পিচ্চিদের সংসার পর্ব ২

#__পিচ্চিদের_সংসার_( ২য় পর্ব)
লেখক সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)

– “আব্বু তেমন কোন সমস্যা না৷ এই ছোট হিসেবে আড়ালে কেউ কেউ একটু হাসাহাসি করে এই আরকি”।

– “ধুর বোকা এটা কিছু ই না সাবধানে থাকিস।আর বৌমার খেয়াল রাখিস। আর বোনের ও খোঁজ রাখিস।এদিক ওদিকে যায় না যেন”।

— “আচ্ছা ঠিক আছে আব্বু।এখন রাখি তবে।”

–“আচ্ছা রাখি৷ সাবধানে থাকিস, কালকে আগে আগে রওনা দিস”।

রকিব ফোন রেখেই বোনকে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোন সারা নেই। এই বাড়ির জামাই সে, তাই এদিকে ওদিকে খুঁজতে ও পারেনা। কিন্তু রকিব যে কাউকে খুঁজতেছে সেই বিষয় টা খেয়াল করে অপরিচিতা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করে,

— “ কাউকে খুঁজছেন?”

–“ হুম৷ নিশি কোথাও গেল যেন।আসার পর থেকে খালি এদিকে ওদিকে দৌড়াদৌড়ি করতেছে। কোথায় না কোথায় যায়।”

— “ আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখতেছি। আপনি ঘরে গিয়ে বসুন।” বলেই অপরিচিতা নিজের ননদীকে খুঁজতে থাকে।

নিজের বাড়ি তাই খুঁজতে সময় লাগে না৷ সমবয়সী কয়েকটা মেয়েদের সাথে লুডু খেলাতে ব্যস্ত অবস্থায় খুঁজে পায় নিশিকে।

— “এই নিশি এখানে তুমি আর তোমার ভাইয়া তোমাকে খুঁজতেছে।”

— “ভাবী একটু পরেই আসতেছি আরেকটু বাকি আছে।”

— “ উহু আর খেলতে হবে না চলে আসো।রাত হয়ে গেছে। আর তোমার ভাইয়া সেই কখন থেকে খুঁজতেছে পরে রাগ করবে।”
— “আচ্ছা ভাবী আসতেছি।”

— “হ্যাঁ আসো তাড়াতাড়ি আমার সাথেই আসো”।

— “ আচ্ছা তোমরা সবাই খেলো আমি চলে যাই নয়তো ভাইয়া বকা দিবে।” বলে সাথীদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে নিশি।

অপরিচিতা ও ননদীর হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। নিশি কে দেখেই ধমক দিতে লাগল রকিব।

— “ সেই যে আসার পর থেকে আমার ফোন নিয়ে উধাও হয়েছো আর কোন খোঁজ আছে তোমার। বাড়িতে ফোন দেওয়ার জন্য আমি ফোন খুঁজে পাইনা।”

— ‘আচ্ছা সরি ভাইয়া। আর যাব না।”
— ‘যাবেনা কেন যাও আবার যাও। আবার ফোন টাও সাথে নিয়ে যাও।” রাগের সাথে বললো রকিব।

— “ভাবী দেখো ভাইয়া একটুর জন্য আমাকে কেমন বকা দিতেছে। এমন করলে আমি কিন্তু আবার বাইরে চলে যাব।”

— “এই হয়েছে তো আর বকা দিতে হবে না। আসছেই তো এখন। শুধু শুধু বকা দিচ্ছেন কেন। আর বাচ্চা মানুষ একটু তো দৌড়াদৌড়ি করবেই।” রকিবকে বুঝাতে লাগল অপরিচিতা।

— “ তুমি আবার তাল মিলিয়ে কথা বলছো কেন৷ এমন করলে আস্তে আস্তে মাথায় উঠবে।”

— “ হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না। আমার একমাত্র ননদ টাকে আমি আমার মাথায় করেই রাখব আপনার কি তাতে। নিশি আসো তো আমার সাথে আমরা ঐ ঘরে গিয়ে লুডু খেলি উনি একা একা বসে থাকুক এবার।” বলেই নিশির হাত ধরে হনহন করে চলে গেল অপরিচিতা।

