পরিত্রাণ পর্ব ৯

#পরিত্রাণ
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৯

রুমুর হাতে অনিকের দেওয়া বোতলটা। কোলে নিয়ে বসে আছে সে। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। অনিক মুচকি হেসে বললো,’ফেলতে মন চাইলে আমাকে দিয়ে দিতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড!’

-‘শখ কত!’

-‘তুমি আদর করে কোলে নিয়ে বসে আছো তাই ভাবলাম ফেলতে মন চাইছে না, হয়ত?’

-‘মন না চাইলেই তোমাকে দিতে হবে?’

-‘আমি কি তাই বলেছি? তবে দিলে অবশ্য তোমারই লাভ হবে! ‘

-‘আমার লাভ? কি দেবে আমাকে?’

‘যা চাইবে তাই!,’ কথাটা বলতে গিয়েও থমকে গেলো অনিক। অল্পের জন্য নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে যাচ্ছিলো সে। রুমুকে কথা দেওয়া মানে নির্ঘাত ফেঁসে যাওয়া। এমনিতেই মাথায় চড়ে বসেছে! সুযোগ পেলে আর কোন আবদার বাদ রাখবে না! সব মিটিয়ে নেবে!
রুমু এতক্ষন যাবত ইউসুফ চৌধুরীর কথা ভাবছিলো। অসহায় মানুষটার দুঃখ যন্ত্রনার কথা মনে পড়লেই রুমুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। মানুষটা ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাক শোনা থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত! আচ্ছা রুমু কি অনিককে লুকিয়ে তাঁর এবং ইউসুফ চৌধুরী ডিএনএ টেস্ট করাতে দেবে। বেশি কিছু তো লাগবে না! দুজনের মাথার দুগাছি চুল হলেই হবে! কিন্তু তার আগে কি অনিকের সাথে একবার কথা বলে দেখবে সে? ইউসুফ চৌধুরীকে অনিক ভালোবাসে! সবার চাইতে বেশি ভালোবাসে এই কথা রুমু জানে। কিন্তু সে কি সত্যিই বিশ্বাস করে ইউসুফ চৌধুরী তাঁর বাবা নন? নাকি মায়ের ওপর রাগ থেকে ইউসুফ চৌধুরীকে এড়িয়ে চলে সে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রুমু! আফসোস! এতদিনেও সে অনিকের ভেতরের কষ্টগুলো সব টেনে বের করে পারে নি!

রুমুর চিন্তিত মুখ দেখে অনিকের মনে হলো কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত সে! বেশি জোরাজুরি করলে হয়ত বোতলটা দিয়েও দিতে পারে। ট্রাই করবে নাকি অনিক? গলাটা নরম করে আবদারের সুরে বললো,’এত দামি বোতল কিনলাম। একটা সিপও নেওয়া হলো না। একটু তো কনসিডার করো!’

রুমু মরে গেলেও অনিকের হাতে এই জিনিস আবার তুলে দেবে না। কিন্তু এই সুযোগে ইউসুফ চৌধুরীর ব্যপারটা একবার অনিকের কাছে বাজিয়ে দেখতে চাইলো। হাসিমুখে বললো,’করতে পারি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’

মনে মনে এমনটাই ধারণা করে রেখেছিলো অনিক! তবুও কিঞ্চিৎ আশা ছিলো যদি ব্যতিক্রম হয়! যদি রুমু বোতলটা দিয়ে দেয়! কিন্তু রুমুর কথা শুনে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেলো বোতলটা সে পাচ্ছে না। তবুও নিতান্ত কৌতূহল বশতই জিজ্ঞেস করলো,’কি শর্ত?’

-‘তোমাকে রোজ বাবার অফিসে বসতে হবে।’

জবাবে অনিক ঠোঁট ভেটকালো! কিঞ্চিৎ বিরক্ত গলায় বললো,’ওয়াও মিস রুমু, চুমু তোমার কমনসেন্স দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুমি তো আমার চাইতেও বড় মাতাল। একটা বোতলের জন্য আমাকে রোজ ইউসুফ চৌধুরীর অফিসে বসতে হবে? আমাকে কি পাগল পেয়েছো? রোজ একটা করে বোতল হলেও নয়।’

-‘রোজ একটা করে বোতল তো আমি মরে গেলেও দেবো না।’

-‘তাহলে তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমার শর্তে রাজী হবো?’

রুমুও পালটা জবাবের সুরে বললো,’তারমানে আমার কথাই ঠিক। তুমি জাত মাতাল নও। কারণ মাতালরা মদের জন্য সব করতে পারে, তোমার মত নয়! তুমি ইচ্ছে করে এসব শয়তানি করো!’

