নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-২১
মুমুকে অস্বাভাবিকভাবে বসে পড়তে দেখে আদিব প্রথমে অবাক হলেও হঠাৎই মনে হলো মুমু অসুস্থ হয়ে যায়নি তো? ভেবেই তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে মুমুর কাছে আসে। মুমুকে ধরতেই বুঝতে পারে মুমু প্রচন্ড কাপছে।আদিব অস্থির হয়ে বলল,
-” মুমু, এই মুমু? কি হয়েছে, এতো কাঁপছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
-” আ আদি…,ওই লোলোকটা…।”
মুমু আদিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট ভাবে কেঁদে কেঁদে কোনরকম কথাটা বলে।ততক্ষণে আশেপাশের অনেকে এসে দাঁড়িয়েছে।আদিব মুমুর কথা কিছু বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি মুমুকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে আসে। একটা মেয়ে হয়তো মুমুর স্টুডেন্ট সে মুমুর ফোন আর ব্যাগপত্র পৌঁছে দেয়।গাড়িতে বসে মুমু আদিবকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে সাথে প্রচন্ড কাপছে।
আদিবের মাথায় কিছু ঢুকছে না হঠাৎ কি হলো যে মুমু এভাবে কাঁদছে আর কাঁপছেই বা কেন? আদিব মুমুকে শান্ত করার জন্য নিজেও জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ পর মুমুর হাতের বাধন আলগা হতেই আদিব বুঝতে পারে মুমু অবচেতন হয়ে গেছে।
ডাক্তার বলেছেন হঠাৎ কোন মানসিক চাপের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে মুমু। কিন্তু সকাল থেকে তো মুমুকে বেশ সতেজ দেখাচ্ছিল।কি এমন হলো যে এতোটা প্যানিক হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছে না আদিব।তরুণ ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে আদিব এখনো মুমুর কাছে বসে গম্ভীর হয়ে কোন কিছু ভাবছে।তরুণ আদিবের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
-“টেনশন করিস না ডক্টর তো বলল কিছুক্ষণ ঘুমলে ঠিক হয়ে যাবে।”
আদিব তরুণের কথা না শুনেই হঠাৎ করে কিছু খোঁজা শুরু করে।মুমুর ফোন নিয়ে ওপেন করতেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় আদিবের।রাগে মাথা দপদপ করছে, হাতের ফোন টা ছুড়ে ফেলে দেয়। পাশে থাকা টেবিল টাতে জোরে লাথি দেয়। আদিবের রণমুর্তি দেখে তরুণ দ্রুত ওকে থামিয়ে বলল,
-” পাগল হয়ে গেছিস,কি করছিস তুই? ”
তরুণের কথা শুনে আদিব কিছু না বলে দ্রুত আবার মুমুর ডিসপ্লে ভাঙা ফোন টা হাতে নিয়ে তরুণের সামনে ধরে বলল,
-“তরুণ ট্রেস দিস নাম্বার, আই নিড ইচ এন্ড এভ্রি ডিটেইলস এবাউট দিস নাম্বার এন্ড দ্যা ওনার।”
সন্ধ্যার দিকে মুমু জেগে ওঠে, বিছানার পাশে তাকাতেই দেখতে পাই আদিব তার পাশে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু করছে।সকালের কথা মনে হতেই মুমু অস্থির হয়ে উঠে আদিবকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরায় আদিব চমকে গেলেও নিজেকে সামলে ল্যাপটপ টা পাশের টেবিল রাখে।তারপর মুমুকে কোলে বসিয়ে নিজেও জড়িয়ে ধরে মাথার পাশে একটা চুমু খেয়ে বলল,
-” কিচ্ছু হয়নি মুমুসোনা, এই দেখ আমি তোর পাশেই আছি। কিচ্ছু হয়নি, কান্না করে না পাখিটা আমার।চোখ খোল তাকা আমার দিকে।”
আদিবের কথা শুনে মুমু আরো শক্ত করে করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে।কোনরকম বলল,
-” তু তুমি চলে যাও আদি, তুমি আবার চলে যাও।ওওই লোকটা তোমাকে আবার….।” বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।
আদিব অনেকক্ষণ যাবত মুমুকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও মুমু একভাবে কেদেই চলেছে আর আদিবকে চলে যেতে বলছে।এভাবে কাঁদতে থাকলে অারো অসুস্থ হয়ে যাবে।তাই আদিব জোর করে নিজের থেকে মুমুকে ছাড়িয়ে রেগে ধমক দিয়ে বলল,
-“চুপ, একদম চুপ। আর একটু কান্নার আওয়াজ হলে খুন করে ফেলবো।”
আদিবের ধমকে ভয়ে কেঁপে উঠে মুমু। কান্না থামানোর চেষ্টা করেও কোনো কাজ হলো না তাই মাথা নিচু করে হেঁচকি তুলে নিরবে কাঁদছে মুমু।আদিব মুমুর মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,
-” প্রয়া কান্নাকাটি করবে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে।আর বোকার মতো কাঁদছিস কেন? আমি কি মরে গেছি?
