প্রণয়ের জলসানগরে পর্ব -২৫+২৬+২৭ ও শেষ

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৫ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
ভালোবাসার মধুময় স্রোতে ভেসে গেল দুটি হৃদয়। অবগাহন করলো সুখের ফল্গুধারায়। জীবন যেন মধুর পেয়ালা। প্রতি চুমুকে চুমুকে দারুণ স্বাদ। পবিত্র ভালোবাসা মানুষের জীবনকে মহান করে তোলে। উদার হতে শেখায়। এক ক্রুশ অন্ধকার থেকে নিয়ে যায় আলোর দিগন্তে।

পিয়াসা সকালে উঠেই গোসল সেরে নামাজ পড়েই আবার শুয়ে গেল বিছানায়।
আয়মানও আজ একটু লেট করেই ঘুম থেকে উঠলো। ঘুমন্ত পিয়াসার মুখপানে সে অনিমেষ চেয়ে রইলো। নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে তার বউয়ের আদুরে মুখখানা। গায়ের জামা দেখে বুঝে নিল গোসল সেরে নিয়েছে। আয়মান ও উঠে গোসল সেরে নিল। বেলা হয়ে গেল তবুও পিয়াসা উঠছেনা।

আয়মান নাস্তা খেতে গেলে তার মা জিজ্ঞেস করলো,
কিরে বউয়ের শরীর খারাপ নাকি? এখনো উঠেনি?

মা ও নামাজ পড়েই শুয়ে গেল আবার। মনে হয় তাই হবে। আমি জিজ্ঞেস করিনি।

এই ক্ষেত্রে তোর আক্কেল বুদ্ধি এত কম কেন? তুই জিজ্ঞেস করবিনা কি হয়েছে? যা জিজ্ঞেস কর। নাস্তা নিয়ে যা ওর জন্য। ধর বলে,
পিয়াসার জন্য আয়মানের হাতে নাস্তার ট্রে ধরিয়ে দিল তার মা।

আয়মান নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখল। মনে মনে, মাকে যে কিভাবে কোনটা বলি। পিয়াসার কপালে মুখে পরম মমতায় হাত রাখল আয়মান । পিয়াসা আয়মানের দিকে চেয়েই কাঁথা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল।

আয়মান হেসে ফেললো। তোমার কি খুব খারাপ লাগছে?

জানিনা। কেমন যেন কাহিল লাগছে শরীর। মৃদু স্বরে জানাল পিয়াসা।

আম্মু তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছে। বলছি শরীর খারাপ একটু। উঠো। নাস্তা খেয়ে আবার শুয়ে থাক।

আপনি চলে যান। আমি পরে খেয়ে নিব।

নোওওও। তা হবেনা। উঠো একটু । আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

পিয়াসা আয়মানের চোখে চোখ রাখতেই নুয়ে যাচ্ছে লজ্জায়।

আয়মান বুঝতে পেরে বলল,
তুমি চোখ বন্ধ রাখ। আমি রুটি ভাজি দিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছি। পিয়াসাকে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে আয়মান ট্রে নিয়ে বের হয়ে গেল।
মনে মনে বলল,থ্যাংকস চিনি বউ আমার। গত নিশিতে আমাকে অপার্থিব অসহ্যকর সুখে ভাসিয়ে নেওয়া জন্য।

পিয়াসা দূর্বল স্বরে হুঁ হাঁ করতে করতে ফের বিছানায় গা এলিয়ে দিল।

সম্পূর্ণ নতুন এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সাথে পিয়াসা ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হলো রাতে। মুহুর্তগুলো মনে করতেই সে আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গুটিসুটি হয়ে যাচ্ছে কাঁথার নিচে।

তার চেয়েও বেশী আপ্লুত হয়ে যাচ্ছে কানের দুলের কথা মনে করেই। ভোরে গোসলের সময় বেসিনের সামনের আয়নায় বারবার কানে হাত দিয়ে দেখল নিজের ভালোবাসার দুল জোড়া। আয়মান জহুরিকে দিয়ে একদম নতুনের মতো চকচক করিয়ে নিল। আয়মানের প্রতি শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায় থেমে থেমেই পিয়াসার চোখ অশ্রুতে টলমল হয়ে উঠল ।

