#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩
(এলার্ট)
‘মিস্টার ফাওয়াজ আইম এক্সট্রেমলি সরি। ইউর ওয়াইফ ইজ নট প্রেগন্যান্ট। দিজ ইজ ফেইক নিউজ।’
কথাটা শুনে হতাশার গ্লানি ফুটে উঠে আরভীক এর মুখশ্রীতে। ডক্টর ডেভিভ অপরাধীর মত দৃষ্টিনত করে বসে আছে। অঞ্জয় বারদুয়েক ঢোক গিলছে এবং বারংবার তার বসের চেহারা লক্ষ করছে। চেহারায় ক্রোধ ফুটে উঠার পূর্বেই সে পালানোর ফন্দি এঁটে রাখে। ডক্টর ডেভিড কে ক্ষুণ্ণ দেখে মায়া হলো আরভীক এর। সে নাস্তার মধ্যে থাকা নুডলসের স্যুপ এগিয়ে দিল। তার জন্যে বরাদ্দকৃত ভেজিটেবল স্যুপ নিয়ে রেখেছে। ডক্টর ডেভিড কৃতজ্ঞতার চোখে বলে,
‘থ্যাংকস বাট আই হেড মাই ব্রেকফাস্ট ইয়ারলি!’
‘গুড দ্যাটস ওয়াই ইউ আর ডক্টর।’
কথাটি শুনে হেসে মাথা নাড়ে ডক্টর ডেভিড। আরভীক সেই হাসিকে গর্দভ বানিয়ে দিল কয়েক পলকে। এমন কথা বলে যে,
‘বাট হার্টলি দ্যা বুল’শিট।’
আরভীক এর কথায় ভুলবশত হেসে মাথা নেড়ে সায় দিল ডক্টর ডেভিড। অঞ্জয় দেখে মুখ টিপে হেসে দেয়। ডক্টর ডেভিড মিস্টার ফাওয়াজ এর বলা বাক্য পুনরায় রিমাইন্ডে নেই। এতে সে ইঁদুরের চাহনী নিয়ে বলে,
‘ওয়াই ইউ সেয়ে দ্যাট!’
‘বাংলা জানেন নিশ্চয়। আপনার রোগী সন্দেশ হলো আসল ডক্টর। আমার মন বুঝে মাইয়া আমার বুকে বেঁধে দিল। আই প্রাউড অফ দ্যাট মেন্টালবয়।’
‘অপমান করছেন!’
‘না না মুন্না অপমানের অ ও করতে পারি না আমি।’
রেগে দাঁড়িয়ে যায় ডক্টর ডেভিড। তিনি ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তর্জনী আঙুল দেখিয়ে শাঁসিয়ে উঠে।
‘আই উইল সি ইউ। এই অপমানের শোধ আপনাকে দিতে হবে।’
‘সে কি অঞ্জয় এখন তো দেখছি সবার জন্য সিমের অফার দিতে হবে। একে একে শোধ দিতে চাই। তুই এক কাজ করিস। ড্যাশ বাংলার অফার দিস অফিসের মধ্যে। যারা শোধ নিতে চাইবে তাদের একেকটা যেন একলাখ টাকার জরিমানা দিয়ে লোন পূরণ করে। আজকাল দেখছি সবাই শোধ দেওয়া-নেওয়ার জন্যে মরে যাচ্ছে। তাদের চিন্তায় খিদে পেয়ে গেল উফ!’
আরভীক মাথা ঝেড়ে। চোখ ড্যাবড্যাব করে ভেজিটেবল স্যুপ মুখে পুরে নেয়। গলার নিচে ভদ্র স্বভাবের মত রুমাল গেঁথে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে খেতে লাগে। এই বলদমার্কা ডক্টরের জন্যে খামোখা সে সাধুসন্ন্যাসী হয়ে কাঁধ সোজা করে বসে ছিল। ব্যাড বয়েস কাধ সোজা না ত্যাড়া বাকাঁ করে রাখে। ভেবেই আপনমনে চেয়ারে হেলান দিয়ে স্যুপের চামচ ভর্তি করে মুখে নিচ্ছে। ক্ষোভে দাঁড়িয়ে ফুসছে ডক্টর ডেভিড। তিনি তার ধাঁরালো চোখের ভস্মীভূত দৃষ্টি দিয়ে সামনে বসে থাকা ব্যক্তি অথাৎ আরভীক এর উপর মনে মনে ঘোর অপমান করার চিন্তা পুষে রাখে।
আরভীক খাওয়ার মাঝে আড়চোখে ডক্টর ডেভিডের ক্রোধের দৃষ্টি দেখতে পাই। বাঁকা হেসে তার অপমানের মাত্রাকে অত্যধিক বাড়িয়ে দিতে ঠাট্টার কণ্ঠে বলে,
‘প্লিজ ডোন্ট লুক ইন মাই স্যুপ! খাওয়ার মধ্যে আপনি চোখ দিলে আমার পেট খারাপ করবে। আপনাকে কবেই অফার করেছি নুডলস স্যুপ খাওয়ার জন্য। সেই আপনি ‘না না’ করে নিজেকে বেচারার নাতী বানিয়ে দিলেন। তাতে আমার আর কি করার থাকে।’
‘সেট আপ মিস্টার ফাওয়াজ। মুখ সামলে কথা বলুন! আপনি জানেন কার সামনে আপনি নিজের ম্যানারলেজ কথা বলছেন।’
আরভীক চমকে এদিক ওদিক দেখে। দাঁড়িয়ে অঞ্জয়ের চৌপাশ টেনেটুনে, তারে ঝাড়ফুক দিয়ে দেখল। মাথা নেড়ে কি যেন ভেবে ‘নাহ্’ বলে কেবিনে থাকা সোফার কোণায়,পেছনে,পর্দার পেছনে, তার বিশ্রাম রুমে খোঁজ লাগানোর ব্যর্থ ভান করে ক্লান্ত হলো। কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে যায়। ফোঁস ফোঁস করে জোরালো শ্বাস নিয়ে অঞ্জয়ের দিকে তাকায়। সে নিজেও আশ্চর্য চোখে তার বসের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে। ডক্টর ডেভিড আরভীক এর দৃষ্টি আর্কষণে কেশে বলে,
‘কথা না বলতে জানলে বোবা থাকেন। এসব খোঁজাখোঁজির মানে কি!’