রুমুর বলার ঢং দেখে অনিক হেসে ফেললো। বললো,’তুমি মাতালদের ওপর রিসার্চ করছো নাকি? সবকিছুর খুব ভালো ব্যাখ্যা বের করে ফেলো দেখছি!’

সুযোগ পেয়ে রুমু বিছানা থেকে নেমে ধীরে ধীরে অনিকের কাছে এগিয়ে এলো। দুহাতে তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে মোলায়েম কণ্ঠে বললো,’রাখো না আমার কথাটা? বাবা খুব খুশি হবে।’

রুমুর হাত ছাড়িয়ে নিলো অনিক। গম্ভীর গলায় বললো,’অনেক আলোচনা হয়েছে এই ব্যপারে। দয়া করে এবার বন্ধ করো প্লিজ! আমি শুনতে চাচ্ছি না।’

অনিকের চোখে স্পষ্টত রাগ! তথাপি হাল ছাড়লো না রুমু। পুনরায় অনিকের গলা জড়িয়ে ধরে বিষণ্ণকন্ঠে বললো,’এমন করছো কেন? এত নিষ্ঠুর কেন তুমি?’

রুমুর ছলছল চোখের দিকে চেয়ে অনিকের রাগ পড়ে গেলো। নরম, কোমলকণ্ঠে বললো,’আমি কিছুই করি নি রুমু। তুমি বড্ড টর্চার করো।’

কান্নার মাঝেই হেসে ফেললো রুমু! বললো,’আমি তোমাকে টর্চার করি?’

এইকথার জবাবে অনিক নিরুত্তর রইলো। সে নিজেও বুঝতে পারছে রুমু তার ভেতরটাকে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে। দুর্বল করে দিচ্ছে তাঁর ভেতরটাকে। কিন্তু রুমুর কাছে এই সত্যিটা স্বীকার করার মতন সাহস তাঁর নেই! কারণ অনিক বদলাতে চায় না! সে তাঁর ভেতরের দুঃখগুলোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়! একা বাঁচতে চায় অনিক! রুমুকে সে দূরে সরিয়ে দিতে চায়! রুমুর কথার জবাবে বললো,’করোই তো। এই যে এখনো করছো?’

রুমু মোটেও বিচলিত হলো না। অনিক খুব সূক্ষ্মভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু রুমু সেটা হতে দেবে না। পূর্বের কথার রেশ ধরে বললো,’ তোমার ভেতরে কি চলছে আমি সত্যিই বুঝতে পারি না! বাবার অফিসে বসতে রাজি নও কিন্তু থাকছো এই বাড়িতে! এই বাড়িটাও তো বাবার?’

-‘তোমার বাবা আমাকে জোর করে আটকে রেখেছেন।’

-‘জোর করুক আর যাই করুক। হয় তুমি অফিসে বসবে, উনাকে বাবা বলে স্বীকার করবে নতুবা আমরা এই বাড়ি ছেড়ে আলাদা বাসা নেবো। এভাবে রোজ রোজ উনার অসহায় চেহারা দেখতে আমার ভালো লাগে না! তারচেয়ে দূরে থাকাই ভালো!’

অনিক হাসলো। তীরস্কারের হাসি! যেন রুমুর
চালাকি ধরে ফেলেছে সে। রুমু তাঁকে কথার জালে ফাঁসাতে চাইছে। নতুবা আর যাই হোক এই বাড়ি ছেড়ে, ইউসুফ চৌধুরীকে একা ফেলে যাবার কথা রুমু কখনোই বলতো না এই কথা অনিক ভালো করেই জানে। ইউসুফ সাহেবকে নিজের বাবার মতন ভালোবাসে রুমু! তাই মুচকি হেসে রুমুর দুআঙ্গুলে রুমুর নাকের ডগাটা টেনে দিয়ে বললো,’নিজেকে খুব চালাক ভাবো না? তুমি কি ভেবেছো তুমি কেন এসব বলছো আমি কিচ্ছু বুঝি না? আমি ভালো করেই বুঝি।’ জবাবে রুমু কিছু বলতে যাচ্ছিলো অনিক ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,’নো! আর একটা কথাও নয়। অনেক বেশি বলেছো তুমি। এবার চুপচাপ শুয়ে পড়ো!’

নিমিষেই রুমুর মুখটা চুপসে গেলো! রাগ লাগছে তাঁর! ভদ্রমাতালটার বুদ্ধি আরেকটু কম হলে কি ক্ষতি হতো! রুমুর সব সমস্যার সমাধান একনিমিষেই হয়ে যেত! মুখ ভার করে চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে।

অনিক ওর মাথায় একটা হাত রেখে বললো,’আমার ওপর রাগ করো না রুমু। আমি জানি, তুমি খুব ভালো রুমু। তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না। তাই প্লিজ, রিকোয়েস্ট করছি আমার এইসব ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়ো না।’

রুমু রাগে,অভিমানে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। বললেই হলো, একশোবার জড়াবে রুমু! হাজারবার জড়াবে। অনিককে সে ঠিক করেই ছাড়বে!