আদিবের কথা শুনে মুমু আবার ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।আদিব মুমুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আমি আছি তো মুমুপাখি, কিচ্ছু হবে না সব ঠিক করে দিব।”
আদিবের রাগে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।সামনে থাকা ছেলে টাকে আরো দু’চার টা থাপ্পড় দিতেই তরুণ এসে থামিয়ে দেয়।আদিবকে টেনে সামনের চেয়ারে বসিয়ে বলল,
-” ওর মতো ছিচকে চোর এতো বড় ব্লান্ডার করতে পারবে না, আর ওতো বললোই সিম টা ছয় মাস আগেই ও হারিয়ে ফেলেছে।”
-” আদিব কাজটা যে করছে খুবই তীক্ষ্ণ ও চতুর বুদ্ধির।আর সিমটা আজই ইউজ করে আজই ফেলে দিয়েছে যার কারণে আমরা লোকেশান ট্রেস করতে পারছি না।”
আদিবের কিছুই শুনতে ইচ্ছে করছে না, ওর মাথায় একটা কথায় ঘুরছে কে এমন নোংরা খেলা খেলছে মুমুর সাথে? মুমুর কথা মনে হতেই ঘড়ি দেখে ফট করে উঠে দাড়ায় আদিব। তরুণের ফোন পেয়ে,আসার সময় আদিবকে কিছুতেই বের হতে দিচ্ছিল না মুমু।মুমুকে কোনরকম বুঝিয়ে শাশুড়ীকে বলে এসেছে, লেইট হলে অস্থির হয়ে যাবে। তরুণের দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওকে ছেড়ে দে, আর যাকে যাকে সন্দেহ করছিস তাদের পিছনে টুয়েন্টি ফোর আয়ার্স লোক লাগিয়ে দে।” বলেই বেরিয়ে যায় আদিব।
একসপ্তাহ হলো মুমু নিয়মিত ইউনিভার্সিটি আসছে।প্রতিদিন আদিব নিজে এসে পৌঁছে দেয় আর নিয়ে যায়।আদিব অনেক বুঝিয়ে আর আশ্বাস দিয়ে তাকে বলেছে কিছুই হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে। একরকম জোর করেই বাইরে আসে আর প্রতি মিনিটে মিনিটে আদিবকে ফোন করে। আদিব তিন মাসের ছুটিতে আসলেও সে প্রায়ই এখানের অফিসে যায়। মুমু বাসায় থাকলে কোথাও বের হতে দেয় না তাই মুমুকে জোর করে ভার্সিটিতে দিয়ে যায়।আজও মুমুকে পৌঁছে দিতে এসেছে আদিব।মুমু গাড়ি থেকে নামতেই দেখে মুমুর ফোন রেখে গেছে।তাই দ্রুত ফোনটা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মুমুকে ফোন টা দিয়ে বলল,
-” এই যে আপনার হাসবেন্ড কে নিয়ে যান।”
আদিবের কথা শুনে মুমু ফিক করে হেসে দেয়। বার বার ফোন দেওয়ার কারণে মুমুকে বিভিন্ন কথা বলে মজা করে আদিব। এটা তার মধ্যে অন্যতম।
অন্যদিকে রূপকও নিয়মিত মুমুর ভার্সিটির সামনে এসে বসে থাকে।আদিবকে দেখলেই রাগ ওঠে না তার।কারণ মুমুর ভীতু ভীতু মুখটা দেখলে তার সব রাগ উধাও হয়ে যায়।মেসেজ দেওয়ার পর থেকেই মুমুর এই ভীতু চাহনি আবার সে দেখতে পেয়েছে। তবে আজ আদিবকে দেখে তার রাগ হচ্ছে, ভীষণ রাগ হচ্ছে।আদিব মুমুর হাত ধরতেই হাত মুঠো করে ফেলে রূপক।
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-২২
ক্লাস থেকে বের হয়ে আদিবকে ফোন করে মুমু,কিন্তু ফোন আনরিচেবল বলেছে।মুমুর হাত-পা কাপছে, কপাল বেয়ে ঘাম পরতে শুরু করেছে। কোনরকম নিজের চেম্বারে এসে বসে।মেসেজ টা পাওয়ার পর থেকে মুমু সব সময় ভয়ে থাকে বলে ফোন করার সাথে সাথেই তার কল রিসিভ করে আদিব।সেখানে ফোন অফ থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।কাঁপা কাঁপা হাতে আরো কয়েকবার কল দেয়,কিন্তু বার বার একই উত্তর আসছে।
