নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-২৫+২৬

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৫

মাঝরাতে আকাশে মেঘের গর্জনের তীব্র আওয়াজে আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। মিটমিট করে চোখের পলক মেলে তাকায়। প্রথমেই নজর যায় পুরো রুমের দিকে। রুমে কোন আলো নেই, হয়তো ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে তাই। খোলা থাই গ্লাস দিয়ে আবছা আলো আসছে। বড়ো বড়ো সাদা পর্দা গুলো বাতাসের তীব্র গতিতে দোল খাচ্ছে। থেকে থেকে বিদুৎ চমক দিয়ে উঠলে তার আলো এসেই ঘরকে আলোকিত করে তুলছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দগুলো কানে বাজছে। তার ওপর মেঘের ভারি গর্জন। পরিবেশটা বেশ শীতল। আইরাতের নজর ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাকাতেই যেনো কেমন এক অনুভূতি হয়। গায়ের ওপর বুক পর্যন্ত শুধু সাদা ধবধবে একটা সিল্কের চাদর জড়ানো। নিজের ঘাড় টাও ঠিকভাবে ঘুরাতে পারছে না। কারণ আব্রাহাম উন্মুক্ত গায়ে উপুড় হয়ে আইরাতের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে আরামছে ঘুমাচ্ছে। আব্রাহামের একটা হাত আইরাতের পেটের ওপর রেখে দেওয়া। আইরাত দূরে সরার জন্য কিছুটা নড়ে উঠতেই আব্রাহাম হাত দিয়ে আইরাতের পেটে টান দিয়ে আরো নিজের সাথে চেপে ধরে। আইরাত চট জলদি বুকের সাথে চাদরটা জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। চোখগুলো বড়ো বড়ো করে আব্রাহামের দিকে কোন রকমে তাকায়। আব্রাহাম কে দেখে মনে হচ্ছে তার থেকে বেশি সুখী মানুষ এই গোটা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় টা নেই। পরম আরামে ঘুমাচ্ছে। সামনের চুলগুলো কপালে ঠেকে আছে। গালে চাপ পরার ফলে গালের দুপাশের মাংস জড়ো হয়ে এসেছে যার দরুন মুখটা একদম বাচ্চার ন্যায় লাগছে। ফর্সা মুখে কালো ঘন চাপদাড়ি গুলো ফুটেছে বেশ। আইরাত খুটিয়ে খুটিয়ে আব্রাহাম কে দেখছিলো তার মাঝেই হুট করে আব্রাহাম চোখ মেলে তাকায়। আইরাতের বুকটা কেমন ধক করে ওঠে। আব্রাহাম হেসে দিয়ে আইরাত কে আরো নিজের কাছে এনে পরে। ভারি গলায় বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; দেখো দেখো বেশি করে দেখো। তোমারই তো জামাই। জামাই কে দেখবে না তো আর কাকে দেখবে। আমিও তোমাকে একটু দেখি।

আইরাত;; লুচু।

আব্রাহাম আইরাতের গালে চুমু দিয়ে তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু এতে তো আইরাতের দম যায় যায় অবস্থা।

আইরাত;; আব আব্রাহাম ছাড়ুন। আমার দম বন্ধ হয়ে গেলো।

আব্রাহাম আইরাত কে হালকা করে ছেড়ে দেয়।
আইরাত অন্যপাশে ঘুরে গিয়ে চাদর টাকে নিজের সাথে খামছে ধরে রাখে। কেনো যেনো হুট করেই বেশ খারাপ লাগতে শুরু করলো। সারা শরীরে প্রচন্ডভাবে ব্যাথা করছে। মাথা টাও ঝিমঝিম করছে। আব্রাহাম ব্যাপার টা ধরতে পেরে আইরাত কে আর কিছু বলে না। সে উঠে পরে। আব্রাহামের চলে যেতেই আইরাত বালিশে মুখ চেপে কেঁদে ওঠে। নাক টানছে বারেবার। আব্রাহামের মনে হলো যে এখন কিছুসময় আইরাত কে একা থাকতে দেওয়া দরকার তাই সে আইরাত কে রেখে গায়ে একটা টি-শার্ট জড়িয়ে করিডরে এসে পরে। এভাবে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই কখন যে আইরাত ঘুমিয়ে পরেছে তা সে নিজেও জানে না। আস্তে আস্তে রাত টুকু পার হয়। বৃষ্টি থেমে গিয়ে ভোরের আলো ফুটে ওঠেছে চারিদিকে। পাখিরা সব তাদের নীর থেকে বের হয়ে গাছের ডাল-পালাতে গিয়ে কিচিরমিচির ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। তার ওপর চারিপাশের মন মাতানো ঠান্ডা হাওয়া। মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মৃদু রোদের কিরণ ফুটেছে। আইরাত ঘুমাচ্ছিলো সূর্যের হালকা রোদ এসে তার মুখের ওপর আছড়ে পরে। চোখ-মুখ সব ভাজ করে হাত দিয়ে মুখের ওপর রোদের আভা আসা কে আটকে দেয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল সাতটা বাজছে। পেছন ঘুরে পাশে তাকিয়ে আব্রাহাম কে দেখতে পায় না। চাদর টা নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসে পরে। নিচে পা রেখে যেই উঠে দাঁড়াতে যাবে তখনই ধিরিম করে পরে যেতে ধরলে আব্রাহাম হুট করে এসে তাকে ধরে ফেলে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়৷ আব্রাহাম মাঝরাতে উঠে গিয়ে করিডরে চলে গিয়েছিলো পরে আর রুমে আসে নি। বাকি রাতটুকু করিডরে দাঁড়িয়ে থেকেই অর্থাৎ সজাগ থেকেই পার করে দিয়েছে। রুমে টুকটাক আওয়াজ পেয়ে উঁকি দেয় দেখে আইরাত উঠে পরেছে। উঠে দাঁড়িয়ে তাকে পরে যেতে ধরলে দ্রুত এসে ধরে ফেলে। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম সোজা আইরাতকে নিজের কোলে তুলে নেয়। এতে আইরাত ব্যাথায় কুকড়ে যায়। তবুও বলে ওঠে…

আইরাত;; নামি নামিয়ে দ দিন আমাকে। আমি একাই যেতে পারবো।

আব্রাহাম;; চাপাবাজি বন্ধ করো। নিজে একা একা তো ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছো না আবার বড়ো বড়ো কথা।

আইরাত কে ঝাড়ি মেরে তাকে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। আইরাত কে নামিয়ে দেয়। তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে দুজন একসাথে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহামকে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আইরাত বলে…

আইরাত;; আপনি, আপনি বাইরে যান প্লিজ।

আব্রাহাম;; কেনো?

