পরীজান পর্ব -৫১+৫২+৫৩

#পরীজান
#পর্ব ৫১
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

পরী দ্রুত পায়ে জুম্মানের কাছে গেল। এসব মা*রা*মা*রি দেখলে ভয় পায় জুম্মান। আর সেই ছেলেটাকে দিয়েই খারাপ কাজ করাতে চায়!! এটা ভেবে আরও রাগ হচ্ছে পরীর। রুপালি দা হাতে বেঁচে যাওয়া রক্ষির দিকে এগোয়। লোকটা ভয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। তবে রুপালি তাকে বাঁধল দড়ি দিয়ে।
এবার জুম্মান কে ওরা বাড়িতে পাঠাবে। সিরাজ এখুনি চলে আসবে। এখন জুম্মান কে বাইরে পাঠানোটা ঠিক হবে না। পরী জুম্মান কে উদ্দেশ্য করে বলে,’এখুনি সিরাজ এখানে আসবে। তুই লুকিয়ে বাড়িতে যাবি। সদর দরজা দিয়ে ঢুকবি না। গাছ বেয়ে ছাদে উঠবি তার পর ঘরে যাবি। সবার আগে সোনা আপার ঘরে যাবি। সেখানে তোর শায়ের ভাইকে আমি বেঁধে রেখেছি। তুই আগে তার বাঁধন খুলে দিবি। আমার শ্বশুরবাড়ির পথ জানা আছে তোর? রাতের বেলা যেতে পারবি তো?’

কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না জুম্মান। তবে এটুকু বুঝতে পারছে যে পরীর কথামত ওকে কাজ করতে হবে। তাই সে মাথার নাড়ল। পরী বলল,’শেফালিকে
বলবি ও যেন পিকুলকে নিয়ে বাইরে তোর কাছে দিয়ে যায়। তারপর পিকুল কে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়িতে চলে যাবি। আমি পরে তোকে চিঠি পাঠাব কেমন?’

জুম্মান কাঁদছে আর মাথা নাড়ছে। সে বলে,’আব্বা একটুও ভাল না আপা। আম্মারে খুব মা*রে। ওইদিন আমারে কইলো আমি যদি মিথ্যা কইয়া তোমারে বাড়িতে না আনি তাইলে আম্মারে মা*ইরা ফালাইব।’

এরই মধ্যে সেখানে সিরাজের আগমন ঘটল। পরী আশেপাশে রুপালিকে দেখলো না। জুম্মান দৌড়ে পালিয়ে গেল। সিরাজের বুঝতে বাকি রইল না কিছুই। লাঠি হাতে সোজা হয়ে দাঁড়াল পরী। সিরাজ বলল,’তুমি এখানে?’

-‘বাহ চিন্তা শক্তি দারুণ তোমার। আমাকে চিনে ফেললে! তবে আজ পরী হয়ে নয় তোমার জম হয়ে এসেছি।’

পরনের পাঞ্জাবির হাতাটা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে এলো সে। ঠোঁটের কোণে তার ঝুলে আছে হাসি। আশেপাশের সবকিছুই সে ভাল করে দেখে নিল। আসার সময় রক্ষিদের না দেখেই তার সন্দেহ হয়েছিল। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই সে ভেতরে আসে। ঘরের এক কোণে রক্ষিকে বাঁধা দেখে সেদিকে পা বাড়াল সে। কিন্ত মাঝপথে লাঠি উচিয়ে পরী তাকে থামিয়ে দেয়,’ভুলেও ওদিকে পা রেখো না। আগে নিজের দিক ভাবো।’

সিরাজ আবার হাসে,’তুমি আমার সাথে লড়াই করতে এসেছো? পরী? এটা হাস্যকর পরী। বাঁচতে চাও তো ফিরে যাও। এই মুহূর্তে তোমাকে মা*রার কোন ইচ্ছা আমার নেই। তোমাকে ধীরে সুস্থে মা*রব। যাও ফিরে যাও।’
নিজের কথা শেষ করে সিরাজ আবারও সামনে এগিয়ে চলল। কিন্ত এবার সে প্রতিহত হলো পরীর লাঠি দ্বারা। সিরাজের পিঠে জোরে আ*ঘাত করেছে পরী। রাগন্বিত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল সিরাজ। মুখে বিশ্রী ভাষা তুলে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। সিরাজের সাথে হাতাহাতি শুরু হলো পরীর। সিরাজ খালি হাতে আর পরী লাঠি হাতে। সিরাজ বুঝে গেল এভাবে খালি হাতে পরীর সাথে লড়াই করা যাবে না। তাই সে ফাঁক বুঝে কক্ষ ত্যাগ করে দৌড়ে গেল অন্য একটা কক্ষে যেখানে ধারালো অ*স্ত্র রাখা আছে। পরী নিজেও ছুটছে সিরাজের পিছু পিছু।
সিরাজ দৌড়ে একটা ঘরে ঢোকে। তার জানা মতে এই ঘরে অ*স্ত্র আছে। এবং সে পেয়েও গেল। পরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,’এখনও সময় আছে পরী তুমি চলে যাও। নাহলে কঠিন মৃ*ত্যু দেব আমি তোমায়।’

-‘তুমি ভুল সিরাজ। আজ সে মৃ*ত্যু আমি তোমাকে দেব। আমি জানি মৃ*ত্যুর দুয়ারের কাছে আমি পৌঁছে গেছি। আমি ভয় পাই না মৃ*ত্যুকে।’
সিরাজ বুঝলো আজ লড়াই করতেই হবে তাকে। তাই সে এগিয়ে এসে অস্ত্র চালায় পরীর উপর। পরী নিজেকে রক্ষা করে ঘুরে গিয়ে আরেকটা অ*স্ত্র হাতে নেয়। কিছুক্ষণ দুজনে অ*স্ত্র যুদ্ধ করার পর দুজনেই একটু আধটু জখম হয়। একটা সময় পরীর হাতের অ*স্ত্রখানা ছিটকে দূরে পড়ে গেল। একজন পুরুষের সাথে তো পেরে ওঠা সম্ভব নয়। সেখানে সিরাজ শক্তিশালী পুরুষের মধ্যে একজন। তারমধ্যে রুপালি এখনও আসছে না। পরী তাও থামে না। কক্ষের দেয়ালের সাথে মশাল ঝুলানো ছিল। তাতে আগুন জ্বলছে। পরী দ্রুত পদে আগুনের মশাল টা হাতে নিলো। সিরাজের দিকে উঁচিয়ে ধরল। এভাবে কয়েকবার নিজেকে রক্ষা করে পরী। কিন্ত সিরাজ মশাল সহ পরীর হাত ধরে ফেলে। অন্যহাত দিয়ে অ*স্ত্র ধরে পরীর গলায়। পরী নড়াচড়া বন্ধ করে কিছু একটা ভাবতে থাকে।

