নেশা💞
Season 2
Ayusha Akter Usha
“”7″”
লেকের দিক থেকে কতগুলো জ্বোনাকি পোকা তার দিকে ধেয়ে আসছে।কুয়াশা চোখ বড় বড় করে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।জ্বোনাকি গুলো কুয়াশার কাছে এসে তার চারিদিকে উড়তে লাগল।কিছু কিছু জ্বোনাকি তার গা ছুয়ে যাচ্ছে।কুয়াশা মুগ্ধ নয়নে সেগুলোকে অনুভব করছে।এর আগে সে কখনোই এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর স্বীকার হয় নি।সে সবকিছু ভুলে জ্বোনাকি পোকার সাথে মেতে উঠল।এভাবে কতক্ষণ তাঁদের উপভোগ করেছে জানে না তবে যখন জ্বোনাকিরা উড়তে উড়তে চলে গেল অন্য এক দিশায় তখন তার হুঁশ হলো।ততক্ষণে লাইট ও জ্বলে উঠল।হঠাৎ ই কেউ একজন এসে কুয়াশার পেছন থেকে তার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে নিল।কুয়াশার আর বুঝতে বাকি রইল না মানুষ টা কে।সম্রাট কুয়াশার চোখ ধরে হাটতে লাগল।
-আমি কখনও ভাবিনি কেউ আমার জীবনে এইভাবে এসে আমার জীবন আলোয় ভরিয়ে দেবে।ভালোবাসার সত্যাকারের মানে শেখাবে।
কুয়াশা মনোযোগ দিয়ে সম্রাটের কথা গুলো শুনছে।সম্রাট আবার বলতে লাগল
-ডেড আমাকে অনেক আগে থেকেই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল।অনেক মেয়ের ছবি এনে আমাকে দেখানোর চেষ্টা করছিল।বাট পরে আমার একেকটা হুংকার শুনে পিছিয়ে যেত।সেদিন ও একই ভাবে ডেড আমাকে বিয়ের কথা বলতে এসেছিল আর আমি বারন করে দিয়েছিলাম সাথে এটাও বলেছিলাম যদি আর কোনোদিন আমাকে বিয়ের করার জন্য কোনো কথা বলে তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।সেদিন ও ডেড দমে গিয়ে চলে গিয়েছিল।এরপর থেকে আর কখনো আমাকে বিয়ের কথা বলেনি।একদিন আমি ডেডের রুম থেকে জরুরি ফাইল আনতে গিয়ে ড্রয়ারে থাকা একটা ছবির দিকে আমার চোখ আটকে যায়।ছবিটা হাতে নিয়ে দেখি একটা মেয়ে দান বক্স হাতে নিয়ে অনেক গুলো বাচ্চার সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।তার মুখে এক অদ্ভুদ মায়া।আমি ছবিটা টেবিলের ওপর রেখেই নিজের অজান্তেই বেরিয়ে পরলাম ছবির পেছনে থাকা আশ্রমের ঠিকানা।রাত সাড়ে এগারোটা।সবাই নতুন বছরের আগমনে আনন্দে মেতে উঠেছে।আশ্রমের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমি ভেতরে গেলাম।আশ্রম খুব সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে।বিভিন্ন ভাবে সাজানো হয়েছে।চারপাশে সবাই আনন্দে উৎফুল্ল।এমন সময় আমার চোখ যায় একটা মেয়ের দিকে।লাল শাড়ি পড়া।খোলা চুল হাও ভর্তি লাল চুরির ঝুনঝুন শব্দ তার ঠোঁটে এক মিষ্টি মায়াবি হাসি।চোখ গুলো কালো কাপড়ে বাধা।লাইটিং য়ের আলোয় মেয়েটার মুখে যেন পৃথিবীর সব মায়ে এসে জমা হয়েছে।হাত বাড়িয়ে কানামাছি খেলছে ছোট বাচ্চাদের সাথে।আমি মুগ্ধ নয়নে সেই মায়াবী টাকেই দেখছি।ওই সময় আমার কাছে সবকিছু থেমে গিয়েছিল।