নুর পর্ব ৯

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-09

আল্লাহর নবীর চরিত্র ছিলো ঠিক কুরআনের মতো।[আয়েশা রাঃ সহীহ মুসলিম)
সেই দিনের পর থেকে আগুন কে আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না৷ ভার্সিটি কিংবা মোমের আশেপাশে। কোথাও সে নেই।
সন্ধ্যায় ইফতারে মোম আর কাশফিয়া খেজুর মুখে দিয়ে আগুন বিষয়ক আলোচনা করলো।
-এক মিনিটেই নাস্তিক লোকটা উবে গেলো?
-কাশফিয়া বার বার নাস্তিক বলো নাতো। শুনতে ভালো লাগেনা শব্দটা।
কাশফিয়া চিজ-বার্গার চিবোতে চিবোতে বলল-লোকটা নাস্তিক এটা শুনতে ভালো লাগেনা নাকি নাস্তিক শব্দটা শুনতেই ভালো লাগেনা?
মোম বার্গার চিবোচ্ছে এক মনে। কিছু বলছে না।
সে ভালো করে জানে ঝড় আসার আগে প্রকৃতি স্তব্ধ হয়ে যায়। যেটা ভয়ংকর ইশারায় ধাবিত হয়।
আগুনের ব্যাপার টা এমন।
-তোমার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। কি শর্ত টায় না দিলে ব্যাটা কিং ফায়ার কে।
ব্যটার এলেম কত এবার দেখা যাবে। কি বলো?
হা! হা!হা!।
.
ক্যারল এর আগে কখনো খেজুর খায়নি। ইফতারে মোমদেী কাছ থেকে একবার খেজুর টেস্ট করার পর সে বলেছিলো খেজুর হলো পৃথিবীর সেরা খাদ্য! কি টেস্ট! আহা! যত ইচ্ছে ততো খাওয়া যায় খালি পেটে, ভরপেটে। নো প্রবলেম।
তারপর থেকেই সে মোমের আনা খেজুর চুরি হতে থাকে! প্রথমে ব্যাপারটা মোম বুঝতে পারেনি।
এরপর একদিন কাশফিয়া মোম কে বেডের নিচে কিছু একটা দেখায়।
ক্যারল বেডের নিচে বসে একের পর এক খেজুর মুখে দিয়ে চিবোচ্ছে।
খেজুর আনা মাত্রই চুরি হয়ে যায়।তাহলে এই হলো খেজুর চোর!
গাড়িটা স্পষ্ট চেনে মোম। কোন অসুবিধা হলো না।
রোডের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আগুনের গাড়ি দেখলো মোম। পেছনে তার গার্ডদের হোয়াইট কার!
আগুন নিশ্চয়ই ভেতরে বসে আছে। এতো দিন পর হোস্টেলের সামনে আসার কারণ কি! মোম তো যা শর্ত দেওয়ার দিয়ে দিয়েছে৷
এই শর্তটা আগুনের মতো লোক কখনোই পূরণ করতে পারবে না! দুঃখজনক!

“হে মহান আল্লাহ তায়ালা! কাজটা কি ঠিক করেছি কিনা বুঝতে পাচ্ছিনা। এটা ছাড়া নিজেকে রক্ষা করার উপায় ছিলো না।
তবে আমি যা সত্যি তা-ই বলেছি।একজন মুসলিমার সাথে তুমি অমুসলিমদের বিয়ের অনুমতি দাওনি আর এতো নাস্তিক। ” হে আল্লাহ আমি আমার জীবন কে তোমার হাতে তুলে দিলাম।
তুমি আমাকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছো সেভাবে যাব আমি। আমি ভাগ্য এবং কর্মে দু’টোতেই বিশ্বাস করি।রমাযানের দিনে তুমি আমাকে হতাশ করোনা। আমার উপর রহম করো। “হে আল্লাহ! ” আল্লাহ তায়ালা! মোম জায়নামাজে বসে মোনাজাতে দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেললো!মোম এতোটাই স্ট্রং একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কখনো মোম চোখের পানি ফেলে না।
মোম আর কাশফিয়া সহ হোস্টেলে যত মুসলিম মেয়ে ছিলো সবাই মিলে রমযানের এবাদতের জন্য একটি চার্ট বানিয়েছিলো।যেন রমযানে ভার্সিটির ক্লাসের সাথে সাথে ঠিক সময়ে মহান আল্লাহর আসল ক্লাস করা যায়।

