পরীজান পর্ব -৪০+৪১+৪২

#পরীজান
#পর্ব ৪০
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

পরীর সামনে দিয়ে কেউ একজন ঢুকলো ঘরটাতে। হাতে থাকা ব্যাগটা থেকে ছোট ছোট কতগুলো ছুরি বের করে লম্বা টেবিলে রাখলো। তার পর কতগুলো বড় বড় ছুরি রাখে। পরী ঘাড় ঘুরিয়ে লোকটিকে দেখতে লাগল। কালো মুখশধারী লোকটা ঠিক পরীর স্বপ্নের মতো। অস্ত্র গুলো ও সেরকম লাগছে পরীর। কিন্ত শায়েরের জায়গায় পরী নিজে বসা। হঠাৎই শায়েরের কথা ভিশন মনে পড়ল পরীর। আজ যদি সে মারা যায় তাহলে শায়ের বাঁচবে কীভাবে? সেও কি পাগল হয়ে যাবে রাখালের মতো? করুন অবস্থা হবে শায়েরের!!ভাবতেই অস্থিরতা কাজ করছে পরীর ভেতর। মৃত্যু নিয়ে তার ভয় নেই কিন্ত শায়ের কে নিয়ে সে চিন্তিত।
-‘স্বাগতম জমিদার কন্যা পরী। আপনাকে তাসের ঘরে স্বাগতম।’
আবারও পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চোখ বন্ধ করে ফেলে পরী। কবির এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে নওশাদের পাশে বসলো। পরীকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে সে বলে উঠল,’ভয় পেলে নাকি পরী? ভয় পেয়ো না। তোমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারবো না। শুধু শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলবো ব্যস। বেশি কষ্ট তোমার হবে না।’

কবিরকে থামিয়ে নওশাদ বলে,’আরে ভাই থামো। আগে পরীকে সব সত্য জানাতে দাও। মরার আগে সব জানা পরীর দরকার তো।’

নওশাদ পরীর দিকে তাকিয়ে হাসলো বলল,’আমি যেন কি বলছিলাম হ্যা সম্পান!! না থাক,শুরুটা শুরু থেকেই করি তাহলে?’

লম্বা শ্বাস নিলো নওশাদ তারপর বলতে শুরু করে, ‘শুরুটা হোক ফুলমালাকে নিয়ে মানে তোমার মা। তোমার কাকা তোমার মায়ের সাথে আদৌ কি করেছে তা আমার জানা নেই তবে এটা জানি সে মোটেও ভালো কাজ করেনি। আসলে বলো তো কি,নারীর সৌন্দর্য সব থেকে বেশি আকৃষ্ট করে পুরুষ কে। যেমনটা ফুল আকর্ষিত করে নারীকে। দুটো একই হলো। তোমার বাবা তোমার মায়ের ওই সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে বিয়ে করে ঘরে তোলে। ভোলা ভালা মেয়েটাকে যেভাবে ঘোরাতো ঠিক সেভাবেই ঘুরতো। তোমার মায়ের এই সৌন্দর্য তার কাল হয়ে দাঁড়াল। সেই কাল আর কেউ নয় স্বয়ং তোমার কাকা। কিন্ত মানতে হবে তোমার মা ঠিকই নিজেকে বারবার বাঁচিয়ে নিয়েছিল। এটা তোমার আর রুপালি ভাবির চোখে না পড়লেও সোনালীর চোখে ঠিকই ধরা পড়তো। তখন তোমরা ছোট ছিলে বিধায় কিছু বুঝতে না। তবে সোনালী বুঝতো। তাই সে বারবার আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতো।
এমনকি তোমার কাকাকে অনেক বার মারার চেষ্টাও করেছিল। আর তোমার বাবা সব জেনেও এর কোন প্রতিবাদ করতে পারতো না। কেননা তারা দুজনেই মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে আছে। সেটা পরে বলব। এখন আসি সোনালীর কথায়। কোমল মেয়েটার মৃত্যুটা যে ভয়ানক ছিল পরী।’

নওশাদ কে এবার কবির থামিয়ে দিলো। সে হেসে বলল,’আমার সোনালীর গল্প টা আমিই বলি তুই থাম।’
চমকালো পরী, আমার সোনালী বলতে কি বোঝাতে চাইছে কবির তা বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্ত সে বুঝতেই পারছে না। পরীকে চিন্তিত দেখে কবির বলে,’আরে পরী এতো ভাবছো কেন? আমি তো সব বলছি। আমার সোনালী বলেছি কেন জানো? কারণ সোনালীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল তোমার বাবা। কিন্ত সে তো পালিয়ে গেলো। মনটা আমার ভেঙে গিয়েছিল তখন। সোনালীর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল এই বুকে।’
বুকে হাত দিয়ে কান্নার অভিনয় করে কবির। ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো পরী। বলল,’আসল রূপ টা যখন প্রকাশ্যে এনেই ফেলেছেন তাহলে এতো ভনিতা না করে সব বলে ফেলুন।’

-‘ঠিকই বলেছো। তবে কি বলোতো সোনালী না বড্ড বোকা ছিল। তাইতো ধরা পড়ে গেল। তার পর কি হলো জানো পরী? রাখাল কে ইচ্ছা মতো মারলো তোমার বাবার গোলামরা। সাথে আমিও ছিলাম। আমার মনের মানুষ কে আমার থেকে যে কেড়ে নিলো তাকে কীভাবে এমনি এমনি ছেড়ে দেই? সোনালীকে তোমার বাবা’ই নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছিল সেদিন। আমি আর নওশাদ হাত পা চেপে ধরেছিলাম শুধু। তারপর আমার আর নওশাদের উপর দায়িত্ব পড়ে সোনালীকে কবর দেওয়ার। রাখাল কে জীবিত রাস্তার ধারের কদম গাছের সাথে বেঁধে রাখি। ওর তখনও জ্ঞান ছিলো। তবে মারার ফলে নেতিয়ে পড়েছিল রাখাল। সোনালী কে ওর চোখের সামনেই হত্যা করা হয়। ছেলেটা অনেক বার অনুরোধ করেছিল যেন সোনালীকে ছেড়ে দিতে। তাহলে ও অনেক দূরে চলে যাবে। কখনও সোনালীর ছায়াও মাড়াবে না। কিন্ত এতো ভালোবাসা তো সহ্য হলো না তোমার বাবার। তাই মেরে দিলো।
তবে মানতে হবে পরী,সোনালী অসম্ভব রূপবতী ছিলো। রুপালির থেকেও সোনালী বেশি সুন্দর ছিলো। এমন সৌন্দর্যে ডুব না দিলে কি হয় বলো!!
মরে যাওয়ার পর সোনালী যেন আরো আবেদনময়ী হয়ে উঠেছে! তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম না।
নিজের ইচ্ছা মিটিয়ে নিলাম সোনালীর থেকে। তাও রাখালের সামনেই। কিন্ত সে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। বেচারা রাখাল,তবে নওশাদ ও কিন্ত সেদিন সোনালীকে ছাড় দেয়নি! যাকে এতো ভালোবাসালো তাকে না পাওয়ার বেদনায় সে পাগল হয়ে গেল রাখাল। তারপর রাখাল কে পদ্মার ওপারে রেখে এলাম যাতে সবাই এটা জানতে পারে সোনালী রাখালের সাথে পালিয়ে গেছে। কিন্ত রাখাল পাগল প্রেমিক হয়ে মরা মেয়েটার টানে ফিরে এলো। তবে ওর চেহারা চেনার উপায় নেই। জঙ্গলে ভরে গেছে পুরো মুখে।’

