নীলাম্বরীর প্রেমে পর্ব ১৫+১৬

#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব : ১৫

সন্ধ্যা ৭ টা,

ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ করে আয়ু ঘুমাচ্ছে। তখন স্পর্শ দের বাড়ি থেকে আসার পর নিজের ঘরে বসে ছিল। তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের কোনো একটা ঘর থেকে স্পর্শ, আয়ন,দিহান এর গলা পাওয়া যাচ্ছে। আয়ু আলেশী ভেঙে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আয়ুকে না চাইলেও চোখ খুলতে হলো। চোখ খুলে চারিদিক অন্ধকার দেখে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। স্বভাব গত চিৎকার করে বললো,

-” মা, ও মা তাড়াতাড়ি এসো। আমি অন্ধকারে তলিয়ে গেলাম।”

আয়ুর চিৎকারে পাশের ঘরের চাপা গুঞ্জন বন্ধ হলো। কিন্তু খানিক পড়ে আবার তাদের হাসাহাসি শুরু হলো। আয়ুর খুব রাগ হলো। পাশের ঘরের মানুষ গুলো কী তার কথা শুনতে পায়নি? আবারও ডাকতে গিয়েও থেমে গেলো। টেবিলের উপর আলো পড়ছে। আসলে আয়ুর ফোনে কেউ ফোন করেছে। আয়ু আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে ফোনটা হাত বাড়িয়ে নিলো। ওর মা ফোন করেছে। আয়ু ফোনটা কেটে ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বালিয়ে নিজের ঘরের বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের আলো জ্বেলে স্বস্তির শ্বাস নিলো। এমন না যে ওর অন্ধকারে ফোবিয়া আছে। কিন্তু অন্ধকারে প্রথমেই ওর মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। কিন্তু আস্তে আস্তে পড়ে ওই অন্ধকার ঠিকই ধাতস্থ হয়ে পড়ে। এইটা অবশ্য এই কয়েক মাস যাবত হচ্ছে। কিন্তু ও কাউকে বলেনি। এই সব নর্মাল ব্যাপার কাউকে না বলাটাই ভালো ওর কাছে।

ঘরের দরজা খুলে বাইরে আসতেই আয়ুর চোখ গেলো আয়ানের ঘরের দিকে। দরজাটা খোলাই আছে। তিনজনেরই গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দরজা থেকে ও কাউকেই দেখতে পায়নি। দুখানা, তিনখানা সিঁড়ি বাদ দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আঠারো টা সিঁড়ি আয়ু ছয় পা ফেলেই নেমে গেলো। এটা ওর কাছে একটা খেলা বলা যেতে পারে। যার নাম হলো খরগোশ চলন। আয়ুর আবার খরগোশ বেশ ভালো লাগে। তবে ভয়ও হয়, ওরা যা তুলতুলে ওদের ধরতে গেলে যদি লেগে যায়। তাই খরগোশ থেকে ও দূরেই থাকে। ওর মাসি মানে দ্রুতির বাড়িতে একটা খরগোশ ছিল, সাদা ধবধবে। ওর নাম ছিল তুলতুল। দ্রুতি প্রায়ই ব্যাগে ভরে ওদের বাড়ি আনতো। সবাই ওকে কোলে নিতো। তবে আয়ুর ছিল আলাদা টেকনিক – ছোটো কোনো কাপড় কিংবা জামা কোলে পেতে তার পর তুলতুলকে কোলে নিতো। এতে তুলতুলের সফট গায়ে কিছুই হবে না বলে আয়ু মনে করতো। যদিও বা এখনও এটাই মনে করে। তবে তুলতুল আর নেই। বিড়ালে মেরে দিয়েছে।

আয়ু নীচে নেমে দেখলো, দ্রুতি একহাতে চায়ের ট্রে নিয়ে অপর হাতে পকোড়া নেবার চেষ্টা করছে।

-” কী রে কি করছিস তুই?”

