পরিপূর্ণতা পর্ব -০২+৩

#পরিপূর্ণতা
২+৩
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

#২য়_পর্ব
বিয়ে বাড়িতে পৌছে অহনা দেখে ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শুধু বিদায় বাকি। অহনার কান্না পেয়ে যায়৷ কোথায় ভেবে এসেছিল বিয়ে বাড়িতে এসে কব্জি ডুবিয়ে খাবে তা না এখন খালি মুখে ফিরতে হবে। মুক্ত পৌঁছে বুঝতে পারে অহনার মনোভাব। তাই মুক্ত পাত্রীর মায়ের সাথে কথা বলে অহনার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। পাত্রীর মা অহনা ও মুক্তকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খেতে বসায়।

খাবারে বিরিয়ানির বদলে ভাত দেখে মুক্ত পাত্রীর মাকে জিজ্ঞাসা করে, ভাত দিয়েছেন কেন? বিরিয়ানি কি নেই?

না বিরিয়ানি তো শেষ হয়ে গেছে।

আমরা বিয়েবাড়িতে ভাত খেতে আসিনি। বিরিয়ানি যখন নেই তখন আমরা খাবো না। অহনা চলো আমরা যাই।

অহনার খুব খিদে পেয়েছিল। তাই সে বলে, আমি বরং ভাতই খাই৷

তোমাকে উঠতে বলেছি ওঠো। আমি এখন তোমাকে হাজী বিরিয়ানি খাওয়াবো। চলো এখন।

অগত্যা অহনা খাবার ছেড়ে উঠে আসে। পাত্রীপক্ষের সবাই এতে বেশ অপমানিত বোধ করে। কথাটা পাত্রীর বোন নিলার কানে যায়। নিলা এই অপমানের কথা শুনে খুব রেগে যায়। নিজের এক কাজিনের কাছে জানতে চায়, বল কোন ছেলে খাবার ছেড়ে উঠে গেছে। আমি যদি আজ তার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিতে না পারি তাহলে আমার নামও নিলা নয়।

নিলার কাজিন তাকে মুক্তর দিকে ইশারা করে। মুক্তকে দেখে নিলা অপলক তাকিয়ে থাকে। এত হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারে না। প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে মুক্তর সামনে এসে বলে, আসসালামু আলাইকুম বেয়াই সাব। আমি হলাম আপনার একমাত্র বেয়াইন। মানে আপনার নতুন ভাবির ছোট বোন।

মুক্ত নিলার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে, তো আমি কি করব? অহনা চলো আমার সাথে।

নিলা বেশ অপমানিত বোধ করে। তবে সেটা প্রকাশ না করে বলে, এভাবে কোথায় যাচ্ছেন? আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি এক্ষুনি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি। খেয়ে তারপর যান।

নিলা তার চাচাতো ভাইকে বলে বাইরে থেকে বিরিয়ানি কিনে আনে। সেগুলো এনে মুক্ত ও অহনাকে দেয়। দুজনে তৃপ্তি করে বিরিয়ানি খায়। নিলা বুদ্ধি করে মুক্তর বিরিয়ানিতে পেট ব্যাথার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিরিয়ানি খাওয়ার পর থেকে মুক্তর পেটে ব্যাথা শুরু হয়।

নিলা মনে মনে বলে, একদম ঠিক হয়েছে। বিরিয়ানি খাওয়ার শখ আজ জন্মের মতো মিটিয়ে দেবো। আর এমনিতেও আপুর পরে আমি যাবো ঐ বাড়িতে তোমার বউ হয়ে। তারপর তোমার এই এটিটিউড বের করে দেব মুক্ত সাহেব।

মুক্তর পেট ব্যাথার কথা শুনে অহনা বিচলিত হয়ে যায়। নিজের ব্যাগ থেকে ওষুধ এনে মুক্তকে দিয়ে বলে, এই ওষুধটা খাও পেট ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।