জীবন বড় বেশী সুন্দর। জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে খুব বেশী কিছুর প্রয়োজন হয়না৷ পরিবারের মানুষের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা,কেয়ারিং,ছোট ছোট উপহার,আবেগের মূল্যায়ন করতে পারলেই জীবনকে অর্থপূর্ণ ও মহিমান্বিত করে তোলা যায়।

অথচ এ জীবনটাকে অসুন্দর করি তুলি আমরা মানুষেরাই । নানা ছোট ছোট বিষয়কে বড় করে দেখা, অহেতুক সন্দেহ, ভুল বোঝা, অবিশ্বাস, অনাদর, অকারণেই উপহাস,উঁচু নিচুর বৈষম্য, অহংকায়,তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা কাউকে , এসব দিয়েই বিষিয়ে তুলি জীবনের বড় একটা অংশ।

বেলা বয়ে যায়। সময় গড়িয়ে সময় আসে। মাস গড়িয়ে মাস। পিয়াসা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠে গেল। আলিশা ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেল। অংক শুভ’র কাছেই করছে সে। শুভ আলিশার ফাইনাল পর্যন্তই অংক করাবে। তার সাথে এমন কথাই হয়েছে আয়মানের। ইদানীং আলিশা শুভ’র সাথে বাইরে মেলামেশা করছে বেশী। বিষয়টা আয়মানের কানে চলে এলো।

আয়মান রাতে মায়ের রুমে গিয়ে আলিশাকে ডাক দিল পিয়াসার মাধ্যমে।

আলিশা এলো ভাইয়ের সামনে।
আজকাল পড়াশোনা বাদ দিয়ে কি শুরু করছিস এসব? ঠান্ডা মেজাজে জিজ্ঞেস করলো আয়মান।

কই কি করছি? পড়াশোনাইতো করছি। টনটনে গলায় প্রতিউত্তর দিল আলিশা।

আমার কানে এসেছে কিছু। তুই বাইরে গিয়ে কি করে বেড়াচ্ছিস?

কোথায় আমি বের হই? কাঁদোকাঁদো গলায় বলল আলিশা৷

আমি এত কথা শুনতে চাইনা। তুই যার সাথে ঘুরছিস, সে ছেলে হিসেবে ভালনা। ওর সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা বন্ধ করবি। তুই এখনো ছোট। কি বুঝিস বাস্তবতা সম্পর্কে?

আয়মানের গরম চোখে ঝাঁঝালো কথার তোড়ে আলিশা নিঃশ্চুপ হয়ে গেল।

মোবাইল দিয়েছি তোকে প্রয়োজনেই। তার অপব্যবহার করিস এখন রাত জেগে জেগে?

কই রাত জেগে জেগে মোবাইল টিপি?

তাহলে তুই সকালে উঠতে পারিসনা কেন রোজ? কাল থেকে পিয়াসার সাথে তুই ও ফজরের নামাজ পড়বি। দিনদিন উগ্রে যাচ্ছিস আমাদের প্রশ্রয় পেয়ে। যে মাথায় তুলে আদর করতে পারি। সেই মাথায় তুলে আছাড় ও দিতে পারি আমি। মনে রাখিস।

আম্মু ওকে সাবধান করে দাও বলছি।
আয়মান উঠে চলে গেল।

কিরে আয়মান কি বলল। শুনছিস? নাকি এক কানে দিয়ে ঢুকে আরেক কানে দিয়ে বের হয়ে গেল। তোর বাপ নেই। গার্ডিয়ান বলতে ওই এক বড় ভাই। সে ভাইয়ের কথা মেনে চলবিতো । নাকি?

