নেশা ২ পর্ব ১০

নেশা💞
Season 2
Ayusha Akter Usha
“”10″”
সম্রাট গলায় টাই পেঁচিয়ে ধরে আছে।এটা নয় যে সম্রাট টাই পরতে পারে না।কিন্তু সবসময় কুয়াশাই তাঁকে টাই পরিয়ে দেব তাই আজো কুয়াশার অপেক্ষায় আছে।কুয়াশা বেডের উপর দুহাতে হাঁটু জড়িয়ে ধরে বসে আছে।আড়চোখে সম্রাটকে দেখছে অন্যসময় হলে হয়তো এতক্ষণে উঠে গিয়ে টাই পড়াতে শুরু করত।কিন্তু আজ হাজারো দ্বীধা কাজ করছে তার ভেতর।কুয়াশার কোনো মুভমেন্ট না দেখে সম্রাট রেগে টাই বেডের ওপর ছুড়ে মারল।কুয়াশার কাছে গিয়ে তার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলল
-কতদিন আর কতদিন আমার থেকে দূরে থাকবে তুমি।একদিন না একদিন আমার কাছেই আসতে হবে তোমাকে।আর কত অভিমান মনে জমিয়ে রাখবে।প্লিজ আমার সাথে একবার কথা বলো দেখ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কুয়াশা অন্যদিকে মুখ করে রয়েছে।তার এই ভাব দেখে সম্রাট চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কোন্ট্রল করল।সে বুঝতে পেড়ে গেছে এখন ওর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই।তাই কুয়াশা কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সম্রাট।যাওয়ার আগে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।সম্রাট এর যাওয়া দেখে কুয়াশার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগল।সম্রাটের এই রুপ ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।কাঁদতে কাঁদতেই তার মনে হলো কেউ তার দরজায় নক করছে।কুয়াশা চোখ মুছে বেড থেকে উঠে দাড়ালো।দরজা খুলে রায়হান ভেতরে এলো।রায়হান কে দেখেই কুয়াশা রেগে তার দিকে তেড়ে গেল।
-আপনি এতটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারেন।আপনিও আপনার ছেলের মতোই একজন খুনী তাই না।আপনিই আপনার ছেলেকে খুনী বানিয়েছেন রাইট।আমি আপনাদের কাউকে ছাড়বো না।আমি পুলিশকে সবকিছু জানিয়ে দেব।আমি আপনাদের যোগ্য শাস্তি দেব।পুলিশের সামনে আপনাদের এই কালো বিজনেস তুলে ধরব।
বলতে বলতে কুয়াশা কেঁদে দিল।
-কেন কেন করলেন এমনটা আপনি।কেন আপনাদের এই পাপী জীবনের সাথে আমার জীবন জড়িয়ে দিলেন।নিজের মেয়ে হলে কখনো এরকম টা করতে পারতেন।পারতেন নিজের মেয়ে কে কোনো খুনীর হাতে তুলে দিতে।আমি আপনার ছেলের বও বলে ভাববেন আমি আপনাদের ছাড় দেব।আমি সব কিছু পুলিশকে জানাবো।আপনাদের আমি জেলে দেব।
বলে কুয়াশা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল তখনই রায়হান বলে উঠল
-তোমার কি মনে হয় কুয়াশা পুলিশ আমাদের কিছু করতে পারবে।এতদিন ধরে এই কাজে লিপ্ত আছি কি আর এমনি এমনি।
ঠিকএ তো যদি পুলিশ ধরারই হতো তাহলে এতদিনে কি তাঁদের ধরত না।এখন তাহলে কি করবে কুয়াশা।
-কুয়াশা আমিও চাই এসব কালো বিজনেস থেকে নিজেকে সরাতে। সম্রাট কে সরাতে।কিন্তু সম্রাটকে এখান থেকে বের করা ওত সহজ নয়।আমি জানি তুমি সম্রাটকে ভালোবাসো।দয়া করে আমার সম্রাট কে তুমি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও কুয়াশা।ওকে ওই কাজ থেকে বের করে আনো।ও তোমাকে খুব ভালোবাসে।ভালোবাসার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে।ভালোবাসা মানুষকে পাল্টে দেয়।তুমি পারবে না তোমার ভালোবাসা দিয়ে সম্রাট কে ওই কালো দুনিয়া থেকে বের করে আনতে।
