নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৮

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৮

আব্রাহামের ডাকে কেমন যেনো এক ভীতি কাজ করে আইরাতের মাঝে। বেশ অবাক হয়, চোখগুলো ক্রমেই বড়ো আকার ধারণ করে ফেলে। আব্রাহাম তাকে এখনো দেওয়ালের সাথে চেপে তার দুইহাত পেছনে মুড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের উষ্ণ নিঃশ্বাস সব যেনো এবার আইরাতের গলায়-ঘাড়ে আছড়ে পরছে। এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না বিধায় আইরাত নড়াচড়া শুরু করে দেয়।

আব্রাহাম;; হুশশশশশ! এখন তো ভয় পেয়ে লাভ নেই। আর সত্যি বলতে আমি এমনটা কখনোই করতাম না কিন্তু তুমি নিজেই আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছো। কে বলেছে তোমাকে কালো শাড়ি পরে আসতে তার ওপর আবার এত্তো সুন্দর করে সেজে আসতে। আমায় খুন করার বুদ্ধি এঁটেছো!

আইরাত;; উম.. উমমম উম্ম উমমম।

আব্রাহাম এবার আইরাতের মুখের ওপর থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নেয়। তারা এখন যেই রুমে রয়েছে সেই রুমের জানালা খোলা যার দরুন কিছুটা আলো ভেতরে আসছে। আর সেই আবছা আলোতেই আব্রাহাম তার আইরাতকে দেখছে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভয়ে ঘেমেই গিয়েছে। কপালের দিকটায়, ঘাড়ের দিকটায়, নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এগুলো হয়তো আব্রাহাম কে তার আরো বেশি কাছে টানছে। ক্ষণে ক্ষণে তাকে আকৃষ্ট করছে। আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম আবার তার বাহু ধরে একটান দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। আব্রাহাম তার দুহাত আইরাতের দুপাশে রেখে দিয়ে তার দিকে বেশ ঝুকে পরে। আর সে তার মাথা নিচু করে রেখে দিয়েছে। তাকে দু নয়ন ভরে দেখছে। আব্রাহাম খেয়াল করে যে আইরাতের ঠোঁটের পাশে কিছুটা লিপস্টিক ছড়িয়ে পরেছে। সে মুচকি হেসে আইরাতের মুখের দিকে নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগে। এতে আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। এক হাত আইরাতের পাশে রেখেই আরেক হাত দিয়ে আলতো করে তার ঠোঁটের সাইডে স্লাইড করে। এতে আইরাতের ঠোঁটের পাশে ছড়িয়ে পরা লিপস্টিক টুকু আব্রাহামের বৃদ্ধা আঙুলে উঠে আসে আর লিপস্টিকের রঙ টুকু সে তার আঙুলে আঙুল ঘর্ষনের ফলে মিশিয়ে ফেলে। এখনো সে একমনে আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু হচ্ছে না দেখে পিটপিট করে নিজের আঁখিজোড়া মেলে তাকায়। এবার যেনো তার আর আব্রাহামের চোখাচোখি হয়ে যায়।

আইরাত;; আম আ আমাকে য যেতে দি দ দিন প্লিজ।

আব্রাহাম;; এইটাই তো মন মানে না।

আইরাত তার নজর উঠিয়ে আব্রাহাম কে তাকায়। এর মতিগতি কিছুই সুবিধের লাগছে না, যখন তখন কিছু করে বসতে পারে।

আইরাত;; দেখুন প্লিজ যেতে দিন, বাইরে যাবো আমি।

আব্রাহাম আরেক দফা আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে। হুট করেই নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আইরাতের গালের খানিক নিচু অংশে বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল মনে রাখবে আমি নিজে তোমার সাথে রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা থাকতে না পারলেও আমার দুই নজর সর্বদা তোমার সাথেই থাকে, তোমাকে দেখতে থাকে ওকে। আর এটা পুরোটাই তোমার দোষ। তুমি আমার নজরে পরেছো, আমার মনে ধরে গেছে তোমাকে। আর আমার যেটা একবার পছন্দ হয় তা আমি নিজের করেই ছাড়ি By hook or by crook। নিজের থেকে আমার কাছে ধরা দিলে ভালো নয়তো…..