আলিশা মেঘমুখে বোবার মতো চুপ থেকে, মায়ের সামনে থেকে চলে গেল নিজের রুমে। দরজা বন্ধ করে দিল। ফেসবুকে ঢুকে শুভর আইডিতে গেল। দেখল সে অফলাইন। তবুও মেসেজ দিয়ে রাখল।

” স্যার, ভাইয়া জেনে গিয়েছে আপনার কথা।
আমাকে বকেছে খুব। এখন একটু সাবধানে থাকতে হবে। আপনি অংক করানোর সময় অতিরিক্ত কথা লিখবেন ও না। মুখে ও কিছু বলবেন না। ”

সকালে আইড়িতে ঢুকেই শুভ মেসেজ পেল
আলিশার।
এই সেরেছে রে। প্রেমের আকাশে উদয় হলো দূর্যোগের ঘনঘটা। কে থামাবে। কি হবে। কে করিবে সমাধান।

এবার সিরিয়াস মুডে ভাবনায় পড়ে গেল শুভ। কি বিচ্ছিরি কাণ্ড হয়ে গেল। কিভাবে এখন পড়াতে যাব সে বাসায়। আয়মান ভাইয়ের সাথে মুখোমুখি হলে কি যে অপ্রস্তুতকর সিচুয়েশনে পড়ে যাব।

মনে মনে শুভ আলিশার উপর রাগ ঝাড়তে লাগল। কোনকিছু দ্রুত পেতে গিয়ে হারানোর শংকার চেয়ে অল্প অল্প করে দীর্ঘদিন বা চিরদিন পাওয়া ঢের আনন্দ নয় কি।

এই মেয়েটাকে এত করে বললাম, এত মাখামাখি করোনা। কে শুনে কার কথা। নাহ। উনি মরে যাচ্ছে আমার সান্নিধ্য ছাড়া। উনার পরান নাকি যায় জ্বলিয়ারে। এবার ঠেলা সামলাও ভাই আর মায়ের। আমার কি। আমার কার্য তোমাদের বাসায় মাত্র দেড়ঘন্টা। তাও সপ্তাহে তিনদিন মাত্র।

সে হিসেব করে দেখল,
আজ শুক্রবার পড়া নেই। কাল শনিবার একটা এক্সিউজ দাঁড় করাব। যাবইনা। পরশু যাব। তাও দুইদিন অন্তত সেই বাসার মানুষের সাথে দেখা হবেনা।

শুভ অনলাইন থেকে বের হয়ে গেল। জোরে নিঃশ্বাস টেনে ভিতরে নিল। থম মেরে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো বালিশে বেশ কিছুক্ষণ ।

দুইদিন পরে বোনের উপরে চড়া মেজাজ দমে গেল আয়মানের। ফুরফুরে মেজাজে পিয়াসাকে বলল, কাল বিকেলে ঘুরতে যাব। তোমার পছন্দের কোন লোকেশন আছে?

পিয়াসা বলল,
উমম তেমন কিছুরই প্রতি আগ্রহ নেই। তবে মিনা আন্টির বাসায় যেতে খুব মন চাচ্ছে। কতদিন উনাদের দেখিনা। একসময় আমার ভরসার আশ্রয় কেন্দ্র ছিল উনারা। নিজের বোনের মেয়ের মতো করে আগলে রেখেছে আমায়। নিজেদের অসচ্ছলতার মাঝেও,আমাকে তিনবেলা খাইয়েছে। থাকার জায়গা দিয়েছে আন্তরিকতার সাথেই।

আচ্ছা তাহলে কাল প্রথমে উনার বাসায় যাব। পরে একটা মুভি দেখব হলে গিয়ে। অনলাইনে দেখে নিব টিকেট কি আগে বুকিং দিতে হবে। না সাথে সাথেই পাওয়া যাবে৷ নাকি বল চিনি বউ?

