#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৫
খাবার টেবিলে আরসালের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চোখ লেগে গিয়েছিল আলিজার। ফোন বেজে উঠতেই ঘুম ভেঙে যায় তার। ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আরসাল কল দিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে কলটা রিসিভ করে আলিজা।
” আসসালামু আলাইকুম।
” ওয়ালাইকুমুস সালাম। ঘুমিয়ে গিয়েছেন?
” উহু, খাবার টেবিলে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল। কোথায় আপনি?
” আমি বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে, খুলে দিন।
” আচ্ছা আমি খুলছি।
ফোন রেখে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয় আলিজা। আরসাল ভেতরে এসে রুমের দিকে চলে যায়। আলিজা দরজা লাগিয়ে দেয়। পিছন থেকে আলিজার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় আরসাল।
” হুম বলুন।
” খাবেন না আপনি?
” না ক্ষুধা নেই, আপনি খেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি এখন কিছু খাব না।
” অল্প কিছু খেতেন।
” না প্লিজ জোর করবেন না। আর একটা কথা….
” জি বলুন।
” বাবা বা আম্মি যদি জিজ্ঞেস করে আমি কখন বাসায় ফিরেছি তাহলে প্লিজ বলে দিবেন এগারোটার মধ্যেই এসেছি।
” আপনার জন্য অপেক্ষা করছিল সবাই। আজকে সবার খেতে খেতে এগারোটা বেজে গিয়েছিল।
” আচ্ছা তাহলে সত্যিই বলবেন।
” ঠিক আছে।
আরসাল নিজের রুমে চলে যায়, আলিজাও আর না খেয়ে খাবার ফ্রিজে তুলে রেখে নিজেও রুমে চলে যায়। ভেবেছিল আরসাল বাসায় আসলে দুজন একসাথে ডিনার করবে। তার আর এখন একা খেতে ইচ্ছে করছে না।
___
***
গত কয়েকটা দিন বাসা, বাহিরের সমস্যা আবার কলেজে অতিরিক্ত ক্লাস সব মিলিয়ে খুব খারাপ কেটেছে আরসালের। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় নিশ্চিন্তে একটু ঘুমাচ্ছিল সে। এই দিনটায় বাসার কেউ তাকে বিরক্ত করে না।
আলিজা বারবার রুমে গিয়ে দেখছে আরসাল ঘুম থেকে উঠলো কি না। কিন্তু না তার তো ওঠার কোন নামই নেই। সে আবার মন খারাপ করে রান্নাঘরে চলে যায়। এ কয়েকদিনে অনেকটা ভালো হয়েছে গিয়েছে তাদের সম্পর্ক। ভরসা করার মতো একটা বন্ধু পেয়েছে সে।
ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে যায় আরসালের। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে তিথি কল দিয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় প্রতিদিন দেখা করতে হয়েছে তাকে। আজকেও কেন কল করেছে সে একটা দিন অন্তত বাসায় থাকতে দিতো! কি আর করার, কিছু বললেই উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে সেই ভয়ে কলটা রিসিভ করে সে।
” হ্যালো….
” কি করছো?
” ঘুমাচ্ছিলাম, তুমি তো জানো আজকের দিনটা আমি বিশ্রাম নেই।
” আজকে কোন বিশ্রাম নিতে হবে না, বিকেলে তুমি বের হবে আমি অপেক্ষা করব। জায়গার নাম টেক্সট করে দেব। এখন ওঠো, আর ঘুমাতে হবে না অনেক ঘুমিয়েছো উঠে খেয়ে নাও।
” তিথি!
” উহু ওঠো ওঠো কোন কথা না।
” হুম উঠছি।
” শোনো, আই লাভ ইউ।
” লাভ ইউ টু।
” আচ্ছা থাকো রাখছি আমি।
” ঠিক আছে।
ফোন কাটতেই দেখে আলিজা রুমেই আসছে। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়, এই মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে কথা বলা যাবে না দিনকে দিন অভ্যাস হতে যাচ্ছে কথা বলায়। চুপ করে থাকলে কেমন অন্যরকম লাগে। বেশি ভালো বর হতে হবে না, প্রয়োজন নেই।
আলিজা রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকায়, ঘড়িতে প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে যাচ্ছে। আজ তো শুক্রবার এখনই না ডেকে দিলে নামাজেই যেতে পারবে না। আলিজা গিয়ে আরসালের মাথার পাশে বসে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি সুন্দর লাগে তাকে! দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে আরসালকে ডাকতে থাকে। কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলে তাকায় সে।
” আজকে শুক্রবার, বিশ্রামের দিন একটু ঘুমাতে তো দিবেন তাই না?
” আসলে সাড়ে বারোটা বেজে যাচ্ছে, আজান দেবে মসজিদে যাবেন না?
” হ্যাঁ যাব, উঠছি।
” আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন আমি আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
আলিজা উঠে চলে যাবে এমন সময় আরসাল তাকে থামিয়ে দেয়। আলিজাও চুপচাপ বসে যায়।
” নিজের মুখের অবস্থা দেখেছেন? মুখটা ধুয়ে নেবেন।
” কেন, কি হয়েছে?
