নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-১৭
আদিব হাত বাড়ালেও রূপককে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে গলা পরিষ্কার করার ভঙ্গি করে বলল, “আদিব মাহমুদ”
রূপক বুঝতে পেরে চোখ নামিয়ে স্বাভাবিক হয়ে হাত মিলিয়ে বলল,” রেদোয়ান হাসান রূপক”
তারপর তিনজন বসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে সৃজা তাদের কে নাস্তা দিয়ে যায়।কথার মাঝে রূপকের বার বার মুমুকে দেখার ইচ্ছা করলেও প্রকাশ করেনি।এমনিতেই রূপকের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে সাথে রাগও হচ্ছে আদিবকে দেখে।হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,”আমাকে উঠতে হবে, আসলে একটু কাজ আছে।” বলেই উঠে দাড়ায় রূপক,মিমন আর আদিবও দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে। ঠিক তখনই প্রয়া এসে আদিবকে পাপা বলে ডেকে উঠে। আদিব মিষ্টি হেসে প্রয়াকে কোলে তুলে বলল,”কী হয়েছে আমার পরীটার?” প্রয়া আদিবের দিকে চেয়ে বলল,” তুমি তি সমিদদো ভাইয়ালও পাপা?” আদিব কিছু বুঝতে না পেরে মিমনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।
মিমন হেসে প্রয়াকে কোলে নিয়ে বলল,” না না মা এটা তো শুধু তোমার পাপা, আর সমৃদ্ধ ভাইয়ার পাপা তো আমি সোনা।” বলেই প্রয়ার কপালে চুমু খায়।আদিব মিমনের উত্তর শুনে নিরবে হেসে উঠে।
ফ্লোরে দুই হাতে হাটু মুড়ে মুখ নিচু করে বসে নিরবে কাঁদছে মুমু।সাইড টেবিলের কোণায় লেগে হাতে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।কিন্তু সে ব্যাথাতে কষ্ট হচ্ছে না মুমুর, কষ্ট হচ্ছে আদিবের আচরণের কথা ভেবে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।মুমু কিছুতেই বুঝতে পারছে না আদিব কেন বার বার ডিভোর্সের কথা বলছে। তার আদিব ভাইয়া তাকে এতো কেন কষ্ট দিচ্ছে?
“সৃজা তোকে কি ভাবি বলে ডাকতে হবে?” হেসে বলল আদিব।সৃজা মুমুর কাপড় গুলো আদিবের হাতে দিয়ে সিরিয়াস মুখ করে বলল,” অবশ্যই বলতে হবে,তোর বউয়ের বড় ভাবি তোর তো আমাকে সালাম করা উচিত।” আদিব সৃজার মাথায় টোকা দিয়ে বলল, “আগে তোর ননদকে সাইজ করি,তারপর তোকে দেখবো।” বলেই সৃজার চুলে টান দিয়ে বেরিয়ে যায় আদিব।সৃজা চিৎকার করে বলল, ” হারামি আমিও দেখে নেব তোকে।” অন্যদিকে সমৃদ্ধ তার মা ও ফুপাজি নামক লোকটার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, কি হচ্ছে?