আমার চোখ মেয়েটার খোলা চুল আর হাসিটার মাঝেই আটকে গিয়েছিল।এমন সময় চারিদিকে বাজি ফুটতে লাগল।চারিদিকে রমরম করতে লাগল হ্যাপি নিউ ইয়ারের শব্দে।তখনি মেয়েটা চোখের বাঁধন খুলল।তার চোখ আকাশের ওই বাজির দিকে যেখানে লেখা হ্যাপি নিউ ইয়ার।আর আমার চোখ আটকে গেল তার ওই গোল গোল বড় দুটো চোখে।তার দুটো চোখ ছিল নেশায় ভরপুর।এক অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করছিল আমার মধ্যে।তার দিক থেকে চোখ ফেরানো দায় ছিল।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সবাই তাঁকে জড়িয়ে ধরে হ্যাপি নিউ ইয়ার উইশ করল।তাঁদের সাথে সেও ছোট বাচ্চা হয়ে গেল।এভাবে কতক্ষণ তাঁকে দেখেছিলাম জানিনা।যখন ও ওখান থেকে চলে গেল তখন আমার হুঁশ হলো।আমার মন অস্থির হয়ে গেল তাঁকে একটি বার দেখার জন্য।কিন্তু তার দেখা আর পেলাম না।কিন্তু আমার মন যে মান ছিল না।সে মূহুর্তে ই আমার নেশায় পরিনত হলো।তাকে আমার চাই এই ভাবনা টাই মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল।তখনই ডেডকে ফোন করে আশ্রমে আসতে বললাম।ডেড নিউ ইয়ার পার্টিতে ছিল।আমার কথায় সেখান থেকে ছুটে আসে আশ্রমে।গার্ডস দের কাজী ধরে আনতে পাঠাই।বিয়ে আমি তখন ই করব।কিন্তু বিয়ের জন্য তো বউ সাজাতে হয়।তাই আমি চললাম শপিং মলে।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি শপিং করব।তাইওখানকার সব শাড়ি কিনে নিলাম।আর বিয়ের বেনারসি ও।শাড়ি গুলো গার্ডসদের দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই আর বিয়ের সরঞ্জাম নিয়ে আশ্রমে আসি।তারপর বাবাকে সাথে নিয়ে আশ্রমের এমডির সাথে কথা বলি প্রথমে মেয়েটা বিয়েতে রাজী হলো এতে তার প্রতি আমার আকর্ষন আরো বেড়ে গেল।সম্রাটকে কেউ রিজেক্ট করতে পারে তা শুধু তার থেকেই জানা।কিন্তু কি হলো তাঁকে আমায় বিয়ে করতেই হলো।আর এখন আমার সেই নেশা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
বলেই কুয়াশার চোখ থেকে ধীরে ধীরে নিজের হাত সরিয়ে নিল।সাথে সাথেই বাজী ফুটতে লাগল।কুয়াশা অবাক হয়ে সেগুলো দেখছে।লেকের ওই পারে বাজী গুলো আকাশে গিয়ে একটা লেখায় পরিণত হলো।”I LOVE YOU KUASHA”
সাথে সাথেই অনেক গুলো হার্টশিপ বেলুন উড়ে এসে লেখাটার নিচে এক বড় সাইজের হার্টে পরিনত হলো।তার চারপাশে আগুন বেলুন উড়তে লাগল।কুয়াশা অবাক দৃষ্টিতে সেগুলো দেখছে।এর থেকে সুন্দর দৃশ্য যেন আর কিছু নেই।কুয়াশা সম্রাটের দিকে তাকাতেই দেখে সম্রাট তার সামনে হাত বাড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।কুয়াশার যেন অবাকের সীমা নেই।
-আই লাভ ইউ কুয়াশা।আমি জানি না কিভাবে মনের কথা জানাতে হয়।যেভাবে সঠিক মনে হলো সেভাবেই জানিয়ে দিলাম।তুমি আমার নেশায় পরিনত হয়েছে।যেই নেশায় একদিন না মাতাল হলে আমি ছন্নছাড়া হয়ে যাই।তুমি আমার সেই #নেশা।আমায় তোমাতে মাতাল হওয়ার সুযোগ দেবে?