আইরাত;; না মানে আমি ফ্রেশ হবো। আপনি বাইরে যান।

আব্রাহাম বিনাবাক্যে আইরাতের দিকে নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝুকে পরে। এতে আইরাতও কিছুটা পেছায়। আব্রাহাম তার এক হাত দেওয়ালের ওপর রেখে দেয়। আইরাতের কথা গ্রাহ্য না করে সোজা শাওয়ার অন করে দেয়। বড়ো বড়ো পানিবিন্দু গুলো সব তাদের দুজনের ওপরে পরে। আইরাতের ওপর ঠান্ডা পানি পরতেই সে হকচকিয়ে গিয়ে দ্রুত আব্রাহামের কাছে এসে পরে, আনমেই একহাতে আব্রাহামের বুকের টি-শার্ট জড়িয়ে ধরে। একে তো এতো ঠান্ডা ওয়েদার আর তার ওপর এই ঠান্ডা পানি। শীতে যেনো কাপুনি ধরে যাচ্ছে গায়ে। শরীরে কিছুটা জ্বালাপোড়া করছে আইরাতের। মূহুর্তেই দুজন ভিজে একাকার হয়ে গেলো। আইরাত পুরো ভিজে গেছে, চাদর টা শরীরের সাথে একেবারে লেপ্টে ধরেছে। চুলগুলোও তার ভিজে ফর্সা ধবধবে বুক-পিঠের সাথে লেগে আছে। ওপর থেকে পানি আইরাতের মুখের ওপর চুইয়ে চুইয়ে পরছে আর সে যেনো তাতে বড়ো বড়ো দম নিচ্ছে। বেশ সময় নজর নামিয়ে রেখে আইরাত আব্রাহামের দিকে ধীরে ধীরে তাকায়। দেখে আব্রাহাম দৃঢ় ভাবে তাকেই দেখছে। এমন ভাবে যে চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে এমন। আব্রাহামের সামনের চুলগুলো ভিজে আইরাতের গালের ওপর টপ টপ করে পানি পরছে। আইরাতের লজ্জায় গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে ফুলে গেলো। সাথেসাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে সাদা ফ্লোরে পানির প্রবাহের সাথে বেশটুকু লাল পানিও যাচ্ছে যার উৎস আইরাত নিজে। আব্রাহামের বুঝতে আর বাকি রইলো না। সে দ্রুত আইরাত কে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। কপালে-মাথায় লাগাতার চুমু একে দেয় তার। আইরাত আর পারে না ঠিক থাকতে হুহু করে আব্রাহামের বুকেই কেঁদে দেয়। কিছুক্ষণ পর আইরাত শান্ত হয়ে এলে আব্রাহামের বুক থেকে ওঠে কিছুটা সোজা হয়। আইরাত মাথা নামিয়ে দিয়েই রয়েছে। বেশ সময় পানিতে ভেজার ফলে উভয়ের গায়ের রঙই আরো সাদা বর্ণ ধারণ করেছে৷ আব্রাহামের নজর যায় আইরাতের ঠিক কানের নিচ বরাবর কালো কুচকুচে একটা তিলের ওপর। বাধা আর মানে কে সোজা মুখ গুজে চুমু দিতে লাগে। আব্রাহাম একহাত দেওয়ালে রেখে, আরেক হাত দিয়ে আইরাতকে প্যাচিয়ে ধরে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে তার ঘাড়ের অংশে। খানিক পর মাথা তুলে আইরাতের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে নেয়। দুজনেই চোখ বন্ধ করে নেয়।

আব্রাহাম;; এরপর থেকে যেনো কখনোই না আর দেখি একা ওয়াসরুমে আসতে ওকে।

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; আমার সাথে আসবে। আর যদি দেখি যে আমার আগে ফ্রেশ হয়ে গেছো। তাহলে আবার টেনে ধরে এনে ঠান্ডা পানিতে আমার সাথে চোবাবো।

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; মনে থাকবে?

আইরাত শুধু চিকার মতো আস্তে করে একটু ‘চু’ করে। মানে ‘হু’ করে আরকি৷

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে চেঞ্জিং রুমে চলে যায়। আইরাত কে আপাতত একটা বেবি পিংক কালারের বাথরোব পরিয়ে দেয়। আর নিজে একটা প্যান্ট পরে সাদা শার্ট পরে নেয়। আব্রাহাম আইরাতকে আয়নার সামনে বসিয়ে দেয়। তারপর আইরাতের মাথায় থাকা টাওয়াল টা খুলে নেয়। তা দিয়ে চুল প্যাচানো ছিলো। আব্রাহাম তার হাতে একটা হ্যায়ার ড্রাইয়ার নিয়ে আইরাতের চুলগুলো পরম যত্নে শুকিয়ে দিতে লাগে। আর আইরাত শুধু ড্যাবড্যাব করে আয়নাতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। চুল শুকানো শেষে তা সুন্দর করে আচড়ে দেয়। তারপর আইরাতের চেয়ার টা ঘুড়িয়ে দেয় ফলে আইরাত আব্রাহামের দিকে ঘুরে যায়। আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আইরাতের চুলগুলো সুন্দর করে এক সাইডে এনে পরে। তারপর কাবার্ড থেকে ব্রাউনিশ কালারের মধ্যে একটা সুন্দর গোল জামা এনে আইরাতের সামনে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল বাথরোব খুলো।

আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত চোখ পাকিয়ে দিয়ে তাকায়। বাথরোবের কলার টা নিজের সাথে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…

আইরাত;; ক ক কি বলেন এগুলো?

