নুর পর্ব ১৭

#নূর💔
Writer_Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-17
মেহেরাব টাওয়ারে বসে রয়েছে। হাতে অর্ধেক ডিভোর্স পেপার। বাকি অর্ধেক টা মোমের কাছে। মেহেরাব পেপারটা কুঁচিকুঁচি করে ফেলে দিয়েছিলো। সেগুলো কে কুড়িয়ে সমান সমান ভাগ করে অর্ধেক মোম কে দিয়েছে, বাকি অর্ধেক নিজের কাছে রেখেছে।
আচ্ছা তার সাথেই কেন এমন হলো? সে যাকেই পছন্দ করে তাকেই হারিয়ে ফেলে কেন? সবাই কেন তার থেকে দূরে দূরে পালায়?
কুঁচিকুঁচি করা পেপারের দিকে সে তাকিয়ে থাকলো। কি সহজ সম্পর্ক ভাঙা। একটা সাইন হলেই কি ডিভোর্স হয়ে যায়? পেপারের বিয়ে না হয় পেপারে সাইন করলেই ভেঙে যাবে। মনে যে সাইন রয়েছে তা মুছবে কি করে মোম? মন থেকে বিয়ের সাইন মেহেরাব কখনো মুছবে না। এটা কি মোম জানে।
তাদের বিয়েটা পরিস্থিতি হিসেবে অপূর্ণ তবুও বিয়েটা হয়েছে, সম্পর্কটা পবিত্র। তারা স্বামী স্ত্রী। বাকি যেটুকু অপূর্ণতা সেটুকু প্রাচ্যের দেশ বাংলাদেশে গিয়ে মোমের অবিভাবকের সম্মতি গ্রহণ করে হবে।
ডিভোর্স পেপারের টুকরো গুলো টাওয়ার থেকে নিচে ফেলে দিলো মেহেরাব।
পেপার গুলো ধমকা হাওয়ায় ভাসছে। যেভাবে মোম আর মেহেরাবের সম্পর্কটা ভাসছে ধমকা হাওয়ায়।
মেহেরাব নিজের হাতে দৃষ্টিপাত করে বলল- এই হাত দিয়ে মাই ডিয়ার ওয়াইফ কে আঘাত করেছি। কাজটা কি ঠিক হলো?
এখন কেমন যেন বুকে ব্যথা করছে মেহেরাবের। আঘাত করা হলো মোম কে।
ব্যথা পেলো কিনা মেহেরাব? আঘাত করা হয়েছে মোমের গালে অথচ মেহেরাব ব্যথা পাচ্ছে বুকে!
মোম তাকিয়ে আছে ওয়াশরুমের আয়নায়৷
নেকাব খুলে আয়নার সামনে হোস্টেলে এসেছে থেকেই দাড়িয়ে আছে।
ডান গালে মেহেরাবের পাঁচ আঙুলের দাগ বসেছে।
গাল ফুলে লাল হয়ে রয়েছে।
ব্যথা পাচ্ছে কিনা সেটা অনুভব করেছেনা মোম।
তবে ঠোঁট নেড়ে কথা বলতে পাচ্ছে না। মুখের ভেতর কেউ যেন টেপ লাগিয়ে দিয়েছে।
মোমের হাতে বাকি অর্ধেক ডিভোর্স পেপারের টুকরো।
মোম টুকরো গুলো ওয়াশরুমের জানালা দিয়ে দূরে ফেলে দিলো।
কাশফিয়া মোমের জন্য চিন্তিত। সে ওয়াশরুমের দরজায় দাড়িয়ে নক করছে বার বার।
.
