প্রণয়সন্ধি পর্ব -২৩

#প্রণয়সন্ধি– ২৩ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

চাঁদহীন আকাশটায় ধূসর রঙের মেঘের খেলায় মেতে আছে। বারান্দায় ডিভানে বসে ল্যাপটপে অফিসে কাজ করছে। শানায়া বারান্দার রেলিং ধরে ব্যস্ত নগরী দেখছে। এমন সময় বাসা থেকে ফোন আসল জুবরান একবার শানায়ার দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলো। কথা বলা শুনে শানায়া বুঝল বাসা থেকে ফোন দিয়েছে তাই চলে যেতে নিলে জুবরান শানায়ার হাত ধরে আটকে দেয়। টান মে’রে শানাশাকে নিজের পাশে বসিয়ে কথা বলে।

কিছুক্ষণ কথা বলার পর জিনিয়া কাতর কণ্ঠে বলল
–‘ আব্বু এবার ইদে বাসায় আয় বাপ। আর কত দিন দূরে দূরে থাকবি।’

–‘ সম্ভব নয় আম্মু। আর কথা বলতে বা শুনতে আমার ভালো লাগে না’

জিনিয়া হাল ছেড়ে দিল। আরো কিছুক্ষণ বাসায় কথা বলে ফোন কাটলো। শানায়াও ইচ্ছে করছিল বাসায় কথা বলতে কিন্তু অভিমান, তিক্ত অতীতের কথা ভেবে নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখলো।

–‘ কিছু কথা ছিল?’
–‘ বলুন’

–‘ আমাদের কোম্পানি থেকে প্রতি বছর ইদে নিউ কালেকশন আসে!’
–‘ তো? ‘

–‘ এবারের নিউ কালেকশনের ডিজাইনটা তুই করবি’

শানায়া বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল
–‘ অসম্ভব। আমি এসব কিছু করতে পারি না আর আপনার কোম্পানির ডিজাইনার নাই না-কি! ‘

–‘ তুই বলছিলি, তুই চাকরি করবি; আমি তোকে একটা ভালো অফার দিলাম সংসার ও সামলাবি আবার বাসায় বসে চাকরিও করবি। মাস গেলে তোর সরকারি চাকরির থেকেও ডাবল স্যালারি পাবি’

–‘ আমি পারি না এসব’

–‘ তানিয়া আমাকে বলছি তুই না-কি একটা লেহেঙ্গার ডিজাইন করছিলি। সেটা তাদের খুব পছন্দ হয়েছিল’

–‘ ওফ্ফ! একটা করেছি বলে যে পারবো এমনটা নয়। আমি এসব করতে পারব না’

–‘ ওয়েল, তাহলে মাথায় রাখিস আমার কোম্পানির বাইরে কোনো জায়গায় চাকরি করতে পারবি না। আমি তোকে কষ্ট করতে দিব না’

–‘ মগের মুল্লুক নাকি আপনি যা বলবেন তাই করতে হবে নাকি আমাকে?’

–‘ হ্যাঁ, আমি চাই না আমার বউ কষ্ট করে রোজগার করুক। তার স্বামীর যথেষ্ট আছে। কিন্তু হ্যাঁ তার যদি কোনো স্বপ্ন থাকে তাহলে বলুক আমি নিজে তার স্বপ্নকে ছুঁতে সাহায্য করব। কোনো প্রকার বাঁধা দিব না। কিন্তু সেটা আমার চোখের সামনে থেকে করতে হবে’

শানায়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো জুবরানের দিকে। জুবরান সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে গেলো রুমের দিকে শানায়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ব্যস্ত নগরী দেখতে লাগল। হঠাৎ ফোনের কথা মনে পড়তেই ছুটে গিয়ে হ্যান্ড ব্যাগে ফোন খুঁজে অন করল। নিশ্চয়ই এতোক্ষণে অনেকে ফোন দিয়ে না পেয়ে দুঃশ্চিন্তা করছে। শানায়া ফোন অন করতে না করতেই পাপড়ির ফোন আসল। শানায়া চমকে উঠে বিরবির করে বলল ‘আহা! কী টাইমিং!’

ফোন রিসিভ করতেই পাপড়ির ঝাড়ি ভেসে এলো।
–‘ সমস্যাটা কী তোর? ঢাকা ছেড়ে গেছিস আর তোর ভাব বেড়ে গেছে? আমরা তোর কেউ না? বেঁচে আছিস কী ম*রে গেছিস একটা খবর দিতে পারলি না? এভাবে এতো তারাতাড়ি ভুলে যেতে পারলি?’