রামাযানের দিনগুলি আমরা কিভাবে কাটাতে পারি তার পরিকল্পনাঃ–

১) প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজ নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করুন , সুন্নত এবং নফল ইবাদাত আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিন ।সন্তানদেরকেও ইবাদতে অভ্যাস গড়ে তুলুন ।রামাদানের শেষ দশ দিনে ইবাদাত যেন বেশি বেশি করতে পারেন তারজন্য আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করুন ।

২) শুধু মাত্র কোরআন খতমের দিকে লক্ষ্য না রেখে কোরআন অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন ।যাতে আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন আমাদের জন্য কেন নাযিল করেছেন ,জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে কি কি বিধি বিধান রয়েছে সেটা বুঝতে পারেন ।

৩) সন্তানদের রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিবেন ,গেমস কম্পিউটার চালানো থেকে তাদের বিরত রেখে কোরআন পড়ার প্রতি উৎসাহ দিবেন এবং নিজে তাদের সাথে বসবেন ।

৪) আমরা কেও ভুল ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে না তাই নিজের দোষ গুলি খুঁজে বের করুন ,অন্যের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং অন্যকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন ।গীবত চোগলখুরি আর ঝগড়া বিবাদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

৫)খাবার দাবারের কাজে নিজেকে এতটা ব্যস্ত রাখবেন না যাতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পরেন এবং রাতের তারাবী নামাজ পরতে অলসতা বোধ করেন তাই যতটা সম্ভব খাবার তৈরিতে এবং পরিশ্রমের মাঝে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করবেন ।

৬) সেহরি খাওয়াটা একটা সুন্নত তাই রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমায়ে ক্লান্তি দুর করুন এবং সেহরি খাওয়ার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করুন ।

৭) অযথা সারা রাত জেগে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটানোর পরিকল্পনা বাদ দিন ।

৮) নিজেদের ইফতার থেকে প্রতিদিন অন্তত একজন রোজাদারকে ইফতারী করানোর চেষ্টা করুন, অবশ্যই নিজেদের গরীব আত্মীয় -স্বজনদের থেকে আগে নির্বাচন করবেন , যতটা সম্ভব গরীব আত্মীয় স্বজনদের যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন।

৯) ইফতারীর সময় কিছুটা হাতে রেখে ইফতারী তৈরির কাজ শেষ করবেন যেন পরিবারের সবার সাথে বসে একসাথে ইফতারী করতে পারেন ।

১০) আত্ন সমালোচনা করে নিজের সকল গুনাহ, ভুল-ক্রুটির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি মনে তওবা করুন এবং শিরক বিদআত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে হিদায়েত প্রার্থনা করুন ।

১১) নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এ মাসে দান সাদাকা করার চেষ্টা করুন। যাকাত ফিতরা আদায় করুন ।

১২) ঘরের বিভিন্ন কাজের ফাকে ফাকে বিভিন্ন সুন্নতই জিকির আযকার করে আপনার নেকির পরিমান বাড়ানোর চেষ্টা করুন ।

১৩)একজন মুসলিমাহর প্রাত্যহিক জীবন কেমন হওয়া উচিৎ! দিনের একটা অবসর সময় বেছে নিয়ে আপনার কাছের বান্ধবীদের সাথে নিয়ে বসে আলোচনা সমালোচনা করুন এবং নিজেদেরকে একজন উন্নত মুসলিমাহ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একে অন্যকে অনুপ্রেরনা দিন ।

১৪) সহীহ শুদ্ধ ভাবে দ্বীনের জ্ঞান লাভের চেষ্টা করুন । দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কোন সুযোগ পেলে সেটা হাতছারা করবেন না যথাসাধ্য চেষ্টা করুন সহীহ ভাবে অন্যকে জানাতে ।

