পূর্ণতায় তুমি পর্ব – ৯ ও শেষ

গল্পঃ পূর্ণতায় তুমি ( নবম বা শেষ পর্ব )

একটা গো-ডাউন টাইপ রুমে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে অবনীকে! কয়েকজন গুন্ডা এবং তাদের বিশ্রী দেখতে বস বজলু অবনীকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।

অবনীর চোখের কাপড়টা সরিয়ে বজলু বিদঘুটে হাসি হেসে বলল,– এখন যদি আমরা সবাই মিলে তোর শ-রীরটাকে লু-টে ডাস্টবিনে ফেলে দেই, কে বাচাবে তোকে বল, তোর ওকালতি জীবনের শুরুতেই সমাপ্ত হয়ে যাবে। তারচেয়ে বলি এই কেসে নাক না গলিয়ে সরে যা, তোর জন্যও ভালো আর আমার জন্যও, কারণ আমি নারীজাতির গায়ে হাত তুলতে চাইনা, তবে তুই এর পরেও বাড়াবাড়ি করলে গায়ে হাত না তুললেও গলায় চাকু তুলতে বাধ্য হবো বলে দিচ্ছি।

অবনী বললো,– এসব ভয় নিয়ে চললে এতদূর এগিয়ে আসতাম না, এই কেসের রহস্য আমাকে উদঘাটন করতেই হবে।

বজলু রেগে গিয়ে অবনীর গলায় চাকু ধরে বললো,– সোজা আঙুলে ঘি না উঠলেও সোজা চাকুতে তোর প্রাণ ঠিকই পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে যাত্রা করবে, ভেবে দেখ কি করবি!

গোডাউনের দরজার বাইরে থেকে কেউ ঠকঠক করে নক করলো! বজলু তার এক গুন্ডাকে বললো,– ঐ দেখ তো কোন শালার আবার দুনিয়া ভালো লাগেনা, তাই মরতে এখানে এসেছে!

দরজা খুলতেই এক যুবক হুড়মুড় করে সোজা ভেতরে এসে বজলুর সামনে দাড়িয়ে বললো,– ভাই ম্যাচ হবে বিড়ি ধরামু!

বজলু ভীষণ অবাক হয়ে যুবকের গলায় ছুরি ধরে বললো,– শালা বজলুকে দেখলেও ভূমিকম্প ছাড়াই পুরো সহর কাপে, আর তুই আসছিস বজলুর কাছে বিড়ি ধরাতে!

যুবক মুচকি হেসে বললো,– ভাই জীবনের প্রতি আর কোনো মায়া নেই বলেই তো বাঘের গুহায় রাত কাটাতে আসলাম!

ভ্রু কুঁচকে বজলু বললো,– মানে?

: ভাই এই বিড়িটা খেয়ে আ-ত্মহত্যা করবো বলে এখানে এসেছি, কিন্তু আপনি যদি আমাকে দয়াকরে খুন করেন তাহলে তো আর কষ্ট করে আত্মহত্যা করতে হবেনা।

: এই এই শা-লা, বাপের জন্মেও বিড়ি খেয়ে কাউকে আত্মহত্যা করতে শুনিনি! পাগল পাইছস আমারে!

: আরে ভাই বিড়ি খেয়ে আত্মহত্যা মানে বিড়িটা খেয়ে তারপর আত্মহত্যা করবো সেই কথা বলছি।

: ও আচ্ছা! তা আত্মহত্যা করবি করবি কেন?

: ভাই পিওর ভালোবাসার দাম নাই!

: ফাও কথা সাইডে রেখে সত্যি করে বল তোর উদ্দেশ্য কি!

এদিকে যুবককে দেখে অবনী অবাক! এ তো আকাশ, ঠিক বিপদের দিনে আকাশ কীভাবে এসে হাজির হয়!

বজলু আবারও আকাশের গলায় ছুরি ধরে বললো,– সত্যি করে বল কে তুই, আর এখানে কি চাস?!

আকাশ বললো,– ভাই প্রেমে পড়ার আগে জীবন ছিল এক ধরনের ফেয়ার এন্ড লাভলী।

আকাশের কথা শুনে বজলু রেগে গিয়ে বললো,– ফাজলামো করা হচ্ছে তাইনা? মানুষের জীবন আবার ক্রিমের মতো থাকে নাকি!