আপনার যা ইচ্ছে। আমার এসবে কোন আপত্তি নেই।

পরেরদিন শেষ দুপুরেই ওরা দুজন ঘুরতে বেরিয়ে গেল। আয়মান পিয়াসাকে নিয়ে মিনা আন্টির বাসায় গেল। পিয়াসার পছন্দমতো উনাদের জন্য অনেক ফল ফলাদি এটা সেটা কিনে নিল । তারা পিয়াসা ও আয়মানকে দেখেই অনেক বেশী উৎফুল্ল হয়ে উঠল।

সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে বসুন্ধরা সিনেমা হলে ঢুকল আয়মান পিয়াসা। খাওয়ার জন্য পপকর্ন আর ইগলো কাপ আইসক্রিম নিয়ে নিল। পিয়াসার আইসক্রিম খুব প্রিয়।

স্টার সিনেপ্লেক্স এর প্রিমিয়ার টিকেট কেটে আয়মান পিয়াসার হাত ধরে ভিতরে চলে গেল। সিনেমা শুরু হলে পুরো হলরুমের লাইট অফ করে দেয়া হয়। হলিউডের একটি সিনেমা দেখছে দুজনে।

পিয়াসা লতার মতো আয়মানের হাত পেঁচিয়ে ধরে বসল। পাঁচ মিনিট পরেই সিনেমার এক পর্যায়ে রোমান্টিক দৃশ্য শুরু হয়ে গেল। হলিউডের মুভিগুলোর এই এক সমস্যা। সব ওপেনলি প্রেজেন্ট করা হয়।
পিয়াসা আবছা আলোয় লুকানো চোখে পাশাপাশি সিটগুলোতে তাকিয়ে দেখল,
প্রায় সব প্রেমিক প্রেমিকা জুটি গুলোর চার ঠোঁট এক হয়ে গিয়েছে। আলাদা হওয়ার কোন নাম নেই।

আয়মান এক হাত পিয়াসার পিছন দিকে নিয়ে কোমর জড়িয়ে নিজের বাহুর সাথে ভিড়িয়ে নিল। পিয়াসার অধর দখল করে নিল নিজের দুই অধর দিয়ে বীরদর্পে।

পিয়াসাও আপোষে চলে এলো। সাপোর্ট দিল নিজের স্বামীরুপি প্রেমিককে।

পরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,
এটাও কি আপনার রোমান্টিসিজমের কোন পার্ট?

আয়মান হাতে থাকা আইসস্ক্রিম থেকে কাঠের চামচটাতে বেশী করে তুলে নিল। পিয়াসার এক গালে আইসক্রিমগুলো লেপ্টে লাগিয়ে দিল । নিমিষেই নিজের উষ্ণ জিভের মাথা দিয়ে উপর নিচ করে চেটে খেয়ে নিল৷

পিয়াসা ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে রইলো আয়মানের দিকে। জানতে চাইল কি মজা পান এসব রোমান্স করে?

আয়মান পিয়াসার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
সেইম ফিল পেতে হলে তোমাকে ছেলে হতে হবে। আর মজা?
হাজির কাচ্চি বিরিয়ানির চেয়েও বেশী মজা পাই এসব মধু মধু প্রেমে।

ও হ্যাঁ। এটা আমার প্ল্যান বা ইচ্ছেই ছিল বলতে পার। যেদিন তুমি ক্লাস টেনে থাকা অবস্থায় সিনেমা দেখেছিলে। আমি তারপরেই মনে মনে জেদ ধরেছি। একবার তোমাকে পাই। সিনেমা দেখার সাধ মিটিয়ে দিব। অন্ধকারে কিছুই বাকি রাখবনা।

যত্তসব পাগলামি আপনার । থামেন বলছি। পিয়াসা নিজের আইস্ক্রিম খেতে লাগল। আয়মান তার আইসক্রিম খেয়ে ফেলল। পিয়াসার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে চুমু খেতে লাগল। উফফস। অসভ্যতামি করছেন কেন?