১৫) রোজা থাকা অবস্থায় দোয়া কবুল হয় তাই এ সময় বেশি বেশি করে দোয়া করুন ,নিজের জন্য ,পরিবারের জন্য ,বাবা-মায়ের জন্য ,সকল মুমিন মুসলিমদের জন্য ।

এবং দোয়া করুন এ পরিকল্পনাগুলি যেন সার্থক ভাবে পালন করে সফল হতে পারেন ।

পরিশেষে আরো একটি পরিকল্পনা থেকে যায় সেটা হল -এ মাসে নিজেকে যেভাবে চালিয়ে নিয়েছেন পরবর্তী দিনগুলিও যেন সেভাবে চালানোর চেষ্টা করতে পারেন এর জন্য একটা পরিকল্পনা কিন্তু সে পরিকল্পনা হোক আপনাদের নিজেদের জীবনে যার যার সুযোগ সুবিধা মতো । আল্লাহ আমাদের সবার পক্ষ্ থেকে রমজান কবুল করুন এবং তাঁর দ্বীনের উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন আমীন।
.
সেহেরির সময় দাঁত মাজতে মাজতে মোম জানালার পর্দা টেনে দিলো।
কি সর্বনাশ! আগুনের ব্ল্যাক কার।
কাশফিয়া আতংক নিয়ে সেহরি করলো।
মোমেরও গলা দিয়েও খাবার ঢুকছেনা।
ফজরের নামাজ পড়ে দু-জন মিলে কোরআন তেলওয়াত করলো সকাল পর্যন্ত।
রেডি হয়ে হোস্টেলের গেইটে যেতেই গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলো জোরালোভাবে দু-জন।
এই প্রথম মোম শকট হলো।
হাতে থাকা সকল বই নিচে পড়ে গেলো।
কাশফিয়া থরথর করে কাঁপছে আর তাকিয়ে আছে সামনে।
আগুন পাঞ্জাবি পড়েছে, মাথায় টুপি পড়েছে।এসবের মানে কি?
আগুন গাড়ি থেকে নেমে এসে আরবি উচ্চারণে বলল- আসসালামু আলাইকুম!
মোম আড়চোখে আগুনকে স্ক্যান করলো।
প্রায় ছয় ফিট মতোন লোকটা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ফর্সা রংয়ের সাথে মানিয়েছে। সোনালী চুলের উপর সোনালি কারুকাজে সাদা টুপি পড়েছে মাথায়।
ঠোঁটে মুচকি হাসি!
মুখে কেমন যেন একটা নূর নূর ভাব এসেছে।
আগুন বলল-(অনুবাদ) স্ক্যান করা শেষ? আমাকে দেখার আরও সুযোগ পাবে।
আপাতত সালাম দিয়েছি! সালামের উওর পেলাম না এখনো।
মোম বলল- আমার ক্লাসের সময় হয়েছে।
টা টা।
কাশফিয়া কে নিয়ে মোম হাঁটা শুরু করেছে।
আগুন তাদের সামনে দাঁড়ালো।
চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে একদৃষ্টিতে মোমের দিকে তাকালো তার সমুদ্রের পানির মতো নীল চোখ দিয়ে।
-এভাবে পালানোর মানে কি?
-আমি কোথায় পালাচ্ছি?
কি আজব!
-সেটা অবশ্য ঠিক! কোথায় পালাবে? পালিয়ে যাবে কোথায়? আমার কাছ থেকে পালিয়ে কোথাও লুকানের জায়গা নেই তোমার।
