#পরিসংখ্যা
পর্ব-৪
#tani_tass_ritt
রাহিয়া শাফিনের মাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে পুরোই শক খেলো।সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।এইসব ব্যাপার সে হ্যান্ডেল করতে পারেনা।তাও সাহস করে পাশের একটা লোক কে বলে শাফিনের মাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
হসপিটাকে এডমিট থেকে শুরু করে সব কাজ রাহিয়া একাই করলো।ডাক্তার চেকাপ করছে রাহিয়া বাইরে বসে আছে।
হঠাৎ মুঠো ফোনটা বেজে উঠলো।তরি ফোন দিয়েছে, রিসিভ করবে তখনি ডাক্তার বেরিয়ে এলো।
রাহিয়া ডাক্তার কে দেখে ফোনটা কেটে দিলো।
“ডাক্তার উনি এখন কেমন আছে?”
“বেটার।উনার বিপি লো হয়ে গিয়েছিলো।ঠিক সময়ে না আনলে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারতো।আপনি যেয়ে এখন দেখা করতে পারেন।।”বলেই ডাক্তার চলে গেলো।
রাহিয়া একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ভয়ে ভয়ে কেবিনে ঢুকলো কেনোনা উনি যদি আবার চেতে যায়।
কেবিনে ঢুকে দেখলো শাফিনের মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।রাহিয়া চেয়ার টা নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলো।
” কেমন লাগছে এখন আপনার? ”
শাফিনের মা রুবি বেগম চোখ খুললেন,
“হ্যা মা ভালো লাগছে।তোমার শাফিনের সাথে কথা হয়েছে?”
রাহিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে,
“না আন্টি ওর ফোন অফ।আর মাহিদ ভাইয়ার নাম্বার ও আমার কাছে নেই।”
রুবি বেগম কিছু বললেন না।
“মা তুমি আমাকে মাফ করে দাও।ঐদিনের ব্যাবহারের জন্য আমি খুবই লজ্জিত।আমি আসলে শাফিনকে নিজে দেখে শুনে বিয়ে করাতে চেয়েছিলাম।তাই ঐদিন ঐ কথাগুলো বলেছিলাম যাতে তুমি নিজ থেকে সরে যাও।”
রাহিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুবি বেগমের দিকে।
“কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমি কত বড় ভুল করেছি।তুমি খুবই ভালো মনের একজন মানুষ।তা না হলে কি এতো অপমানের পর ও আমাকে হসপিটালে নিয়ে আসতে।”
এটা শুনে রাহিয়া মনে মনে খুব খুশি হলেও প্রকাশ করলো না।
“সমস্যা নেই আন্টি।আপনি তো আমার থেকে বড়।আমি কিছু মনে করিনি।”
একটু পর রুবি বেগমের বোন রাবেয়া খাতুন হসপিটালে এলেন।
(রুবি বেগমের ফোন থেকে রাহিয়া তার নাম্বার পেয়ে তাকে আসতে বলেছেন।কেননআ কল লিস্টে প্রথমে রাবেয়ার নাম্বার ই ছিলো)
“বুবু তুমি কেমন আছো এখন? ”
“আরে ভালো আছি।তোকে পরিচয় করিয়ে দেই।এই হচ্ছে আমার ছেলের হবু বউ রাহিয়া।”
এটা শুনে রাহিয়া এবং রাবেয়া দুজনই অবাক হলেন।
“বাহ আমাদের শাফিনের হবু বউ তো অনেক সুন্দরি।”
রাবেয়া খাতুন তার ব্যাগ তে ১ হাজার টাকার একটি নোট বের করে রাহিয়াকে দিলেন।প্রথমে রাহিয়া না নিতে চাইলেও এক প্রকার জোর করে হলেও তাকে টাকাটা নিতে হলো।তারপর কিছুক্ষণ তাদের সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে সে তরিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
************************
এইদিকে মাহিদ ওরাও বান্দরবান পৌঁছে গিয়েছে।
পুরো রাস্তা রুপশা শাফিনের কাধে ঘুমিয়েছে এটা ভাবতেই রুপশার লজ্জা লাগছে।
এতো সুন্দর জায়গা দেখে সবারই বেশ ভালো লাগছে।যদিও শাফিন আর মাহিদ আগেও এখানে এসেছে।কিন্তু একসাথে আসা হয়নি।
শাফিনকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে মাহিদ শাফিনের পাশে গিয়ে দাড়ালো।
“রাহিয়ার সাথে কথা হয়েছে? ”
শাফিন কিছু বললো না।
“তুই কি করতে চাচ্ছিস? আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বল তো।”
“আমি আসলে নিজেও জানিনা রে আমার কি করা উচিৎ। জানিস গত একটা বছর ধরে আমাদের ঝামেলা লেগেই রয়েছে।কোনো কিছুই আর ঠিক নেই।কোনো ভাবেই আমাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না।ও প্রচুর সন্দেহ করে।তুই তো জানিস ই আমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডও নেই।”
“আমি বুঝতে পারছি তোর প্রব্লেম। এখন কি করবি?”