আব্রাহাম;; আরে সারাদিন কি এখন এই বাথরোবই পরে থাকবে নাকি। হ্যাঁ যদি রাত হতো আমার সামনে হতো তাহলে অন্য কথা ছিলো। আমিই জামা পরতে দিতাম না। তবে এখন তো এমন করলে চলবে না তাই না। সো বাথরোব খুলো৷

আইরাত;; আমি, আমি একাই জামা পরতে পারবো। আপনি এইবার প্লিজ বাইরে যান প্লিইইইইজ।

আব্রাহাম;; আচ্ছা যাচ্ছি।

আব্রাহাম জামা আইরাতের দিকে ছুড়ে মারে ফলে জামা সোজা গিয়ে আইরাতের চান্দির ওপরে পরে। এতে আইরাতের মুখ ঢেকে গিয়েছে। আব্রাহাম ফিক করে হেসে দিয়ে বের হয়ে পরে। বেশ সময় পার হয়ে যায় তবুও আইরাতের বাইরে বের হওয়ার নাম নেই দেখে আব্রাহাম নিজেই চেঞ্জিং রুমের ভেতরে চলে যায়। গিয়ে দেখে আয়নার সামনে আইরাত এক প্রকার লাফাচ্ছে তার জামার পেছনের চেইন টা লাগানোর জন্য। একবার এদিক হয়ে তো আরেকবার ওদিক হয়ে লাফাচ্ছে। কতো ভাবে যে নিজের পেছনে চেইনটা লাগানোর জন্য ট্রাই করছে কিন্তু তা হাতের নাগালে আসছে না। এটা দেখে আব্রাহাম তার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে শান্ত হয়ে দাঁড়ায়। আর আব্রাহাম এসে আয়নাতে আইরাতের দিকে নজর রেখেই ঠাস করে এক টানে আইরাতের পেছনের চেইন লাগিয়ে দেয়। এতে আইরাত কিছুটা নড়ে ওঠে। পেছন দিক দিকেই আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে। আইরাত কে নিয়ে বাইরে চলে আসে। আইরাত এসেই দেখে রুমের নকশা পুরো আলাদা। সকালে উঠে যে হাল দেখেছিলো রুমের তা থেকে এখন পুরো ভিন্ন। আগে কিছুটা অগোছালো থাকলেও এখন পুরো পরিপাটি। অনেক সুন্দর লাগছে রুমটা দেখতে।

আব্রাহাম;; কি হলো চলো।

আইরাত;; আপনি গুছিয়েছেন রুম?

আব্রাহাম;; না আমি বাইরে ছিলাম স্টাফ রা এসে গুছিয়ে দিয়ে গেছে।

আইরাত;; ওহহ।

আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে তাকে বিছানাতে বসিয়ে দেয় তখনই একজন স্টাফ আসে।

স্টাফ;; স্যার আসবো?

আব্রাহাম;; ইয়াহ, কাম ইন।

স্টাফ নিজের সাথে একটা বড়ো খাবারের ট্রে এনেছে। আব্রাহাম তা নিয়ে নিলে স্টাফ চলে যায়। আইরাতের সামনে বসে ব্রেডে জ্যাম লাগাচ্ছে আব্রাহাম। আপেল কেটে আইরাতের সামনে রেখে দিয়েছে। আইরাত খাচ্ছে কম আব্রাহাম কে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে বেশি। আব্রাহাম আইরাতের মাত্রাতিরিক্ত কেয়ার করে৷

আব্রাহাম;; কি হলো খাচ্ছো না কেনো। ভালো লাগছে না?

আইরাত;; না না ভালো।

আব্রাহাম;; তাহলে!

আইরাত;; কিছু না।

——————–

আইরাত;; আচ্ছা আপনি আমার এতোবেশি কেয়ার করেন কেনো?

আব্রাহাম;; Because ‘Love is all about caring’

আইরাত;; __________________

আব্রাহাম;; জলদি খাও বেবিগার্ল তারপর মেডিসিন নিতে হবে।

আইরাত;; কিসের মেডিসিন?

আব্রাহাম ব্রেডে জ্যাম লাগানো বাদ দিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ঝুকে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; লুক বেবিগার্ল, গতকাল মাত্রই বিয়ে করেছি। তো এতো তাড়াতাড়ি আমি বাচ্চার বাবা হতে চাই না। ব্রেকফাস্টের পর জলদি ট্যাবলেট খাও নয়তো তোমার কনসিভ করার চান্স আছে প্রায় 99.09% বুঝলে।

আইরাত যতটুকুও খেতো আব্রাহামের কথা শুনে সেটুকু খাওয়াও যেনো তার উঠে গেলো। হাত থেকে আপেলের স্লাইস টা পরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়৷

আব্রাহাম;; What happened!

আইরাত;; কি বলেন এইগুলো কনসিভ করবো মানে 🥺। আমি নিজেই তো এখনো মায়ের আচল ধরে ঘুরি।

আব্রাহাম;; না না মায়ের পিছু ছেড়ে এখন জামাই এর পিছু ধরেছো।

আইরাত;; কনসিভ মানে?