‘ডক্টর কেবিনের মধ্যে অঞ্জয় আর আমি বাদে এক শু’য়ো’রের’ বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। তারে তাড়ানোর জন্য লাঠি খোঁজ ছিলাম। শু’য়ো’রের’ বাচ্চারা নাকি লাঠি দেখলে ভয় পায়। তাই লাঠি আছে কিনা দেখছিলাম।’
দাঁতে দাঁত চেপে ডক্টর ডেভিড ঝাঁঝালো গলায় শাঁসায়।
‘এসে ছিলাম আপনার ভালো করতে। তবে ভবিষ্যৎ আপনার খারাপ করার ব্যবস্থা করব।’
আরভীক তড়িঘড়ি ডক্টর ডেভিডের কাছে এসে তার পিঠে বার’দুয়েক ঠাস ঠাস করে হাতের জোরালো বারি দেয়। শেষ বারিটা তীব্রতর হওয়ায় ধপাস করে পা পিছলে টাইলসের উপর পড়ে তিনি। আরভীক মুখে হাত দিয়ে বলে,
‘সরি ডক্টর শুভকাজে আপনাকে গড ব্লেস দিতে চাইছিলাম। জানতাম না আপনার শুভ কাজের উপর গড নারাজ থাকবে। তিনবারের চড়ও সামলাতে পারলেন না ছেহ্ ছেহ্।’
‘ইউউউ….।’
ডক্টর ক্রোধের বশীভূত হয়ে দাঁড়িয়ে ঘু’ষি মা’র’তে হাত এগোয়। কিন্তু সেই হাত আরভীক এর মুখে লাগার পূর্বেই আঁকড়ে ধরে সে। ডক্টর ডেভিড এর মুখশ্রী লালবর্ণ হয়ে গেল। তা কি যন্ত্রণায় নাকি রাগে বুঝছে না অঞ্জয়! সে ঢোক গিলে আক্রমণ রোধের জন্য তার বসের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের একে অপরের মধ্য থেকে গরম ভাবাবেগ তার বসের পক্ষ থেকেই বেশি পাচ্ছে সে। আরভীক ডক্টর ডেভিডের দিকে হাসিঠাট্টার চেহারা নিয়ে শুধায়।
‘এই হাত সামলে রাখুন মিস্টার ডেভিড! আমার হাতের হিংস্র চামড়া ঘুমিয়ে আছে। ইঁদুরের ছানার জন্য জেগে উঠে না সে। যদি জাগে তাহলে এই হাত কি শরীরও থাকবে না। প্লিজ কিপ দ্যা ওয়ার্ড’স সেভ ইন ইউর মাইন্ড। ইফ ইউ ফরগেট। দেন কল মি 01*****। আইম অলওয়েস এভেলেবেল।’
ডক্টর ডেভিডের হাত ছু’ড়ে দেয় আরভীক। সে অপমানিত নজরে চেয়ে দ্রুত হেঁটে কেবিনের দরজা খুলে। তথাপি সে বের হবার মুহুর্তে তার কাঁধ ধাক্কিয়ে সামনে এসে পড়ে আরভীক। ডক্টর ডেভিড থতমত খেল। ক্রোধের বশে সামনে দেখে চলার কথা ভুলেই গিয়ে ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আজ যদি আরভীক এগিয়ে না আসতো। তবে মুখ থুবড়ে মাথা ফাটার তীব্র আশঙ্কা ছিল। ঢোক গিলে বুকে বার’দুয়েক ফুঁ দিয়ে সামনে দেখে অবাক হলো সে। অঞ্জয় চোখ নামিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে আজাইরা ঘাঁটাঘাঁটি করে। আনজুমা বিস্মিত নজরে আরভীক এর মুখপানে চেয়ে রইল। মনে মনে বিরক্ত হলো সে।
আরভীক আনজুমার চোখের চাহনীর মধ্যে চোখ মেরে ডক্টর ডেভিডের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ডক্টর আপনার তো দেখছি শরমবরম নেই। কাপলের চুমাচুমির সময় সামনে থেকে সরে যেতে হয়। তাও জানেন না দেখছি। হ্যান্ড্রেন পার্সেন্ট সিউর আপনি প** দেখে অভ্যস্ত।’
ডক্টর ডেভিড ঠোঁট ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
অন্যথায় আরভীক এর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে গেছে আনজুমার। প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ছড়াছড়ি করার চেষ্টা চালায়। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনমনে ক্রোধ প্রকাশ করে।
এ ব্যাটার দেখছি খেয়ে দেয়ে কাম নেই। দেখা নেই, সাক্ষাৎ নেই সরাসরি কোমর জড়িয়ে ঝুকে আছে। নিশ্চিত গুলিস্তানের মাল!
‘কি যে বল তুমি!’
লাজুক চেহারা করে লজ্জামিশ্রিত হাসি দিল আরভীক। আনজুমা তার কথা শুনে বিব্রতে হা হয়ে গেল। সে তার মনের কথা শুনল কেমনে ভেবে পেল না! ঢোক গিলে কর্কশ গলায় শুধায়।
‘বে’হা’য়া লোক ছাড়ুন।’
আরভীক শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কি ভেবে যেন কোলে উঠিয়ে নিল আনজুমাকে। একপলকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সে। চোখ দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকায়। অঞ্জয় লাজলজ্জার সহিত ‘আসছি’ বলে দ্রুত কেটে পড়ে। আনজুমা ঠোঁট পাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
‘কি করছেন কি! নির্লজ্জমার্কা লোক। ছাড়তে বলছি কানে শুনেন না।’
‘ওকে ছেড়ে দিলাম।’
ঠাসস করে সোফার উপর পড়ে আনজুমা। কোমরে ব্যথা না পেলেও কোল থেকে পড়ার কারণে কোমর সামান্য বেঁকেছে। আরভীক শার্টের কলার বিকৃত করে গরম ভাব নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনে হাত নেড়ে নিজেকে ‘ফিলিং হ’ট’ বুঝায়। ভাবপূর্ণ গলায় শুধায়।
‘গুলিস্তান তো দূরের কথা, আমি হলে হতাম আফগানিস্তানের মাল! আল হাবিবি, আল হাবিবি, আল হাবিবি ওয়াল্লাহ্ ওয়াল্লাহ্।’
কথাগুলো বলে কাঁধ নেড়ে নেড়ে আপনমনে নেচে সরে পড়ে আনজুমার সামনে থেকে।
আনজুমা চোখ বুজে উঠার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ডে দাঁড়িয়ে কোমর সটান করে। ফলে ব্যথাতুর জায়গায় আরামবোধ করে। এবার যেন বাঘিনী ক্ষেপেছে। কোমরে হাত রেখে আঙুল তুলে ঝারি দিতে চাইল আরভীককে। কিন্তু এ কি ! আরভীক ভদ্রসন্ন্যাসী সেজে তার চেয়ারে বসে কাঁধ সোজা করে কাজ করছে। কখন কবে বসল টেরই পেল না সে। তার কাজ দেখে মনে হচ্ছে। দুনিয়া উল্টে গেলেও কাজ তার একমাত্র ধ্যানপরায়ণ। আনজুমা তার সন্নিকটে গিয়ে টেবিলে মৃদু আওয়াজ করে। আরভীক কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করল। যে কোন থার্ড পার্সন তার ও কাজের ভেতরে নাক গলিয়েছে! আনজুমা তার বিরক্তিভরা চেহারা দেখেও না দেখার ভান করে বলে,
‘আপনি আমাকে টার্চ করছিলেন কেনো!’