কবির আর নওশাদ হাসছে। পরীর চোখ থেকে জল পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে রাগ দমন করার চেষ্টা করছে সে। হাতের বাঁধন এই মুহূর্তে খোলা থাকলে সে এখুনি দুটোকে শেষ করে দিতো। পরক্ষণেই মনে হলো ওর পা দুটো তো খোলাই রয়েছে। তাই সর্বশক্তি দিয়ে নওশাদের বুক বরাবর লাথি মারতেই চেয়ার থেকে সে পড়ে গেল। কিন্ত কবিরকে লাথি মারা ধরতেই কবির পরী পা ধরে ফেলে এবং দড়ি দিয়ে পরীর পা দুটো ও বেঁধে ফেলে। নওশাদ কে টেনে তুলে আবার চেয়ারে বসায়। পরী চিৎকার করে বলে,’কাপুরুষের দল,একটি মেয়ের সাথে লড়াই করার জন্য এতো মানুষ এসেছিস। ভয়ে তার হাত পা বেঁধে রেখেছিস। সাহস থাকলে হাত পা খুলে দে।’

রাগে ফুসছে পরী। জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস উঠানামা করছে ওর। খুনের নেশা ধরে গেছে। নওশাদ চেয়ারে বসে বলল,’শালির দম আছে। ইচ্ছে করছে সব ঝাল মিটিয়ে দেই। আমাদের জন্য বিপদজনক বলেই জমিদার ওকে মারতে বলেছে। একটু পর কথা বলার মতো অবস্থায় থাকবে না।’

রাগটা নওশাদেরও বেড়ে গেল। কিন্ত কবির ওকে থামিয়ে বলল,’তুই থাম,পরীকে তো একটু পরেই পাওয়া যাবে।’

-‘যদি পুরষত্ব দেখাতে হয় তাহলে আমার হাত খুলে দেখা।’
কবির আদুরে স্বরে বলে,’নাহ,বাঘীনিকে সবসময় খাঁচায় বন্দি করে রাখতে হয়। নাহলে যে আক্রমণ করে বসে। তুমি জানো না বুঝি?’

মুখ ফিরিয়ে নিলো পরী। ওর চোখভরা ঘৃণা। আজকে যদি পরী কোনরকম বেঁচে ফেরে তাহলে এদের একটাকেও ছাড়বে না। নিজের জীবন যায় যাক। অন্তত দু চারটাকে শেষ করে শান্তি পাবে তো?
কিন্ত এখান থেকে বাঁচবে কীভাবে পরী? মনে মনে সে প্রার্থনা করতে লাগল আল্লাহ যেন এই শয়তানের শাস্তি দিতে ওকে বাঁচিয়ে রাখে। কবির নিজের চেয়ার টাতে বসে পড়ল। পরীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,’এটুকুতে উত্তেজিত হলে চলবে পরী? আরো অনেক কিছু শোনা বাকি তোমার। রুপালির কথা তো এখনও বললামই না।’

কবির নিজের চেয়ার টা টেনে পরীর আরেকটু কাছে গিয়ে বসে। তারপর বলে,’রুপালির জন্যই তো তুমি শশীল কে মেরেছিলে। তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্ত শশীলের হাতে রুপালিকে তোমার কাকা তুলে দিয়েছিলো। তিনিই চিঠি পাঠিয়েছিল রুপালির কাছে। তিনি খুব ভাল করেই রুপালি আর সিরাজের সম্পর্কের কথা জানতেন। তাই শশীলের সাথে চুক্তি করেই তিনি সব করেছিলেন। আর তারপর তোমার হাতে সব শেষ। আমরাই শশীলের লাশটা গায়েব করেছিলাম। অন্দর থেকে যেহেতু মহিলাদের বের হওয়া নিষেধ তাই তোমার দুই মা আর কাজের লোকেরা আমাদের চিনতো। কিন্ত তোমরা তিন বোন চিনতে না আমাদের কে। তোমার কাকা আখিরের হাত আছে এই কথাটা তুমি জানতে পারলে রুপালি আর আমার বিয়ের দিন। এবং সেদিনই তুমি তাকে আঘাত করে বসলে। মরতে মরতে সে বেঁচে গেলেও তোমার জহুরি নজর থেকে সে বাঁচলো না। বারবার তুমি তাকে মারার পরিকল্পনা করলে। কিন্ত বরাবরের মতই ব্যর্থ হলে। সেজন্যই এখন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা আর যাবে না। মরতে তোমাকে হবেই। সাপকে যতোই দুধ কলা খাওয়াও না কেন সে ছোবল দিবেই। তোমার বাবা বেশ বুঝেছে যদি তুমি কোনদিন জানতে পারো যে সোনালীর মৃত্যুর কারণ তিনি তাহলে তাকে মারতে তোমার দ্বিধাবোধ হবে না। এজন্য বারবার তোমাকে মারার পরিকল্পনা সে করেছে।’

-‘আর বিন্দু??বিন্দুকে কে মেরেছে সত্যি করে বলুন?’