” আয়নায় গিয়ে দেখুন একটু।
আলিজা আরসালের কথামতো আয়নার সামনে চলে যায়। রান্না করার সময় কোনভাবে মুখে হলুদ লেগেছে। আলিজা আয়নায় নিজেকে এভাবে দেখে হাসতে থাকে। দরজার দিকে গিয়ে,” আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।” বলেই চলে যায়।
_________
বিকেলবেলা তিথি আর আরসালের শপিং করা ঘুরাঘুরি করা শেষ হলে তিথিকে বাসায় নামিয়ে দিতে যায় আরসাল। তিথি তাকে জোর করে বাসায় নিয়ে যায়, বাসার সামনে থেকে চলে যাওয়া খারাপ দেখায় তাই। কিন্তু আরসাল যেতে চায় না, তিথির জন্য যেতে বাধ্য হয় সে।
দরজার লক খুলে বাসায় প্রবেশ করে তারা। অন্ধকার থাকায় লাইট অন করে তিথি। আরসাল এদিক ওদিক দেখছে, আজকেই প্রথম আসলো সে। কিন্তু বাসায় কেউ নেই, তিথির বাবা-মার তো থাকার কথা।
“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসো এদিকে আমার রুম।
” এখানেই বসি সমস্যা নেই।
” এখানে কেন বসবে, আমার রুমে এসে বসো আমি চা করে দেই।
” আঙ্কেল আন্টি কোথায়?
” মামাবাড়ি গিয়েছে সকালে।
” কখন আসবে?
” দুইদিন পর।
” তার মানে বাসায় তুমি একা?
” হ্যাঁ বাসায় আমি একা কিন্তু আজকে তুমি আমার সাথে এখানে থাকবে।
” কি?
” হ্যাঁ আমার সাথে থাকবে আজ।
” তিথি, কোনভাবে তোমার মাথায় সমস্যা হয় নি তো?
” মাথায় কেন সমস্যা হবে…..(আরসালের নিকটে এগিয়ে এসে)
” আমি কেন থাকব এখানে?
” কেন নয়? কাছে পেতে ইচ্ছে করে না আমায়?
” তিথি……!! বন্ধ কর এসব, কি বলছো তুমি এসব!
” শুধু তোমাকে চাই।
তিথি আরসালের কাছে আসতে থাকলে, আরসাল তিথির চেহারায় অন্যরকম উদ্দেশ্য দেখতে পায়। আগের তিথির সাথে এখনকার তিথির আকাশ পাতাল পার্থক্য। তিথি তো এরকম ছিল না, তার হাত পর্যন্ত যে মেয়ে ধরতে দিতে চাইতো না সেই মেয়ে কি বাসায় কেউ না থাকা অবস্থায় তাকে নিয়ে এসেছে!
তিথি তাকে স্পর্শ করলে সাথে সাথে তিথির থেকে দূরে সরে যায় সে। আরসালের এমন ব্যবহারে তিথি জিজ্ঞাসু চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” আমার মনে হয় তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন, তুমি বিশ্রাম নাও আমি আসছি।(আরসাল)
” মানে? আমি আজ সম্পূর্ণভাবে তোমাকে পেতে চাই আরসাল আর তুমি কি না….
” যে মেয়ে নিজের হাত পর্যন্ত ধরতে দিতে চাইতো না সেই মেয়ের মাথায় এমন নোংরা চিন্তাভাবনা কিভাবে আসে বলতে পারো? আমি এই তিথিকে চিনি না, আর এই তিথিকে চাইও না আমার সেই আগের তিথিকে চাই যে কি না চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলতেও লজ্জা পেতো।
তিথি টলমল চোখে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ কোন কথাবার্তা হয় না দুজনের মধ্যে। তিথি মাথা নিচু করেই থাকে। আরসাল কি বলবে বুঝতে না পেরে তিথির পাশে গিয়ে বসে তিথি ওমনি মাথা তুলে চোখ মুছে আরসালের দিকে তাকায়।
” বিশ্বাস কর আমি এসব করতে চাই নি আরসাল। কিন্তু…..
” কিন্তু কি তিথি?
” আমার খুব ভয় লাগে তোমার ঘরে, তোমার কাছাকাছি একটা মেয়ে সারাক্ষণ থাকে তুমি যদি কোনভাবে তার প্রতি দূর্বল হয়ে যাও আর তোমাদের মাঝে যদি সব ঠিক হয়ে যায় আমার কি হবে, তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব বল?
” এতটা সন্দেহ কর আর ভয় পাও আমাকে নিয়ে? আমি তোমাকে ভালোবাসি তিথি, শুধু তোমাকে। আমি কেন তোমাকে ছাড়া অন্য মেয়েকে নিয়ে ভাবতে যাব। তোমাকে আমি আগেও বলেছি তুমি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো।
” খুব বেশি ভালোবাসি তোমাকে আমি আরসাল, কারও সাথে শেয়ার করতে পারব না।
কথাগুলো বলতে বলতে আরসালের বুকে মাথা রাখে তিথি। আরসাল ও তার প্রিয় মানুষটিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়।
” আমাকে নিয়ে ভয় পাবার কোন কারণ নেই তিথি, আমি শরীরলোভী নই, আমাকে মন থেকে ভালোবেসো তাতেই হবে। পৃথিবীর সব প্রেমিক যেমন ভালো হয় না তেমনি সব প্রেমিক শরীরলোভী হয় না। আমাদের সাথে অন্যায় হয়েছে তিথি, আমরা ঠিক এক হব তার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
চলবে……..
যারা যারা পড়ছেন সবাই রেস্পন্স করবেন😊