#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-08
মোম শান্তভাবে বলল- ভেবে বলছেন? পিছু হটিয়ে পড়বেন নাতো?
-ইয়েস ডার্লিং! পিছু হটবার কোন রাস্তা নেই তোমার থেকে।
-যদি শর্তটা না পূরণ করতে পারেন?
তখন তো আমার ফিউচার হাসব্যান্ডের সামর্থ্য দেখার সৌভাগ্য হবে না। তার কি সত্যি-ই সামর্থ্য আছে যে আমার শর্ত পূরণ করতে পারবে? শর্ত দেওয়া বৃথা যাবে নাতো?
-শোন মেয়ে, আমি যা বলি সেটাই করি। সকল শর্ত পূরণ করব। কিং ফায়ারের সার্মথ্যের ব্যপারে তোমার ধারণা নেই।
তুমি যদি বলো চাঁদে নিয়ে যেতে তবে এখনই নিয়ে যাব। যদি বলো মঙ্গল গ্রহে যাবে তাহলে তাই নিয়ে যাব৷ সেখানে একাকী বসবাস করতে চাইলে তাই করব।
গভীর সমুদ্রের অতলে লুকিয়ে থাকা ধনরত্নও এনে দিতে পারি যদি তুমি বলো। গভীর অরণ্যে একাকী চিতাবাঘ শিকার করে তার গায়ের চামড়া দিয়ে তোমার জুতো বানিয়ে দিতে পারি।
.
.
মোম অন্যদিকে তাকালো।
আগুন আবার বলতে শুরু করলো -কি এতেও খুশি হচ্ছোনা? এরথেকে আরও কঠিন কি হতে পারে?
এভারেস্ট থেকে ঝাপ দেব? নাকি আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে ঝাপ দেব? তুমি নিশ্চয়ই বলবে আইফেল টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়তে?
এবার বলবে তো ঠিক কি শর্ত আমার অফিসিয়াল ওয়াইফ হতে?
মোম নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আগুন মোমের কাছে এসে কানেকানে বলল- আমার সামর্থ্য সম্পর্কে আশা করি তোমার ধারণা হয়েছে।
.
মোম আগুনের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে।
আগুনের চোখ মোমের চোখে পড়তেই মোম চোখ নামিয়ে নিলো।
আগুন হেসে বলল-গুড, গুড। এভাবে আমার চোখে চোখ পড়া মাত্রই চোখ নামিয়ে নেবে।
-আপনি সত্যি আমার শর্ত মানবেন?
-এনি ডাউট?
তোমাকে ওয়াইফ বানাতে যা কিছু করা দরকার তাই করব। পিছু হটব না।
–হোস্টেল ফিরব। কাল শর্তের কথা বলব। আপনার সামর্থ্যের পরিচয় হবে কাল।
কথা যখন দিয়েছেন তখন নিশ্চয়ই মুখের কথার দাম রাখবেন?
-ইয়েস। যাও যাও। কিং ফায়ার কে শর্ত দেবে একটু ভেবে চিন্তে দেবে তো। যেমন তেমন শর্ত দিলে তো সহজেই পূরণ করে তোমাকে জয় করতে পারব।
আগুন মোমের কানেকানে ফিসফিস করে বলল- আজ রাতে তোমার ঘুম হবেনা শর্তের কথা ভেবে। আমার ঘুম হবেনা তোমার কথা হবে। এমন একটা শর্ত খুঁজে বার করো যে আমার সেটা পূরণ করতে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যায়।
-কটা বাজে?
-মানে?
-ঘড়িতে কটা বাজে?
-১১টা।
-এখন আমার কোরআন তেলওয়াত করতে ইচ্ছে করছে। হোস্টেলে ফিরব।
আগুনের চোখ গুলো লাল হয়ো গেলো।
সে বাঁধা দিলো মোম কে।
-মনে রেখো যে শর্ত দেবে সেই শর্ত পালন করব। আমি কারও পরোয়া বা ভয় করিনা। সবকিছু করতে পারে কিং ফায়ার। যত তাড়াতাড়ি হোক বিয়েটা করে ফেলব আমরা। তারপর না হয় রিসিপশন করা হবে। কি বলো ডার্লিং?
