পুরোনো ডাকবাক্স পর্ব -০৪

#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৪

“দাড়িবিহীন আর সিগা*’রেট খাওয়া বা নেশা করা ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমাদের নবীর সাথে দেখা করার সুযোগ পাবে না আরসাল।”(শায়খ আহমাদুল্লাহ স্যারের বক্তব্যে হয়তো জেনেছিলাম অনেকদিন আগে, ভুল হলে জানিয়ে দিবেন)

কথাটি শুনে পিছনে ঘুরে তাকায় আরসাল তারপর হাতে থাকা জ্ব*’লন্ত সি*’গারেট নিভিয়ে বাহিরে ফেলে দেয়।

” আসলে একটু চিন্তায় আছি, বন্ধুর দূর্ঘটনা ঘটেছে যে।

” তার এখন কেমন অবস্থা?

” এখন একটু ভালো, ঠিক হয়ে যাবে।

” আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি। আপনি কি আবার বের হবেন?

” না আর বের হব না। বিকেলে একদম বাসায় ফিরবো দুজন।

” ঠিক আছে তাহলে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।

” আপনার তো ছোট ভাই আছে তাই না, সে কোথায় দেখছি না তো?

” নানাভাই নিয়ে গিয়েছে তাকে, সে বাসায় নেই।

” আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার মা আপনাকে খুব ভালোবাসে, আপনার যেমন বাবা মা*’রা গিয়েছে ঠিক তেমন তারও স্বামী মা*’রা গিয়েছে আপনারও উচিৎ তাকে সঙ্গ দেওয়া ভুল বলে থাকলে আমি দুঃখিত।

” জি আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন।

আরসাল ফ্রেশ হতে চলে যায় আর আলিজা নাস্তা নিয়ে আসতে যায় কারণ তার ছোটমা নাস্তা তৈরি করে রেখেছে। আলিজা নাস্তা নিয়ে আসতে গিয়ে দেখে ছোটমা নাস্তা করতে বসেছে। সে নিজেই সবকিছু নিতে থাকলে ছোটমা একপাশে থাকা ট্রে দেখিয়ে দেন যেখানে আগে থেকে খাবার রেডি করা আছে। আলিজা কথা না বলে সেটা নিয়ে রুমে চলে যায়।
ট্রে টেবিলের ওপর রাখতেই আরসাল ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। আলিজা খাবার এগিয়ে দেয়।

” আপনি খেয়েছেন?

” না আপনি খেয়ে নিন, আমি পরে খাবো।

” একসাথেই খেয়ে নেন, পরে কেন খাবেন? আসুন, বসুন আমার পাশে।

” আমি পরে খেয়ে নেব আরসাল, আপনি খেয়ে নিন।

” বসতে বলেছি আলিজা।

কোন উপায় না পেয়ে পাশে একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে বসে পড়ে আলিজা। আরসাল খেয়াল করে আলিজা খাবার নিয়ে চুপচাপ বসে আছে কিছু খায় নি এখনও।

” কিছু হয়েছে? খাচ্ছেন না কেন এখনও?

” আসলে….

” হুম, আসলে কি?

” গরম পাতিল ধরেছিলাম, হাতে খুব লেগেছে। আঙুলগুলো এখনও জ্ব*’লছে।

” দেখেশুনে কাজ করবে তো তাই না! দেখি হাত দাও…

” তেমন কিছু হয় নি।

” হাত দিতে বলেছি হাত দিন।

” তুমি করেই বলেন না প্লিজ, শুনতে ভালো লাগে।

আরসাল বুঝতেই পারে না কথার মাঝে তুমি কেন চলে আসছে, অন্য কারও বেলায় তো এমন হয় না! নাহ এই মেয়ের থেকে তার দূরে দূরে থাকতে হবে।

” আচ্ছা আন্টির মতো আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন?