আব্রাহাম এই ‘নয়তো’ বলেই এক কড়া দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকায় আর শুকনো এক ঢোক গিলে। আব্রাহাম খানিক মুচকি হেসে দিয়ে আইরাতের গাল আর ঘাড় সই ধরে তাকে নিজের কাছে এনে কপালে গাঢ় চুমু একে দেয়। এতে আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। আব্রাহামের টাচ করাতে তার শরীরের গাঁট যেনো সব দাঁড়িয়ে উঠছে।

আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ যদি চাও যে তোমার নিজের সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু না হোক তাহলে পরেরবার থেকে এভাবে স্পেশালি ব্লেল শাড়ি পরে আমার সামনে আর এসো না। কারণ নিজেকে সামাল দেওয়া ঠিক কতোটা কষ্টসাধ্য তা কেবল আর কেবল আমিই জানি। এবার যাও।

পাখিকে খাঁচায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত আটকে রেখে পরে ছেড়ে দিলে যেমন শান্তি পায় এখন যেনো আইরাতেরও ঠিক তেমন দশা। আব্রাহামের দুই হাতের ঘের থেকে ছাড়া পেতেই এক দৌড়ে ছুটে বাইরে চলে আসে। কলেজের মাঠে যেতেই দেখে অবনি আর দিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তারাও আইরাত কে দেখে।

অবনি;; কিরে কোথায় ছিলি তুই?

আইরাত;; বন্দি কারাগারে।

দিয়া;; কি?

আইরাত;; এতোক্ষনে জিজ্ঞেস করছিস কোথায় ছিলাম আমি! একটা বারও খোঁজ করেছিস আমার?

অবনি;; আরে আমরা ভাবলাম হয়তো ব্যাস্ত তুই বা কাজ করছিস তাই।

আইরাত;; কানের গোড়ায় চড় একটা মারতে মন চায়। তোরা বন্ধবী নামে কলঙ্ক।

দিয়া;; আচ্ছা আমরাও না আব্রাহাম স্যার কে প্রায় অনেক সময় যাবত দেখতে পারছি না। কোথায় রে উনি?

আইরাত;; কোথায় আর থাকবে, এতোক্ষন আমাকেই তো আটকে রেখেছিলো। (ফিসফিস করে)

অবনি;; কি?

আইরাত;; কিছু না।

দিয়া;; আরে ওই ওই আসছেএএএএএএএ।

অবনি;; কি কে আসছে? কই আসছে?

দিয়া;; ওই যে আব্রাহাম স্যার কে দেখ। স্টেজে আসছে। বসে আছে যে ওইযে।

আইরাত;; ধুর ছাতা। ক্যান আসছিলাম আমি এখানে।

অবনি-দিয়া আর আইরাত স্টেজের এক সাইডে গিয়ে বসে পরে। আর সামনে ভার্সিটির হ্যাড লেকচার দিচ্ছে।

আইরাত;; কানের পোকা খেয়ে ফেললো। কই যাই কোথাও গিয়ে শান্তি নাই। ক্লাসেও লেকচার আর এখানেও।

দিয়া;; আসলেই আর ভালা লাগে না।

এভাবেই বেশ সময় পার হয়ে যায়। একটা সময় ভার্সিটির ফাংশনও শেষ হয়ে যায়। দিয়া-অবনি চলে গিয়েছে। অবনির একটু তাড়া ছিলো তাই সে আগেই চলে গিয়েছে। আইরাত ভার্সিটির বাইরে গেইটের কাছে আসলেই দেখতে পায় দুজন ছেলে বাইকের ওপর বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। কানার ভাই আন্ধা দেখেও বলবে যে এরা আস্তো বখাটে টাইপের ছেলেপুলে। তাই আইরাত তাদের দিকে খেয়াল না করে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরতে নেয়। তবে আইরাতের সাইড কেটে যেতেই তাদের মাঝ থেকে একজন জোরে সিটি বাজায় আইরাতের দিকে তাকিয়ে। আইরাত রাগে চোখ বন্ধ করে কিছুটা থেমে যায়। এদের সাথে কথা বলে কোন লাভই নেই। দ্রুত চলে যাওয়াই শ্রেয়। তাই আইরাত আবার হাঁটা ধরে। এবার হেঁটে কয়েক কদম সামনে এগোতেই তাদের মাঝ থেকে আরেকজন বলে ওঠে…..