রকিব হা করে তাকিয়ে থাকল অপরিচিতার অবস্থা দেখে। মনে মনে বলতে লাগল, “কি রাগ রে বাবা। এ মেয়েতো নিশ্চিত আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে৷ এখনই এই অবস্থা কয়টা দিন গেলে কি অবস্থা হবে! এতোদিন বোনের জ্বালানিতেই বাঁচিনা। এখন তো এই দুটা মিলে আমাকে জ্বালাবে৷”

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে নিশি কে অন্য একটা ঘরে বাচ্চাদের সাথে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজের ঘরে আসল অপরিচিতা৷ ঘরে ঢুকে দেখে রকিব ঘরে নেই৷ অন্য সবাই তো এখন যাঁর যাঁর ঘরে চলে গেছে। তাই রকিবতো আর অন্য কোথাও যাবে না৷ হয়তোবা ছাঁদে গেছে সেই ভেবে ছাঁদে উঠে অপরিচিতা। ছাদে অন্ধকার হওয়া স্বত্বেও দুরের আলোর কারনে অবছা আবছা বুঝা যায়। দুরের সেই আলোতে উড়ে যাওয়া সাদা ধুঁয়া দেখে পা টিপে টিপে ছাঁদে গেল সে।

রকিব নিশ্চিন্তে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। রকিব সিগারেট খায়! মনে একটু আঘাত পেল অপরিচিতা। “বিয়ের আগে তো শুনেনি এই কথা!” মনে মনে কথা গুলো বলতে বলতে রকিবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রকিবের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই হুঁশ হলো তার সিগারেট টা মুখ থেকে সরিয়ে নিল সে।

অপরিচিতা শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
— “সিগারেট খান কবে থেকে?”
— “৫-৬ মাস আগে থেকে।” রকিবের সাভাবিক উত্তর।

— “ এটা খাওয়া শিখেছেন কিভাবে?”

— ‘আপনা আপনিই। ”

— ‘কেন খান সিগারেট, কি সুখ পান এসব খেয়ে?”
— “ জানিনা।”

— “বিয়ের আগে তো শুনলাম না আপনি সিগারেট খান।”

— “আগোচরে খাই তো তাই জানেনা অন্য কেউ। কেন সিগারেট খাই জানলে বিয়ে তে রাজি হতে না বুঝি?”

— “আমি কি সেই কথা বলেছি নাকি। তা আজ আমাদের এখানে এসেও কেন খাচ্ছেন?”

— “খুব কষ্ট লাগছিল তাই একটু খাচ্ছিলাম আর কি।”

— “ কেন কষ্ট লাগছিল হঠাৎ। তখনকার ব্যবহারের জন্য নাকি? ”

— “ না তখনকার ব্যবহারে কষ্ট পাইনি মোটেও। আসলে বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছিল।”কাতর কন্ঠে উত্তর দেন রকিব।

— “ কেন হঠাৎ করে বন্ধুদের কথা মনে হওয়াতে সিগারেট খেতে হবে?” কথাটা বলেই রকিবের দিকে তাকালো অপরিচিতা।

রাস্তার লাইটের আলোতে তার চোখের কোণে কয় ফোটা জল চিকচিক করছে৷

— “এ কি আপনি কাঁদছেন কেন”, উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে অপরিচিতা।

— “ কাঁদবো না তো কি করব বলো। একটা বন্ধু ও অনুষ্ঠানে আসল না। সবার নাকি কাজ আছে৷ এত ব্যস্ত সবাই যে আমার বিয়েতেও আসতে পারল না৷ আগে তো খুব লাফাইতো এখন আর একটারও কোন খোঁজ নাই।” চোখ মুছতে মুছতে উত্তর দেয় রকিব।

— “ হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। পরে বলবেন একদিন সময় করে আসতে৷ এখন এই সিগারেট ফেলেন। আমার ভালো লাগতেছে না মোটেও।”

— ‘অহ সরি আগে বলবে না”। সাথে সাথে সিগারেট ফেলে দিয়ে প্রশ্ন করে , ‘ আমি যদি সিগারেট খাই এতে খারাপ লাগবে?’

