নীলচে রঙের ভালোবাসা পর্ব ৭

#নীলচে_রঙের_ভালবাসা
#পর্ব_7

– যাক অবশেষে ফোন ধরলা!
– হুম
– আমাকে সবকিছু থেকে ব্লক করার কারন জানতে পারি কি?
– আমার সাথে নতুন করে যোগাযোগ করার কারন জানতে পারি কি?
– কেন নতুন করে যোগাযোগ করার জন্য বুঝি কারন লাগবে?
– অবশ্যই, কোন কারন ছাড়া কোন কোন মানুষ কাউকে খোজে না তাই না? আর এমনিতে আমি প্রচন্ড খারাপ মেয়ে তোমার মতে। তুমি ফোন দিলে তো আমি ভাব দেখাই কিন্তু আমার থেকেও সুন্দরী মেয়েরা সারাদিন তোমার আগেপিছে ঘুরে। আমি ছাড়া তো তোমার জীবন চলে যাবে। আমি একটা ন্যারো মাইন্ডের মেয়ে, আনকালচারড, আনস্মার্ট মেয়ে। তাহলে আমার সাথে কথা না বলাই বেটার না। তাই নয় কি?

কথাগুলো বলতে বলতে আমি কেঁদে ফেললাম। কেন জানি না আজ নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। ওর মুখে যেদিন প্রথম এই কথাগুলো শুনি সেদিনও আমার একই অবস্থা হয়েছিল। আমি আগে ভাবতাম যে ও আমাকে ভাল না বাসলেও হয়তো ফ্রেন্ড ভাবে কিন্তু আমি যে এতোদিন শুধুই ওর প্রয়োজন ছিলাম তা সেদিন আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছিল।
প্রথমে ফুফিয়ে কাঁদলেও হঠাৎ করে অনেক জোরে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলাম। সারা ফ্লোরে শুধু আমার কান্নার আওয়াজগুলো ধ্বনি প্রতিধ্বনি হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ না কাঁদলে যেন আমি মরে যাব, বুকের মধ্যে দলা পকিয়ে আছে যেন সবটা আজ কান্নার মাধ্যমে বের করে দিচ্ছি হয়তো। অনেকদিন ধরে বুকের মধ্যে কথাগুলো আমার আঘাত করে করে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছিল। আজ কান্না করে মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও ঘা শুকাবে।

আমার কান্নার সময় বিহঙ্গ চুপ ছিল কোন কথা বলে নি। অনেকটা সময় পর বলল, প্লিজ আর কেঁদ না।

ও বেশ অস্থির হয়ে কথাগুলো বলল। কিন্তু আমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আজ যেন আমি কান্নার প্রতিযোগিতায় নেমেছি, কান্না করে নিজের মনের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনটা নিভানোর চেষ্টা করছি। ও আবার বলল, চুপ আর একটুও কাঁদবে না।
এবারও আমার কোন ভাবান্তর হল না। আগের মতোই শব্দ করে কাঁদছি। ও আবার বলল,
আ’ম সরি হিমানী। তুমি জান আমি সেদিন ড্রাংক ছিলাম। ওই সময় মানুষ কি বলতে কি বলে তা ধরে রাখলে হবে? বলছি তো সরি,,
– ওই সময় মানুষ সত্যি কথা বলে। মনে যা থাকে তা নির্দ্বিধায় বলে ফেলে।

অপাশ থেকে বিহঙ্গ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, তোমার সাথে কথায় আমি পারব না তবে সেদিনের জন্য আমি সত্যি সরি। আর সেগুলো আমার মনের কথা ছিল না রাগের কথা ছিল
– কিসের রাগ তোমার আমার উপর?
– ছেড়ে দাও তুমি বুঝবে না। কেন আমি তোমাকে ফোন করি? কেন তোমার উপর রাগ করি এসব তুমি কোন দিনও বুঝবে না। আর আমিও তোমাকে বলব না।
– কেন বলবে না বল কেন ফোন কর? কারন তো সব শেষ।
– তোমার সাথে যোগাযোগ করতে আমার কারণ লাগবে তা আমি ভুলে গেছিলাম।
– অবশ্যই কারণ লাগবে কারন ছাড়া তো তুমি যোগাযোগ কর না কখনও। আগের বার তো সংযুক্তার প্রেমে পড়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে।
– ওহ্ তাহলে মনে কর এবারও সেরকম কোন কারনেই তোমার সাথে যোগাযোগ করছি।

আমার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসল। মনে হচ্ছে লোকটা সামনে থাকলে দুটো থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিতাম। নিজের পরবর্তী দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে বললাম,
– তা কে সে?