— ভাই, এতো পুরাই আগুন সুন্দরী রে। দিলে লাড্ডু ফুইটা গেলো।

আরো কতো কথা। আইরাত কোন রকমে সবকিছু ইগ্নোর করে সেখান থেকে এসে পরে। খুব খারাপ লেগেছে ব্যাপার টা আইরাতের কাছে। এমনকি রাগে চোখ থেকে কয়েক বিন্দু পানিও বের হয়ে গেছে। আইরাত হাঁটছিলো হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে তার পাশেই দাঁড়ায়। আইরাত থেমে গিয়ে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ির উইন্ড-এর গ্লাস খুলে এলে দেখে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার চোয়াল শক্ত রেখে সামনে তাকিয়ে বলে…

আব্রাহাম;; গাড়িতে উঠো।

আইরাত;; আম….

আব্রাহাম;; এখন আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আইরাত।

আইরাতের আর কিছু বলার সাহস হলো না। চুপ করে গাড়িতে ওঠে পরে আব্রাহামের পাশে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আইরাত নিজের মাথা নামিয়ে রেখে দিয়েছে, আব্রাহাম একবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাতের চোখ ভেজা। তারপরেই গাড়ির স্পীড যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায় তবে সে কিছু না বলেই সোজা আইরাতের বাড়ির সামনে তাকে নামিয়ে দেয়। আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরলে আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে। সে আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই অনামিকার ডাক….

অনামিকা;; কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভেতরে আয়।

আইরাত;; আসছি।

আইরাত বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

অনামিকা;; কিরে কেমন কাটলো ফাংশন?

আইরাত;; ভালোই।

এভাবেই দিন গড়িয়ে রাত হয়।


বর্তমানে একটা গোডাউনের অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাধা অবস্থায় বসে আছে দুটো ছেলে। তাদের ঠিক মাথার ওপরে একটা হলুদ রঙের বাতি আবছা আলো ছড়িয়ে পুরো রুম কে আলোকিত করে রেখেছে। একজন অজ্ঞান প্রায়, আরেক জনের নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এদের খাতিরদারি তে কোন কমতি রাখে নি। হাত গুলো র‍্যাপ দিয়ে এতোটা শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে মাংস কেটে ভেদ করে ভেতরে ঢুকেই যাবে। তাদের পেছনেই কতোগুলো গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। ছাড়া পাওয়ার জন্য আকুতিভরা টলটলে চোখে তাদের বললেও গার্ডগুলো তাদের কথা গ্রাহ্য করে না। হঠাৎ তাদের কানে কারো ভারি ভারি পায়ে এগিয়ে আসার শব্দ শোনা যায়। নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে একজন বেশ লম্বাচওড়া লোক। সে এসে একটা চেয়ার টান দিয়ে তাতে বসে পরে। নীরবতা ভরা স্থানে পায়ের হাঁটার শব্দ, চেয়ার টানার শব্দ যেনো সুস্পষ্ট। হাত দিয়ে মাথার হুডি টা আলতো করে ফেলে দিয়ে সামনে তাকায়। তাতেই যেনো ছেলে দুটোর কলিজার পানি শুকিয়ে যায়।

— স্যার, স্যার আমাদের এভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন কেনো স্যার। আমরা ক কি করেছি। প্লিজ স্যার আমাদের যেতে দিন।