আইরাত পারে না এখনই কেদে দিতে। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্রাহাম দ্রুত বলে…

আব্রাহাম;; আরে না না না আমি মজা করছিলাম তো। আসলে মেডিসিনের কথা বলেছি তোমার ব্যাথা করছে তাই। পেইন কিলার এন্ড নাথিং এ্যালস্।

আইরাত;; তো এটা আগে বললে কি হয়। সবসময় ভয় দেখান।

এটা বলেই আইরাতের হিচকি উঠে পরে। আব্রাহাম দ্রুত তার দিকে জুসের গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে খেয়ে নেয়। অতঃপর আব্রাহাম-আইরাত দুজনেই ব্রেকফাস্ট করে নিচে নেমে পরে। নিচে নামতেই দেখে ইলা রান্নাঘরে কয়েকজন স্টাফ কে কড়া শাসনে রেখে দিয়েছে। কে কোনটা করবে তা বলে দিচ্ছে কোমড়ে হাত রেখে। স্টাফরা আর কি ভয় পাবে মুখ টিপে হাসছে। কেননা তারা জানে যে ইলা খুব নরম আর ভালো মানুষ। রাগ দেখাতে গিয়েও পারে না। আর এটা নতুন কিছুই না ইলা থেকে থেকেই বহুত স্ট্রিক্ট হবার ট্রাই করে কিন্তু পারে না। আব্রাহাম-আইরাত কে সিড়ি বেয়ে নেমে আসতে দেখে ইলা তাদের দিকে এগিয়ে যায়।

ইলা;; কিরে এসেছিস তোরা?

আব্রাহাম;; আসলাম।

ইলা;; ব্রেকফাস্ট করেছিস আমি তোদের রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। যাতে কেউ তোদের ডিস্টার্ব না করতে পারে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

ইলা;; আইরু!

আইরাত;; হ্যাঁ

ইলা;; আমাকে পান বানিয়ে দিবি?

আইরাত;; হ্যাঁ দিবো তো।

আইরাত ইলার কথায় হেসে দেয়। আব্রাহাম নিজের হাতের ঘড়ি ঠিক করছে আর মুচকি হাসছে। আইরাত-ইলা কে রেখে আব্রাহাম চলে আসে। আইরাত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইলা;; আব্রাহাম চলে গেছে কারণ পানের কথা বলেছি তো তাই।

আব্রাহাম;; উনি এটা পছন্দ করেন না নাকি?

ইলা;; না আসলে তেমন না তো। তুই আমার নাতবউ তো তাই আমাদের আড্ডার মাঝে সে আর থাকতে চায় নি চলে গিয়েছে। এছাড়াও ওর অনেক কাজ আছে। তুই আয় আমায় পান বানিয়ে দে।

ইলা আইরাত কে নিয়ে ড্রোইংরুমের সোফাতে গিয়ে বসে পরে। আইরাত পান-চুন-সুপারি ছাড়া আর কিছুই চিনে না তাই ইলা তাকে চিনিয়ে দিচ্ছে আর এটা ওটা বলছে। তাদের কথার মাঝখানেই আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে আসে। ফোন কেটে দিয়ে আইরাতের পাশে বসে পরে।

আব্রাহাম;; আইরাত বেশি করে কফি পাউডার আর চিনি ছাড়া কফি বানিয়ে দাও তো।

আইরাত;; এটা কফি নাকি করলা জুস।

আব্রাহাম;; আমি এভাবেই খাই।

আইরাত;; এর জন্যই তো মুখ দিয়ে মিষ্টি কথা ঝড়ে না।

আব্রাহাম;; এতোকিছুর হবার পরেও আরো মিষ্টত্ব দরকার তোমার বেবিগার্ল!

আইরাত আব্রাহামের কথার মানে বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়। কোন রকমে সেখান থেকে উঠে পরে কিচেনে চলে আসে।

আইরাত;; বুঝি না এই ছেলে আমাকে কথায় কথায় এতো লজ্জার মাঝে ফেলে কি শান্তি পায়।

কিছুসময় বাদে আইরাত পুরো এক মগ কফি এনে আব্রাহামের সামনে রাখে। আব্রাহাম ফোন ঘাটতে ঘাটতেই কফি তুলে তাতে চুমুক দেয়।

আব্রাহাম;; বেস্ট কফি এভার।

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে মুখ কুচকে ফেলে। বুঝতে পারছে না যে সুন্দর মানুষের টেস্ট খারাপ হয় নাকি এক্কেবারে জাতছাড়া জিনিসই সুন্দর মানুষের খাওয়া একটা স্বভাব। কেননা কিচেনে একটা চামচ দিয়ে কিছুটা কফি আইরাত তুলে একটু মুখে দিয়েছিলো। ইশশশ, মুখে কফি টুকু দেওয়াই তার ভুল ছিলো। শুধু হালকা একটু দুধ, গরম পানি আর এত্তোগুলা কফি পাউডার। আইরাতের ভাবতে ভাবতেই তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের খাওয়া শেষ।

ইলা;; আচ্ছা শোন তোরা থাক আমি দেখে আসি রান্না কতদূর এগোলো।

আব্রাহাম;; বুঝলাম না এতো রান্না করে কি করবে?

ইলা;; তোর বুঝতে হবে না।

আইরাত;; দাদি আমি হেল্প করি তোমাকে?

ইলা;; আরে না রে আমিই করতে পারবো। আর আমি নিজেই তো করছি না সব স্টাফ রা করছে। আমি শুধু চেক করে আসছি খানিক বাদে বাদে। তুই এখানে বোস।

ইলা চলে যায় আর আব্রাহাম একটান দিয়ে আইরাত কে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। একহাতে ফোন ঘাটছে আরেক হাতে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমরা না আজ এক জায়গায় যাবো।

আইরাত;; কোথায়?

আব্রাহাম;; গ্যাস করো।

আইরাত;; আমি আপনার মতিগতি কখনোই গ্যাস করতে পারি না। তাই অনুগ্রহ করে যদি আপনি নিজেই একটু বলে আমায় উদ্ধার করতেন!