আয়ুকে দেখে দ্রুতি যেনো আকাশের চাঁদ পেলো।

-” আয়ু দি তাড়াতাড়ি হেল্প কর প্লিজ। এইগুলো উপরে নিয়ে যাবো। ”

-” এই গুলো উপরে নিয়ে গিয়ে কী হবে?”

-” কী হবে মানে? আরে বাবা আড্ডা হবে চল।”

আয়ু সোফায় বসে টিভির চ্যানেল ঘোরাতে লাগলো।

-” আড্ডা হবে তো এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? উপরে যা আমার অনেক কাজ।”

রান্নাঘর থেকে আয়ুর মা বলে উঠলো,

-” কী এমন কাজ মহারানীর জানতে পারি?”

-” কী কাজ মানে কি? আরে কাল শনিবার ভুলে গেলে। কলেজের পর আমাকে টিউশন পড়তে যেতে হবে। স্যারের পড়া গুলো তো করতে হবে তাইনা।”

-” তুই পড়ে তো একেবারে উদ্ধার করে ফেললি।”

আয়ু মুখ ফুলিয়ে ফেললো। এই মায়েদের বোঝা মুশকিল। যদি বলি আজ আমাকে পড়তে হবে তখন ও দোষ, আর না পড়লে তো কথাই নেই।

-” কী হলো যা পড়তে যা।”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ , যাচ্ছি।

আয়ু যেতে উদ্যত হলেই আয়ুর মা বললো,

– ” যাবার আগে দ্রুতি কে একটু হেল্প করে দে। ও একা নিয়ে যেতে পারছে না।”

আয়ুর মা আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দ্রুতির
থেকে চায়ের ট্রে টা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলো। দ্রুতিও ওর পিছনে চলে গেলো।

-” আমার মেয়েকে আমি পড়তে না বসলেও বকবো
না , আর বসলেও বকবোনা। ”

পিছন থেকে দ্রুতি বললো,

-” এখনও তো বিয়েই করলিনা। এর মধ্যে বাচ্চা। বাহ্, আয়ু দি দেখি ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও করে ফেলেছে।”

-” ফেলেছি তো। আমার টুইন বাবু লাগবে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ”

আয়ু আর দ্রুতি আয়ানের ঘরে ঢুকলো। দিহান দ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,

-” কার টুইন বাবু হবে বলছিস?”

আয়ু যে দ্রুতি কে থামাবে সেই সুযোগটা হলো না। তার আগেই দ্রুতি বলে উঠলো,

-” আয়ু দির। তবে এখন না ভবিষ্যতে।”

স্পর্শ চোখ গোলগোল করে আয়ুর দিকে তাকালো। কিন্তু আয়ু সেই দিকে তাকালো না। ওর এখন খুব লজ্জা লাগছে। এগুলো কি সবার সামনে বলে নাকি।

-” ঘুম থেকে উঠে যে মেয়ে বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে তার আবার এই বয়সেই টুইন বাবু পালার শখ। বলিহারি শখ তোর। তোর বরের কপালে দুঃখ আছে বুঝলি। ”

স্পর্শের খোঁচা মারাটা আয়ুর পছন্দ হলো না। ওর টুইন বাবু পালার শখ তাতে ওর কী? আয়ু রাগী চোখে একবার দ্রুতির দিকে তাকালো। পরক্ষনেই এককাপ চা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

-” ওই দিদি দাঁড়া রে। কোথায় যাচ্ছিস গল্পঃ করবো তো আয়। ”

-” ভাই তোরা গল্প কর। আমার কাজ আছে।”

আয়ু নিজের ঘরে গিয়ে চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ঘুম ভেংগে চোখে মুখে জল না দিয়ে এক গ্লাস জল খেলেও যেখানে গা গুলায় কিছু মানুষ কী করে যে বাসি মুখে চা পান করে কে জানে?

কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আয়ু অবাক, সবাই ওর ঘরে বসে রয়েছে।

-” কী ব্যাপার সবাই এই ঘরে কেনো?”