সিরাজ বলে,’রূপের দেমাগ তোমার তাই না? এর জন্যই তো শায়ের এতো পাগল। তবে আজকের পর সেই পাগলামি তুমি দেখবে না। রূপ না থাকলে শায়ের তো তোমার ধারে কাছেও আসবে না।’

সিরাজ মশাল টা চেপে ধরে পরীর মুখের উপর। অগ্নি লাভায় মুখটা ঘুরিয়ে নেয় পরী। মুখে কাপড় বাঁধা ছিল,আগুন লেগে গেল কাপড়ে। পরী সাথে সাথেই লাথি মারে সিরাজের পশ্চাৎ এ। এবং ছিটকে দূরে সরে যায়। পরী হাত দিয়ে বৃথা চেষ্টা চালায় আগুন নেভানোর। কিন্ত পারে না। আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে মুখের চারিদিক এবং গলাতে। পরী কাপড়টা খুলতে চাইল কিন্ত ওর হাতে জখম হয়েছে তাই ব্যাথায় ঠিকমত খুলতেও পারছে না। কাপড় পুড়ে পুড়ে পরীর মুখের সাথে লেগে গেল। ভিশন জ্বালাপোড়া হতে লাগল পরীর।
সিরাজ আবার উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গেল পরীর দিকে। পরমুহূর্তে ঘটে গেল আরেকটি ঘটনা। পেছন থেকে একটা ত*লো*য়া*র এসে ভেদ করে সিরাজের বুক। পেছন ফিরতে পারে না সিরাজ। শুধু নিজের বুক ভেদ করে বের হওয়া ত*লো*য়া*রে*র র*ক্ত*মাখা মাথাটার দিকে তাকিয়ে রইল নির্ণিমেশ। রক্তের স্রোত বইতে লাগল সিরাজের বুক থেকে। রুপালি এক টানে বের করে নিল ত*লো*য়া*র খানা। তারপর দ্বিতীয়বারের মতো আবারও একই স্থানে আঘাত করে। সিরাজ আর শরীরের ভর ধরে রাখতে পারে না। লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। রুপালিকে দেখে ওর চোখজোড়া শান্ত হয়ে যায়। মুখের কাপড়টা সরিয়ে দাঁড়িয়েছে সে। সিরাজের দিকে তাকিয়ে সে হেসে বলে,’পেছন থেকে আঘাত করার পদ্ধতি আমি তোমার কাছ থেকেই শিখেছি সিরাজ। দেখো আজ কাজে লেগে গেল।’
কিন্ত রুপালি আর কিছু বলতে পারে না সিরাজ কে। পরীর আর্তনাদে সেদিকে ফিরে তাকায়। আগুন পরীর শরীরের একটু একটু করে ছড়াচ্ছে। রুপালি দৌড়ে পরীর কাছে গেল। নিজের মাথায় বাঁধা কাপড়টা খুলে সেটা দিয়ে চেপে ধরে পরীর মুখ। ঠিক তখনই শায়েরের আগমন ঘটে সেখানে। প্রিয়তমার এরকম অবস্থা দেখে দৌড়ে গেল সে। রুপালির হাত থেকে কেড়ে নিল কাপড়টা। নিজেই নেভালো আগুন। কিন্ত ততক্ষণে পরীর মুখের অর্ধেক ঝলসে গেছে আগুনের তাপে। শায়ের ছুটে গেল বাইরে। খানিক বাদে মাটির কলস ভর্তি পানি এনে ঢেলে দিল পরীর মুখে। মুখটা জ্বলছে খুব। পরী শক্ত মুখে বসে আছে। এখন মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ওর। ইতিমধ্যে বাইরে হইচই শোনা যাচ্ছে। শায়ের আতঙ্কিত হয়ে বলল,’সবাই চলে এসেছে। এখান থেকে পালাতে হবে। চলুন তাড়াতাড়ি।’

পরী উঠতে পারলো না। শায়ের বিলম্ব না করে কোলে তুলে নেয় পরীকে। রুপালিকে সাথে করে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয় ওরা। আফতাব সহ বাকি সবাই ততক্ষণে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। সিরাজ ই তাদের খবর পাঠিয়েছিল। আসার পথে রক্ষিদের দেখতে না পেয়ে সিরাজের চতুর মন বুঝতে পারে এখানে কিছু হয়েছে। আশেপাশে খুঁজে সেই রক্ষিদের বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। একজনের জ্ঞান ছিল না। আরেকজনের বাঁধন খুলে তাকে জমিদার বাড়িতে খবর দিতে পাঠায়। এজন্যই আফতাব তার দলসহ চলে এসেছে। সিরাজের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। র*ক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। কে মা*র*ল সিরাজ কে? অন্য কক্ষে বেঁধে রাখা সেই রক্ষিকেও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায় সবাই। সেও মৃ*ত।
আফতাবের সন্দেহ পুরোটাই পরীর উপর গিয়ে পড়ে। সে চারিদিকে লোক পাঠায়। পরী নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও আছে।
কিন্ত ততক্ষণে শায়ের পরীকে নিয়ে চলে যায়। পরীর শরীরের শক্তি খুবই কম। শায়ের কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রুপালি বলে উঠল,’পরীকে এখুনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ওর কষ্ট হচ্ছে।’

শায়ের রুপালিকে বলে উঠল,’আপনি বাড়িতে ফিরে যান। আপনার বাবা আপনাদের খোঁজ করতে বাড়িতে যাবে। বাড়ির কেউই আমাদের খবর জানে না। আপনি থাকলে সব সহজ হবে।’

-‘কিন্তু পরী?’
শায়ের খানিকটা ধমকে ওঠে বলে,’আপনি যান। পরীজান কে আমি সামলে নিব।’
রুপালি দেরি করে না। দৌড়ে চলে গেল জমিদার বাড়ির রাস্তা ধরে।
শায়ের উপায়ন্তর খুঁজতে লাগে। এই মুহূর্তে পরীকে শহরের ভাল কোন ডাক্তার দেখাতে হবে। এই রাতের বেলা গাড়ি পাওয়া মুশকিল। কিন্ত পরীকে তো নিতেই হবে। রাতের বেলাতে গাড়িওয়ালা চাচাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শহরের পথে রওনা দিলো সে। সারারাস্তা পরীকে সে বুকে চেপে ধরে রাখে।