মুমুর চোখ থেকে অলরেডি পানি পরতে শুরু করেছে।সামনে থাকা গ্লাস টা নিয়ে পুরো পানিটুকু খেয়ে নেয় মুমু। চোখের পানি মুছে বাসায় ফোন করে।মায়ের কাছে আদিবের কথা শুনলে মা জানাই বাসায় নেই।কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয় মুমু।এবার মুমুর ভীষণ ভয় লাগছে, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ায় মুমু আদিবের অফিসে যাওয়ার জন্য। হঠাৎই ফোনের রিংটোন শুনে হাতে নিয়ে দেখে আদিবের কল, তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করেই ঝড়ের গতিতে বলা শুরু করে,
-“আদি কোথায় তুমি? তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন? তুমি এখনই এইমুহূর্তে আমার ভার্সিটি আসো, রাইট নাউ।”
-“কুল জান কুল, তোমার আদিব ঠিক আছে তবে কতক্ষণ ঠিক থাকবে সেটা তুমি বলবে জান।”
কথাটা শুনেই ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে মুমু। ফোন টা কখন হাত থেকে পড়ে গেছে বুঝতে পারে নি।গলা থেকে একটা শব্দও বের করতে পারছে না মুমু, চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে, হাত প্রচন্ড কাপছে। কাঁপা হাতেই দ্রুত ফোন টা তুলে নেয় মুমু।
-“পি প্লিজ প্লিজ আদিকে কিছু করবেন না। আমি ওকে ছেড়ে চলে যাব, আই সোয়ার আমি আজই চলে যাব। আ আপনি ওকে কিছু করবেন না প্লিজ।” মুমু হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে।
মুমুর কান্না শুনে রূপক অস্থির হয়ে বলল,” কাঁদে না জান তুমি যা বলবে তাই হবে জান।তবুও কেঁদো না জান, উম্মাহ।” বলেই ফোন রেখে মুচকি হাসি দেয় রূপক।
ভ্রু কুঁচকে তরুণের দিকে তাকিয়ে আছে আদিব।একে NSI অফিসার কে বানিয়ে ছিল ভেবে মেজাজ খিটে যাচ্ছে আদিবের, সামন্য হাতের ব্যান্ডজটাও করতে হাত কাপছে। এমনিতেই অফিসের সামনে নামতেই হুট করে কোথা থেকে একটা বাইক এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাত থেকে ফোন নিয়ে চলে গেছে। আবার হাতটা যে কিসে কাটলো সেটাও বুঝতে পারছে না, তার উপর এই তরুণের নাদানি দেখে রাগে হাত ছাড়িয়ে নিজেই ব্যান্ডেজ করতে শুরু করে।তরুণ চিল্লিয়ে বলল,
-” আরে আমি করছিলাম তো, দে আমাকে…”
আদিব রেগে তাকাতেই চুপ হয়ে যায় তরুণ।আদিব ব্যান্ডেজ করতে করতে তরুণকে বলল,
-“অফিসের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ চেক কর, আর আমাকে তোর ফোন টা দে।”
তরুণের ফোন নিয়ে মুমুকে দুবার কল দেয় আদিব। কিন্তু ফোন তুলছে না মুমু, আরো একবার দিলো কিন্তু একই অবস্থা। হয়তো ক্লাসে আছে ভেবে আর ফোন না দিয়ে তরুণের সাথে ফুটেজ দেখা শুরু করে।
রাগে আদিবের মাথা টগবগ করছে, মুমুকে পেলে সে খুন করবে।কিছুক্ষণ আগের ঘটনা——
মুমুর ফোন হঠাৎ বন্ধ পেয়ে আদিব মুমুর ভার্সিটি গিয়ে জানতে পারে মুমু আরো ঘন্টা খানেক আগেই বেরিয়ে গেছে। কি করবে ভেবে দ্রুত বাসায় চলে আসে আদিব। দরজা খুলেই শাশুড়ী হরবর করে বলতে শুরু করেন,
-” আদিব বাবা তোমার ফোন বন্ধ কেন? আমি কখন থেকে ফোন করছি।দেখোনা বাবা মুমু টা হঠাৎ এসে প্রয়াকে নিয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল।আর আমাকে বলল আমি যেন বাড়িতে চলে যায়।” বলেই কেঁদে দেন মরিয়ম বেগম।আদিব অবাক হয়ে বলল,
-” ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল মানে?কোথায় গেছে?”
