নুর পর্ব ২০+২১

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part–20-21
#20
মেহেরাব হোস্টেল পৌঁছে দিলো মোম কে।
মোম কে নরম সুরে বলেছিল-রাতে একা যাওয়া ঠিক না।
-সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে।
-লিসেন,আমি যেহেতু এনেছি সেহেতু আমি পৌঁছে দেব।
মোম আর কথা বাড়ালো না। আজকের দিনটা স্পেশাল ছিলো। কথা কাটাকাটি করে সে মোড নষ্ট করতে চায় না। মেহেরাবের হাত অনেক টা কেটেছে। প্লেটের টুকরো গুলো সম্ভব তুলতে গিয়ে কেটেছে। মেহেরাবের হার্টবিট ক্রমশ বাড়ছে। তার পক্ষে সম্ভব নয় মোম কে ছেড়ে দেওয়া। কখনো না।
দু-জনের মধ্যে নিরবতা।
মোম গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।
আবারও তুষারপাত হচ্ছে। আশেপাশে সবকিছু সাদা ধবধবে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবকিছু ধবধবে সাদা বরফে ডাকা দেওয়া। দেখে মনে হচ্ছে ওরা সাদা বরফের দেশে ঘুরতে বের হয়েছে।
দেশের বাড়িতে সবাই শীতের রাতে আড্ডা জমাতো আগুনের কুন্ডলী ঘিরে। ছোটরা ছিল এর মধ্যমনি।
ছোট চাচা ছোটদের উদ্দেশ্য করে বলতো- এই সামান্য শীত তোদের সহ্য হয়না যখন তখন দেশের বাহিরে পড়াশোনা করতে যাবি কি করে? সেখানে তো বরফের বৃষ্টি হয়। ইউনিভার্সিটির ভেতর আগুনের কুন্ডলী পাকিয়ে বসে থাকবি?
ছোট ভাইয়া বলতো-আগে জীবন।
-কি
-বেঁচে থাকলে পড়াশোনা।
ছোটদের সাথে সাথে বড় রাও মাথা নাড়াতো।
-হ্যাঁ কথা সত্য। আগে জীবন। বেঁচে থাকলে পড়াশোনা।
ছোট চাচা এই পর্যায়ে ছোট ভাইয়ার দিকে হতাশ গলায় তাকিয়ে থাকতো।
ছোট ভাইয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে আগুন পোহাতো।
ছোট ভাইয়া বরাবরই ডোন্ট কেয়ার স্বভাবের। বড্ড বেপরোয়া। ভেতরে বাহিরে এক রকম।
তিনি বলেন- আমার কাদা মনে কাদা।
-কি বললে?
-বাবা সবার সাদা মনে কাদা থাকে। আমার মন কাদা তাই জন্য কাদা মনে কাদা।
ভান অভিনয় তার মধ্যে নেই। তিনি সবসময় নিজের ইচ্ছে মতো করেন।
তিনি বলেন-নিজের ইচ্ছেতে ফকির হওয়া ভালো। পরের ইচ্ছেতে ফকির হলে ব্যাটাকে ভিক্ষা করতে করতে গালাগালি করব। তাতে পাপ হবে।খামাকা জেনেশুনে পাপ কাজ করার দিকে ধবিত হব কেন? যাকে বলে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারা। এমনিতে কি কম পাপ করি? নিজেকে গালাগালি করলে সওয়াব। তাতে শুধরনো যায়। আল্লাহ তায়ালা শুধরানো বান্দাকে অতি পছন্দ করেন। নিজের ইচ্ছে তে চলাচলিও তাই এক ধরনের এবাদত।
ছোট ভাইয়া অতন্ত্য হাসিখুশি মানুষ।তিনি বলেন,সবাই কে আল্লাহ তায়ালা এক সমুদ্র ইচ্ছে দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজের মধ্যে এতোগুলো ইচ্ছে দিয়েছে। সেখানে অন্যের ইচ্ছে পূরণ করতে যাব কোন দুঃখে? আমার ইচ্ছেগুলো কি কম পড়েছে?
ছোট ভাইয়ার স্বভাব কিছু মোম পেয়েছে। মোমও একরোখা। বেপরোয়া। ডোন্ট কেয়ার।
.
পুরো রাস্তা দু-জনের মধ্যে কেউ কথা বললো না।
মেহেরাবের মনে কি চলছে তা বোঝা মুশকিল।
বরফের জন্য রাস্তা ঘাট চেনা যাচ্ছে না।
আচ্ছা মেহেরাব কি মোম কে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে?
সে কি প্রতিশোধ নেবে মোমের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান হয়েছে বলে।
মোম মেহেরাবের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো।
বোঝার চেষ্টা করলো মেহেরাবের মনে কি চলছে। চোখে মুখে মনে চলাচলির কিছু ছাপ পড়েছে কিনা।
হঠাৎ করে ব্রেক কষলো।
মোম আচমকা টাল সামলাতে না পেরে মেহেরাবের গায়ে গিয়ে পড়ে গেলো।
মেহেরাব তৎক্ষনাৎ মোম কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
-আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। সামনে শুধু তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।