এবার নওশাদ বলে উঠল,’সে তো তোমাকে প্রথমেই বললাম। তোমাদের প্রিয় সম্পান মাঝি তোমার প্রিয় বিন্দুকে মেরেছে।’

-‘আমি বিশ্বাস করি না। বিন্দুকে একজন নয় অনেক গুলো লোক মেরেছে। আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম সেদিন ওই জঙ্গলে। অনেক লোকের উপস্থিতি আমি সেদিন পেয়েছিলাম।’

নওশাদ হো হো করে হেসে উঠল। বিশ্রী সেই হাসি দেখে গা গুলিয়ে ওঠে পরীর। হাত পা ছুটোছুটি করেও বাঁধন ছিড়তে পারে না।

-‘চোখের সামনে যা দেখো তা কি সব সত্য পরী? তুমি হয়তো জানো না ওইদিন বিন্দুর সাথে তোমাকেও মারার পরিকল্পনা ছিলো। যাই হোক শুরু থেকেই বলি। নাহলে তূমি কিছু বুঝতে পারবে না। কানাইকে মনে আছে তোমার? মনে করে বলতো?’

-‘হুমম,বন্যার সময় আমাদের বাড়িতে চুরি করতে এসেছিল,,,,’
পরীকে বাকিটা বলতে না দিয়ে নওশাদ বলে,’আর তুমি তাকে ধরেছিলে। শুধু তা’ই নয়, কানাই কে চুরির সাজা থেকে বাঁচিয়ে ছিলে। কিন্ত পরী এখানেও তুমি বোকার পরিচয় দিয়েছো। কানাই সেদিন চুরি করতে না, তোমাকে খুন করার জন্য গিয়েছিল। তোমার বাবা ওকে পাঠিয়েছিল। কিন্ত তুমি তাকে ধরে ফেললে। এবং তোমার বাবা বিচারের নাটক সাজালো। তারপর তুমি এসে কানাইকে বাঁচালে। আহ কি বুদ্ধি তোমার!! তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয় পরী। এবার আসি সম্পানের কথায়। শুধুমাত্র তোমাকে মারার জন্য তোমার প্রাণপ্রিয় সখির সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে সম্পান। ওহ পরী তোমাকে তো আসল কথা বলাই হয়নি।’

নওশাদ কিছুক্ষণ ভাবার অভিনয় করে বলল,’শেখর কে সরিয়ে তোমাকে শায়েরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কেন জানো? শুধুমাত্র তোমাকে খুন করার জন্য। কিন্ত শায়ের তো ভিশন ধূর্ত। সে তোমাকে হত্যার পরিবর্তে ভালোবেসে সংসার শুরু করে দিলো!!’
#পরীজান
#পর্ব ৪১
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

বিতৃষ্ণায় ভরে উঠেছে পরীর কোমল মন। বিষাক্ত ধোঁয়া যেন সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে যার দরুন শ্বাস নিতে ভিশন কষ্ট হচ্ছে পরীর। আর কতভাবে সে আজ ভাঙবে?? শায়ের ও শেষমেশ এর সাথে যুক্ত ছিলো! বিশ্বাস করতে চাইছে না পরীর মন। যাকে এতোটা ভালোবাসলো এবং যার থেকে এতো ভালোবাসা পেলো সে’ই কিনা পরীকে খুন করার জন্য বিয়ে করলো!!পরক্ষণে পরীর মনে হলো শায়ের ওকে সত্যি ভালোবেসেছে তো? নাকি ওটাও ওর অভিনয় মাত্র? শায়েরের কথা ভেবে কেঁদে উঠল পরী। নিজেকে আর দমন করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। একসময় সে সাহসি ছিলো। কিন্ত ওই পুরুষ টার জন্য যে একজন নরম এবং ভালোবাসাময় নারীতে পূর্ণ হয়েছিল। সে ভালোবাসার কাছে যে পরী আজ প্রতারিত। এতো ষড়যন্ত্রের মধ্যে শায়েরের নামটা থাকা কি খুব জরুরী ছিল? এই নামটা বাদ দিলে খুব কি ক্ষতি হতো? কোন যুদ্ধ তো হতো না! পৃথিবী ধ্বংসও হতো না। সবশেষে কেন এই নামটা নিলো নওশাদ?? সব ভাবনার মাঝে চোখের পানি ফেলছে পরী। মনে হচ্ছে ওরা মারার আগেই পরী দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। এমন আপনজন থাকার থেকে মরে যাওয়াই উত্তম।

পরীকে এবারে কাঁদতে দেখে নওশাদ আর কবির কোন কথা বলে না। চুপ থেকে পরীকে একটু সময় দিলো। পরী কান্না শেষ করে বলল,’আর কি কি বাকি আছে? সব জানতে চাই আমি।’

নওশাদ আফসোসের সুরে বলে,’তোমাকে এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পরী। কতো ভালোবাসলে তুমি শায়ের কে। কিন্ত সে তোমাকে ধোঁকা দিয়ে মোটেও ভালো করেনি।’

-‘আমি সব জানতে চাই??তারপর কি হয়েছিল?’

-‘সবকিছুতে সম্পানের হাতটা বেশি ছিলো। সে বিন্দুর সাথে ভালোবাসার নাটক করে তোমার সব খবর আমাদের কাছে দিতো। তোমাকে সর্বপ্রথম হত্যা করার দায়িত্ব পড়ে শায়েরের উপর। সম্পান আর বিন্দুর সাথে রাত্রি বেলা তুমি নদীতে ঘুরতে যেতে সেটাও সম্পান শায়ের কে বলেছিল। তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তোমাকে মারতে শায়ের সেদিন গেলো। কথা ছিল সেদিন বিন্দু আর তোমাকে খুন করে নদীতে ভাসানোর। কিন্ত শায়ের পারলো না তোমাকে মারতে। সে পরিষ্কার বলে দিলো তার পক্ষে তোমাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। কারণটা সেদিন শায়ের বলেনি। তবুও তোমার বাবা শায়ের কে কড়া হুকুম দেন তাতেও লাভ হলো না। শেষে ঠিক হলো আমার সাথে বিয়ে হবে তোমার। আর তারপর আমিই তোমাকে হত্যা করবো। এছাড়া তোমাকে হাতে পাওয়ার কোন উপায় ছিলো না। সেটাও ভেস্তে দিলো শায়ের। কেন জানি আমার মনে হয়েছিল শায়ের তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমার সন্দেহ টাই ঠিক হলো। আমি কলপাড়ে এমনি এমনি পড়িনি শায়ের পরিকল্পনা করেই সাবান মেখে রেখেছিল আর আমি পা পিছলে পড়ে যাই। পরে সব জানাজানি হলে আমার আর শায়েরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় অনেক। তোমার বাবা নিশ্চুপ থাকলেও তোমার কাকা শায়ের কে অনেক বকাবকি করেন। যেদিন তোমরা কবির ভাইয়ের বাড়িতে গেলে ওইদিন সব কিছুই পরিকল্পনার মতো হয়েছে। আমাদের মাঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঝগড়া হয়। এবং সেদিন তোমাদের গাড়ির সামনে আমাদের লোকই যায়। ওইদিন কথা ছিল শায়ের ওদের হাতে তোমাকে তুলে দিবে। কিন্ত নাহ শায়ের আবারও পাল্টি খেলো। তোমাকে বাঁচিয়ে নিলো। ইচ্ছে করছিল শায়ের কে তখনই শেষ করে দেই কিন্ত পারলাম কই?