আদিবের মাথা রাগে দপদপ করছে, চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।কিন্তু ফলাফল শূন্য, খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে।ঝনঝন শব্দে সামনে তাকাতেই আদিবের ভয়ানক রাগী চেহারা দেখে কেঁপে উঠে মুমু।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বেড সাইড টেবিলের সাথে আরো ঠেসে বসে কাঁপতে শুরু করে মুমু। আদিব মুমুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “খাসনি কেন?” মুমু ভয়ে কিছু বলতে পারলো না।আদিব উত্তর না পেয়ে মুমুকে ঝাকিয়ে চিৎকার করে বলল,”খাসনি কেন?” মুমু ভয়ে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।”তুমি আআমার সাথথে এএএমন….” আর কিছু বলার আগেই মুমু আদিবের বুকে ঢলে পড়ে।
মুমুকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে আদিব। দ্রুত মুমুকে চেক করে, ডান হাতের কাটা দেখে আবার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় আদিবের।এই মেয়ে এতো কেন জ্বালায় তাকে? কেন? রাগে দুঃখে চোখ টলটল করছে আদিবের।হাতে ব্যান্ডেজ করে চোখে মুখে পানি দেয়।মুমু পিটপিট করে চোখ খুলে আদিবের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। তারপর হরহর করে বলতে শুরু করে,”বিবিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিকিছুই করিনি, আমি তোমাকে ডিডিভোর্সও দিইনি সসত্যি বলছি।” বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মুমু।
আদিব কিছুক্ষণ মুমুর দিকে তাকিয়ে থেকে দুই হাতের তর্জনী দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।তারপর মুমুর কপালে অনেক সময় নিয়ে ভালোবাসার পরশ দেয়।মুমু আবেশে চোখ বন্ধ করতে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আদিব মুমুকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে হাতে জামা কাপড় দিয়ে বলল, ” জাস্ট ফাইভ মিনিটস”
মুমু নিজের কাপড় গুলো দেখে মনে মনে বিভিন্ন বিষয় ভেবেও কিছু বুঝতে পারলোনা।একগাদা প্রশ্ন নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদিব কিছু না বলে হাত ধরে রুম থেকে ডাইনিং এ নিয়ে আসে। এতক্ষণে মুমুর মনে হলো বাসাটা একদম তার বাসার মতো। এসব ভেবে সামনে তাকাতেই দেখে আদিব তার মুখের সামনে একনলা খাবার ধরে রেখেছে, দেখেই তার চোখ চিকচিক করে উঠে।এতো কেন ভালোবাসে রাগীটা? আদিব ইশারা করতেই মুমু খাবারটুকু মুখে পুড়ে নেয়।
সারা রুমের জিনিসপত্র চুরমার করে এক পা ভাজ করে ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে সিলিং এর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে রূপক। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে মাথার চুলের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছে।হাতের ব্যান্ডেজটা লাল হয়ে আছে, পা থেকেও রক্ত ঝরছে।বুকটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আবারও মুমুকে হারিয়ে ফেলল সে, তার হৃদ স্পন্দ হারিয়ে ফেলেছে।কি করবে সে? কিসের জন্য বেচে থাকবে সে?