আমার ভালোবাসা মিথ্যা না। আমাদের ভালোবাসা আমাদের কষ্ট গুলো কে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।
-আরে আরে কি করছেন। লিভ মি।
মোমের ধম বন্ধ হয়ে আসছে।
কিছুক্ষণ পর মোম কে ছেড়েও দিলো।
গাড়ির দরজা খুলে বলল- সরি। সুইটহার্ট নামও।
জলদি ভেতরে যাও। প্রচন্ড ঠান্ডা।শরীর খারাপ হবে। কুইক।
-ইফতার টা ভালো ছিলো। রীতিমতো মহা ভোজ। সকল কিছুর জন্য ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ শোনার জন্য আয়োজন করিনি।
তোমার ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম।
মোম কিছু না বলেই সোজা ভেতরে চলে গেলো। মেহেরাব হোস্টেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তার নীল সমুদ্রের মতো চোখ দুটো চিকচিক করছে।
ট্যুরে যাওয়ার জন্য চাঁদা তোলা হচ্ছে। এবারের ট্যুর স্পট সমুদ্র। নীল সমুদ্র।
মোম যাবে না ঠিক করে ছিলো।
বিকেলে ঘুমিয়ে আছে। ঠিক তখনই হোস্টেল টিচার একটা ফর্ম দিয়ে গেলো ট্যুরে যাওয়ার ফরমালিটি পূরণ করতে।
মোম যতবার বলে সে যাবেনা। ততবার টিচার ঝকঝকে দাঁত বের করে হাসে।- একটু জলদি ভরাট করও ডিয়ার। কুইক।
মোম হাল ছেড়ে দিয়ে ট্যুরে যাওয়ার ফরমালিটি পূরণ করলো। মোম ভেবে পেলো না তার ট্যুরে যাওয়া নিয়ে টিচারের উৎসাহ কেন। হোয়াই?
ঈদের পর ট্যুরের ডেট।
.
সেদিনের পর থেকে মেহেরাব কে কাছ থেকে আর দেখতে পেলো না মোম।
দূর থেকে থেকে মেহেরাব শুধু মোম কে লক্ষ্য করে।
সামনা-সামনি পড়ে গেলে মেহেরাব পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে কিছু শপিং করা দরকার।
মোম কাশফিয়ারা শপিংয়ে এসেছে আজ।
ঈদের তিন দিন বাকি।
এই তিন দিন ওরা শপিং করে কাটাবে প্ল্যান করেছে।
ঈদের সময় শপিংয়ে ঘোরাঘুরিও একধরনের উৎসব।মেয়েদের ঈদের আসল আনন্দ শপিংমলে ঘুরে বেড়ানো।
-ম্যাম পেমেন্ট হয়েছে ইতোমধ্যেই। আবার দিতে চাচ্ছেন কেন?
মোম কাশফিয়ার দিকে তাকালো।
কাশফিয়া কাউন্টার ম্যানেজার কে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল- মজা করছেন? আমাদের সাথে আপনাদের মজার সম্পর্ক?
-ম্যাম ক্লাম ডাউন।
এই কে কোথায় আছো ম্যাম দের মাথায় পানি ঢালার জন্য কোল্ড পানি নিয়ে এসো।
মোমরা যত শপিং করেছে তার পেমেন্ট পে করার আগেই পেমেন্ট করা হয়েছে।
মোমের মনে হতে লাগলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে।
সে যেন কারও দৃষ্টি সীমার মাঝে।
নিজেকে কেমন বন্দী বন্দী মনে হচ্ছে। কারও অস্তিত্ব মোম ফিল করছে।
পার্কিংয়ে কাশফিয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময়ও কারও অস্তিত্ব সে টের পেলো।
কেউ যেন হাঁটছে।
সামনে তাকালো মোম। হঠাৎ পেছনে আওয়াজ হলো। বামে, ডানে, মাথার উপরে আওয়াজ হলো।
কি আশ্চর্য বিশাল পার্কিং প্লেসটা ফাঁকা।
মোম ভেবে পেলো না কি হচ্ছে এসব। ফাঁকা গাড়ি গুলো থেকেও আওয়াজ আসছে।
গাড়ি গুলো যেন মোমের উপর দিয়ে চলে যাবে এমন সিচুয়েশন।
বেশ বুঝতে পাচ্ছে অনেক গুলো চোখের দৃষ্টি সীমার মধ্যে সে আটকিয়েছে।
অনেকগুলো চোখের মালিক একজন।
বের হওয়ার পর কাশফিয়া মোম কে বলল- উপরে তাকাও।
মোম শপিংমলের উপরে তাকাতেই চমকে গেলো৷ মেহেরাবের দুষ্টুমি মাখা হাসি হাসি মুখের সাইনবোর্ড দেখা গেলো।
শপিংমল মেহেরাবের।
মেহেরাব সাইনবোর্ড থেকে যেন মোম কে বলছে- সুইটহার্ট শরীর খারাপ হবে। এই ঠান্ডায় দাড়িয়ে থেকো না। হোস্টেলে যাও।
মোম হতভম্ব!!!
মেহেরাব মসজিদে বসে আছে। নামাজের শেষে খুৎবা শুনতে সে পছন্দ করে। অনেক কিছু জানা যায়। নবীর সুন্নত সম্পর্কে সে বেশিকিছু অবগত নয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশেষ নাসিহাহগুলোঃ-
_________________________
▪আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ যে বিষয়ের উপর ছিলেন সেটা জানতে চায় সে যেন সূরা আল-আন’আমের এ আয়াতগুলো পড়ে নেয়। [ইবন কাসীর]