-” বেশি না বকে বস তো তুই। ”

আয়ু বসলো না। স্পর্শের কথা শুনতে ও বাধ্য না। কিন্তু আয়ু কে নির্বিকারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ ওকে জোর করে ওর সামনে বসিয়ে দিলো।

-” আমি ভাবছি আমরা ছোটোরা একটা পিকনিক করবো। কেমন হবে?”

স্পর্শের কথায় আয়ু বাদে সকলে লাফিয়ে উঠলো।

-” দারুন হবে। কিন্তু কোথায় করবে? ”

-” করার জায়গার কী অভাব নাকি ছোটু ? অনেক জায়গাই আছে। কোথাও একটা করলেই হবে। ”

-” কবে করবি তবে স্পর্শ দা? ”

-” তিন , চার দিন দিন পর করলে কেমন হবে? আমি একবার পিমনির বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। তারপর, অসুবিধা হবে?”

-” আরে স্পর্শ দা কী বলো ,অসুবিধা কিসের? যেই দিন বলবে সেইদিনই রাজি। কী বল আয়ু দি।”

আয়ু কিছু বললো না, চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব প্ল্যান করে ওরা উঠে দাঁড়ালো। সবাই একে একে বেরিয়ে গেলেও গেলো না কেবল স্পর্শ। আয়ু স্পর্শের পাশের জানালার দিকে চোখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল। কিন্তু স্পর্শের দিকে তাকালো না।

স্পর্শ আয়ুর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে কিছু একটা করে বেরিয়ে গেলো। স্পর্শকে যেতে দেখে আয়ু গিয়ে দরজাটা দিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসলো। কিন্তু সামনের খাতায় কিছু লেখা রয়েছে দেখে আয়ু খাতাটা হাতে তুলে নিলো,

” ডিয়ার টুইন বাবুর মা,

তোর বরের কপালে সত্যিই খুব দুঃখ আছে। তবে সেই দিক দিয়ে আমি যদি তোর বর হই তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে।

ইতি-
টুইন বাবুর পাপা।।”

এই কাজটা স্পর্শের আয়ু খুব ভালো জানে। খাতার পাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে মন্ড বানিয়ে স্পর্শের ঘরের বারান্দায় ছুঁড়ে মারলো।

-” যতসব বাজে ছেলে।”

পর্ব : ১৬

রাত ১১:০০

পড়ার টেবিলে খাতাটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো আয়ু। ডিনার করে এসে ও আবার পড়তে বসে ছিল। কাল পড়া না পারলে স্যার যে বকবে এমনটা নয় তবে পড়া করে রেখে দেওয়াটাই ভালো। স্যার আবার যখন তখন প্রশ্ন করে বসে। সবার সামনে পড়া না পারলে কেমন একটা লাগে। আয়ুর পড়া মানে পড়তে যাবার আগের দিন। সারা সপ্তাহ হাতের সময় ছেড়ে পড়তে যাবার আগের রাতেই ও পড়া করে। আজকে অনেক টাই রাত হয়ে গেছে। নিজের ব্যাগটা গুছিয়ে ও কেবলই শুতে যাবে তখনই স্পর্শের বারান্দা থেকে কারোর খালি গলায় গান শুনে আয়ু ওর ঘরের জানালার দিকে এগিয়ে গেল।

“নিশি ভোরে জোনাক নাচে মনেরও গহীন বনে
স্বপ্ন দেখাও বন্ধু তুমি নিগূঢ় আলিঙ্গনে
তোমায় মায়া দিলাম, সোহাগ দিলাম,
নিলাম আপন করে।
পাশে থাকবো থাকবো রে বন্ধু তোমার কারণে
ভালবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে…..”

স্পর্শ উইন্ড চিমারের মেটেল গুলো নাড়াতে নাড়াতে গান গাইছে। আয়ুর দিকে চোখ পড়তেই স্পর্শ মুচকি হাসলো। হাত নেড়ে আয়ুকে কিছু বলতেই যাচ্ছিল তার আগেই আয়ু জানলাটা দিতে উদ্যত হয়ে বললো,

-” বেসুরে গলায় বলে কিনা – জোনাক নাচে। কেনো নিজে নাচলেই তো পারে। ”

আয়ু এমন ভাবে কথাটা বললো, যেনো হাওয়ার সাথে গল্পঃ করলো। অপর দিকে স্পর্শ চিল্লিয়ে বললো,

-” ওই কি বললি তুই তোর সাহস তো কম না। আমার সুন্দর গলার স্বরকে তুই বেসুরে বললি। তুই জানিস কত মেয়ে আমার গলার স্বরে ফিদা। জানিস?