“জানিস ভেবেছিলাম বিয়ে হলে হয়তোবা সব ঠিক হবে।তাই মায়ের সাথেও দেখা করিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানেও ঝামেলা বেজে গেলো।আমার আর এগুলা ভালো লাগছেনা রে।আমি একটু শান্তি চাই।ওর আর আমার মেন্টালিটি অনেকটাই আলাদা।তাই হয়তো আমাদের মধ্যে এতোটা ডিস্টেন্স ক্রিয়েট হয়ে গিয়েছে।”
“তুই সময় নে।দেখ কি করবি।আমি সব সময় তোর সাথে আছি।” বলেই মাহিদ সেখান থেকে চলে গেলো।
মাহিদ কে যেতে দেখে রুপশা শাফিনের পাশে এসে দাড়ালো।
“আপনাকে খুব চিন্তিত লাগছে? কিছু হয়েছে?”
রুপশাকে দেখে শাফিনের মনটা ভালো হয়ে গেলো।
“না না তেমন কিছু হয়নি।তো কেমন লাগছে জায়গাটা? এর আগে এখানে এসেছেন?””
“এর আগেও এখানে এসেছিলাম।কিন্তু এইবার একটু বেশিই ভালো লাগছে।” বলেই মুচকি হাসি দিয়ে রুপশা ওখান থেকে চলে গেলো।
শাফিন হা করে তাকিয়ে আছে।সে রুপশার কথার মানে বের করতে ট্রাই করছে।তারপর সেও তাদের সাথে গিয়ে ছবি তোলায় যোগ দিলো।অলমোস্ট সব ছবিতেই রুপশা এবং শাফিন পাশাপশি দাড়ানো।
*********************
এইদিকে রাহিয়া তো নাচতে নাচতে তরির বাসায় এলো।
“কি ব্যাপার তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো?”
রাহিয়া পুরো কাহিনি তরিকে বললো।কিন্তু তরি যে তেমন খুশি হয়নি তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
“কি ব্যাপার তুই খুশি হস নি?”
“এমা খুশি হবোনা কেন? কিন্তু তোর কি মনে হয় তোরা একজন আরেকজনের জন্য পারফেক্ট।?”
এই কথা শুনে রাহিয়া মন টা খারাপ হয়ে গেলো।আসলেই তো এই ৪ বছর একসাথে থাকার পর ও এখনো মনে হয় না কেউ কাউকে ভালোভাবে চিনতে পেরেছে।
“কি হলো কথা বলছিস না কেনো?”
“জানিনা রে বোন।ভালো না বাসলে কি ৪ বছর একসাথে থাকা যায় তুই বল? ”
“এগুলো বলে তুই আমাকে বুঝ দিচ্ছিস নাকি নিজেকে একটু বলতে পারবি?”
রাহিয়া কিছু বলছেনা।
তরি বুঝতে পারলো এখন টপিক চেঞ্জ না করলে রাহিয়ার মুড খারাপ হয়ে যাবে।
“এইসব বাদ দে। আগে আমার কথা শুন।জানিস আজ সাহের আমাকে ড্রপ করে দিয়েছে বাসায়।”
এটা শুনে তো রাহিয়া আকাশ থেকে পরলো।
“কি বলছিস রে।তোদের মধ্যে কি চলছে আমাকে বল তো?”
“আরে কিছুইনা বাবা।”
পুরো ঘটনা বললো তরি।
“তো তোর এটা কয় নাম্বার ক্রাশ শুনি?”
“আরে এটা ক্রাশ না রে। এটা হলো ট্রু লাভ।”
“হয়ছে থাক।আপনি আর আপনার ট্রু লাভ।যার নাম আপনি দুইদিন পর ই ভুলে যাবেন।”
“উফ রাহিয়া তুই বুঝবি না।”
“আচ্ছা আমার বুঝা লাগবে না। আমার প্রচন্ড খুদা লেগেছে।খাবার দে।”
তরি রাহিয়ার জন্য খাবার আনতে গেলো।
***********************
এইদিকে মাহিদওরা ঘুরে টুরে খুব ই ক্লান্ত।এখন তারা আবার বাসায় ব্যাক করবে।ঐটার জন্যই প্রিপারেশন চলছে।এবার ও গাড়িতে শাফিনের পাশে বসলো রুপশা।
মাহিদ রাহিয়ার কথা বলার পর থেকেই শাফিনের কেমন যেনো খারাপ লাগছে।সে কি রাহিয়াকে ঠকাচ্ছে!তার ঢাকা গিয়েই প্রথমে রাহিয়ার সাথে কথা বলতে হবে।
শাফিনের এমন চুপ থাকা রুপশার মোটেও পছন্দ হচ্ছেনা।সে ট্রাই করেও শাফিনের সাথে কথা বলতে পারছেনা।এমনকি তার পাশে বসেও কোনো লাভ হলোনা।শাফিনের যেনো রুপশার প্রতি কোনো খেয়ালই নেই।
******************
এইদিকে রাহিয়া বাসায় ফিরে এসে দেখে তাহিয়া কাঁদছে।
“এমা তুই কাঁদছিস কেন?”