-‘আমার কথা না শুনে কেন গেলেন আপনি সেখানে পরীজান? আমি যে এখন আপনার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।’
পরী ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্ত পোড়া স্থানে টান ধরায় ব্যথা অনুভব করতেই থেমে যায় সে।শায়ের বলে,’আপনি কথা বলবেন না পরীজান। দয়া করে চুপ থাকুন। চিন্তা করবেন না। আপনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবেন। আমি থাকতে আপনার কিছুই হবে না।’
গাড়ি থেকে নেমে নৌকার খোঁজ করে শায়ের। পেয়েও যায়। শহরে যেতে হলে পদ্মা পাড়ি দিতে হবে। এখন কোন ট্রলার পাওয়া যাবে না। জেলে দের নৌকা দেখা যাচ্ছে শুধু। তাদেরই এক নৌকায় করে পরীকে নিয়ে রওনা হয় শায়ের। পদ্মা পার হওয়া চারটেখানি কথা না। বৈঠা বেয়ে যেতে অনেক সময়ই লেগে গেল। এতো রাতে তো আর কোন ডাক্তারের দোকান খোলা থাকবে না। সরকারি হাসপাতাল গুলোও মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে শায়ের নিজেকে ভিশন অসহায় লাগছে। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন সে কখনোই হয়নি। একটা হাসপাতালের সামন গিয়ে সেটা খোলা পেলো।
অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। দুজন মহিলা ডাক্তার পরীর চিকিৎসা শুরু করে।
আর শায়ের চিন্তিত হয়ে বাইরে বসে থাকে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে শায়ের। এই মধ্যরাতে এতকিছুর সাথে যুদ্ধ করে এতদূর এসেছে সে। তবুও শায়ের পরীকে বাঁচাতে পেরেছে এটাই অনেক তার কাছে। তার করা পা*পে*র শাস্তি পরী পাচ্ছে। এজন্য শায়েরের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। সিরাজ কে জীবিত পেলে শায়ের ওর যে অবস্থা করতো তা সে নিজেও ভাবতে পারছে না। মাথা নিচু করে সে বসে আছে। হঠাৎই চোখের সামনে একজোড়া পা থামতেই চোখ তুলে তাকায় শায়ের। মানুষ টা তার অতি পরিচিত। যদিও তার সাথে অল্প দিনের জন্য পরিচয় হয়েছিল তবুও মানুষ টা তো পরিচিত। শায়ের দাঁড়িয়ে পড়ল।
নাঈম বিষ্মিত কন্ঠে বলে উঠল,’আপনি এখানে? এতো রাতে?’

এতক্ষণ যে শায়ের চোখের পানি ফেলছিল তা শায়েরের চোখ দেখেই নাঈম বুঝতে পেরেছে। ভেজা ভেজা গলায় শায়ের বলল,’পরীজান!!!’
বাকি কথা গলাতেই আটকে গেল ওর। তবে নাঈম বুঝে নিল তার উল্টো। সে ভেবেছিল পরী বোধহয় মা হতে চলেছে সেজন্যই শায়ের তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।

——–

-‘তো সেদিন নাঈমের সাথে আপনার আর পরীর আবার দেখা হয়! কিন্ত আপনি যে বললেন পিকুল কে আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল পরী। তাহলে পিকুল নাঈমের কাছে কীভাবে আসল?’

শায়ের এতক্ষণ কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে গিয়েছিল বিধায় একটু দম নিচ্ছে। হঠাৎই মুসকানের প্রশ্নে চোখ তুলে তাকায় সে। ঠোঁট জোড়া প্রশ্বস্ত করে হাসে শায়ের। অদ্ভুত লাগে শায়েরের এই হাসি ওর কাছে। মনে হচ্ছে এই চাহনি আর এই হাসি তার পরিচিত। কিন্ত মুসকান ঠিক মনে করতে পারছে না যে এর আগে সে শায়ের কে কোথাও দেখেছে কি না! মুসকান কে চিন্তিত দেখে শায়ের হেসে বলে,’এই চিন্তা শক্তি নিয়ে আপনি সাংবাদিক হয়েছেন? আমি তো ভাবতেই পারছি না।’

কথা শেষ করতে করতেই আবার হাসে শায়ের। মুসকানের ভিশন অস্বস্তি লাগছে। এই হাসিটা ওর চেনা কিন্ত মনে পড়ছে না সে কোথায় দেখেছে? কিছুক্ষণ গভীর ভাবে ভাবার পর ওর মনে পড়ল শোভনের কথা। কিন্ত কেন মনে এলো তা সে বুঝতে পারছে না। শোভনের চোখদুটো যেন একদম শায়েরের মতো। এমনকি হাসিটাও। কিন্ত শোভন তো রুপালির ছেলে। নাঈম ই তো ওকে বলেছে। তাহলে শায়েরের সাথে শোভনের এতো কেন মিল? মাথা ঘোরাচ্ছে মুসকানের। এ কোন গোলক ধাঁধায় আটকে গেল সে। তবে সে নিশ্চিত শায়ের এই বিষয়ে মুখ খুলবে না। শায়ের আগের মতোই হাসছে। মুসকান ভেবে পাচ্ছে না এরকম একটা সময়ে আদৌ কোন লোক হাসতে পারে!! দুদিন পর তার ফাঁ*সি। পরীর মতো সেও হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করতে চাইছে!!
মুসকানের মনে পড়ে গেল পিকুলের কথা। হিসেব অনুযায়ী পিকুলের জন্ম ১৯৯৯ তে। তাহলে পিকুলের বর্তমান বয়স দশ বছর। কিন্ত শোভনের বয়স মাত্র ছয়। তার মানে শোভন পিকুল নয়। সে অন্য কেউ। তাহলে শোভন শায়ের পরীর সন্তান!!
এসব কথা মাথায় আসতেই চট করে দাঁড়িয়ে পড়ে মুসকান। শায়েরের সাথে আর কোন কথা না বলে দৌড়ে থানা থেকে বের হয়ে যায়।#পরীজান
#পর্ব ৫২
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

দিনের মধ্যপ্রহরে সূর্য মাথার উপর থেকে খাড়াভাবে কিরণ দেয়। জ্যামের মধ্যে রিকশায় বসে ঘামছে মুসকান। বারবার রুমাল দিয়ে ঘাম মুছছে সে। অর্ধেক রাস্তা এসে সে জ্যামে আটকে গেছে। অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে সে। তাই ভাড়া মিটিয়ে ওখানেই নেমে পড়ে এবং ঠিক করে বাকি রাস্তাটুকু সে হেঁটেই পাড়ি দেবে। হাটতে হাটতে শোভনের স্কুলের সামনে এসে দাঁড়াল সে। কিন্ত স্কুল এখনও ছুটি হয়নি। ধৈর্যহীনা নারীটি দৌড়ে শোভনের ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ল। তখন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিল। মুসকান কে অনুমতি ব্যতীত ক্লাসে ঢুকতে দেখে তিনি অবাক হন। কিন্ত মা’কে দেখে ছোট্ট শোভনের ঠোঁটে হাসি দেখা দিলো। মুসকান যেন স্পষ্ট শায়ের কে দেখছে শোভনে মধ্যে। অপলক চোখে শোভনের দিকে এগোতে থাকে সে। তারপর শোভনের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাইরে চলে আসে সে। শোভন বলে ওঠে,’আম্মু আজকে কি কোন অনুষ্ঠান আছে?’
-‘কেন বলোতো?’
-‘ক্লাস তো শেষ হলো না আর তুমি আমাকে নিয়ে এলে?’
-‘তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই এসেছি।’

-‘ওহ!!তুমি আমাকে সবসময় মিস করো তাই না?’