আয়ু স্পর্শের কথা ঠিক মতো শুনলো কিনা ঠিক নেই। তার আগেই জানালা দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। আয়ু চোখ বন্ধ করতেই আপন মনে বিড়বিড় করে গেয়ে উঠলো,

-” নিশি ভোরে জোনাক নাচে মনেরও গহীন বনে।”

প্রতিদিনের মতো সকালটা আজ আয়ুর কাছে অন্যরকম মনে হচ্ছে। কোনো খুশি হবার মতো ব্যাপার নেই, তবুও আয়ু আজ খুশি। নিজেকে কেমন যেন চনমনে মনে হচ্ছে।

আয়ু বারন্দায় দাঁড়িয়ে আপন মনে মুচকি মুচকি হাসছে। আর নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে পুরোটাই স্পর্শ অনুধাবন করতে ব্যস্ত। স্পর্শের ঘরের বিছানা থেকে আয়ুদের বারান্দাটা পরিষ্কার দেখা গেলেও আয়ু ওকে দেখতে পায়নি। আয়ু নিজের মতো মুচকি মুচকি হাসছে আর এই হঠাৎ করে এত দিল খুশ হওয়ার কারণ ভাবছে।

নীচ থেকে মায়ের ডাক শুনে আয়ু ফড়িঙের মত টিরিংবিরিং করে লাফাতে লাফাতে বারান্দা থেকে চলে গেলো। যাবার আগে অবশ্য দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে ওর। তাও আয়ু মুচকি মুচকি হাসতে ভোলেনি।

সকাল সকাল আয়ুর কান্ড দেখে স্পর্শের ঘুম ভেংগে বেশ ভালোই লাগছে। স্পর্শ উঠে বারন্দায় চলে গেল। বারান্দা থেকে চারিদিকটা একবার দেখে নিল।

-” বিয়ের পর টুইন বেবির মা এর মুখ দেখে ঘুম ভাঙ্গবে । আহা ভাবলেই লজ্জা লজ্জা লাগে। ”

-” আরে স্পর্শ দা দরজা খোলা।”

দিহানের ডাক শুনে স্পর্শ গিয়ে দরজাটা খুলে দিল।

-” এতো সকাল সকাল তুই আমার ঘরে কি করছিস? আমি ঠিক দেখছি তো?”

দিহান নিজের চুল গুলো ঠিক করে বললো,

-” আমি হলাম আমার মামার একমাত্র ভাগ্নে। মামার রুলস তো ফলো করতেই হবে।”

স্পর্শ দিহানের পেটে গুতো মেরে বললো,

-” আসল কথায় এসো বাবু।”

দিহান নিজের পেটে হাত দিয়ে ব্যাথা লাগার নাটক করে বললো,

-” মামা 7 টা বাজতেই ঘুম থেকে তুলে দিয়েছে। বাড়ি থাকলে আমি নয়টার কমে ঘুম থেকেই উঠতাম না।”

-” বাহ্ বাবা তো খুব ভালো কাজ করেছে। তো ডাকছিস কেনো?”

