পরিত্রাণ পর্ব শেষ

#পরিত্রাণ
অরিত্রিকা আহানা
অন্তিমপর্ব

হাসপাতালের বেডে দাঁতমুখ খিঁচে শুয়ে আছে সন্তানসম্ভবা রুমু। বিকেলের দিকে লেবার পেইন উঠেছে তাঁর। টের পেয়ে আর একসেকেন্ডও দেরী করে নি অনিক এবং ইউসুফ সাহেব! সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে!

এখনো ওটিতে ঢোকানো হয় নি রুমুকে। তাঁর ডানহাতটা শক্ত চেপে ধরে ভীতমুখে তাঁর পাশে বসে আছে অনিক। মুখখানা এমন যে যেন অপারেশনটা তাঁরই হবে! ইউসুফ সাহেব ছেলের অবস্থা দেখে মিটিমিট করে হাসছেন। রুমুর সমস্ত রিপোর্ট ভালো, ডাক্তার বলেছেন ভয়ের কোন কারণ নেই! বাচ্চার পজিশন ভালো। উপরন্তু প্রয়োজন হতে পারে ভেবে বাড়তি রক্তের ব্যবস্থাও করে রেখেছে অনিক। তবুও ছেলের চিন্তার শেষ নেই। সস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন ইউসুফ সাহেব! তাঁর ছন্নছাড়া, লক্ষ্যভ্রষ্ট ছেলেটা আজ কত দায়িত্ববান হয়ে গেলো! রুমুর কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ তিনি। নারীর ভালোবাসা যেমন মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে তেমনি তার জীবটাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিতে পারে। সব মানুষকেই বদলে দিতে পারে এই ভালোবাসা। কেউ ধীরে ধীরে বদলায় কেউবা খুব দ্রুত বদলায়। কিন্তু বদলায় ঠিকই! অনিকও বদলেছে এবং খুব তাড়াতাড়িই বদলেছে!

আফিস ইকবালও হাসপাতালে এসেছেন। রুমুর চাইতে বেশি অনিকের দিকে দৃষ্টি তাঁর। আড়চোখে বেশ কয়েকবার অনিকের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনিক অবশ্য তাঁর কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। বলা যায় না, কখন, কি নিয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয়ে বসে এই ভদ্রলোক! রুমু পাশে বসে চুপচাপ রইলো সে।
রুমু বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’তুমি আমার পাশ থেকে সরে যাও তো! তোমার ঘাবড়ে যাওয়া চেহারা দেখতে আমার একদম ভালো লাগছে না। আমার ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছো তুমি!’

ধমক খেয়ে অনিক বাধ্য ছেলের মত সরে গেলো। এবার ইউসুফ সাহেব গিয়ে রুমুর পাশে বসলেন। মাথায় হাত রেখে স্নেহার্দ্র গলায় বললেন,’ভয় পাওয়ার তো কিচ্ছু নেই মা। ডাক্তার বলেছেন তুমি একদম ঠিক আছো, বাচ্চার পজিশনও ঠিক আছে।’

-‘আমি ভয় পাচ্ছি না বাবা। আপনার ছেলে ভয় পাচ্ছে।’

ইউসুফ সাহেব হাসলেন। অনিক বাস্তবিকই ভয় পাচ্ছে। তিনি জানেন তাঁর এই ছন্নছাড়া ছেলেটা তীব্রভাবে ভালোবাসে রুমুকে! হয়ত নিজের চাইতেও বেশি! মুচকি হেসে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তিনি তখনি সাদা পোষাক পরিহিতা একজন মধ্যবয়স্ক নার্স এসে জানালো বড় ডাক্তার এসে গেছেন। ওটি রেডি করা হয়েছে। রুমুকে নিয়ে যেতে হবে। অনিক ভয়ে ভয়ে রুমুর মুখের দিকে চাইলো। রুমু ব্যথায় মুখ বিকৃত করে রেখেছে। সোফা থেকে উঠে পুনরায় রুমু পাশে গিয়ে বসলো সে। ইউসুফ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,’ওকে একটু দোয়াদরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে দাও না বাবা?’

