নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৪

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৪

আইরাত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহামের সামনে।

আব্রাহাম;; পালাচ্ছো আমাকে দেখে?

আইরাত;; মোটেও না, আম আমি কে কেনো পালাবো। আমি চোর না ডাকাত যে পালাবো!

আব্রাহাম;; হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।

আইরাত;; না, আমি যাই।

আব্রাহাম;; ওয়েট, আমি কি যেতে বলেছি তোমাকে?

আইরাত;; না

আব্রাহাম;; তাহলে যাচ্ছো কেনো?

আইরাত;; না এমনি। এনিওয়ে কংগ্রেচুলেশন।

আব্রাহাম তার কপাল খানিক কুচকে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; থ্যাংক্স।

আইরাত;; মানে আপনি কাল এত্তো গুলো মেয়েকে বাঁচালেন, এত্তো হেল্প করলেন তো তাই এই ছোট্ট একটা থ্যাংক্স তো আপনার প্রাপ্যই।

আব্রাহাম;; ইয়াহ, তো আমি কি তোমাকে ড্রপ করে দিবো?

আইরাত;; না মানে না আমি যেতে পারবো, ধন্যবাদ।

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে আসলে এসে পরে বলতে কেটে পরে। আব্রাহাম এসে গাড়িতে বসে পরে তখনই অয়নের ফোন। অয়ন হচ্ছে আব্রাহামের জানে-জিগার বন্ধু আর তার সাথে কৌশলও।

অয়ন;; কিরে ভাই কেমন আছিস?

আব্রাহাম;; যেমন থাকার কথা।

অয়ন;; আচ্ছা যাজ্ঞে কোথায় আছিস এখন তুই?

আব্রাহাম;; আ”ম ওন দি ওয়ে।

অয়ন;; রাতে ক্লাবে এসে পরিস।

আব্রাহাম;; কেনো?

অয়ন;; কেনো মানে, আরে ইয়ার ভুলে গেলি!

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা, ওকে আমি এসে পরবো।

এই বলেই আব্রাহাম গাড়ি সোজা তার অফিস “The Industry Of Abraham Ahmed Chowdhury”- এর দিকে নিয়ে যায়। অফিসের বাইরে গাড়ি থামাতেই গার্ডরা গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দুইজন গার্ড আব্রাহামের পেছনে। একজন গার্ড অফিসের বড়ো গ্লাস টা খুলে দেয়। আব্রাহাম ভেতরে ঢুকে পরে। যেতেই সবাই এক এক করে মর্নিং উইশ করছে তাকে। আব্রাহাম সোজা গিয়ে তার কেবিনে বসে পরে। গায়ের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে চেয়ারের ওপরে রেখে দেয়। ভেতরে সাদা শার্ট পরে ছিলো তা যেনো বডির সাথে একদম খাপ খাইয়ে গেছে। শার্টের ওপরের বাটন গুলো কয়েকটা খুলে দিয়ে হাতা গুলো ফোল্ড করে নেয়। বেশকিছু পেন্ডিং ফাইল ছিলো তাই চেক করছে। সামনে ল্যাপটপের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে, মুখে গম্ভীরতার ছাপ। আরেক হাতে একটা প্যান ঘুড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কেবিনের দরজাতে নক করে রাশেদ….

রাশেদ;; ম্যা আই কাম ইন স্যার?

আব্রাহাম;; হুমম কাম ইন।

রাশেদ;; স্যার এই পিকচার”স গুলো দেখুন একবার।

রাশেদ আব্রাহামের দিকে বেশ কিছু ছবি এগিয়ে দেয়। আজ সকালের কনফারেন্সের কিছু ছবি। অনেকগুলো অফিসার আছে, আরো নানা ভিপি তাদের সাথে আব্রাহাম রয়েছে। আব্রাহাম এক এক করে সব পিক গুলো দেখছিলো তবে দেখতে দেখতেই হঠাৎ একটা ছবিতে নজর আটকে যায় তার। ছবিটা সামনে এনে দেখে আইরাতের ছবি অর্থাৎ মানুষের ভীড়ে এক পাশে আইরাতের ছবি। যাতে সে হেসে হেসে তার পাশে থাকা একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। হয়তো ছবিটা হুট করেই তোলা হয়েছে যাতে আইরাতও ক্যামেরা বন্দি হয়ে গেছে। ছবিতে আইরাতের গাঢ় হাসির মুখ টা দেখা যাচ্ছে। যা দেখে আব্রাহাম নিজেও আনমনেই সামান্য হেসে ফেলে।

আব্রাহাম;; রাশেদ!