আলিজার কথায় ধ্যান ভাঙে আরসালের। কি বলবে সে এখন! এখন কি আবার তাকে খাইয়ে দিতে হবে! কিন্তু না দিলেও তো মেয়েটা খেতে পারবে না। আর কোন উপায়ও নেই কারণ তার ছোটমার সাথেও মনমালিন্য চলছে। কি আর করার, তাকে এখন খাইয়েই দিতে হবে কেন যে প্রথমে জোর করতে গেল সে! নাহ ওটা একটু বেশি অমানবিক হয়ে যেত।

” এদিকে এগিয়ে আসুন, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।” কথাটি শুনে আলিজা হাসিমুখে আরসালের দিকে এগিয়ে যায়। তার ধারণা কিছু কিছু পুরুষ মানুষ আসলেই খুব ভালো হয়, স্ত্রীর যত্ন করতে পারে।
__________

**
“আমি ভেবেছিলাম আমি আমার ভালোবাসা ত্যাগ করব, কারও সংসার ভাঙবো না কিন্তু পরে আমি হোস্টেলে গিয়ে নিজের কথা রাখতে পারি নি আরসাল, আমি তোমাকে ছাড়া সত্যিই বাঁচতে পারব না। তুমি আমার অক্সিজেন হয়ে গিয়েছো বিশ্বাস করো। তুমি আমার সাথে অসুখী এটা মানতে পারলেও তুমি অন্য কারও সাথে অসুখী এটা আমি একদম মানতে পারব না আরসাল। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।(তিথি)

হাসপাতালের বেডে বসে আরসালের হাত ধরে কথাগুলো বলল তিথি। তিথি এখন অনেকটা সুস্থ তাই তাকে বাসায় পাঠানো হচ্ছে আর তাই আরসাল সন্ধ্যা পর আলিজাকে বাসায় রেখে এখানে চলে এসেছে। তিথি তাকে না দেখতে পেয়ে একটু বেশি পাগলামি করছিলো।

” আমি জানি আমার তিথি আমাকে খুব ভালোবাসে। সে কি জানে না আমিও তাকে অনেক ভালোবাসি?

” হুম জানি তো। কিন্তু ওই মেয়ে…

” আমি তো বলেছি তাই না যে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স দিয়ে দেব কিন্তু তার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন আমার।

” কত সময় লাগবে তোমার?

” মাত্র মেয়েটার বাবা মা*’রা গিয়েছে, আমার বাবার অবস্থা খুব খারাপ আর অবস্থা খারাপ হওয়ায় মন মেজাজ ও তার ভালো নেই। এখনই যদি আমি উল্টাপাল্টা কাজ করি তবে বাবা আমাকে তা*’জ্যপুত্র করে দেবে তখন আমি তোমাকে নিয়ে কি করব বলো,কোথায় যাব? একটু ধৈর্য্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে আমার ওপর ভরসা রাখো শুধু।

” তুমি আমাকে একদম ইগনোর করবে না, আমি মেসেজ দিলে রিপ্লাই দেবে, কল দিলে কথা বলবে, আমাকে নিয়ে বের হবে সময় দেবে আর…..

” আর কি?

” তুমি ওর থেকে দূরে দূরে থাকবে একটুও কাছে যাবে না কিন্তু।

” একদম যাব না, হয়েছে?

” হুম।

” আচ্ছা এবার ওঠো বের হই, তোমাকে রেখে বাসায় ফিরতে হবে।

” আচ্ছা চলো, ওই দুই হাজার টাকা দাও তো।

” কেন? এখন টাকা কেন লাগবে?

” অনলাইনে সুন্দর একটা ড্রেস দেখেছি ওটা নেব।

” আচ্ছা ঠিক আছে নিও। এখন চলো তো।
______

আরসাল তিথিকে তার বান্ধবীসহ হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যায়।
তিথি শুয়ে শুয়ে বারবার হাসছে আর টাকা দেখছে। এমন সময় তার বান্ধবী এসে পাশে বসে।

” এই নে হাসপাতালের অর্ধেক টাকা।( সায়মা)

” ওহ ফেরত দিয়েছে তাহলে?