ছেলের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই ইউসুফ সাহেব রুমুর মাথায় হাত রেখে দোয়া ইউনুস সহ, যাবতীয় ব্যথামুক্তির দোয়াদরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে বললেন,’আল্লাহ ভরসা।’ আসিফ ইকবালও মেয়ের মাথায় হাত রেখে সাহস দিলেন। অনিক কেবল সামান্য ঝুঁকে চুমু খেলো রুমুর মাথায়! তারপর নার্স রুমুকে ওটির দিকে চলে গেলো।


তারপর দেখতে দেখতে চারবছর কেটে গেছে। অনিক এবং রুমুর চারবছরের ছেলে অর্ণ কথা বলতে শিখে গেছে। রুমু এখন আবার চারমাসের প্রেগন্যান্ট! ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে সাজুগুজু করছে সে। আজকে আরিয়ার এংগেইজম্যান্ট। বাড়িতে খুব হৈচৈ! চারদিকে সাজসজ্জার বহর চলছে কেবল। আরিয়া পার্লার থেকে সেজে এসেছে। রুমু অবশ্য এই শরীর নিয়ে পার্লারে যেতে রাজি হয় নি কিন্তু অনিকের ধারণা আরিয়ার চাইতে বেশি সেজেছে সে! সে একা নিয়,তাকে ঘিরে সাজগোজ করছে আরিয়া বয়সী তাঁর গোটা দশেক কাজিন! বিরক্ত হয়ে আরিয়ার ঘরে দিকে চলে গেলো অনিক।

আরিয়া এই মাত্র পার্লার থেকে এসেছে। খাটের ওপর বসে শুভর সাথে চ্যাট করছিলো। শুভর সাথেই এংগেইজম্যান্ট হচ্ছে তাঁর! গত চারবছর চুটিয়ে প্রেম করেছে দুজনে। তারমাঝে শুভ পাশ করে বেরিয়ে ব্যাংকে চাকরি নিয়েছে। তারপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাসায়। সবদিকে পছন্দ হওয়ায় অনিক এবং ইউসুফ কেউই অমত করলেন না। তাছাড়া রুমুর কাছ থেকে আরিয়া এবং শুভর সম্পর্কের কথা আগেই জানতে পেরেছিলো অনিক। তাই আর অমত করে নি! আরিয়ার পাশে অর্ণ আছে! ফুপির গা ঘেঁষে একেবারে কোমর জড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে সে। অনিক দরজায় টোকা দিয়ে বললো,’আসবো?’

সাথে সাথেই ফোন রেখে দিলো আরিয়া। মিষ্টি হেসে বললো,’ভাইয়া? আসুন।’

অনিক ভেতরে ঢুকে একটু খানু লাজুক হেসে বললো,’তোমার পারফিউম টা একটু দাও তো।’

-‘কেন আপনার জন্য?’

-‘হ্যাঁ।’

আরিয়া অবাক হয়ে বললো,’আপনি লেডিজ পারফিউম দেবেন?’

-‘না দিয়ে উপায় কি? তোমার ভাবি আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের জন্য তো ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ানোর জো নেই। সেই সন্ধ্যা থেকেই রুম ব্লক করে রেখেছে তাঁরা। তিনবার বলেছি তোমার ভাবিকে পারফিউমের বোতলটা দেওয়ার জন্য তাঁর কানে যায় নি!’

ভাইয়ের বিরক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো আরিয়া। আলমারি থেকে খুব মিষ্টিসুবাসের একটা পারফিউমের বোতল বের করে অনিকের হাতে দিয়ে বললো,’এটা ইউনিসেক্স! ছেলেমেয়ে সবাই ইউজ করতে পারবে।’

অনিক ঢাকনা খুলে পাঞ্জাবির ওপর দিয়ে স্প্রে করে নিলো। অর্ণ হাঁ করে বাবার মুখে দিকে চেয়ে আছে। হয়ত ভাবছে তারা বাবা মানুষটা কোয়াইট হ্যান্ডসাম! অনিক মুচকি হেসে বললো,’তুমি দেবে?’

দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো অর্ণ। অনিকের কথার জবাবে আরিয়া মিষ্টি হেসে বললো,’ওকে আমি দিয়েছি।’

দুজনের কথার মাঝখানে অর্ণ খাট থেকে নেমে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। আজকে তাঁর মুড অফ! কেউ তাকে গেমস খেলার জন্য ফোন দিচ্ছে না। সকাল থেকে একটুও গেমস খেলতে পারে নি সে। সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত! তাই মৌনমুখে বেরিয়ে গেলো। অনিক ছেলের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে মুচকি হাসলো। মায়ের মত নাটুকে হয়েছে তাঁর ছেলেটা! সেও বেরিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ আরিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,’শোনো?’

