নীল বুনোলতা পর্ব -০৮

#নীল_বুনোলতা ( ৮ )
#লেখনীতে #রেহানা_পুতুল
ধৈর্যশীলা নারী যখন ভয়ংকর হয়ে উঠে,তখন পৃথিবীর কোন শক্তিই তাকে দমাতে পারেনা। তোদের যার যত অনাচার পাপাচার রয়েছে। সব শেষ হবে এবার।

লতা কোনভাবে টলতে টলতে নিজের রুমে এসে পড়ল। থরথর করে কাঁপতে লাগল সে। পা গুটিয়ে বসল বিছানার এককোনে। আবারো মনে করল দাদীর সেই গল্প। অলকনগর গ্রামে শিকদার বাড়ি নামকরা প্রভাবশালী খানদানি বাড়ি। এরমধ্যে কয়েক পরিবার নতুন বাড়ি করে অন্যত্র চলে গিয়েছে। সেই পরিবারের এক পুরুষ ছিল নারী লোভী। তাহলে কি আলতাফ সেই পুরুষ। লতা আর ভাবলনা।ঠিক করল নুয়ে গেলে চলবেনা। সব উৎখাত করতে হবে। সব অনাচার পাপাচার দূর করতে হবে।

লতা তার ভাই সবুজকে ফোন দিল।
কিরে চাবি বানিয়েছিস?

বুবু তৈরি করতে দিয়েছি। কাল সকালে হাতে পাব।

শোন দেরী করিসনা। তাহলে কালই নিয়ে আসিস।

বুবু রুমকি আমাকে অনুরোধ করে রাখছে, যখন যাব ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

উমমম…আচ্ছা নিয়ে আসিস।

লতা ফোন রেখে নিজের রুম থেকে বের হয়ে গেল। সুজানার রুমে যেতেই শুনতে পেল সুজানা ফোনে গমগম স্বরে বলছে,

তুই করলিটা কি? তোকে শিখিয়ে দিলাম কিভাবে। আর তুই করলি কিভাবে? সজীবের কাছে আমি গাঁদা ফুল আরো হয়ে গেলাম।

লতা অনুমতি ছাড়াই রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে চলে গেল।

সুজানা হতবিহ্বল হয়ে গেল লতাকে দেখে। ইতস্ততবোধ করতে লাগল। তবুও গোপনে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে,
বৌমা হঠাৎ তুমি?

কথা শুনে গিয়েছি বলে ঘাবড়ে গেলেন মা?

কিসের কথা? কেন ঘাবড়ে যাব?

আপনার ভাগনির সাথে মাত্রই বললেন যে?
আমার আসলে কপাল খারাপ মা। ছোটবেলায় মাকে হারালাম। আপনাকে নিজের মায়ের আসনে স্থান দিয়েছিলাম। এখন দেখি ভুল। এ বাড়িতে কি একজন ও ভালো মানুষ নেই? যার আশ্রয়ে আমি আমি ভালো থাকতে পারব। এত খারাপের ভীড়ে আমারও ভালো থাকাটা অসম্ভব। আমি এসেছিলাম আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে। কিন্তু দৃশ্যপটে পরিবর্তন আনতে হলো আপনারও ছোট্ট মুখোশটা খুলে গেল বলে।

কি বলতে চাও তুমি? কঠিন স্বরে বলার চেষ্টা করল সুজানা।

লতা চেয়ার টেনে আয়েশ করে বসল। মা বলেন,
কেন নিজের ভাগনিকে আমাদের একা রুমে সজীবের কাছে পাঠালেন?

তুমি চলে যাও আমার সামনে থেকে বলছি।

লতা উত্তেজিত হয়ে গেল। ককর্শ কন্ঠে আদেশের ভঙ্গিতে বলল,
সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুলটা বাঁকা করে ঘি তুলতে হয়। এই কৌশলটা দাদীর কাছ থেকেই রপ্ত করেছি বেশ ছোটবেলায়। আপনার কাছ থেকে নেপথ্য কাহিনী না জেনে আমি রুম ছাড়ছিনা। প্রস্তাব আমার। সিদ্ধান্ত আপনার। বলতে যত লেট করবেন। আপনার ঘুমাতে তত লেট হবে। আর বেশী রাত পর্যন্ত জাগলে আপনার শারিরীক কি সমস্যা হয় তা আপনিই বেশ জানেন। বাড়ির নাম ফলক দেখলেনতো। নীল বুনোলতা।

সুজানা আমতা আমতা করতে লাগল। একটু নড়ে চড়ে বসল। শুকিয়ে আসা ঠোঁট ও গলা ভিজিয়ে নিল এক মগ পানি খেয়ে। ক্ষুরের মত লতার ধারালো কথায় উপলব্ধি করতে পারল, সত্য উম্মোচন না করলে বাঁচার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যাবে।

যখন বুঝলাম সজীব তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে। তোমার প্রতি দূর্বল। তাই তাকে তোমার চোখে খারাপ বানিয়ে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমনটা করেছি।

এটার কারণ?