-‘হুমম। তোমার বাবা মাও তোমাকে মিস করে!’
-‘কি??’
ধ্যান ভাঙে মুসকানের। সে বলে,’কিছু না,চলো তোমাকে চকলেট কিনে দেব।’
শোভন কে সাথে নিয়ে সোজা নাঈমের চেম্বারে গেল মুসকান। নাঈম তখন রোগী দেখছিল। কিছু সময় অপেক্ষা করতে হলো ওদের। দুপুরের বিরতিতে নাঈম বাইরে আসতেই মুসকান আর শোভন কে দেখতে পেল সে। মুসকান উঠে দাঁড়িয়ে নাঈমের কাছে গেল। জিজ্ঞেস করল,’তুমি আমার থেকে একটা কথা লুকিয়েছো নাঈম। এটা তুমি ঠিক করলে না।’
নাঈম জবাব দিল না কেননা সে জানত মুসকান তাকে এই প্রশ্ন করবেই। মুসকান আবার জিজ্ঞেস করে,’শোভন,পিকুল এই নাম দুটো আলাদা মানুষের। পিকুল রুপালির ছেলে আর শোভন পরী আর শায়েরের সন্তান তাই তো?’

-‘সত্য তো জানোই। আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?’

-‘এই সত্যি টা অন্তত তুমি আমাকে জানাতে পারতে নাঈম!!’
-‘পরী চায়নি তার সন্তানের পরিচয় কেউ জানুক। তাই আমিই বলিনি। আর তাছাড়া তোমাকে তো বলেছি আমি,আমার কিছু বলা নিষিদ্ধ। শায়ের ই তোমাকে সব বলবে।’

মুসকান নিরাশ হলো নাঈমের গা ছাড়া ভাব দেখে। ছেলেটা যে এখনও তাকে বুঝলো না। বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছে নাঈমের এমন উদাস ভাবটা। বিয়ের দিনই শোভন কে মুসকানের হাতে তুলে দিয়েছিল নাঈম। একজন আদর্শ মা হতে বলেছিল মুসকান কে। তখন ছোট্ট শোভনের বয়স মাত্র আটমাস। ছোট ছোট হাতে যখন সে মুসকান কে স্পর্শ করতো তখন ভিশন ভাল লাগতো ওর। মাতৃত্বের স্বাদ পেতো সে। কিন্ত আফসোস এই যে এত বছর পর শোভনের আসল পরিচয় জানতে পারে ও। নাঈম শুরুতেই বলেছিল মুসকান যেন তাকে শোভনের বিষয়ে কোন প্রশ্ন না করে। মুসকান তাই করে। কেননা এতো সুন্দর একটা শিশুকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য কারো নাই। অসম্ভব সৌন্দর্যের অধিকারী এই শিশুটিকে দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায় মুসকানের। তাই তো বাবা মায়ের অমতে এই বিয়েতে সে রাজী হয়। মুসকান নাঈমকে ফিরিয়ে দিলে সে হয়ত অন্য কোন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো। যদি সেই নারী শোভনের মা না হয়ে উঠতে পারে? ভালোবাসতে না পারে? এই জন্যই মুসকান শোভন কে আপন করে নিয়েছিল। একটা সুখি পরিবার গড়ে তুলেছে।

শোভন কে নিয়ে বাসায় ফেরে মুসকান। দুপুরের খাবার শেষ করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় শোভন কে। মুসকান ভাবতে লাগে শায়েরের কথা। শায়ের কি শোভন কে দেখেছে? আর দুদিন পর তার ফাঁ*সি তবুও শায়ের একটাবার শোভনের সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেনি। কেন?? এর মধ্যে কি কোন রহস্য আছে? নাহ ওকে আবার যেতে হবে শায়েরের কাছে। আজকেই যাবে সে। শোভন কে বুয়ার কাছে রেখে বিকেলে আবার সাভারে যায় সে। কিন্ত এবার নুরুজ্জামান তাকে দেখা করতে দিতে চায় না। তিনি বলেন,’দেখুন আপনাকে একবার দেখা করতে দেওয়া হয়েছে কিন্ত বারবার একজন ফাঁ*সি*র আ*সা*মীর সাথে দেখা করতে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
মুসকান তার প্রতিবাদ করে বলে,’আর যদি আ*সামী
সম্পূর্ণ নির্দোষ হয় তাহলে?’
চমকে গেলেন নুরুজ্জামান,’কি বলছেন আপনি? সমস্ত স্বাক্ষী শায়েরের বিরুদ্ধে। শায়ের নিজের মুখে সব সত্য স্বীকার করেছে। আমরা সব তদন্ত করে দেখেছি।’
-‘আমি যেটুকু বুঝেছি তাতে আমার মনে হচ্ছে শায়ের নির্দোষ। একটা খু*নও সে করেনি। সব জানতে হলে আমাকে শায়েরের সাথে কথা বলতে হবে। দয়া করে আমাকে যেতে দিন।’

অতঃপর মুসকান শায়েরের সম্পর্কে যতটুকু শুনেছে তা সব বলে দিল নুরুজ্জামান কে। সব শুনে নুরুজ্জামান বললেন তিনিও সব শুনবেন তবে আড়াল থেকে। কারণ শায়ের নুরুজ্জামানের সামনে একটা কথাও বলবে না। দুজনেই শায়েরের সেলে গেল। মুসকান সামনে এলো নুরুজ্জামান দেওয়ালের ওপাশে রয়ে গেল।
মুসকান কে দেখে এগিয়ে এলো শায়ের। মুচকি হেসে বলল,’কি রহস্য ভেদ করে এলেন সাংবাদিক মেডাম?’

-‘আপনাকে বোঝার সাধ্য পরী ছাড়া কারো নেই। এজন্য আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনাকে।’

-‘আমার বা পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি সে। মনে কথা সে বুঝবে না তো কে বুঝবে?’

শায়ের একটু চুপ থেকে বলে,’পরীজান আমাকে একটা কথা বলেছিল জানেন! বলেছিল,”এটা পৃথিবী বেহেস্ত নয়!!এখানে চক্ষু মুদন করে কাউকে বিশ্বাস করা উচিত না।” কথাটা ঠিকই বলেছে সে। তাই তো পরীজান এই পৃথিবীতে শুধু আমাকে বিশ্বাস করেছে।’

মুসকান বারবার বিষ্মিত হচ্ছে শায়েরের কথায়। পরী ঠিকই বলেছে এই ছেলের প্রতিটা কথায় জাদু আছে।মুসকান বলে,’আপনার কি শোভন কে দেখতে ইচ্ছা করে না?অন্তত ফাঁ*সির আগে ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে চান না?’