▪সুরাহ আল-আনআমের ১৫১-১৫৩ আয়াতগুলোতে আমরা সেই নাসিহাগুলো পাব, যা ছিল প্রিয় হাবীবুল্লাহের সর্বশেষ নাসিহাহ।

▪আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, তিনি সবাইকে ডেকে যেন বলেন-

▪“এদিকে এসো, তোমাদের রব্ব তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন আমি তা পড়ে শোনাই। তা এই যে,

▪>তোমারা তাঁর সাথে কোন শরীক করবে না (শরীক করা হারাম)

▪>পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে ( অসদ্ব্যবহার করা হারাম)

▪>দারিদ্রের ভয়ে তোমার তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি (রিজিকের কথা চিন্তা করে অনেকে জীবিত বা পেটের সন্তানকে হত্যা করি তা হারাম)

▪>প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও যাবে না(ধারেকাছে যাওয়া হারাম)

▪>আল্লাহ্‌ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না(কাউকে বিনাদোষে হত্যা করা হারাম)

▪>আর ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ছাড়া তার সম্পত্তির ধারেকাছেও যাবে না(ইয়াতিমের মাল খাওয়া হারাম)

▪>পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে(ওজনে কম দেওয়া বা ধোঁকা দেওয়া হারাম)

▪>যখন তোমারা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে, স্বজনের সম্পর্কে হলেও(সর্বাবস্থায় হক কথা বলতে হবে, মিথ্যা বলা হারাম)

▪>এবং আল্লাহকে দেয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করবে (আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা ভঙ্গ করা হারাম)

▪আর এ পথই আমার সরল পথ, কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর(সিরাতুল মুস্তাকিম ব্যতীত অন্য পথে চলা হারাম)

▪এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে( অবাধ্য হলে এই আমাদের পরিণতি)

▪আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমারা তাকওয়ার অধিকারী হও।

গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখুন না, প্রতিটা কাজই আমাদের ভালর জন্য, আর এই কাজগুলো না করে বিপথে গেলেই আমরা নানান গুনাহে ডুবে যাই আর হতাশায় পড়ে দিকবিদিক শূন্য হয়ে পড়ি।

এই উম্মতের মাঝে কে আছে রাসুলের সর্বশেষ নাসিহাহগুলো সুন্দর করে মেনে চলবে ও অপরকে দাওয়াত দিবে ও জানাবেন।