— ‘ অতোটা না, তবে এই জিনিসটা আমার পছন্দ হয়না।

— ‘ আজকে থেকে বাদ দিয়ে দিলে খুশি হবে?’
— ‘ হুম অনেকটাই।’

— ‘ আচ্ছা বাদ দিয়ে দিব। তবে মাঝ মধ্যে খুব মন চাইলে একটা খাবো তখন রাগ করো না।’

— “আচ্ছা ঠিক আছে চলুন এবার, ঘরে চলুন।”

— “আরেকটু বসি ভালো লাগছে বসে থাকতে। তুমি চাইলে চলে যেতে পারো।”

— “ আপনি থাকলে আমি চলে যাব কেন, আমিও থাকি।”
— “আচ্ছা বসো তবে।”

— “আচ্ছা বসুন, ছাদ পরিষ্কার’ই সমস্যা নেই।”

নবদম্পতি জোসনার মৃদু আলোতে বসে প্রকৃতির বাতাস গায়ে মাখতে থাকে। কারো মাঝে কোন কথা নেই। একদম চুপ হয়ে বসে আছে তারা নিশ্চুপ পরিবেশে। কেউ এখন তাদের ডিস্টার্ব করবে না৷ কিন্তু রকিব বেশীক্ষণ চুপ থাকতে পারেনা৷

আস্তে আস্তে ডাকে, “অপরিচিতা।”

— ‘হুম বলেন?”

— “কয়টা কথা জিজ্ঞেস করি তোমাকে সত্যি কথা বলবে তো?”

— “বলুন কি বলবেন।”

“আমাদের বিয়েতে কি তোমার মতামত ছিল। নাকি তোমাকে জোর করা হয়েছে?”

— “জোর করবে কেন৷ আমার আব্বু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছুই করে না।”

— “পছন্দ কর আমাকে। না কেবল বিয়ে হয়েছে এই?”

— “ পছন্দ না হলে তো আর বিয়েতে রাজি হতাম না।”
— “ভালোবাসো?”
— “কি? ”

— “আমাকে! ”
— “ জানিনা এতকিছু।” অপরিচিতার সরল জবাব।

অপরিচিতার বাচ্চা টাইপ সহজ সরল উত্তর গুলো শুনে ঠোট বাকিয়ে চুপ করে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। আবার ও শুনশান নিরবতা বিরাজ করে তাদের মধ্যে। কোন রকমের কথা ছাড়াই চুপ করে বসে থাকে। রকিব অপরিচিতার হাতের উপরে হাত রাখে৷ অপ্রস্তুত অপরিচিতা নিজের হাত গুটিয়ে নেয়৷ রকিবও নিজের হাত গুটিয়ে আনে। আবারও চুপ করে বসে থাকে।
অপরিচিতা ভাবতে থাকে, “আমি এটা কি করেছি উনি আমার স্বামী হয়।আর আমি কিনা বোকার মতো হাত সরিয়ে নিয়েছি।”

সে আবার হাত টা আগের জায়গায় রেখে দেয়। কিন্তু রকি আর অপরিচিতার হাত ধরে না। সে অন্য দিকে ফিরে একমনে বসে আছে। রকিবের কোন সারা না পেয়ে নিজেই তার দিকে আগিয়ে বসে। তবুও রকিব একধ্যানে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে৷
অপরিচিতা বুঝতে পারে হয়ত রকিবের মাঝে কোন একটা উদাসীনতা কাজ করছে৷ রাতের ঠান্ডা বাতাসে জোসনা স্নানে ব্যস্ত থাকার সময় সবাই প্রায় এমন উদাসীন হয়ে যায়।

অপরিচিতা আলতোভাবে রকিবের কাঁধে মাথা রাখে। রকিব তবুও তার দিকে কোন নজর দিল না। অপরিচিতাও আর কোন কথা বলল না। রকিবের কাঁধে মাথা রেখে সোজা বসে রইল। খানিক বাদেই রকিব একবার অপরিচিতার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে। একটু পরেই আবার অপরিচিতার হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নিল।এবং অপরিচিতার কপালে একটা আলতো চুমু দিল। স্বামীর ভালোবাসার পরশে অপরিচিতার শরীর কম্পিত হলো।

রকিবের পেশীটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরেকটু কাছে এসে বসল। হাতে হাত রেখে জোছনার আলো আর প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে থাকল নবদম্পতি।

— ‘ ঘরে যাবেনা?”, নিস্তব্ধতা কাটিয়ে প্রশ্ন করে রকিব।

— “ ভালো লাগছে খুব আর কতোক্ষন বসে থাক?” নরম কন্ঠে আকুতি জানায় অপরিচিতা।

মুচকি হেঁসে অপরিচিতার গালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয় রকিব। স্বামীর আচরণে ভরসা পায় অপরিচিতা। আবারও নিস্তব্ধতায় ডুবে যায় তারা।