” হ্যাঁ, ফেরত দেবে না মানে!

” নাটক ভালোই সাজিয়েছিলাম বল?

” বুদ্ধিটা সেই ছিল, রাতে কিভাবে বউ রেখে ছুটে এলো বেচারা!

” আমার কাজ হয়ে গেলে আর লাগবে না ওকে আমার, তারপর বউ নিয়ে সংসার করবে ইচ্ছেমতো, আমি দেখতেও যাব না।

” সোনার ডিম দেওয়া হাস এটা তোর, এখন তোর ইচ্ছে-পূরণ হলে ছাড়তেও বেগ পেতে হবে না, বিবাহিত ট্যাগটা তো আছেই। লোকটা বোকা আছে, নইলে এমন করতে পারে, এ যুগে ভালোবাসা বলতে কিছু আছে নাকি!

” এক বছর পিছে ঘুরে পটিয়েছি, আমার কথা তো ভাবতেই হবে বেব।

” এবার আমার ভাগটা বুঝিয়ে দিন ম্যাম।

তিথি টাকাগুলো একসাথে করে নাড়াচাড়া করে আর হাসতে থাকে আর বলে বুঝেছিস সায়মা, আরসাল সত্যিই সোনার ডিম দেওয়া একটা হাস।
_____**

আলিজা বাবার বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই নওরীন তার সাথে আছে। তার কথাবার্তায় আলিজার মন ভালো হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা সত্যিই খুব ভালো নাহলে এত তাড়াতাড়ি কে এতটা কাছের হয়ে যেতে পারে! আলিজার মাথা ব্যথা করছিল তাই নওরীন তার মাথায় তেল বসিয়ে দিচ্ছে আর গল্প করছে।

” আচ্ছা ভাবি নুডলস খাবে?

” এখন?

” হ্যাঁ।

” তোমার ভাইয়া আসলে তো ডিনার করবে সবাই।

” ততক্ষণে আমাদের নুডলস হয়ে যাবে, তুমি থাকো আমি ঝটপট নুডলস বানিয়ে নিয়ে আসছি।

” শোনো, তুমি আমাকে হেল্প করো, আমিই বানাচ্ছি চলো।

” তুমি বানাবে? আচ্ছা চলো।

দুজনে রান্নাঘরে চলে যায়, তারা রান্নাও শুরু করে দেয়। এমন সময় আলিজার শাশুড়ী বাহিরে আসে, এসে দেখে দুজন রান্নাঘরে। তিনি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যান।

” কি হচ্ছে এখানে?

” আম্মি, নুডলস খেতে ইচ্ছে করছিল আমিই রান্না করব বললাম কিন্তু ভাবি বলল সে রান্না করবে আর আমাকে হেল্প করতে বলল।

” আরসাল এখনই চলে আসবে, রাতের খাবারের সময় হয় গিয়েছে আর এখন তোমার নুডলস খেতে ইচ্ছে করলো রনু?

” ধরে নাও এটাই আমার ডিনার।

” আন্টি হয়ে গিয়েছে আমাদের প্রায়। আর উনি আসলে ফ্রেশ হবেন তারপর তো খাওয়া।(আলিজা)

” ঠিক আছে, যা করার করো। আমি যাই রুমে যাই তোমার আঙ্কেলের মাথা ব্যথা করছে।

” ঠিক আছে আন্টি।

উনি চলে গেলে দুজন আবার রান্নায় মনোযোগ দেয়। অনেক মেয়ে আছে রান্না না পারাটাকে গুণ হিসেবে দেখে, কেউ জিজ্ঞেস করলেই বড়মুখ করে বলে আমি ডিম ভাজি ছাড়া কিছু রান্না করতে পারি না। রান্না করাটা একটা মেয়ের বা হাতের খেল হতে হবে, মেয়ে হবে সবকিছুতে এগিয়ে, রান্নার মত সহজ কাজটাই যদি না পারে তাহলে কেমন হয়! ইউটিউবের মারফতে অনেকধরনের খাবার রান্না করতে পারে আলিজা।

” রনু…

” জি ভাবি?