“কাল আমার রেজাল্ট দিবে।ভয় লাগছে। ”
“আরে গাধি তো কি হয়েছে।তুই অনেক ভালো স্টুডেন্ট। তো এতো প্যারা খাইস না।”
“আপুনি আমাকে একটু রিমন ভাইয়াকে কল দিয়ে দিবে?”
রাহিয়া তার ফোনটা তাহিয়াকে দিলো।
“নে তুই কথা বল।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
তাহিয়া রিমনকে কল দেয়ার সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হলো।
“হ্যা রাহিয়া বলো।””
“আমি তাহিয়া বলছিলাম।”
রিমনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সে তাহিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো।
**********************
মাহিদ ওদের অনেক রাত হলো বাড়ি পৌঁছাতে। ততক্ষনে সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।ওরা ফ্রেশ টেশ হয়ে সবাই শুয়ে পরলো।
শাফিনের কেমন যেনো অপরাধবোধ কাজ করছে।সে আগের সিমটা অন করে রাহিয়াকে কল দিলো।৩ বার রিং বাজার পর কল টা রিসিভ হলো।
“হ্যালো রাহিয়া”
“হ্যালো” ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো রাহিয়া।
একটা সময় এই ঘুম ঘুম কন্ঠ শাফিনের অনেক পছন্দ ছিলো।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কেমন যেনো পানসে হয়ে গিয়েছে।
“কেমন আছো?”
রাহিয়া এবার চমকে উঠলো।এতক্ষন বুঝতে পারেনি কে কল দিয়েছে।
“শাফিন তুমি এতো দিন কই ছিলে? তোমার ফোন অফ ছিলো কেনো?”
“আমি তোমাকে ঢাকায় এসে সব বলবো।আমার তোমার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কথা আছে।”
রাহিয়া বুঝতে পারলো না কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা থাকতে পারে।সে ভাবলো শাফিন আসার পরই সে গুড নিউজ টা দিবে।
“আচ্ছা এখন রাখছি বাই।”
“বাই”
শাফিন ফোনটা কেটে দিলো।
রাহিয়ার আবার ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই তাহিয়া কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।রেজাল্ট না পাওয়া অব্দি যে ও এমন কাঁদতেই থাকবে এটা সবার বুঝা হয়ে গিয়েছে।
ফাইনালি রেজাল্ট পাওয়ার পর তার কান্না থামলো।গোল্ডেন এ+পেয়েছে সে।
ফোনটা নিয়ে সবার আগে রিমনকে কল দিলো।কিন্তু ফোনটা রিসিভ না হওয়ায় মন টা খারাপ হয়ে গেলো তার।
এইদিকে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে রাহিয়া দরজা খুলতে গেলো।
দরজা খুলে রাহিয়া তো পুরা অবাক।সাহের দাড়িয়ে আছে মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে।
“আরে ভাইয়া আপনি?”
“তাহিয়া তো গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। ”
“এমা আপনি কিভাবে জানলেন?”
এবার সাহের একটু ঘাব্রে গেলো।আসলেই তো কি বলবে।
“আরে আমার ফ্রেন্ডের বোন তাহিয়ার সাথেই পরে ও ই বলেছে।আর তাহিয়া তো খুব ভালো স্টুডেন্ট। তাই ভাবলাম মিষ্টি নিয়ে আসি।”
রাহিয়া আর কিছু বললোনা।সাহের নিজের হাতে তাহিয়াকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো।তখনি তরি এসে হাজির।
****************************
এইদিকে মাহিদ শাফিনের উঠতে উঠতে দুপুর হয়ে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাহিদের দাদা সবাইকে রুমে ডাকলেন।
সবাই রুমে যাওয়া পর
“তোমরা সবাই যখন এখানে আছোই তাহলে আমি আমার কথাটা বলেই ফেলি।আশা করি আমার কথার কোনো হেরফের হবেনা।”
মাহিদের দাদা মাহিদ এবং রুপশাকে ডেকে পাশে দাড় করালেন।
তারপর এমন কিছু বললেন যা শুনে মাহিদ,রুপশা শাফিন চমকে গেলো।তারা একজন আরেকজনের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।
চলবে…..
(আপনারা পাশে থাকলেই আমি গল্পটা সুন্দর ভাবে কন্টিনিউ করতে পারবো)