পরেরদিন শুক্রবার! অনিক বাসাতেই ছিলো। রাতের ঝগড়ার পর রুমু সকাল থেকে অনিকের সাথে দেখা দেয় নি। রুমেও যায় নি। অনিক মনে মনে অবাক হলেও সাড়াশব্দ করলো না!

দুপুরে পা টিপেটিপে রুমের দরজায় উঁকি দিলো রুমু। উদ্দেশ্য অনিক কি করছে সেটা দেখা! খাটের ওপর ঘুমাচ্ছে অনিক! ঘুমস্ত মানুষের চেহারা সবসময় নিষ্পাপ দেখায়! রুমু মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। সুদর্শন, সুপুরুষ তার বরটা!
শার্টের ফাঁকে তাঁর ফর্সা ধবধবে পুরুষালি ধাঁচের শক্ত বক্ষপিঞ্জর রুমুর ভেতরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে! ঝাঁপিয়ে এইবুকটাতে আশ্রয় নিয়ে মন চাইছে রুমুর! বুকের ঠিক মাঝখানটায় নাকমুখ গুঁজে দিয়ে মানুষটার সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিতে মন চাইছে! অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে। নিষ্ঠুর পাষাণটা একবারও তো রুমুর খোঁজ করে নি! অশ্রুসিক্ত অভিমানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো সে। তারপর সারাদিন নিচেই রইলো। রাতে গেস্টরুমে শোয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু রাত্রি কালেই তার সকল অভিমান নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো! বিছানায় ছটফট করতে থাকলো কেবল। চোখ বন্ধ করলেই নিঝুম মধ্যাহ্নের সেই সুদর্শন মুখখানা বুকের ভেতর উত্থাল শুরু করে দিলো। শেষে আর থাকতে না পেরে অনিকের ঘরের দরজায় হানা দিলো সে।

রাত বারোটা! খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে মুভি দেখছিলো অনিক। দরজায় নক হতেই ভেতর থেকে সাড়া দিলো,’দরজা খোলা আছে, এসো!’
কেউ এলো না! দরজায় পুনরায় করাঘাত পড়লো। অভিমানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রুমু। মুচকি হেসে দরজা খুলতে গেলো অনিক। দরজার ওপাশের মানুষটাকে দেখে কিঞ্চিৎ ঠাট্টার সুরে বললো,’তুমি?’ রুমু জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। অনিক দরজা থেকে সরে ওকে ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিয়ে বললো,’এসো। ভেতরে এসো।’

রুমু নড়লো না। যেমনি দাঁড়িয়ে ছিলো তেমনি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। তাঁর অভিমানী শিশুসুলভ মুখখানার দিকে চেয়ে অনিক মুচকি হাসলো। একহাত দিয়ে টেনে ওকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বললো,’তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!’ কথা শেষ করে যেই সে দরজা বন্ধ করলো অমনি রুমু তাঁকে দরজার সাথে ঠেলে বললো,’মিথ্যেবাদী! আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে? তাহলে একবারও তো আমার খোঁজ করো নি?’

অনিক আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুহাত উপরে তুলে বললো,’তুমি তো নিজ ইচ্ছেতে আজকে সারাদিন এই ঘরে আসো নি! আমি কি তোমাকে একবারও আসতে নিষেধ করেছি? আফটার অল আই অ্যাম আ লো ব্লাডেড অ্যানিমেল, তারওপর আইডেন্টিটি ক্রাইসিস! নিজের বাবা কে তাও জানি না। আমার মত মানুষের কি অতো ক্ষমতা আছে?’

রুমু ধমকে উঠলো,’চুপ! টপিক চেইঞ্জ করবে না একদম।’

অনিক মুচকি হেসে বললো,’আচ্ছা করবো না! কি বলবে বলো।’

-‘তুমি তো জানতে আমি রাগ করে ছিলাম। তোমার কি কোন দায়িত্ব ছিলো না আমার প্রতি?’

জবাবে অনিক ভোলাভালা একটা চেহারা বানিয়ে চোখ বড়বড় করে বললো,’আমার দায়িত্ব? আমার? এটা তুমি কি বলছো ভাই? আমি হলাম গুড ফর নাথিং! মাতাল, উন্মাদ! অভদ্র! আমার দায়িত্ব তো তুমি নিয়েছো ! তুমি নাকি আমাকে শুধরে দেবে। তোমার ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে আমি তো নিশ্চিন্তে ছিলাম। যাক! এবার অন্তত আমার একটা গতি হবে! কিন্তু এখন তুমি যদি সেই দায়িত্ব থেকে মুক্তি নিতে চাও তাহলে তো আমার কিছু করার নেই! আমি খুবই নির্ভেজাল মানুষ। কাউকে খামোখা ঝামেলায় জড়িয়ে রাখতে চাই না! ‘ কথা শেষ করে মুখটিপে হাসলো সে।

রাগে অভিমানে রুমুর কেঁদে ফেলার দশা! অনিক এখনো তার সাথে মজা করছে! রাগে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’তুমি একটা নিষ্ঠুর! তোমার মন বলতে কিচ্ছু নেই!’