কুয়াশা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।যাই হোক না কেন এটা তো সত্যি যে ও সম্রাট কে ভালোবাসে।পালিয়েই বা কোথায় যাবে।সে যে সম্রাট কে ছাড়া অচল।সে সম্রাটের থেকে পালালেও সম্রাট এর সৃতি থেকে তো আর পালাতে পারে না।কি করবে এখন ও।কি করা উচিৎ তার।রায়হান কুয়াশা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।দরজা খোলাই রেখে গেল।কুয়াশা ওখানে ই থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।দুপুরে সম্রাট বাড়ি এসে রুমে ঢুকতে গিয়েই দেখে দরজা খোলা।তা দেখে সম্রাট তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে কুয়াশাকে দেখেই থমকে যায়।কুয়াশা মাত্রই গোসল করে বেরিয়ে এসেছে।ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝারছে।ভেজা চুল নীল রঙের শাড়িতে সম্রাট তার মায়াবতীকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য নিজের হার্টবীট মিস করল।সম্রাট এক ঘোর লেগে এলো।তার আর কোনো দিকে খেয়াল নেই।একটা নেশা কাজ করছে তার মধ্যে।নিজেকে আর আটকাতে পারলো না।হঠাৎ করেই সম্রাট কুয়াশার কাছে গিয়ে তার দু হাত দাওয়ালে চেপে ধরে কুয়াশা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।আকস্মিক ঘটনায় প্রথমে কুয়াশা ভয় পেয়ে গেল।পরক্ষনেই সম্রাটকে দেখে নিজেকে সামলে নিল।সম্রাটের ছোঁয়ায় কুয়াশার শরীর শিউরে উঠল।সম্রাট পাগলের মতো কুয়াশার ঠোটে গলায় ঘাড়ে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগল।তার ভালোবাসায় কুয়াশা ডুবে যেতে লাগল।হারাতে লাগল সম্রাটের মাঝেই।তখনি তার চোখে ভেসে উঠল সেদিনের ঘটনা।সম্রাট কিভাবে একটা মৃত মানুষের দেহ ছুড়ি আঘাত করে তার দেহ রক্তাক্ত করছিল।কথাটা মনে করতেই কুয়াশা সম্রাটকে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিল।আচমকা ধাক্কায় সম্রাট কিছুটা সরে গেল।ফ্যালফ্যাল করে কুয়াশার দিকে তাকালো।এটা কি করল ও।ও জানে এখনো কুয়াশা তাঁকে মেনে নিতে পারেনি।তার প্রয়োজন ছিল নিজেকে আটকানো।নিজেকে কোন্ট্রোল করা।সম্রাটের এখন নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করতে লাগল।এমন সময় সম্রাটকে অবাক করে দিয়ে কুয়াশা এসে দু হাতে সম্রাটের গাল ধরে চোখে চোখ রেখে বলল
-ভালোবাসি।খুব বেশিই ভালোবাসি।আপনার থেকে দূরে থাকতে পারবো না আমি।আপনার থেকে দূরে থাকার সাধ্য আমার নেই।
কুয়াশার কথা শুনে সম্রাটের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
-ছেড়ে দিন।এসব কাজ ছেড়ে দিন।ওই জীবন থেকে বেরিয়ে আসুন।আমি আপনি দুজনে একটা সুন্দর সংসার সাজাবো।যেখানে শুধু ভালোবাসাই ভালোবাসা থাকবে।আপনি আর আমি থাকবো।আমার জন্য আমাদের ভবিষ্যত এর জন্য ওই কাজ ছেড়ে দিন আপনি।প্লিজ।আমি আমার আগের স্বামি কে চাই।যে শুধু আমাকে ভালোবাসে।যাকে ঘিরে শুধুই আমি।যে আমার কেয়ার করে।
-আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি।আমি আজো তোমাকে ঠিক সেইভাবেই কেয়ার করি কুয়াশা।
-কিন্তু এখন এই কেয়ারিং টা আমার শুধু হিংস্রামি বলে মনে হয়।প্রতি মূহুর্তে ভয় হয় আমার।আমি এই ভয় নিয়ে বাঁচতে চাই না।আমি আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই প্লিজ এসব কাজ ছেড়ে দিন।
সম্রাট নিজের গাল থেকে কুয়াশার হাত সরিয়ে দিল।কুয়াশা অবাক হয়ে সম্রাট এর দিকে তাকালো। সম্রাট অন্যদিকে ঘুরে বলতে লাগল।
-আমি পারবো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু আমি আমার এই প্রোফেসন ছাড়তে পারবো না।এখান অব্দি আসার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।আমি পারবো না এই বিজনেস থেকে নিজেকে সরাতে সরি।বলেই সম্রাট রুম থেকে বেরিয়ে গেল।কুয়াশা আবার কাঁদতে লাগল।
