পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ১৪

#গল্প :#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :#14
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

||

হঠাৎ স্যারের বির বির করার শব্দ আমার ধ্যান ভাঙল। তার বির বির শুনে, মনের মধ্যে অজানা কষ্ট হানা দিল,,,,

তাহসিন : আ,, মি আমার বৃষ্টি, কে ছাড়া থাকতে পারবো না,,, আমি রিমি কে বিয়ে ক ,,,,, [বির বির করে]

স্যারের কথা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। কথাটুকু বলেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। তারমানে কি স্যার রিমি আপুকে ভালোবাসে। সে কি রিমি আপুকে বিয়ে করতে চায়। দূর,, ভালো করে শুনতেও পারলাম না। আমার আর ভালো লাগছে না। যদি ভুল শূনে থাকি,,, যাক বাবা যা ইচ্ছা তাই বলুক, আমার কি।

আমি কিছুখন পলকহীন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। একদম বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। মুখটা শুকনো হয়ে আছে। তারপরেও অনেক কিউট লাগছে। আজকে আর ভয় লাগছে না। তার মধ্যে যে একটা ছোট্ট শিশুর মতো মন আছে, তা কেউ বিশ্বাস করবে না। মন চাইছে তার সব কষ্ট আমি নিয়ে নেই।লোকটার এত কষ্ট। আমি তো সবসময়ই ভাবতাম তার মতো রাগী মানুষ আর দুটো পৃথিবীতে নেই,,,

বেশিখন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। তার এতো কিউট মুখ দেখে মনে এক ভয়ঙ্কর ইচ্ছে জাগল। না মিহু এরকম কিছুই করা যাবে না,,,, সে তোর শিক্ষক হয় [মনে মনে]

মনের কথাটা শুনেই ফেললাম। তার সিল্কি চুল যে গুলো আমাকে টানছে। কত দিনের ইচ্ছে তার ছিল চুলগুলো ছোঁয়ার। আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করতে লাগলম। মনের মধ্যে ভয় আর ভালোলাগা দুটোই লাগছে। ইস,, কত কিউট,,,,

||

রাফি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে,,,

রাফি : কেন করলে ফুপি? কেন,,,, তোমরা কী কখনো বুঝতে পারোনি যে আমি মিহু রানীকে ভালোবাসি। আমি তো শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। শুধু ভাবতাম কবে মিহু রানী বড়ো হবে,,, কিন্তু তোমারা কেউ বুঝলে না আমাকে। আমি যে খুব করে মিহু রানীকে চাই। মিহু রানী শুধু আমার। আমি যে করেই হোক তোমাকে আমার করবোই। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।

সবাই শুধু বলে, ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষ যা চাই তাই দিতে হয়। মিহু রানী তুই যদি তাহসিনকে ভালোবেসেও থাকিস, তাও আমি তোকে তাহসিনের কাছে যেতে দিতে পারবো না। আমি কোন মহান প্রেমিক না,,, যে তোর আর তাহসিনের মাঝখান থেকে আমি চলে যাব আর তোদের বলবো তোরা সুখে শান্তিতে থাক। কখনো না,,, নেভার। রাফি নিজের জিনিস কখনো ছাড়তে শিখেনি। যে করেই হোক মিহু আমার হবে। এতে যদি আমার ভূল পথ বেছে নিতে হয় তাই করবো। তাহসিন তৈরি থাক, আমি তোর কাছে থেকে তোর ভালোবাসাকে কেড়ে নিব,,, [পৈশাচিক হেসে]

|||

তাহসিনের বাবা: এতো রাত হয়ে গেলো, ছেলেটার কোনো খবর নেই। খেয়েছে কিনা তাও জানিনা। ছেলেটা আমাকে বুঝে না। অবশ্য তাহসিনের কোনো দোষ নেই। ওর মা মরা যাবার পর থেকে কেমন যেন হয়ে গেয়েছি। হাসিখুশি ছেটেলা একদম নিরব হয়ে গিয়েছে। আমি তো ওর সুখের জন্যে রিনাকে বিয়ে করলাম। কিন্তু রিনা কখনোই তাহসিনকে মায়ের ভালোবাসা দিতে পারে নি,,,দেখি একটা কল দেই,,,

