নীলাম্বুর গহীনে পর্ব ১

#নীলাম্বুর_গহীনে
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ১
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
.
.
বাহিরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। যাকে বলে ভয়ংকর ঝড়ো হাওয়া। বেলকনির সাইড ঘেঁষে রাখা গাছের টপ গুলো থরথর করে কাঁপছে। এক্ষুনি হয়তো ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে যাবে। তারাও হয়তো ভয় পাচ্ছে আগাম ঝড়ের পূর্বাভাসকে। রুবাইয়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে মা রওশন ইউশরা’র কোলে। চোখে রাজ্যের কৌতুহল। আজ তার গুণে গুণে ১৮ বছর পেরিয়ে ১৯ বছর হয়ে গেল।মা যে তাকে বলেছিল, যেদিন তার ১৯ বছর হবে সেদিন মা তাকে একটা কাহিনী শোনাবে।মায়ের জীবন কাহিনী। রুবাইয়া হাঁসফাঁস করে বলল,
” মা, তোমার কি সব কাজ শেষ? মানে রাতের খাবার কি তৈরি করে ফেলেছ?”
” হ্যাঁ, সেতো বিকেলেই করে ফেলেছি। শুধু তোর বাবা কেক আর মোমবাতি নিয়ে আসলেই পরিপূর্ণ। ”
” ও…. আচ্ছা মা তোমার কি কিছু মনে পড়ছে? মানে আমার তো ১৯ বছর হয়ে গেল। তুমি কি আমাকে বিশেষ কিছু বলতে চাচ্ছো?”
মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাসল ইউশরা। রুবাইয়ার খোলা চুলগুলো আলতো করে টান দিতে দিতে বলল,
” মায়ের জীবনী শোনার জন্য তড় সইছে না বুঝি?”
রুবাইয়া চান্স পেয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল। মায়ের শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে বলল,
” বলো না মা। অনেক তো অপেক্ষা করলাম। তুমি তো জানো আমি ঠিক কতটা উৎসুক তোমার জীবনী জানার জন্য। আর অপেক্ষা করিও না। এবার বলে ফেলো।”
” একদিনে যে শেষ হবে না মা। কিছুটা সময় তো লাগবে।আর তোর বাবাও ঘন্টা খানেক বাদে চলে আসবে। এই অল্প সময়ে কী আর বলব!”
” যতটুকু বলবে ততটুকুই শুনব মা। তুমি যদি একটু একটু করে বছর লাগিয়ে বলো তাও শুনব। তাও মানা করো না, প্লিজ বলো। ”
মেয়েকে আর না করতে পারল না ইউশরা। কথা দিয়েছিল যে, ফেলবে কী করে! বিছানার উল্টো পাশ দিয়ে নেমে বেলকনির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। পিছু নিল রুবাইয়া।আপন মনে একহাত বেলকনির বাহিরে বের করে হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির মিঠা পানি আগলে ধরে বলতে লাগল ইউশরা….