-‘জি?’

আরিয়া উৎসাহী মুখের দিকে চেয়ে একটুখানি ইতস্তত করে বললো,তুমি চাইলে আমাকে তুমি করে বলতে পারো।’

আরিয়া হাসলো। তাঁর ভাইয়ের মন অবশেষে পুরোপুরি নরম হয়েছে তাহলে! এতদিন বাদে! জবাবে সে-ও আবদারের সুরে বললো,’তাহলে আপনিও আমাকে তুই করে ডাকবেন?’

অনিক নিরবে কিছুক্ষন বোনের মুখে দিকে চেয়ে হেসে ফেললো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’কাছে আয়!’

একমুহূর্তও দেরী করলো না আরিয়া। এগিয়ে গয়্ব দুহাতে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর শুরু হলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না। অনিক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সস্নেহে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,’খুব সুখি হ তুই! কোন দুঃখই যেন আর কখনো তোকে স্পর্শ করতে না পারে!’ তারপর দুইভাইবোনই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নিরবে কিছুক্ষন কাঁদলো! কে জানে এই কান্না সুখের নাকি দুঃখের? সুখের হলে কতটা সুখের কিংবা দুঃখের হলে কতটা দুঃখের? হয়তবা পুরোটাই সুখের!


এংগেইজম্যান্ট পর্ব শেষ। ইউসুফ সাহেব, অনিক, আরিয়া সোফায় বসে গল্প করছে। ঠিক গল্প নয়, অর্ণকে নিয়ে দুষ্টুমি করছে তারা। সবাই মিলে অর্নকে ভয় দেখাচ্ছে অর্ণ যদি খুব বেশি দুষ্টুমি করে তবে তারা কেউ আর অর্ণকে ভালোবাসবে না। সবাই নতুন বাবুকে আদর করবে। অর্ণর হাতে তাঁর পায়ের জুতো! জুতোর ফিতে ধরে ঘোরাতে ঘোরাতে সবাই দিকে একপলক চাইলো সে। তাঁর প্রধাণ হাতিয়ার হচ্ছে ‘থুথু নিক্ষেপ’। কেউ উল্টোপাল্টা কিছু বললেই তাঁর গায়ে থুথু ছুঁড়ে মারে সে। অনিক তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার পদ্ধতির নাম দিয়েছে জীবাণু বোমা নিক্ষেপ। আজকেও একই কাজটাই করলো অর্ণ! সবাইকে থুঃথুঃ নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্য সবার একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে সজোরে থুথু ছিঁটালো সে। ফলাফলস্বরূপ কারো গায়েই পড়লো না। ছিটেফোঁটার কিছু মেঝেতে আর কিছু তাঁর নিজের গেঞ্জিতে পড়লো! এদিকে থুথু দিয়ে আর দাঁড়াই নি সে। একদৌড় দিয়ে উপরে উঠে গেলো। ইউসুফ সাহেব, আরিয়া, অনিক তিনজনেই একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলো। আরিয়া আদর করার জন্য কাছে ডাকলো কিন্তু অর্ণ দাঁড়ালো না!
দূর থেকে দাঁড়িয়ে রুমুও হাসলো। কি সুন্দর পরিবেশ! সবাই কি সুন্দর হাসছে! প্রত্যেক নিজেদের দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে গেছে তাঁরা। সবাই খুশি! সুন্দর নির্মল হাসি সবার!
কিন্তু রুমু? রুমুর কি আদৌ পরিত্রাণ হয়েছে? যতবড় মিথ্যের পাহাড় নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখে দিনেরপর দিন হাসিমুখে কাটাচ্ছে সে তার থেকে কি আদৌ পরিত্রাণ মিলবে রুমুর? অনিলা চৌধুরীর লেখা যেই চিঠি অনিক এবং ইউসুফ সাহেবের মিলন ঘটিয়েছে সেই চিঠি মূলত রুমুই লিখিয়েছে তাঁকে দিয়েছে। রুমুর কারণেই ঐ চিঠিটা লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় অনিলা চৌধুরীর প্রয়োজন ছিলো টাকার আর রুমুর প্রয়োজন ছিলো একটা চিঠির। নতুবা অনিল চৌধুরী নিজেও জানতো না অনিকের আসল বাবা কে? কিন্তু রুমু জানে। সবাই কে লুকিয়ে ইউসুফ সাহেবের সাথে অনিকের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়েছিলো সে। রিপোর্টের কাগজ যেদিন হাতে এসেছিলো সেদিন ভয়ে সমস্ত পৃথিবীসহ কেঁপে উঠেছিলো রুমুর! কান্নার দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিলো তাঁর! সঙ্গে সঙ্গেই রিপোর্টটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলেছিলো সে। তাঁর মনে হয়েছিলো এই রিপোর্ট যদি অনিকের হাতে যায় তাহলে অনিকের ধ্বংস ঠেকানো অসম্ভব! এই দুঃখ অনিক কিংবা ইউসুফ সাহেব কেউ-ই সামলাতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে, নিজের তাগিদে, অনিলা চৌধুরীর কাছে গিয়েছিলো রুমু। তাঁকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তাঁর কাছ থেকে চিঠিটা লিখিয়ে নিয়েছিলো সে। তারপর তো অনিলা চৌধুরী মারা গেছেন, মারা গেছেন শরীফও। কিন্তু তবুও রুমুর ভয় হয়! অনিক যদি কোনদিন জানতে পারে? তবে কি সে রুমুকে মাফ করবে? নাকি রুমুকে ভুল বুঝবে? ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো রুমুর! রুমুর সমস্ত লুকোচুরি, সমস্ত ত্যাগ, সমস্ত বাড়াবাড়ি শুধুমাত্র অনিকের জন্য। অনিককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য! কিন্তু সেই অনিক যদি রুমুকে ভুল বুঝে তবে তো রুমু মরে যাবে! একদম মরে যাবে!