তামিম সাহেব একা একা কথা গুলো বলে তাহসিনকে ফোন দিল। তার যে চিন্তা হচ্ছে,,,,

||

আমি সেই কখন থেকে স্যারের দিকে তাকিয়ে তার মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। নিজের ঘুম তো হারাম হয়ে গিয়েছে। ঘুম তো পাচ্ছেই না বরং তার দিকে তাকিয়ে থেকে রাত পার করে দিতে ইচ্ছে করছে। জ্বর অনেকটা কমেছে। হঠাৎ করে ফোনের শব্দে আমার ধ্যান ভাঙল।

ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম স্যারের বাবা ফোন করেছে। স্যার তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার কানে হয়তো বা ফোনের আওয়াজ যায়নি। তাই উপায় না পেয়ে আমিই ফোন রিসিভ করলাম।

আমি :হ্যোলো,,[কাঁপা কাঁপা গলায়]

তামিম সাহেব মিহুর কন্ঠ শুনে সস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

তামিম সাহেব : মিহু মা, তাহসিন কী তোমার কাছে?

মিহু : জী আঙ্কেল,,,

তামিম সাহেব : ঠিক আছে রাখি। ছেলেটার খেয়াল রেখো। ছেলেটার যে খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই। বড্ড একা। ও কিন্তু বাইরে যতটা শক্ত ভিতরে ততটাই নরম,,,

মিহু :জি আঙ্কেল,,,, দোয়া করবেন,,,

তামিম সাহেব মিহুর সাথে কথা বলে নিশ্চিন্ত হলেন। মিহুই তাহসিনের যোগ্য মেয়ে। মেয়েটা একটু ছোট কিন্তু অনেক বুদ্ধিমান। তাহসিন তুই যোগ্য মেয়েকে বেছে নিয়েছিস,,, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমার যে রিনাকে বলতেই হবে, বাড়াবাড়ি কিছু হয়ে যাওয়ার আগে। তুমি বুঝলে না রিনা,,,, [মনে মনে]

||

আমার আঙ্কেলের সাথে কথা বলে খুব খারাপ লাগছে। ভাবতেই পারছি না এই গোছালো মানুষটার ভিতরটা কত অগোছালো।

আমি এখনোও স্যারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতছি। ভাবছি কোথায় ঘুমাব। অন্য ঘরে যাব নাকি এ ঘরেই থাকব। যদি রাতরে জ্বর বেড়ে যায়,,,,

স্যারের মাথা থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম,,
তখনই স্যার হাত টেনে ধরলো। সে কি ঘুমোয়নি। এখন কী হবে যদি মাথায় হাত দেওয়ার জন্য বকা দেয়। ভয়ে ভয়ে পিছে তাকালাম,,,

তাহসিন : মিহু,,,

আমি:নিশ্চুপ,,,

তাহসিন : আমাকে ছেড়ে যেও না,,, [বাচ্চাদের মত]

তার কথা শুনে মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে পড়লাম।

তাহসিন : মাথা না এখনো ভারি হয়ে আছে,, একটু হাত বুলিয়ে দিবে,,, [চোখ বন্ধ করে]

আমি আর সইতে পারলাম না। তার পাশে বসে পড়লাম। তার মাথায় হাত দিলাম। মানুষটার প্রতিটি কথায় যে আবদার ফুটে উঠেছে। আমার কাছে এই প্রথম কেউ আবদার করছে। আমি তো সবসময়ই বাবা মায়ের কাছে আবদার করি। কিন্তু কেউ আমার কাছে কোনদিনই আবদার করেননি। তার এই আবদার কথা শুনা যে আমার কর্তব্য। সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে না মানলেও আমাই তার স্ত্রী। আমি ছোট হয়েছি তো কি হয়েছে,,,,,

আমি ওড়না খুলে বিছানায় রাখলাম। অনেক গরম লাগছে। তার মাথায় হাত দেওয়ার জন্যে আরো বেশী গরম লাগছে,,, হঠাৎ করে এক বিপত্তি ঘটল স্যার,,,,

(#চলবে)

[আমার পরীক্ষা চলছে, অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আপনাদের জন্য প্রতিদিন গল্প দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আপনাদের উপর আমি আশাহত। যদি ভালো রিয়েকট না পাই তাহলে প্রতিদিন দিব না কেমন?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here