রাশেদ;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; এই ছবিটা কে কেটে কুটে শুধু এই মেয়েটার ছবিটুকু বের করে ফ্রেমবন্দী করো।

রাশেদ;; ওকে স্যার।

রাশেদ ছবিগুলো নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দেয়।


রাতের বেলা, আইরাত হলরুমে বসে বসে টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে। চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে দিয়ে মুখে একের পর এক পপকর্ন ঢুকিয়েই যাচ্ছে। অনামিকা কাপড় ভাজ করছিলো। এক ঢিবি কাপড় ভাজ করে আইরাতের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই আইরাত তার ফাটা গলায় চিল্লিয়ে ওঠে “গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওল” আর এতে অনামিকা এতো জোরেই চমকে গিয়েছেন যে তার হাত থেকে সবগুলো কাপড়ই নিচে পরে যায়। আইরাত তো সোফাতে বসেই বসেই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। অনামিকা আইরাতের মাথায় হালকা করে একটা চড় বসিয়ে দেয়। তারপর কাপড় গুলো আবার তুলে হাতে নিয়ে চলে যায়। তখন আইরাতের ফোন বেজে ওঠে। সে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে….

আইরাত;; হ্যালো…

অবনি;; হ্যাল্লো জানু

আইরাত;; হ্যাঁ পেত্নী বল

অবনি;; রেডি হ

আইরাত;; মানে কেনো?

অবনি;; আরে বাইরে যাবো তাই।

আইরাত;; না না বাইরে যাবো না আর আমার ম্যাচ আছে দেখতে হবে।

অবনি;; আরে পরে রিপিট ট্যালিকাস করবে তো তখন দেখে নিস না!

আইরাত;; আরে ধুর সময়ের ম্যাচ পরে দেখে কোন মজা আছে নাকি!

অবনি;; তুই কি ভালোই ভালোই এখন আসবি?

আইরাত;; আচ্ছা অন্য দিন যাই না।

অবনি;; বুঝেছি এভাবে হবেনা, দাড়া আমিই আসছি।

আইরাত কে আর কোন কথা বলতে না দিয়েই অবনি ফোন টা টুক করে কেটে দেয়। আইরাত সব বাদ দিয়ে আবার খেলা দেখার দিকে মন দেয়। তার কিছুক্ষন পরই অবনি সোজা আইরাতের বাসায় এসে হাজির।

অনামিকা;; আরে অবনি, কেমন আছিস?

অবনি;; হ্যাঁ আন্টি অনেক ভালো, তুমি কেমন আছো? আর তোমার মাইয়া টা কোথায়?

অনামিকা;; হ্যাঁ ভালো, সামনে তাকিয়ে দেখ খেলায় ডুবে গেছে ও।

অবনি;; আচ্ছা আন্টি শোন আমি আসলে আইরাতকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি।

অনামিকা;; এখন কোথায় যাবি?

অবনি;; কোথাও যাবো না, এই ধরো একটু কফি শপে তারপর কিছু খেয়ে ঘুড়ে এসে পরবো।

অনামিকা;; এখনই যাবি?

অবনি;; হ্যাঁ হ্যাঁ এর জন্যই তো বাসায় আসা। আর প্লিজ তুমি না বলো না প্লিজ আইরাত কে নিয়ে যাই।

অনামিকা;; আচ্ছা যা কিন্তু দুজনেই দ্রুত ফিরে আসবি।

অবনি;; তা আর বলতে।

অবনি গিয়ে সোজা আইরাতের হাত থেকে পপকর্নের পেকেট টা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। আর অবনি যে এসেছে তা আইরাত খেয়ালই করে নি।

আইরাত;; কিরে তুই কখন এলি?

অবনি;; এসেছি একটু আগেই, এখন তুই উঠ উঠ উঠ উঠ।

আইরাত;; আরে কোথায়?

অবনি;; তা তো এখন বলবো না। আগে উঠ রেডি হ।

আইরাত;; আচ্ছা

অবনি আইরাতকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়ে দেয়। আইরাত একটা ব্লেক কালারের প্যান্ট পরে, ওপরে লং টপ পরে তার ওপরে একটা শর্ট জেকেট পরে নেয়। চুলগুলো কার্লি করে নেয়।

অবনি;; ওই হলো তোর?