________
” ২৭ বছর আগের ঘটনা। ঠিক আজকের মতই বর্ষার ভারী বৃষ্টিমুখর দিন ছিল সেদিন। ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিন।বাস স্টপ থেকে কলেজের গেইট অবধি যেতেই ভিজে টিজে একাকার অবস্থা। সাইড ব্যাগ কাঁধ থেকে পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই ধরে ফেললাম। ভালো করে কাঁধে ঝুলিয়ে কোমর সমান চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ডিপার্টমেন্টের দিকে এগুচ্ছিলাম। হঠাৎই চোখ পড়ল ডিপার্টমেন্টের সামনে খোলা সিঁড়ির দিকে। গুনে গুনে তিন নম্বর সিঁড়িতে পা এলিয়ে বসে আছে ২০ কি ২১ বছরের একটি ছেলে। মুখ তার বৃষ্টি ঝড়া আকাশ পানে। চোখ দুটো বন্ধ। সময়ে অসময়ে ঝড়ো হাওয়ায় কেবল চোখ দুটো কাঁপছে। কেমন যেন অদ্ভুত লেগেছিল সেদিন। কোনো ছেলে মানুষও যে বৃষ্টিকে এতটা উপভোগ করতে পারে তাকে না দেখলে সত্যিই আমার জানা হতো না। হঠাৎই কানে বেশ জোরে বেলের আওয়াজ এলো। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লাস শুরু হতে কেবল ৫ মিনিট বাকি। ভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্লাস। কোনোমতেই আমি সেটা মিস করতে চাইনি। তাই আর দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করল না। হাত পা ঝেড়ে দ্রুত ছুটে গেলাম ক্লাস রুমে।
সামনে থেকে চতুর্থ বেঞ্চের মাঝের সিটে গিয়ে বসলাম। আর আমার ডান ও বাম পাশে বসেছে আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড সারা ও আফরোজা। তাদের দুজনের বাসা ভার্সিটির কাছে। সেই সুবাদে আমার আগেই দু’জন ভার্সিটিতে পৌছে যায়। অবশ্য ইন্টার পরীক্ষার পরেই ওরা দু’জন ঠিক করেছিল এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে।শুধু অনিশ্চিত ছিল আমার ভর্তি হওয়াটাই। বাসার কেউ রাজি হচ্ছিল না, মেয়ে মানুষ হয়ে শুধুমাত্র পড়ালেখার জন্য দৈনিক এতদূর আসা…অসম্ভব! বিয়ে হয়ে গেলেই তো ঝামেলা শেষ। পড়ালেখার জন্য এত ঝামেলা করার কী দরকার? মেয়ে মানুষের কাজ তো ঘরে পড়ালেখা দিয়ে কী হবে? অবশ্য নব্বই দশকের বেশিরভাগ মানুষের মনে এসব কথাই বাস করত। কিন্তু আমার মা ছিলেন সবার থেকে আলাদা। নব্বই দশকের ছিঁটেফোঁটাও তার ভেতর ছিল না। তিনি ছিলেন বেশ ব্রড মাইন্ডের। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ছোট মনমানসিকতা নিজের মাঝে বিচরণ করাতেন না। বরং যুগের থেকে কয়েকগুন এগিয়ে বড় মন, চিন্তাভাবনা নিয়ে তিনি চলতেন। আমার মা’ই আমাকে একমাত্র সাপোর্ট করেছিলেন এই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্যে। একমাত্র সেই চাইতেন আমি যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হই। মানুষের মত মানুষ হই। আমার অন্যান্য ভাই বোনদের মত গোমূর্খ না হই। পুরো ফ্যামিলির সাথে একপ্রকার মহাযুদ্ধ করেই ভার্সিটিতে ভর্তি করায় মা। আর আমিও লাফিয়ে ভর্তি হয়ে যাই। যাতে বন্ধুত্ব নামক শব্দটি থেকে কখনো হারিয়ে না যাই। সে যাই হোক…. বেঞ্চে বসা মাত্রই আফরোজা টিস্যু এগিয়ে দিল। বলল,
” হাতমুখ ভালো করে মুছে নেয়। ভিজে একেবারে ছিপছিপে হয়ে গিয়েছে। ”
আমি টিস্যু নিয়ে মুখ মুছতেই ক্লাসে স্যার চলে এলো। বইখাতা বের করার ফাঁকে স্যার নিজের পরিচিতি পর্ব শেষ করে ফেললেন। এবার পালা স্টুডেন্টদের। একে একে প্রায় অনেকেই নিজের পরিচয় দিয়ে ফেলেছে। টার্ন বাই টার্ন ঘুরে যেই পালা আমার দিকে এলো ওমনি সেই বৃষ্টিতে ভেজা ছেলেটি ক্লাসরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। স্যার সহ ক্লাসের সবাই তার মাথা থেকে পা অবধি তাকালো। কারো সাধ্য নেই তাকে স্টুডেন্ট নামের খ্যাতি দেবার।
স্যার বিষ্ময়কর দৃষ্টি দেখিয়ে বলেন,
” আপনি কি এই ক্লাসের? প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট?”