মোম -ক্লাসের সময় হয়েছে!
-আরে আরে আসল কথা টা শুনবে না?শর্তের পূরন করেছি নাকি করিনি সেটা শুনবে না? শুনতে হবে তো!
কাশফিয়া কাঁপা কন্ঠে বলল- দেখুন আমরা খুবই নিরীহ সেই দূর থেকে এসেছি পড়াশোনা করতে। আমাদের যেতে দিন। ক্লাস শুরু হয়ে গেলে প্রফেসর ঢুকতে দেবেনা।
-উফফ, তোমরা তো নিরীহ। বিশেষ করে তোমার বান্ধবী!
তাইনা?
মোম বলল- বেগানা কোন লোকের সাথে আমরা কথা বলিনা। আমাদের সাথে কোন আসল কথা নেই।
কিছু শুনব না আমরা! এই মুহূর্তে কোন শর্তের কথা মনে পড়ছে না আমার।
এই চল তো চল।
এই পর্যায়ে আগুন মোমের হাত ধরলো খুব শক্ত করে।
তারপর মোমের দিকে একটু ঝুঁকে বলল- ভয় পেলে তোমার কন্ঠে লজ্জা মিশ্রিত হয়। আই লাইক ইট।
-আমি কখনো ভয় পাইনা।
মোম যেন কোন মজার কথা বলেছে। আগুন হো হো করে হাসছে শরীর দুলিয়ে।
যা শুনে মোমের শরীর কেঁপে উঠেছে! হাড় কাঁপানো হাসির আওয়াজে যেন নির্জন রাস্তাটাও কাঁপছে।
-হাত ছাড়ুন। পাপ লাগবে।
ছাড়ু হাত। যেতে দিন।
-আমার কথা না শুনে আমার অনুমতি ছাড়া তুমি এখান থেকে যেতে পারবে? তোমার হাত আমি ছাড়া কে ধরবে?বলো তো?
আগুন আরও শক্ত করে হাত ধরে বলল-তোমার শর্তটা মনে আছে?
– ক্লাসের সময় হয়েছে।
-পূরণ করতে পারলে কি হবে সেটা জানো তো?
-প্রফেসর এরপর ক্লাসে ঢুকতে দেবেনা।
আগুন একটু মুচকি হেসে হাত দিয়ে পেছনে ইশারা করলো।
একজন মওলবী কে দেখা গেলো গাড়ি থেকে নামতে৷
আগুন শান্ত গলায় বলল- তোমার শর্ত পূরণ করেছি।
হ্যাঁ আমি তোমার শর্ত পূরণ করেছি।
আগুন চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল- হ্যাঁ আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)!
নির্জন জায়গায় আগুনের গলাটা জোরালো শোনালো।
মোমের সবকিছু কেমন যেন অন্ধকার লাগছে।
সে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
মওলবি সাহেব বলল-ঘটনা সত্যি। কাল জুম্মার দিন মসজিদে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এই বাবা জান! মসজিদ মেরামত এবং মসজিদ বড় করার জন্য উনি একটা এমাউন্ট দান করেছেন। মাশাআল্লাহ!
আমরা সব মওলবিরা মিলে ইসলামিক সুন্দর একটা নামও দিয়েছি তাকে। নাস্তিকের পরচিয় বহন করা সকল চিহ্ন চেঞ্জ করা প্রয়োজন। মেহেরাব ইসলাম! মেহেরাব নামের অর্থ “সূর্যের মত উজ্জ্বল”, আধুনিক, অস্থির, বন্ধুত্বপূর্ণ, পাওয়া।