আইরাত;; হয়ে গেছে।

আইরাত বেরিয়ে আসে।

অবনি;; ওয়াহহহ, কিউট লাগতাছে তরে।

আইরাত;; এখন চল বের হই।

অবনি আর আইরাত চলে গেলো। রাস্তায় যাওয়ার পথে আইরাত অবনি কে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করে যে তারা কোথায় যাচ্ছে এতে অবনি বলে “ফাইটিং ক্লাব”। তা শুনে আইরাত অবাক হয়। কারণ এতো রাতে ফাইটিং ক্লাব!

আইরাত;; তুই এতো রাতে ওখানে গিয়ে কি করবি?

অবনি;; আজব, ফাইটিং ক্লাবে গিয়ে মানুষ কি করে রে? অবশ্যই ফাইট দেখবো আই মিন বক্সিং।

আইরাত;; এই না না দেখ আমার এই সব মারামারি টারামারি মোটেও ভালো লাগে না। খুব বেশিই বিরক্তি লাগে আর বড়ো কথা আমার না ভয় লাগে বুঝছিস। আমি যাবো না।

অবনি;; আরে বাদ দে না কিছুই হবে না। চল যাই।

অবনি এক প্রকার জোর করেই আইরাত কে ক্লাবে নিয়ে যায়। ক্লাবে গিয়েই দেখে কালো রঙের সব লাইট। চারিদিকে বেশির ভাগই কালো। আর প্রচুর মানুষের ভীড়। সবাই যেনো উৎসুক জনতা। অবনি আইরাতকে নিয়ে একটা সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। চারিপাশে অনেক বেশিই মানুষ। আর তাদের সামনে একটা চারকোণা আকৃতির বড়ো স্টেজের মতো রয়েছে। তার ফ্লোরটা সম্পূর্ণভাবে সাদা কালারের। তার চারিপাশে আবার বাউন্ডারি দেওয়া কালো র‍্যাপ দিয়ে। আশেপাশেই সবাই চিল্লাপাল্লা করছে এক্সাইটেডম্যান্ট এ। তবে আইরাত তার কান কিছুটা চেপে রেখেছে আঙুল দিয়ে। পাশে তাকিয়ে দেখে অবনি নিজেও চিল্লাচ্ছে। তার কিছুক্ষন পর একটা ভারি-ভারকাম লোক আসে। অনেক লম্বা আর হাট্টা-কাট্টা। গায়ে কালো সিল্কের মতো একটা হুডি জড়ানো। হুডি টা লোকটার চোখ অব্দি ঢেকে রেখেছে। লোকটার মাঝে যেনো অহংকারের আর শেষ নেয়। দুইহাত ওপরে তোলে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আসছে। যেনো তার থেকে বড়ো আর কেউ নেই, সে একাই সব। লোকটি এসে ওই সাদা স্টেজ টার ভেতরে চলে যায়। তারপর অন্য আরেকজন এসে লোকটার হাতে বক্সিং গ্লাপ”স গুলো পরিয়ে দিতে লাগে।

আইরাত;; এই কি ম্যাচ খেলবে নাকি?

অবনি;; হ্যাঁ

আইরাত;; হায়রে এর এক ঘুষি খেলেই তো উঠে আর দুনিয়া দেখতে পারবে না কেউ।

অবনি;; না সোনা, ক্লাইমেক্স এখনো বাকি আছে। এর থেকেও ওপরে আরেকজন আছে। তার সাথে কেউ পারে নি আর কেউ পারবেও না। তো চিন্তায় তো এর থাকা উচিত যে সে আসলে কার সাথে টক্কর নিতে যাচ্ছে। ওয়েট & সি।

আইরাত;; হুমম তবে এ……

অবনি;; সামনে তাকিয়ে দেখ।

এবার যে এলো তাকে দেখে সবাই যেনো উৎসুকে আরেক দফা ফেটে পরে। না ই সে অহংকারের দাম্ভিকতা করছে আর না ই নিজেকে বড়ো বলে দাবি করছে। শুধু নরমাললি হেটে আসে। পরনে ফুল ব্লেক গেটাপ। সে আর কেউ আব্রাহাম-ই। সবার মুখে শুধু তারই নাম। আর আব্রাহাম কে আসতে দেখে তো আইরাতের মুখ হা হয়ে যায়।

অবনি;; ওই দেখ কে আসছে, আব্রাহাম স্যার আহা।

আইরাত;; উনি বক্সিং খেলবেন? (অবাক হয়ে)

অবনি;; হ্যাঁ

আইরাত;; আর এটা তুই আগে থেকেই জানতি?