-‘তাই যদি হয় তবে সব জেনেশুনে কেন আমার সঙ্গে জড়িয়ে নিজের লাইফটা শেষ করে দিচ্ছো?’

-‘সেটা তো তুমিও করছো?’

-‘আমার কথা আলাদা। আমার সাথে কি তোমার তুলনা হয়।’

-‘কেন হয় না কেন? তুমি কি বিশেষ কেউ?’

-‘না। আমি বিশেষ কেউ নই, তবে খুব সাধারণও নই। কিন্তু তুমি তো আমার মত নও? তাহলে তুমি কেন আমার সাথে জড়িয়ে নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছো?’

-‘কি করে বুঝলে আমি তোমার মত নই?’

অনিক হাসলো! ‘বললো,’মদ খাও না তাই।’

-‘ঠাট্টা করছো?’

-‘আচ্ছা বেশ তুমিই বলো তুমি কেমন?’

-‘আমি আবার কেমন? আমি তো আমিই। কপালদোষে যার তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে।’

অনিক এবারেও হাসলো। বললো,’আমিও তো তাই বলি! তোমার জন্য সত্যিই আমার খারাপ লাগে। ইউসুফ চৌধুরী আমার দুঃখের বোঝা তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছে। কিন্তু তিনি তো জানেন না আমার দুঃখের বোঝা ঠিক কতটা ভারী!’

-‘আমি জানতে চাই! বলো আমাকে, কতোটা ভারী তোমার দুঃখের বোঝা?’

এবার অনিক গম্ভীর হয়ে গেলো। সে নিজেও জানে না তাঁর দুঃখের বোঝা ঠিক কতোটা ভারী! কোন দাঁড়িপাল্লায় নিজের দুঃখগুলো হিসেব করবে সে! মায়ের কৃতকর্ম দিয়ে নাকি নিজের জন্ম পরিচয় দিয়ে? নাকি ছোটবেলা থেকে একা নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের কষ্ট দিয়ে! দিনের পর দিন নিজেকে অযাচিত, উপেক্ষিত হিসেবে ভেবে এসেছে সে। এখনো প্রতি নিয়ত তার মনে হয় তাঁর রক্ত দূষিত, কলুষিত! ঘোর পাপ লেগে আছে তার জন্মে!
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিষণ্ণ মলিন কণ্ঠে কেবল এটুকুই বললো,’আমার অনেক দুঃখ রুমু! তুমি সামলাতে পারবে না।’

রুমু আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলো। অনিকের একেবারে কাছে। তাঁর বুকের দুপাশে হাত রেখে বললো,’তবে তুমি আমার দুঃখগুলো তুমি দূর করে দাও?’

অনিক হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো! একেকজনের দুঃখ একেক রকম! রুমুর ভেতরেও দুঃখ আছে সে বুঝতে পারে! দুঃখের যন্ত্রণা কি তাও বুঝতে পারে। তাই রুমুর অশ্রুসজল মুখপানে চেয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললো,’কি চাও তুমি?’

অনিকের ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠলো রুমু! ছোটবেলা থেকে মা, বাবা, আত্মীস্বজন বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে এসেছে সে। কিন্তু অনিকের কাছে তাঁর এত রূপ, বিদ্যাবুদ্ধির কোন দাম নেই! মানুষটা সারাক্ষণ হাসি মুখেও থেকেও যেম নিজের দুঃখের মাঝে ডুবে থাকে! তাঁর এই উপেক্ষা রুমুর ভেতরটাকে চুরমার করে দিচ্ছিলো। আবেগপূর্ণ গলায় আকুতি করে বলল,’আমাকে তোমার কাছে টেনে নাও! আমি কি এতই অযোগ্য? কি হয় আমাকে একটু ভালোবাসলে?’

অনিক দুহাতে রুমুকে বুকে টেনে নিলো। রুমুর ভালোবাসায় ভরা আকুতির কাছে হার মেনে গেলো সে! চেপে রাখা সত্যিটা অবশেষে বলেই দিলো,’আমি তোমাকে ভালোবাসি রুমু! বিশ্বাস করো, তুমি আমাকে শেষ করে দিচ্ছো! ইউ আর কিলিং মি!’
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here