.
.
আগুনের লোকেরা মোমের পেপার কুড়িয়ে এনে দিলো আগুনের হাতে।
আগুন নিজের রুমাল দিয়ে মুছে মোম কে দিলো।
পেপার দিতে দিতে আগুন বলল- আমি যা একবার ডিসিশন নিই তাই করে থাকি। যতক্ষণ তা না করতে পারি ততক্ষণ নিস্তার নেই। এক সেকেন্ডও চোখ মেলতে বা বুঝতে পারিনা।
লাইফে প্রথমবার কেউ আমাকে অপমান করার সাহস করেছে। এর প্রতিশোধ তার লাইফ দিয়েই নেব।
তোমাকে আমি নামক হিংস্র চিতার সাথে লাইফ শেয়ার করতে হবে। সমস্ত লাইফ আমার সাথে স্পেন্ড করতে হবে। যে আমাকে অপমান করতে পারে, একবার না দুই দুই বার এমনকি আমাকে ডোন্ট কেয়ার করে সে তো সহজ মেয়ে নয়। তুমি আমার সাথে তোমার ফুল লাইফ স্পেন্ড করো কি করে আমাকে ডোন্ট কেয়ার এন্ড ইগনোর করে সেটাই দেখা আমার এই লাইফের একটা শখ। সেই সাথে আমি নামক ডেঞ্জারাস ছেলের সাথে তোমার অফিসিয়ালি বিয়ে হবে এটাই তোমার শাস্তি।চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবেনা। আমাকে সহ্য করে যেতে হবে। তুমি তখন বলবে মৃত্যুও এরথেকে ভালো ছিলো। তোমাকে আমার অপমানের অনুতাপ করতেই হবে ডার্লিং। এটা আমার চরম প্রতিশোধ, তোমাকে দেওয়া চরম শাস্তি।
.
.
মোম সারা দুপুর কোরআন তেলওয়াত করলো আগুনের কাছে থেকে ফিরেই। নামাজের সময়টুকু শুধু নামাজ পড়লো, হাতের আঙুল দিয়ে তছবি গণনা করো। মোমের তেলওয়াতের এমন সুরেলা মধুর ধ্বনি যা শুনে হোষ্টেলের সবাই বাকরুদ্ধ। এমনকি হোস্টেল কর্তৃপক্ষের বদমেজাজি, দরাজ গলা যার, কথা বললে মাইক ছাড়াই পুরো হোস্টেল কন্ঠ স্বরে কাপে , যে সারা বেলা মেয়েদের বকাঝকা চিৎকার চেঁচামিচি করতেই ভালোবাসে সেই মোটাসোটা রাগী ম্যাডামও মুগ্ধ হয়ে তেলোওয়াত শুনে বাকরুদ্ধ হয় যখন মোম কোরআন তেলওয়াত করে।
সব মেয়েরা দুপুরের ঘুম বাদ দিয়ে তেলওয়াত শুনে। মোমের রুমের দরজায় ভীড় জমা হয় মেয়েদের।
অমুসলিম মেয়েরা বলে মোমের কোরআন তেলওয়াতের সুরের ধ্বনির সাথে অস্কার বিজয়ী গান বিচাল আকাশের তুলনায় পিপড়া সমতুল্য।
.
কাশফিয়া মোমের কাঁধে হাত রেখে বলল-এবার থামো। সেহেরি তে তেমন কিছু খাওনি। সকাল থেকে যেসব ধকল তোমার উপর দিয়ে গিয়েছে তার উপর সেই কখন থেকে একনাগাড়ে তেলওয়াত করছো। এরপর তো জ্ঞান হারাবে। তোমার মন না হয় স্ট্রং বাট শরীর তো তার নিয়মে চলে। অসুস্থ হয়ে পড়বে। খানিকটা বিশ্রাম নাও তারপর শুরু করবে।
.