মুক্ত ওষুধটা খেয়ে নেয়। যার ফলে তার পেট ব্যাথা সত্যিই অনেক কমে যায়। এরপর আসে বিদায়ের পালা। মহিমা বেগম মুক্ত ও অহনাকে বর বউয়ের সাথে গাড়িতে যেতে বলে। তারা রাজি হয়ে যায়।

অন্যদিকে নিলা জেদ ধরে সে তার বোনের সাথে তার শ্বশুর বাড়ি যাবে। নিলার জেদের কাছে হেরে তার মা-বাবা তাকে যেতে দিতে রাজি হয়। নিলা বিজয়ীর হাসি হাসে।

বর বউ সামনে বসে। মুক্ত, অহনা আর নিলা পেছনের দিকে বসে। নিলা মুক্তর পাশে বসে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে। যার কারণে মুক্ত অহনাকে বলে, তুমি মাঝখানে এসে বসো। আমি জানালার পাশে বসছি।

অহনা বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারে না। মুক্ত নিজের এক বন্ধুকে ফোন করে বলে, তুই আমার বাইকটা নিয়ে চলে আসবি। পাশেই একটি গ্যারেজে রেখে আসছি।

নিলা মুক্তর থেকে পাত্তা না পেয়ে মুখ ভার করে বসে থাকে। অহনা বসে বসে বোর হচ্ছিল জন্য ফোন বের করে একটি কোরিয়ান ড্রামা দেখতে থাকে। নিলার নজর যায় সেদিকে। সে অহনাকে বলে, এটা ট্রু বিউটি ড্রামা না? আমার খুব প্রিয় ড্রামা। আমিও দেখব।

হ্যাঁ, এটা ট্রু বিউটি। তুমিও দেখো।

মুক্ত একপর্যায়ে তাদের ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা এসব কি বিটিএসের ভিডিও দেখছ?

অহনা বলে, এটা বিটিএসের ভিডিও নয়। এটা একটা কোরিয়ান ড্রামা। তোমরা ছেলেরা এই সাধারণ জিনিসটাই বোঝো না।

মুক্ত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। অহনা নিলার সাথে মিলে গল্পগুজবে ব্যস্ত হয়ে যায়।

একসময় গাড়ি এসে পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। মহিমা বেগম বরণ ডালা নিয়ে এসে নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলে। এইসময় নিলা কল্পনা করে একদিন হয়তো তাকেও মহিমা বেগম এভাবে বরণ করে বাড়ির ছোট বউ করে ঘরে তুলবে।

সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। বরণের পর বর বউকে বাসর ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়৷ এইসময় অহনা মুক্তকে বলে, মুক্ত ভাইয়া চলো আমরা বাসর ঘর আটকে দাঁড়াই। আজ তোমার বড় ভাইয়ের থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে তবে দম নেবো।

হ্যাঁ ঠিক আছে চলো।

মুক্ত ও অহনা বাসর ঘরের গেট আটকে দাঁড়ায়। মুক্তর বড় ভাই আসতেই অহনা বলে, ভাইয়া এভাবে তো ভেতরে যাওয়া যাবে না। আগে এক লাখ টাকা দাও তারপর ভেতরে ঢুকতে দেবো।

কথাটা শোনামাত্রই মুক্তর বড় ভাই অজ্ঞান হয়ে যায়। মুক্ত পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরায়। ততক্ষণে নতুন বউ বাইরে চলে এসেছে।

মুক্ত তার নতুন ভাবিকে বলে, ভাবি তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে৷ আমার ভাই যা কিপটা। মাত্র এক লাখ টাকা দিতে বলেছি জন্য অজ্ঞান হয়ে গেল।

ভাই এমন করিস না। আমি এক লাখ টাকা কোথায় পাব।

আমি কোন কথা শুনব না ভাইয়া৷ যদি বাসর করতে চাও তাহলে এক লাখ টাকা দিতেই হবে।

মুক্তর নতুন ভাবি নিজের হাতের গহনা খুলে দিয়ে বলে, এই গহনাগুলো বিক্রি করে এক লাখ টাকা পেয়ে যাবে। এখন তোমার ভাইয়াকে যেতে দাও।