আজব! নিজের বউর সাথে প্রণয়লীলা করছি। কিসের অসভ্যতামি। সেসবতো করবো আজ রাতেই।

খবরদার বলছি। আমার ভয় করে। এক রাতের ধকল সামলাতেই আমার সাতদিন লেগে যায়।

আয়মান মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে পিয়াসাকে দেখল। বলল,
আমার প্রণয়ের জলসাঘরে তুমিই একমাত্র দেবী! তুমি সুখপিয়াসী! তুমিই কুসুমিত কামিনী! আমি তোমার… আচ্ছা থাক। এবার একটু ভদ্র হই।

সিনেমা শেষ হয়ে গেল। দুজনে হাত ধরাধরি করে বের হয়ে গেল চিত্ত ভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে।

এর কয়দিন পরে একদিন বিকেলে,
আয়মান বাইরে থেকে এসেই হনহন পায়ে সোজা বোনের রুমে চলে গেল । তার মা তাকে দেখেই বুঝে নিল। আজ কিছু একটা ঘটবেই৷ তাই তিনিও জোর পায়ে ছেলের পিছন দিয়ে মেয়ের রুমে ঢুকলেন। ছেলের পিছনে দাঁড়িয়ে রইলেন।

কিরে তোকে আমি মানা করার পরেও সেই ছেলের সাথে দেখা করলি কেন বাইরে?

আলিশা চুপ হয়ে আছে মাথা নত করে। জবাব দেওয়ার মতো সে কোন বাক্যই খুঁজে পাচ্ছেনা। আর যা দিতে ইচ্ছে করছে। তা দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে। তাই সে বাকহীন। বাক্যহারা।

তুই এত বেহায়া, বেশরম কবে থেকে হলি?বলেই আয়মান চড় মেরে বসল আলিশার গালে।

আলিশা অসহায়ের মতো কান্না বোবা জুড়ে দিল।
তার মা ধরার সময়টুকুও পেলনা তাকে। তার মেজাজ ও ভারি হয়ে আছে মেয়ের উপর।
ছেলের সামনেই মেয়েকে শাসনের সুরে,
সুপাত্রের অভাব হবে তোর জন্য? আগে পড়াশোনা শেষ হোক। কোন বাদাইম্মনা ছেলের সাথে টইটই করিস? ঘুরিস বাইরে কোচিং এর নাম করেই।

আয়মান চেতে গেল আরো বেশি। মায়ের দিকে চেয়ে অগ্নিস্বরে বলল,
কে আবার? ওকে যে অংক করায় বাসায় এসে। সে শুভ ছেলেটার সাথেই তোমার মেয়ের রিলেশন।

তার চেয়ে বড় কথা হলো এই ছেলেটার স্বভাব ভালনা। সে পিয়াসাকে বিয়ে করার জন্য খুব উঠে পড়ে লেগেছিল একসময় । এখন আবার আলিশার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। তার অংক করানো ভালো। নয়তো কবেই ওকে বিদায় করে দিতাম।

কিইই? বলে আয়মানের মা অবাক চোখে আলিশার দিকে তাকালো।

আলিশাও যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। শুভ স্যার ভাবিকে পছন্দ করতো? বিয়েও করতে চেয়েছে খুউব করে? অথচ আমি এসবের কিছুই জানিনা? স্যার বা ভাবিতো কখনো এ বিষয় শেয়ার করেনি আমার সাথে। তার মানে শুভ স্যার যেহেতু ভাবির এলাকার ছেলে। তাদের প্রেম ছিল? হতেই পারে। তা না হলে এটা গোপন কেন আমার ও আম্মুর কাছে ? এজন্যইতো শুভ স্যারকে আমার দিকে ফেরাতে এত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

চলবেঃ ২৫#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৬ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
তার মানে শুভ স্যার যেহেতু ভাবির এলাকার ছেলে। তাদের প্রেম ছিল?

হতেই পারে। তা না হলে এটা গোপন কেন আমার ও আম্মুর কাছে ?

এজন্যইতো শুভ স্যারকে আমার দিকে ফেরাতে এত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

একমাত্র বড় ভাইয়ের হাতে চড় খাওয়ার ব্যথাটা আলিশার মৌনাকাশে বাতাসার মতন মিলিয়ে গেল। সেই স্থান আরো পাকাপোক্ত করে দখল করে নিল,
শুভ পিয়াসাকে বিয়ে করতে চেয়েছে এই বিষয়টা।

আয়মানের মা উদ্ধিগ্ন কন্ঠে,
হায় আল্লাহ কি বলিস এসব? এই ছেলেরতো আসলেই মন্দ স্বভাব। অংক করানোর ছলে দেখি আলিশার মাথাটাই খেয়ে ফেলছে ও।