— স্যার প্লিজ যেতে দিন আমাদের।

আব্রাহাম নিজের হাতে ধারালো স্টীলের ব্রোজ প্যাচাতে প্যাচাতে রাগি কন্ঠে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; আমার বেবিগার্ল আগুন সুন্দরি তাই না। হ্যাঁ সুন্দর তো থাকবেই কারণ ও আমার নামে লিখা। তাকে পুরোপুরি দেখার অধিকার শুধু আমারই। আর তোরা কি করেছিস আইরাত কে দেখে সিটি বাজিয়েছিস, কটু কথা বলেছিস তাই না।

— স্যার, স্যার ভূল হয়ে গেছে স্যার আর করবো না।

— আগে যদি জানতাম যে ওই মেয়েটা আপনার কিছু হয় তাহলে বিশ্বাস করুন আমরা ভার্সিটির গেইটের কাছেও থাকতাম না। স্যার মাফ করে দিন প্লিজ।

আব্রাহাম;; অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোদের জন্য, তোদের জন্য আমার বেবিগার্লের চোখ থেকে পানি গড়িয়েছে। তোরা ভাবতে পারছিস আমি তোদের ঠিক কি হাল করবো।

— স্যার এইবারের মতো মা….

আব্রাহাম যেনো আর কিছুই শুনতে পারলো না। রাগে হাতের রগ গুলো ফুলে ওঠেছে। হিংস্র এক চিৎকার দিয়ে হাতে থাকা ধারালো স্টীলের ব্রোজ দিয়ে প্রথম ছেলেটার মুখে দেয় এক ঘুষি মেরে। ফলে ছেলেটার গালের এক পাশের মাংস ছিড়ে আরেক পাশে এসে পরেছে। রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে। ছেলেটা চেয়ার সহ মাটিতে ধিরিম করে লুটিয়ে পরে। চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে বের করে রয়েছে। সেখানেই কাতরাতে কাতরাতে ছেলেটা মারা যায়। এছাড়াও প্রথমে প্রচুর মার খেয়েছে দুজনেই। প্রথম ছেলেটার এই দশা দেখে দ্বিতীয় জনের জন্য মরন কান্না শুরু হয়ে গেলো। আব্রাহামের সামনে এখন শুধু আইরাতের কান্না ভেজা মুখটা ভেসে আসছে। আব্রাহাম আর সহ্য করতে না পেরে পাশে থেকে একটা মোটা লোহার রড দুইহাতে শক্ত করে ধরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঠাস করে ওই ছেলেটার মাথার পাশে বারি মেরে দেয়। ঠাস করে শব্দ হয়। দেওয়ালে একগাদা রক্ত ছিটকে যায়। ছেলেটা আর একটা টু শব্দও করতে পারে না। মাথার খুলিটা হয়তো এক সাইড থেকে আলগা হয়ে খুলেই গিয়েছে। চুপ হয়ে সেও নিচে লুটিয়ে পরে। আশেপাশের গার্ডরা সবাই কপাল কুচকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তার বাম হাতে রড টা নিয়ে রক্তচক্ষু নিয়েই ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।

আব্রাহাম;; রাশেদ!

আব্রাহাম এতো জোরে চিল্লিয়ে ডাক দেয় যাতে সবাই চমকে ওঠে। রাশেদ খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের হাত রক্ত লাল হয়ে আছে। রাশেদ সাদা কাপড় নিয়ে যায় আব্রাহাম তা নিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; ট্রাক এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে দুইজন, ক্লিয়ার?

রাশেদ;; জ্ব জ জ্বি স্যার।

আব্রাহাম আবার হুডি টা তুলে সেখান থেকে সোজা চলে আসে। রাশেদ এবার ছেলে দুটোর দিকে তাকায় তার নিজেরই গা গুলিয়ে আসছে। এক্কেবারে থেতলে গেছে। আব্রাহাম বাইরে গিয়ে রুফল্যাস গাড়িতে বসে ওঠে চলে যায়। কেউ তাকে দেখে বলবে না যে আব্রাহাম শান্ত মস্তিষ্কের একজন খুনী। সে বাসায় চলে যায়। এখনো প্রচন্ড রেগে আছে। ইন ফ্যাক্ট সব স্টাফ রা আব্রাহামের এমন রাগি ভাব দেখেই দূরত্ব বজায় রাখছে। বাসায় গিয়েই দেখে তার দাদি বসে আছে। ইলা আব্রাহামের দিকে তাকায়। বুঝে যে কিছু একটা হয়েছে যার দরুন আব্রাহাম রেগে লাল হয়ে আছে।

ইলা;; আব্রাহাম!!