এর মধ্যেই আরেক ঝামেলা ঘাড়ে এলো। শহরের ডাক্তার তিনজন এসে হাজির হলো। তখন তোমরা ঠিক করেছিলে পশ্চিমের জঙ্গলে বিন্দু আর সম্পানের বিয়ে দেবে। সব ঠিক করা ছিলো সেদিন। সেবার আর শায়ের কে পাঠানো হলো না। শহরের ডাক্তারদের দিয়ে যাত্রা দেখতে পাঠানো হলো। কিন্ত এখানেও গন্ডগোল হয়ে গেল। বিন্দু যখন তোমাদের অপেক্ষা করছিল আমরাও দূর থেকে ওত পেতে ছিলাম। কিন্ত আমাদের ছেলেদের তখন বাসনা হলো বিন্দুর প্রতি। কি আর করার? সবার ইচ্ছা পূরণ করতেই হলো। তবে সম্পান তখন ছিলো না। ও যখন এলো বিন্দু তখন মরণ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলো। বিন্দুর ওই অবস্থা দেখে সেদিন সম্পানের ভয়ংকর রূপ দেখেছিলাম। তখনই আমাদের দলের দুজনকে ছুরির আঘাতে শেষ করে দিয়েছিলো। পরে বুঝতে পারলাম সম্পান মিথ্যা না সত্যি সত্যি বিন্দুকে ভালোবাসতো। অভিনয় করতে গিয়ে বিন্দুকে সে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলো। এজন্য সম্পান বারবার বলেছিল বিন্দুর যাতে ক্ষতি না হয়। ওরা যেন শুধু তোমাকেই হত্যা করে। তবে বিন্দু রাতের আঁধারে থাকা মানুষ গুলোর কথা জানতেও পারলো না। সম্পান বিন্দুকে নিজ হাতে খুন করে। যাতে পরবর্তীতে বিন্দুর নিজের প্রতি ঘৃণা না হয়। বিন্দু যাতে জানতে না পারে সম্পানও এসবের মধ্যে ছিলো।
তারপর খড়ের গাদায় কেরোসিন ঢালা হলো। হিন্দু রীতিমত পোড়ানো হবে। এর মাঝে তুমি চলে এলে। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম জঙ্গলের সামনে থেকে। কিন্ত তুমি এলে পেছনের দিক দিয়ে। এবং পালিয়েও গেলে। আমাদের সব পরিকল্পনা আবারও বিফলে গেলো। পরে খবর পেয়ে শায়ের ছুটে এলো। এবং বিন্দুকে যারা ধ*র্ষ*ণ করলো তাদের সবাইকে মেরে দিলো তোমাদের ওই বাগান বাড়িতে নিয়ে। শায়ের বেশি বাড়াবাড়ি করেছিল সেদিন। তাই তোমার বাবা শায়ের কে অনেক কথা শোনায়। এর মধ্যে আরেকটা ভুল হয়ে গেল। শায়েরের পিছু নিয়ে শেখর সব সত্য জেনে গেল। পরের দিন তোমাকে দেখে সে তোমার প্রেমে পড়ে গেল। এবং তোমার বাবাকে এক প্রকার হুমকি দিলো যাতে তোমার সাথে শেখরের বিয়ে দেয়। এটা তোমার বাবা মেনে নিতে চায়নি। তখন গ্রামে এমনিতেই বিন্দু খুন হয়েছে। পুলিশ এসেছে তাই শেখর কে যেতে দেওয়া হলো। সময় নেওয়া হলো বিয়ের জন্য। বিয়ের দিন ওদের গাড়ি দূর্ঘটনা আমরাই করেছি। এবং ফাঁসিয়ে দিয়েছি নাঈম কে। বেচারা নির্দোষ কিন্ত তবুও জেল খাটছে।
শেখর যেদিন জমিদার বাড়িতে এলো তারপর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেনি। জানতাম শহরে ফিরে শেখর সব পুলিশ কে বলে দেবে। তাই ওর কিচ্ছা খতম করে দিলাম। তবে এরপর বিশ্বাসঘাতকতা করে সম্পান। সে পুলিশ কে সব বলতেই যাচ্ছিল কিন্ত তা পারেনি। বিন্দুকে যে ডালে ঝুলিয়ে ছিলাম ঠিক সেই ডালেই সম্পান কে মেরে ঝুলিয়ে দেই। সবাই ভাবলো সম্পান আত্মহত্যা করেছে। ব্যাস এভাবেই একটা ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটলো।
কিন্ত পালক!! ওই মেয়েটা নির্দোষ ছিলো। কি দোষ ছিল ওর? একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছিল শায়েরের কাছ থেকে কিন্ত শায়ের তাকে মৃত্যু উপহার দিলো। কানাইকে মারার পরিকল্পনার করছিল সেদিন শায়ের। কেননা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে কানাই ওত পেতে ছিল সময় মতো তোমাকে সব সত্য বলে দেবে। তাই সত্য গোপন করতে কানাইকে মারার কথা চলছিল। ওইদিন পালক সব শুনে ফেলে। তবে সেও শেখরের মতো ফায়দা ওঠালো। শায়ের কে বলল ও যদি পালককে বিয়ে করে তাহলে কাউকে এই সত্যি বলবে না। শায়েরের আবার মাথা গরম ছিল খুব।
তোমাকে খুন করতে না পারায় সেদিন অনেক কথা শুনতে হয়েছিল ওকে। তাই মাথা গরম করে শায়ের নিজ হাতে পালক কে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলে। কিন্ত সমস্যা হলো যখন জানতে পারলাম পালক সাঁতার জানতো।
তাই আমরা আগেই পালকের বাবা মায়ের কাছে যাই এবং তাদের হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করি। কিন্ত কতদিন আর ওদের চুপ করানো যায়? তাই তাদের কেও মরতে হলো। আমি তখন সচল ছিলাম তাই খুন গুলো আমিই করি। জানোতো পরী,শায়েরের থেকে খুন করার নেশা আমার অনেক বেশি। রক্ত দেখার মজাই আলাদা।
শায়েরের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার কোন কথাই ছিল না। কিন্ত শায়ের নিজেই বিয়ের দিন বলে সে তোমাকে বিয়ে করবে এবং ওর গ্রামে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে। আমি বিশ্বাস করিনি ওর কথা। তোমার বাবাকে বারণ করেছিলাম কিন্ত তিনি শুনলেন না। বিয়ে দিয়ে ওই রাতেই তোমাদের পাঠিয়ে দিলো নবীনগর। এরপর দিনের পর দিন যায় কিন্ত শায়ের তোমাকে মারে না। অনেক চিঠি যায় শায়েরের কাছে সে উত্তর দিতো না। শেষ চিঠি পেয়ে শায়ের এখানে আসে এবং বলে দেয় সে তোমার সাথে থাকতে চায়। আমাদের সাথে সে আর কাজ করবে না।