তারপর দুদিন সময় নিলো রুমু। অনেক ভেবেচিন্তে অনিককে সত্যিটা খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিলো। অনিকের হাসিমুখ দেখলে প্রতিনিয়ত আত্মগ্লানিতে ভোগে সে, একটা জঘন্য মিথ্যে দিয়ে মানুষটাকে খুশি করে রেখেছে সে।

ইউসুফ সাহেবের সাথে আরিয়ার বিয়ের সমস্ত লিস্ট তৈরী শেষে রাত সাড়ে বারোটার দিকে রুমে ফিরলো অনিক। ওয়াশরুমে ঢুকে চেইঞ্জ করে নিলো। তাঁর পরনে কালো রংয়ের নাইট স্যুট! রোজকার মত অসম্ভব সুন্দর লাগছে। কালো রংটা ফর্সা শরীরে অনেক বেশি দ্যুতি ছড়াচ্ছে! সম্মোহিতের মত কিছুক্ষন চেয়ে রইলো রুমু! তারপর ইতস্তত করে বললো,’তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।’

-‘বলো!’

ইতোমধ্যে অর্ণর পাশে শুয়ে পড়েছে অনিক। অর্ণ ঘুমাচ্ছে। রুমুর তাঁর হাতটা ঘুমন্ত অর্ণর মাথায় রেখে বললো,’তার আগে অর্ণর মাথায় হাত রেখে বলো তোমার যতই রাগ হোক না কেন, তুমি আমাকে ত্যাগ করবে না?’

অনিক চমকে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গেই অর্ণর মাথার ওপর থেকে হাতখানা সরিয়ে নিলো সে। হতবিহ্বল হয়ে বললো,’মানে কি?’

রুমুর হুঁশ ফিরলো। ছলছল চোখে ঘুমন্ত অর্ণের গালে চুমু খেলো সে। তারপর অনিকের হাতটা নিজের মাথায় রেখে বললো,’অর্ণর নয় আমার মাথায় হাত রেখে বলো, ওয়াদা করো, তুমি কখনো আমাকে ত্যাগ করবে না?’

অনিক ঝাড়া মেরে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো,’দেখি সরো, আমি ঘুমাবো।’

রুমু তার গায়ের ওপর থেকে কাথাটা সরিয়ে দিয়ে বলল,’না! আগে আমার কথা শুনবে তুমি!’

-‘তোমার মাথা ঠিক নেই, যা বলার সকালে বলো!’