আয়মান বোনের দিকে ক্ষিপ্ত নজরে চেয়ে,
আমি তোর একাউন্টিং সাবজেক্ট ধরবো। দেখব কতটা আয়ত্তে নিয়েছিস বলেই বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তার মা ও বের হয়ে গেল ছেলের সাথে সাথে।

আয়মানকে নিজের রুমে ডেকে নিল তিনি। গলার স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করলো,
পিয়াসাকে বিয়ে করতে চাইলো শুভ? কই বললিনাতো আমাকে?

আয়মান মায়ের পিঠে ভালোবাসার হাত রাখল। শীতল মেজাজে শুভ পিয়াসার বিষয়টা বিস্তারিত জানাল। আরো বলল,এবার বল এটা জানানোর মতো বিষয়?

একদম নাহ। তার বাবা কথা দিয়েছে। শুভ চেয়েছে। পিয়াসা চায়নি। ব্যাস।

আর পিয়াসা আমাকেই ভালোবাসতো মনে মনে। বুঝ এবার। আরেহ আম্মু। আলিশার সামনে পরিক্ষা। তাই ফাঁফরে রাখতে হবে। আর শুভর বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিব সামনে।

হুম বুঝলাম হারামজাদা। যা ভয় পাইয়ে দিলি। এবার আলিশা পিয়াসাকে ভুল বুঝলে? ননদ ভাবির মিষ্টি সম্পর্কটা না জানি তেতো হয়ে যায়?

কিছুই হবেনা। বরং মিষ্টির পরিমাণ বেড়ে সুগার হাই হয়ে যাবে।

তাই যেন হয় বলে, আয়মানের মা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করলেন।

তুমি থাকো আম্মু। আমি গেলাম বলে আয়মান চলে গেল তার রুমে।
পিয়াসা পড়ছে তার পড়ার টেবিলে বসে। টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠল।

” ভাবি প্লিজ একটু আমার রুমে আস। জরুরি দরকার। ”

পিয়াসা তড়িঘড়ি করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আয়মান রুমে ঢুকতেই পিয়াসাকে বের হয়ে যেতে দেখে,
কই যাচ্ছো?

আসছি বলে পিয়াসা বের হয়ে গেল। আয়মান উঁকি দিয়ে দেখল আলিশার রুমে ঢুকল পিয়াসা। ধরে নিলো ভাবির কাছে কোন হেল্প চাইবে হয়তো আলিশা নিজের প্রেমের বিষয়ে।

ল্যাপটপ অন করে নিজের কলেজের কাজে মন দিল ।

কি হয়েছে আলিশা? কোন পার্সোনাল সমস্যা? পড়তেছিলাম আমি । তোমার মেসেজ পেয়েই ছুটে এলাম। সৌহার্দপূর্ণ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো পিয়াসা।

শুভ’র কাছে বিয়ে না বসে আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলে পড়লে যে? রায়হান ভাইয়াও তোমাকে বিয়ে করতে চাইলো? কাহীনি কি?
রূঢ় কন্ঠে জানতে চাইলো আলিশা।

শুনে পিয়াসা আকাশ থেকে পড়লো । বোয়াল মাছের মতো হা হয়ে রইলো তার দুই ঠোঁট। হতভম্ব হয়ে আলিশার দিকে চেয়ে রইলো। মুখ দিয়ে তার কোন শব্দই বের হচ্ছেনা।

আলিশা পুনরায় বলে উঠল, কিহ ? সত্যি কথাটা হজম হচ্ছেনা। নাহ? যখন আমি তোমার কাছে শেয়ার করলাম, শুভ স্যারকে ইমপ্রেস করা যাচ্ছেনা। তখন মনে মনে নিশ্চয়ই বলেছিলে, শুভর মনে কেবলই পিয়াসা নামটা। নিবিড় প্রশান্তি লাভ করেছিলে তখন নাহ?

