পরিশেষে ভালোবাসি পর্ব ৮

#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৮
#সামিয়া_মেহেরিন

আহিয়ান হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন। নিজেই বলতে শুরু করলেন।
-খুব অবাক হচ্ছো আমাকে এভাবে দেখে, তাই না?

আমি মাথা নাড়ালাম। যার অর্থ হ্যাঁ। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
-একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হওয়ার পাশাপাশি আমার আরো একটা পরিচয় আছে। আমি সিআইডি অফিসার। তোমাকে যারা কিডন্যাপ করেছে তারা একটা মাফিয়া দলের সঙ্গে যুক্ত। এই দলটাকে ধরার চেষ্টায় আছি অনেকদিন ধরে। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো ভাবে ব্যর্থ হচ্ছি।

-কিন…তু…ওরা তো…বলছিলো..

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আসাদ সেখানে চলে আসে। আহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে তারা কোথাও কাউকে খুঁজে পায় নি। আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আণাকে বললেন, চলো বাড়ি যাই।
-হুম।

নিশা, আরিয়া আর মাহাদীর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মাহাদী তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। আরিয়া আর নিশা বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাবে তখন মাহাদী নিশাকে পিছু ডাকে। আরিয়া বাড়ির ভেতর চলে যায় আর নিশা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

নিশার রাগে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আছে। কারণ আজ শপিং এ পুরো সময়টায় মাহাদী আর আরিয়া একে অপরের হাত ধরে ছিল। কথায় কথায় যেন একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছিল। মাহাদী আর আরিয়ার কাছাকাছি থাকাটা মোটেও ভালো লাগছে না নিশার।

মাহাদী নিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিশা তেঁতিয়ে উঠে বলল
-কী হয়েছে ডাকলেন কেন?

-রাগ করছো কেন? আমার কথাটাতো শোনো।
-যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।
-আচ্ছা বলছিলাম যে, আরিয়াতো তোমার বোনের মতো তাই না?
-হ্যাঁ, তো?
-যেহেতু বোন হয়, সেহেতু তুমি তোমার বোনের ভালোই চাইবে তাই না। দেখো, আমি আরিয়াকে ভীষণ ভালোবাসি। তবে কখনো বলা হয়নি।

মাহাদী আরিয়াকে ভালোবাসে শুনতেই নিশার পুরো পৃথিবী থমকে যায়। এমন কিছু হবে সে কোনোদিন ভাবে নি।

-আমি ঠিক করেছি, আগামীকাল আমি আরিয়াকে প্রপোজ করব। কিন্তু এসব ব্যাপারে আমি খুব কাঁচা। আমি চাই তুমি আমাকে হেল্প করো। আরিয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে সাহায্য কর। প্লিজ নিশা তোমার আমাকে হেল্প করতেই হবে।

নিশা কোনো কথা না বলে দ্রুত বাড়ির ভেতর চলে যায়। এদিকে মাহাদী নিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। শেষ পর্যন্ত কিনা আমি এই গম্ভীর, গোমরামুখো, রহস্যজনক ব্যক্তি আহিয়ানের প্রেমে পড়লাম। দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে আমার এই খাটাশটার প্রেমেই পড়তে হলো।

কিন্তু আহিয়ান! সে কি আমাকে ভালোবাসে? কেনইবা আমাকে বিয়ে করলেন তিনি? আমার সব প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র আহিয়ানের কাছে আছে। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নন। আর কতদিন তিনি আমাকে এভাবে ধোয়াশার মধ্যে রাখবেন?

পরেরদিন নিশা আরিয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করে। বাড়ির পুরো ছাদ ডেকোরেশন করে মাহাদী সেখানে আরিয়াকে প্রপোজ করবে বলে।

বিকেলবেলা রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ড্রইংরুমে এসে দেখি নিশা মনমরা হয়ে সোফায় বসে আছে।

-কীরে এমন দেবদাসি রূপ নিয়ে বসে আছিস কেন?

আমার কথায় নিশা কিছুটা চমকে যায়।

-ক..কই আমি দেবদাসি হয়েছি? দেখ, আমার ভালো লাগছে না। তুই যা এখন এখান থেকে।
-আরে আরে আমিতো দেখছিই তুই দেবদাসি হয়ে আছিস। করো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস নাকিরে? (অবাক হয়ার ভান করে)

-আমি বুঝেছি তুই আমার পিছু ছাড়বি না। তুই থাক এখানে, আমিই বরং যাই।
-আরে শোন না….

নাশা দাঁড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেলো। আমি জানি ও এখন কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ও নিজের জীবনের সবথেকে বড় উপহারটা পাবে।

নিশা আরিয়াকে নিয়ে ছাদে গেল। মাহাদী আগে থেকেই সেখানে ছিল। তাদের দেখে মাহাদীর ঠোঁটের হাসি আরো প্রশস্ত হয়। নিশা ভাবলো মাহাদী আর আরিয়াকে কিছু সময় ব্যক্তিগত ভাবে কাটাতে দেয়া উচিত। এখানে তার আর থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই মাহাদী নিশার হাত ধরে আটকায়। তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে হাটু গেঁড়ে বসে মাহাদী।

-কোথায় যাচ্ছো, নিশা? যাকে প্রপোজ করব সেই যদি চলে যায় তাহলে কাকে প্রপোজ করব আমি?

-মা…মানে?
-নিশা, ভালোবাসি তোমায়। (একটু থেমে) কখন, কীভাবে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। তবে এটুকু জানি আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটি স্পন্দন শুধু তোমার নামে। আমার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে গেছো তুমি।
-কি… কিন্তু আপ…নিতো বলেছিলেন আপনি আরিয়াকে ভালোবাসেন।

-যদি তাই হতো, তাহলে আমার উডবি ইরফার আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাতো।(আরিয়া)

-একদম ঠিক বলেছো।

অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ছাদের দরজার দিকে তাকায় নিশা। আরিয়া লোকটার কাছে গিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরে নিশার উদ্দেশ্যে বলে
-আসলে তোমাকে ইরফানের কথা বলা হয়নি। ইরফান আমার উডবি হাজবেন্ড। আর যা কিছু হলো সবই মাহাদী ভাইয়ের প্ল্যান।

নিশা অগ্নিদৃষ্টিতে মাহাদীর দিকে তাকায়। মাহাদী বোকা বোকা হাসি দিয়ে মাথা চুলকায়।

মাহাদী আর নিশার ব্যাপারে আহিয়ানকে বলতে খুশিমনে ঘরের দিকে গেলাম। ঘরের কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি ফোনে কারো সাথে কথা বলছেন। যা শুনলাম তাতে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।

তার মানে তিনি অন্যকাউকে ভালোবাসেন।

চলবে

সবাই দেখছি আহিয়ান বিরোধী হয়ে গিয়েছে। তাহলে কি আহিয়ানকে গল্পের নায়ক বানাবো না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here