কারণ সজীবও আমাকে খারাপ জানে। সবাইর কাছে আমার মিথ্যা দুর্নাম রটায়।

কি দূর্নাম?

আমি নাকি তার মাকে মেরে ফেলেছি। তার বাবাকে শেষ করেছি।

তাহলে কে তার মাকে মেরেছে?

বলব। তার আগে তুমি বল,তুমি আমাকে এখান থেকে মুক্ত করে নিরাপত্তা দিতে পারবে?

এখান থেকে কেন যাবেন? এটা আপনার স্বামীর বাড়ি।

নাহ। এটা আমার স্বামীর বাড়ি নয়। এদের কারো সাথেই আমার কোন সম্পর্ক নেই।

লতা নির্বাক চোখে চাইল সুজানার নিরীহ চোখে চেয়ে। খানিক নরম গলায় বলল,
সব খোলাসা করে বলেন মুক্ত হতে চাইলে।

সজীবের বাবা ও আমার স্বামী ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। লাগোয়া গ্রাম আমাদের। সেই সুবাদে আসা যাওয়া ছিল অবাধে। সজীবের বাবার সাথে আমিও হাসিঠাট্টা করে ফ্রিভাবে গল্প করতাম। আর এটাকেই অস্র হিসেবে ব্যবহার করেছে তোমার দাদাশ্বশুর অর্থাৎ আলতাফ শিকদার। তখন উনি আমার দিকে কুনজর দেয়। আমি বুঝতেই পারিনি।

উনার নাম না আলতাফ মিয়া? অবাক কন্ঠে জানতে চাইলো লতা।

নাতো। মিয়া কই শুনলে তুমি। তবে আমি চাচা মিয়া বলে ডাকতাম উনাকে। উনি হলেন দুঃশ্চরিত্র,যৌনবিকারগ্রস্ত,অত্যাচারী আলতাফ শিকদার। যাইহোক একদিন আমি এই বাড়িতে এলে, উনি আমাকে উনার রুমে ডেকে নিল। নিয়ে উনি কিভাবে অল্প বয়সেই স্ত্রী হারা হলেন তা বলতে লাগলেন ব্যথাভরা চিত্তে। অনেকেই নাকি তাকে বিয়ে করতে বলেছে দুই পুত্রের কথা ভেবে। উনি করেন নি বিধবা স্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে।

এভাবে কথাচ্ছলে উনি আমাকে পান বানিয়ে দিতে বলল,আমাকেও খেতে বলল। আমি খেলাম উনার উনুরোধে। ক্ষুণাক্ষরেও আমি বুঝতে পারিনি জর্দার সাথে নেশাজাতীয় কিছু যে উনি মিশিয়ে রেখেছে আগেই।

আমাকে পানের নেশা ধরে যায়। কারণ তার আগে মাত্র একদিন আমি পান খেয়েছি শখ করে আমার স্বামীর সাথে বাসরঘরে।

এদের বাড়িতো ফাঁকা। তেমন কেউই নেই। আর উনার রুমে উনার অনুমতি ছাড়া কেউই প্রবেশ করতেও পারেনা। উনি দরজা বন্ধ করে দিল ভিতর থেকে। আমাকে জোর করে খাটে শুইয়ে দিল। উনার গায়ে কিন্তু অনেক জোর। আমার হুঁশ আধো আধো তখন।উনি আমার মুখ বেঁধে ফেলে যেন চিৎকার দিতে না পারি। উনি আমাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলে। আমার কোমরে কালো সূতাটাও ছিঁড়ে ফেলে। আমার দুইহাত খাটের দুই খুঁটির সাথে বেঁধে ফেললেন। ঘন্টাব্যাপী পৈশাচিক উল্লাশ করতে করতে বললেন,
আমার জিহবা লকলকাতে থাকে তোমার মত যুবতী শরীর দেখলেই। তোমার কিছুই ক্ষয়ে যাবেনা। অক্ষুন্নই থাকবে। এখন তুমিওতো সুখ পাচ্ছ। মুখ বন্ধ রাখবে। নইলে মেরে ফেলব। আমার রাজত্ব আর ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার ধারণাই নেই।

হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেল।উনি দ্রুত লুঙ্গি পরে নিলেন, আমিও কাতচিৎ হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। নগ্ন শরীরে কাপড় পেঁচিয়ে নিলাম। আমার নিঃশ্বাস উঠানামা করছে। উনি দরজা খুলে দিয়ে দরজা আড়াল করেই দাঁড়িয়ে রইল। উনার ইচ্ছে ছিল ভাবি চলে গেলে আমাকে লুকিয়ে বের করে দিবে। কিন্তু পারলনা। সজীবের মা নিলা ভাবি বললেন,

বাবা সুজানা ভাবি কই? সারা বাড়িতে দেখতে পেলাম না। বলেই তিনি রুমে ঢুকে পড়লেন। দেখলেন আমি বিধ্বস্ত।খাটের পাশে চিপায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। উনি বজ্রমূর্তি ধারণ করলেন। ঘৃণামিশ্রিত স্বরে হুমকি দিয়ে আলতাফ শিকদারকে বললেন,

আমি এক্ষুনি সজীবের বাপকে জানাচ্ছি। থানায়ও যাচ্ছি। আপনার নামে ধর্ষণের মামলা দিব। কিভাবে পারলেন নিজের মেয়ের বয়েসী কাউকে এটা করতে? এখনতো আমার ও নিরাপত্তা নিয়ে আমি শংকিত। এতই যখন শখ। বিয়ে করেন না কেন? সেটাতো দোষের কিছু হতনা।

আলতাফ শিকদার ভাবিকে টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে এলেন। দরজা বন্ধ করে দিলেন।

আমি কুঁজো হয়ে বসে আছি। ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। ভাবি বের হওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে। উনি চোখ লাল করে ভাবিকে ধমক দিলেন। বললেন,
খবরদার বলছি। তুমি আমাকে আমার ছেলে ও নাতির কাছে খারাপ বানাবানা। থানা পুলিশ করবানা। তোমার নামে জমি লিখে দিব।

ভাবি ছিল খুব ঘাড়ত্যাড়া। ভাবি বলল, আমি আপনাকে দেখেই ছাড়ব।
উনি বুঝল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। উনি ভাবিকে বিবস্র না করেই উপর্যুপরি ধর্ষন করল রুমের মেঝেতে শুইয়ে দিয়ে আমার চোখের সামনেই। উনার পশুশক্তি ও পেশীশক্তির কাছে আমি ও ভাবি হেরে গেলাম। এবং ভাবির শাড়ির আঁচল গলায় পেঁচিয়ে ভাবিকে হত্যা করল।

ভাবির এজমা ছিল। নিঃস্বাস ছোট ছিল। তাই গলায় জোরে দুপাশ থেকে টান পড়তেই মরে গেল। আমিও বের হতে পারলাম না রুম থেকে। আমাকে খাটের খুঁটির সাথে বেঁধে ফেলল। এবং আঙ্গুল তাক করে দানব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
প্রাণে বাঁচতে চাইলে আমার কথায় তাল মিলিয়ে চলবা। এই বলে উঠে গিয়ে সজীবকে ডেকে এনে হাউমাউ করে কান্নার অভিনয় করতে লাগল। আমাকে দেখিয়ে বলতে লাগল,

দাদুভাই এই ডাইনিকে তোর বাবা বিয়ে করেছে লুকিয়ে। এখন এক দুই কথায় তর্ক করে তোর মাকে মেরে ফেলল।

সজীবের তখন বয়স হবে দশ বছরের মতো। সে আবার ছিল দাদার ন্যাওটা। তাই অবুঝের বয়সে বুঝদারের মতন দাদার কথাই বিশ্বাস করল মনপ্রাণ দিয়ে। আমি কেবল ফ্যালফ্যাল চোখে এক নারকীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে পড়ে রইলাম নির্জীবের মতন।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে ফোন দিয়ে বললেন,
তুই নাকি বিয়ে করলি কবিরের বউকে। সেতো আমার প্রিয় বৌমাকে মেরে ফেলল বাবা।

চলবে — ৮
জনরা #থ্রিলার (mystery)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here