দিহান মুখ গোমড়া করে বললো,

-” মামা ডাকছে। তাড়াতাড়ি এসো। ”

-” মা আসছি। ”

আয়ু কলেজ যাবার জন্যে বেরোলো। সদর দরজাটা
ভালো করে বন্ধ করে সামনে তাকাতেই দেখলো স্পর্শও বেরোচ্ছে। স্পর্শ আয়ু কে দেখে চোখের চশমাটা একটু স্টাইল নিয়ে ঠিক করলো। আয়ু সেই দিকে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের হাতের ঘড়ির দিকে দেখলো। সকাল 9 টা অলরেডি বেজে গেছে। আয়ু হাঁটা ধরলো। মেইন রোড পর্যন্ত হেঁটে গাড়ি ধরবে।

স্পর্শ আয়ুর যাবার দিকে তাকিয়ে মুখ গোমরা করতে গিয়েও করলো না। মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজের প্রাণ ভোমরা রয়েল অ্যান্ড ফিল্ড নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। কিছুটা যেতেই নজর পড়লো আয়ুর দিকে। স্পর্শ গিয়ে আয়ুর পাশে গিয়ে এমন ভাবে দাঁড়ালো যাতে করে আয়ু যেতে না পারে।

-” গাড়িতে উঠে আয়। হেঁটে যেতে যেতে ট্রেন চলে যাবে।”

-” আমি যেতে পারব। আমাকে সাইড দিলেই হবে।”

-” বলছিনা বাইকে ওঠ।”

-” আমি যার তার বাইকে উঠি না। ”

স্পর্শ শান্ত চোখে আয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,

-” ওই আমি কি যার তার নাকি?”

-” ও তাই, তো তুমি কে হও আমার?”

আয়ুর মাথায় হালকা করে গাট্টা মেরে বললো,

-” বোকা মেয়ে। আরে আমি তোর প্রতিবেশী। প্রতি মানুষের থেকেও আমি বেশি আপন বুঝলি। নে চট পট উঠে আয়। ”

-” তুমি আমার প্রতিবেশী আমার গার্জেন না। পথ ছাড়ো আমার দেরি হচ্ছে।”

-” দেখ আয়ু জেদ করিস না। উঠে আয়।”

আয়ু এবার চিৎকার করে উঠলো,

-” বলছিনা আমি তোমার সঙ্গে যাবো না। শুনতে পারছো না। প্লিজ সরো আমার দেরি হচ্ছে। ”

স্পর্শ আয়ুর কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,

-” আস্তে আয়ু। চিৎকার করে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তুই যতক্ষণ না বাইকে উঠবি আমি তোকে যেতে দেবো না। তাই তুই ভাব কী করবি।”

আয়ু এতক্ষণ হাঁ করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে ছিল। আয়ু জানে স্পর্শের কথার কোনো নড়চড় হবে না।

-” যাবি আমার সঙ্গে?”

আয়ু ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিল।

-” উঠে বস।”

আয়ু গাড়িতে উঠতে যেতেই দেখলো স্পর্শের বাবা আসছে তার বাইকে। আয়ুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

-” কী রে উঠবি তো?”

আয়ু কিছু বললো না। হাত নেড়ে স্পর্শের বাবাকে দাঁড়াতে বললো।

-” কী রে তোরা দুজন এখানে কী করছিস?”

স্পর্শ চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা। আয়ু মিটিমিটি হেসে বলল,

-” পাপা দেখোনা আমার লেট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্পর্শ দা বলছে ওই বাইকে উঠতে। ”

-” এতো ভালো কথা। তোর দেরি হচ্ছে বলেই তো স্পর্শ তোকে দিয়ে আসতে চাইছে।”

স্পর্শ হালকা হেসে উঠলো। আয়ু ভেবেছিল ওর পাপা কে দেখে স্পর্শের থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু হলো তার উল্টো।

-” দেখোনা বাবা ওকে তখন থেকে বলছি বাইকে উঠতে। কিন্তু ও উঠছেই না। তুমি কিছু বলো।”

-” আসলে আমি কতদিন স্পর্শ দার বাইকে উঠি নি বলোতো। তাই আমার ওই বাইকে উঠতে ভয় করছে। ”

আয়ুর কথায় স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে উঠলো। আয়ু কে ধমক দিয়ে বলল,

-” বেশি না বকে উঠে আয়।”

স্পর্শের ধমকে আয়ু ভয় পেলো বলে মনে হয় না।

-” পাপা তুমিও তো ট্রেন ধরবে। আমি বরং তোমার সঙ্গে যাই। ”