এবার বিহঙ্গ বেশ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। একটু আগের গুমেট ভাবটা আর নেই। আবার আগের ছন্দে বলল, সংযুক্তার,,

আমি ওকে আর বলতে না দিয়ে বললাম, আবার সংযুক্তা?
– না শোন আগে কি বলছি
– বল
– সংযুক্তার রুমমেট
– সংযুক্তার রুমমেট তো আমি!
– তুমি একা সংযুক্তা রুমমেট?
– নাহ্ আরও দুইজন আছে।
– তাহলে তুমি একা বলছ কেন?
– না মানে তুমি বাকীদের দেখলে কখন?
– গতবার বরিশাল এসেছিলাম তখন।
– গতবার কিভাবে আর কখন?
– কেন সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে?
– ওহ্ তা কে সে?
– নাম বলতে পারব না
– কেন?
– বলব তবে এখন না। আসলে আগের বার ছ্যাকা খেয়ে আমার একটা শিক্ষা হয়েছে তাই এবার আর প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে যাব না। যেয়ে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেলব। আর তার সব ব্যবস্থা তোমাকে করতে হবে।
– তার নাম এখন বললে সমস্যা কি?
– তোমার এতোকিছু জানার কি প্রয়োজন। তুমি তো বিয়ের আয়োজন করবা। এতে তো পাত্রীর নাম জানার প্রয়োজন পড়ে না। আর কাজী অফিসে বিয়ে করব তো তাই আমার এবং তার দিকের সব সাক্ষিও তোমাকেই আনতে হবে।
– আমি এসব করতে পারব না
– কেন পারবা না? সেবার না হয় বললা সংযুক্তা বি এফ আছে। এবার সেরম কোন ঝামেলা নেই আমি খোজ নিয়েছি। তাহলে তোমার সমস্যা কি?
– এতো কিছু খোজ যার থেকে নিয়েছ তাকে বল হেল্প করতে আমি পারব না।
– আমি অসহায় এর মতো তোমার কাছে একটা হেল্প চাইছি আর তুমি এভাবে বলছ। আসলে লোকে ঠিক বলে দরকারের সময় পিপড়াও হাতিকে লাথি মারে।
– মানে কি হাতি কে আর পিপড়া কে?
– প্রবাদ অনুযায়ী তুমি পিপড়া আর আমি হাতি। এমনিতেও তুমি আমার সামনে পিপড়ার মতোই হবে। তোমার যা হাইট আমি তোমার থেকে কমসে কম এক ফুট বড় তো হবই। আর শুকনা পুরা পাঠকাঠির মতো দেখতে।

কথাগুলো বলে বিহঙ্গ হসতে লাগল। আমার আবার মেজাজ খারাপ হল। হ্যা আমি জানি আমি তোমার সামনে একটা নিতান্তই অযোগ্য মেয়ে। আমার না আছে সুন্দর চেহারা না আছে উচ্চতা তাই বলে এভাবে বলবে। অবশ্য এর আগেও ও এভাবে অনেকবার বলেছে। তাই নিজেকে সংযত করে বললাম, যাই হোক আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না।

কথাগুলো বলে আমি ফোনটা কেটে দিলাম। বিহঙ্গ মনে হয় কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু তা বলার সুযোগ আমি ওকে দেয় নি। ফোনটা কেটে সুইচ অফ করে দিলাম। আমি কিছুতেই আর ওই ছেলের সাথে কথা বলব না। ওর সাথে কথা বললে আমি বারবার ভেঙ্গেচুরে শেষ হয়ে যাব।
ছেলেটা এমন কেন আমাকে কি একটুও বোঝে না। আচ্ছা আমাকে ভাল না বসল কিন্তু কেন এতো কষ্ট দিতে হবে। ওর কাছে আমি কোন দিন ভালবাসা চাই নি। আর না আমার ভালবাসা ঝুড়ি নিয়ে ওর সামনে হাজির হয়েছি তাহলে আমাকে কষ্ট দেওয়ার ঠেকা ও কেন নিয়ে রেখেছে। ওর সাথে যতোবার কথা বলি ততবার ও এমন করে। না আর পারছি না। আমি নাম্বারটাই চেন্জ কসে ফেলব। আর ও বিয়ে করবে না করুক। বউ নিয়ে সুখে থাক আমাকে তো আর এভাবে কষ্ট দেবে না।

চলবে,,

জাকিয়া সুলতানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here