মেহেরাব নামের ফারসি অর্থ ( مهراب )
মেহেরাব নামের ফারসি অর্থ “সূর্যের মত উজ্জ্বল”
মেহেরাব শব্দের অর্থ “সূর্যের মত উজ্জ্বল”। মেহেরাবের ইসলামিক অর্থ হলো মসজিদের (মিম্বার) খুঁটি! [আরও কিছু অর্থ রয়েছে ]
মাশাআল্লাহ! এই নামটির দ্বারা বাবা মেহেরাবের বংশ এগুবে মুসলিম হিসেবে।
আগুন হাসি হাসি মুখ নিয়ে মোমের দিকে তাকিয়ে বললো – মওলবি সাহেব শুধু আমার না আমাদের বংশ এগুবে তাইনা? আমাদের দোয়া করুন।
আগুনের কথা শুনে মোম বুকে হাত দিলো। বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
চোখ বন্ধ হয়ে আসছে! সবকিছু কেমন যেন সপ্ন মনে হচ্ছে৷মোম আগুনের দিকে তাকিয়ে তার হাসি হাসি মুখ-খানা দেখলো।
মোম সেন্সলেস হয়ে নিচে পড়ে গেলো।ঘন কালো পাপড়ি যুক্ত চোখ দুটো বন্ধ করার আগে মোমের ঠোঁটে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো একটি নাম। মেহেরাব! মেহেরাব।
আগুন হতভম্ব!
.
.
মোমের মাথায় এই শীতেও ঠান্ডা পানি ঢালা হচ্ছে! মোমদের জানালার ধারের রোডে গাড়ির হর্ণ শোনা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি গাড়ি দেখা যাচ্ছে সেখানে।
হোস্টেলের সব মেয়েরা বেলকুনিতে দাড়িয়ে একবার কিং ফায়ার কে দেখছে আরকেবার রুমের সামনে এসে মোম কে দেখছে। সবাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত! নেক্সট কি হবে সেটাই সবার উত্তেজনার কারণ।
মোম শীতল চোখে শুধু তাকিয়ে রয়েছে! কাশফিয়া পাসপোর্ট আর একটা টিকিট মোমের হাতে দিয়ে বলল- আর কিছু শুনব না। আল্লাহর দোহায় আজ-ই তুমি দেশ ছেড়ে নিজের দেশে যাবে। যেখানে তুমি নিরাপদ।
বেঁচে থাকলে আবার পড়াশোনা হবে!
মোম বলল-মেহেরাব ইসলাম!
-ওটা তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। ও তোমাকে যেতে দেবে না সেটা জানি।
মোম কে হোস্টেলের সব মেয়েরা কিং ফায়ারের অগোচর লুকিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছে। সিংহের গুহা থেকে বের হলে যেমন ফিলিং হয় মোমদেরও তেমন ফিলিং হলো। মোম পাসপোর্ট আর টিকিট হাতে নিয়ে বসে আছে এয়ারপোর্টে। সব সপ্ন ভেঙে গেলো। বাবা কে সে কি জবাব দেবে? খুব কষ্ট পাবে বাবা নিজের মেয়ের সাথে এমন হয়েছে শুনলে।
দেখতে দেখতে ফ্লাইটের সময় হয়ে এলো। মোম নিজের সিটে বসে সিট বেল্ট লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল-গুড বাই ইংল্যান্ড, গুড বাই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।
মোম একটা দীর্ঘ স্বস্তির নিঃস্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
চোখ খুলে দেখবে সবুজ শ্যামলা সোনার বাংলা!
মোম এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যে ঠিক অচেনা যেমন মনে হচ্ছে তেমন না।