মুক্ত গহনাগুলো নিয়ে বলে, আচ্ছা ভাবি ধন্যবাদ। আমরা এখন যাচ্ছি। অহনা চলো আমার সাথে। এই গহনাগুলো বিক্রি করে আইফোন কেনা যাবে।

অহনা ও মুক্ত খুশি হয়ে চলে আসে। অহনা নিজের ফোনের কথা মনে পড়ে। তাই সে বলে, মুক্ত ভাইয়া আমার ফোন তো নিলার কাছে।

যাও গিয়ে নিয়ে এসো।

তখনই নিলা কান্না করতে করতে অহনার কাছে এসে বলে, আপি তোমার ফোন আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে।

সাথে সাথে অহনা মুখ কালো করে নেয়। মুক্ত নিলাকে কথা শুনিয়ে দেয়। অহনা তখন বলে, ওকে বোকো না। আমি ফোন ঠিক করে আনব।

এত রাতে তুমি একা যেতে পারবে?

না একা কেন যাবো। তুমি চলো আমার সাথে।

হ্যাঁ, আমারই আইফোন কেনা হয়ে যাবো চলো যাই।

তারা দুইজনে মিলে বাইরে বেরিয়ে যায়। একটি ফোন ভালো করার দোকানে গিয়ে ফোন ভালো করতে দেয়। মুক্ত একটা আইফোন কিনে নেয়। আইফোনে অহনার সাথে একটা সেলফি তুলে নেয় মুক্ত। ততক্ষণে অহনার ফোনও মেরামত হয়ে যায়। অহনা ফোন নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে।

বাড়িতে আসামাত্রই অহিমা বেগম অহনাকে থা’প্পড় মা’রে।
#চলবে

#পরিপূর্ণতা
#৩য়_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

অহনা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে এখনো বুঝতে পারছে না তার মা কেন তার গায়ে হাত তুলল। ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না। কারণ অহিমা বেগম তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল।

অহনা কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও মুক্ত আর চুপ থাকতে পারে না৷ সে অহিমা বেগমকে প্রশ্ন ছু*ড়ে দেয়, খালামনি তুমি অহনাকে মা*রলে কেন?

অহিমা বেগম বলেন, মে*রেছি ঠিক করেছি। দরকার পড়লে আবার মা*রব। এই মেয়ের জন্য আমার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে গেছে। আর মুক্ত তুই, তোর থেকে অন্তত এটা আশা করিনি। বাসর রাতে দরজা ধরলি ভালো কথা তো টাকা না নিয়ে বউয়ের গয়না নিলি ছি। আর অহনা তুই আত্মীয়দের সামনে আমার মান সম্মান নষ্ট করে দিলি। আমাদের কি এত অভাব পড়েছে যে টাকার জন্য গহনা নিতে হবে?

মুক্ত এবার পুরো ঘটনাটা বুঝতে পারে। তার নতুন ভাবি ও নিলা মিলে সবাইকে বলেছে সবকিছু। যার কারণে এত ঘটনা ঘটে গেছে। মুক্ত নিজের পকেট থেকে তার নতুন ভাবির গহনা বের করে তার হাতে দিয়ে বলে, এই নাও ভাবি তোমার গহনা। আমি শুধু মজা করে এগুলো নিয়েছিলাম। তোমার গহনা বিক্রি করে আইফোন কেনার জন্য নয়। আমার আগে থেকেই টাকা জমানো ছিল। সেই টাকা দিয়েই আইফোন কিনেছি। এমনিতেও কালকে তোমার গহনা তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম। এত সিন ক্রিয়েট করার দরকার ছিল না। অহনা তুমি চলো আমার সাথে। আর খালামনি তোমাকেও বলছি অন্যের কথায় নিজের মেয়েকে কষ্ট দিও না। এমনি তো অহনা বলে না যে তোমার থেকে চলে আসতে পারলে বাঁচে। তুমি সবসময় ফুফার রাগ অহনার উপর তুলো। ফুফা তোমায় একা রেখে চলে গেছে এটা কি অহনার দো*ষ? অহনা তো তোমারও মেয়ে।