-‘ওর কথা আমার সামনে বলবেন না।’

-‘আচ্ছা বলব না। তবে এটা বলুন শোভন কে কেন নাঈমের কাছে রেখেছেন? এত বিশ্বাস নাঈমকে কেন করলেন? অন্য কেউ ছিল না?’

-‘ডাক্তারবাবুকে বিশ্বাস করি বলেই নিজ সন্তানকে তার হাতে তুলে দিয়েছি। শুধু তাই নয় দশটা মাস আমার পরীজান তার কাছেই ছিল।’

হাসপাতালে শায়ের নাঈম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। নাঈম এখনও জানে না পরী কে কেন এখানে আনা হয়েছে। সে জিজ্ঞেস ও করেনি পরীর কি অবস্থা। শায়ের চিন্তায় কোন কথাও বলতে পারছে না। এমন সময় ডাক্তার রেবেকা বের হয়ে এলেন। শায়ের কে উদ্দেশ্য করে বললেন,’আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। মুখটা অতোটাও পুড়ে যায়নি তবে শরীরের আঘাত গুলো একটু বেশি। এরকম অ*স্ত্রের
আঘাত সে পেল কীভাবে?’

শায়ের জবাব দিতে পারে না। তবে নাঈম বেশ অবাক হয়। ও রেবেকাকে জিজ্ঞেস করে,’কি হয়েছে আপু?
পরীর মুখ পুড়েছে মানে কি?’

শেষ কথাটা শায়ের কে উদ্দেশ্য করেই বলে নাঈম। রেবেকা বললেন,’তুমি চেনো মেয়েটাকে?’

-‘হ্যা চিনি! কিন্ত হয়েছে কি বলুন?’

-‘আসলে নাঈম,মেয়েটার মুখ অর্ধেক পুড়ে গেছে কোনভাবে। চিকিৎসা করলে পুরোপুরি ঠিক না হলেও কিছুটা ঠিক হবে। হাত,পা এবং শরীরে অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের দাগ। এর মধ্যে মেয়েটা গর্ভবতী। জানি না এখন আমার কি করা উচিত?’

শায়ের যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। পরী মা হতে চলেছে!! এর আগে তো কত চেষ্টাই না ওরা করেছে তবুও কোন লাভ হয়নি। ভাগ্য ওদের সাথে কোন খেলা খেলছে? এবার শায়ের নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। কথা না বলেই সে ছুটে গেল পরীর কাছে। মুখে তার ব্যান্ডেজ করা। ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে বিধায় ঘুমাচ্ছে পরী। শায়ের প্রিয়তমার ক্ষ*ত বি*ক্ষ*ত হাতটা ধরে। যত্নে চুম্বন করে। হাতটা বুকে চেপে ধরে বলে,’আমি পাথরের ন্যায় হয়ে গেছি পরীজান। ঢেউয়ের পর ঢেউ আসুক আমি নিশ্চুপ থাকব। কিন্ত আপনি হীনা কেউ যেন না আসে। তাহলে আমি ভেঙে চুরমার হয়ে সমুদ্রে তলিয়ে যাবো। আপনাকে ছাড়া আমি অসহায় ভিশন অসহায়। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি যে মাতৃত্ব চেয়েছিলেন তা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন কিন্ত এখন এই মাতৃত্ব নিয়েও আপনাকে যু*দ্ধ করতে হবে।’

পরী ঘুমন্ত বিধায় জানতে পারল না তার স্বামী তাকে এখনও কতখানি ভালোবাসে। তার স্বামীর বুকের জমানো ভালোবাসা রত্ন দিয়ে বাঁধানো শুধু তারই জন্য। ভালোবাসার শেষ নেই যদি সেই ভালোবাসা প্রকৃত হয়। সেই ভালোবাসা কখনও শেষ হয় না শুধু পরিবর্তন হয় নতুন কিছুতে। পৃথিবীতে যেমন ঋতু পরিবর্তন হয় ঠিক তেমনি। গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত, শীত ও বসন্তের মতো ভালোবাসার ও ঋতু পরিবর্তন হয়। ভালোবাসা বিয়ে সংসারের মতো পরিবর্তন হয় যুগ যুগ ধরে। শায়ের জানে না তার প্রিয়তমার সাথে কি তার আদৌ এক যুগ থাকতে পারবে কি না?

নাঈম রেবেকার সাথে কথা বলছিল পরীর বিষয়ে। বাচ্চাটা কি পরী জন্ম দিতে পারবে কি না? নাকি পরীর জীবনের ঝুঁকি থাকবে? রেবেকা বললেন, ‘দেখো নাঈম পরীর শরীর এখন ঠিক না। তিন মাস লাগবে ওর মুখ ঠিক হতে। তবে তার বেশিও লাগতে পারে আমি নিশ্চিত নই। ওর শরীরের ক্ষ*ত গুলো সারতে মাসখানেক তো লাগবেই। তখন ওর শরীরের কতটা উন্নতি হবে তা আমি এখন বলতে পারব না। যদি ওর শরীর খারাপ থাকে তাহলে তখন এবরেশন
করা যাবে। পরীর অনুমতিও তো নিতে হবে। আগে পরী সুস্থ হোক তারপর দেখা যাবে। তার আগে পরী সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন যেখানে সে ভালোভাবে থাকতেন পারবে।’

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনল শায়ের। এই মুহূর্তে পরীকে কিছুতেই নূরনগর নেওয়া যাবে না। একটু সুস্থ হলেই পরী আবার হ*ত্যা খেলায় মেতে উঠবে। এতে পরীর জীবনের আশঙ্কা আছে। সেজন্য শায়ের নাঈমের কাছে গিয়ে বলে,’আপনি পারবেন আমার পরীজানকে আপনার কাছে রাখতে? বেশিদিন নয় পরীজান একটু সুস্থ হলেই আমি তাকে নিয়ে যাব।’

-‘কেন বলুন তো? পরীকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ওর পরিবার আছে। পরী সেখানে থাকলে আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।’

-‘আপনাকে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলছি যে নূরনগর এখন পরীজানের জন্য নিরাপদ নয়। সেখানে তার জন্য মৃ*ত্যু অপেক্ষা করছে। আপনি কি আমার কথা রাখবেন?’

