্পল।মেজোমা চলে আসার পর তুমি নিজের প্রতি অবহেলা শুরু করছো।যেই অবহেলা থেকে নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছিলে।আর এই অযত্নের কারনে তোমার সৌ*ন্দর্য ডাকা পড়ে আছে।নিজের যত্ন নাও দেখবে নিজেকই ছিনতে পারবে না।’

মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আমি শৈবালের দিকে।ইশশ মানুষটা কি সুন্দর করে কথা বলে।তার মতো একটা ছেলে মডার্ন মেয়েদের ডিজার্ভ করে।সেখানে আমি গ্রামের মেয়ে আমাকে কি সে পছন্দ করবে?কথা টা মনে হতেই মুখেও বলে ফেললাম তাকে,

‘আচ্ছা আমি তো গ্রামের থার্ডক্লাশ মেয়ে আমাকে কি আপনি স্ব-ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন?’

‘সত্যি কথা বলতে আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করিনি।বাবার জোরাজুরি আর ইমোশনার ব্ল্যাকমেইল এর মাঝে পড়ে আমাকে বিয়েটা করতে হইছে।তুমি নিশ্চয় শুনলে যে আমাদের রেজিস্টি হইছে।বিয়েতে রাজি ছিলাম না বিধেয় আমি ইসলামিক ভাবে তোমাকে বিয়ে করিনি।কারন আমি তখন তোমার পরিচয় জানতাম না।তাই তোমাকে আমি মানতে পারিনি।থার্ডক্লাশ ভেবেওছিলাম কিন্তু যখন শুনলাম তুমি মেজোমার মেয়ে তখন ভাবলাম তোমাকে যদি থার্ডক্লাশ ভাবি তাহলে মেজোমাকেও থার্ডক্লাশ ভাবা হবে।আর তোমাকে থার্ডক্লাশ ভেবে যদি আমি তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করি তাহলে তোমার বাবা আর সৎ মায়ের সাথে আমার আর কোনো তফাৎ থাকবে না।তাই ভাবলাম তোমাকে অবহেলা না করে ভালোবাসার চেষ্টা করবো।’

‘আপনি কি আমার কথা না জেনে আমাদের গ্রামে গিয়েছিলেন?’

‘অনেক টা সেরকমই।বাবার আর মেজো চাচ্চুর সাথে ব্যবসায়ের কাজে যেখানে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফেরার পথে গ্রামে নিয়ে গেছিলো।তারপর হঠাৎ বিয়ে।’

‘আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই?সে কিছু বলবেনা আপনি বিয়ে করায়?

আমার কথা শুনে শৈবাল বললো,

‘অনেক রাত হলো ঘুমাবে না?’

শৈবালকে কথা ঘুরাতে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।তার মানে কি সত্যিই তার গার্লফ্রেন্ড আছে?কথাটা ভেবেই আমার বুক ভারী হয়ে আসে।কষ্ট কি কখনো আমার পিছু ছাড়বেনা?ভবিতব্যও কি আমার জন্য সুখের হবে না?তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে যেতেই শৈবাল আমাকে ডাকে,

‘তুহা..’

তার ডাকে আমি চমকে উঠে তার দিকে তাকাই।আমাকে তাকাতে দেখে শৈবাল মুচকি হেসে বলে,

‘আমার মতো অগোছালো ছেলের কারো স্বামী হওয়ার সৌভাগ্য হলেও প্রেমিক হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।’

চলবে,,,,,

[স্যরি গত পর্বে একটা মিস্টেক হইছে।তা হলো হিমেলের বয়স চৌদ্দ হবে।আর ক্লাস নাইনের ছেলেরাও প্রিয় মানুষদের কাছে ফেলে বাচ্চামো করে।সবাই এক রকম হয় না।আই হোপ সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে তাকাবেন।শৈবাল নামে কি কোনো সমস্যা আছে পাঠকগন?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here