মোম আজ দুদিন ধরে হোস্টেল থেকে বের হয়নি।
এমনকি রুম থেকেও না।
কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে বিছানায় নাক মুখ ঢেকে।
বোঝার উপায় নেই তার মুখের অভিব্যক্তি।
নামাজের সময় উঠে শুধু নামাজ পড়ে।কোরআন পাঠের সময় কোরআন তেলওয়াত করে গুনগুন করে। সেহেরি তে দুটো খেজুর এবং ইফতারে দুটো খেজুর। এই হলো মোমের রোজা।
মেহেরাব বহুবার ফোনে ট্রাই করেছে মোম কে। সুইচ অফ।
ইউনিভার্সিটিতেও মোম নেই। ডিপার্টমেন্ট নেই, লাইব্রেরিতেও নেই।
হোস্টেলের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া তার কোন রাস্তা নেই।

আজ বাড়িতে কথা বলার সময় মোম জানতে পারলো গ্রহণের কথা। এখানে ২৫ তলা ফ্লোরে থেকে জানার উপায় নেই কোথায় কি হচ্ছে।
বাংলাদেশে মতো সুন্দর দেশে প্রচুর কুসংস্কার রয়েছে। কুসংস্কার এখন সংস্কার হয়ে দাড়িয়েছে। একদল কুসংস্কার বিশ্বাস করে, আরেকদল অবিশ্বাস করে ঠিকই কিন্তু মূল এবাদত করতে ভুলে যায়।
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আমাদের করণীয়ঃ
প্রশ্ন: আমাদের সমাজে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মাকে অনেক নিয়ম পালন করতে বলা হয় এবং অনেক কিছুতে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় গর্ভস্থ সন্তানের নাকি ক্ষতি হয়। এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে কতটুকু সঠিক? এবং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কালে আমাদের কী করা উচিত?
উত্তর:
নি:সন্দেহে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগত ও মহাবিশ্বের মধ্যে দুটি বিশাল প্রাকৃতিক পরিবর্তন-যা মহান আল্লাহর অসীম শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে।
বিজ্ঞান বলে, চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar eclipse) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse) বা খুসুফ।
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়:

এ সময় সকল মুসলিমদের জন্য করণীয় হল, সালাতুল কুসুফ/খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণ/সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করা, আল্লাহর কাছে নিজেদের পাপাচারের জন্য ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাকবীর পাঠ করা, আল্লাহর নিকট দুআ করা, দান-সদকা করা এবং এত বড় নিদর্শন দেখে মহান আল্লাহর প্রতি মনে ভয়-ভীতি জাগ্রত করা। এগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য-এমনকি একজন গর্ভবতী নারীর জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী মা জননী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا، وَادْعُوا اللهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا،
”সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অত:এব যখন তোমরা সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর বলো, আল্লাহর নিকট দু’আ করো, সালাত আদায় করো এবং দান-সদকা করো।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: [1964], অধ্যায়ঃ ১১/ সালাতুল কুসূফ (كتاب الكسوف) ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার:

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে (বিশেষ করে প্রসূতি মাদের বিষয়ে) অনেক কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমন:
– এ সময় কোন কিছু খেতে নেই। বলা হয়, সূর্যগ্রহণের ১২ ঘণ্টা এবং চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে থেকে খাবার গ্রহণ করা বারণ!
– এ সময় তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হবে!
– এ সময় যৌন সংসর্গ করা যাবে না!
– গর্ভবতী মায়েরা এ সময় যা করে, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে!
– সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের কাত হয়ে শুতে বারণ নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়!
– সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গপ্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে!
– প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের বিকলঙ্গ হবে!
– চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় যদি গর্ভবতী নারী কিছু কাটাকাটি করেন, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়—এ গুলো সবই কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস।
– এ সময় কোনো নারীকে ঘুম বা পানাহার থেকে বারণ করাও অন্যায়।
এছাড়া গর্ভবতী নারীর করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে সমাজে বহু কিছু প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সব কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণা।আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন। ইসলামী শরিয়াহ ও বাস্তবতার সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
জাহেলি যুগেও এ ধরণের কিছু ধারণা প্রচলিত ছিল। সেকালে মানুষ ধারণা করত যে, চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ হলে অচিরেই দুর্যোগ বা দুর্ভিক্ষ হবে। চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীতে কোনো মহাপুরুষের জন্ম বা মৃত্যুর বার্তাও বহন করে বলে তারা মনে করত। বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু, মহান সংস্কারক, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলোকে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মুগিরা ইবনে শুবা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হলে আমরা বলাবলি করছিলাম যে, নবী পুত্রের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। এসব কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনের দুটি। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।” (সহিহ বুখারি :১০৪৩)
সুতরাং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের মাঝে যে সকল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে উম্মতকে যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সেগুলো পালনে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
والله أعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।

কাশফিয়া মোমের মাথায় হাত রেখে বলল- শরীর খারাপ?
মোম না সূচক মাথা নাড়ালো।
-এভাবে চুপচাপ হয়ে গেলো কেন? পড়াশোনা করছো না। ক্লাসে যাচ্ছো না। কথাও বলছো না।
তোমার আশিক রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে এই শীতে।
চলো দেখবে। চলো?
মোম হাত ছাড়িয়ে নিলো।
-ক্যান্ডল আই থিংক হি লাভস ইউ!
আগুন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে মোম। মুখে বলেনা। ওর আচার-আচরণে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। তুমি বুদ্ধিমতি। তুমি অবশ্যই টের পেয়েছো।
জঙ্গলের সিংহ কে তুমি নিজের অজান্তে খাঁচায় বন্দি করে ফেলেছো পোষ মানিয়ে ।
জলন্ত আগুন কে তুমি ধারণ করে ফেলেছো মোম।
আগুন তোমার জন্য নতুন জন্ম নিয়ে নব জাতক শিশু মেহেরাব হয়ে এসেছে মোম।
শিশু যেমন পৃথিবীতে এসে কিছু বোঝে না তেমনি মেহেরাবও বুঝতে পাচ্ছে না কিছু।
তোমার ওকে সঠিক রাস্তায় চালনা করা উচিৎ।
নতুন জীবন শুরু করো।
অতীত দেশে ফেলে এসেছো।
তোমার বর্তমান এই ভীনদেশে। তোমার ভবিষ্যৎ জানালার ওপারে।
মোম বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো ভেতর থেকে।
মেহেরাব গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।
প্রচন্ড ঠান্ডায় কেউ বাহিরে বের হয় না। পশুপাখিও নয়।

-হ্যালো স্যার
-হ্যালো।
-আপনার ঠান্ডা লাগছে না?
-ওভারকোট রয়েছে অতোটা না।
-বাসায় চলে যান। আপনি তো কাঁপছেন।
-ফার্স্টে বুঝিনি। এখন ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ থাকলে বরফ হয়ে যাব। সুগার ঢাললেই আইসক্রিম হয়ে যাব হা! হা!হা!।
-আপনি বাসায় যান স্যার।
-যেতে ইচ্ছে করছে না।
আচ্ছা তুমি কাশফিয়া?
-ইয়েস। মোমের রুমমেইট, ক্লাসমেইট,ফ্রেন্ডমেইট।
-ক্যান্ডল কে একটু ডেকে দেবে? ঠান্ডায় বাহিরে আসার নিড নেই।
জানালায় নিয়ে আসতে পারবে?
-না।
-ওআচ্ছা।
-সরি।
-ইটস ওকে।
মেহেরাব গাড়িতে গিয়ে বসলো জানালার দিকে তাকিয়ে।
-চলে যাচ্ছেন?
-না। আইসক্রিম হওয়ার ইচ্ছে তাই গাড়িতে শুবো। ঘুম পাচ্ছে।
-সামনের ক্যাফেটেরিয়ায় চলুন। গরম কফি খেলে ভালো লাগবে।
-আচ্ছা চলো।
মেহেরাব কফি খাচ্ছে।
-এখন বেশ আয়েশ অনুভব করছি। বলো তো কি কথা বলতে চাও?
-আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন?