কি হলো শুনছো? একটু বিশ্রাম নিতে দাও গলা৷ তৃষ্ণায় তো চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
মোম বলল- না।
কাশফিয়া মোম কে শুধু বলল- আবু আব্দিল্লাহ্ আন্-নু‘মান ইবন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিঃসন্দেহে হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর এ দু‘য়ের মধ্যে কিছু সন্দেহজনক বিষয় আছে যা অনেকে জানে না। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দিহান বিষয় হতে নিজেকে রক্ষা করেছে; সে নিজের দ্বীনকে পবিত্র করেছে এবং নিজের সম্মানকেও রক্ষা করেছে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হয়েছে; সে হারামে পতিত হয়েছে। তার অবস্থা সেই রাখালের মত যে নিষিদ্ধ চারণ ভূমির চারপাশে (গবাদি) চরায়, আর সর্বদা এ আশংকায় থাকে যে, যে কোন সময় কোন পশু তার মধ্যে প্রবেশ করে চরতে আরম্ভ করবে।
সাবধান! প্রত্যেক রাজা-বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় -এটা হচ্ছে কলব (হৃদপিণ্ড)। [বুখারীঃ ৫২, মুসলিমঃ ১৫৯৯]
৪০ হাদিস, হাদিস নং ৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
-কিছু বুঝতে পারলে হাদিস টির?
-হালাল হারামের মধ্যে আরও কিছু রয়েছে যা আমাদের অজানার। যার দ্বারা আমাদের দ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
-ঐ নাস্তিক আমাদের জন্য নিষিদ্ধ যা হারামে পতিত হয়।
সে তোমাকে বাঘে আনতে চাচ্ছে। তুমি হয়ত অটল থাকবে তবুও তোমার ধর্মীয় মনোভাবে একসময় বিভ্রান্তি শুরু হবে।তোমার দ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঐ নাস্তিকের হস্তক্ষেপে।সেজন্যই বলছি তোমার দ্বীনকে রক্ষা করো। হারাম থেকে দ্বীনকে রক্ষা করো।
-আমার কি করা উচিৎ?
-তোমার ব্যাকুলতা আমি বুঝতে পারি না বললেও। হতে পারে তুমি ঐ নাস্তিক কে ভয় পাও না বাট সংকটে পড়তে যাচ্ছো।
তোমার উচিৎ ধর্ম সংকট হতে বাঁচার জন্য দেশে চলে যাওয়া। এই নাও পাসপোর্ট। টিকিট কেটে দেব অনলাইন থেকে তুমি হ্যাঁ বললেই।
মোম পাসপোর্ট হাতে নিয়ে শান্ত স্বরে বলল- আল্লাহ ভীতু দূর্বল কে পছন্দ করেনা। আমি ঐ ভীতু দূর্বল দের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার ধর্মীয় মনোভাব এতোটা দূর্বল নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা সকল সংকটে লড়াই করা শিখিয়েছে আমাদের। মহাম আল্লাহ তায়ালার শেখানো বিফলে যেতে দেব প্রাণ থাকতে! হালাল হারামের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা আমাকে চিনতে হবে সংকটে মোকাবেলা করে।
কোথাও যাব না যতক্ষণ না সমস্যা সমাধান করতে পারব।
.
.
মোম সারারাত জেগে কোরআন তেলওয়াত করলো এক নাগাড়ে। কাল কি হবে সেটা নিয়ে যেন একটুও বিচলিত হচ্ছে না তার মন।
রাতের শেষের দিকে মোমের খুব ভালো ঘুম হলো অন্যদিনের তুলনায়।
সকালে হোস্টেল থেকে বের হতেই আগুনের গাড়ি দেখা গেলো। গার্ডসা এসে বলল (অনুবাদ-ম্যাডাম আপনি গাড়িতে বসুন। স্যার ওয়েট করছে আপনার জন্য।
-স্যারকে বলুন সামনের ক্যাফেতে যেতে। আমি হেঁটে যাব ক্যাফে।
আগুন মোমের কথা গাড়িতে বসেই শুনতে পেলো।
আগুনের গায়ের রক্ত টগবগ করছে৷ কখনো মোম আগুনের কথা শুনেনা। কেউ তার কথা না শুনলে খুব রাগ হয় তার।
আগুন গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ক্যাফের উদ্দেশ্য মোমেট পিছনে হাঁটতে লাগলো। ঠিক আছে এখন মোমের জেদ বজায় থাকুক। শর্তটা পূরণ করেই বিয়েটা করে ফেলার পর মোমকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে প্রতিটি মূহুর্তে কিং ফায়ার কি চিজ।
মোম শান্ত ভাবে আগুন কে কিছু হাদিস বলল এবং ব্যাখ্যা দিলো।
-পরিশেষে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি হলো, বিবাহ একটি সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন। কোরআন ও হাদিস পাঠ করে আল্লাহর নামে এ বিবাহ সম্পাদিত হয়। তাই এ বিষয়ে ধর্মীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। মুসলমানদের জন্য কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিবাহ আমার সুন্নত (আদর্শ)। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের অনুসরণ করে না, সে আমার দলভুক্ত (মুসলমান) নয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৪৬)।
মহান আল্লাহ আমাদের সত্যপথের অনুগামী করুন। আমিন।
আগুন শুনে বলল- তোমাদের প্রফিট ঠিক বলেছেন। তুমি উনার কথা মতো বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে নাও।
-মূল বিষয়টা ধরতে পারেন নি কিন্তু।
-মূল বিষয়?