-‘না আমি এক্ষুনি বলবো।’

অনিক বাধ্য হয়ে খাট থেকে নেমে সোফায় বসে বললো,’ঠিক আছে বলো। কিন্তু মাথায় হাতটাত রাখবে না খবরদার!’

রুমু বুঝতে পারলো অনিক তাঁর মাথায় হাত রেখে কিছুতেই স্বীকার করবে না। ভয়ে বুকের ভেতরটা দুপদুপ করে উঠলো। নিজেকে শক্ত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলো কিন্তু অত্যাধিক ভয়ে কান্না চলে এলো। অনিকের পায়ের কাছে বসে আকুতির সুরে বললো,’আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অনিক। আমার ভয় করছে, তুমি আমাকে বুঝবে তো?’

অনিক হতভম্ভ! রুমুর হয়েছি? রুমুকে টেনে নিজের পাশে বসালো সে। সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?’

রুমুর কান্না থামলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চললো সে। এই কান্না ভয়ের নয়! প্রশ্রয়ের! অনিক মুচকি হেসে বললো,’কি হয়েছে বলতো? তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়েছো?’

তড়াক লাফিয়ে উঠলো রুমুর হৃদপিন্ডটা! অনিক কি ধরে ফেলেছে? জবাব দিলো না যে। অনিক আবারো ঠাট্টার সুরে বললো,’কি লুকিয়েছো? তোমার আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো,নাকি আগের কোন বাচ্চা আছে? কিংবা তোমার কোন পুরাতন প্রেমিক ফিরে এসেছে।’

রুমু ঠাট্টায় যোগ দিলো না। ছোট্ট করে বললো,’এসব কিছু না।’

-‘তবে?’

উত্তেজনায় রুমুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো,’তোমার বাবা শরীফউদ্দিন!’

অনিক থমকে গেলো। নিষিমেই মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো তাঁর। রুমুর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এবার কি হবে? অনিক কি সহ্য করতে পারবে ? রুমুকে কি মাফ সে করবে? অনিক ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,’জানি আমি।’

এবার রুমুর চমকানোর পালা! অনিক জানে? কি করে? কার কাছ থেকে জেনেছে সে? তার মানে সত্যিটা আরো কেউ জানে? হাঁ করে অনিকের মুখের দিকে চেয়ে রইলো সে। অনিক মলিনমুখে বললো,’অনিলা চৌধুরীর চিঠি পাওয়ার পর বাবার সাথে আমার সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু সন্দেহ পুরোপুরি গেলো না। বারবার মনে হচ্ছিলো সত্যিই ইউসুফ চৌধুরী আমার বাবা হতেন তাহলে ঐ মহিলা আমাকে এতদিন জানালো না কেন? হঠাৎ করে এতদিন পরই বা কেন জানালো? কি উদ্দেশ্যে? তাই তোমাদের সবাইকে লুকিয়ে বাবার সাথে ডিএনএ টেস্ট করাই আমি! তারপরই সত্যিটা জানতে পারি! কারণ রিপোর্টে বাবার এবং আমার ডিএনএ স্পষ্টত অমিল ছিলো! সামান্যতমও ম্যাচ করে নি! কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার যতটা খারাপ লাগবে ভেবেছিলাম ততটা খারাপ কিন্তু মোটেও লাগে নি। কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু যন্ত্রণা হয় নি! ইউসুফ চৌধুরী আমার বায়োলজিক্যালি আমার বাবা নন এটুকুই কষ্ট হয়ে ছিলো কেবল। নতুবা বাবার হাসিমাখা মুখ আর তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কাছে এমন হাজারটা অনিলা চৌধুরী এবং শরীফউদ্দিনের কাছ থেকে পাওয়া ঘৃণ্য জন্মপরিচয় আমার জন্য কিছুই নয়। হাজারবার জন্ম নিলেও কেউ আমার বাবার মত,ইউসুফ চৌধুরীর মত হতে পারবে না! শুধু একটাই আফসোস তিনি আমার চাইতে বেশি ঠকেছেন! সারাজীবন দুটো বিশ্বাসঘাতকের সন্তানকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবেসে গেছেন। ভেবে দেখো, কতটা দুর্ভাগ্যবান মানুষটা! তাই ভাবলাম এসব কথা কাউকে জানাবো না। তিনি আমার বাবা ছিলেন তিনিই আমার বাবা থাকবেন। আমি তাঁকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসি, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি তিনি আমার বাবা। কিন্তু এসব কথা তুমি জানলে কি করে?’