মরিয়ম বেগম কেঁদে বললেন,
-” জানিনা বাবা তবে মেয়ে টা আমার আবার কোনো সমস্যায় পড়েছে নইলে এমন পাগলের মতো আচরণ করে না ও।”
শাশুড়ীর কথা শুনে আদিব দৌড়ে মুমুর ঘরে যেয়ে সবকিছু ঘেটে দেখে মুমুর ভিসা পাসপোর্ট কিছুই নেই।মুমুর ফোনটাও বিছানায় পরে আছে।
এয়ারপোর্টে এসেই আগে রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে ইন্ডিয়া ফ্লাইট কখন জেনে নেয় আদিব। আধাঘণ্টা পরে শুনে দৌড়ে পেসেঞ্জার সিটিং এরিয়া খুজতে শুরু করে।হঠাৎই পাপা ডাক শুনে ডান দিকে তাকিয়ে দেখে প্রয়া তার দিকে চেয়ে হেসে হাত বাড়িয়ে আছে।আদিব কালবিলম্ব না করে দ্রুত যেয়ে প্রয়াকে কোলে নিয়ে চুমু খায়।পাশে তাকিয়ে দেখে মুমু দু’হাতে মাথা রেখে ঝুঁকে চেয়ারে বসে আছে।
মুমুকে দেখেই আবার রাগেরা মাথা নেড়ে উঠে।প্রয়াকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে মুমুর দু’হাত শক্ত করে ধরে টেনে দাঁড় করায়।হঠাৎ করে এরকম করায় মুমু চমকে সামনে তাকাতেই কেউ তাকে সজোরে থাপ্পড় দেয়।গালে হাত দিয়ে আবার সামনে তাকাতেই আদিবকে দেখে ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দেয় মুমু। অন্য দিকে মুমুকে থাপ্পড় দেওয়ায় প্রয়া ভয়ে কেঁদে দেয়।প্রয়ার কান্না শুনে আদিবের হুঁশ ফিরে, দ্রুত প্রয়াকে কোলে তুলে থামানোর চেষ্টা করে।কান্না থামলেও মুমুর কাছে যাওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। তাই মুমুর কোলে প্রয়াকে দিয়ে মুমুর হাত শক্ত করে ধরে হাটা শুরু করে।মুমু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
-“আমি যাব না” মুমুর কথা শুনে আদিব রক্তিম চোখে তার দিকে তাকায়।আদিবের তাকানো দেখে মুমু মাথা নিচু করে ফেলে।তারপর মুমুকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয় আদিব।
গাড়িতে একটা কথাও বলেনি আদিব, রেগে সারাপথ রকেট গতিতে গাড়ি চালিয়েছে।প্রয়া মুমুর বুকের মাঝে ঘুমিয়ে গেছে আর মুমু মাথা নিচু করে ভয়ে, কষ্টে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।গাড়ি থেকে নেমে মুমুকে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসায় আসে।শাশুড়ী দরজা খুলতেই প্রয়াকে তার কোলে দিয়ে শান্ত ভাবে বলল,
-” মা, প্রয়াকে নিয়ে রুমে যান।”
শাশুড়ী কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিব কিছুটা রেগে বলল,
-” মা, প্লিজ রুমে যান।” বলেই শাশুড়ীকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে মুমুর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে চলে যায় আদিব।
রুমে এসেই মুমুকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে ভীষণ শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয় আদিব। শব্দে মুমু ভয়ে কেঁপে উঠে।দরজা বন্ধ করে মুমুকে বিছানা থেকে টেনে তুলে থাপ্পড় দিতে গিয়েও থেমে যায় আদিব।পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা হাতে নিয়ে সজোরে ক্লজেটের দিকে ছুড়ে মারে।কাচের ঝনঝন শব্দে নিজের শাড়ী দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে মুমু, মাথা তুলে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কাঁদছে।মুমুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে রেগে মুমুকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বললো,
-” কোথায় যাচ্ছিলি বল? কোথায় যাচ্ছিলি? তোর সাহস হয় কি করে আবার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার…. মাথা নিচু করে থাকবি না…. কথা বল…. স্পিক আপ ড্যামেট।”
কথাটা বলেই মুমুকে আবার ধাক্কা দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। রাগে দুই হাতে নিজের মাথার চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা টুলে জোরে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বলল,
-” কান্না বন্ধ কর মুমু, আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? আই সেইড স্টপ ক্রায়িং মুমু।”
আদিবের কথা শুনে নিচের ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে মুমু।হঠাৎই মুমুকে দাঁড় করিয়ে মুমুর চুল ধরে মুখের সামনে মুখ নিয়ে দাতে দাঁত চেপে বলল,
-“আমাকে ছেড়ে কেন যাচ্ছিলি বল? কেন? ”
আদিবের রাগী ফেস দেখে মুমু গড়গড় করে তখনকার ফোন কলের কথা বলে দেয় আর আদিবকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না শুরু করে।
চলবে
চলবে