-আপনি আমাকে ভালোবাসেননা।বাসেননা আপনি আমাকে ভালো।যদি বাসতেন তাহলে এইভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারতেননা।

সম্রাট এই মূহুর্তে একজনের দেহ গুলি দিয়ে রক্তাক্ত করে গিয়ে গাড়িতে বসল।যে তার কুয়াশা কে নিজের টার্গেট বানাতে চেয়েছিল আজ তাকেই শেষ করল।গোম্বুজের সাথে তার বিজনেসে শত্রুতা ছিল।কিন্তু ও সেদিন কুয়াশা কে কিডনেপ করে সম্রাটকে বসে আনতে চেয়েছিল।সেটাই খুব বড় ভুল ছিল তার।আর আজ সেই ভুলেরই মাশুল দিল সে।সম্রাট গাড়িতে বসে ল্যাপটপ বের করে সিসিটিভি ফুটেজ অন করল।কিন্তু তাতে যা দেখল তাতে সম্রাটের বিচলিত হয়ে গেল।এটা বাড়ির সিসি ফুটেজ ছিল।সম্রাট প্রায়ই বাইরে থাকলেও কুয়াশা কখন কি করে তার খবর রাখে।কিন্তু এ কি আজ সে স্পষ্ট দেখছে। কুয়াশা নিজে প্রত্যেকটা সিসি ক্যামেরা নষ্ট করছে।কুয়াশা সিসি ক্যামেরা নষ্ট করছে কেন।সম্রাট এর মনে ভয় যেকে বসল।সে গার্ডকে তাড়াতাড়ি গাড়ি বাড়িতে নিয়ে যেতে বলল।সম্রাটের মধ্যে চঞ্চলতা বাড়তে লাগল।গাড়ি বাড়ির ভেতর ঢুকতে ই সম্রাট দৌড়ে নিজের রুমে আসে।রুমের সবজায়গা খুজেও কুয়াশা কে পেল না সম্রাট।সম্রাট রুম থেকে বেরিয়ে পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজল কিন্তু কোথাও পেল না।অবশেষে সম্রাট রায়হানের রুমে গেল।
-ডেড কুয়াশা কোথায়।
-কুয়াশা কোথায় আমি কি করে জানবো।
-আমাকে মিথ্যে বল না আমি জানি তুমি কুয়াশা কে পালাতে সাহায্য করেছ।
-মানে।
-কুয়াশা জানত এই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা সেট করা আছে কিন্তু কোথায় কোথায় আছে সেটা শুধু তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানে না।তাহলে কুয়াশা কি করে জানলো এটা।আমাকে সত্যি করে বলো কুয়াশা কোথায়।
-হ্যা হ্যা আমি সাহায্য করেছি তাকে।তা নয়তো কি করত মেয়েটা।একটা খুনীর সাথে জীবন কাটাতো।মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।তার থেকে বরং ও ভালো থাকুক।তোমার থেকে দূরে গিয়ে যদি ও ভালো থাকে তাহলে সেটাই থাকুক মেয়েটা।ছেড়ে দে ওকে।ভুলে যা ওকে।
-পারবো না পারবো না আমি ওকে ভুলতে।আমি ওকে ভালোবাসি।ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে।ওকে আমি আমার থেকে দূরে যেতে দেবনা।কক্ষনো না।কুয়াশার যদি কোনো ক্ষতি হয় আমি সবকিছু ধ্বংস করে দেব।ধ্বংস করে দেব সবকিছু।
বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সম্রাট।আশ্রম বাসস্ট্যান্ড রেলওয়েস্টেসন এয়ারপোর্ট কোনো জায়গা বাদ রাখেনি কুয়াশা কে খুজতে।কিন্তু কোথাও কুয়াশা কে পেল।রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে কুয়াশার খোঁজে বেরিয়ে পরল সম্রাটের গার্ডসরা।কিন্তু কুয়াশার কোনো খোঁজ নেই।সম্রাটের বুক ফেটে যাচ্ছে।প্রতি মূহুর্তে মনে হচ্ছে সে কুয়াশা কে হারিয়ে ফেলেছে।কুয়াশা তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে।কুয়াশা কে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে মধ্যরাতে সম্রাট বাড়ি ফিরল।রুমে এসে বেডের উপর বসে দু হাতে নিজের মাথার চুল শক্ত করে চেপে ধরে বসে রইল।দুচোখ দিয়ে এক ফোঁটা দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরছে।কুয়াশা হারানোর ব্যাথায় কাতর হয়ে উঠেছে তার ভন।বুকের ভেতর টা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
to be continue….
দয়া করে গঠন মূলক কমেন্ট করুন💝💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here