আমাদের ধোকা দিয়ে শায়ের তোমাকে নিয়ে সুখে থাকবে এ’তো মানা যায় না। তাই জুম্মান কে দিয়ে মিথ্যা বলে তোমাকে এখানে আনলাম। এবং আজ তোমাকে মরতে হবে পরী। শায়ের কে শাস্তি দিতে হলে তোমাকে মরতে হবে। আমি জানি শায়ের নিজ থেকে তোমাকে আমাদের হাতে তুলে দেবে না। তাই ছলচাতুরির আশ্রয় নিতেই হলো।’

পরী চোখ বন্ধ রেখেই সব শুনছিলো এতক্ষণ। এখনও চোখ খুলছে না সে। মনে হচ্ছে চোখ খুললেই শায়ের কে দেখতে পাবে এবং শায়ের এসেই ওর গলায় ছুরি চালিয়ে দেবে। পরী সেই মৃত্যুটা নিতে পারবে না। বিন্দুকে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। না জানি ওই রাতটা ওর কিভাবে কেটেছে? নিজের প্রিয় মানুষটার খারাপ রূপ টা দেখে মরতে পারেনি বিন্দু। কিন্ত পরী তো শায়েরের আসল রূপ টা জেনে গেছে। মরতে ওর ভিশন কষ্ট হবে। পরী চোখ খুলে নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার হাতের বাঁধন খুলবেন না। আমাকে মারার সময় ভুলেও আমার হাত খুলবেন না। তাহলে আমার মৃত্যুর সাথে সাথে আর কার মৃত্যু হবে তা বলা মুশকিল।’

-‘বাহ তোমার তেজ দেখছি বেড়ে গেছে। তোমাকে তো ছাড়া যাবেই না। নওশাদ চল এখন। পরীকে পরওপারে পাঠানোর সময় এগিয়ে আসছে।’

নওশাদ লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। খোড়াতে খোড়াতে সে চলে গেল। কবির ও চলে গেল। আর কিছু জানানোর নেই পরীকে। এখন এখানে না থাকাই ভাল। পরীকে একা ছেড়ে দিলো ওরা।

আফতাব আর আখির বাগান বাড়িতে এসে পৌঁছালো মাত্র। ওদের জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিল। আফতাবের হুকুম না পাওয়া পর্যন্ত পরীর গায়ে ফুলের টোকাও কেউ দিতে পারবে না। বাহিরে কড়া পাহারা,বাগান বাড়িটার চারপাশে জঙ্গলে আবৃত। আশেপাশে কোন ঘরবাড়ির নিশানা ও নেই। তাছাড়া মোঘল আমলের এই বাড়ির ভেতরের কোন শব্দ শোনা কারো পক্ষে সম্ভব না। আফতাব আসতেই কবির এগিয়ে গেলো বলল,’যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। পরীকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ওই মেয়েটা চতুর বেশি। কি জানি কখন আমাদের উপর আক্রমণ করে বসে।’

-‘ডাক্তার আসতে একটু সময় লাগবে। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
নওশাদ গর্জে উঠে বলে,’হোক দেরি, আগে পরীকে শেষ করে দেই তারপর ডাক্তার আসুক সমস্যা নেই।’

-‘বেশি বোঝো না তুমি? আগে ডাক্তার আসুক। পরে সমস্যা হলে তুমি সামলাবে?’

-‘আপনি এখনও আমার কথা শুনছেন না। আমার কথা শুনলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। পরীকে আরো আগেই শেষ করে দিতাম।’
-‘এই খোড়া পা নিয়ে কি করবে তুমি? চুপচাপ বসে থাকো।’

অপমানিত হয়ে নওশাদ চুপ করে গেলো। আফতাব প্রায়ই এই কথা বলে অপমানিত করে ওকে। কিন্ত এজন্য তো নওশাদের কোন দোষ নেই। শায়েরের জন্য সব হয়েছে তাই ওর ক্ষোভ এখনও রয়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে ক্ষতি হবে তাই আফতাব সব সময়ই সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।

সবার কথার মাঝে একজন রক্ষী এসে খবর দিলো শায়ের এসেছে। মুহূর্তেই সবার চোখে মুখে আতঙ্ক দেখা দিলো। এতো তাড়াতাড়ি তো শায়েরের আসার কথা না!! সে ব্যবস্থা আফতাব করেই রেখেছে। তাহলে শায়ের এখানে পৌঁছালো কিভাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। নওশাদ রেগে আগুন। সে বলল,’এজন্যই বলেছিলাম সব তাড়াতাড়ি করতে। সব কিছু বিফলে গেলো।’

কবির ছুট লাগালো পরীর কাছে। দড়িটা নিয়ে ফাস লাগালো পরীর গলাতে। হঠাৎ কবিরের এহেম কান্ডে অবাক হলো না পরী। মৃত্যুর জন্য সেও প্রস্তুত ছিলো। কিন্ত কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই শায়ের সেখানে প্রবেশ করে। এবং কবিরকে এলোপাতাড়ি ঘুসি মারতে থাকে। কয়েক মুহূর্তে কি হয়ে গেল পরী বুঝে উঠতে পারলো না। গলায় ফাঁস লাগার আগেই শায়ের তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। শায়ের টেবিল থেকে একটা ছুরি এনে চেপে ধরে কবিরের গলায়। চোখ তুলে শায়েরের চোখে চোখ রাখে কবির। যেন অগ্নেগীরির লাভা ওই চোখে। কবির বুঝলো এই মুহূর্তে যদি শায়ের ওকে শেষ করেও দেয় কেউ ওকে কিছু বলতে পারবে না। শায়েরের ভয়ংকর রূপ কবির দেখেছে কিন্ত এতোটা ভয়ানক হতে সে দেখেনি। শায়ের রুষ্ঠচিত্ত কন্ঠে বলল,’সাহস অনেক দেখিয়েছিস তুই। তোকে মারলে কেউ আমার গায়ে সূচ ও ছোঁয়াতে পারবে না এটা জেনেও আমার পরীজানের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস তোর হলো কীভাবে??’