” উনি কি কি খেতে পছন্দ করে?

” উনি কে?

” তোমার ভাইয়া..

” ওহ আচ্ছা ভাইয়া! ভাইয়া তো অনেক খাবার পছন্দ করে তার মধ্যে কিছু খাবার একটু বেশিই পছন্দ করে। গোরুর মাংস দিয়ে খিচুড়ি, পুডিং, চিকেন বিরিয়ানি, ভাত-ডাউল, মাছ ভর্তা, পাস্তা,চকলেট কেক আর মনে পড়ছে না। তবে বাঙালী খাবার সব ভাইয়ার পছন্দ।

” আচ্ছা এতেই হবে। রান্না তো শেষ চলো আমার রুমেই গিয়ে বসি।

” ঠিক আছে চলো।
_______

** বাসার সামনে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে একা বসে আছে আরসাল। এত এত চিন্তা মাথায় নিয়ে বাসায় ও যেতে ইচ্ছে করছে না তার। একদিকে দুই বছরের ভালোবাসা আবার অন্যদিকে সব হারিয়ে শুধুমাত্র তার দায়িত্বে থাকা স্ত্রী। তিথির কাছে গেলে আলিজার সাথে বড় অন্যায় করা হবে আর তিথিকে ছেড়ে আলিজার আছে এলে তো তিথিকে ঠকানো হবে নিজের ভালোবাসা, অনুভূতিকে ঠকানো হবে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আরসাল।
ওদিকে রাত বারোটা বেজে গিয়েছে, বাসায় যাওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই তার। পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো, বের করে দেখে তিথি কল দিয়েছে। এতরাতে তিথি কেন কল দিয়েছে, আবার কিছু হলো না তো এই ভেবে কল রিসিভ করে সে।

” হ্যাঁ তিথি বলো।

” কি করছো?

” কিছু না, বাহিরে বসে আছি তুমি এতরাতে কল দিলে যে!

” ভালো লাগছিল না, বাহিরে কেন আছো? বাসায় যাও অনেকরাত হয়ে গিয়েছে তো।

” যেতে ইচ্ছে করছে না।

” আরে বাবা বাসায় কেন যাবে না! বাসায় যাও প্লিজ, শুধু ওই মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকবে এতেই হবে।

” আমি তোমার প্রতি যথেষ্ট অনুগত, আমাকে তুমি জানো তিথি। তুমি ঘুমাও নিশ্চিন্তে, আমি তোমারই আছি।

” ভালোবাসি বলো।

” হুম।

” হুম কি? তাড়াতাড়ি বলো।

” আমি আমার তিথিরানীকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

” আচ্ছা এখন রাখছি বাসায় যাও, গুড নাইট।

আরসালের মাথা পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একদিকে ভালোবাসা অন্যদিকে দায়িত্ব আর বাবার সম্মান। সে কি করে সর্বহারা মেয়েটার থেকে নিজেকে সরিয়ে একদম মর*’ণকূপে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে! তিথির কথা মনে করলেই যেন মেয়েটার নিষ্পাপ চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে, এই দুই, তিনদিনেই কেমন মায়া মায়া লাগছে মেয়েটার জন্য!
কি করবে সে ভেবে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে সমাধান পাবার আশায় আল্লাহকে স্মরণ করে আকাশের দিকে তাকায় , সাথে সাথে চোখ থেকে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

চলবে…

কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন। আবারও বলব একের অধিক কমেন্ট করবেন😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here