অহিমা বেগম আর কিছু বলতে পারেন না। খুব কষ্ট হয় তার। তিনি নিজেও চান না খারাপ ব্যবহার করতে। অহনাকে যথেষ্ট ভালোও বাসেন তিনি। কিন্তু মাঝে মাঝে তাকে দেখলে নিজের স্বামীর কথা মনে পড়ে যায়। তাই অহনাকে সামান্য কারণেই বকাবকি করেন এমনকি গায়ে হাতও তোলেন।

মুক্ত অহনাকে নিয়ে একটি ঘরে যায়। অহনাকে বলে, তুমি এই রুমে থাকো৷ কোন দরকার হলে আমায় ফোন করো আমি পাশের রুমে আছি। আর একদম কাঁদবে না, কাঁদলে তোমাকে একটুও ভালো লাগে না। মনে হয় শ্যাওলা গাছের পেত্নী।

অহনা হেসে দেয়। অহনার হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় মুক্ত। মনে মনে বলে, তোমার মুখে এই হাসি সবসময় দেখতে চাই আমি। তোমাকে সুখী করার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতেও রাজি।

অহনাকে সেখানে রেখে নিজের মায়ের রুমে চলে যায় মুক্ত। মহিমা বেগম সবেমাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন মুক্ত এসে বলে, ভেতরে আসতে পারি আম্মু?

হ্যাঁ আয়। বল কি বলবি।

আব্বু এখনো আসেনি?

না। বিয়েবাড়ির কত কাজ। সব করতে তো দেরি হবে।

ও একটা কথা বলতে আসলাম। আমি আর খালামনির ভরসায় অহনাকে রাখার সাহস পাচ্ছি না। খালামনি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমি অহনার দাদির কাছে শুনেছি, খালা কারণে অকারণে অহনার গায়ে হাত তোলে। এই অবস্থায় অহনাকে বেশিদিন ভালো রাখা যাবে না। তুমি কিছু করো আম্মু। অহনাকে যতদ্রুত সম্ভব এখানে নিয়ে এসো।

আমিও জানি সেটা। আর তো মাত্র কয়েক’টা দিন। অহনার এইচএসসির রেজাল্ট আসুক তারপর ওকে এখানে নিয়ে আসব। যদি পাবলিকে চান্স পায় তাহলে প্রাইভেটে পড়াবো। তবুও ওকে নিয়ে আসব।

আচ্ছা তাহলে আমি যাই।

পরের দিন সকালেই অহিমা বেগম সিদ্ধান্ত নেন আজই তিনি অহনাকে নিয়ে চলে যাবেন। মহিমা বেগম অনেক মানানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। অহিমা বেগম মূলত যেতে চাইছেন কারণ তার শাশুড়ী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বামী অন্য আরেকটা মহিলার সাথে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাশুড়িই অহিমা বেগমের একমাত্র সহায় সম্বল। তার শ্বশুর একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। সেই কারণে তার মৃত্যুর পর তার শাশুড়ী যে পেনশনের টাকা পায় সেই দিয়ে সংসার চলে।

অহিমা বেগম নকশিকাঁথা সেলাই করেন। এভাবেই তাদের সংসার চলে। অহিমা বেগম ও অহনাকে এগিয়ে দিতে যায় মুক্ত। তাদের গিয়ে টাঙ্গাইলের বাসে চড়িয়ে দিয়ে চলে আসে।