তেমনি পরিচিত বলেও জোর দিয়ে বলতে পারছে না। সে এখানে কি করে এলো? সে তো প্ল্যানে ছিলো! এটা কি বাংলাদেশ? রাতের কুচকুচে অন্ধকারে চারপাশটা ভুতুড়ে হয়ে আছে। এখন ঠিক কটা বাজে সেটাও বলতে পারছে না।
হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফেললাে মনে মনে। সে তাে কখনই হাতঘড়ি পরে না।
মাঝে মধ্যে পড়তে হয় ক্লাসের নিয়মে।

ভুরু কুচকে সামনের দিকে তাকালাে, কিন্তু ভারি কুয়াশার চাদর ভেদ করে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, তারপরও কী এক অজানা আতঙ্কে তার বুকটা লাফাচ্ছে। নিজেকে একটু বকাঝকা করলাে। সে তাে কখনও এতোটা ভীতু ছিলাে না। সাহস করে কয়েক পা সামনের দিকে এগিয়ে গেলাে সে। এখন কানে একটা ভােতা শব্দ শুনতে পাচ্ছে ।

ধুপ! ধুপ! ধুপ!

নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে হচ্ছে শব্দটা। সেই শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে গেলাে মোম। আশ্চর্যের ব্যাপার, এতাে ভারি কুয়াশা পড়া সত্ত্বেও তার মােটেও শীত লাগছে না। কয়েক পা সামনে এগােতেই কুয়াশার চাদর ফিকে হয়ে আসতে শুরু করলাে । থমকে দাঁড়ালাে সে। বুকের হৃদস্পন্দনটাও থেমে গেছে যেনাে। একটু আগে যেভাবে হাতুড়িপেটা করছিলাে সেটা আরও জোরালোভাবে হচ্ছে। আচ্ছা এটা কি সপ্ন? হ্যাঁ সপ্ন-ই তো।
তারপর যে দৃশ্যটা মোম দেখলো সেটার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না!
-আসসালামু আলাইকুম! দিজ ইজ মেহেরাব!
মোম একবার চোখ বন্ধ করলো। আরেকবার চোখ খুললো।
-সপ্ন নয়। সত্যি তুমি এই জায়গায় আমার সামনে দাড়িয়ে আছো।
-আমি তো এয়ারপোর্টে ছিলাম। প্ল্যানের সিটেও বসে ছিলাম সিট বেল্ট লাগিয়ে।
-হা!হা!হা!মেহেরাব কে ধোঁকা দেওয়া সহজ নয়।
পরক্ষণেই মেহেরাবের চেহেরাটা কেমন যেন পাল্টে গেলো। যা দেখে মোমের মনে একটু ধাক্কা দিলো।
-তুমি কাউকে ধোঁকা দিতে পারও সেটা জানতাম না। হাউ ডেয়ার ইউ?
-দেখুন মিঃ কিং ফায়ার!
-মেহেরাব! আমার নাম মেহেরাব।
এখন না হয় নাম ধরে ডাকতে পারও বাট বিয়ের পর কি করবে?
-দেখুন মিঃ কিং ফায়ার বা মেহেরাব যা-ই হোন না কেন আপনি সীমা অতিক্রম করছেন। আপনি মুসলিম হয়েছেন সেজন্য আমি একজন মুসলিমা হিসেবে খুশি হয়েছি। ধীরে ধীরে একজন আদর্শ মুসলিম হয়ে উঠবেন এই দোয়া করব সবসময়।
তাই বলে আপনি আমার লাইফে ঢুকতে পারেন না।
মেহেরাব কিছু বলছে না। শুধু তীব্র চোখে সে মোম কে অবজার্ভ করে যাচ্ছে।
-আপনি দয়া করে আপনার রাস্তায় চলবেন এবং আমাকেও আমার রাস্তায় আশা করি চলতে দেবেন।
-তুমি ঠিক কি মিন করতে চাচ্ছো? বুঝতে পাচ্ছি না।
এরপরেও কি তোমার কিছু বলার আছে?
-এখনো বুঝতে পাচ্ছেন না? এরপরেও আমি কেন কিছু বলব না? আমার হয়ে আমি কথা বলতে পারব না?
মেহেরাব কর্কশ কন্ঠে হালকা ভাবে বলল- কি বলতে চাচ্ছো এবং এখন তোমার মনের ভাবনা কি সেটা বলো? এদেশ এবং আমাকে ছেড়ে লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মানে কি?
মোম শান্তভাবে বলল- আমি বলেছিলাম ভেবে দেখব আপনার বিষয়টি।
-ভেবেছো?
-হ্যাঁ।
-কি ভেবেছো? উওর টা কিন্তু হ্যাঁ হওয়া চায়!
– না।
-মানে?
মোম শান্ত চোখে বলল- না। আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে ভাবতে পারব না।
জানি আপনি সেটা মেনে নেবেন না তাই নিজেকে রক্ষা করতে আমার সপ্নগুলো ত্যাগ করে দেশের মেয়ে দেশে ফেরত যাচ্ছিলাম।
সত্যি কথা হলো আমি আপনাকে কখনো আমার স্বামী হিসেবে ভাবতে পারব না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমা হিসেবে আমাকে এই অধিকার ইসলাম দিয়েছে।