-” না তুই আমার সাথেই যাবি। বাবা তুমি যাও তোমার দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া ওকে নিয়ে যেতেও কষ্ট হবে তোমার।”

আয়ু চুপচাপ গিয়ে স্পর্শের বাবার বাইকে উঠে বসলো। স্পর্শের বাবা স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” বাইকে করে নিয়ে যেতে কষ্টের আবার কি? তুই যা কোথায় যাচ্ছিস। আমি আমার মাকে নিয়ে যেতে পারবো। তাছাড়া আমরা তো একই জায়গাতেই যাবো।”

স্পর্শের বাবা বাইক স্টার্ট দিলো। পিছনে বসে আয়ু মুচকি মুচকি হাসতে ব্যস্ত। স্পর্শ ওদের যাবার দিকে তাকিয়ে নিজেও বাইক স্টার্ট দিলো।

কিছুদূর যাওয়ার পর আয়ুর কী মনে হতে পিছনে তাকিয়ে দেখলো স্পর্শও ওদের বাইকের পিছনে আসছে। স্পর্শ মুখ গোমরা করে বাইক চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে আয়ুর দিকে রেগে রেগে তাকাচ্ছে। আয়ু ফট করে স্পর্শের দিক থেকে মুখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। সামনের মিররে স্পর্শকে দেখা যাচ্ছে। আয়ুর কাছে গোমরা মুখো স্পর্শকে বেশ লাগছে। একটা কিউট কিউট ভাব ফুটে উঠেছে স্পর্শের মুখের মধ্যে। আয়ুর মনে হচ্ছে গালগুলো টেনে দিতে।

স্পর্শের খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। আয়ু কে ও কতো ভালো করে বললো। কিন্তু আয়ু ওর কথা শুনলো না। স্পর্শ গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে ওর বাবাকে ওভার টেক করে চলে গেল। স্পর্শ চলে যেতেই আয়ুর হাসি মুখটা গোমরা হয়ে গেল।

আয়ু নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো,

-” এতক্ষণ তো ভালোই যাচ্ছিল। এগিয়ে গেলো কেনো?”

সারা রাস্তা আয়ু মন খারাপ করেই এলো। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল–আগে স্পর্শ ওকে রাগালেও ও স্পর্শের সঙ্গে থাকতো। কিন্তু স্পর্শকে একটু রাগাতেই ও চলে গেলো।

আয়ু গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনের দিকে এগিয়ে গেলো। হঠাৎই ওর সামনে কেউ ট্রেনের টিকিট বাড়িয়ে দিলো। আয়ু থমকে দাঁড়িয়ে গেলো।

-” এই নে ট্রেনের টিকিট।”

-” মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া ছেলে কিনা ট্রেনের টিকিট বিক্রি করছে। ভাবা যায়।”

-” তোর মনে হচ্ছে না তুই বেশি বকছিস?”

-” সত্যি। তাহলে বরং একটা কাজ করে দিই আমি।”

-” কী কাজ?”

আয়ু একহাত স্পর্শকে দেখিয়ে থামতে ইশারা করে স্টেশনের সব লোকের সামনে চেঁচিয়ে বলল,

-” যারা টিকিট কাটবেন বলে ভাবছেন তারা এখানে চলে আসুন। এই ব্যাক্তি টিকিট বিক্রি করছে। তাড়াতাড়ি আসুন।”

স্টেশনের অনেকেই ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ হাসছে, কেউবা ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। অপরদিকে স্পর্শের মাথায় এবার রাগ উঠে গেলো। ততক্ষনে ট্রেন ঢুকছে স্টেশনে। আয়ু সামনের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু যেতে পারলো না। স্পর্শ ওর হাত টেনে ধরে রাখলো।

-” ওই আমার ট্রেন চলে এসেছে। আমার হাত ছাড়ো।

স্পর্শ আয়ুর কথায় কান না দিয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরে শিস দিতে থাকলো।

(চলবে )
{ বিঃ : রিডার্স সবার পুজোর শপিং কমপ্লিট?….. ভুল ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here