মোম ঘুমুচ্ছিল।
কাশফিয়া মোম কে ডেকে তুললো।
-মোম উঠ। অসময়ে ঘুমুচ্ছো কেন?
আজান দেবে। ইফতার করবে উঠ। ইফতার শেষে চাঁদ দেখব একসাথে। ওয়াও, আই এম ভেরি মাচ এক্সাইটিং।
বেলকনি থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। কাল কি তবে ঈদ নয়। নাকি ওদের বেলকনি থেকে চাঁদ দেখা যাবেনা। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ঈদের আনন্দ তো চাঁদ দেখা। ঈদের চাঁদ নিজ চোখে না দেখলে ঈদের আনন্দ কোথায়।
হোস্টেলের টিচার হাসি মুখে বলল- গাড়ি অপেক্ষা করছে।
মিস ক্যান্ডল কাম উইথ মি।
মোম গাড়িতে বসে আছে।
এটা মেহেরাবের গাড়ি।
মেহেরাব কি চাচ্ছে?সবকিছু তো ভেঙে বলা হয়েছে।
-আপনি কি চান?
মেহেরাব মোম কে ইশারা করলো আসমানের দিকে তাকাতে।
মোম ঈদের চাঁদ দেখতে পেলো। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো সে যেন অন্য পৃথিবীতে আছে।
চিকন কাঁচির মতো বাঁকানো চাঁদ। কি সুন্দর দৃশ্য।
-আজ আমার ঈদের আনন্দ দ্বিগুন হলো।
আসমানে একটা চাঁদ এবং আমার পাশে একটা চাঁদ।
মেহেরাব মোমের হাত ধরে বলল- তুমি আমার জীবন চাঁদের আলোর মতো আলোকিত করেছো সুইটহার্ট।
মোমের নিমিষেই সব আনন্দ চলে গেলো।
-কি মিন করছেন?
-তুমি যা মিন করছো।
-ভনিতা পছন্দ করিনা।
ডিরেক্ট বলবেন।
-আমিও ভনিতা পছন্দ করিনা। ডিরেক্ট বলছি। আই লাভ ইউ। ইউ আর মাই লাইফ, মাই লাভ।
তোমাকে আমার চাই। তুমি আমার প্রয়োজন। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
-আমি আপনাকে ঐদিন কি বললাম?
-তুমি তো তোমার টা বলেছো।
আমি আমার টা বলব।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
হ্যাঁ তুমি আমার ভালোবাসা।
-আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
ঘৃণা করি এবং ঘৃণা করি।
কারণ আপনি অত্যন্ত নির্লজ্জ বেহায়া, হ্যাংলা।
মোমের হাত নিজের বুকে রেখে মেহেরাব বলল- আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি এবং ভালোবাসি।
তুমি যতবার বলবে ঘৃণা করি। আমি তারচেয়ে বেশিবার বলব তোমাকে ঘৃণা করি।
তোমার ঘৃণা গুলো ভালোবাসায় রুপান্তর করব আমি।
আর হ্যাঁ ভুলে যাচ্ছো আমি কে। আমার জন্ম কোথায়।
আমি পাশ্চাত্যের দেশের ছেলে। নির্লজ্জ, বেহায়া, হ্যাংলা আমার জাতিগত স্বভাব।
মোম হাত ছাড়িয়ে দুই হাত দিয়ে হাত তালি দিয়ে বাহবা দিলো মেহেরাব কে।
-বাহ!বাহ! বাহ! ।
নিজের সমন্বয়ে সত্যিটা নিজেই বলছেন।
-শুনুন, আমি প্রাচ্যের মেয়ে।
লজ্জা, আত্মসম্মান, আত্মপ্রত্যয় আমার জাতিগত স্বভাব।
এখানে আমি পড়তে এসেছি। আমার বাবা মা আমাকে ডিগ্রি নিতে পাঠিয়েছেন। নির্লজ্জ হাসবেন্ড নিতে পাঠায়নি।
আমার দেশে আমু ডিগ্রি নিয়ে যাব। বিদেশি হাসবেন্ড নয়।
-আই লাইক ইট। তোমার কাঁটার মতো কথাগুলো মনে না বিঁধলে আজকাল ভালো লাগেনা।এগুলো ভালোবাসার কাঁটা। আশাকরি এভাবেই আমার মনে কাঁটা বিঁধিয়ে যাবে সারাজীবন।
-বেহায়া।
-জানি।
-কেন আপনি বুঝেন না। ভালোবাসা এতোটা সহজ নয়। বারবার ভালোবাসা যায়না। আমার একটা মন ছিলো। সেটা মরুভূমি।
আমি আপনাকে ভালোবাসি না। বাসতে পারব না।
মেহেরাব মোমের হাত গুলো আর শক্ত করে নিজের বুকের মধ্যে টেনে বলল- মরুভূমিতে গোলাপ ফোঁটাব আমি।
লাল টকটকে গোলাপ। ভালোবাসার গোলাপ।

.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২০। আমানত রক্ষা করো। [সূরা বাকারা ২:২৮৩] 