-আমি তো এখন মুসলিম! ধীরেধীরে সবকিছু শিখে নেব! তাহলে প্রবলেম কোথায়?
-সপ্ন ছিলো অতি সাধারণ একজন পরহেজগার আমার স্বামী হবে। সেটা আপনি নন!
-সেটা আমি নই?
-অবশ্যই না। তাকিয়ে দেখুন নিজের দিকে? মনে করে দেখুন নিজের কৃতকর্ম গুলো?
-তুমি কিন্তু আমাকে নিয়ে গেইম খেলছো!
-এই তো আসল কথা বলেছেন। গেইম আপনি আমার সাথে খেলতে চাচ্ছেন। আমি খেলছি না বলেই আপনার সহ্য হচ্ছে না।
এবার বলুন তো আপনি আমাকে ঠিক কেন বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন? বিয়ে নয়।বিয়ে বলা ভুল হবে।কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ! আপনি যে অপরাধ গুলো করেছেন সেগুলোর প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ স্বরুপ আমার শাস্তি ছিলো একজন নাস্তিকের সাথে বসবাস করা ডিল হিসেবে।
-আমি এখন নাস্তিক নয়। আমার মাঝে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তারমধ্যে বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে। সেটা আমার ব্যাক্তিগত! আমার অস্তিত্বের সাথে মিশেছে! শর্ত পূরণ করে তোমার সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে গিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়।
-শুনি কি পরিবর্তন? এখন নিশ্চয়ই বলবেন না আমার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে আমি অনুভব করেছেন ঐশ্বরিক বিষয় গুলো কে। অনুভব করেছেন একত্ববাদী নিরাকার সৃষ্টিকর্তা কে?
মেহেরাব মাথা নিচু করে বলল- বিষয়টি অনেকটা সেরকম!
-ওহ হ্যালো! অন্য কাউকে বোকা বানাবেন। আমার শর্ত পূরণ করে আমাকে বিয়ে করে শাস্তি দেওয়ার জন্য মুখেমুখে ঐশ্বরিক ক্ষমতা কে স্বীকার করেছেন! এটা যেকেউ বুঝতে পারে।
-জানি কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু যা সত্যি তা-ই বলেছি।
হ্যাঁ আমি ফার্স্টে ভেবেছিলাম…মেহেরাব থেমে মোমের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বলল- ভেবেছিলাম তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব! ঐশ্বরিক ক্ষমতা, আসমানী কিতাব কে বিশ্বাস করে না এমন একজনের অধীনে থাকবে! সেজন্য ভেবেচিন্তে নামে মাত্র ইসলাম গ্রহণ করতে গিয়েছিলাম মসজিদে।মসজিদে পা দেওয়া মাত্রই মনে হলো কেউ একজন আমাকে দেখছে! শুধু আমাকে নয় সবকিছু দেখছে! সবকিছু যেন তার নিয়ন্ত্রণে, সে যেন প্রচন্ড ক্ষমতাশালী! তার কাছে আমি অনু-পরমাণুর থেকেও ক্ষুদ্র!
– কথা বলা শেষ হয়েছে আপনার? এবার আমি বলি? আসলে মূল বিষয়টি বিশ্বাস নয় স্বীকার করা! বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ঐশ্বরিক ক্ষমতা কে অনুভব করে কিন্তু মানতে চায়না কারণ মানলে তো নিজের মতো থাকা যাবেনা। ক্ষমতা জাহির করা যাবেনা।
খেয়াল খুশি মতো জীবন যাপন করা যাবেনা। অন্যের উপর জুলুম নির্যাতন হুকুম চালানো যাবেনা। তাই তারা নিজেদের নাস্তিক দাবি করে। তারা দাবি করে যা করছে সব সঠিক!নিজের অন্যায় স্বীকার করবেনা! বুক ফুলিয়ে চলবে। পরে কি হবে তা দেখা যাবে। অতি জঘন্য বাজে নৃশংস লোকেরা-ই বলে ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে কিছু নেই, জোর যার মুল্লুক তার! এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। অতি থেকে অতি জঘন্য ঘৃণিত কাজগুলো।
মেহেরাবের কানে কেউ যেন গরম গলিত লোহা ঢেলে দিচ্ছে। দাড়িয়ে থাকতে পাচ্ছেনা নিজের প্রতি মোমের বিষমাখা তীরের সত্যি কথা গুলো।
মোম আবার বলল- আপনি কি ভেবেছেন আপনার ভয়ে দাপটে আমি জমে যাব? আপনার স্বার্থ উদ্ধারে আমি নিজেই নিজের সর্বনাশ করব? আপনার মতো একজন নৃশংস লোক কে আমি বিয়ে করব? সহধর্মিণী হব?