নাঈম বুঝতে পারে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। নাহলে পরীর এই অবস্থা কীভাবে হলো? তাই সে কথা বাড়ায় না। পরীকে নিজের কাছে রাখতে রাজী হয়।
এক সপ্তাহ পর পরীকে হাসপাতাল থেকে নাঈমের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরী থাকবে বলে নাঈম বাসা পরিবর্তন করেছে। দুটো রুম আর রান্না ঘর।
পরী নাঈমের বাসায় গিয়ে বিব্রতবোধ করে। সে চায় নূরনগর ফিরে যেতে। এখন সে একটুও আধটু কথা বলতে সক্ষম। তাই সে শায়ের কে বলে,’আমি ফিরে যাব মালি সাহেব। আমাকে গ্রামে নিয়ে চলুন।’

শায়ের পরীর হাত দুটো চেপে ধরে বলে,’আপনি সেখানেই থাকবেন যেখানে আমি বলব। স্বামী হয়ে কখনোই কোন আদেশ করিনি আপনাকে। তবে আজ করছি। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তাই আপনার কিছু আমি হতে দিব না।’

পরী আহত গলায় বলে,’তাহলে ওরা যে আমার আপা আর আম্মাকে মেরে ফেলবে। আর জুম্মান কে তো আমি নবীনগর পাঠিয়েছি পিকুল কে দিয়ে। ওর কি হবে?’
-‘আপনার সব কাজ আমি করে দেব। আমি যাব জমিদার বাড়িতে। আপনার পরিবার রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। আপনি চিন্তা করবেন না।’

পরীর কাঁদতে খুব ইচ্ছা করছে কিন্ত এখন কাঁদা যাবে না। তাহলে ওর যন্ত্রণা বাড়বে। শায়ের চলে যাবে ভেবে পরীর ভেতরটা চুরমার হচ্ছে। কিন্ত স্বামীকে এখন তার বিদায় দিতে হবে। শায়ের নিজেও আর দেরি করে না। আবার সে পরীর কাছে ফিরে আসবে বলে গভীর স্পর্শ এঁকে দিয়ে চলে যায় সে। নাঈমের কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় আমানত রেখে সে দূরে পাড়ি জমায়।

#চলবে,,,,#পরীজান
#পর্ব ৫৩
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

নারীর সৌন্দর্য থাকা যেন কোন পা*প। যেমনটা ফুলের থাকে। ফুলের অতিরিক্ত সৌন্দর্য আকর্ষণ করে মানবকে। কিন্ত তারা আকর্ষিত হলেও ফুলকে হৃদয়ে স্থান দিতে পারে না। যতক্ষণ ফুলটা সতেজ থাকে ততক্ষণ এটা হাতে শোভা পায় কিন্ত যখন ফুলের সতেজতা শেষ হয়ে যায় তখন তার স্থান হয় চরণ তলে। মেয়েদের সৌন্দর্যের পরিণতি টাও ঠিক পরিষ্ফুটিত পুষ্পের ন্যায়। সব পুরুষ সৌন্দর্য তেই বেশি আটকায়। মনটা সবাই দেখতে চায় না। আর না মায়ায় জড়ায়।
নাঈম সেই মায়ায় বোধহয় জড়াতে পারেনি। কারণ না দেখে কোন মেয়ের মায়ায় জড়ানো যায় কি না তা নাঈমের জানা নেই। আগে এই পরীকে স্বচোখে দেখার তীব্র আকাঙ্খা ছিল তার। কতই না ফন্দি এটেছিল সে। কিন্ত আজ সেই পরী তারই ঘরে অবস্থান করছে কিন্ত তার ইচ্ছা করছে না পরীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। কারণ টা কি পরীর সৌন্দর্য? নাঈমের কেন জানি অস্বস্তিকর লাগছে সবকিছু। হাসপাতালেও পরীর পরীর সামনে সে যায়নি বাসায় আনার সময় ও থাকেনি। মোট কথা সে কিছুতেই পরীর সামনে যাবে না। অদৃশ্য এক দেওয়াল তাকে বাঁধা দিচ্ছে পরীর কাছে যেতে। তাই এই মুহূর্তে সে নিজ ঘরে অবস্থান করছে। একটা বুয়া রেখেছে সবসময় পরীকে দেখাশোনা করার জন্য।

নিজ ঘরে বসে ছটফট করছে পরী। শায়েরের জন্য তার চিন্তা হচ্ছে। নূরনগর গেলে আফতাব যদি শায়েরের কোন ক্ষতি করে দেয়? আফতাব তো চেয়েছিল শায়ের কে হ*ত্যা করতে। একথা ভেবে পরী অস্বস্তি অনুভব করছে।
বুয়া ঘরে আসতেই পাতলা কাপড় দিয়ে মুখটা আড়াল করে সে। তার বিভৎস চেহারা দেখলে এখন যে কেউ ভয় পাবে তাই এই চেহারা আড়াল করাই শ্রেয়। বুয়া পরীর এইরকম অবস্থা দেখে বলে,’কি হইছে আপা? আপনের কিছু লাগব?’

পরী বিড়বিড় করে বলতে লাগল,’আমি থাকব না এখানে। আমি নূরনগর যাব। মালি সাহেব কে বাঁচাতে হবে।’
বুয়া দ্রুত পদে গিয়ে খবরটা নাঈম কে জানাতেই সে ছুটে এল। নাঈম পরীর মুখোমুখি দাঁড়াতে সংকচ বোধ করছে তাই অন্যদিকে ফিরে দাঁড়াল বলল,’কেন এত উত্তেজিত হচ্ছেন পরী? আপনার শরীর এখন ভাল নয়।’

-‘আমি থাকব না এখানে। আমাকে যেতে হবে। ওনার খুব বিপদ।’
পরীর মুখে উনি শব্দ টা বেশ লাগল নাঈমের। সে হাসল,’কিছু হবে না। শায়ের খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আপনি কথা কম বলুন। নাহলে আপনারই ক্ষতি হবে।’

মৃদু চিৎকার করে পরী,’নাহ!! আমাকে যেতেই হবে। নাহলে আব্বা খুব বড় ক্ষতি করে দেবে ওনার। আপনি দয়া করে আমাকে নূরনগর নিয়ে চলুন।’

-‘পরী আপনি হয়ত ভুলে গেছেন এখন আপনি একা নন। আপনার শরীরে আরেকটি অস্তিত্ব আছে। তার দায়িত্ব শায়ের আমাকে দিয়ে গেছেন। আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

-‘আপনি কি আমার স্বামী? তাহলে আপনি কেন আমার দায়িত্ব নিচ্ছেন? আমি আপনাকে আমার দায়িত্ব নিতে দেব না। আমাকে ফিরে যেতে দিন।’

নাঈম অপমানিত বোধ করল পরীর কথায়। কিন্ত পরী কথাটা তো ঠিকই বলেছে। সে তো পরীর স্বামী নয়। তাহলে এত দায়িত্ব সে কেন নিচ্ছে? শায়েরের কথায়? শায়ের তো ওর কেউ হয় না। তাহলে শায়েরের কথা শোনার কোন মানেই হয় না। নাঈম বলে উঠল,’আচ্ছা ঠিক আছে আমি নেব না আপনার দায়িত্ব। তবে আপনি এখন কোথাও যেতে পারবেন না। দরকার পড়লে আমি নিজে গিয়ে শায়ের কে নিয়ে আসব। কথা দিলাম শায়েরের কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না।’