‘ওয়াট! আমি কেনো তোমাকে টার্চ করতে যাবো!’
‘এই একদম পল্টি মারবেন না। আপনি আমাকে টার্চ করে কোলে নিয়ে সোফায় ফেলছেন!’
‘ওয়াও ইউর ইমাজিনেশন ইজ ওয়ান্ডারফুল ! আই লাভ ইট।’
‘আপনার লাভ দেখাতে হচ্ছে না। জাস্ট সেয়ে ওয়াই ইউ আর টাচ মিইইই!’
‘লুক মিস আবান! দোয়া করি নিশ্চয় একদিন আপনাকে কোলে নিয়ে সোফায় ফেলব। বাট ইউ নো না দিজ ইজ আওয়ার ওয়ার্ক টাইম, নট প্রাইভেসি! ইফ ইউ রিয়েলি নিড ইট টু বি ট্রু। দেন আই অন্ট মাইন্ড। আই অলওয়েজ রেডি টু গিভ ইউ এ পাপ্পি হাগ!’
শেষাক্ত কথাটি চুমুর মত করে বলে ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আনে আরভীক। আনজুমার শরীর শিউরে উঠছে কথাগুলো হজম করতে। বেচারী চেয়ে ছিল আরভীককে কোলে নেওয়ার দায়ে শায়েস্তা করবে। তবে সে নিজেই তার পায়ে কুড়াল মেরে খাল খনন করে ফেলছে। এত এত বদ’মায়েসী কথাবার্তা এই মানুষটার পেট থেকে আসে কেমনে বুঝছে না সে। রুক্ষের ন্যায় দৃষ্টি সরিয়ে ইতস্ততবোধক শ্বাস ছাড়ে। সে এসে ছিল কাজে! অন্যথায় এসেই বে’হায়া’গিরির সম্মুখীন হলো।
আরভীক আড়চোখে আনজুমার মূর্তি ভাব দেখে মুখ খুলতে নিলে। সে থামিয়ে দিল। তার কাঁধ থেকে ফাইল বের করে আরভীক এর দিকে এগিয়ে দেয়।
সে ঝলমলে চোখে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,
‘লাভ লেটার হাআ!’
‘স্যাররর!’
চিৎকার দিয়ে ফেলে আনজুমা। ঘাবড়ে যায় আরভীক। তড়িঘড়ি ফাইলটা নিয়ে দেখা শুরু করে। আনজুমা দম আঁটকে রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘এ কয়েকদিনে যত সেল করেছি তার ফাইল! ভুলত্রুটি হলে দেখিয়ে দিন।’
‘হুম সেল কমপ্লিট করেছো বাইশটা, অর্ডার কনফার্ম হয়েছে পনেরোটা গুড জব! এই পনেরোটা অর্ডার কমপ্লিট করে আমাকে কাস্টমারের নামের লিস্ট দেবে। সব মিলিয়ে তোমাকে কমিশন দেওয়া হবে।’
উৎফুল্ল হলো আনজুমার মন। খুশিমনে ফাইলটি নিয়ে বেরিয়ে যায়। আরভীক কম্পিউটারের দিকে চোখ ফেলে আপনমনে তৃপ্তির হাসি দেয়। সে ভুল নয়, আনজুমাকে জব দিয়ে লাভের পথ দেখে চলেছে।
২৪.
কেবিনের থাই গ্লাস দিয়ে শক্ত চোখে পুরু দৃশ্য আয়ত্তে নিয়েছে শ্রেয়া। ক্রোধে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আরভীককে পাওয়ার জন্যে ক্লাবে তার করা পাগলামী আদৌ তার মস্তিষ্কে কড়া নাড়ে।
হাত মুঠোবদ্ধ করে গ্লাসের সামনে থেকে সরে গেল সে। আরভীক এর টনক নড়ে। চোখ তুলে তৎক্ষণাৎ কেবিনের বাহিরে দৃষ্টিপাত করে। এমপ্লয় যে যার মত কাজ করছে দেখে, চোখ বুলিয়ে আনজুমার প্রস্থান করা নজরে আসে। সে লিফ্টে প্রবেশ করে কোথায় যেনো যাচ্ছে! চিন্তিত হলো তার মন। ব্লুটুথ অন করে অঞ্জয়ের ফোনে ডায়ল করে।
অঞ্জয় অফিসের কফি সাইডে বসে। কফি খাচ্ছিল! সিঙ্গেল মানুষ শেয়ারিং করার রমণী নেই। ফলে শান্তভাবে পান করে যাচ্ছে। আকস্মিক কল পেয়ে ফোনটি কানে ধরে।
‘ইয়েস বস!’
‘অঞ্জয় এখনি দুনাম্বর ফ্লোর থেকে লিফ্ট যাবে। তুই গিয়ে তিননাম্বর ফ্লোরের বাটন প্রেস করে ঢুকে যাবি।’
‘কেনো স্যার!’
মৌন রইল আরভীক। অঞ্জয় দিরুক্তি না করে ‘ওকে বস’ বলে কল কাট করে। লিফ্টের সামনে এসে তিননাম্বার বাটন প্রেস করে। কেননা সে তিননাম্বার ফ্লোরে আছে। তবে সে ভাবতে লাগে, ‘তার বস হঠাৎ দুনাম্বার মানে এমপ্লয়ের ওয়ার্ক ফ্লোর থেকে আসা লিফ্টে কেন ঢুকতে বলল। স্যারের ফ্লোর স্যার নিজেই কি আসতেছে!’