মিসেস ইত্তেফাক হাসান অনেকক্ষণ হলো ছেলের রুমের সামনে দাড়িয়ে ডাকছেন।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে ঘাবড়ে গেছেন।কিছুক্ষণ আগে রুমের ভেতর থেকে প্রচন্ড ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসেন।ছেলেটার রাগ উঠলে সকল রাগের অবসান ঘটে জিনিসপত্রের উপর দিয়ে। কিন্তু আজ একটুও কথা বলছে না কেন? কি করবে ভেবে দৌড়ে ঘর থেকে চাবির ছড়িটা নিয়ে ছেলের ঘরের দরজা খুলেন।ভাঙচুর ডিঙিয়ে ছেলের কাছেই বিছানায় বসে আস্তে ডাকলো, “রূপক…” রূপক মায়ের কন্ঠ শুনে অসহায় দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে হুট করে মায়ের কোমড় পেচিয়ে ধরে কোলে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে।মিসেস ইত্তেফাক হাসান কি করবেন বুঝতে পারছেন না, ছেলেটা এভাবে কাঁদছে কেন? কিসের জন্য কষ্ট পাচ্ছে? তিনি কি ছেলেটার খেয়াল রাখতে পারেননি? এসব ভেবে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।
“ডিভোর্স পেপারে তোর সাইন আসলো কোথা থেকে?” অনেকটা রেগেই বলল আদিব।মুমু কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,” বিশ্বাস করো আমি সত্যি কিছু জানিনা।” বলেই মাথা নিচু করে রাখে।আদিব বিরক্ত হয়ে বলে উঠে, “কতবার বলেছি মাথা নিচু করে থাকবি না, তাকা আমার দিকে।” মুমু মাথা উঁচু করলেও টলটলে চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।”আর কথায় কথায় কাঁদিস কেন? তুই কি এখনো ছোট আছিস?এক বাচ্চার মা হয়েও তোর ফ্যাচফ্যাচানি বন্ধ হলো না!!” আদিবের কথায় মুমুর টলটলে চোখ এবার বন্যায় ফ্যালফ্যালে হয়ে গেল।
কলিংবেলের শব্দে আর কিছু না বলেই উঠে দাড়ায় আদিব, দরজা খুলে দেখে মিমনের কোলে প্রয়া ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে।প্রয়ার কান্না শুনে মুমু ছুটে আদিবের পিছনে এসে দাঁড়ায়। মুমুকে দেখে প্রয়া ঠোঁট ফুলিয়ে মাম মাম বলে হাত বাড়িয়ে দিল।মুমু ঝটপট প্রয়াকে কোলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বলল,”কি হয়েছে আমার মাম মাম সোনাটা কাঁদছে কেন?” মিমন হতাশ হয়ে বলল, “সমৃদ্ধ আবার ঝুটি খুলে দিয়েছে।”
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-১৮
প্রয়ার কান্না থামলেও সমৃদ্ধর কান্নার শব্দে মুমু মিমনকে জিজ্ঞেস করল,”ভাইয়া সমৃদ্ধ কাঁদছে কেন?”
-“প্রয়া হাতে কামড়ে দিয়েছে।”
মুমু দ্রুত নিজের এপার্টমেন্টে এসে সমৃদ্ধর কাছে বসে,পিচ পিচ মিমন আর আদিবও আসে।সৃজা সমৃদ্ধর হাতে বরফ দিচ্ছে। মুমুকে দেখতেই সমৃদ্ধ কেঁদে বলল,” ফুপি প্রয়া গল্পের মতো রাক্ষস হয়ে গেছে, দেখো আমাকে কামড়ে দিছে।” বলে হাত উঁচু করে দেখাই মুমুকে।বেশ জোরই কামড়ে দিয়েছে, অনেকটা দাগ হয়ে গেছে।মুমু দুঃখী মুখ করে বলল,”ইশশ, আমার বাবাটার অনেক লেগেছে দাড়াও ফুপি প্রয়াকে এখনই বকে দিচ্ছি।”
মুমু প্রয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,”মাম মাম ভাইয়াকে কামড় দিয়েছ কেন? ভাইয়া কাদছে তো সরি বলো যাও।” প্রয়াকে সমৃদ্ধর পাশে বসিয়ে দেয়।প্রয়া ভীষণ অপরাধী চেহারা করে বলল,”থলি ভাইয়া আল কলবো না।”
বাচ্চাদের শান্তিচুক্তির পরে তারা মরিয়ম বেগমের রুমে চলে যায়। আর আদিব উঠে মুমুর হাত ধরে সোজা নিজের এপার্টমেন্টের দিকে হাঁটা দেয়। মুমুকে বাচ্চাদের মতো হাত ধরে নিয়ে যাওয়া দেখে মিমন আর সৃজা নিরবে হাসতে শুরু করে।আদিব ওদের হাসি দেখে বলল,”ক্যালাচ্চিস কেন? আমার বউ আমার কাছে থাকবে এতে হাসির কি হলো,যত্তসব।” বলেই মুমুকে নিয়ে চলে আসে।অন্যদিকে মুমুতো লজ্জায় শেষ, ভাইয়ার সামনে থেকে এভাবে নিয়ে এসেছে।লজ্জায় তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