” জি স্যার। ”
” ডাক নাম? ”
” সমুদ্র। ”
স্যার এটেন্ডডেস খাতায় সমুদ্র নামটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলেন,
” সিটে গিয়ে বসুন। ”
সমুদ্রও বুকের পাটা টান টান করে ঢুকে পড়ল ক্লাসে। ভেজা শরীর থাকায় কারো সাথে বসল না। একেবারে লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসল। সবার নজর সমুদ্রের পানে। মিনমিনিয়ে আফরোজা বলল,
” ভেজা শরীরে সমুদ্রকে দেখে আমি জাস্ট মুগ্ধ! ”
সারা বলল,
” তুই ভেজা শরীর দেখছিস? আমি তো ওর আপাদমস্তক দেখছি। যেমন দুধ ফর্সা গায়ের রঙ। তেমনি তাঁর আভিজাত্যপূর্ণ চেহারা। উঁচা লম্বা তো মিনিমাম ৫ ফুট ১১ এর উপর হবে তাই না?”
আফরোজা বলল,
” তা তো হবেই। তাছাড়া বডি ফিগারও তো সেই। আর চুল….. চুল দেখেছিস? যেমন ঘন ঠিক তেমনি সিল্কি আর স্ট্রেইট। ভেজা অবস্থায় চুলগুলো যেভাবে উড়ছে, শুকনো অবস্থা না জানি কী হয়।”
সারা বলল,
” আর তার পার্সোনালিটি! উফফ….সেই সাথে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মারডালা।”
দু’জনের বর্ণনার ধরন দেখে আমি জাস্ট অবাক! দু’জনের হাতে চিমটি কেটে বললাম,
” কী শুরু করেছিস তোরা? মনে তো হচ্ছে পড়ালেখার জন্য না, এই ছেলের সৌন্দর্য্যের বর্ণনার উপর পিএইচডি অর্জন করতে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস।”
আফরোজা চিমটির ফোলা জায়গা ম্যাসাজ করতে করতে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” আমরা না’হয় ওর উপর পিএইচডি করব বলে এসেছি। তুই কেন এসেছিস? পড়ালেখার জন্যে তো? তাহলে তাই কর না। আমাদেরকে কেন ডিস্টার্ব করছিস?”
” মানে?”
” মানে আবার কী? আমি যা বলেছি তাই তো মানে। হুহ…”
সামনে থেকে স্যার বুঝতে পারলেন এখানে বাক্য বিনিময় হচ্ছে। প্রথম দিন কিছু বলতে পারবেন না বিধায় হয়তো কাশি দিয়ে আমাদের সতর্ক করলেন। আমরাও বাধ্য স্টুডেন্টদের মত চুপসে গেলাম।
ভার্সিটির ক্লাস আওয়ার শেষ। বৃষ্টির খেলাও শেষ। রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। তবে বৃষ্টির বিশুদ্ধ পানি নয়, ড্রেনের কালো নোংরা পানি। দেখেই গা ঘিনঘিন করছে। সেই কখন থেকে নজর ঘুরাচ্ছি। কিন্তু আশেপাশে রিক্সার ‘র’ এর দেখাও মিলছে না। ইচ্ছে তো করছে হেঁটেই বাস স্ট্যান্ড চলে যাই। কিন্তু যেই নোংরা পানি, নামলে নিশ্চিত পা পঁচন ধরবে। তাই বাধ্য হয়েই কলেজ ক্যান্টিনে বসে আছি। আফরোজা বলল,
” দৌড় দিলেই তো বাসায় চলে যেতে পারতাম। কিন্তু এই মরার কালা পানির জন্য তাও পারছি না। ইচ্ছে তো করছে উড়াল দিয়ে বাসার ছাদে গিয়ে পড়ি।”
সারা বলল,
” ঠিক বলেছিস। মন মেজাজটাই বিগড়ে দিয়েছে এই বৃষ্টি আর রাস্তার সুন্দর সুন্দর পানি। হুহ…. ”