রুমুর বুকের ভার হালকা হয়ে গেলো।ধীরেধীরে অনিকের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নতমুখে বললো, ‘অনিলা চৌধুরীকে চিঠিটা আমিই দিতে বলেছিলাম!’

অনিক চোখ সরু করে ফেললো। হাত সরিয়ে নিলো সে। বিরক্তিতে ঠোঁট চেপে বললো,’তারমানে সব তোমার কারসাজি? নিজেকে কোন সিনেমার হিরোইন ভাবো তুমি? মানে, সবকিছুতে তোমার ঢুকতেই হবে? নাক এত লম্বা কেন তোমার?’

রুমু প্রতিউত্তর করলো না। অনিকের যখন রাগ হচ্ছে তখন রাগ ঝেড়ে ফেলুক সে! রুমু কিচ্ছু মনে করবে না! ঝাড়ুক! বেশি করে ঝাড়ুক! রাগ চেপে রাখলে তার থেকে ক্ষোভ জন্মাতে পারে! তাই টুঁশব্দটিও করলো না রুমু! অনিক উঠে দাঁড়ালো, গেঞ্জি টেনে ঠিক করতে করতে বললো,’যা করেছো, করেছো! সত্যিটা আমাকে বলেছো ঠিক আছে কিন্তু বাবাকে বলার দরকার নেই। তিনি কষ্ট পাবেন!’

রুমু মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। সে এমনিতেও বলতো না। অনিকের কাছে না বলে থাকতে পারছিলো না তাই বলে দিয়েছে কিন্তু ইউসুফ চৌধুরীকে তো মরে গেলেও এসব কথা বলতে যাবে না সে।

অনিকের যদিও রাগ লাগছে, তবে ভেতরে তার ভেতরে উদয় হওয়া স্নিগ্ধ প্রশান্তিটুকু কোনভাবেই চেপে রাখতে পারছে না সে। রুমু তো অনিকের জন্য করেছে সব! হয়ত পদ্ধতি ভুল ছিলো কিন্তু উদ্দেশ্য নয়। খানিকটা হলেও রুমুর ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে পারলো সে। রুমুর মুখোমুখি সামান্য ঝুঁকে চোখে চোখ রাখলো! হাতে হালকা চাপ দিলো। রুমু ভয়ে ভয়ে চোখবড় বড় করে বললো,’হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?’

-‘আই অ্যাম গ’না কিস ইউ রুমু চুমু!’

রুমু চোখ নামিয়ে ফেললো। অনিক কি রুমুর সাথে মশকরা করছে? নাকি সত্যিই তাঁর রাগ পড়ে গেছে? তাঁর করুণ মুখপানে চেয়ে অনিক মুচকি হেসে দুম করে তার পাশে বসে পড়লো। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,’আই লাভ ইউ রুমু চুমু! আই লাভ ইউ! এর মানে হচ্ছে আমি তোমাকে মোটেও ভালোবাসি না! একটুও বাসি না!’ রুমুর মলিনমুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা তাঁর দুঃখগুলোরও পরিত্রাণ ঘটিয়েছেন! দুহাতে অনিকের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,’আই হেইট ইউ! এর মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক, অনেক, অনেক বেশি ভালোবাসি!’

অনিক হাসলো! সোফা থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো রুমুকে। ফের কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বললো,’অনেক বাড় বেড়েছে তোমার! এবার তোমাকে শায়েস্তা করার পালা!’ জবাবে রুমুও মুচকি হেসে বললো,’এভাবে শাস্তি দিলে তো মরে যেতেও রাজি আছি! সত্যিই যদি শায়েস্তা করতে চাও তবে আমার কাছ থেকে টিপস নিতে পারো!’

অনিক তাঁকে খাটে শুইয়ে দিয়ে রুমের বাতিটা নিভিয়ে দিলো। জিরো পাওয়ারের ডিম লাইটা অন করে দিয়ে রুমু পাশে শুয়ে পড়লো সে। রুমুর নাক বরাবর আলতো করে কামড় দিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,’বেশ তবে দেখা যাক, কে কাকে কতটা শায়েস্তা করতে পারে?’