মুমুকে বিছানায় বসিয়ে চট করে মুমুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো আদিব।”ঘুমবো, যতক্ষন আমার ঘুম না হয় একচুলও নড়বি না এখান থেকে। বুঝলি? স্বামী সেবা কর।” মুমু অবাক হয়ে বলল,”হা?” আদিব কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,”হা না হ্যা, নিজ ইচ্ছায় আট বছরের বনবাস নিয়েছিলি এখন থেকে টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স আমার সেবা করবি।এটা তোর শাস্তি।” বলেই মুমুর কোমড় পেচিয়ে পেটে মুখ গুজে হালকা উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে আদিব।
আদিবের এমন ছোঁয়ায় শিহরণে কুঁকড়ে যায় মুমু।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”আ আদিব ভাভাইয়া,আআমার সুসুড়সুড়ি…. ” বাকি কথা বলার আগেই আদিব ফট করে উঠে বসে রাগী চোখে তাকায় মুমুর দিকে।মুমু ফাকা ঢোক গিলে মনে মনে নিজেকে হাজার রকম গালি দিল আদিবকে ভাইয়া ডাকার জন্য। আদিব কটকটে গলায় বলল,” কত শখ ছিল বউ নাম ধরে ডাকবে,ওগো শুনছো বলবে। তা না বউ আমার নামের সাথে আন্তর্জাতিক বিশেষণ যোগ করে ডাকে।” বলেই ধুপ করে আবার শুয়ে পড়ে মুমুর কোলে।হঠাৎই মুমুর পেট থেকে শাড়ী সরিয়ে পট করে একটা কামড় দেয় আদিব। মুমু আহ করতেই বলল,”আন্তর্জাতিক বিশেষণ যোগের শাস্তি।’ বলেই সোজা হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে আদিব।
রাতে না ঘুমোনোর কারণে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে যায় আদিব।আর মুমু পলকহীন ভাবে তার বরকে দেখতে থাকে। নেভি ব্লু কালারের টিশার্টে ভীষণ ফর্সা দেখাচ্ছে আদিবকে,গালভর্তি খোচাখোচা দাড়ি,লাল লাল ঠোঁট,কপালে এলোমেলো চুল।উফফ তার বরটা কি আগের থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে। মুখের খোচাখোচা দাড়ি গুলোতে হাত বুলিয়ে দেয় মুমু।ঠোঁটে চোখ পড়তেই তার ভয়ানক একটা ইচ্ছে জাগে।কিন্তু ইচ্ছেটা ধামাচাপা দিয়ে চুপিচুপি কপালে একটা চুমু খায় মুমু।
অনেকদিন পর সবাই একসাথে হওয়ায় সারা সন্ধ্যায় সবাই মিলে বেশ আড্ডা দিল।রাতে মুমু আর সৃজা মিলে আদিবের পছন্দের রান্না করে। ডিনার শেষে মিমন আর আদিব কিছু নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছিল আর প্রয়া আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে কোলের উপর দাঁড়িয়ে ছিল।সৃজা সমৃদ্ধকে ঘুম পাড়াতে গেছে তাই মুমু একাই টেবিল পরিষ্কার করে ড্রয়িংরুমের দিকে যায়।
” পাপা থাদে যাবো” আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে ভীষণ আদুরে ঢঙে বলছে প্রয়া।মুমুতো অবাক হয়ে গেছে, তার মেয়ে একদিনেই আদিবকে পাপা বলে ডাকছে।এমন ভাবে ডাকছে মনে হচ্ছে জন্ম থেকেই সে জানতো এটা তার পাপা।”এখন তো রাত হয়ে গেছে পরী আমরা কাল যাবো, ওকে?” বলে প্রয়ার নাকে একটা চুমু দেয় আদিব।হঠাৎ ফোন বাজতেই আদিব প্রয়াকে মুমুর কাছে দিয়ে বাইরে চলে যায়।
আদিব ফোন রিসিভ করেই গমগমে গলায় বলল,” হ্যা তরুণ কিছু জানতে পারলি?”