❤️
আজ অহনার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। সে আর্টস থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। নিজের রেজাল্ট নিয়ে খুব খুশি সে। এসএসসিতে সাইন্স নিয়ে এ প্লাস পায়নি সে। তাই ইন্টারে এসে আর্টস নিয়েছিল সে। এবার ভালো রেজাল্ট করতে পেরে আফসোস হচ্ছে আগে যদি মায়ের কথা শুনে আর্টস নিত তাহলে ভালো হতো। তা না জেদ করে সাইন্স নিয়েছিল।

অহনা তাকায় আদিলের দিকে। আজ অহনারা সব বন্ধুরা মিলে নিজেদের ভালো রেজাল্ট সেলিব্রেট করছে। সেখানে আদিলও এসেছে। অহনা ভেবে রেখেছে আজই আদিলকে প্রপোজ করবে। তাইতো একটি গোলাপ ফুলও নিয়ে এসেছে সে। আজ এই ফুল দিয়েই প্রপোজ করবে।

অহনা যখনই প্রপোজ করতে যাবে তখনই আদিল হঠাৎ করে সবার সামনে অন্য একটি মেয়েটিকে প্রপোজ করে। মেয়েটিকে নাকি অনেকদিন থেকে পছন্দ করে আদিল। অনেকদিন থেকে পটানোর চেষ্টা করছে। তাই আজ সরাসরি প্রপোজ করে দিল। মেয়েটাও আজ আদিলকে আই লাভ ইউ টু বলে দিল। সমস্ত বন্ধুরা মিলে আনন্দে মেতে উঠল। সবার সামনে অহনাও মেকি হাসল। কিন্তু গোপনে অশ্রু বিসর্জন করে। তার বুক ফে*টে যাচ্ছিল আদিলকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে।

সেদিন বাইরে থেকে ফিরে বাড়িতে এসে দরজা লাগিয়ে কাদতে থাকে অহনা। আদিল অন্যকারো হয়ে গেছে এটা সে মানতে পারছিল না। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না সে। তাই অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আদিলকে যে করেই হোক নিজের করে নেবে। প্রয়োজনে ঐ মেয়ের সাথে আদিলের ব্রেকাপ করিয়ে নেবে তাও।

এরপরের দিন, অহনা সরাসরি আদিলের সামনে গিয়ে তাকে প্রপোজ করে। আদিল রেগে গিয়ে বলে, তুমি জানো না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। তবু কেন আমায় প্রপোজ করছ?

তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তো কি ব্রেকাপ করে নেও। বিশ্বাস করো আমার থেকে বেশি ভালো তোমাকে আর কেউ বাসতে পারবে না।

এসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করো অহনা। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা বুঝেছ?

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদিল। বলো কি ভাবে প্রমাণ দিতে হবে। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। তুমি বললে নিজের জীবনও দিয়ে দেবো।

আদিল বলে, আচ্ছা আমি বললে জীবন দিতে পারো। তাহলে যাও আমাকে যদি সত্যি ভালোবাসো তাহলে মেইন রোডের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াও। তাহলে বুঝব তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো।

আদিলের কথা শুনে অহনা সত্যিই মাঝরাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। আদিল ও তার বন্ধুরা সবাই অহনাকে সরে আসতে বলে কিন্তু অহনা সরে আসে না। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে অহনাকে ধা*ক্কা মা*রে। মুহুর্তেই রাস্তা রক্তে ভেসে যায়। আদিল ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। কিছু মানুষ এসে অহনাকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

অহনার পরিবারের কাছে খবর পৌঁছে যায়। অহনার মা ও দাদি ছুটে আসে। মুক্ত তার মায়ের কাছে খবরটা শোনামাত্রই ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

অহনার রক্তের প্রয়োজন ছিল। মুক্ত টাঙ্গাইলে এসে বিভিন্ন যায়গায় কথা বলে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়। অহনার অবস্থা তবুও অবনতি হয়। মুক্ত কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে জানতে পারে অহনা নাকি স্বেচ্ছায় রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here