চাপা রাগ নিয়ে চলে গেল নাঈম। পরী খাটের উপর বসে পড়ল। শায়ের কে যাওয়ার সময় কেন বাঁধা দিল না! নাহলে এতোটা চিন্তা হতো না। আফতাব আখির ভ*য়া*নক। ওরা যেকোন সময় শায়ের কে হ*ত্যা করতে পারে। সারা শরীরে ব্যথা করছে কিন্ত মনের ব্যথাটা আরও তীব্র। নাঈম কি সত্যিই শায়ের কে আনতে গিয়েছে? পরী মুখটা ভাল করে ঢেকে আস্তে ধীরে ঘর থেকে বের হলো। বুয়াকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানায় নাঈম নূরনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে।

শায়ের মাত্র জমিদার বাড়িতে পা রাখল। এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে বৈঠকে ঢোকে সে। আখির শায়ের কে দেখে চমকে গেল এবং প্রচন্ড রেগে গেল। সে শায়ের কে রাগন্বিত হয়ে বলে,’নবাবজাদা এসে গেছেন। ভাই আমি আগেই বলেছিলাম কুকুর কে মাথায় তুলবেন না। দেখছেন এখন হলো কি? এই কুকুরের বাচ্চা কুকুর আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’

আখিরের কথায় শায়ের জবাব দিল না। সে এগিয়ে গেল আফতাবের কাছে। তারপর বলে,’অন্দরের সবাই ঠিক আছে তো? নাকি তাদের উপর অত্যাচার করেছেন আবারও?’

-‘পরীকে তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছো?’
-‘পরীজান আমার কাছেই আছে। এতে লুকানোর কি আছে?’
-‘তুমি আর পরী মিলে সিরাজ কে মেরেছো তাই না?
এখন তোমাকে কি করা উচিত?’
-‘সিরাজ যদি বেঁচে থাকতো তাহলে ওকে নিঃসন্দেহে
ভ*য়ংক*র মৃ*ত্যু দিতাম আমি। কিন্ত সে তার আগেই ম*রে গেছে।’

-‘তুমি বিশ্বাস ঘাতক শায়ের। আর বিশ্বাস ঘাতকের মৃ*ত্যুই শ্রেয়।’
শায়ের শব্দ করে হেসে উঠল,’ঠিক আপনাদের মতো।আপনারা যেমন স্বার্থ হাসিল হওয়ার পর বিশ্বাস ঘাতকতা করেন তেমনি আমিও করলাম। পরীজান কে আপনাদের থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছি আমি। চাইলেও আর খুঁজে পাবেন না তাকে। আমি শেষ বারের মত বলছি এইসব র*ক্তা*র*ক্তির ইতি টানুন।
আমাকে আমার মতো করে থাকতে দিন।’

-‘কি ভেবেছ তুমি এত কিছুর পরও পরীকে ছেড়ে দেব আমরা?’

-‘আপনার মত পিতা হাজারে একটা হয় জমিদার সাহেব। আর আপনি পিতা নামের ক*ল*ঙ্ক।’

শায়ের অন্দরে চলে গেল। আফতাব রাগে গজগজ করতে করতে বললেন,’শায়ের যেন জীবন্ত বের হতে না পারে। সেই ব্যবস্থা কর আখির।’

বারান্দায় উদাস হয়ে বসে আছে রুপালি। সেদিনের পর থেকে পিকুল আর জুম্মানের কোন খবর নেই। রুপালি চেয়েও পারেনি ওদের সাথে যোগাযোগ করতে। পরী শায়ের কে বিদায় জানিয়ে ওই রাতেই ফিরে আসে রুপালি। তার কিছুক্ষণ বাদে আফতাব তার দলসহ হাজির হয় অন্দরে। রুপালিকে জিজ্ঞেস করে পরী কোথায়? রুপালি চতুরতার সাথে নিজেকে আড়াল করে। এমন ভাব করে যেন সে কিছুই জানে না। সবাই সারা অন্দর খুঁজে কোথাও শায়ের পরীকে পায় না। রুপালিকে তেমন সন্দেহ কেউ করে না। কারণ সবাই তাকে ভিতু মনে করে।
তারপর থেকে পিকুলের জন্য ওর মন আকুপাকু করে। ওইটুকু ছেলেকে নিয়ে কোথায় গেছে জুম্মান কেমন আছে কে জানে?
শায়ের কে অন্দরে দেখে খুশিতে দৌড়ে গেল সে। পরীর জন্যও ভিশন চিন্তিত সে। তাই শায়ের কে দেখা মাত্রই জিজ্ঞেস করে,’পরী কেমন আছে? ও সুস্থ আছে তো? ভাল আছে পরী?’

-‘হ্যা ভাল আছে। আপনারা কি ঠিক আছেন? আপনার বাবা কি কোন প্রকার জুলুম করেছে আপনাদের উপর?’
-‘নাহ। আব্বা জানে এর পিছনে শুধু পরীর হাত রয়েছে কিন্ত সে এটা জানে না আমিও আছি।’

-‘আপনার বাবা যেন জানতে না পারে। সাবধান থাকবেন।’
-‘কিন্তু শায়ের আমার পিকুল? কতদিন ধরে ওকে দেখি না।’
রুপালির চোখে জল দেখা দিল ছেলের কথা আনতেই। শায়ের বলল,’চিন্তা করবেন না আপনার ছেলে ভাল আছে। আপনি চিঠি লিখে দেন আমি পৌঁছে দেব।’

জেসমিন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মালার সাথে সে উঠোনে আসতেই শায়ের কে দেখতে পেল। দুজনেই ছুটে গেল শায়েরের কাছে। মালা কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করে,’আমার মাইয়াডা কেমন আছে শায়ের?’
-‘ভাল আছে।’
-‘ওরে তুমি আর এইহানে আইতে দিও না। তাইলে ওর বাপে ওরে বাঁচতে দিব না। তুমি ওরে তোমার কাছেই রাইখা দিও।’

জেসমিন বললেন,’আমার একটা কথা রাখো শায়ের। জুম্মান রে ও কোনদিন জমিদার বাড়িতে আইনো না। ওরে ভুইলা যাইতে কইবা ও একজন জমিদারদের পোলা। ওরে সব ভুলাইয়া দিবা তুমি।’

শায়ের কথা বলে না। এত কিছুর পরেও পরীর মত ওনারা শায়ের কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে। শায়ের আশ্চর্য হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। রুপালি নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এলো হাতে তার একটা কাপড়ের ব্যাগ। সেটা শায়েরের হাতে দিয়ে বলে,’এতে আমার সমস্ত গয়না আছে। এগুলো দিয়ে ওরা অনেক দিন ভাল ভাবে চলতে পারবে।’

শায়ের বিনয়ের সুরে বলে,’আপনিও চলুন আমার সাথে। আপনাকে আপনার ছেলের কাছে রেখে আসব। মা ছাড়া অতটুকু বাচ্চা থাকবে কীভাবে?’