আমাকে শাস্তি দেবেন আপনার জুলুমের জন্য সেটা জেনেও আমি আপনার কথায় রাজি হব?
মেহেরাব বুকের বাম পাশে হাত রেখে কোনরকমে বলল- ইসলাম গ্রহণের আগের কথা এগুলো! তাই বিয়ে নামক কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের কথা বলেছিলাম। শাস্তি দেওয়ার জন্য তোমাকে অফিসিয়াল ওয়াইফ বানাতে চেয়েছিলাম।
বাট সিচুয়েশন ভিন্ন! তোমাকে বিয়ে করতে চাই ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক!
মোম তীব্র কন্ঠে বলল- এখন কিন্তু কোন বিয়ের কথায় আসাবার নয়, আপনি যেহেতু নিজেকে মুসলিম দাবি করছেন সেহেতু আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন আপনার কৃতকর্ম গুলো কতোটা জঘন্য ছিল? আমি সেটার প্রতিবাদ করেছি যা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক! আপনিও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন?
মেহেরাব মাথা নাড়ালো।
-সো সমস্যা সমাধান! আপনি যখন সত্যিটা সবকিছু বুঝতে পেরেছেন সেহেতু আমার কোনরকম শাস্তি বা আপনার আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ের কথায় আসছেনা সো আমাদের বিয়ের প্রশ্নই আসেনা?আমাদের বিয়ে হওয়ার কোন কারণ নেই। ইজ ইট ক্লিয়ার?
মোম মাথা নাড়িয়ে অস্ফুটে কন্ঠে বলল- আগে প্রতিশোধের জন্য কন্ট্রাক্ট বিয়ে করতে চাইছিলাম বাট এখন শরীয়ত মোতাবেক তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি!
-সেটা কেন?
-আমি নিজেও বুঝতে পাচ্ছিনা। শুধু মাথায় মনে একটাই কথায় ঘুরছে তোমাকে আমার সাথে , আমার পাশে থাকতে হবে, তোমার বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য আবদ্ধ করে রাখতে ইচ্ছে করছে।
-সেটা আপনার মাথা ব্যথা! আমার না। যেকেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইলেই তো আর তাকে বিয়ে করা যায় না। যদি তাই হতো তবে এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রপোজাল পেয়েছি তাতে শ-খানিক বিয়ে হয়ে যেত!
আর শুনুন- আমারও একটা ইচ্ছে হচ্ছে যেটা মাথায় ঘুরছে। আপনাকে চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না, শুধু আপনাকে নয় কোন বেগানা লোক কে আমার দেখতে ইচ্ছে হয়না।
আপনাকে কখনো আমি বিয়ে করে স্বামী হিসেবে সপ্নেও ভাবতে পারিনা!
কতোটা অমানবিক আপনি! কতোটা নৃশংস আপনি! ছিঃ ছিঃ!!!
মেহেরাব এক-পা পিছিয়ে গেলো।কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে।কেন যেন সে মনে করতে চায়না তার আগের রুপ কে।মনে করতে চাইলে-ই দু-চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
মোমের তার প্রতি ভাবনা গুলো কেমন যেন তার ব্যাক্তিত্বে লাগলো। সহস্র তীর তার বুকে বিধ্বস্ত হলো। সে কি আসলেই এতোটা জঘন্য? সবার কাছে? মোমের কাছে? আচ্ছা ইশ্বরের কাছেও কি?
মেহেরাব নরম স্বরে মোমের দিকে এক পলকে তাকিয়ে বলল- আমাকে তুমি বিয়ে করবেনা কখনো এটা জেনেও তাহলে আমাকে মুসলিম হতে কেন বলেছিল? ইসলাম গ্রহণ করতে কেন বলেছিলে?
মোম নেকাব হালকা টেনে টেনে বলল- আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি দায়িত্ব এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য। একজন মুসলিম হিসেবে মুসলিমের দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র, সিম্পল!

.

❤আল-কুরআনের ৮১টি উপদেশ বাণীর একটি বাণীঃ
৯। লড়াইয়ের বিধি মেনে চলো। [সূরা বাকারা ২:১৯১]
.

চলবে………….💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here