ভেবে সমাধান পেল না। হিতে বিপরীত সমাধান পায়। লিফ্টে আনজুমা ম্যাডামকে দেখে চমকে গেল। পরক্ষণে সে স্বাভাবিক হয়ে ম্যাডামের পাশে গিয়ে দৃষ্টিনত করে দাঁড়ায়। মনে মনে বিরবিরিয়ে বলে,
‘বস ম্যানেজার বানিয়ে এসিস্ট্যান্টের কাম করায়। এখন দেখছি ওয়াচম্যান হওয়াই বাকি ছিল। মাগো কই তুমি! ওবাবাগো তোমার বাসার চিরাগকে বাচিঁয়ে নাও। না হলে কোনো একদিন আরভীক বস আমাকে জিনি বানিয়ে ছাড়বে।’
লিফ্ট চারনাম্বার ফ্লোরে এসে থামল। চোখ পাঁকিয়ে একপলক আনজুমার দিকে তাকায় অঞ্জয়। সে দরজা খুলতেই বেরিয়ে পড়ে। তার পিছু নেই অঞ্জয়। আনজুমা ‘গার্লস প্রাইভেসি’ লিখা কেবিনের সামনে এলে। থেমে যায় অঞ্জয়ের কদম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ঠোঁট চেপে সাইডে থাকা বক্সের সাথে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আনজুমা ভেতরে প্রবেশ করে।
______
রাজিব স্টেয়ারিং এ হাত রেখে শ্রেয়ার রাগান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অল্পকিছুতে রেগে বোম হয়ে যায়। ফলে পুরু আবেদনময়ী নারীর রুপ ফুটে উঠে তার মাঝে। যা দেখে স্বয়ং বেকাবু হয়ে পড়ে রাজিব। ক্লেশকর চাহনী কাটিয়ে দিতে রাজিব আহ্লাদী গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘হলো কি! গেলেন হাসিমুখে, আসলেন রেগেমেগে।’
‘আরভীক তার পিএয়ের সঙ্গে রঙলিলা রচায়। আর আমার সঙ্গে সামান্য হ’ট’নেসও শেয়ার করে না। হ’ট’ ফিলিংয়ের কথা শুধু ঐ পিএয়ের জন্যে কেনো! মেয়েটি কি তার বউ লাগে! বাট আইম হ্যাপ্পি ফর ওয়ান থিংক! মেয়েটা তাকে মোটেও পাত্তা দেয় না। আর আমি যে পুরু শরীর তার জন্য বেডে বিকিয়ে দিতে চাই। সেই আমাকে শ্রেয়া জাফরকে ক্লাবে সকলের সামনে চড় লাগিয়ে ছিল। সামান্য গা ঘেঁষে তার হাত নিজের বু’কে’ লাগাতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু বু’কে হাত বুলানোর বদলে গালে চড় বসিয়ে দিল। বাট আই হেভ নো প্রব্লেম! ড্যাড একবার বিয়েটা ঠিক করে ফেলুক। তখন এক রুমে রাত কি দিনেও বের হতে দেবো না।’
রাজিবের শরীর উত্তেজিত হয়ে আছে। কথাগুলো শ্রেয়া আরভীককে কল্পনা করে বললেও। তার প্রভাব বিস্তার করছে রাজিবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে! আমতা আমতা করে শ্রেয়া কে বলে,
‘শুনেন আপনাকে বাসায় ছেড়ে স্যারের কাছে যেতে হবে। ডাকছে আমায়।’
শ্রেয়া চোখ ঘুরিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিল। রাজিব সময় বিলম্ব না করে গাড়ি টেনে শ্রেয়াকে বাসা অব্দি নামিয়ে দেয়। শ্রেয়া যেতেই রাজিব গাড়ি সোজা ক্লাবে নিয়ে গেল। পার্কিং সাইডে গাড়ি পার্ক করে ক্লাবে ঢুকে ম্যানেজারকে তার আইডিকার্ড দেখায়। তিনি দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে।
‘হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার!’
‘রুম নাম্বার ফরটি থ্রি। সেন্ড এ গার্ল ফর মি কুইক!’
রুমে গিয়ে শার্ট খুলে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসেছে সে। শ্রেয়াকে নিদিষ্ট দিন ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা হলো বৃথা। ফলে সে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে।
২৫.
লিয়াকত সাহেব সোফায় আয়েশে বসে আছে। তার সামনে পায়ের উপর পা তুলে বিপরীতে বসে আছে আরাজ সাহেব। ভদ্রতার হাসি তার মুখে বিরাজমান। আরাজ সাহেব গম্ভীরমুখে শুধায়।
‘কি জন্যে এসেছিস!’
‘সে কি সাহেব! ভাই বুঝি বাসায় আসতে পারবে না।’
মৌন হয়ে বসে রইল আরাজ সাহেব। তার অর্থ ‘হে সে আসতে পারবে না’। লিয়াকত সাহেব বিষয়টি আমলে না নিয়ে রসিকপূর্ণ ভাবে তার সঙ্গে আনা ব্যাগ থেকে একটি কার্ড বের করে। কার্ডটি আরাজ সাহেবের নিকট এগিয়ে দিল। তিনি কার্ডটি নিয়ে খুলে দেখে। এক নেকাপ পরিহিত ভদ্র মেয়ের ছবি! কার্ডের উপর ‘জম্মদিনের আমন্ত্রণ’ লিখা। ভ্রু কুঁচকে এলো তার। তিনি প্রশ্ন করার জন্যে ধাতস্থ হলেই লিয়াকত বলে,
‘সাহেব মামুনির ইচ্ছে তার জম্মদিনের উৎসবে আপনি আর ছোট সাহেব এসে উৎসব পালনের সঙ্গে বিয়ের পাক্কাপাক্কি করে যাবেন। উদার মনের মাইয়া। সবার কথা চিন্তা করে ফয়সালা করে।’
‘শ্রেয়া জাফর!’
‘জ্বি সাহেব!’
তিনি ইতস্তত মনে ভাবছে,ছেলেকে কেমনে রাজি করাবে! তার ছেলে যে হারে ত্যাড়ামি করে। মেয়ে দেখার কথা বললে নিশ্চিত ঘরে পাও রাখবে না। উল্টো নিজেকে আমার কথা ছাড়াই ত্যাজ্য পুত্র করে দিবে।
‘সাহেব কোথায় হারালেন!’
লিয়াকত সাহেবের কথায় আরাজ সাহেবের ধ্যান ফেরে। তিনি আশ্বস্ত গলায় বলে,
‘জম্মদিনের অনুষ্ঠান দুদিন পর। আমরা আসব জানিয়ে দিস। এখন যেতে পারিস তুই।’
কথার সমাপ্তি টেনে তিনি পত্রিকা পড়ায় মনোনিবেশ করে। লিয়াকত সাহেব কার্ডটি টেবিলে রেখে ব্যাগের চেইন মেরে সদর দরজা পেড়িয়ে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় তার মুখে ভেসে উঠছিল শয়তানি হাসি।
মনে মনে এক কথাই আওড়ে যায়।
‘সর্বনাশী কন্যার সাক্ষাৎ পেতে চলেছিস আরাজ তুই। অপেক্ষা কর।’#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৪
‘শ্রেয়া শুন মামুনি তোর শ্বশুর আরাজ খুব ভদ্র,শালীন পুরুষ। তোর থেকে দুদিন খুব ভদ্রতার সহিত চলার অভিনয় করতে হবে। একটুও যেনো টের না পাই তুই কেমন মেয়ে! আমার মেয়ে আমার নজরে অভদ্র নয়। তবে তোর শ্বশুরের নজরে অভদ্র হতেই পারিস। ডু ইউ গেট দ্যাট!’