ধারালো ছুরির সামান্য ছোঁয়াতেই কবিরের গলার চামড়া কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। সবাই ততক্ষণে চলে এসেছে। আফতাব হুংকার ছাড়লো বলল, ‘শায়ের!!! কবিরকে ছাড়ো!!’

হাত থেকে ছুরি ফেলে দিলো শায়ের। আফতাবের দিকে না তাকিয়ে সে এগোলো পরীর দিকে। হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলতে খুলতে বলতে লাগল, ‘আমার সাথে গলাবাজি করবেন না। আপনার মতো শত জমিদারের মস্তিষ্ক এই সেহরান হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘোরে। আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টাও করবেন না। যদি আমার পরীজানের কিছু হয়ে যেতো তাহলে আপনারা ভয়ংকর কিছুর সম্মুখীন হতেন। তাই মুখটা বন্ধ রাখুন।’

আফতাব চোখ বুজে শায়েরের কথাগুলো হজম করে নিলো। শায়েরের কথা আফতাব কে মানতেই হবে। কেননা আফতাবের দূর্বল স্থানগুলো শায়েরের জানা। নাহলে শায়ের কে সে কবেই মেরে দিতো।
পরীর বাঁধন খুলে হাত ধরে পরীকে দাঁড় করালো শায়ের। পরী শায়েরের থেকে হাত সরিয়ে পিছিয়ে গেল। লম্বা টেবিলের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়াল পরী। শায়ের সাথে সাথেই পরীর কাছে গিয়ে বলল,’আপনি ঠিক আছেন পরীজান? চিন্তার কারণ নেই আমি এসে গেছি। চলুন আমরা ফিরে যাই।’

পরী মৃদু ধাক্কা দিয়ে শায়ের কে দূরে ঠেলে সরিয়ে দিলো। বলল,’ছোঁবেন না আমাকে আপনি। যে হাতে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না আমাকে।’

শায়ের নওশাদের দিকে তাকালো। সাথে নওশাদের চোখের ভাষাও বুঝে গেল। নওশাদ পরীকে সব সত্য জানিয়ে দিয়েছে। তাই শায়ের শান্ত স্বরেই বলল,’যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলবেন। আপাতত এখান থেকে চলুন।’

এবার পরী প্রতিক্রিয়া করে না। চুপচাপ পা বাড়ায় শায়েরের সাথে। কবির বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। গলায় হাত দিয়ে রক্ত দেখে সে রেগে গেল ভিশন। কিন্ত এই রাগটা যেন চিরকালের জন্য থেমে গেল। কারণ আচমকাই কবিরের গলার ভেতরে ছুরি গেঁথে দিয়েছে পরী। শ্বাস টেনে নিতেও পারলো না কবির। মেঝেতে ধপাস করে পড়ে গেলো। গলা দিয়ে বয়ে গেলো রক্তস্রোত।
#পরীজান
#পর্ব ৪২
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

পরী শান্ত মেজাজে কবিরের গলায় ছু*রি বসিয়েছে।
যা কারো মাথাতে আসেনি। এমনকি শায়েরের ও না। নওশাদ ভেবেছিল এতো কিছু জানার পর পরী ভেঙে পড়বে। কিন্ত তা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে পরী নিজেকে আরো শক্তিশালী করে দাড় করিয়েছে। যখন টেবিলের পাশ ঘেষে পরী দাঁড়িয়েছিল তখনই ছু*রিটা হাতে নিয়েছিল এবং সুযোগ বুঝেই কাজে লাগিয়েছে। কবিরকে আঘাত করে পরী আর এক মুহূর্তেও দেরি না করে পা বাড়ালো নওশাদের দিকে। তবে নওশাদ একটু দূরে থাকার কারণে সে সতর্ক হয়ে গেল। শায়ের নিজেও পরীকে ঝাপটে ধরে। টেনে সবার থেকে দূরে নিয়ে আসে। কিন্ত পরী হাত পা ছুটোছুটি করছে। শায়ের বলল,’ছুরিটা ফেলে দিন পরীজান আপনার লেগে যাবে। একটু শান্ত হন।’

-‘ছাড়ুন আমাকে,ওকে না মারতে পারলে আমার রক্ত ঠান্ডা হবে না।’

আফতাব চেঁচিয়ে বলে,’এখনও সময় আছে শায়ের, পরীকে শেষ করে দাও। নাহলে ও তোমাকেও ছাড়বে না।’
আফতাবের কথাতে পরী স্থির হয়ে গেল। হাত থেকে ছু*রিটা আপনাআপনি পড়ে গেল। সে বলল,’কেমন পিতা আপনি যে নিজ কন্যাকে হত্যা করতে চাইছেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি তাহলে আমার উপর আপনার কিসের ক্ষোভ?’

-‘মেয়ে হয়ে যদি বাবাকে খুন করার ইচ্ছা পোষণ করো তাহলে আমি বাবা হয়ে কেন পারবো না?’

-‘আমি কবে আপনাকে খুন করতে চাইছি? আমি তো আপনাকে হত্যা করার কথা কখনও চিন্তাও করিনি।’

-‘এখন তো করতে চাইবে। সেটা আমি জানি। সোনালীর মতো তুমিও আমাকে মারতে চাইবে তাই তোমাকে আগেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।’

-‘সোনা আপা আপনাকে মারতে চেয়েছিল? কিন্ত কেন??’

আফতাব কথা বলল না। তবে নওশাদ বলে উঠল, ‘তোমার বাবার যে সাম্রাজ্যের লোভ পরী। তা পেতে সে নিজের আপনজনদের বিসর্জন দিতেও পিছপা হবে না।’

আফতাব রাগন্বিত চোখে নওশাদের দিকে তাকালো। নওশাদ সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোরায়। পরী তো সব জেনেই গেছে, এটুকু জানলে ক্ষতি কি?

-‘কি এমন লোভ আপনার যে নিজের মেয়েদের হত্যা করতে হবে? অল্প কিছু নিয়ে কি সুখে থাকা যায় না?
যে লোভে এতো পাপ করছেন, পরকালে কি জবাব দিবেন?’