-“তেমন কিছুই জানতে পারিনি, অনেক আগের ঘটনা এতো সহজে কিছু পাওয়া যাবে না।”
-“ভালো করে খবর নে অবশ্যই কিছু না কিছু পাওয়া যাবে।”
-” আমি চেষ্টা করছি তবে তেমন কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না।তুই চিন্তা করিস না আমি দেখি কি করা যায়।”
আরো অনেক সময় ধরে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।কিছু একটা মনে পড়তেই নিজের রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আদিব।
কাজ করতে করতে অনেকটা সময় পরে আদিব ঘড়ির দিকে তাকায়, বেশ রাত হয়ে গেছে।ল্যাপটপ টা বন্ধ করে প্রয়া আর মুমুর রুমের দিকে যায়।
– বাহ মা মেয়ে দুজনেই ঘুম, আমার খবর নেওয়ারও দরকার হয়নি।ভেবেই ফত করে একটা নিশ্বাস নেয় আদিব।তারপর বাতি নিভিয়ে মুমুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ডুবিয়ে শুয়ে পড়ে।
সকালে আদিবের ঘুম ভাঙলো প্রয়ার টুপটুপ করে চুমু খাওয়ার তোড়ে।মুমু তার ডান বাহুতে আরামসে ঘুমচ্ছে আর প্রয়া মাঝখান থেকে আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে টুপটাপ করে নাকে চুমু খাচ্ছে।আদিব তাকাতেই নিয়মমাফিক ভুবন ভোলানো হাসি দিল যার অর্থ সে ছাদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মুমু ঘুম ভেঙে দেখে কেউ নেই, সব রুম খুঁজে কাউকে না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে মেইন ডোরের সামনে দাড়িয়ে ভাবতে থাকে নিজের এপার্টমেন্টে যাবে কিনা।আদিব কি রাগ করবে ভেবে প্রায় দশ মিনিট পরে নিজের এপার্টমেন্টের দরজা নক করে। দরজা খুলে টুনি মুচকি মুচকি হেসে চলে যায়। মুমু হাসির কি হলো বুঝতে না পরে বোকা বোকা মনে সামনে আগাতেই দেখে আদিব,প্রয়া আর সমৃদ্ধ গভীর মনোযোগ দিয়ে হানি বানি কার্টুন দেখছে।আদিব একবার তার দিকে তাকিয়ে এমন একটা ভাব করলো মনে হচ্ছে সে মুমুকে চিনেই না। মুমু ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মায়ের কাছে যায়।
নাস্তা শেষে মুমু অনেকক্ষণ ধরে আদিবের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আদিব তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।এবার তার কান্না পাচ্ছে, ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সে কি করেছে যে তার সাথে কথায় বলছে না।
রূপক সকাল আটটা থেকে মুমুর ভার্সিটির সামনে এসে গাড়িতে বসে আছে। বিগত দেড় বছর যাবত সে প্রতিদিনই এখানে আসে শুধুমাত্র মুমুকে একপলক দেখার জন্য।শুধুমাত্র মুমুর জন্য অনেক চেষ্টা করে এখানে ট্রান্সফার নিয়েছে রূপক।দুইদিন যাবত মুমুকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে ভীষণ এলোমেলো লাগছে। দু’ঘন্টা যাবত বসে থেকেও মুমুর দেখা না পেয়ে রূপকের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করতেই একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
অনেকক্ষণ ধরে মুমুকে দেখতে না পেয়ে আদিব সৃজাকে বলল,”তোর মাথামোটা ননদটা কই?” সৃজা মিমনের মাথায় তেল ম্যাসেজ করতে করতে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,” তোর বউ কোথায় আমি কি করে জানবো!” আদিব উঠে মুমুর রুমের দিকে যেতে যেতে বলল,”তা জানবি কি করে সারাদিন তো বরের সাথে চিপকিয়ে থাকিস, বেশরম! তা ননদটা কে তো কিছু শেখাতে পারিস।” সৃজা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিব মুমুর রুমে চলে যায়।
চলবে
চলবে