আকাশ বললো,– আরে ভাই ফেয়ার মানে সুন্দর, লাভলী মানে মনোরম, তারমানে জীবন ছিল সুন্দর এবং মনোরম। কিন্তু এ নির্দয় নিষ্ঠুর পাষাণ সমাজ আজীবন পবিত্র প্রেমের বিরুদ্ধাচরণ করে আসছে বলেই আমার মতো শত প্রেমিক প্রাণ অকালে বিলিন হয়েছে ধরণীর বুক থেকে, যে পৃথিবীতে ভালোবাসা নেই, সেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছেও আমার নেই বজলু ভাই, আপনি আমার গালায় ছুরি চালিয়ে মুক্তি দিন এই প্যারাময় প্রেমিক জনম থেকে পিলিজ বজলু ভাই। আপনার মনেও তো প্রেম, ভালোবাসা, দয়ামায়া কিছু নেই, জানি আপনি পারবেন।

বজলু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতের ছুরিটা ফেলে দিয়ে বললো,– ইমোশনাল হিট করলি রে ভাই, কথা ছিল বিলকিসের বাবা বিলকিসকে আমার হাতে তুলে দিবে, কিন্তু তুলে দিলো অন্যের হাতে! আর পরিস্থিতি আমার মতো একটা নিষ্পাপ যুবকের হাতে তুলে দিলো ছুরি কাচি! ছ্যাঁকা খেয়ে সবাই হয় কবি, আর বজলু হয়ে গেল ভিলেন। বিষয়টি বড্ড হার্ট রিলেটেড।

আকাশ বজলুকে জড়িয়ে ধরে বললো,– ভাই আপনার দুঃখটা আমিও বুঝি! আই ক্যান ফিল ইউর পেইন!

বজলু বললো,– তুমি আমার কচুর পেইন ফিল করো! যার পেইন সে ছাড়া আর কেউ ফিল করতে পারেনা বদ। বিলকিসের কিস খেয়ে জীবন সাজাতে চেয়েছিলাম, অথচ বিলকিসের কিসের অভাবে আবার গুন্ডা হয়ে গেলাম, জীবন্ডা আসলেই বেদনার।

আকাশ অবনীকে দেখিয়ে বজলুকে বললো,– এই মেয়েটিও তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচানোর জন্য এত রিস্ক নিচ্ছে। আপনি বললেন যার পেইন সে ছাড়া কেউ ফিল করতে পারেনা, তাহলে আপনি কেন বাঁধা হয়ে মেয়েটির পেইন বাড়িয়ে দিচ্ছেন বজলু ভাই, কেন পুনরায় নিজেকে পাষাণ, নির্দয় প্রমানের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন? বিলকিসের কসম ভালো হয়ে যান বজলু ভাই।

আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বজলু বললো,– লোকেশন দে তাইলে।

আকাশ অবাক হয়ে বললো,– কিসের লোকেশন!

বজলু হেসে ফেলে বললো,– তুই বললি ভালো হয়ে যেতে, কিন্তু ভালো হয়ে যাবো কোথায়! লোকেশন দিলে নাহয় সেই বরাবর চলে যেতাম।

বজলুর কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।

বজলু তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলে গেল।

আকাশ চেয়ার থেকে অবনীর বাঁধন খুলে অবনীকে মুক্ত করে বললো,– তোমার কেসটা এবার সমাধানের পথে, আর কোনো দৌড়ঝাঁপ করতে হবেনা অবনী। আর তুমি যাদের সন্দেহ করেছো তারা কেউ মূল আসামি নয়, মূল ষড়যন্ত্রকারী সকলের ভাবনার বাইরের কেউ।

অবনী অবাক হয়ে বললো,– কে সে?

আকাশ বললো,– পুরো মাস্টারপ্ল্যান আবিদার, উঠতি মডেল আমাতুল্লাহ আবিদার। আমার শুরুতেই সন্দেহ হয়েছিল যে শুভ তো কিছুতেই হিমিকে খুন করতে পারেনা। আর নিশি তার পথের কাটা হিমিকে খুন করিয়ে নিজে ঝামেলায় জড়িয়ে ক্যারিয়ার নষ্ট করার মতো বোকামি করবে না, কারণ সেও ভীষণ স্মার্ট। তাই তৃতীয় কারো উপস্থিতি থাকার আশঙ্কা থেকে যায় যে কিনা হিমিকে খু-ন করিয়ে নিশিকে ফাঁসিয়ে, হিমি ও নিশি দুজনকে সরিয়ে ইটালিয়ান ব্র্যান্ডের মডেল হতে পারে, এবং সে আর কেউ নয়, আবিদা। কারণ আবিদা গোপনে এড কোম্পানির মালিক পূর্নতা কবিরের ব্যক্তিগত সহকারীকে মোটা অঙ্কের টাকা অফার করেছিল এই সুযোগটা পাইয়ে দেবার জন্য।

অবনী মাথায় হাত দিয়ে ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– ও মাই গড! কিন্তু তুমি এতকিছু কীভাবে করলে আকাশ!