পিয়াসা আলিশার সাথে পাল্টা তর্কবাণে জড়ালোনা। রুম থেকে বেরিয়ে এলো। গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেল। তার মাথার ভিতরে যেন একশো পোকা কিলবিল করছে৷ ঘূনেপোকার মতো সেই পোকাগুলো পিয়াসার মাথার সমস্ত মগজ যেন কুটকুট করে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।

আলিশা নিজের ক্ষোভ কিছুটা হলেও পশমিত করতে পারলো বলে একটু স্বস্তি অনুভব করছে। রাতের ভাত না খেয়েই দরজা বন্ধ করে শুয়ে গেল। তার মা বহুবার বাইরে থেকে ডাকল। আর সে ভিতর থেকে চেঁচানো গলায় জানিয়ে দিল খাবেনা। ক্ষুধা নেই।

ধাপুসধুপুস করে পিয়াসা তার বইপত্র গুছিয়ে ফেলল। এখন কোন পড়াই ব্রেনে ধরবেনা। আয়মান মাথা ঘুরিয়ে পিয়াসাকে দেখল। জিজ্ঞেস করলো, আর পড়বেনা?

পিয়াসা চুপ হয়ে রইলো।

বয়রা হলো কবে থেকে আমার প্রেমাঙ্গিনী?

পিয়াসা ভার মুখে আয়মানের দিকে এক ঝলক নেত্রপল্লব মেলে ধরলো। আয়মান পিয়াসার চোখের ভাষা পড়ে নিল। কুচ গড়বড় হোতাহে।

রুম থেকে বের হয়ে গেল। আবার একটু পরেই এসে বলল,

সবাই কি অনশন করল নাকি? কেউ রাতে ভাত খাবেনা? আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

পিয়াসা বের হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। ডাইনিংয়ে সব খাবার বেড়ে আনল রোজকার মতো। শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে,
মা ভাত খেতে আসেন। ঘুমিয়ে গেলেন নাকি?

আয়মানের মা তসবিহ হাতে নিয়েই বিছানা ছাড়লেন। বললেন, নারে মা ঘুমাইনি। আয়মান পিয়াসাকে বকাবকি করল। পিয়াসাও না খেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তাই মনটা একটু খারাপ।

মন খারাপ করবেন না মা। এটা আবেগের বয়স৷ ভুলের বয়স৷ ঠিক হয়ে যাবে।

বৌমা তুমি গিয়ে একটু ডাক দাওনা মেয়েটাকে ভাত খাওয়ার জন্য।

শ্বাশুড়ির আদেশ অমান্য করলনা পিয়াসা। তাই সে এখন আবার আলিশার রুমের সামনে গেল। দরজা ধাক্কাছে। আলিশা খুলছেনা৷

পিয়াসা গলা তুলে ডাকল এবার,
আলিশা ভাত খেতে আস বলছি। মা নইলে ভাত খাবেনা কিন্তু। প্লিজ ভাত খেতে আস।

আলিশা ভিতর থেকে গলাকে চড়ায় এনে বলল,
তুমিতো দেখি জন্মের বেহায়া মেয়ে। তখন এত কথা শুনালাম। তাও আবার আমার সাথে কথা বলতে আসছ। তুমি আমার সাথে আর কোন কথা বলবেনা বলছি।

পিয়াসা পা ঘুরিয়ে নিতেই দেখে আয়মান পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আয়মান আলিশার কথাগুলো শুনতে পেয়েছে।

আয়মান রাগে ফেটে যাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে আলিশার পিঠের চামড়া তুলে ফেলতে। কিন্তু এই রাতে সে আর কোন ঝামেলা বাড়াতে চায়না। পিয়াসার থেকে শুনতে হবে তখন কি বলছে। তারপর ।

পিয়াসা ডাইনিং এ চলে এলো। তাদের তিনজনের জন্য ভাত বেড়ে নিল। তার ও খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু না খেয়ে ঘুমালে রাতে পেটে মোচড়ামুচড়ি শুরু হবে। আয়মান ও এসে খেতে বসে গেল। তিনজনেই বিষন্ন মন নিয়ে শেষ করলো নৈশভোজ।