শ্রেয়া স্বাভাবিক ভাবে হাতের নখ পরিষ্কার করছে। ভাব এমন যে এ কাজটাই উত্তম। আশপাশের ‘কা কা’ করে কে কি বলল শুনছে না, পাত্তাও দিচ্ছে না! জাফর সাহেব মেয়ের মৌনতা দেখে তার নিকট গিয়ে নেইল মেশিনটা ছিনিয়ে নেন। সেটি টেবিলের ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বলে,
‘দুদিন শর্ট ড্রেস না পরে লং ফুল হাতার ড্রেস পরার ড্রামা করো।’
ব্যস জাফর সাহেবের উক্ত কথায় কটমট করে রেগে তাকায় শ্রেয়া। চেঁচিয়ে বলে,
‘ওয়াট ড্যাড! আর ইউ মেন্টাল! ইউ নো দ্যাট আই হেইট দ্যাট ফা** লং ড্রেস।’
‘মুখ সামলে কথা বলো মামুনি। আমার সামনে যা নয় তাই মুখে আনলে। মনে রেখো তোমার শ্বশুর খুব শক্ত মানুষ! একবার খুঁত পেলে আরভীককে পাওয়ার কথা ভুলে যেতে হবে তোমার।’
জাফর সাহেব মেয়ের বিছানায় নম্র,শ্লীল কাপড় এলিয়ে রাখছে। আজই কিনে আনিয়েছে। শ্রেয়া কথাগুলো হজম করে নিশ্চুপে কাপড়গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। একেকটা ফুল হাতার কাপড়!
কোনো দিক থেকেও কাটাছেঁড়া নেই, পুরু শরীর আবৃত করে দেয় কাপড়গুলো। আমতা আমতা করে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ড্যাড এসব কিসের ড্রেস! কোনো ছেঁড়া নেই। শরীর তো গরমে পুড়েই যাবে।’
‘এই তিনপিচ শেলোয়ার কামিজ আর এই পাঁচপিচ জামদানি শাড়ি। কেমনে পরতে হয় তা আমি ফিমেল মেইডকে বলে দেব। সে পরিয়ে দেবে।’
কথা শেষে তিনি অর্ডার করে আনা পার্সেল থেকে আরেকটি প্যাকেট বের করে। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিপাত প্যাকেটের দিকে রাখে শ্রেয়া। জাফর সাহেব ঢোক গিলে একপলক মেয়ের মুখের দিকে তাকায়। রক্তিম কাঠিন্যতা তখনো বিরাজমান তার! এই প্যাকেটের ভেতরকার কাপড়টি দেখার পর মনে হয় আগুনেই পুড়িয়ে দিবে কাপড়টিকে! তিনি সন্তপর্ণে প্যাকেট থেকে কাপড়টি বের করে। বিছানার অন্যপাশে সেটি বড় করে উম্মুক্ত করে এলিয়ে দিল। শ্রেয়া ক্ষেপে গজগজ করে উঠে। ধপধাপ পা ফেলে তার নিজের বাবাকে অবমাননা করে কাপড়টি হাতে নিয়ে বাথরুমের ভেতর ঢুকে। সেখানে পানি ভর্তি বালতির মধ্যে কাপড়টিকে ছু’ড়ে মা’রে। হতাশার গ্লানি নিয়ে মেয়ের অগোচরে ব্যর্থ শ্বাস নেই তিনি। শ্রেয়া তার বাবার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় শুধায়।
‘তুমি লং ড্রেস পরতে বললে মেনে নিলাম। কিন্তু বোরকা,নেকাপ, হাতমোজা এসব কি! এসব জিনিস পরলে আমাকে কোনো বেহেনজি থেকে কম মনে হবে না। আর রইল আরভীকের বাপের কথা। তিনি কেমন পছন্দ করে তা জেনে আমি কি করব! আমার নজর শুধু আরভীকের মধ্যে বুঝছো। তার বাপ নাক গলালে রাস্তা থেকেই সরিয়ে দেব।’
গজগজিয়ে নাক ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে যায় শ্রেয়া। জাফর সাহেব নিরবে শুনে আকস্মিক অট্টহাসি দিয়ে উঠে। তিনি আপনমনে হেসে তালি দিতে থেকে মেয়ের ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো। আয়নায় তার মুখশ্রীতে শয়তানি চেহারা ভেসে উঠেছে। সেই সঙ্গে অমার্জিত বিশ্রী হাসি! সেই হাসির প্রস্থ চওড়া রেখে বলে,
‘নাউ দ্যা ড্রামা ইজ স্টার্ট! মামুনি তোমাকে আরাজের প্রতি অতিষ্ঠ করেই তাদের বাসায় পাঠাব। সেখান থেকেই রিয়াল গেম স্টার্ট হবে। ছুহ ছুহ ছুহ আরাজ ভাই তোর যে কৈ মাছের প্রাণ! সেই মাছের প্রাণে এসিড ঢালতে আমার মেয়েকে পাঠাব। তুইও বোকা সেজে চলে আসতেছিস মামুনির জম্মদিনে হাহাহা। তবে সমস্যা তো শুধু একটাই।’
তার নিজের বলা শেষের কথায়। তারই মুখে নেমে এলো ঘন আঁধার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
সঙ্কটের দুয়ারে ঐ এক ব্যক্তি রসিক হলেও রহস্যে ঘেরা। সে একটাই আরভীক! তার ক্ষেত্রে পড়া প্রতিটি আর্টিকেল প্রমাণ করে যে, ছেলেটি আরাজ সাহেবের দ্বিতীয় সন্তান। কিন্তু বছর এক আগে আজীবের মৃত্যুর পরেও তার ভাই কোথায় ছিল! যদি চেহারায় মিল হতো। তাহলে এভিডেন্স পেতো নকল ভাইয়ের রুপ সেজে আরাজ সাহেবের প্রপার্টির উপর হাত জমিয়েছে। তাও বলতে পারছে না, কেননা কোনো প্রমাণ নেই যে আরভীক আরাজের ছেলে নয়। নিজের রুমে এসে রকিং চেয়ারে বসে ভাবান্তর হলো জাফর সাহেব।