— “ এই ঠান্ডা হাওয়াতে শুয়ে একটা ঘুম দিতে পারলে যে কি ভালো লাগত!”হঠাৎই ই নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠে রকিব।

— ” তা এই খোলা ছাদে আপনাকে কে ঘুমোতে দিবে শুনি।”

— “ কে দিবে আবার। আমি কী সত্যি সত্যি ঘুমাবো নাকি।তবে শুয়ে থাকতে পারলে মন্দ হতো না!”

— “ আপনাকে মানা করেছে কে।শুয়ে থাকুন সারারাত শুয়ে থাকুন। সকাল বেলা না হয় ঐ তেঁতুল গাছের তলা থেকে খুঁজে আনব।”

— “ তুমি কি আমাকে জ্বীনের ভয় দেখাচ্ছ নাকি?

— “ উঁহু আপনাকে আমি ভয় দেখাতে যাব কেন।যা সত্যি তাই বলছি। খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হয় না তা জানেন না? ”

— “ আর বলতে হবে না। মহারানী এই সব আমি জানি।”

— “ এতোই যখন জানেন তবে আবার থাকতে চাইছেন কেন? ”

— “আরে ও তো আমি এমনিতেই বললাম। চলো এখন ঘরে চলো ১২ টার উপরে বাজে সেদিকে কোন খেয়াল আছে। সকালে আবার যেতে হবে না।”

— “ হু আমি কালকে গেলে তো। আমি আরেক দিন থাকব।”

— “ কেন আরেকদিন থাকতে হবে শুনি।নিজের বাড়িতে বেড়ানোর মজা শেষ হয়নি।”
— “ শেষ হয়নি বলেই তো থাকতে চাইছি।তবে আপনি যদি বলেন তবে তো চলেই যেতে হবে।”
— “ তুমি থাকতে চাইতেছো আমি কি মানা করব নাকি আবার। সমস্যা নেই কোন। থাকো আর ২-১ দিন।”
— “ সত্যি সত্যি তো।”
— “ হুম সত্যি থাকো আর ২-১ দিন। এর মাঝেই স্কুল থেকে কগজপত্র গুলো নিয়ে নিও।যদি এখন TC দিতে না চায়।তবে আমাকে বলো আমি বলে দেখব।”

— ” ঠিক আছে আপনি যাওয়ার সময় আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যাইয়েন।তবেই হবে।”

— “ আমি তো অনেক সকালে যাব।তখন স্কুল খুলবে না।তুমি পরে কারো সাথে যেও।
— ” আচ্ছা। হয়েছে এখন ঘরে চলেন। সকালে চলে গেলে তো পরে তাড়াতাড়ি উঠতেও হবে।এখন অনেক সময় হয়েছে চলেন ঘুমাবেন।”

— “আচ্ছা চলো। আর একটা কথা শোন।এই আপনি আপনি করে বলবে না।এখন থেকে তুমি করে বলবে।”
— “ আচ্ছা বলব, এখন উঠো।

ঘরে গিয়ে দুজনেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়। ঘুমের ঘোরে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে থাকে।
ফজরের আজান হতেই ঘুম ভেঙে যায় অপরিচিতার।উঠে তাড়াতাড়ি ওযু করে নেয়। রকিব তখন ও ঘুমাচ্ছে। মৃদু ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ডাকতে থাকে রকিবকে। রকিব উল্টো তার হাত পেঁচিয়ে নিয়ে শুয়ে থাকে।স্বামীর কান্ড দেখে হেঁসে উঠে অপরিচিতা। রকিবের অজান্তেই তার কপালে চুমু দিতে নেয় সে। অমনি ভিজা চুল থেকে ঝরে পরা পানির স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় রকিবের। কোন রকমে চোখ খুলে তাকাতেই লজ্জায় পরে যায় সে। রকিবের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু রকিব তার হাত ধরে রাখার ফলে যেতে পারে না।

— “ এতক্ষণে ঘুম ভাঙলো তবে।উঠো তাড়াতাড়ি নামাজে যাবে না?”
— “ক’টা বাজে নামাজের সময় হয়ে গেছে?”