আব্রাহাম কিছু না বলেই সোজা নিজের রুমে চলে যায়। তারপর গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আইরাতের কথা বড্ড বেশি মনে পরছে। আব্রাহাম যে দিনকে দিন পরিবর্তন হচ্ছে তা সে ভালোই খেয়াল করছে। নিজের অজান্তেই নিজের মাঝে চেঞ্জ আসছে। এইসব প্রেম-ভালোবাসা থেকে সবসময় দূরে থেকেছে সে কিন্তু কখন যে একটা মেয়ের প্রেমে সে নিজেই হাবুডুবু খেতে লাগলো তা হয়তো নিজেও জানে না। দিন দিন যে আব্রাহামের পাগলামো গুলো বেড়েই চলেছে। নিজের ওপর থেকে হুডি টা খুলে ফ্লোরে ফেলে দেয়। খুব রাগ লাগছে। কোন মতেই থামছে না। ছেলেগুলোর জন্যই তার এত্তো রাগ লাগছে। তাদের নিঃশেষ করে দিয়েছে নির্মমভাবে কিন্তু তবুও যেনো নিজের মাঝে শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না আব্রাহাম। রাগ আর সামলাতে না পেরে নিজের পাশ থেকে বিশাল আকাড়ের কাচের একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস তুলে আছাড় মেরে এক নিমিষেই ভেঙে ফেলে। মূহুর্তে খানখান হয়ে যায়। চারিপাশে কাচের টুকরো সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওপরের রুম থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ পায় সবাই। ইলা বুঝলো ব্যাপার হাতের বাইরে, এখন একটু একা থাকতে দিক ওকে নয়তো আবার কি থেকে কি করে বসবে আল্লাহ জনে। আব্রাহামের মাথায় এখন এক কথাই কাজ করছে যে ওই ছেলেগুলো তার আইরাত, তার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছে। আইরাত কে আজ বিকেলের দিকে তার বাসায় ড্রপ করে দিয়েই আব্রাহাম তার গার্ডদের কে ওই ছেলে দুটো কে তুলে নিয়ে আসতে বলে। আগেই ঠিক করেছিলো যে ছেলে দুটো কে জানে মেরে ফেলবে। ইদানীং আব্রাহাম নিজের সবকিছুতে আইরাতের ছবি রেখে দেয়। তার রুমের এমন একটা কোণা বাকি নেই যাতে আইরাতের ছবি নেই। আর রাশেদ কে দিয়ে সে আইরাতের সব ছবি গুলো নিজের রুমে আনতে বলেছে। নিজের রুমের দেওয়ালে আইরাতের বড়ো একটা ছবি রয়েছে। নিজের ফোন, ল্যাপটপ, ওয়ালেট অর্থাৎ এমন কোন স্থান নেই যেখানে আইরাতের অস্তিত্ব নেই। আব্রাহাম ভালোবেসে ফেলেছে আইরাতকে, অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে। শুধু মুখ ফুটে বলা হয়নি। আব্রাহাম এক এক করে রুমে আইরাতের যতগুলো ছবি ছিলো তার সব নিয়ে আসে। আইরাতের এতোই ছবি হয়েছে যে তাতে পুরো ফ্লোর একদম ঢেকেই গিয়েছে। চারিপাশে শুধু আইরাতের ছবি আর কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে। আর তাদের মাঝে আব্রাহাম হাতে আইরাতের একটা ছবি নিয়ে শুয়ে আছে। ফ্লাওয়ার ব্যাস টা যে ভেঙেছিলো তার একটা টুকরো আব্রাহামের হাতে লেগে কেটে গিয়েছে। সেখান থেকেই বেশ রক্ত ঝড়ছে তবে সেদিকে একবিন্দু খেয়ালও নেই আব্রাহামের। সে যেনো এই অবস্থাতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। এটাই যেনো আস্তে আস্তে তার রাগ টাকে একদম পানি করে দিচ্ছে। আইরাতের ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাটা হাত টা পাশে এলিয়ে দেয়। চোখের পাতা গুলো বন্ধ করে নেয়। আবছা আঁধার রুমে রক্তাক্ত বেশকিছু কাচের টুকরো আর তাতে আব্রাহামের বুকে আইরাতের চিহ্ন নিয়ে রয়েছে আব্রাহাম। ব্যাপার টা কেমন এক ভয়ংকর জেদ। এভাবে সে ঠিক কতোক্ষন ছিলো তা তার নিজেরও খেয়াল নেই।