-‘ইহকালে সুখ পেলে পরকালেও পাবো আমাকে নিয়ে তুমি এতো ভেবো না।’

-‘মূর্খ পিতা আপনি। ইহকাল পরকালে আকাশ পাতাল তফাত। তবে একটা কথা শুনে রাখুন, যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আপনি বাঁচবেন না। সাম্রাজ্যের লোভে আপনি, আর আমার প্রতিশোধের আক্রোশ। কার জয় হয় দেখা যাবে। আমি নিশ্চিত এই যুদ্ধে আমার প্রাণ হারাবো আমি। কিন্ত রক্তারক্তি ছাড়া আমি মরবো না। ভুলে যাবেন না আপনার রক্ত আমার শরীরে আছে। তাই আপনার মতো তলো*য়ার
আমিও চালাতে পারি। আর আমার লক্ষ্য কখনো বিফলে যাবে না।’

আফতাব গর্জে ওঠে। তার সামনেই মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে তার মেয়ে। আর তিনি শুনছেন। শায়ের কে সে বলে,’পরীকে রেখে চলে যাও শায়ের নাহলে আজ তোমাকেও শেষ করে দেবো।’

আফতাবের কথা শুনে শায়ের হাসলো। একহাতে পরীকে জড়িয়ে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল, ‘আপনার কোন চামচার সাহস নেই আমাকে ছোঁয়ার।
এসব বলে নিজেকে হাসির পাত্র বানাবেন না। চলুন পরীজান। আমাদের যেতে হবে।’

শায়ের পরীর হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে বাগান বাড়ি ত্যাগ করলো। সব রক্ষিরা শায়ের কে আটকানোর পরিবর্তে তাকে যাওয়ার রাস্তা করে দিলো। কিছুটা দূর এসে পরীর শক্তি যেন সব শেষ হয়ে গেল। সে মাটিতে বসে পড়ল। শায়ের পরীর হাত ছেড়ে দিলো। পরী চিৎকার করে কাঁদছে,বোরখার নেকাব টা টেনে খুলে ফেলেছে সে। জীবনের এতগুলো বছর সে ভুল মানুষদের সাথে কাটিয়েছে সেটা ভাবতেই ঘৃণা বাড়ছে ওর। মাটিতে বসে সে হাত পা ছুড়ছে আর কাঁদছে।

জ্যোৎস্নার আলোতে ভরে গেছে চারিদিক। চাঁদের আলো সবারই প্রিয় কিন্ত সময় যেন সবকিছুতে আজ বিষ ঢেলে দিয়েছে। নিঃশ্বাস ছাড়তেও কষ্ট হচ্ছে পরীর। কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকে উঠে ছুট লাগালো পরী। শায়ের পরীকে দাঁড়াতে বলছে আর ছুটছে। পরী ছুটে গেলো সোনালীর কবরের কাছে। কবরের মাটি আঁকড়ে ধরে মাথা রাখে মাটিতে। এই রাস্তা দিয়ে কতো চলাফেরা করেছে অথচ পরী জানতেও পারলো না এই কবরটা ওর প্রিয় মানুষটার। রাখাল কদম গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসেছিল। পরীকে এইভাবে কাঁদতে দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেল। হামাগুড়ি দিয়ে এসে পরীর পাশে বসে ওকে দেখার চেষ্টা করে। পরী আগের মতোই কাঁদছে। রাখাল পরীকে মৃদু ধাক্কা দিতে দিতে বলে,’এই ওঠ, কান্দস ক্যান এতো। রানীর ঘুম ভাইঙা যাইবো।’

পরী মাথা তুলে রাখালের দিকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে
ঠোঁট ভেঙে আবারো কেঁদে উঠল। সে বলল,’আপার ঘুম কখনোই ভাঙবে না। যদি কাঁদলে ঘুম ভাঙতো তাহলে বিশ্বাস করো আমি অনেক কাঁদতাম। তুমি কেন আপাকে বাঁচাতে পারলে না? আমার আপা কত কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছাড়লো।’

রাখাল পরীর কথার অর্থ বুঝলো না। বোঝার চেষ্টাও করলো না। সে আপন হস্তে সোনালীর কবরে হাত বুলাচ্ছে।

-‘কোন পাপের শাস্তি তুমি পেলে আপা? ওই পিশাচ গুলো তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি তোমার কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমি ওদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর যাই হোক না কেন নওশাদ কে না মারা পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না। তোমার মৃ*ত্যুর প্রতিশোধ আমি নিবোই। মৃ*ত্যুর পরেও বিধাতার কাছে আর্জি জানাবো তোমার হ*ত্যাকারীর শাস্তির জন্য।’

চোখের পানি দুহাতে মুছে নিলো পরী। শক্ত কন্ঠে বলল,’দোয়া করো আপা,তোমার পরী যেন সব কাজে সফল হয়। তোমার ছোট্ট পরী আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। ভালো খারাপ আজ বুঝেছে। প্রতিশোধের মানে জানে। তোমার পরী কখনো ভেঙে পড়েনি আর ভাঙবে ও না। তোমার পরী হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করে নেবে।’

আবার চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল পরী। পেছন ফিরতেই সে শায়ের কে দেখলো। শায়ের এতক্ষণ পরীর কথা শুনছিলো। পরীর চাহনি স্থির। শায়ের তা অন্ধকারে উপলব্ধি করতে পারলো না। তবে শায়ের এটা বুঝতে পারল যে আজকের পরী সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি। শায়েরের জন্য তার মনে এটুকুও ভালোবাসা নেই। শায়ের পরীর দিকে এগোলো না পরী নিজেই আসলো। জমিদার বাড়ির দিকে যাচ্ছে পরী। শায়ের বলে উঠল,’ওখানে যাবেন না পরীজান। আমার সাথে ফিরে চলুন।’

ফিরে তাকালো পরী,’আপনার ভাবনা অসাধারণ। কিন্ত আমি ফিরে যাবো না। আমার প্রতিশোধ না নিয়ে আমি কোথাও যাবো না।’

-‘আপনি একা একটা মেয়ে হয়ে ওদের সাথে কিছুতেই পারবেন না।’
-‘সেটা আমি জানি তবুও প্রতিশোধ না নিয়ে আমি পিছপা হবো না। আপনি চলে যেতে পারেন।’

-‘আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না পরীজান।
চলুন আমরা অনেক দূরে চলে যাই!! আমরা ভালো থাকবো সেখানে।’