‘যতদূর মনে পড়ে। আজীবের মৃত্যুর দুমাস পরই আরভীকের নাম ছড়ায়। তার ব্যাপারে খোঁজ লাগিয়ে জানছি। সে লন্ডনে স্টাডি কর ছিল! বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে মনোমানিল্যতা হওয়ায় যোগাযোগ করেনি। অথচ তাদের নাকি খুব ভালোবাসে। তাই বলে কত লাখ লাখ টাকা যে ছেলে পাঠিয়েছে এর ইয়াত্তা নেই। আজীব তার ছোট ভাইয়ের পেমেন্ট দেওয়া দেখে সে নিজেও কিছু করার জন্য উদ্বেগ নেই। এরপর তো আজীবের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায়। তখনি কেনো আরভীক ফিরে এলো! এসে তার বাপ-অফিস-জমিজমা সামাল দিচ্ছে। তার স্টাডি শেষ না চলছে তাও জানতে পারি নাই। একজন এসি হয়েও এর সমাধান করতে পারছি না। পারবোও বা কেমনে! খোঁজ লাগালেই এক কথা সামনে বেরিয়ে আছে। এই আরাজ নাকি তার দ্বিতীয় ছেলের উপর রেগে ছিল। এজন্য দুনিয়ার অগোচরে লুকিয়ে রাখছিল। এটা কি ধরনের অযুহাত তার! যাই হোক যেহেতু প্রপার্টি লিগ্যালি তার দ্বিতীয় ছেলের উপরে। সেহেতু শ্রেয়া মামুনি একবার বউ হতে পারলেই হবে। প্রপার্টির সাথে জামাইকে তার জোরকা গোলাম বানিয়ে ফেলবে। শ্রেয়া মামুনিও ফাস্ট অফ অল তাকেই বশে আনবে। এরপর আরাজকে আমাদের হাতে তুলে দেবে। সো অল্ড এজ হয়ে গেছে তোর আরাজ! এখন রেস্টিং টাইম লাগবে তোর। যেটা আমরা দেবো তোকে। হাহাহা।’
তার হাসির ঝংকার পুরু রুম কাঁপিয়ে দিলেও। এক মেসেজের আগমনে তা নিবিঘ্নতায় ছেয়ে গেল। রকিং চেয়ার থেকে উঠে চার্জে থাকা ফোন হাতে নিয়ে নোটিফিকেশন দেখে। ডিরেক্ট এসএমএস দিয়েছে কেউ। আননোন নাম্বার দেখে তিনি দেখবে না ভাবল। পরক্ষণে নাম্বারটি চেনা মনে হওয়ায় মেসেজ অপশনে প্রেস করে। খেয়াল করে দেখে পূর্বের ঐ নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। যেখানে গোটা অক্ষরে লাল রঙের লেখা আছে।
‘ড্রিম অলওয়েজ নট কাম ট্রু। রিমেম্বার দিজ!’
মেসেজটি দেখে মাথা বিগড়ে গেল জাফর সাহেবের। তৎক্ষণাৎ এসি পদের ইউনিফর্ম পরে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে। ড্রাইভার মালিকের কণ্ঠ শুনে পুলিশের গাড়ি বের করে দাঁড়িয়ে রইল সদর গেটের সামনে। শ্রেয়া তখন রুম থেকে কটমটে বের হলেও। সামনে রাজিব কে পেয়ে ছিল। যাকে দেখেই উতলা হয়ে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরে। রাজিব শ্রেয়ার স্পর্শে মাতাল হতে গিয়েও হলো না। গলা ঝেড়ে বলে,
‘খুব খুশি দেখছি ম্যাডামকে! ব্যাপার কি হুম।’
‘আরভীক আমার বার্থডে পার্টিতে আসবে।’
কথাটি শুনে রাজিব ভ্রু নাচিঁয়ে হাতজোড়ে তালি দিল। যেন শ্রেয়ার মনে হয় সে জয় করেছে বিশ্বের মূল্যবান রত্ন! রাজিবকে টেনেটুনে গার্ডেনের দিক থাকা চেয়ার টেবিলের কাছে এনে বসে। সেখানে ওয়েটারকে নাস্তা দিতে বলে। রাজিবের ভাষ্যমতে, ‘সে খুব ক্ষুধার্ত’। বিষয়টি শ্রেয়ার কাছে সিরিয়াস ঠেকেছে। ফলে ওয়েটার নাস্তা আনা অব্দি কথায় মশগুল ছিল। হঠাৎ সে তার বাবাকে ইউনিফর্ম পরিহিত কোথাও যেতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তাকে অনুসরণ করে রাজিবও। তবে উৎপেতে জেঁকে বসল না বিষয়টিতে। ওয়েটার টেবিলে নাস্তার ট্রে রাখায় দুজনের দৃষ্টি ট্রের মধ্যে পড়ে। ওয়েটার চলে গেলে রাজিব নাস্তার ট্রে থেকে ফ্রাইড রাইস নিয়ে খেতে থাকে। শ্রেয়া একগালে হাত রেখে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে রাজিবকে খুটিয়ে দেখছে। কখনো সে খুটিয়ে দেখার সুযোগ পায়নি। প্রতি মুহুর্ত আরভীকের ভাবনা তাকে তাড়াতো। তবে অসময়ে রাজিবের সৌন্দর্য্য, মোহিত রুপ চোখে ভাসছে শ্রেয়ার। রাজিব খোশমনে ফ্রাইড রাইস খেয়ে যাচ্ছে। ইনিয়ে বিনিয়ে আধটু কথা বলছে। তবে মনযোগ সম্পূর্ণ খাবারে। যেন কতবছরের ক্ষুধার্ত যুবক সে। শ্রেয়ার চোখ আঁটকে গেল রাজিবের গলার ডান পাশে। স্নিগ্ধভাবে চুক্ষগোচর হচ্ছে না। তবে লাল রঙের ঠোঁট দেখতে পেয়েছে বলে সিউরিটি দিতে পারবে সে। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে বলে,
‘হ’ট গার্ল কি স্ট্যাটিস্ফাইড করেছে হুম! মনে তো হচ্ছে, না করতে পারায় চলে এসেছিস পেটের খুদা মেটাতে।’
কথাগুলো শুনে রাজিবের হাত আপনাআপনি থেমে গেল। সে বলতে চাইনি শ্রেয়াকে। তবে জেনেই যেহেতু গেল লুকিয়ে লাভ কি! ফলে মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝায়। শ্রেয়া তাজ্জবের দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
‘তোর শরীরে লাল লিপস্টিক মেখে আছে। মাখনের সঙ্গে শুয়েও রসমোলাই খেলি না। আই ডোন্ট বিলিভ! সিন্স ইউ আর বয়।’
রাজিব ক্রুর হেসে বলে,
‘আমাকে স্ট্যাটিস্ফাইড এক মেয়েই করতে পারবে। তারে আমি এখনো খুঁজতেছি কিন্তু পাইতেছি না।’
‘ওহ সো ব্যাড। হু ইজ দ্যা গার্ল এন্ড ওয়াট’স হার নেইম!’
