প্রকৃতির বিচার পর্ব -০২

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_২
#কে_এ_শিমলা

হয়তো ভুলে গেলেন আরো একটি ফুলের কথা। যে উনার ভেঙ্গে যাওয়া ছেলেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলেছিল। সারাজীবন সুখে দুঃখে সাথে থাকতে চেয়েছিল। ভেঙ্গে পড়া একজন মানুষের হাত আঁকড়ে ধরে আজীবন থাকতে চেয়েছিল।
ভুলে গেলেন নিঃস্বার্থ ভাবে পাশে এসে দাড়ানো সেই মেয়েটাকে।”
ভুলে গেলেন এই মেয়েটার কথায় সেই মেয়েটার কথা। যার সাথে উনারা অবিচার করেছেন। আর হয়তো ভুলে গেলেন এই মেয়েটার করা সব ভুল কাজ গুলো। যে উনার ছেলেকে একদিন ঠকিয়েছিল।”
আর তিনিই বা কেন মনে রাখবেন এই মেয়ের ভুল কাজ গুলো,বা ওই মেয়েটাকে’ই। যার মনে রাখার কথা সে তো রাখেনি।”

চুপচাপ নাস্তা করছে ইশান। কোথাও একটা খালি খালি লাগছে তাঁর। মনে হচ্ছে সে মাহদিয়ার সাথে সত্যিই অন্যায় করেছে। মেয়েটা তো সারাজীবন তাঁর সাথে থাকতে চেয়েছিল। সে কী সত্যিই অন্যায় করলো। আবার ভাবছে না না অন্যায় করিনি আমি তো শুধু আমার ভালোবাসার মানুষটা কে আবার নিজের করেছি।”
এই তিন চার বছর সাথে থাকলেও তো মাহদিয়ার জন্য ততটা ভালোবাসা ওর হৃদয়ে উদয় হয়নি যতটা ভালোবাসা দিনার জন্য ছিল। ততটা ভালো সে মাহদিয়া কে বাসতে পারেনি যতটা ভালো সে দিনা কে বেসে ছিল।” তবুও বারবার যেন ভেতরটা বলছে, ইশান তুই অপরাধী।’ তুই মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছিস।”

ইশান!”‘
হঠাৎ কিছুটা উচ্চস্বরে নিজের নাম শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ইশান।’
দিনার দিকে তাকাতেই সে বলে, কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? হুম! কখন থেকে ডাকছি তোমায়।”

ইশান খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললো, স্যরি দিনা। আচ্ছা বলনা কী বলবে!
দিনা বলে, কী ভাবছিলেন মশাই সেটা বলুন।
ইশান হাসার চেষ্টা করে বলে, কিছু না তো। তুমি বলো কী বলবে।
দিনা বলে, আজ কী তোমার অফিস যেতে হবে?
ইশান বলে, কেন?
দিনা- যদি না থাকে তাহলে আমাদের বাসায় যেতাম।
দিনার কথা শুনে ইশান বলে, আমি তো জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছি, তোমার মা বাবা কী আমাদের মেনে নিয়েছেন?”
দিনা খানিকটা হেসে বললো, তোমার মা কী আমাদের মেনে নেননি?”
ইশান বলে, তো নেননি? না নিলে কী একসাথে বসে খাবার খেতেন।
দিনা বলে, তাহলে একবার আমার বাসায় গিয়েই দেখ না।
ইশান বলে, আজ যেতে পারবো না। জরুরী মিটিং আছে অফিসে যেতে হবেই। আগামীকাল অথবা রাতে যাবো কেমন।”
দিনা কিছু সময় ভেবে বললো, ঠিক আছে আজ রাতে যাবো।
ইশান হেসে বলল, ওকে ডিয়ার।
দিনা ও হাসে! নজরকাড়া সেই হাসি। ইশান তাকায় দিনার দিকে! আজ কতদিন পর এই মানুষটার হাসি সে দেখছে। এই হাসিমাখা মুখটা দেখেই তো ইশানের প্রথম অনুভূতি তৈরি হয়েছিল এই মানুষটার জন্য।”
দিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইশান।
গাড়িতে বসার পর আবারো মাহদিয়ার কথা মনে পরে ইশানের।”