সকাল সাড়ে আটটা। অনিক ঘুমাচ্ছে। অর্ণ তার পিঠের ওপর বসে কানে কানে বললো,’বাবা ওঠো। মা ডাকছে!’
অনিক জবাব দিলো না। জবাব দেবে কি সে তো শুনতেই পায় নি। ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে একেবারে! অর্ণ এবার বেশ জোরে জোরে তাঁর কাধ ঝাঁকানো শুরু করে দিয়ে বললো,’বাবাআআ! মা ডাকছে!’

অনিক পাশ ফিরলো। তাতেই কাত হয়ে তাঁর পিঠ থেকে বালিশের ওপর পড়ে গেলো অর্ণ। অনিক বিরক্ত হয়ে বললো,’অর্ণ বিরক্ত করো না তো। বাবা কিন্তু বকা দেবো।’

-‘মা ডাকছে।’

-‘তোমার মা রোজই ডাকে।’

-‘তোমাকে উঠতে হবে।’

-‘এবার কিন্তু সত্যি সত্যি বকা দেবো অর্ণ! যাও নিজের কাজে যাও!’

বকার কথা শুনে অর্ণর রাগ উঠে গেলো। বিছানার পাশ থেকে গড়িয়ে খাট থেকে নামলো সে। নেমেই অনিকের মুখ বরাবর একদলা থুথু দিয়ে একদৌড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো! চোখের পলকে উধাও! অনিক রাগে, ক্ষোভে ‘অর্ণ’ বলে সজোরে চেঁচিয়ে উঠে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। দাঁতমুখ খিঁচে বললো,’অর্ণ! বেয়াদপ!.. এই দাঁড়া তুই! অসভ্য ছেলে!’

রুমু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভেতরে ঢুকছিলো। অনিককে চেঁচাতে দেখে বললো,’কি হলো অর্ণকে ডাকছো কেন?’

রুমুর পেছন পেছন অর্ণও এসে ঢুকেছে। মাকে দেখে সাহস বেড়েছে তাঁর! মায়ের সঙ্গে বাবা একদম পারে না! অনিক রাগে বিরক্ত হয়ে বললো,’তোমার বদ ছেলে আমার গায়ে থুঃথুঃ মেরে পালিয়েছে।’

রুমু মুখটিপে হাসলো। বললো,’তো কি হয়েছে? বাচ্চা ছেলের থুথুতে গন্ধ আছে নাকি?’

অনিক অবাক হয়ে বলল,’তাই বলে তুমি ওকে এসব কু-শিক্ষা দেবে?’

-‘এখানে কু-শিক্ষার কি হলো?’

-‘হলো।’

-‘আচ্ছা বেশ হলো। কিন্তু তোমার ছেলে যদি তোমার মত হয় তাহলে আমার কি দোষ? তুমি তো আর কম বাঁদর ছিলে না?’

-‘আমি কখনোই ওর মত এমন অসভ্য ছিলাম না।’

-‘ওরে আমার সাধুরে…! উনি নাকি অসভ্য ছিলেন না। আমার ছেলে তোমার চাইতে হাজারগুন ভালো।’

বাবা মায়ের ঝগড়া দেখে অর্ণর খুবই সরলসোজা একটা মুখ করে বসে বসে দেখছে। ভেতরে ভেতরে বেশ মজা পাচ্ছে সে কিন্তু মুখখানা এমন বানিয়ে রেখেছে যেন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না। রুমু ছেলের শয়তানি ঠিকই বুঝতে পেরেছে। অর্ণর এসব নাটকের সাথে পূর্বপরিচিত সে। কিন্তু অনিককে আরেকটু রাগানোর জন্য বললো,’এভাবে চেঁচিয়ে না প্লিজ, দেখো ছেলেটা ভয় পাচ্ছে?’

-‘মোটেও ভয় পাচ্ছে না। আমি ওকে ভালো করেই চিনি। আস্ত বিচ্ছু হয়েছে এই ছেলে, একদম তোমার মত!’

রুমুও ছেলের মতন মুখখানা সহজ সরল বানিয়ে বললো,’ও সত্যিই ভয় পাচ্ছে অনিক!’

রুমুর কথার জবাবে অনিক অর্ণর দিকে চাইলো। দুআঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে বললো,’এই ছেলে, তুই ভয় পাচ্ছিস?’