অবনি;; হ্যাঁ

আইরাত;; আমাকে আগে কেনো বলিস নি?

অবনি;; আরে কি আর বলবো এখানে এসেই তো দেখলি।

আইরাত;; আমি আসতামই না যদি জানতাম যে উনি বক্সিং খেলবেন।

অবনি;; কেনো বল তো।

আইরাত;; এমনি।

আইরাত আর অবনি সামনে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম এসে নিজের জেকেটের চেইন টা খুলে ফেলে। আর তাতেও যেনো মেয়েদের চিল্লাপাল্লা দ্বীগুণ হয়ে যায়। কালো একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট পরে আছে সে। স্টেজে চলে যায়। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে বেশ রাগি একটা লুক দিচ্ছে। আব্রাহাম তা পাত্তা না দিয়ে হাতে গ্লাপ”স পরে নেয়। হঠাৎ ওই লোকটা আব্রাহাম কে বলে ওঠে….

— এখনো সময় আছে চলে যাও এখান থেকে।

আব্রাহাম;; কে যাবে তা তো সময়ই বলে দিবে।

এই বলেই ম্যাচ শুরু হলো। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে ওই লোকটি বেশ ক্ষোভ নিয়ে আব্রাহামের কাছে যায়। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আব্রাহামের গায়ে একটা পাঞ্চ মেরে দেয়। আব্রাহাম তাতে এক চুলও নড়ে না। ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা আরো একবার আব্রাহামের গায়ে হিট করে। এতে মানুষের ভীড়ে কিছুটা হতাশ ভাব দেখা যায়। সবাই নিচু গলায় “ওওওওওওওওওওওওওও” করে ওঠে। এভাবেই দেখতে দেখতে আব্রাহামের গায়ে আরো কয়েকটা পাঞ্চ পরে। আব্রাহামের গায়ে যে কটা পাঞ্চ পরছিলো তার সবকটা তেই আইরাত তার চোখ-মুখ সব কুচকে নিচ্ছিলো। এবার লোকটা আরো একটা পাঞ্চ বসিয়ে দেয়। আর এটাই যেনো তার লাস্ট হিট ছিলো। আব্রাহাম এবার রাগে গর্জে ওঠে। চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারণ করে যেনো অগ্নিমূর্তি। লোকটা আব্রাহামের হঠাৎ এমন লুক দেখে অবাকই হয়ে যায়। আর আব্রাহাম এবার এক গর্জন দিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লোকটার একদম মুখ বরাবর ঘুষি মেরে দেয়। তার মুখ থেকে নিমিষেই রক্ত ছিটকে বের হয়ে পরে। আর পাবলিক সবাই চিল্লিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। যেনো তারা এটাই চাইছিলো। আইরাত একমনে তাকিয়ে ছিলো আর অবনিও আইরাতের কানের কাছে ‘ইয়েএএএএএএস’ বলে চিৎকার করে ওঠে। ম্যাচের যে র‍্যাফারি ছিলো তিনি ওই লোকটার কাছে এগিয়ে যান। ওই লোকটা এখন আর আস্ত নেয়। সেই তখনই লুটিয়ে পরেছে। র‍্যাফারি তার কাছে গিয়ে 1 2 3 বলে কিন্তু তার কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া না। খেয়াল করে দেখে যে ওই লোকটার ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেছে। মুখের ভেতরের দাঁত অব্দি ভেঙে গেছে। মুখের এক সাইড প্রায় থেতলে গেছে। নিথর হয়ে পরে আছে নিচে। শুধু আধো আধো নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আব্রাহাম লোকটার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে….

আব্রাহাম;; Get well soon dude….

অবশেষে র‍্যাফারি এসে আব্রাহাম কে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে, যা আব্রাহাম প্রতিবারই হয়। আব্রাহাম এবার সবার দিকে এক নজর তাকায়। তবে তখন তার নজর যায় আইরাতের দিকে। আইরাত তো আগে থেকেই আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আব্রাহাম জানতো না যে আইরাতও এখানে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এসে পরে। আর আইরাতও অবনিকে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসে সেখান থেকে। ক্লাবের বাইরে এসেই আইরাত বুক ভরে দম নেয়।

আইরাত;; আহহহহহহহ বাঁচলাম। কি ছিলো এইটা।

অবনি;; দারুন না!

