পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ১৩

#গল্প :#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :#13
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

স্যার : দেখিত কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?

বলেই আমার হাত ধরে দেখতে লাগলেন। তার ছোঁয়াই আমার সারা শরীর শিউরে উঠল। তার যে সারা শরীর গরম। নিশ্চই জ্বর এসেছে। স্যার কথা বলতে বলতে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল,,,,

সে ঢুলতে ঢুলতে আমার বিছানায় মাথা চেপে ধরে বসে পড়ল। মনে হলো তার মাথা ঘুরছে,,,

তাহসিন : মিহু,,,,

আমি : হুম,,,

তাহসিন : ব্যাথা করছে,,,

আমি: আপনার কোথায় ব্যাথা করছে?

তাহসিন : মাথা,,

আমি : আপনি শুয়ে পড়েন। আমি মায়ের ঘর থেকে নাপা নিয়ে আসছি,,,

তাহসিন : আগে বলো আমাকে মাফ করেছো তো?

আমি: হ্যাঁ,,,

স্যার কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুখটা কেমন শুকনো লাগছে। আমি আর দেরি না করে চুপচাপ মায়ের ঘরে এলাম। মাকে জানানো ঠিক হবে না, যে স্যার এসেছে। মা যদি বকা দেয় আমাকে,,,

আমি ভাবতে ভাবছি আর অন্ধকারে ওষুধের বক্স খুঁজছি। কিন্তু অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আবার আমার ঘরে এলাম। লাইট খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না। উপায় না পেয়ে স্যারের ফোন চেলাম। কিন্তু স্যার কোন কথা বললেন না। তাই বেশি কিছু না ভেবেই কাঁপা কাঁপা হাতে স্যারের পকেটে হাত দিলাম। আল্লাহ স্যার যেন কিছু না বলে,,

স্যার কিছু বললেন না। আমি যখনই ফোন নিয়ে আসতে যাব তখনি,,,,

তাহসিন : মিহু,,, [হাত টেনে ধরে]

আমি: জী [ভয় পেয়ে]

তাহসিন : আন্টিকে বলো না প্লিজ,,, আমি একটু পরেই চলে যাব,,, [আবদার সুরে]

আমি: মাকে বলবো না তো,,,,

আমার তার কথা শুনে কেমন যেন লাগলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে সে কিছু খায় নি। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করলাম,,,

আমি: স্যার আপনি কি কিছু খেয়েছেন?

তাহসিন : উম্মহু,,

তারমানে সে কিছু খাই নি। আমি আর দেরি না করে রান্না ঘরে চলে এলাম। রান্না ঘরে এসে তারাতারি ভাত আর তরকারি গরম করে নিলাম। মায়ের ঘরে যেয়ে স্যারের ফোনের লাইট অন করলাম। স্যারের ফোন ধরে মনে হচ্ছে আমি কোন দিন ফোন ধরিনি। অতিরিক্ত হাত কাঁপছে ফোন তো নয় মনে হচ্ছে স্যার। বুঝতে পারছি না ফোন ধরাতে কেন এমন ভয় লাগছে,,,

আমি ওষুধ আর খাবার নিয়ে ঘরে এসে দেখলাম স্যার বসতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,,

আমি: স্যার খাবার খেয়ে নিন। [ভয়ে ভয়ে]

স্যার : খাব না,,,, [বাচ্চাদের মত করে]

আমি: খেয়ে নিন, প্লিজ,,,

স্যার :না,,,

আমি আর বেশি কিছু না ভেবে নিজের হাতে ভাত মাখতে শুরু করলাম,,,

তাহসিন : খাইয়ে দিবে? [আবদার শুরে]

আমি: হুম,,,

আমার মধ্যে কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। আমার মনে হচ্ছে স্যারকে যে করেই হোক খাওয়াতে হবে। তা না হলে যে জ্বর কমবে না,,,

আমি : হা করুন,,,

স্যার সাথে সাথে খেতে লাগলো। অন্য কোন সময় হলে হয়তো আমি লজ্জা বা ভয় পেতাম। কিন্তু এখন তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না। শুধু মনে হচ্ছে তাকে যে খাওয়াতে হবে। হঠাৎ করে দেখলাম স্যারের চোখ ছলছল করছে। মনে হচ্ছে একটু পরেই জ্বল গড়িয়ে পরবে,,,

তাহসিন : যানো মিহু,,,

আমি : নিশ্চুপ,,,

তাহসিন : আমাকে না কেউ এখন আর খাইয়ে দেয় না। আজ থেকে পনেরো বছর আগে মা অনেক যত্নে খাইয়ে দিত। কিন্তু আমার কপাল এতোটা খারাপ যে সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমাকে উপহার হিসেবে শুধু কষ্টো দিয়ে গিয়েছে। সে বুঝে নি যে, সে চলে গেলে তার ছেলে যে অসহায় হয়ে পরবে। এখন আমাকে কেউ ভালোবাসে না,,,, [ভাঙা গলায়]

তার কথা গুলো শুনার সাথে সাথে আমার বুক ধক করে উঠল। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই রাগী মানুষটির ভিতরে এত কষ্ট। তার ভিতরে যে এতো কষ্ট জমে আছে তা আমি কখনোই ভাবতে পারি নি,,,,

আমার চোখে পানি চলে এসেছে। হাত থেমে গিয়েছে। আমার যে মনে হচ্ছে তার কষ্টগুলো আমারও।

তাহসিন : মিহু আর খেতে পারছি না। বমি পাচ্ছে,,

আমি আর দিলাম না। তাকে ওষুধ খাইয়ে দিলাম। সেও চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন। আমি ভাবছি, আমাকে মা না খাইয়ে দিলে খাই না। নিজের হাতে ঠিক করে খেতেও পারি না। সেই আমি কীভাবে স্যারকে খাইয়ে দিলাম?,,,,

আমি খাবার প্লেট রান্না ঘরে রেখে ঘরে এলাম।দেখলাম সে অসহায় মানুষের মতো শুয়ে আছে।তার শরীর অতিরিক্ত কাঁপছে। তাই আমি সাথে সাথে কাঁথা বের করে তার গায়ের ওপর দিলাম। এখন দেখতে হবে তার জ্বর কমেছে কি’না। তার মাথায় হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে তার মাথায় হাত দিলাম। সারা শরীরে ঝট করে উঠল।আমি কেন ভয় পাচ্ছি, এই ছোঁয়াই তো কোন পাপ নেই। এই ছোঁয়া তো #পবিএতার_ছোঁয়া। আমার তো গোনাহ হবে না,,,

হঠাৎ স্যারের বির বির করার শব্দ আমার ধেন ভাঙল। তার বির বির শুনে, মনের মধ্যে অজানা কষ্ট হানা দিল,,,,

(#চলবে)

[কেমন হয়েছে জানাবেন। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here