রুপালি সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেল। মালাও তাতে সায় দিলেন এবং তার সব গয়না শায়েরের হাতে তুলে দিলেন। ছেলের ভালোর জন্য জেসমিন ও নিজের জমানো সবকিছু দিয়ে দিলেন। শায়ের মনে মনে হাসল। সুখে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন তা আজ আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। ওর কাছে এখন যত গয়না আছে তা দিয়ে জুম্মান সারাজীবন ভাল ভাবে কাটাতে পারবে। রুপালির ছেলেও ভাল ভাবে বড় হতে পারবে।
রুপালি নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিল শায়েরের সাথে যাবে বলে। বৈঠকে আসতেই আফতাবের লোকেরা ওদের আটকে দিল। আফতাব বললেন, ‘তোমাকে আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয় শায়ের। অনেক করেছো তুমি আমাদের জন্য এবার নাহয় তোমার জন্য আমরা কিছু করি।’

আফতাব ইশারা করে শায়ের কে বেঁধে ফেলার জন্য। শায়ের সবাইকে থামিয়ে বলে,’আচ্ছা মানলাম আজকে আপনারা আমাকে মেরে ফেললেন। তারপর কি হবে? আপনাদের সব সত্য সবার সামনে চলে আসবে। সেই ব্যবস্থা তো আমি করেই রেখেছি। জমিদার এবং তার ভাই অর্থের জোরে ছাড়া পেয়ে যাবে। কিন্ত বাকি সবাই? আপনাদের কি হবে? আর জমিদার আফতাব কতটা স্বার্থ পাগল সেটা তো কারো অজানা নয় তাই না?’
শায়েরের কথায় সব রক্ষিরা থেমে গেল। সবার মাঝেই ভয় দেখা দিলো। এটা সত্য যে আফতাব স্বার্থ পাগল। সেটা সবাই জানে। কারণ যে রক্ষিরা পরীর কাছে পরাজিত হয়েছিল, যাদের পরী বাগান বাড়িতে বেঁধে রেখেছিল তাদের আফতাব হ*ত্যা করেছে। এখন বাকিদের মধ্যে কেউ ভুল করলে তাদের পরিণাম ও ওদের মতোই হবে। হিং*স্র পশুদের মিত্ররাও তাদের অবিশ্বাস করে। আফতাবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কোন রক্ষিরা শায়েরের কাছে আসতে সাহস পেল না। সবাই আফতাবের দিকে তাকিয়ে রইল। আফতাব নিজেও কোন কথা বলছে না। শায়ের বলল,’অন্দরের কোন মহিলার উপর যেন ফুলের টোকাও না পড়ে।’
এক প্রকার শাসিয়ে গেল সে। রুপালিকে সাথে নিয়ে শায়ের জমিদার বাড়ি ত্যাগ করে। গায়ের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে থাকে দুজনে। পথেই নাঈমের সাথে দেখা হয় ওদের। শায়ের বিচলিত হয়ে বলে,’আপনি এখানে?’
-‘কি করব বলুন? আপনার স্ত্রী আপনার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমাকে সে বিশ্বাস করছে না। তাই আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসলাম।’

-‘পরীজান এখন একা আছে? আপনি শুধু শুধু কেন আসতে গেলেন?’
-‘আপনার স্ত্রী নিজেই চলে আসতো আপনার কাছে। তাকে আটকাতেই আমার আসা। ভালোই হলো আপনাকে পেয়ে গেলাম। চলুন যাওয়া যাক?’

-‘আমাকে আগে নবীনগর যেতে হবে। আপনি ফিরে যান আমি রাতের মধ্যেই চলে আসব।’
-‘আপনাকে সঙ্গে করে না নিয়ে গেলে আপনার স্ত্রী আমাকে ছাড়বে না। চলুন আমিও আপনার সাথে যাব।’

শায়ের আর দ্বিমত করে না। নাঈম কে সাথে নিয়েই নবীনগর যায়। সেখানে জুম্মান পিকুল কে নিয়ে খুসিনার কাছে ছিল। ছেলেকে কাছে পেয়ে তখনি তাকে বুকে জড়িয়ে নিল রুপালি। অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিল ছেলেকে। পিকুল যে ওর প্রাণ। এই প্রাণকে বাঁচাতে সে সবকিছুই করতে পারে। শায়ের খুসিনার হাতে তুলে দিল রুপালি আর জুম্মান কে। সাথে ওর সব গয়না গুলো দিয়ে দিল। কিন্ত রুপালি কিছু গয়না শায়ের কে দিয়ে বলে,’এগুলো নিয়ে যাও তোমার কাজে লাগবে।’
-‘আমি এসব নেব না। যার জন্য জীবন দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত তার ভাল থাকার জন্য আমি সবকিছু করতে রাজী আছি। এসব আমার লাগবে না। পরীজানের জন্য আমি আছি আর আপনাদের জন্য এই গয়না গুলো। তাই এগুলো আপনার থাক।’

নাঈম কে সঙ্গে করে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় শায়ের। নাঈমের মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। নাহলে সবাই এমন আলাদা কেন হচ্ছে? তবে ওর মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলো বাসায় ফিরে গিয়ে করবে বলে ভেবে নিয়েছে। তবে সেই সুযোগ সে পেল না। শায়ের ফিরে গিয়েই পরীর ঘরে চলে গেল। পরী তখনও শায়েরের জন্য ছটফট করছিল। শায়ের কে দেখা মাত্রই তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। কিন্ত শায়ের আলতো করে ধরে। শরীরে ব্যথা থাকা সত্ত্বেও পরী শান্তি অনুভব করছে এখন।
সে রুঢ় কন্ঠে বলে,’আপনি কেন গেলেন? যদি আপনার কোন ক্ষতি হয়ে যেতো?’

শায়ের জবাব দেয় না পরীর কথায়। পুড়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল শুধু। পরী শায়েরের চাহনিতে কোন বিরক্ততা দেখে না। দেখে একরাশ মুগ্ধতা যা সে আগেও দেখেছিল। তবে সে মুখে বলে উঠল,’এখন আর সুন্দর লাগে না আমাকে তাই না? এই ঝলসে যাওয়া মুখটা দেখতে খুবই বিরক্তিকর?’

ঠোঁটে চওড়া হাসি টানে শায়ের,’আপনার ভালোবাসায় আমি বহুবার ঝলসেছি। ছাই হয়ে গিয়েছি তবুও আপনি এই ছাই কে ভালোবেসে বুকে টেনেছেন। তাহলে আমি কেন পারব না? আমি এখনও ঝলসে যাচ্ছি আপনার ভালোবাসাতে। এই জ্বলন বুঝি থামার নয়।’

চলবে,,,

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here