~~সকাল দশটায় ঘর থেকে বের হয়ে মেয়েকে দেখেই দাঁড়িয়ে যান মাহতাব হোসেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন তাঁর দিকে।”
বাবাকে দেখে একটা হাসি উপহার দেয় মাহদিয়া। মেয়ের মুখে হাসি দেখে হাসেন মাহতাব হোসেনও। মাহদিয়া জিজ্ঞেস করে কেমন আছো আব্বু?”
মাহতাব হোসেন বলেন, আমিও ভালো আছি আম্মা।
তুমি কেমন আছো?” মাহদিয়া হাসি মুখেই বলে, আমিও ভালো আছি আব্বু।”
তারপর ভেতরে যায় মাহদিয়া। মাহদিয়া কে দেখে ওর মা বেজায় খুশি হলেন। একপর্যায়ে তিনি কেঁদেই দিলেন। আজ কতদিন পর মেয়েটা বাড়ি এসেছে।”

~মা, বাবা,ভাবীর সাথে সকালের খাবার খায় মাহাদিয়া। তারপর কোনো ভনিতা ছাড়াই বলে দেয়,সে একেবারেই চলে এসেছে ইশানের বাড়ি থেকে। বলে দেয় তাঁর জীবনে কাটানো সবথেকে তিক্ত সময় গুলোর কথা।”
আর আজ সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে সে চলে এসেছে জীবনের জন্য। সারাজীবন থাকার জন্য যে বাড়িতে গিয়েছিল। সেই বাড়ি থেকে চলে এসেছে।”

মাহদিয়ার কথা শুনে প্রথমে সবাই অবাক হলেও পরে ভাবেন, মেয়েটা মুক্তি পেল তবে। এখন কিছুটা শান্তির নিশ্বাস তাহলে নিতে পারবে। এরকম সম্পর্ক থাকার থেকে না থাকা বেশ ভালো।
মাহদিয়ার মা বাবা বুঝতে পারলেন, মেয়ে তাদের না বললেও এতো দিন ভালো ছিলনা ও বাড়িতে।”