-মূল বিষয়টি পরে বলব তার আগে আরও কিছু কথা বলব।
-ক্যারিওন?
-ছিলমুন’ শব্দ থেকে ‘ইসলাম’ শব্দের উৎপত্তি এবং এর অর্থ হলো শান্তি। আর মুসলিম শব্দের অর্থ ‘আত্মসমর্পণকারী’। আল্লাহ তা’য়ালা মানবমন্ডলীর শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, উন্নতি, সমৃদ্ধি, প্রগতি ও শঙ্কামুক্ত নিরাপত্তাপূর্ণ যে বিধানাবলী দান করেছেন, এর সমষ্টির নামই হলো ইসলাম এবং এই বিধানাবলীর নিকট যে মানুষ আত্মসমর্পণ করেছে বা নিঃশর্তে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়ে অনুসরণ করেছে, সে-ই হলো মুসলমান।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানব জাতিকে দান করেছেন, পৃথিবী থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও অন্যান্য অশান্তি দূরিভূত করার লক্ষ্যেই এই আদর্শের আগমন। প্রত্যেক নবী-রাসূলও পরিচালিত হয়েছেন প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক। সুতরাং ইসলাম সম্পর্কে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের প্রশ্ন ওঠাই অবান্তর।
ইসলামী আদর্শ প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এই আদর্শের অনুপম গুণ-বৈশিষ্ট্যের কারণে। চিত্তাকর্ষক, মনোমুগ্ধকর ও কল্যাণধর্মী সৌন্দর্যের কারণেই মানুষ ইসলামী আদর্শের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছে। ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা কিভাবে কোন্ পদ্ধতিতে হবে, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে দূরে থাক- কোনো একজন নবী-রাসূলকেও পদ্ধতি নির্ণয়ের স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। এ পদ্ধতি নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে শিখিয়েছেন। ইসলামের দিকে আহ্বান জানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা শিখাচ্ছেন-
(হে নবী) তুমি তোমার মালিকের পথে মানুষদের প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করো, কখনো তর্কে যেতে হলে তুমি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তিতর্ক করো যা সবচাইতে উৎকৃষ্ট পন্থা। (সূরা নাহল-১২৫)
ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে জুলুম-অত্যাচার এলে প্রতিবাদে কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচারও করা যাবে না, মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয়- ভালো দিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
(হে নবী,) তুমি নির্যাতন নিপীড়নে ধৈর্য ধারণ করো, তোমার ধৈর্য সম্ভব হবে শুধু আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য দিয়েই, এদের আচরণের ওপর দুঃখ করো না, এরা যেসব ষড়যন্ত্র করে চলেছে তাতে তুমি মনোক্ষুন্ন হয়ো না। (সূরা নহল-১২৭)
ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন যত কথা বলেছে, তা এখানে উল্লেখ করতে গেলে এ পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন, এর মধ্যে কোথাও কি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের গন্ধ পাওয়া যাবে? ইসলাম সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও পৈশাচিক নীতিকে ঘৃণা করে এবং এসব কিছুর বিরুদ্ধেই ইসলাম জিহাদ ঘোষণা করেছে। পৃথিবী থেকে এসব অনাচার উৎখাত করার জন্য মানুষের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছে ইসলাম।
আল্লাহর আইন চালু করার ধুয়া তুলে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিখানো পদ্ধতি পরিহার করে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের মাধ্যমে যারা পৃথিবীতে দাঙ্গা, অশান্তি, জনমনে ভীতি, আতঙ্ক ও বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, তাদের সম্পর্কে ইসলামের স্পষ্ট নির্দেশ হচ্ছে-
যারা আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আল্লাহর যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এই অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্যে, তাছাড়া পরকালে তাদের জন্যে ভয়াবহ আযাব তো রয়েছেই। (সূরা মায়িদা-৩৩)