আকাশ মুচকি হেসে বলল,– আবিদাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে, ওর কএটা রোগ আছে, সেটা হলো ভাত-পানির চেয়ে বেশি ক্রাশ খাবার রোগ! ইতালিয়ান ব্রান্ডের একটা লিপস্টিক দিয়ে আবিদার সাথে ভাব জমাই। এবং ইতালিয়ান কোম্পানির এড এর মডেল হিসেবে ওকে সুযোগ করে দেবার আশ্বাস দেই। ধীরে ধীরে কফিশপ থেকে ফুচকা আলুর-চপ। তারপর ড্রইং রুম থেকে বেডরুমে! রঙ্গ থেকে অন্তরঙ্গ। একটা কথা কি জানো, মেয়েরা যাকে বিশ্বাস করে তার সাথে সবকিছু ফাইভ-জি স্পিডে করে ফেলতেও একটু ভাবেনা। সেদিন গভীর রাতে পার্টি থেকে ফেরার পরে আবিদা একটু বেশি উত্তেজিত ছিল, জড়িয়ে ধরে একান্ত কাছে পেতে একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো৷ তারপর আমিও ঝোপ বুঝে কোপ মেরে দিলাম।

“ ইয়াক! তুমি এত খবিশ আকাশ” বলে থুতু ফেললো অবনী।

আকাশ হেসে ফেলে বললো,– আরে ঝোপ বুঝে কোপ মারা মানে সুযোগ বুঝে আবিদাকে কয়েকটা চুমুটুমু খেয়ে কথাগুলো বের করলাম।

অবনী বললো,– তাই বলে চুমু!

আকাশ বললো,– চুমু খাবার জন্য এমন অবস্থা আবিদার যেন বাপের জন্মে জীবনে খায়নি, মোর কি দোষ!

অবনী বললো,– যা-ই হোক, তারপর।

আকাশ বললো,– তারপর আবিদাকে খুঁচিয়ে সব কথা বের করে আমার ফোনে রেকর্ড করলাম। কোর্টে জজকে এই রেকর্ডটা শোনালেই হবে, আর কিছু দরকার নেই!

নির্দিষ্ট দিনে কোর্টে উপস্থিত সবাই। বিচার-বিশ্লেষণ করে শুভ নির্দোষ প্রমানিত।

অবনী ও আকাশ যাচ্ছে এমন সময় পেছন থেকে শুভ এসে অবনীর হাত ধরে বললো,– আবার একবার ক্ষমা করে দেয়া যায়না অবনী?

অবনী ঘুরে দাড়িয়ে পার্স ব্যাগ থেকে শুভর দেয়া সেই ডিভোর্স লেটার বের করে সাইন করে দিয়ে বললো,– তুমি তখন এটাই চেয়েছিলে শুভ, দিয়ে দিলাম, তুমি আমার অপূর্ণতায় রয়ে যাও নাহয়।

আকাশ অবনীকে বললো,– ক্ষমা করে দেওয়াটাই উচিৎ ছিল হয়তো অবনী।

অবনী আকাশের চোখে চোখ রেখে বললো,– আকাশ তুমি আমাকে এতটাই বোকা ভাবো? আমার সেই অদেখা ভালোবাসার মানুষটা শুভর সাথে আমার বিয়ের পরেও বলেছিল, অবনী তুমি আমার হওনি তো কি, তোমার সুখের দিনে কষ্টের কারণ হয়ে আসবো না, দুঃখের দিনে তোমার পাশে তোমার ছায়া হয়ে থাকবো।

আকাশ অবাক হয়ে বললো,– আচ্ছা, এত ভালোবাসে!

অবনী আকাশের শার্টের কলার ধরে বললো,– আর সেই অদেখা ভালোবাসার মানুষটা তুমি মিস্টার আকাশ।

আকাশ হেসে ফেললো।

অবনী আকাশের হাতে হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,– তোমার ওপর এই বিশ্বাস আমার আগেও ছিল, আজীবন থাকবে মিস্টার মাথার উপর বিস্তৃত ভরসার আকাশ। আর আমি জেনে গেছি এবং মেনে গেছি আমার পূর্নতায় তুমি।

সমাপ্ত।

আবীর হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here