.
চলবে……..💔💔💔
.
.
#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-21

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু!
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব ”
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নাম্বার ৩৫৪০)

” সুবহানাল্লাহ”
মোম সব সময় তওবা করে। বিষেশ করে মোনাজাতে। নিজের অজানা, জানা সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমোনো উচিৎ কাজ নয় তবুও মোমের চোখ লেগে এলো।

মনে হচ্ছে কেউ পানি ঢেলে দিচ্ছে শরীরে। কে হতে পারে? ছোট ভাইয়া?
ছোট ভাইয়া প্রত্যেক ঈদে কাক ডাকা ভোরে উঠে। পানি ভর্তি গামলা নিয়ে সকলের কামরায় যেত। সবার গায়ে পানি ঢেলে দিতেন।
ঈদের দিন বিচিত্র এক কারণে সবার ঘুম থেকে উঠতে লেট হতো। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠা মানে ছোট ভাইয়ার পানি ঢালা।
না আজ ছোট ভাই নয়। কাশফিয়া পানি ঢালছে।
-তুমি কি করলে?
জামাকাপড়, বিছানাপত্র সবকিছু নষ্ট হয়ে গেলো। ভিজে গেলো।
মোম একেবারে ভিজে চপচপ করছে।
-আগুন বলেছেন।
-পানি ঢালতে?
-হ্যাঁ।
-আর তুমি তার কথা শুনলে?
-না শুনলে আমাকে সমুদ্রে ফেলে দেবে।
নাও ফোনে কথা বলো।
উনি লাইনে আছেন।
মোম ফোন হাতে নিয়ে লাইন কেটে দিলো।
তখুনি ম্যাসেজ এলো।
“ঈদ মোবারক ”
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি।সুইটহার্ট পানি থেরাপির জন্য রিয়েলি সরি।কি করব বলো,তুমি ঘুম থেকে উঠছিলে না। দেখা হলে আমাকে মুনাফা সমেত সমুদ্রের পানিতে ভিজিয়ে দিও।
তোমার জন্য ড্রেস পাঠিয়েছি। ইন্ডিয়ান শাড়ি।
আজকের দিনটা খুব স্পেশাল আমার জন্য। কেননা আজ আমার প্রথম ঈদ। বুঝতে পাচ্ছো এটা আমার জন্য কি? আমার জন্য কতটা? তোমাকে বোঝাতে পারব না আমার মনে কি বইছে……… আজ তোমার সাথে ঈদের দিন কাটাতে চাই।
গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
মোম আর পড়লো না। এতো লম্বা ম্যাসেজ। ম্যাসেজ তো নয় যেন মহিষের রচনা।
মোম শালওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের বাড়িতে সবাই কে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
আজ সারাদিন সে নিজের মনের ঘুরবে একাএকা। রাতে রুমমেট দের নিয়ে ডিনার করবে। ক্যাম্প ফায়ার করার ইচ্ছে রয়েছে। ওয়াও! আজকের দিনটা স্পেশাল।
শাওয়ার শেষ হতেই বিছানায় কিছু শাড়ির কালেকশন দেখা গেলো।
হোস্টেল টিচার রেখেছেন।
ফোন বাজছে। বাজতে থাকুক।
টুং করে ম্যাসেজের আওয়াজ হলো।
“তোমার সাথে সেমাই খাব। ঈদের জামায়াতে যাওয়ার আগে তোমার হাত থেকে সেমাই খেতে পারলে ভালো লাগতো। তোমার কপালে চুমু খেয়ে নামাজ পড়ার ইচ্ছে ছিল।গাড়ি পাঠিয়েছিলাম। তুমি আসোনি। তোমার হাতে মিষ্টি মুখ করে, কপালে চুমু দিয়ে ঈদ মাঠে যাব। এট এনি কস্ট।
যাইহোক, আমি জামায়াতে যাওয়ার রাস্তায় তোমার হোস্টেলের সামনে থাকব।
তুমি একটু নিচে এসো।
তোমার হাতে সেমাই খেয়ে, কপালে চুমু দিয়ে ঈদের দিন শুরু করব। তোমার হাতে ছাড়া আমি কিছু মুখে তুলব না। আমার প্রথম ঈদ।
তুমি রেডি হয়ে থাকবে।