আব্রাহাম;; বাব্বাহ, এতো খাঁটি ভাষা।

আইরাত;; সমস্যা নেই ভয়ংকর রকমের গালিও জানি।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তা শুধু আমাকেই দিও বা আমার সামনেই দিও। আর কাউকে দিও না নয়তো মান-সম্মান সব জলে যাবে।

আইরাত;; না আমি তো সবার সামনেই দিবো।

আব্রাহাম;; আরেএএএ। আচ্ছা দিও এবার শুনো বিকেলে রেডি থেকো।

আইরাত;; থাকবো না।

আব্রাহাম;; ত্যাড়ামি কম করবা। পরে আমি একবার ত্যাড়ামি শুরু করলে থামাতে পারবে না।

আইরাত;; আচ্ছা করবো না।

আব্রাহাম;; গুড।

আব্রাহাম হাত থেকে ফোনটা রেখে দেয়। এবার দুহাতে আইরাত কে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। টুক করেই তার গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। আর আইরাত মুখটা উল্টিয়ে দিয়ে বসে আছে। উপায় নেই আব্রাহাম তাকে ছাড়বে না এখন।

।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৬

আব্রাহাম আজকে একটুও অফিসে যেতে চাই নি তবে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কাজের চাপ এবং লাগাতার ফোন কলস্-এর ফলে তাকে যেতেই হয়েছে। আর এদিকে তো আইরাত টুটু কোম্পানির মালিক। সারাবাড়ি তে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। একবার বাগান থেকে ছাদে, ছাদ থেকে করিডরে, করিডর থেকে বাড়ির পেছনের দিক টায়, আবার কখনো নিজের রুমে আবার ইলার কাছে। মানে সে শুধু ঘুড়াঘুড়ি তে ব্যাস্ত। তবে আইরাত এটা জানে না যে তার একমাত্র গুনধর জামাই পুরো বাড়িতে যে ঠিক কতোগুলো ক্যামেরা ফিট করে রেখেছে তা হয়তো হিসেব করলেও বোঝা যাবে না। আর না লাগিয়েও তো কোন লাভ নেই। আব্রাহামের মতো মানুষের বাড়িতে ক্যামেরা থাকবে না এমন হয়। ফুল টাইম সেইফটি দিয়েই থাকতে হয়৷ আইরাত এসে হলরুমের সোফাতে ধুপ করে বসে পরে। যাক আব্রাহামের অফিসে গিয়ে ভালোই হয়েছে। আইরাত কিছু সময় নিজেকে দিতে পারছে আর এভাবে ঘুড়ে বেড়াতে পারছে। নয়তো আব্রাহাম তো তাকে নিজের কাছ থেকে এক কদমও সরতে দিতো না। একদম লেগে থাকতো গ্লু এর মতো। এটা ভেবেই আইরাত মনে মনে মনকলা খাচ্ছিলো তখন ইলা আসে।

ইলা;; হলো তোর ঘুড়াঘুড়ি?

আইরাত;; হ্যাঁ আজকের মতো এইটুকুই।

ইলা;; আমার কোন মেয়ে ছিলো না শুধু একটা ছেলেই ছিলো। তা আব্রাহামের বাবা। আব্রাহামের বাবা কে বিয়ে করিয়ে আমি যেনো নিজের ঘরে ছেলের বউ না নিজের মেয়ে কেই এনেছিলাম। তবে একটা সময় সবাই ছেড়ে চলে গেলো। আমার বাঁচার শেষ অবলম্বন হিসেবে রেখে গেলো আব্রাহাম কে। জানিস আমার না খুব শখ ছিলো যে আমারও একটা ফুটফুটে সুন্দর চঞ্চলমুখর মেয়ে বা নাতনি থাকবে যে এভাবেই তোর মতো করে সারা বাড়ি কে মাতিয়ে রাখবে বা সারাবাড়িতে এভাবে টইটই করে ঘুড়বে। যাক অবশেষে তুই এলি আর আমার মনের ইচ্ছেও পূর্ণ হলো।

বেশি না মাত্র আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই বাইরে থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ পাওয়া যায়। কিছুক্ষন পর নিজের ভারি ভারি কদম ফেলে আব্রাহাম ভেতরে আসে। আইরাত ঘড়ির দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল..!

আইরাত;; আপনি এতো তাড়াতাড়ি যে?

আব্রাহাম;; কি করবো বলো তোমাকে ছাড়া একদম ভালো লাগে না তাই ছুটে আসলাম।

আইরাত;; কেনো এলেন? (মুখ ভেটকিয়ে দিয়ে)

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; না মানে কিছু না কিছু না।

আব্রাহাম;; আই মিস ইউউউউউউউ।

আব্রাহাম সোজা আইরাত কে জড়িয়ে ধরে সবার সামনেই। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে আব্রাহাম কে হাল্কা একটু ধাক্কা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

আইরাত;; করছেন কি? এতোগুলো সার্ভেন্ট আছে, দাদি আছে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো? আমার বউ, আমার জিনিস, আমার সম্পত্তি, আমারই সব। আমি হাগ করবো কিস করবো যা খুশি করবো তাতে কার বাপের কি!

আইরাত;; হয়েছে থাক। আপনি তো দেখি সোজা রণক্ষেত্র বাধিয়ে দিবেন।

আব্রাহাম;; অবশ্যই। দরকার পরলে তাই করবো।
এখন আমার খিদে পেয়েছে, খেতে দাও নয়তো তোমাকে খেয়ে ফেলবো।

আইরাত দ্রুত আব্রহামের কাছ থেকে চলে এসে রান্নাঘরে চলে যায়।

ইলা;; কিরে?