‘ডোন্ট নো। আই জাস্ট সি হার ফেইস এন্ড ফল ইন ফাস্ট সাইড অফ এট্রাকশন।’
‘বাহ্ লাগে রেহ্ তারে পেলে আমাকে বলিস! সুযোগ করে দেব নে।’
চোখ টিপে শ্রেয়া তার হাটু অব্দি উম্মুক্ত পা দিয়ে রাজিবের পায়ের টাখনুতে ঘেঁষা দেয়। অন্যথায় সে নিজেও তার এক হাত দিয়ে রাজিবের হাতে নোংরাভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে। রাজিব ক্লান্ত, ক্লাবে পুরু তিনবার ক্লাবের মেয়েকে নিয়ে খেলছে! এখন শরীরে অনুভব, উত্তেজনা নেই তার। ফলে শ্রেয়াও আপনমনে করে চলেছে তার ফিলনেস।
২৬.
ফাহাদ আরভীককে টেনেহিচঁড়ে ভার্সিটি এনেছে। তার কোনো ইচ্ছেই ছিল না ভার্সিটির মুখ দর্শন করার। কিন্তু হা’রা’মী বন্ধুরে সেটা কেমনে বোঝাবে। তারা বুদ্ধিমান বলে সেও কি বুদ্ধিমান নাকি! সদর দরজার সামনে আনতেই আরভীক সটান দাঁড়িয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার মত নাদান বাচ্চাকে স্কুলে আনার দায়ে তোর উপর ঘোর মামলা করব কু’ত্তা’।’
‘কু’ত্তা তোর পেছনে লাগিয়ে দেব ফাজিল। আরে ভার্সিটি যেতে তোর গা হিসকিসাই কেন!’
‘জানিস না কেন! আমি লন্ডন থেকে স্টাডি কমপ্লিট করে আসছি।’
‘ডুড তোকে কি আমি এডমিশন করাতে নিয়ে যাচ্ছি!’
‘ধুর শা’লা জানা জিনিসে ঝাঁপ মারতে নিয়ে যাচ্ছিস। মনে রাখিস জিনিসটা সামনে এলেই তোর উপরে ঝুলায় আমি তো ভাই কেটে পড়ব। তখন কোথাকার ভাই, কোথাকার ডুড সব বুঝবি!’
‘স্ট্রেঞ্জ কিসের জন্যে এত ভড়কে আছিস বল তো!’
আরভীক আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাহাদ প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে আছে। সে পকেটে হাত গুজে এপাশওপাশ চোখ ঘুরিয়ে বিরক্তিসূচক ‘চ’ উচ্চারণ করে।
ফাহাদের কান বরাবর এসে ফিসফিস করে রগচটা কণ্ঠে বলে,
‘ওয়েট এখনি তোর জবাব পেয়ে যাবি।’
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার ভাবনার পূর্বেই কোথার থেকে যেন ‘আরভীক ডার্লিং’ বলে এক মেয়ে দৌড়ে আসতে লাগে। সে আতঙ্কিত চোখে ঢোক গিলে আরভীক এর দিকে তাকায়। বন্ধুর চোখে রক্তিম আভা দেখেই ‘হেহেহে’ করে হাসার চেষ্টা করে। দাঁতে দাঁত চেপে আরভীক রাগের ফুলকার ফোঁস করে উঠে। ফাহাদ ভড়কে তৎক্ষণাৎ মেয়েটির হাত ধরে সরিয়ে দেয়। এতে মেয়েটি তীব্র ক্ষুব্ধের চোখে ফাহাদের দিকে তাকায়। নিজের হাত ছাড়ানোর জন্যে সাপের মত ছটপট করে বলে,
‘ঐ ফাহাইদ্দা ছাড়। আরভীক বাবুকে বহুদিন পর দেখছি। এক হাগ তো বানতি হে!’
মেয়ের কথায় আরভীক গলা ঝেড়ে মানে মানে কেটে পড়ে। তাকে যেতে দেখে মেয়েটি অত্যধিক নড়চড় করতে থাকে। ফাহাদ মেয়েটির আচরণে ক্ষোভ ও হিংস্রতার বশে কষে এক চড় লাগিয়ে দেয়। চড় খেয়ে দিনদুনিয়া যেন ঘুরে উঠে মেয়েটার। রাস্তার মধ্যে পড়ে যায়। ছলছল চোখে ফাহাদের চোখের দিকে তাকায়। ঠোঁট কাপঁছে তার। ঠোঁট চেপে ব্যথাতুর গালে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়। সময় বিলম্ব না করে সেখান থেকে চলে যায়। ফাহাদ কপাল চেপে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার দরুণ সে খেয়াল করেনি মেয়েটির চোখের ভাষা। রাগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেয়। কিন্তু ঠান্ডা হলে ঠিকি মস্তিষ্কে রাগের বশে করা কাজের অনুতপ্ততা ভেসে উঠে। কপাল চুলকে মাথা ঠান্ডা হতে তার দু’মিনিট লাগল। মাথা ঠান্ডা হওয়ায় কি করেছে ভেবে তৎক্ষণাৎ পিছু ঘুরে। কিন্তু হতাশ মন! জায়গাটা নিরবতায় ছেয়ে আছে। তার প্রেয়সী নেই। হ্যাঁ, তারই প্রেয়সী। যাকে সে মন উজার করে ভালোবেসেছে। তবে কখনো মুখ ফুটে বলেনি। বলবেও বা কেমনে ভার্সিটি লাইফে যাকে পছন্দ করে ছিল। সেই পছন্দের রমণী তারই বন্ধু আরভীকের উপর ফিদা হয়ে আছে। এ জেনে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলার কোনো পন্থাই খুঁজে পেল না সে। প্রথম যেদিন ভার্সিটির মধ্যে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আরভীককে এনেছিল। তখনি তার প্রেয়সী ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে মাতোয়ারা হয়ে গেল। এ শুনে তার হৃদয় দহনে ছাই হতে থাকে। আরভীক বুঝে তৎপর হলো বিষয়টার ধামাচাপা দিতে। একবারের পরিচয় শেষে আর কখনো দেখা দেয়নি ভার্সিটির আগপিছে। শুধু অনুষ্ঠান হলে আসতো। বাদ বাকি দিনে আড্ডার মশগুলেও আসতো না। ফাহাদ বুঝেও না বুঝার ভান করে আরভীককে সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইতো। তবে এতে আরভীক এর অতিষ্ঠতা দেখে চুপ হয়ে যায়। আজ এনে ছিল ভার্সিটির হেডমাস্টার দেখা করতে চাইছে বলে!