অর্ণ জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে ফেললো। এবার অনিকের ভেতরে ভেতরে চিন্তায় পড়ে গেলো? অর্ণ কি সত্যিই ভয় পেয়েছে? তাকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকতে দেখে ফিক করে হেসে দিলো অর্ণ। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে ভয় পাচ্ছে না। হাসিটা অদ্ভুত মায়াবী! সামনের মাড়ির, উপরে নিচে দুটো করে মোট চারটে দাঁত উঠেছে কেবল! পেছনে অবশ্য দুইতিনটা করে উঠেছে,বাদ বাকিট সব ফাঁকা। তবুও যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি! ছেলের হাসি দেখে রাগ পড়ে গেলো অনিকের। প্রকাশ করলো না। গম্ভীর গলায় বললো,’বাবাকে থুথু দিয়েছো কেন?’

অর্ণ জবাব দিলো না। চুপচাপ সোফার কুশনে আঁচড় লাগানোয় মনোযোগ দিলো সে। এর মানে সে অনিকের ধমকে কষ্ট পেয়েছে। অনিক ছেলের গাল ফোলানো দেখে হেসে ফেললো। তাঁর তুলতুলে নরম শরীরটাকে শূন্যে উঠিয়ে কোলে তুলে নিলো। দুগালে কষে দুটো চুমু খেয়ে রুমুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,’আমার এরকম আরো একটা,দুইটা, তিনটা, চারটা, পাঁচটা, ছয়টা, সাতটা, আটটা, নয়টা, দশটা, এগারোটা, বারোটা, তেরোটা, চৌদ্দটা….দুষ্টু ছেলে চাই রুমু!’
অর্ণ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করে দিতেই রুমু হেসে বললো, ‘এক ব্যাটেলিয়ন কে সামলাতেই তোমার যায় যায় অবস্থা, আরো চৌদ্দটা? সামলাবে কি করে?’

জবাবে অনিকও দুষ্টু হেসে বললো,’অনিক চৌধুরী সবই পারে! কিন্তু তুমি সামলাতে পারবে কি না তাই নিয়ে চিন্তায় আছি। অর্ণর পরে তো চারবছর গ্যাপ হলো। এবার থেকে কিন্তু প্রতিবছর একটা! নো গ্যাপ!’ বলেই পুরো ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
রুমু মুগ্ধ হয়ে তাঁর সেই হাসিটা দেখলো! অনিকের সব বদ অভ্যেস সে বন্ধ করতে পেরেছে। কিন্তু মাঝেমাঝেই তাঁর বলা এইসব অসভ্য অসভ্য, কথাবার্তা বন্ধ করতে পারে নি রুমু। মুখে যত না বলুক না কেন এই অসভ্য অনিকটাই রুমুকে বেশি করে টানে। সেও হেসে উঠে বললো,’না পেরে উপায় কি! আমার ভদ্রমাতালটার আবদার বলে কথা! আমাকে তো পারতেই হবে।’ তারপর দুজনেই একসঙ্গে হেসে ফেললো। বাবা, মায়ের হাসি দেখে অর্ণ কি বুঝলো সে কে জানে? সেও ফিক করে হেসে দিলো! ছেলেকে হাসতে দেখতে অনিকের হাসিটা যেন আরো বেশি করে প্রশস্ত হলো। রুমু আবারো,আবারো! আরো একবার মুগ্ধ হয়ে দেখলো সব দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একটা মানুষের নির্মল, নিখাদ হাসি! যেই হাসির কোন তুলনা হয় না। সমস্ত পৃথিবীর বিনিময়েও যেই হাসি হারিয়ে যেতে দিতে চায় না রুমু! কোনভাবেই না, সেই অকৃত্রিম হাসি!
.
.
.
সমাপ্ত

(গল্পটা আপনাদের কেমন লেগেছে আমি জানি না। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার জন্য। কিছুদিন আগে আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দূরবীন’ উপন্যাসটা পড়েছিলাম। সেখানে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছিলো গল্পের নায়ক মাতাল হলেই সবসময় ভায়োলেন্ট হয় না। আমিও অনিকের চরিত্রটা সেরকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। হয়ত গল্পের রেশ আমার মাথায় ছিলো বিধায় লিখায় কিছুটা যোগ্যসূত্র আপনারা খুঁজে পেয়েছেন। তবে আমি চেষ্টা করেছি আমার মত করে তুলে ধরার। আশাকরি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here