আইরাত;; হ্যাঁ দাদি ওইতো আব্রাহাম এসে পরেছেন।

ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ তোরা গিয়ে টেবিলে বোস আমি আসছি। এই তোমরা সবাই যাও। (স্টাফ দের উদ্দেশ্যে)

আইরাতের আগে স্টাফ রা চলে যায়। গিয়েই টেবিলে সব খাবার গোছাতে লাগে। তখন আর হলরুমে আব্রাহাম ছিলো না। টেবিলে সব খাবার গোছানো শেষ।

ইলা;; কিরে আব্রাহাম কোথায়?

আইরাত;; উনি হয়তো রুমে গিয়েছেন?

ইলা;; ডেকে নিয়ে আয় যা।

আইরাত;; যাচ্ছি।

আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে রুমে চলে যায়। দরজা মেলে ভেতরে যায় কিন্তু সেখানে আব্রাহাম নেই। আশেপাশে উঁকি ঝুকি মেরেও দেখে আব্রাহাম নেই। তারপর চলে যায় করিডরে। নাহ, এখানেও নেই। কপালে হালকা কয়েক ভাজ এনে আবার রুমে আসতেই চোখে পরে আব্রাহাম কে। আব্রাহাম ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে মাত্রই বের হলো। গায়ে শুধু একটা সাদা টাওয়াল প্যাচানো। একদম স্নিগ্ধ শরীর। বুকে-পিঠে শিশির বিন্দুর মতো কিছু পানির ফোটা রয়েছে যা জ্বলজ্বল করছে। মাসাল”স গুলো আর বডি কেমন ফুলে ওঠেছে। চুলগুলো ভেজা। তা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে আসছে। আব্রাহাম কে এমন অবস্থায় দেখে তো আইরাতের কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয়ে গেলো। আইরাত একবার আব্রাহামের দিকে তাকায় আরেকবার নিজের দিকে তাকায়। আসলে আব্রাহাম ঠিকই বলেছে আইরাতের মতো দশ আইরাতও তার সাথে পেরে উঠবে না। যে বডি তাতে আসলেই পালোয়ান লাগে। লজ্জায় যেনো আইরাতের মাথা কাটা যাচ্ছে। দুহাত দিয়ে কপালের সামনে ঢেকে দ্রুত পা ফেলে রুম থেকে যেই না বের হতে যাবে তখনই আইরাতের ওরনা তে টান লাগে। পেছন ঘুড়ে দেখে আব্রাহাম ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে একহাত দিয়ে নিজের চুল ঝাড়ছে আরেক হাতে আইরাতের ওরনা ধরে রেখেছে।

আব্রাহাম;; কই যাও?

আইরাত;; ন না মানে ওইতো দাদি আপনাকে নিচে ডাকছে খেতে তাই আর কি। আমি এবার যাই।

এই বলেই আইরাত উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিবে তখন আব্রাহাম আইরাতের ওরনা ধরে হেচকা এক টান দিয়ে সোজা নিজের কাছে এনে পরে। দুইহাত দিয়া আইরাতের কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে আটকে নেয়। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।

আব্রাহাম;; চোখ খোল।

আইরাত;; ন ন না।

আব্রাহাম;; এই আমাকে দেখলেই এতো পালাই পালাই করো কেনো হ্যাঁ, সমস্যা কি? আমি বাঘ না ভাল্লুক!

আইরাত;; কসাই।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

আইরাত;; আপনার কি লজ্জা-শরম বলতে নেই! এভাবে কেউ খালি টাওয়াল পরে বাইরে আসে।

আব্রাহাম;; না নেই। তোমার সামনে আমার লজ্জা-শরম কিছুটা কমই।

আইরাত;; প্লিজ ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ইউ আর ব্লাশিং! আহা আমার লজ্জাবতী।

আইরাত;; আমাকে প্লিজ ছাড়ুন আর রেডি হয়ে নিচে খেতে চলুন।

আব্রাহাম;; আমার তো এখন অন্য কিছু খেতে মন চাইছে।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে তার চোখ গুলো আইরাতের ঠোঁটজোড়ার দিকে স্থির। আব্রাহাম ক্রমশ আইরাতের দিকে এগোতে লাগে। যেই না চুমু দিতে যাবে তখনই আইরাত তার ঠোঁট দুটো গুটিয়ে নিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম মুচকি হাসে। আইরাত কে ঘুড়িয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামের বডিতে থাকা পানিতে আইরাতের জামা হালকা ফুলকা ভিজে গেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুজনেই। আইরাত কে পেছন থেকে নিজের বাহুডরে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আব্রাহাম। আইরাতের কাধে নিজের থুতনি রেখে দিয়ে মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ধরে কিছুটা।

আইরাত;; আমি নিচে যাবো।

আব্রাহাম;; আমার সাথে যাবা।

আইরাত;; না না নিচে দাদি একা বসে আছে আমি যাই দেখি।

আব্রাহাম;; আরে ওখানে অনেক স্টাফ রা আছে। তোমাকে ওগুলো সামলাতে হবে না তুমি বরং তোমার জামাই কে সামলাও।

আইরাত;; সামলানোর কি আছে আপনি কি ছোট বাচ্চা নাকি?

আব্রাহাম;; মিসেস. বকবক যাও আর কাবার্ড থেকে আমার জন্য শার্ট বের করে নিয়ে আসো।

আইরাত;; আপনি কোনটা পরবেন তা আমি কি করে দিবো!

আব্রাহাম;; তোমার যা ইচ্ছে।

আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিলে আইরাত কাবার্ডের সামনে গিয়ে নখ খেতে লাগে। তারপর মনে পরলো যে আব্রাহাম বেশির ভাগই সাদা-কালো ড্রেসাপ পরে। তাই একটা কালো কালারের শার্ট বের করে দিলো। আব্রাহাম কালো শার্ট, হাতে একটা কালো ঘড়ি পরে নেয়। শার্টের হাতা গুলো গুটিয়ে নেয়। ব্যাস সিম্পল। সাথে চাপদাড়ি, ফুটেছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনই আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক চোখ মেরে দেয়।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখো?