জনমনে আতঙ্ক বা ভীতি সৃষ্টি হতে পারে, ইসলাম এ ধরনের কোনো কর্ম বা আচরণ করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো হাতে উলঙ্গ (খাপমুক্ত) তরবারী বের করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
আরেক হাদীসে তিনি কারো প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে কথা বলতেও নিষেধ করেছেন। এমন পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হারাম করা হয়েছে, যে পরিবেশ নিশ্চিত রক্তক্ষয়ী পরিণতিবরণ করবে।
উন্মুক্ত তরবারী বা অন্য কোনো অস্ত্র দেখলে মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে, ইসলাম এটাও বরদাস্ত করে না। জনমানসে শান্তির জোয়ার প্রবাহিত করার জন্যই ইসলামের আগমন। যারা জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করবে, সূরা মায়িদার উক্ত আয়াতে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। ফিত্না-ফাসাদ সৃষ্টি করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোরভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। ফিত্না সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা সূরা বাকারায় বলেছেন :
ফিতনা-ফাসাদ দাঙ্গা-হাঙ্গামা নরহত্যার চাইতেও বড় অপরাধ। (সূরা বাকারা-১৯১)
সুতরাং ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের গন্ধ থাকা দূরে থাক, ইসলামের সাথে এসবের দূরতম সম্পর্কও নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ইতিহাসের সবথেকে বর্বর নির্যাতন সহ্য করেছেন। যখন তাঁরা নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তখন তাঁরা কি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে ইসলামের দুশমনদের হত্যা করতে পারতেন না? জঙ্গী তৎপরতা প্রদর্শন করে প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারতেন না? বরং তাঁরা অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুকেই বরন করেছেন, তবুও অনিয়মতান্ত্রিক পথ, সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেননি বা কোনো ধরনের বক্র চিন্তাও করেননি।
মদীনায় হিজরত করার পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানরা তখন বিপুল শক্তির অধিকারী। মক্কা থেকে শত্রুপক্ষের লোকজন মাঝে মধ্যে চুপিসারে এসে মদীনার ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট করতো এবং বৃক্ষ ধ্বংস করে দিতো। প্রতিশোধ হিসেবে মুসলমানরাও গোপনে মক্কায় গিয়ে ফসল আর বৃক্ষ ধ্বংস করে দিতে পারতো। মদীনার পাশ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাওয়া ব্যতীত মক্কার কাফিরদের দ্বিতীয় কোনো পথ ছিলো না। অত্যাচারিত মুসলমানরা এসব শত্রুপক্ষ ব্যবসায়ীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারতেন। হোদায়বিয়ার সন্ধিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো, মক্কা থেকে কোনো মুসলমান মদীনায় এলে তাকে মক্কায় ফেরৎ পাঠাতে হবে, আর মদীনা থেকে কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে তাকে ফেরৎ পাঠানো হবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধি-শর্তের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গুপ্তচর হিসেবে মদীনার মুসলমানদেরকে মক্কায় পাঠিয়ে শত্রুদের ক্ষতি করতে পারতেন না? কিন্তু তিনি এসবের চিন্তাও করেননি। ইসলাম সাম্য-মৈত্রীর আদর্শ, সেই ইসলাম কোনোভাবেই সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদ বরদাস্ত করবে না।
মক্কা বিজয়ের পরে ঐ লোকগুলো আল্লাহর রাসূল ও মুসলমানদের কাছে করুণার পাত্রে পরিণত হলো, যারা লোমহর্ষক নির্যাতনের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামকে হত্যা করেছে, বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। অবশেষে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। সেই লোকগুলো যখন মুসলমানদের সম্মুখে এসেছে, মুসলমানরা ইচ্ছে করলে কি প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন না? প্রতিশোধ গ্রহণ করা দূরে থাক- নবীয়ে রহমত সকলকে ক্ষমা করে দিলেন। সেই ইসলাম কি আল্লাহর আইন চালুর নামে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ বা বোমাবাজি সমর্থন করতে পারে?