পরেরদিন সকালে উঠেই আইরাত তার ভার্সিটি তে চলে যায়। আর তার ভার্সিটি যেতেই দিয়া ছুটে আসে। এসেই হাপাতে লাগে।

দিয়া;; আইরু, আইরু আরে ওইযে…

আইরাত;; আরে ভাই আস্তে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না তোর আস্তে। দম নে আগে। কি হয়েছে কি?

দিয়া;; আমাদের, আমাদের ভার্সিটির দুজন এত্তো জঘন্য ভাবে মারা গিয়েছে কি আর বলবো ইশশশ। রাস্তায় তাদের পরে থাকতে দেখে।

আইরাত;; কি?

দিয়া;; হ্যাঁ। আমি আজ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি আসি আর এসেই দেখি এইসব কান্ড। বইন আমি ওদের লাশ দেখেছি আল্লাহ আমার মাথা ঘোড়ায়।

আইরাত;; কিন্তু কীভাবে মারা গেলো?

দিয়া;; সবাই তো বলে ট্রাক এক্সিডেন্ট। দাড়া আমার কাছে পিকও আছে দেখাচ্ছি তোকে।

দিয়া তার ফোন টা বের করে পিকগুলো আইরাতের দিকে ধরে। আর লাশগুলোকে দেখেই আইরাতের মুখ হা হয়ে যায়। সে দিয়ার কাছ থেকে ধরফর করে ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ফাটা চোখে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; এরা, এরা মারা গেলো কীভাবে? কালই না ভালো দেখলাম।

দিয়া;; মানে?

আইরাত;; কাল আমি আসছিলাম তখন গেইটের কাছে এদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম সত্যি বলতে আমাকে দেখে কিছুটা কটু কথাও বলেছিলো আর আজই এই দশা। প্লিজ ফোন নে আমার গা শিউরে উঠছে এদের দেখে। এত্তো রক্তাক্ত আল্লাহ।

আইরাত দিয়ার কাছে ফোন দিয়ে দেয়। তারপর ক্লাসে চলে যায়। ভার্সিটির পরিবেশে আজ শুরু এই এক্সিডেন্টের কথাই বলে যাচ্ছে। সবার মুখে মুখে এক কথাই। তবে এবার আইরাতের কেনো জানি আব্রাহামের কথা মনে পরছে। কাল গাড়ি নিয়ে তাকে ড্রপ করা, রাগে লাল হয়ে থাকা। আচ্ছা, এই ছেলে গুলোকে আব্রাহামই আবার মারে নি তো। ক্লাসে বসে বসে আইরাত এগুলোই ভাবছিলো হঠাৎ দিয়ার ডাকে তার ধ্যান ভেঙে যায়। পরে খেয়াল করে দেখে ক্লাসই শেষ হয়ে গেছে। দুজন মিলে বাইরে বের হয়ে পরে ক্লাসের। আইরাতের বাইরে বের হতেই একজন কালো পোশাক পরা লোক আইরাতের কাছে আসে।

— আইরাত ম্যাম,

আইরাত;; জ্বি

— আমি আব্রাহাম স্যারের গার্ড, উনি আপনাকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছেন।

আইরাত;; কিন্তু কোথায়?

— স্যারের গেস্ট হাউজে।

আইরাত;; কিন্তু আ…….