আইরাত;; আমি কি দেখবো অন্য মেয়েরাই আপনাকে দেখে কূল-কিনারা পায় না, হাহ।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল, আর ইউ জ্যালাস?

আইরাত;; আমাকে কি গরম কড়াই মনে হয় যে জ্যালাস হবো! যান যান এভাবে আরো বাইরে মানুষ দেখুক আপনাকে আর ক্রাশ বাঁশ খাক।

আব্রাহাম;; কিছু একটা জ্বলে-পুড়ে ছাই হওয়ার গন্ধ বের হয়েছে তাই না!

আইরাত;; খবিশ।

এই কথা বলেই আইরাত এক ঝটকা মেরে রুম থেকে এসে পরে। আর আব্রাহাম হেসে দেয়। আব্রাহাম কে বরাবরই সুন্দর লাগে সবসময়ই। তবে আইরাতও কিন্তু কম মিষ্টি না। দারুন দেখতে। তবে তফাৎ এটাই যে ছেলেরা তার দিকে তাকানোর সাহস পায় না। আব্রাহামের দিকে তাকায় তবে তার বিপরীতে আইরাত কিছু বলে না। কিন্তু আব্রাহাম চায় যে আইরাত কিছু বলুক। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই তাকে জ্যালাস ফিল করাতে চাচ্ছে। যেনো আইরাত নিজে থেকেই মুখ ফুটে আব্রাহাম কে বলে ‘ভালোবাসি’। আব্রাহামের ওপর নিজের অধিকার খাটাক। আব্রাহাম খুব করে চায় যে আইরাত তার ওপর দাবি করে বলে ‘আব্রাহাম আপনি শুধু আমার’। তবে তার জন্য আব্রাহামের একটু খড়-কাঠ পোড়াতে হবে। আইরাতের নিচে চলে যাওয়ার কিছু সময় পর আব্রাহাম এসে আইরাতের পাশেই টেবিলে বসে পরে। ইলা এক এক করে প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আইরাত যেই না খাওয়া শুরু করবে তখনই আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; স্টোপ।

ইলা;; কি করছিস তুই! মেয়ে টাকে খেতে দে।

আব্রাহাম;; তাহলে আমাকে খাইয়ে দিবে কে?

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; খাইয়ে দাও।

আইরাত;; মানে কি! আপনি নিজে খা….

আব্রাহাম এক রাগি লুক আইরাতের দিকে নিক্ষেপ করে। ফলে বাকি কথাটুকু আইরাতের মুখে এসেও আবার ঘুরে যায়। ইলা নিজের খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে হালকা হেসে ওঠে। আইরাত ইলার দিকে তাকায়। আব্রাহাম তা বুঝতে পারে।

আব্রাহাম;; আমি এমনই। এখন খাইয়ে দাও।

আর কোন উপায় নেই। আইরাত নিজেই কখনো নিজের হাত দিয়ে খেয়েছে কিনা সন্দেহ সবসময় অনামিকা তাকে খাইয়ে দিতো আর এখন কিনা তাকেই আব্রাহাম কে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। কি আর করার কিছুটা বিরক্তি নিয়েই আব্রাহাম কে খাইয়ে দিচ্ছে। আর আব্রাহাম তো চুপ করে বসে থাকার মতো ছেলে মোটেও না। তাই পা দিয়ে ইচ্ছে মতো আইরাতের পায়ে সুরসুরি কাটছে। টেবিলের নিচ দিয়ে আইরাতের কোমড়ে থেকে থেকে গুতো দিচ্ছে আর আইরাত এমন এক পরিস্থিতি তে পরেছে যে না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। এভাবেই সেই সময়টুকু পার হয়ে যায়।

বিকেলের সময় গড়িয়ে এলে আব্রাহাম-আইরাত রেডি হয়ে ইলা কে বলা বাইরে চলে যায়। আব্রাহামের পাশের সীটেই আইরাত বসে রয়েছে।

আইরাত;; আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আব্রাহাম;; শাশুড়ী আম্মুর কাছে।

আইরাত খুশিতে গদগদ হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; সত্যিইইইইইই!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ জানপাখি।

আইরাত;; থাংকু থাংকু থাংকুউউউউ।

আব্রাহাম মুচকি হাসে।

গাড়ি এসে থামে সোজা আইরাতের বাসার সামনে। আইরাত তো হুড়মুড় করে গাড়ি থেকে নেমে পরেছে। দৌড়ে ভেতরে চলে যেতে ধরেও একবার থেমে যায়। আব্রাহামের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।

আইরাত;; আপনি ভেতরে যাবেন না?

আব্রাহাম;; আব…না আসলে। আমার এখান থেকে কাজে যেতে হবে একটু। তো তুমি যাও আর হ্যাঁ শাশুড়ী আম্মু কে আমার সালাম দিবে। সুন্দর করে থাকবে, বাদরামি একটু কম করবে বুঝলে। আমি নিজে তোমাকে নিতে আসবো।

আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত যেনো নাচতে নাচতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। আর আব্রাহামও গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আইরাত গিয়ে কয়েকবার কলিং বেল বাজাতেই অনামিকা এসে দরজা খুলে দেয়। তবে সে দরজা খুলে দেখে কেউই নেই। অনামিকা কপাল কুচকে আবার দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে যায়। ভেতরে হেটে আসতে না আসতেই আবারও আগের মতো দরজায় কলিং বেল বাজে। অনামিকা আবার গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে এবারও কেউই নেই। অনামিকা এবার আশেপাশে উঁকি দিয়ে দেখে তবুও কাউকে পায় না। তৃতীয় বারের মতো কলিং বেল বাজলে অনামিকার মেজাজ যায় চটে। ঠিক করে যে এবার খুঁজে বের করবে আর যেই হোক না কেনো আচ্ছা মতো ঝেড়ে দিবে। এইবার দরজা মেলে রাগি রুপ নিয়ে অনামিকা দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ড পরই ধিরিম করে এক লাফ দিয়ে দরজার পাশ থেকে আইরাত তার সামনে আসে। অনামিকা তো চমকে গিয়ে ছোট খাটো একটা চিৎকারই দিয়ে ওঠেছে। আইরাত হাসতে হাসতে শেষ। আর অনামিকা না চাইতেও হেসে দেয়।