–‘ ম*রে গেলে কীভাবে খবর দিব আপু’

–‘ মুখে মুখে তর্ক করবি না থা* প্প* ড়িয়ে গাল লাল করে দিব’

–‘ আশ্চর্য রাগ করছ কেন? আচ্ছা মাথা ঠান্ডা করে শুনো আমার কথা’

–‘ তুই আর কী বলবি নিশ্চয়ই ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে আমার মুখ বন্ধ করবি’

শানায়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
–‘ আপু আমি ঢাকাতেই আছি আর জুবরান ভাইয়ার সাথে…’

–‘ হোয়াট? তুই ঢাকায় ফোন বন্ধ ছিল কেনো? আর তোর জন্মের ভাইয়ের সাথে আছিস?’

–‘ ও আমার হাসবেন্ড’

–‘ কী? কী? এ্যাই মেয়ে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? না-কি আমার সাথে মজা করছিস? এতো কিছুর পরেও তুই ফিরে গেছিস?’

–‘ আপু আমি ইচ্ছে করে আসে নি ওনি জোর করে আনছে’

–‘ এতোগুলো বছর পর বউয়ের কথা মনে পড়ল হুহ্ এগুলো সব ঢং বুঝলি! কীভাবে কোথায় দেখা হলো তোর ওনার সাথে’

শানায়া বুঝতে পারছে পাপড়ি সেই লেভেলের খেপে আছে এসব শুনে। তাই আস্তে ধীরে প্রথম দিনের অফিস থেকে সব বলল। সব শুনে পাপড়ি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

–‘ আমাকে এসব এতো দিন পরে জানাচ্ছিস? আসলে তুই পদে পদে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিস আমরা তোর কেউ হই না’

–‘ ব্যাপারটা এমন না আপু আমি ভেবেছিলাম আমি হ্যান্ডেল করতে পারব ব্যাপারটা। বাট এটা এতো কমপ্লিকেট হয়ে যাবে ভাবি নি’

–‘ তো! তুই এখন কী করতে চাইছিস?’

–‘ ওনাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি ও পগারপার হয়ে যাবো ওনি আমার টিকিটিও খুঁজে পাবে না। ব্যাপারটা জোস না?’

–‘ জোস কিন্তু পারবি তো!’

–‘ পারব না কেনো এটা আমার বা হাতের খেল হুহ্… ‘

–‘ ওহ্ তাই না-কি! তুমি বোঝাবে ভূগোল আর আমি ও বুঝে যাব? এতোই সহজ?’

জুবরানের কণ্ঠ শুনে শানায়া শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো। বুকে ডিপডিপ করছে আর মনে মনে বলছে ‘লোকটা সব শুনে ফেললো? ইশ! ইশ! ইশ!’ শানায়া সাবধানে ফোনটা কেটে দিল। পাপড়িও ব্যাপটা বুঝে আর ফোন দিল না।

–‘ কী হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে?’

–‘ তেমন কিছু না আসলে…’

–‘তো কেমন কিছু?’

শানায়া বিরক্ত হয়ে বলল
–‘ উফফ এতো জ্বালাচ্ছ কেনো? ও বাড়িতে সকলে অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য’

–‘ তুই যদি আমার সাথে ও বাড়ি যাস তাহলে আমি যাব’

শানায়া চুপ করে থেকে বলল
–‘ ও বাড়িতে আমার অপেক্ষায় কেউ নেই সবাই আমাকে ভুলে গেছে। তুমি জেদ করো না ভাইয়া ও বাড়িতে চলে যা-ও ‘

জুবরান বিরক্তিসূচক শব্দ করে তেড়ে এসে বলল
–‘ কথায় কথায় ভাইয়া কীসের? আমি তো ভাই না-কি বর বল আর কীসের আপনি-তুমি শুধু তুমি বলবি ওকে?’

শানায়া ভয় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বলল
–‘ না না তুমি আমার বর তো তোমাকে তুমি বলছি তো তুমি, তুমি, তুমি!

–‘গুড! মাথায় রাখিস আর যেখানে তুই যাবি না সেখানে আমি ও যাচ্ছি না তাই এসব ভুলভাল চিন্তাভাবনা বাদ দে’

–‘ কিন্তু ওরা তো অপেক্ষা করছে তোমার জন্য’

–‘ করুক’

–‘ এমন করছ কেনো? তোমার মা-বাবা তো অপেক্ষা করছে, কষ্ট পাচ্ছে’

জুবরান একথার উত্তর দিল না। শানায়ার মন খারাপ হয়ে গেলো লোকটা তার জন্য বাড়িতে যাচ্ছে না এতে ওর মনখারাপ হওয়ারই কথা।

চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। আমার বাসায় কিছু প্রবলেমের জন্য গল্প দেরি করে দিতে হচ্ছে লেখার সময় পাচ্ছি না। হসপিটাল – বাসা- তার ওপরে এক্সাম আমি খুবিই দুঃখীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here