-‘বাহ!! কত সহজে কথাগুলো বলে দিলেন। আপনার মতো পাপিষ্টরা সব কিছুকে সহজ ভাবেই নেয়। কিন্ত আমার পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমার ভালোবাসা দেখেছেন কিন্ত এবার আমার ঘৃণা দেখবেন। আপনার পরীজান আপনাকে কতটা ঘৃণা করে তা এবার আপনি দেখবেন।’

শায়ের পরীর কাছে আসলো। পরীর হাতদুটো নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,’আমি দোষী, আমি পাপী, আমি শাস্তির যোগ্য। আপনি আমাকে শাস্তি দিন। আমাকে জড়িয়ে ধরেই শাস্তি দিন। আমি সব মাথা পেতে নেবো। কিন্ত আমার থেকে দূরে সরে যাবেন না।’

পরী ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো শায়ের কে। চিৎকার করে বলল,’আপনার ছোঁয়া বিষাক্ত লাগছে আমার কাছে। আমি মানতে পারছি না আপনিও সবার মতো আমাকে মারতে চেয়েছিলেন। যদি আমাকে মারতেই চান তাহলে আগেই মেরে ফেলতেন। কেন আমার ভেতরে ভালোবাসার জন্ম দিলেন? আমার অনুভূতির সাথে নোংরামো করলেন?’

-‘অনুভূতি ভালোবাসা কখনো নোংরা হয় না পরীজান। নোংরা হয় মানুষ। আমার ভালোবাসা নোংরা না পরীজান।’
শায়েরের কথার পিঠে কথা না বলে পরী হেটে চলল।
শায়ের ও পরীর পিছু নিলো। অন্দরের উঠোনে এসেই বোরখা টা ছুড়ে ফেলে দিলো পরী। মালা এখনও বারান্দায় বসেছিল। পরীকে নিয়ে যাওয়ার পর মালা আর নিজ ঘরে যায়নি। পরীকে দেখে মালা ছুটে এলো। মেয়ের দুগালে হাত রেখে সারামুখে চুম্বন করে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের উষ্ণতা পেয়ে পরী চোখের জলে বুক ভাসালো। মালা কেঁদে যাচ্ছেন পরীকে জড়িয়ে ধরে।
রুপালি নিজ ঘর থেকে দৌড়ে এসে মালাসহ পরীকে জড়িয়ে ধরে। তিনজন মিলে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ভারি হয়ে উঠেছে সারা অন্দর। রুপালি নিজের চোখ মুছে বলে,’পরী তুই শায়েরের সাথে চলে যা ভালো থাকবি।’

-‘আমি যাবো না আপা। ওদের শাস্তি না দিয়ে যাবো না। কার সাথে যেতে বলছো আমাকে? যে কিনা আমাকে খুন করার জন্য বিয়ে করেছে।’

-‘আমি জানি সব। কিন্ত বিশ্বাস কর শায়ের তোকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলে তোকে বিয়ে করেছে। ও তোকে ভালোবাসে অনেক। তুই ওর সাথে ভলো থাকবি।’

পরী রুপালির কথার পিঠে কথা না বলে কুসুম কে ডাকলো। কলপাড়ে গিয়ে কুসুম কে বালতি ভরতে বলে নিজ কক্ষে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর পরী কলপাড়ে গিয়ে বসলো। কুসুম তখনও ছিল ওখানে। পরী কুসুমের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমি না বলা পর্যন্ত তুই এখানেই থাকবি।’

কুসুম মাথা নাড়ে। পরীকে আজ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে কুসুমের কাছে। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে ঘাড় গলা দিয়ে। ঠান্ডা পানি শরীরের পড়তেই কেঁপে কেঁপে উঠছে পরী। ঠোঁট দুটো নীল হয়ে আসছে। তবুও ইচ্ছামতো পানি ঢেলে শান্ত হলো পরী। ভেজা কাপড় ছেলে সিঁদূর রাঙা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ঘরে গেল। শায়ের এতক্ষণ পরীর আসার অপেক্ষায় ছিলো। পরীকে দেখে সে থমকে গেল। পরীর নুতন সৌন্দর্য প্রতিদিন আবিষ্কার করে সে। আজও করলো। তবে আজ যেন ভয়ানক সুন্দর লাগছে পরীকে। চুল মুছেনি,শাড়িটা ভিজে গেছে পানিতে। শায়ের গামছা এনে পরীর কাছে এগিয়ে আসতেই হাত উচিয়ে থামিয়ে দিলো পরী। বলল, ‘আমার থেকে দূরে থাকবেন। আমার সহ্য হয়না আপনাকে।’

-‘তবুও আমি আপনার কাছে আসবোই। আপনার কাছে আসা আটকাতে পারবেন না আপনি। যদি আমাকে মেরে ফেলেন তাহলে আমাদের দূরত্ব বাড়াতে পারবেন।’

-‘বলা বাহুল্য যে আপনাকে আমি ক্রোধের তাড়নায় মেরে ফেলতেও পারি। কিন্ত আমি নিজেকে যথেষ্ট সংযত রাখার চেষ্টা করব। আপনাকে বাঁচতে হবে। দুনিয়াতেই আপনি বেঁচে থাকার শাস্তি পাবেন। আমার আপনার দূরত্ব আপনাকে শাস্তি দিবে।’

শায়ের কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল পরীর দিকে। কোন ভালোবাসা নেই আজকের পরীর মাঝে। পাপ সবকিছু দিয়ে আবার কেড়ে নেয়। শায়ের আজকে তার প্রমাণ পেলো। কাছে থেকেও আজ পরী যেন অনেক দূরে। শায়ের জানে না আদৌ কোনদিন এই দূরত্ব মিটবে কিনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়ের বলে,’আমি খু*ন করে যদি পাপী হই তাহলে আপনিও পাপী। শশীল কে হ*ত্যা করে আপনিও পাপী। মানতে পারবেন এটা?’

-‘একটা নরপিশাচ কে শাস্তি দেওয়া পাপ না। পৃথিবীর বুক থেকে একটা জানো*য়ার তো বিদায় হলো।’

-‘বিন্দুর ধ*র্ষ*ণ কারিদের হত্যা করে তাহলে আমিও পাপ করিনি তাহলে।’

-‘তাহলে পালক??এবার বলবেন এটাও পাপ নয়?’

#চলবে,,,,

চোখে ভিশন ব্যথা করছে। সকাল থেকেই ড্রপস দিচ্ছি। তাই লিখতে দেরি হচ্ছে। কালকে পরীজান আসবে না।
#চলবে,,,,,
#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here