অনামিকা;; এত্তো পরিমাণে শয়তানের হাড্ডি তুই।৷

আইরাত;; হিহিহিহিহি।

অনামিকা হাসির মাঝেই কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পরে। আইরাত কে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।

আইরাত;; আই মিস ইউ মা।

অনামিকা;; হ্যাঁ আমার ঘর ফাকা করে চলে গিয়ে এখন বলো মিস ইউ।

আইরাত;; আরে তেমন না।

অনামিকা;; তুই একা? আব্রাহাম কোথায়?

আইরাত;; ও আসে নি বুঝলে ওর একটু কাজ আছে তো তাই।

অনামিকা;; এমন কেনো তুই। বাড়ির জামাই কে বাড়ি নিয়ে আসবি না। আর আসার আগে যদি একটা বার আমাকে ফোন করে জানাতি।

আইরাত;; এহহহহহহহহহ বাড়ির জামাই কে বাড়ি নিয়ে আসবি না (বেঙ্গ করে) হয়েছে রাখো। ভেতরে চলো। হয়তো একটু পরেই এসেই বলবে “আইরাত বেবিগার্ল চলো”।

তারা ভেতরে চলে যায় কথা বলতে বলতে।

অনামিকা;; আজই চলে যাবি?

আইরাত;; বললো তো যে নিতে আসবে।

অনামিকা;; আচ্ছা তো বাসায় সবাই কেমন আছে? কি অদ্ভুত তাই না! আব্রাহামের বাসায় কে কে আছে আমি তাই জানিনা।

আইরাত;; আমি জানি সবই যে তুমি কিছুই জানো না।

অনামিকা;; তো কে কে আছে?

আইরাত;; কেউ নেই। আব্রাহামের বাবা-মা নেই। শুধু আছে একটা দাদি। মা বিশ্বাস করবে না আমি আমার পুরো জীবনে এতো রসিক মানুষ দেখি নি। পানের পাগল। সারাদিন পানের বাটা নিয়ে বসে থাকে। মোটা সোটা বুঝলে এত্তো কিউট। আমি বলতে পাগল। ব্যাস এইতো সারাদিন আমি আর দাদি। আর বাসায় এতো গুলো স্টাফ। আব্রাহাম অফিসে যায় যদিও বেশি দরকার পরলে তাছাড়া না।

অনামিকা;; তুই খুশি তো?

আইরাত অনামিকার দিকে তাকায়।

আইরাত;; এর উত্তর আমি জানি না। আমি শুধু জানি যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে।

অনামিকা;; জানিস সাবিলা আমার সাথে বিয়ে ভাঙার সেইদিনের পর থেকে আর কথা বলে না।

আইরাত;; না বলা টাই স্বাভাবিক। সব দোষ আমার।

অনামিকা;; আরে নাহ। আমার তোর ওপর বিয়ে নিয়ে এতো টা প্রেসার দেওয়াই উচিত হয় নি। কিন্তু কে জানতো জামাই বাবাজ্বি এমনভাবে এন্ট্রি করবে।

এই বলেই সাবিলা হেসে উড়িয়ে দেয়। আর আইরাতের রাগও হচ্ছে আর হাসিও পাচ্ছে।

আইরাত;; তো আগে তো খুব বলতে যে তোকে একবার বিয়ে দিয়ে জামাই বাড়ি পাঠিয়ে দেই তারপর আমি আরামছে থাকবো। এখন কেমন ফিল করছো অনামিকা জানু?

অনামিকা;; আরে হারামি।

আইরাত;; না না আসলেই বলো। আমাকে মিস করো না?

অনামিকা;; নাহ।

আইরাত;; এইটা কোন কথা?

অনামিকা;; এইটাই কথা। আচ্ছা শোন।

আইরাত;; বলো।

অনামিকা;; এই তুই কি দিয়া, অবনি তারপর তৌফিক এদের বলেছিলি যে বিয়ে হয়ে গেছে তোর?

আইরাত;; না বলি নি। আসলে সিচুয়েশন টাই এমন ছিলো। তবে এখন কি করে বলবো ভাবছি। কারণ কপালে শনি লাগিয়ে দিবে তিনজনই।

অনামিকা;; বুঝিয়ে বল। এই শোন এক কাজ কর ওদের তিনজন কে এখানে ডেকে নিয়ে আয়। মানে বাসায় আর কি বাইরে দেখা করার দরকার নেই। তুইও এসেছিস ওদেরও ডেকে আন।

আইরাত;; আসলে গুড আইডিয়া।

অনামিকা;; আমি যাই।

আইরাত;; আরে কোথায় যাও?

অনামিকা;; রান্না বসাই। তারছিড়া মেয়ে তুই আসবি আগে বললেই হতো।

আইরাত;; তাই বলে তুমি আমারে তারছিড়া বানাই দিলা 🙂!

অনামিকা হাসতে হাসতে কিচেনে চলে যায়। আর ওদিকে আইরাত এক একটাকে ফোন করে। প্রথমে দিয়া কে ফোন দিতে যাবে তখনই আব্রাহাম আইরাতকে ফোন করে বসে। আইরাত ফোনেই আব্রাহামের নাম্বারের সামনে নিজের ৩২ টা দাঁত ভেঙিয়ে দেয় তারপর রিসিভ করে।





চলবে~~



চলবে~ ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here