আমি জামায়াত শেষে তোমাকে নিজে পিক করব।রিসোর্ট বুকিং আছে। সারাদিন ওখানেই থাকব। রাতে ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন করেছি। ডিনার সেরে তোমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসব। থাকতে বলব না। ডোন্ট ওয়ারী।
আর শোন, একটা কথা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ইতি
তোমার স্বামী
মেহেরাব
মোম সুইচ অফ করলো ফোনের।
ঈদের জন্য কেনা ড্রেস টা পড়লো। ঈদের জন্য কেনা নতুন বোরকা পড়ে একটু সেমাই খেয়ে নিলো।
হোস্টেলে সেমাই পাওয়া অসম্ভব। মেহেরাব ব্যবস্থা করেছে। ভেবেছিল খাবে না।
তারপর ভাবলো ঈদের দিন খাবারের উপর রাগ করবে না। তাছাড়া সেমাই না খেলে মনে হয়না ঈদের সকাল।
মোম বসে আছে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে।
মেহেরাব হোস্টেলের সামনে অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। নতুন পাঞ্জাবি পড়েছে। মাথায় টুপি পড়েছে।
মোমের ফোনের সুইচ অফ।
মেহেরাব কিছু ভাবতে পাচ্ছে না। এদিকে নামাজ শুরু হবে হবে।
মোম একা একা ঘুরছে শিশুপার্কে। একা ঘোরার মধ্যে আলাদা আনন্দ। ফেরার টেনশন থাকেনা।
ইংল্যান্ডে মুসলিমদের সংখ্যা বেশ বড়। দিন দিন বাড়ছে মুসলিমের সংখ্যা।
মোম ঠিক করেছে পার্কে যে শিশুর ড্রেসের রংয়ের সাথে তার ড্রেসের রং মিলে যাবে তার পরিবারের সাথেই আজকের ঈদ টা কাটাবে।
মোমের বাবা যখন অক্সফোর্ডে পড়তেন তখন তিনি এই কাজটি করতেন।
মেমও বাবার পথ অবলম্বন করেছে। ঈদ উপলক্ষে অনেক মুসলিমরা বেড়াতে এসেছে পার্কে। কেউ পরিবার, নয়তো কেউ একা একা মোমের মতো।
পার্কে কত রকম বিচিত্র দৃশ্য দেখতে পেলো মোম।
দূর থেকে বোরখা পড়া কিছু মেয়েদের কোলাহল শুনা যাচ্ছে। মোম কে থেকে কিছু মেয়ে হাত নাড়লো। মোমও হাত নাড়লো হেঁসে হেঁসে।
শিশুদের কোলাহলও শোনা গেলো। পৃথিবীর সুন্দর কিছু দৃশ্যের মধ্যে একটি হলো শিশুদের হাসি।
সবার গায়ে নতুন পান্জাবি। ঈদ উপলক্ষে তারা যেন একটু বেশি হইচই করছে।
মোমের ড্রেসের সাথে একটি তিন বছরের শিশুর ড্রেসের রং মিলে গেলো।
কাঁঠালি পাঞ্জাবি পড়ে ফুটফুটে শিশুটি টেডিবিয়ারের সাথে খেলা করছে। আশেপাশেই হয়ত তার বাবা মা।
শিশুরটির নাম আলিফ। ইন্ডিয়ান মুসলিম। বাঙালি।
আলিফের বাবা মায়ের সাথে পরিচয় হলো।
আলিফের বাবা লোকাল ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারার। আলিফের মা হাউস ওয়াইফ। অত্যন্ত বিনয়ী মহিলা।
– তুমি আমাদের সাথে ঈদের দিন টা কাটাও। বোর হবে না। তোমার ভালো লাগবে।
তুমি একা একা ঈদ উৎযাপন করবে এ কেমন কথা। একা কখনো ঈদ উৎযাপন করা যায়। তোমাকে তুমি বলছি বলে কিছু মনে করো না।
-না, না, আমার তুমি ডাক ভালো লাগছে।
অনেক দিন পর বাংলায় কথা বলতে খুব শান্তি লাগছে।
-তোমার সিচুয়েশন বুঝতে পাচ্ছি। আমিও তোমার মতো সিচুয়েশনে পড়েছিলাম। আমার উনি তখন পিএইচডি করতে এসেছিলেন। আমাকেও নিয়ে এসেছিলেন।
উনি সারাদিন ইউনিভার্সিটিতে থাকতেন। আমি ভালো ইংরেজি জানতাম না যে এখানকার কারও সাথে পরিচিত হব। এখানকার কেউ বাংলাও জানতো না।