— “ না মহারাজ আপনার জন্য এখনো বাকি আছে। এবার উঠুন তাড়াতাড়ি সেই কখন আজান দিছে।”

রকিব তাড়াতাড়ি ওযু করে মসজিদে চলে যায়। অপরিচিতা ও বাড়িতে নামাজ পরে নেয়। নামাজ শেষে দু’জনেই নিজেদের বিবাহিত জীবনের জন্য দোয়া করে।

সকালের নাস্তা শেষে রকিব নিজের বাড়িতে চলে যায়। নিশি কে বাড়িতে দিয়েই নিজের কর্মস্থলে চলে যায় সে। ব্যস্ত হয়ে পরে নিজের কাজে।

আসরের নামাজের পরে রকিবের বাবার সাথে রফিক সাহেবের দেখা হয়।
— “ কি খবর কই যাইতাছো মিয়া?” লম্বা গলার বলে রকিবের বাবা।

— ” কোথায় আর যামু তুমি তো দিলে একটা ঝামেলা পাকিয়ে।এখন সেই নিয়েই দৌড়াদৌড়ি চলতেছে।”

— “ আরে কি কও মিয়া আমি আবার কি ঝামেলা পাকালাম!”
— “ কি ঝামেলা, একদিনেই ভুলে গেলা? ”

— “ আরে মিয়া কিসের ঝামেলা একটু খোলাসা কইরা বলোতো।”
— “ কি আবার ঐ যে পোলার বিয়ের কথা।সেইটা নিয়েই তো দৌড়াদৌড়িতে আছি। ”

— “ আরে সেটা বলবে তো আগে। তা কি ব্যবস্থা করলা নাকি কিছু।”
— “ করছিলাম এক জায়গায়।ওনারা বিয়ে দিতেও ইচ্ছুক আবার বলে মেয়ে নাকি ওনার বাড়িতেই থাকবে এখন।ইন্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আনতে দিবে না।”

— “ তা সমস্যা কি ইন্টার পরীক্ষার তো আর মাত্র ৩ মাস বাকি।”
— “ আরে ভাই মেয়ে এইবার মাত্র ইন্টারে উঠছে।”

— “ তবে তো আরো ভালো।”
— “ কি কও ভালো হইল কেমনে?”

— “ মনযোগ দিয়া শোন মিয়া, তোমার পোলা এইবার অনার্স ২ বর্ষে পড়ে তাই না। আর মেয়ে পড়ে ইন্টার ১ম বর্ষে।তার মানে ৩-৪ বছরের একটা ডিফারেন্ট আছে।এটা বেশ ভালো। আবার মেয়ের পরিবার চাইছে মেয়ে ইন্টার তাদের ওখানে থেকেই শেষ করুক। এটা ও খারাপ না।বিয়ে হয়ে যাক এখন। তোমার ছেলে কি যেন নাম সজীব।সে না হয় কয়দিন পর পর গেল আসল। তাই বিয়ে টা এখন হয়ে যাক পরে অনুষ্ঠান করে একবারে না হয় নিয়ে আসলে।সেটাই ভালো হবে।”
— “ আসলেই তো আমি তো এটা খেয়াল করি নাই।”

— “ এই একমিনিট আরেকটা কথা। তোমার ছেলে যে উত্তর পাড়ার এক মেয়ের সাথে নিয়মিত দেখা করতে যায়। সেই নিয়ে আবার গন্ডোগোল পাকবে নাকি। মানে তোমার ছেলে যে ঐ মেয়েকে পছন্দ করে।এই নিয়ে তো সে বিয়ের আগে পরে ঝামেলা করতেও পারে।”
— “ না সে নিয়ে সমস্যা হবে না।আমি সজীবরে কালকেই বলছি।যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তবে কয়দিনের মাঝেই।আর নয়ত জীবনেও ঐ দিকে যেন পা না বাড়ায়। পরে ঐ মেয়ের বাপের সাথে ও কথা বলছিলাম। তারা আবার টাকা ওয়ালা ছাড়া বিয়ে দিতে রাজী না।পরে আবার সজীব কে বুঝালাম যে এখন তুই চিন্তা করে দেখ আমি যেখানে বিয়ে ঠিক করি সেই টা মেনে নিবি নাকি অন্য কিছু। ও পরে বলল যে আমি জানি না কবে কত টাকা ওয়ালা হতে পারব।আপনি যা বুঝেন তাই করেন।আমার আর কোন কিছু বলার নেই।”