— ম্যাম প্লিজ আসুন। আপনাকে যদি সাথে করে না নিয়ে যাই তাহলে স্যার শুট করে দিবেন আমাকে।

আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

এই বলেই আইরাত গাড়িতে ওঠে পরে।

আইরাত;; কি মানুষ রে বাবা, সবাই কে ভয়ের ওপরে রাখে।

আইরাত পেছনের সীটে বসে আছে আর ওই গার্ড টা ড্রাইভ করে যাচ্ছে। প্রায় আধা ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে গেস্ট হাউজের সামনে। একজন গার্ড এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলে আইরাত নেমে পরে। আরেকজন গার্ডের আইরাত কে নিজের সাথে করে নিয়ে আব্রাহামের রুমে চলে যায়। আব্রাহামের রুমের সামনে আসতেই গার্ড থেমে যায়। আইরাত তার দিকে তাকালে বলে ওঠে….

গার্ড;; ম্যাম আমি আপনাকে এই পর্যন্তই নিয়ে আসতে পেরেছি। এর আগে আমাদের যাওয়ার পারমিশন নেই।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা, ঠিকআছে।

এই বলেই আইরাত আস্তে করে রুমের দরজা খুলে ভেতরে চলে যায়। দরজা একাই অফ হয়ে যায়। সামনে এগোতেই দেখতে পায় আব্রাহাম চেয়ারে বসে বসে নিজের কালো শার্টের হাতা ফোল্ড করে খুব মনোযোগ দিয়ে রিভলবারে বুলেট”স লোড করছে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আব্রাহাম প্রথমে তার নজর তুলে আইরাতের দিকে তাকায় তারপর পুরো মাথা তুলে।

আব্রাহাম;; হেই আমার বেবিগার্ল!

আইরাত বেশ শান্ত স্বরে বলে..

আইরাত;; কেনো ডেকেছেন আমাকে এখানে?

আব্রাহাম এবার রিভলবার টা রেখে দিয়ে এক শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আইরাতের দিকে। উঠে এসে আইরাতের দিকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগে। আইরাত মাথা নিচু করে ফেলে। আব্রাহাম আবার ঘুড়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাতের কানের কাছে বেশ ঝুকে বলে…..

আব্রাহাম;; এতো মাথা ঘামিয়ো না, ওই ছেলে গুলোকে আমিই মেরেছি।

আব্রাহামের কথায় আইরাত চমকে গিয়ে এক ঝটকায় পেছনে ফিরে তাকায়। আব্রাহাম এবার অনেকটা কাছে আইরাতের।

আব্রাহাম;; অবাক হওয়ার কিছুই নেই। হ্যাঁ আমিই মেরেছি তাদের। আর তোমাকে বলার কারণ হচ্ছে আমি প্রকৃতি পক্ষে যেমন স্বভাবের মানুষ তার সম্পর্কে তোমায় জানিয়ে দেওয়া। আমি আমার নিজের বিষয়ে কোন কিছুই লুকায়িত রাখতে চাই না তোমার কাছ থেকে। তাই বলে দিলাম। ওই ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। আমার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিলো তাই….

আইরাত;; তাই খুন করে দিয়েছেন তাই তো!

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি পাগল নাকি? কেনো মারলেন তাদের। সবাইকে সেকেন্ড চান্স দিতে হয়। তাদেরও দেওয়া উচিত ছিলো আপনি কেনো মারলেন। তাদেরও তো পরিবার ছিলো। আপনি?

আব্রাহাম;; এতো শত কিছু জানি না তোমার দিকে যে তাকাবে তাকে অকাল মৃত্যু ভোগ করতে হবে ব্যাস।

আইরাত;; আপনি..

আব্রাহাম একটা ডেস্টের ওপরে বসতে বসতে বলে।

আব্রাহাম;; সেদিন রাতে তোমার রুমেও গিয়েছিলাম এই আমিই।

আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; জ্বি। আয়নাতে লিখাটাও আমারই।

আইরাত;; আপনি কেনো এইসব করছেন বলুন তো!

আব্রাহাম;; বিকজ আই ফ্যাল ইন লাভ উইথ ইউ জানপাখি।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here