এসে যে মাত্রাতিরিক্ত কান্ডের সম্মুখীন হবে কে জানতো!
কপাল চেপে ধপ করে বসে পড়ে ইট-সিমেন্টে বানানো বসার জায়গায়। আরভীক দূর থেকে গম্ভীরভাবে চেয়ে ছিল। ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে ফাহাদের পাশে গা ঘেঁষে বসে। মনভার না করে রসিক কণ্ঠে শুধায়।
‘ডুড তুই বোকা সেটা জানতাম, বলদ সেটা আজকে বুঝছি।’
‘সি ডুড লিভ মি এলং!’
‘হে দেবদাস হওয়ার প্রথম ডায়লগ সবাই এটাই মা’রে।’
‘প্লিজ ডুড!’
ব্যস আরভীক সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে ঠাসস করে ফাহাদের গালে চড় মা’রে। সে বেচারা ভেবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়। গালে হাত রেখে ‘উহ্ উহ্’ শব্দের গোঙানি বের করে মুখ থেকে। যার অর্থ সে বুঝাচ্ছে, ‘বুঝি বুঝি সব বুঝি।’
চোখগুলো কান্নার মত করে ফেলে। কিন্তু চোখের পানি ঝরছে না। আরভীক তিক্ষ্ণ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
‘হে এখন মেয়েদের মত কাঁদ তুই। শা’লা খব্বিশ কোথাকার! সাইবা যে তোরে ভালোবাসে। এটা সবাই বুঝে। আর তুই বলদ একটা। মেয়েটার মনের মও বুঝতে পারস নাই।’
এতক্ষণ আরভীকের চড় খেয়ে গাল মালিশ করছিল ফাহাদ। ব্যথা যেন কমে। কিন্তু তার কথা শুনে ব্যথাও ছু মন্তর হয়ে গেল। উম্মাদনা ভরা চোখে বন্ধুর দিকে তাকায়। আরভীক ঠোঁট চেপে বাঁকা হাসি দেয়। হাসিটা দেখে মুখটা ফাঁটা বেলুনের মত করে ফেলে ফাহাদ। কথাগুলো মন্দ বলেনি আরভীক। সে আড়ালে আড্ডার সময় শুনতে পেতো!
সাইবা তার বান্ধবীকে ফসুরফসুর করে কার নামে যেন বলতো।
‘বলইদ্দা আমার মনের কথাও বুঝে না। হা’লার প্রেমে পড়ে লুতুপুতু খাচ্ছি! আর ঐ মিয়া আমারেই শাঁসায়। কেমনে ঐডারে বুঝামু এখন বলতো!’
‘তো তুই তোর ড্রিমবয়কে বলেই দে।’
‘কমু না সে যদি বুঝে তাহলে ভালো, না বুঝলে ঠাঠাইয়া চড় লাগিয়ে ধুর ধুর করব।’
সাইবার কথাগুলো শুনে ফাহাদ সেদিন একটুর জন্যে ভেবেছিল। সে তার ব্যাপারে বলছে। পরক্ষণে তার মন বদলে গেল। কেননা সাইবাকে সে চেনে! সে আরভীকের উপর ফিদা হয়েই প্রেমের কথা তার বান্ধবীকে বলছে। কিন্তু এক কথায় তার মনে সন্দেহ হলো আরভীক যদি তার মন না বুঝে, তাহলে কি সাইবা সত্যিতে চড় লাগাবে নাকি! ভেবেই আতঁকে উঠে। কেননা ঐ চড় লাগানোর পরিণতি হিসেবে জান ছিনিয়ে নেবে আরভীক। না না প্রেয়সীকে বাঁচাতে তার কবজ হয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকবে ভেবেই পণ করে নিল।
ধুপধাপ পিঠের মধ্যে বারি লাগায় ‘উহ উহ’ করে উঠে বেচারা! আরভীক বারি দিয়ে বলে,
‘এখন ভেবে লাভ নেই! মাইয়া হাতছাড়া করে ফেলছিস।’
আরভীক উঠে হাঁটা ধরে হেডমাস্টারের রুমের দিকে। তবে তার ফোন বেজে উঠে। ফলে সে কানের ব্লুটুথ অন করে। অটোমেটিক মেয়েলী কণ্ঠে শুনতে পেল। ‘কলিং মিস আবান’। নামটি শুনে দুষ্টুমি হেসে বাটন প্রেস করে।
‘আসসালামুয়ালাইকুম মিস আবান! দুদিনও দেখি আমাকে না দেখে সহ্য করতে পারছেন না। এতই মিস করলে বলে দিন। আমি হাজির হতে রাজি।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম আপনার বে’হা’য়া কথা শুনতে কল দেয়নি। আর মিস তো দূরের কথা।’
আরভীক মুখটা বিড়ালের মত করে আনজুমাকে শুধায়।
‘ওগো ফুলটুসি রাজি হইয়া যাও না। সাতধনের রাণী বানাইয়া রাখমু।’
‘ধ্যাঁত আজাইরা কথা!’
কল কাটতে নিলে আরভীক ‘ওকে রিলেক্স’ বলে থামিয়ে দেয় তাকে। আনজুমাও চুপ হয়ে যায়। আরভীক চোখ বুজে দৃঢ় গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘বলো তোমার কথা! আমার তো এই জীবনে আর প্রেম, বিয়েশাদি করা লাগবো না।’
‘আমার কাছে সেল করার যে প্রডাক্ট’স আছে। তার মধ্যে আশি শতাংশ শ্রেয়া জাফর নামের এক মেয়ে কিনতে চাইছে।’
নামটি শুনে চট করে চোখ খুলে চমকে যায় আরভীক। নামটি তার মস্তিষ্কে অগ্নিকুণ্ড ধরিয়ে দিল। হিংস্র অথচ স্থীর গলায় বলে,
‘সে কি বলছে তোমাকে!’
‘বলছে এই প্রডাক্ট’স সে অন্য কোথাও পাবে না। আমার থেকে নিলে নাকি আমার আর কোম্পানির জন্য লাভবান হবে।’
শার্টের হাতা হোল্ড করতে থেকে মাথার চুল টেনে তপ্ত জোরালো শ্বাস ছাড়ে আরভীক। আনজুমাকে উত্তপ্ত রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘ডোন্ট গিভ হার এনি প্রডাক্ট’স।’
কট করে কল কাট করে দেয় আরভীক।
চলবে…..