মানুষ সামান্যতম অসুবিধা ভোগ করুক, এটাও ইসলাম সমর্থন করে না। কারণ ইসলামের কাছে মানুষের সম্মান-মর্যাদা অনেক উচ্চে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
আমি অবশ্যই আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে আমি ওদের চলাচলের বাহন দিয়েছি এবং তাদের পবিত্র (জিনিসসমূহ দিয়ে) আমি রিয্ক দান করেছি, অতপর আমি অন্য যতো কিছু সৃষ্টি করেছি তার অধিকাংশের ওপরই আমি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল-৭০)
.
আগুন খুব মনোযোগ দিয়ে মোমের কথা গুলো শুনলো এবং পর্যবেক্ষণ করলো।
মেয়েটা সারাক্ষণ চুপ থেকে এসব কথা ভাবে। মুখ খুলেই এসব কথার পাহাড় বানিয়ে ফেলে লেকচার দিয়ে৷
-আপনাকে এসব বলার দুটো কারণ রয়েছেন। একটা মহানবী (সাঃ) এর সুন্নত বিয়ে এবং অন্যটা ফিতনা ফ্যাসাদ বা বিশৃঙ্খলা।
-আমাকে ঠিক কোন শর্তের কথা বলছো?
আর এই দুটো বিষয়ের মূল বিষয় কি?
শর্তটা কি?
-একজন মুসলিমের বিয়ে অন্য একজন মুসলিম ব্যাতিত হতে পারেনা।
মহানবী (সাঃ) এর সুন্নত তখনই পালন করা হবে যখন একজন মুসলিমের সাথে অন্য একজন মুসলিমের বিয়ে হয়। তবুও যদি একজন মুসলিমের সাথে অমুসলিম বা আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী নয় এমন একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উৎপন্ন হয় তবে তাকে আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী করাতে হবে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।
তাকে পরিপূর্ণ একজন মুসলিম হয়ে উঠতে হবে।
ইসলামের নীতিমালা মানতে হবে,নবী রাসূলগনের নির্দেশ মানতে হবে,আল্লাহর আদেশ নির্দেশ মানতে হবে। সর্বপ্রথম তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াদারি এবং সমস্ত সৃষ্টি যা কিছু আছে একছত্র মালিক সেটা বিশ্বাস করতে হবে।
ইসলাম কখনো ফিতনা ফ্যাসাদ, হত্যাযজ্ঞ, অত্যাচার পছন্দ করেন না। সেগুলো তাকে বর্জন করতে হবে।
আগুনের শরীরে রক্ত যেন টগবগ করতে লাগলো। চোয়াল শক্ত করে সে বলল-শর্ত বলো?
-মুসলিমদের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, ক্ষমতা জাহির করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল ক্ষমতার মালিক একক আল্লাহ তায়ালা। কারও উপর অন্যায় অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, বিশৃঙ্খলা করা যাবেনা। এমনকি হত্যাকান্ডের মতো জঘন্য কর্ম হতে বিরত থাকতে হবে।
একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো নবী রাসূলগনের নীতিমালা অনুসারে অন্যদের ইসলামের দাওয়াত দিতে।
-শর্ত বলো?