আমি তো কারও সাথে মিশতেই পারতাম না। না বলতে পারতাম বাংলা না বলতে পারতাম ইংরেজি। ভয়াবহ একাকিত্বের সিচুয়েশনে পড়েছিলাম।সারাদিন কোরআন তেলওয়াত করতাম, আর রান্না শিখতাম নতুন নতুন।
-বুঝতে পারি আপনাকে।
আমিও একাকীত্বে ভুগেছি। জানি আমি কষ্টটা।
-তুমি আমাদের ঠিকানা লিখে রাখ। মাঝে মধ্যে চলো আসবে আমাদের এখানে।
আমার রান্নার হাত ভালো। তোমাকে রান্না করে খাওয়াব। জমিয়ে দেশের গল্প করা যাবে।
.
.
দুপুর তিনটে বাজে। মেহেরাব হোস্টেলের সামনে বসে আছে গাড়িতে।
সকালে মোম কে না পেয়ে নামাজ পড়তে মাঠে গিয়েছিলো ঈদগায়।
নামাজ শেষে হোস্টেলের সামনে গাড়ি নিয়ে বসে আছে তো আছেই। মাঝে মোম কে খুঁজে বেরিয়েছে। কোথাও মোম নেই।
আসার সময় কিছু তাজা গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছিলো মোমের জন্য। গোলাপ গুলো এখন শুকিয়ে কাঠ। পাপড়ি ঝরে যাচ্ছে। ঠিক যেভাবে মেহেরাবের হৃদয়ে রক্ত ঝরছে।
একটা করে পাপড়ি ঝরছে আর মেহেরাবের হৃদয় টুকরো হচ্ছে। গোলাপের পাপড়ি গুলো যেন হৃদয়ের টুকরো এক এক টা।
মোম সকালেই বের হয়েছে একা একা।
মেহেরাব নিজের অজান্তেই মাথা কয়েকবার ঠোকালো গাড়ির জানালায়।
মোম আলিফ দের সাথে খাওয়ার করলো। প্রচুর খাওয়া হয়েছে মোমের। আলিফের মা রান্না করে এনেছিলেন। বাঙালি রান্না।
এতোদিন পর পেট পুরে বাঙালি নারীর হাতের বাঙালি রান্না খাওয়া হলো। খাবার গুলো তে আলাদা একটা গন্ধ ছিলো। বাঙালি বাঙালি গন্ধ। টেস্ট টাও একদম বাঙালি।
মোমের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। আলিফরা তাকে ড্রপ করে দিয়েছে হোস্টেলের সামনে।
মেহেরাব গেইটের সামনে দাড়িয়েছে।
মোম মেহেরাবের পাশ কেটে যেতে চাইলো।
এমন ভাবে পাশ কেটে যাচ্ছিল যে মনে হচ্ছে মেহেরাব কে সে চেনে না।
মেহেরাব মোমের পথ আগলে দাঁড়ালো।
– আপনি কি সিকিউরিটি গার্ড?
হলে তো জানবেন আমি এই হোস্টেলে থাকি। এই হলে আমার কার্ড।
এবার যেতে পারি?
-না।
মেহেরাব বেশ জোড়ালো গলায় বলল না।
-কি?
-না। বলেছি না।
-আপনি কে যে ঢুকতে দেবেন না?
-তুমি আমার সাথে যাবে।
-হু আর ইউ?
-আই এম ইউর হাসবেন্ড। তুমি আমার বিয়ে করা ওয়াইফ।
-ওআচ্ছা!!
মোম ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা পেপার বের করে দেখালো।
-এই যে এই পেপার টা দেখছেন? সকল ফর্মালিটি শেষ। আমার সাইনও আছে। আপনার সাইনটা হলেই বিয়ে নামক খেলার দাবিটা যে করছেন। সেটার ইতি ঘটবে।
মেহেরাব পেপার টা যেন দেখতে পেলো না এমন ভাব করলো।
-তুমি কি আমার সাথে যাবে? নাকি যাবেনা?
-ইম্পসিবল। হু দ্যা হেল আর ইউ?
-আই এম ইউর হাসবেন্ড।
-হাসবেন্ড মাই ফুট।
-যা ইচ্ছে বলে যাও।
এখন বলো তুমি সোজা কথায় যাবে নাকি?
-না। কি করবেন?
-আঙুল বাঁকাব।কোলে তোলে নিয়ে যাব। সিম্পল।
-পারলে তোলে দেখান।
আমি হোস্টেলে যাচ্ছি।
মোম এক পা এগুতেই মেহেরাব মোম কে সোজা কোলে তোলে নিলো।
মোমের কিছু বোঝার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মোম ঘটনায় স্তব্ধ। ভেরি শকড।
-আপনি আপনি….
-আমি আমি…
-কোলে নিলেন।
-সুইটহার্ট। আমি নির্লজ্জ অসভ্য ইংরেজ জাতী। এসব তো কিছুই না।