আইরাত;; কচুর মাথা। আর তুই, তুই আগে থেকেই জানতি যে এখানে আব্রাহাম চৌধুরী আসবেন তাই তুই এসেছিস তাই না।

অবনি;; সত্যি বলতে তোকে দেখানোর জন্যই এনেছিলাম।

আইরাত;; তুইও না এখন চল তো এখান থেকে।

আইরাত আর অবনি এসে পরে।


আর ওদিকে আব্রাহাম নিজের চুল গুলো আলতো হাতে ঝাড়তে ঝাড়তে এসে পরে। পানির বোতল টা নিয়ে এক নিমিষেই খেয়ে নেয়। আর বাইরে আসতেই অয়ন-কৌশল তার দিকে এগিয়ে যায়।

অয়ন;; ওয়াহহহহ মেরে শের। লোকটার ঘাড়ই ভেঙে দিলি।

আব্রাহাম;; ওর ভাগ্য ভালো যে জানে মারি নি।

কৌশল;; রাগ টা একটু কমা ভাই এইটা একটা গেইম ছিলো মাত্র।

আব্রাহাম;; নট পসিবল।

অয়ন;; আচ্ছা যাই হোক, কাল অফিস আছে সেখানে তো দেখা হচ্ছেই তাই না। আজ তাহলে যাই।

আব্রাহাম;; হুমমম। তবে একটা কাজ করতে হবে তোদের দুজন কেই।

কৌশল;; কি কাজ?

আব্রাহাম;; একটা মেয়ে আছে তার চাকরি টা জাস্ট খেয়ে দিতে হবে এইযা।

অয়ন;; কি? মানে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিতে হবে।

আব্রাহাম;; Exactly..

কৌশল;; কিন্তু কেনো? আর তুই তো কখনোই কারো ক্যারিয়ারের পেছনে পরিস নি তাহলে এখন কেনো? তাও আবার একটা মেয়ের?

অয়ন;; আমার ডাল ম্যা কুচ কালা না পুরো ডালই কালা মনে হচ্ছে।

আব্রাহাম দুজনের মাথা তেই জোরে গাট্টা মারে।

আব্রাহাম;; তোদের এতোকিছু না ভেবে যা করতে বলেছি শুধু তাই কর। আর যত দ্রুত সম্ভব কাজটা হয়ে যাওয়া দরকার বুঝতে পারলি।

অয়ন;; হয়ে যাবে। বাট মেয়েটা কে? নাম কি?

আব্রাহাম;; সব ডিটেইলস পেয়ে যাবি।

এই বলেই আব্রাহাম গাড়িতে উঠে চলে যায়। অয়ন আর কৌশলও এসে পরে। আব্রাহামের মাথায় এখন শুধু আইরাতের কথাই ঘুড়পাক খাচ্ছে। সে জানে না কেনো জানি তার ওই মেয়েটাকে দেখলে চোখ সরাতেই মন চায় না। চোখ যেনো তাকে না দেখতে পেরে বেশ নারাজ। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর ঘুড়েফিরে চোখের সামনে আইরাতই বারবার ভেসে ওঠছে। নিজের বাসায় চলে যায় আব্রাহাম। বাসার ভেতরে ঢুকলেই অনেক গুলো স্টাফ সামনে আসে। তবে আব্রাহাম নিজের রুমে চলে যায়। তার দাদি কে দেখে না হয়তো উনার রুমে। আব্রাহাম আগে গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নেয়। ওপর থেকে ঠান্ডা পানিবিন্দু গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে সারা গায়ে পরছে। আর আব্রাহাম তার চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে কপালের সামনে আসা চুল গুলোকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে আরেক হাত কোমড়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। একটা সময় বের হয়ে পরে। হলরুমে গিয়ে দেখে ইলা বসে আছে। আব্রাহাম তার দাদির কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে দিয়ে শুয়ে পরে। আর ইলা আব্রাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ইলা;; কিরে কি হয়েছে? শরীর খারাপ?

আব্রাহাম;; না এমনি।

ইলা;; কিছু তো একটা হয়েছেই বল না।

আব্রাহাম;; দাদি আমি না যেনো কোথাও আটকে গিয়েছি। মানে আমি তো চলছি কিন্তু আমার মন-মস্তিষ্ক যেনো কিছুতে আটকে গেছে, থেমে গেছে। বের হতে চাইছি কিন্তু পেরে উঠছি না।

ইলা;; আমার কিন্তু ব্যাপার টা বেশি সুবিধার লাগে না।

আব্রাহাম;; মানে?