-আপনাকে আসমানী কিতাবে বিশ্বাস করতে হবে। দুনিয়াদারি, আসমান-জমিন এবং যা কিছু বিস্ময়কর সৃষ্টি রয়েছে তার একজন সৃষ্টি কর্তা রয়েছে সেটা বিশ্বাস করতে হবে। পৃথিবীর একটাই ইশ্বর। একত্ববাদী নিরাকার অদৃশ্য এক মহান আল্লাহ তায়ালা তা বিশ্বাস করতে হবে।যিনি সকল ক্ষমতা, রহমত, প্রশংসার অধিকারী! যিনি সর্বত্র বিরাজমান, যার কাছে কোন কিছু লুকায়িত থাকে না, যিনি সর্বদাতা, সর্বজান্তা। নবী-রাসুলগণ ফেরেস্তা,ইহকাল পরকাল, বেহেশত দোযখে বিশ্বাস করতে হবে।মহান নবী (সাঃ) শেষ নবী সেটা বিশ্বাস করে তার আদর্শে চলতে হবে। আপনাকে মহান আল্লাহর পবিত্র কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।
আপনার নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে হবে।
নাস্তিকে পরিচিতির সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে, নাস্তিকে পরিচিতি নাম চেঞ্জ করে সুন্নতে খৎনা করতে হবে।
একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আপনাকে।
আগুন চোখ বন্ধ করে মাথায় সোনালী চুলে হাত বুলাচ্ছে।
মোম বলল- স্বরণ করুন আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথা। ঐ দিন আপনি আমাদের মুসলিম ভাইদের উপর নির্যাতন ও জঘন্য হত্যাকান্ডে মেতে শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন।তাদের অপরাধ ছিলো শিক্ষাঙ্গনে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া এবং আপনাকে ইসলামের দাওয়া দেওয়া। উনারা উনাদের কর্তব্য পালন করছিলো, এতে কারও ক্ষতি হচ্ছিল না। আর আপনি অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছিলেন তাদের উপর। এসকল কর্মকান্ড আগেও বহুবার করেছিলেন, সেটা মুসলিম অমুসলিম সবার সাথেই। সবাইকে আপনি ভয়ভীতি তে রেখেছেন, এই কাজ গুলো ইসলামের বিরোধী। আমার বলা উক্ত হাদিসের বর্ণনায় যা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
আগুন এবার বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো।
ক্রুদ্ধ স্বরে বিকারগ্রস্তের মতো বলল- আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব? এটাই তোমাকে বিয়ে করার শর্ত?
মোম শান্তস্বরে বলল- ইসলাম গ্রহণ করে ফিতনা ফ্যাসাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রকৃত মুসলিম হয়ে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতে হবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। একজন মুসলিম হিসেবে অন্যদের ফিতনা ফ্যাসাদ হত্যাযজ্ঞ চালাতে বাঁধা দিতে হবে এবং ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে। প্রকৃত মুসলিম যেদিন হতে পারবেন সেদিন আমার দেশে গিয়ে আমার জন্মদাতা পিতার কাছে আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেবেন। বাবাকে যদি রাজি করাতে পারেন তবে আমি ধর্মীয়ভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমা হিসেবে আপনাকে স্বামী হিসেবে ভাববো নাকি ভাববো না সেটা একটু হলেও ভেবে দেখব।
আগুন মোমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
মোম উঠতে উঠতে বলল- আমি কিন্তু কথা দিইনি বা বলিনি আপনাকে বিয়ে করব। আমার রাজি হওয়ার তাৎপর্য ছিলো একজন মুসলিমা কে বিয়ের করার যোগ্যতার জন্য আমার বলা উক্ত সকল হাদিসের নির্দেশ মানতে হবে বিয়ে থেকে শুরু করে আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা। । যা কিছু আছে তার একমাত্র সৃষ্টিকর্তা কে বিশ্বাস করতে হবে। একজন মুসলিমা কে বিয়ে করার জন্য যা সব যোগ্যতা থাকতে হবে সেকল যোগ্যতা অর্জন করে তবেই আপনি আমার বাবার সাথে কথা বলবেন।
যদি বাবা রাজি থাকেন তবে আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারি। এবার বলুন সার্মথ্য এবং সাহস আছে আমার মতো মুসলিমাকে বিয়ে করার শর্ত পূরণ করতে????
.
❤আল-কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর একটি বাণীঃ
___৮। যারা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করবে, শুধু তাদের সঙ্গে তোমরা লড়াই করো। [সূরা বাকারা ২:১৯০]
.
চলবে…….💔💔💔