মাহদিয়ার বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে বললেন-তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছে মা। তুমি এখানে সারাজীবন থাকো কোনোকিছুর অভাব তোমার হবে না। এটা তোমারই বাড়ি।’ তুমি আগে যেমন আমার রাজকন্যা ছিলে,এখনো সেরকমই থাকবে।’
আর তোমার সাথে যা হয়েছে তাঁর বিচার অবশ্যই দেখবে মা। প্রকৃতির বিচার বলেও একটা কিছু আছে।”
মাহদিয়ার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে একফোঁটা নোনাজল। আসলেই কী সে ভালো থাকবে?’
“সে নিজের হাতেই তো তাঁর ভালো থাকা নষ্ট করেছে।”
আর কী কখনো কারো জন্য তাঁর হৃদয়ে ভালোবাসা, অনুভূতির জন্ম দিতে পারবে সে।”

~~~~~~~~

চার বছর পর____

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ইশানের। গতরাতে লে’ট করে বাড়ি ফেরায় ঘুম কম হয়েছে। যার দরুন এখনো চোখে ঘুম লেপ্টে আছে। তবুও শরীর টেনে বিছানা ছেড়ে উঠে বাহিরে আসে।
মায়ের দিকে একপলক তাকায় ইশান। কতই না সুন্দর ছিল আগে এই মুখ। আর কিছু দিনের ব্যবধানে আজ এই চেহেরার কী অবস্থা হয়েছে।
ইশান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, কিছু বলবে মা?”
জবাবে ওর মা বলেন, বাবা ইশান গতকাল কী তুই বেতন পেয়েছিস? বলেছিলি তো পাবি।”
দেখ বাবা চাল শেষ। কালকেই শেষ হয়েছিল। আজ রান্না করার মতো কোনো চাল নেই।
ইশান বলে, ঠিক আছে মা নিয়ে আসছি আমি। ইশানের মা চলে যান।‌ ইশানও হাত মুখ ধুয়ে বাহিরে বের হয়ে চলে যায়।”

কিছু মানুষ কে হয়তো দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা’ই উচিত নয়। যা আজ একবছর থেকে হারে হারে টের পাচ্ছে ইশান।”
“কিছু মানুষ নিজের ভুল বুঝে, ভুল শুধরানোর জন্য আবার আসেনা। নতুন করে পুনরায় প্রতারনা করার জন্যও আসে।’
ইশান যার সাথে তাঁর সর্বস্ব নিয়ে সুখে থাকতে চেয়েছিল, আজ সেই মানুষটাই তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। ইশান তাঁর ভালোবাসার জন্য ভুলে গিয়েছিল, তাঁর সাথে করা দিনার অন্যায় গুলো। কিন্তু দিনা আবারো তাঁর সাথে অন্যায় করে করেছে। হয়তো তাঁর ফিরে আসার মানেটাই ছিল ইশান কে নতুন করে ধোঁকা দেয়া। কিন্তু ইশান তা বুঝতে অক্ষম ছিল।”

“দিনার উদ্দেশ্য’ই ছিল ইশানের সব কেড়ে নেওয়া। যখন সে দেখলো মাহদিয়ার সাথে ইশান ভালো আছে। তখনই সে আবার ইশানের জীবনে আসে। মাহদিয়ার জন্য যখন ইশানকে দিনা কিছুই করতে পারছিল না। তখনই সে মাহদিয়া কে ইশানের জীবন থেকে সরিয়ে ফেলে। বোকা ইশান ও তাঁর ভালোবাসার কাছে আটকে যায় আবার।’
ইশান ভাবে তাঁর ভালোবাসা দিনা বুঝেনি।”
তখন আবার ভাবে সে কী মাহদিয়ার ভালোবাসা বুঝেছিল। সেও তো একরকম মাহদিয়া কে ঠকিয়েছে। মাহদিয়া তাকে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দিয়েছিল। বিনিময়ে সেও শুধু একটু ভালোবাসাই চেয়েছিল।‌ তাঁর থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মেয়েটা কী’ই না করেছিল। আর সে নিজেই ভালোবাসার কথা বলে মাহদিয়া কে তাঁর জীবনে এনেছিল। শেষে শুধু মেয়েটাই তাকে ভালোবাসলো। সে কী তাকে ভালোবেসে ছিল?””

কিছুক্ষন হেঁটে আসার পর একটা জায়গায় আসতেই পা থেমে যায় ইশানের। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সামনের অফিসটার দিকে। এই অফিসটা একসময় বাবার ছিল। শেষ সময়ে এসে তিনি বলেছিলেন, উনার দুই ছেলেকে অফিসের সবকিছু বুঝিয়ে দেবেন। তখন ইহান বলেছিল সে অফিসের কোনো দায়িত্ব নিতে পারবে না।তবে ইশান বলে সে দায়িত্ব নেবে। তখন সে এই অফিসের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও ইশান ব্যর্থ। যে অফিসটা ইশানের ছিল আজ তা অন্য একজনের।”
“মানুষের সাথে যুগের পর যুগ পথ চললেও মানুষ চেনা বড়ই দায়।”
“মানুষকে বিশ্বাস করা যায়! কিন্তু একজন বিশ্বাসঘাতক কে বারবার বিশ্বাস করা বড্ড বোকামি। আর ইশান সেই বোকামিটাই করেছে।”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here