— “ তা হলে তো ভালোই। সব বলে নিছ এটা ভালো করেছ।এতে আর পরে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
— “ হ্যা ভাই।তা আমি তবে ঐখানেই আলাপ করি।আর একটা কথা ছেলের বিয়েতে কিন্তু তোমাকে ই উকিল হইতে হইব।”

— “ ধুর মিয়া এইসব কি কও। আমি কোন দুঃখে উকিল হইতে যামু।উকিল হইব এমন একজন যে কিনা মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবে। আমি কি আর মেয়ের সাথে দেখা করতে পারুম নাকি!”
— “ ওহ এই কথা।আচ্ছা ঠিক আছে তবে যাই এখন।”

— “ আইচ্ছা যাও কোন দরকার পরলে আবার বলই আমারে।”

রফিক সাহেবের প্রস্থান…

ঐদিকে রকিব তার কাজ কর্ম শেষ করে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরেছে। ফ্রেস হয়ে প্রতিদিন এর মতো অফিসের কাজ একটু আগিয়ে রাখিতেছে তখনই অপরিচিতার ফোন। সে ডেক্সটপ এর দিকে তাকিয়েই ফোন রিসিভ করল।

— “হ্যালো কে বলছেন? ” ফোন রিসিভ করেই প্রশ্ন করে রকিব
— “কাকে মনে হয়। নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করেছেন?” বলে অপরিচিতা।

— “ও তুমি। আসলে কাজ করতেছি তো তাই খেয়াল করিনি।”
— “ হু সারাদিন খালি কাজ আর কাজ ই তাইনা, সেই যে গেছো তারপর একটা বার ফোনে দিয়ে তো বল ও নাই যে আমি অফিসে আসছি। বা বাড়িতে পৌঁছাইছি।”
— “ সরি খেয়াল ছিল না। কাজে ব্যস্ত ছিলাম।”

— “১ম দিনেই মনে ছিল না তাই না। জানিনা বাকি দিন মনে থাকবে কিনা।”অভিমানের স্বরে কথা বলে অপরিচিতা।
— “ সরি বললাম তো। তারপর ও এভাবে কথা বলতেছ কেন?”

— “ তো কিভাবে কথা বলব, আমার তো সারাদিন মনে ছিল।আর তোমার একটা বার ও মনে হল না যে আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত দিলে না।”
— “ হয়েছে তো আর মন খারাপ করতে হবে না। এখন বলো কাগজপত্র সব আনতে পারছ?”

— “হুম সব নিয়ে আসছি।”
— “ এই তো ভালো। তা কালকে আসবে নাকি?”

— “হুম।সকাল বেলা আসবে যাতে বিকালে যেতে পারি। আবার ভুলে যেও না।”
— “ ঠিক আছে ভুলব না মনে থাকবে বেশ।সকালে না আসতে পারলে বিকালে আসব বিকাল হয়ে গেলে রেডি হয়ে থেকো।আমি গেলেই যেন চলে আসতে পারো।”

— “তা দেখা যাবে। এখন কি আর কাজ আছে নাকি কথা বলতে পারবে।”
— “আর একটু কাজ আছে।রাখি এখন কালকে দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ ল।রাতে সময় পেলে কল দিব আমি।
–” আচ্ছা রাখি তবে।আসসালামু আলাইকুম।”
“ ওয়ালাইকুমুস্সালাম। আল্লাহ হাফেজ।”
অতপর রকিব আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।

পরদিন বিকালে রকিব অপরিচিতাকে নিয়ে আসে। রকিব ব্যস্ত থাকায় রকিবের বাবা অপরিচিতাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে আসে।
নিয়মিত সকাল বেলা অপরিচিতাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে যায় রকিব। চলাচলের সুবিধার জন্য বাইক কিনে নেয়। যথারিতি সে অফিসে যাওয়ার আগে অপরিচিতাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যায় এবং অফিস থেকে ফিরার সময় স্কুল থেকে নিয়ে আসে।

একদিন স্কুল থেকে ফিরার পরে অপরিচিতা রকিবকে বলে দেয় সে যেন আর তার স্কুলে না যায়। সে একা একাই যেতে আসতে পারবে। রকিব তার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে। অপরিচিতা হঠাৎ এ কথা কেন বলবে?
( চলবে….) (

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here