ইলা;; বুদ্ধিমান দের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

আব্রাহাম;; দাদি কথা প্যাচিয়ো না তো।

ইলা;; তোর কাছ থেকেই তো শিখেছি।

আব্রাহাম কতোক্ষন সেখানেই থেকে তারপর নিজের রুমে চলে যায়। রাতে অয়ন কে ফোন দিয়ে যার চাকরি খাওয়ার কথা বললো তার সব ডিটেইলস দিয়ে দেয় আর অয়ন তৎক্ষনাৎ গিয়ে ঐ অফিসের ওনারের সাথে কথা বলে। ব্যাস কাজ শেষ। আব্রাহাম কে ফোন করে ইনফর্ম করে দেয়। আর সব শুনে আব্রাহাম এক দম ছাড়ে। এখন শুধু সামনে কি হয় তা দেখার পালা।


সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করছিলো আইরাত। তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। গিয়ে তা রিসিভ করে কানে ধরতেই আইরাতের চোখগুলো আপনা আপনিই বড়ো হয়ে যায়। ফোন রেখে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে না খেয়েই দ্রুত বের হয়ে পরে। অনামিকা জিজ্ঞেস করলেও আইরাত কিছু বলে না। বেশখানিক সময় বাদে অফিসে গেলে তৌফিক ছুটে আইরাতের কাছে আসে।

তৌফিক;; কিরে কি শুনি এগুলো?

আইরাত;; আরে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যে কি থেকে কি হচ্ছে। অবনি কোথায়?

অবনি;; এইতো, কিন্তু তোর কি হলো তুই চাকরি টা ছেড়ে দিচ্ছিস কেনো বলতো?

আইরাত;; আরে কিসের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি মাথা খারাপ হয়েছে তোর! আমি নিজেই তো মাত্র শুনতে পেলাম যে আমার চাকরি নেই। কীভাবে কি?

আইরাত, অবনি আর তৌফিক কথা বলছিলো তখনই অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা মারুফ হোসেন আসেন।

মারুফ;; মিস. আইরাত!

আইরাত তো ভারি ক্ষেপা ক্ষেপে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।

আইরাত;; কি ফাইজলামি শুরু করেছেন আপনারা নাকি?

অবনি;; আরেএএএ আইরাত উনি সিনিয়র আমাদের।

আইরাত;; রাখ তোর সিনিয়র, চাকরি তো আমার এমনিতেও গিয়েছে। আর এইযে আপনি সিনিয়র নামে ধান্দাবাজ কোথাকার। আসলে কি কারণে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো তা কি জানতে পারি?

মারুফ;; ভূল তথ্য ছাপানোর জন্য।

আইরাত;; আপনাদের আগেও বলা হয়েছে আর এখনও বলছি যে সেটা মাত্রই একটা ভূল ছিলো আমার। এমন ভূল রিপোর্ট দিনে হাজারো টা ছাপানো হয়। যদিও তারা ইচ্ছে করেই করে আর আমি ভূলে করে করেছি। সব ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছিলো তাহলে কেনো?

মারুফ;; না এটা তো কোন যুক্তির কথা না আপনি এতো বড়ো একজন মানুষ আব্রাহাম স্যার কে নিয়ে এত একটা কাহীনি করবেন আর আপনাকে কিছু করা হবে না এটা তো কোন কথার মাঝে পরে না।

আইরাত;; আমি আব্রাহাম চৌধুরী কে নিয়ে নিউজ করেছি যেখানে উনার কোন সমস্যা নেই সেখানে আপনি বলার কে?

মারুফ;; দেখুন মিস. আইরাত এটা আমদের অফিসের নিয়মের বাইরে। আর যেখানে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর মতো ব্যাক্তিত্ববান মানুষের কথা সেখানে তো আর কোন প্রসঙ্গই খাটে না। সরি টু সে বাট আপনার চাকরি আর নেই।

আইরাত;; হাহ্, আমারও কোন ইচ্ছে নেই এই ফালতু রিপোর্টিং করার।

এই বলেই আইরাত রেগে তেড়ে সেখান থেকে চলে আসে। মাথা এত্তো গরম যে সেখানে আলু রাখলে মনে হয় আলুও সিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে একজোড়া আঁখি সর্বদা তার ওপর যেনো কড়া নজর রেখেই যাচ্ছে যা আইরাতের অজানা।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here