ওদের কথা শুনে আমি কেবল মিটিমিটি হাসছি। হঠাৎই চোখ গেল রাস্তার ওপর। আমি কি ভুল দেখছি না-কি ঠিক তা ঠাওর করতে পারছিলাম না। দু হাতে ভালো ভাবে চোখ কচলে তাকালাম। হ্যাঁ, ওটা সমুদ্রই। প্যান্ট বটে হাঁটু সমান। ব্যাগ কাঁধে উঁচু করে ঝুলিয়ে। বা হাতে জুতো জোড়া নিয়ে আনমনে এগিয়ে চলছে ডাস্টবিনের নোংরা পানির উপর দিয়ে। দেখেই ভেতর উলটে আসছে আমার। হয়তো এক্ষুনি সাদা হলদে রঙে মেশানো বমিগুলো ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসবে। ধবধবে সাদা পা নোংরা পানির তেজস্ক্রিয়তায় ক্রমশ কালো হতে ধরেছে। কিন্তু তার হাবভাব দেখে কেউ বলবেই না এগুলো তার সাথে ঘটছে। যে কেউ বলতে বাধ্য হবে এক সমুদ্র আরেক সমুদ্রের উপর মনের আনন্দে বয়ে বেড়াচ্ছে। হ্যাঁ, এই নোংরা পানিগুলো তাঁর মুখের এক্সপ্রেশনে সমুদ্রের সচ্ছল পানির ন্যায়ই লাগছে। ভীষণ উপভোগ করছে সে। কী আজব মানুষ! সত্যি…এর জন্যই হয়তো বলা হয়, বিচিত্র জগতের বিচিত্র মানুষ।
আফরোজ হালকা ঝাকুনি দিল।বলল,
“কী রে? চুপ করে আছিস যে? পলকহীন চোখে রাস্তার ধারে কী দেখছিস ওমন করে?”
” কিছু না, এমনি তাকিয়ে ছিলাম।”
” সত্যিই কি এমনি এমনি তাকিয়েছিলি? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। আর যেই হোক অন্তত তুই এমনি এমনি তাকিয়ে থাকার মেয়ে নস।”
আফরোজা রাস্তার ধারে ঘুরেফিরে তাকালো। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না। কেননা তৎক্ষনাৎ সমুদ্র চলেও গিয়েছে। আমিও আর বিষয়টি তাদের কাছে খোলাসা করলাম না। কেননা হাসি তামাশার পাত্রী হওয়ার শখ কোনো কালেই আমার ছিল না। বরং কথা ঘোরাতে আমি বললাম, ” ওই তো একটা রিক্সা আসছে। এটা মিস হলে বাসায় যাওয়া মারাত্মক দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি আটকা রিক্সাকে।”
আফরোজাও বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল রিক্সার খুশিতে। আর আমিও বড় দুয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নিজেকে ফেরালাম।
সেদিন কার মত ভার্সিটির ঘটনা ওখানেই শেষ। বাড়ি এলাম। ফ্রেশ হলাম। খাওয়া দাওয়া করলাম। এমনকি দৈনন্দিনের করা সব কাজই স্বাভাবিক নিয়মে করলাম। কেবল… শারীরিক সক্ষমতা থেকে মন থেকে নয়। মন পায়রা তো পড়েছিল নতুন কোনো অনুভূতির খোঁজে। অচেনা মানুষটির অদ্ভুত আচরণের কারণ খোঁজার তালে। সমুদ্রের করা প্রতিটি আচরণ যেন চোখের সামনে ভাসতে লাগল দিন জুড়ে। যেদিকেই তাকিয়েছি সমুদ্রের মুখ খানি ভেসে উঠেছে। মনে হয়েছে, এই সিচুয়েশনে সমুদ্র থাকলে ঠিক কী কী করত? এরকম নানান প্রশ্ন সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। তবে… সেদিনই কিন্তু প্রথম দেখেছিলাম কোনো ছেলে মানুষকে প্রকৃতির সাথে এতটা ওতপ্রোতভাবে মিশতে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে মনেপ্রাণে অনুভব করতে। শত মানুষের ভিড়েও লোক লজ্জা ভুলে বৃষ্টির মায়াভরা কান্না’কে নিজ বুকে ঠাই দিতে….”