কুয়াশা অবাঁকের চরম মাত্রায় পৌছে গেছে।সে কখনো ভাবেনি তার জীবনে এমন একটা দিন আসবে।সে যখন তিন মাস তখন নাকি তার মা তাঁকে আশ্রমে দিয়ে গিয়েছিল।আর বলেছিল তার জীবনে নাকি আপন বলতে কেউ নেই।তার মায়ের সাধ্য নেই তাঁকে মানুষ করার তাই তার আসল স্থান এই অনাথ আশ্রম।কিন্তু কুয়াশা কখনো ভাবেনি তার স্থান কারো বুকেও হতে পারে।কেউ তাঁকে এতোটাও ভালো বাসতে পারে।কুয়াশা চোখ ছলছল করে উঠল।তার মতো একটা সাধারন মেয়ে যার পরিচয় সে নিজেও জানে না তাঁকে সম্রাটের মতো একটা নামিদামি মানুষ এত ভালোবাসতে পারে।সে এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য তো।কুয়াশা ছলছল চোখে সম্রাটের হাতে হাত রাখল।সম্রাট এর অন্যহাতে থাকা রিং কুয়াশার রিং ফিঙ্গারে পরিয়ে দিল।তারপর সেই রিংয়ের ওপর একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কুয়াশা সাথে সাথে সম্রাটকে জড়িয়ে ধরল।
-এতো ভালোবাসেন আমায়।আমি আপনার এতো ভালোবাসার যোগ্য তো।
সম্রাট কুয়াশাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল
-ভালোবাসা যোগ্যতা দিয়ে হয় না মন দিয়ে হয়।শুধু একটু ভালোবাসো আমায়।আমি আমার সবটা উজার করে দেব তোমার মাঝে।
সম্রাটের কথা শুনে কুয়াশার চোখের বাধ ভেঙে গেল।সম্রাট তাকে আরো শক্ত করে ধরল।কিছুক্ষণ পর কুয়াশা কান্নার বেগ থামিয়ে সম্রাটের দিকে তাকালো।সম্রাট হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এই মানুষটাকে সে অচেনা বলে এতদিন নিজের থেকে দূরে রেখেছে।আজ তাঁদের সব দূরত্ব কুয়াশা নিজে দূর করবে।কুয়াশা সম্রাটের দুইগালে হাত রেখে উঁচু হয়ে তার ঠোঁট স্পর্শ করল।সম্রাটের অবাকের সীমা ছাড়িয়ে গেল।সে এতোটাও আশা করেনি।কুয়াশা নিজের থেকে তার কাছে এসেছে। সম্রাটের যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।কুয়াশা ধীরে ধীরে সম্রাটকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরল।এবার সম্রাট নিজেকে সামলে এক হাতে কুয়াশার কোমর জড়িয়ে অন্য হাতে কুয়াশার পেছনের চুল আকড়ে ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
।
কুয়াশাকে কোলে নিয়ে সম্রাট নিজের রুমে প্রবেশ করল।কুয়াশা রুম দেখে অবাক।তাঁদের রুম ঠিক তাঁদের বাসর রাতের মতো ডেকোরেট করা হয়েছে।
-সেদিন তো আমার রাত তুমি বেহুঁশ হয়ে নষ্ট করে দিয়েছিলে।আজ কিন্তু সেই সুযোগটাও পাবে না।
বলেই সম্রাট বাঁকা হেসে কুয়াশাকে বেডের উপর শুইয়ে দিল।কুয়াশা লজ্জায় মরে মরে।লজ্জায় সে সম্রাট বুকেই নিজের মুখ গুজল।সম্রাট কুয়াশার লজ্জা মাখা মুখ দেখে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না।কুয়াশার ঘাড়ে নিজের মুখ গুজল।সম্রাটের উষ্ণ তাপে কুয়াশা এলোমেলো হয়ে গেল।এক অন্য রকম অনুভুতি তে ভরে গেল তার মন।সম্রাট আজ তার নেশায় মাতাল হচ্ছে।আর সেই নেশায় সম্রাটের সাথে কুয়াশাও নেশাগ্রস্ত হচ্ছে।আজ দুজনে মেতে উঠেছে ভালোবাসার খেলায়।দুজনেই ভেসে চলেছে ভালোবাসার সাগরে।
t