-তুমি ক্যান্ডলের ফ্রেন্ড। তোমাদের খুব মিল।
বেগানা পুরুষের সাথে নিশ্চয়ই ডেটিং করতে আসোনি এখানে?
-হ্যাঁ। কথাগুলো মন দিয়ে শুনবেন।
-ক্যান্ডল বিষয়ক কথা আমি সকল ইন্দ্রিয় দিয়ে শুনি।
-ক্যান্ডল বিবাহিতা।
-আমিও বিবাহিত।
-সেটা জানি।
আমি আপনাদের বিয়ে মিন করে বলিনি।
ক্যান্ডেলের আগে একটা বিয়ে হয়েছিল।
মেহেরাব ঠান্ডায় বরফ হয়নি। মনে হচ্ছে এখন জমে যাবে৷
-ওর স্বামী জীবিত?
-হ্যাঁ।
-কোথায়?
-জানিনা। কেউ জানে না। বিয়েটা পরিবারের সম্মতি নিয়ে হয়েছিলো।
বিয়ের কিছুদিন পর ওকে তালাক দিয়ে চলে গিয়েছে বহুদূরে।
ক্যান্ডল একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী।
মেহেরাব কথা বলতে ভুলে গেলো। মোমের এতো কষ্ট? সব সময় নিজেকে কঠোর করে রাখে দেখে বোঝা যায়না কষ্ট গুলো।
কাশফিয়া আবার বলে উঠলো- ও প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। মেনে নিতে পাচ্ছিলো না কঠিন সত্যিটা।
প্রথমে ও জানতো না কেন ওকে তালাক দেওয়া হয়েছিলো।
সময়টা কয়েক বছর আগেকার। ও তখন সদ্য ফোঁটা কিশোরী গোলাপ ছিলো।
স্কুলে পড়াকালীন নতুন একজন শিক্ষক জয়েন করেন স্কুলে। নতুন শিক্ষক ওদের বাড়িতে হাউস টিচার হিসেবে বসবাস করতেন। ওদের সব ভাইবোনদের টিউশন দিতেন। ক্যান্ডলও টিউশন পড়তো। সেখান থেকেই ওদের পরিচয়। স্যার বলে সম্মোধন করতো ও। স্যার ছিলেন হ্যান্ডসাম যুবা পুরুষ। অতি ভদ্র নম্র সুমিষ্ট ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করতো।
ওদের বাড়ির সবাই স্যার কে অতি পছন্দ করতো।
মোমও স্যার কে পছন্দ করতো।পছন্দ করবেই না কেন স্যার পছন্দ করার মতোই লোক ছিলো। মোমের বাবা ঠিক করেন স্যার কে বাড়িতেই রেখে দেবেন। মোমের সাথে বিয়ে দেবে বলে মনস্থির করেন। বাড়ির সবাই জামাইআদর শুরু করলেন। স্যারের মতো বুদ্ধিমান লোকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার ছিলো।স্যার বিষয়টি জানতেন। স্যার আপত্তি করেন নি। কিশোরী বয়সে যেমনটা হয় আরকি।
অতি কাছে যারা আসে তাদের জন্য মনে জায়গার জন্ম নেয়, ভালো লাগার জন্ম নেয়৷ কিশোরী বয়সটা এমন। যাকে প্রথম কাছ দেখা হয় তার প্রতি মায়া জন্মে।
স্যার মোমের চারপাশে ভালোলাগা রোপণ করেছিল।মোহের জাল বিছিয়ে রেখেছিলো।কিশোরী মোম কিছু না বুঝেই কয়লা কে হিরে ভেবে বসে।
মোম প্রতিটি দোয়ায় স্যার ছিলো।দোয়াতে শুধু স্যার কে চাইতো। কিশোরী মন জুরে শুধু স্যার ছিলো। স্যার নানা ভাবে মোম কে মুগ্ধ করে রাখতো। কিশোরী মোমের সাধ্য ছিলো না সেই জাল থেকে বের হওয়ার।
একদিন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা।
মোমের বাড়ির ইচ্ছে ছিলো মোম এস এস সি কমপ্লিট করার পর স্যারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্হাপন করবে,সংসার করবে।
স্যার দ্বিমত পোস্ট করেন নি।
তিনিও চাইছিলেন। মোম এস এস সি কমপ্লিট করার পর তাকে নিয়ে আমেরিকা চলে আসবেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