ইউশরার অনুভূতি প্রবণ কথা শুনে মিটিমিটি হাসল রুবাইয়া। বলল,
” প্রথম দেখায়,প্রথম দিনই এতটা ঘোর! Love at first site….তাই না মা? আমি আমার ফ্রেন্ডসদের কাছ থেকেও শুনেছি প্রেমে পড়লে না-কি প্রতিটি মানুষের ঠিক এরকমই গভীর অনুভূতি হয়।হোক সে ছেলে কিংবা মেয়ে। বাট অনুভূতি টোটালি সেইম। ”
ইউশরা মুচকি হাসলো। রুবাইয়া বলল,
” তারপর কী হলো মা?”
ইউশরা ধীর পায়ে ফিরে এলো রুমে। বিছানার এক কোণে বসল। বলল,
” দেখতে দেখতে কেটে গেল ছ’মাস। ইনকোর্স এক্সামের ডেটও এগিয়ে এসেছে। ততদিনে আমাদের একটা বেশ বড় ফ্রেন্ড সার্কেল তৈরি হয়ে যায়। যার মধ্যে সমুদ্রসহ আরও অনেকে ছেলে ফ্রেন্ডই ছিল। তবে আমি যতটা সমুদ্রের সাথে মিশতাম ততটা আর কোনো ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে মিশতাম না। এ নিয়ে নানান কথা উঠলেও আমি জাস্ট একটা কথাই বলতাম,
” সমুদ্রর রোল আমার পেছনে। এক্সামের সময় সমুদ্রকে আমার লাগবে। তোদের না। তাই পড়ার বিষয়টা তো আমার এখনি ভাগাভাগি করে নিতে হবে তাই না?” এই একটা কারণই প্রতিবার বলে যেতাম। জানতাম কেউ বিশ্বাস করত না,তাও বলতাম। কেননা আমাদের দু’জনের কথার ভাজে পড়ালেখার কথা কখনোই উঠত না। আর একসাথে সবাই বসার সুবাদে একে অপরের কথা সবাই খুব ক্লিয়ারলি শুনতে পেত। যার ফলে সবাই মিটমিটিয়ে হেসে বলত,
” তোদের পড়ালেখা বুঝি গাছের ডালে আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে লুকিয়ে থাকে? যা না, গাছ থেকে টেনে নামিয়ে নিয়ে আয় পড়ালেখা গুলো। এক্সাম সামনে তো। আর হ্যাঁ, প্রয়োজন হলে আমাদের বলিস সাহায্যের জন্য আছি। ”
বলামাত্রই সবাই খিকখিক করে জোরে হাসত। আমি রেগে গিয়ে বলতাম,
” তোরা কিন্তু বেশি বেশি করছিস। ”
তখন অন্যরা বলত,
” বুঝি বুঝি, সবই বুঝি। কার মনে কোন গানের টোন বাজে সবই বুঝি।”
আমি আরও রেগে যেতাম। চেঁচামেচি করতাম সবার সাথে। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম সমুদ্র বিষয়টি বেশ উপভোগ করছে।
হ্যাঁ, যখনই এরকম সিচুয়েশান সৃষ্টি হয়েছে সমুদ্র কখনো কারো সাথে মুখ নাড়াই নি। বরং চুপচাপ থেকে বেশ মজা নিয়েছে। মন খুলে হেসেছে। তখন সমুদ্রের মুখ জুড়ে স্পষ্ট ভেসে উঠত তাঁর মনে আমায় ঘিরে প্রতিটি অনুভূতির ঢেউ। যার উচ্চতা ও গভীরতা ব্যাপক। সেই সময়ে আমার মন জুড়ে এক দক্ষিণা হাওয়া বয়ে যেত। যার অলিগলিতে কেবল সমুদ্রের বাস। আর সমুদ্রও তাঁর চোখের ইশারায়, ঠোঁটের হাসিতে বুঝিয়ে দিত তাঁর দক্ষিণা হাওয়ায় লেপ্টে থাকা মনের অলিগলিতেও আমার বাস। কেবল আমার….”
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here