বাই দ্যাা তোমাকে আগেই কিন্তু সোজা সোজি বলেছিলাম।
-আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।
এখুনি আমাকে তালাক দিন।
সাইন করুন।
ব্রেক কষলো।
মেহেরাব ভয়ংকর চোখে তাকালো মোমের দিকে।
মোম একটু ঢোক গিলে ভাবলো নির্জন রাস্তা। সে একা মেয়ে। চুপ থাকায় ভালো।
-ভাবনা টা ভালো।
মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো।
খাবার টেবিলের সামনে মেহেরাব মোম কে বসিয়েছে। নিজে বসে হাঁটু গেঁড়ে মোমের সামনে, মোমের হাত ধরে।
-তাকাও আমার দিকে।
-আপনি কে যে আপনার দিকে তাকাবো? ডন কোথাকার।
-আমি তোমার হাসবেন্ড। এটা কি বোঝ না সুইটহার্ট।
-ডোন্ট কল মি সুইটহার্ট।
ডোন্ট টাচ মি।
-এই যে তোমাকে টাচ করলাম। হাতে, গালে, কপালে গলায়,পিঠে, হাঁটুতে,পায়ে।
এই যে বললাম সুইটহার্ট, সুইটহার্ট, সুইটহার্ট।
-সুইটহার্ট মাই ফুট। ইউ এভিল ম্যান।
-এখন একটা উওর দাও। কেন করলে? কেন আমাকে ইগনোর করলে?
তুমি এতোটা নিষ্ঠুর?
মোমের এসব কথা কানে যাচ্ছে না। পাগলের প্রলাপ। ইগনোর করায় ভালো।
-কি হলো উওর দাও।
তোমাকে ছাড়ছিনা। বলো বলো? স্পিকআপ? দুষ্টু মেয়ে সে সামথিং?
মেহেরাবের বাজখাঁই গলার আওয়াজ রিসোর্টে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
-তুমি আমার মুসলিম জীবনের প্রথম ঈদ মাটি করে দিলে? কেন কেন? একটা বিড়ালের প্রতিও মানুষের করুণা হয়। আরে আমি তো একটা মানুষ।
তোমার আমার প্রতি একটুও করুণা হলো না?
আমাকে এভাবে ফেলে চলে গেলে? তোমার হাতে সেমাই খাওয়াটা কি আমার অপরাধ?
এতোটা অবহেলা আমাকে কিভাবে করো?
এতো ভালোবাসা কিভাবে উপেক্ষা করো? বলো? বলো?
মোম হতভাগ হয়ে চুপচাপ কথা গুলো শুনছে।
মেহেরাব হঠাৎ নিজেকে সামলে নিলো।
-সরি, সরি সুইটহার্ট। একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম।
মেহেরাব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল- নাও খাওয়া শুরু করো।
ডিনার তো একসাথে করতে পারব। এটাই আমার কাছে অনেক।
-আমি ডিনার শেষ।
মেহেরাব দুই পা পিছিয়ে চোখন একবার বন্ধ করে আবার চোখ মেলে তাকালো।
কাঁচের বিশাল ডাইনিং টেবিলে আওয়াজ হলো।
কাঁচের খাবারের প্লেট গুলো ফ্লোরে পড়ে গেলো। যেগুলো বেঁচে ছিলে সেগুলো সে জানালা দিয়ে নদীতে ফেলে দিলো।
-আমার ডিনার আজ মাছের ডিনার হোক।
আমি খাব না। আর কখনো খাব না। না খেয়ে মারা যাব।
মোমের এলেম আছে বলতে হবে। সে একটু আওয়াজ করলো না। যেভাবে চেয়ারে বসে ছিলো সেভাবে বসে আছে।
মেহেরাব খাবার ফেলছে নদীতে একের পর এক। আর বলছে আমি বিড়াল, কুকুর,জীবজন্তু। মানুষ নয় আমি। আমাকে একটুও ভালোবাসা যায়না।
মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর কিভাবে হয়? কিভাবে আমাকে এতো কষ্ট দিতে পারলো।
আমার ভালোবাসা কতটা তুচ্ছ মানুষের কাছে।
আমি একজন তুচ্ছ মানুষ। কি নিষ্ঠুর এই পৃথিবী!!!

.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ  ২১। গোপন তত্ত্ব অনুসন্ধান করো না এবং পরনিন্দা করো না। [সূরা বাকারা ২:২৮৩] 
.
.
চলবে……..💔💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here