মোম থাকতো বাড়ির মহিলাদের সাথে অন্দরমহলে এবং স্যার থাকতেন বাড়ির পুরুষদের সাথে অন্ধের বাহিরে।
দু’জন দু’জনকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো। কাছ থেকে দেখা হতো টিউশন পড়ার সময়। সামনাসামনি পড়ে যেতো যখন তখন চোখেচোখে ভাব বিনিময় হতো। কিশোরী মোমের জীবনটা মোমেরপুতুলের ছোট ঘরের মতো আনন্দময় ছিলো।
পৃথিবীর সকল সুখ যেন মোমের কাছে ধরা দিয়েছে।
সুখের দিন বেশিদিন রইলো না। বিয়ের কিছুদিন পরেই স্যার কে কেমন চিন্তিত দেখাতো। মোম সেগুলো বুঝতে পারতো না। মোমেরপুতুলের মতো ঘর নিয়েই সে মেতে রইলো।
একবার ঈদে মোমের জন্য শাড়ি আনতে শহরে গেলেন। দুপুরে কাতল মাছের মাথা অর্ধেক টা খেয়ে বাকিটুকু মোমের জন্য রেখে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেই যে শাড়ি কিনতে গেলেন আর এলেন না।
উনাকে খোঁজা হয়। থানায় ডায়েরি করা হয়। কেউ বলে ঢাকা যেতে দেখেছে, কেউ বলে সিলেট যেতে দেখেছে, কেউ বলে রাজশাহী চট্টগ্রাম যেতে দেখেছে। মোট কথা বাংলাদেশের সকল বিভাগে তাকে অনেকে দেখতে পেয়েছিল। সকল বিভাগ গুলোতে লোক পাঠানো হয়। পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করা হয়৷ কোথাও উনার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মনে হলো স্যার বলে পৃথিবীতে কেউ নেই।
মোমের সিচুয়েশন তখন করুন। পাগল প্রায়।
কয়েক মাস পর স্যার ময়মনসিংহে মোমদের কাছে ফিরে আসে। একা নয় সাথে একজন লয়ার।কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না।সময় মতো জিজ্ঞেস করলেই হবে। তাদের আপ্যায়ন করলো যথাযথ। দুপুরে চিতল মাছের পেটি দিয়ে খেয়ে ছাদে দাড়িয়ে রইলো কতক্ষণ।মোম বারান্দা থেকে স্যারের দিকে তাকিয়ে ছিলো। স্যারও কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো তারপর নিচে নেমে মোম কে তালাক দিয়ে সোজা বের হয়ে আসেন।বাকি কাজ গুলো লয়ার করেছেন।মোম কি হয়েছে তা কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো। মোম বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। বাড়ির সবাই মোম কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ওদের সম্পর্কের ইতি ঘটে।মোম মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিল। আল্লাহর রহমতে সে বেঁচে যায় সেবা’র।
মোমের নতুন জন্ম হয়।
মেহেরাবের গলা শুকিয়ে কাঠ। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ তার গলা চেপে রেখেছে।
মেহেরাব চোখ বন্ধ করলো।
কল্পনায় সে চনচলা কিশোরী মোমের কিশোরবেলাতে পৌঁছাতে চাইলো।
মেহেরাবের চোখ থেকে একফোঁটা একফোঁটা করে পানি ঝরছে!

.
.
❤আল কুরআনের ৮১ টি উপদেশবাণীর একটি বাণীঃ
 ১৭। সুদ ভক্ষণ করো না। [সূরা বাকারা ২:২৭৫]
চলবে…….💔💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here