আয়মান রুমে গিয়ে বারান্দায় চলে গেল। সিগারেট জ্বালিয়ে নিল। রাগ উঠে গেলে সে একটা সিগারেটের ধোঁয়া না ছাড়লে মনে অস্থিরতা প্রকট আকার ধারণ করে।

পিয়াসা হাতের কাজ ঝটপট শেষ করে শ্বাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। বিছানায় আয়মানকে না দেখে বারান্দায় উঁকি মারল।

সিগারেটের গন্ধ রুমে থেকেই সে টের পেয়েছে। আয়মানকে দেখেই আবার রুমে ঢুকে গেল। কোন বিশেষ হেলদোল দেখালনা।

আয়মান অবাক হয়ে গেল। যেখানে পিয়াসা সিগারেট খাওয়া দেখলেই তেতে যায়। সেজন্য সে টুকটাক যা খেত মাঝেমধ্যে। তাও ছেড়ে দিয়েছে পিয়াসার জন্য। আর সেই পিয়াসা তাকে সিগারেট খাওয়া দেখেও নিঃশ্চুপ রইলো। আয়মান আধ খাওয়া সিগারেটটা মেঝেতে ফেলে দিল। জুতোর নিচে ফেলে পিষে জলন্ত সিগারেটটি নিভিয়ে দিল। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে গেল। পিয়াসা কাত হয়ে আছে৷

এইই? বলে পিয়াসার পিঠের উপর হাত রাখল আয়মান। আলিশা তোমাকে তখন ডেকে নিয়ে কি বলল?

কিছু বলেনি।

সমস্যা কি বলতে?

বলার প্রয়োজন মনে করিনা আমি।

আপনি জানেন না কি বলতে পারে? শুভ ভাই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে এটা আলিশা কিভাবে জানল?

ওহ হো। খুউব খুউব স্যরি হানি। এই বলে, কেন বলল সেই কথা, তা আয়মান পিয়াসাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিল।

আর তুমি মন খারাপ করে থেকোনা প্লিইজ । ওই অসভ্য ফাজিলকে দেখনা রাত পোহালেই কি করি? বড় ভাবির সাথে সে যাচ্ছেতাই বিহেভিয়ার করলো। রাগত স্বরে বলল আয়মান।

পিয়াসা এবার মাথা ঘুরে আয়মানের দিকে ফিরল।

নিরস ভঙ্গিতে বলল,
আপনি কিছুই বলবেন না আলিশাকে প্লিজ। ওর উপরে আমার আর কোন কমপ্লেইন নেই। আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এমন সময় অনিয়ন্ত্রিত আবেগের বশে মানুষ ভুলভাল আচরণ করে কাছের মানুষদের সাথে। তা কিছুদিন পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে।

পিয়াসার প্রতি আয়মানের মুগ্ধতা অতিমাত্রায় বেড়ে গেল। বিমুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। বলল, বুকের ওমে আস। পিয়াসা মেটাও। পথিকের তপ্ত মরুভূমিতে ঘন বর্ষন ঢালো। জুড়াও এ প্রান।

পিয়াসা ঘুষি দিল আয়মানের বুকে হালকা জোরে।

পিয়াসাকে নিজের শরীরের সাথে ভিড়িয়ে নিল আয়মান । শাড়ির নিচে দিয়ে পেটে হাত দিল। সুড়সুড়ি দিতে লাগল পুরো পেটজুড়ে। পিয়াসা কুচিমুচি করে হেসেই খুন হয়ে যাচ্ছে কাচভাঙা হাসিতে।

” কন্যা তোমার হাসিতে
মন চায় শুধু ভাসিতে। ”

সুড়সুড়ি থামান না বলছি। পারছিনা আর নিতে। সত্যিই বলছি। আহু!

তার একদিন পর বিকেলে শুভ পড়াতে এলো। খাতায় লিখে জিজ্ঞেস করলো আলিশাকে,

এনিথিং রং? নিউ কোন প্রবলেম? গাল হুতোম পেঁচা হয়ে আছে কেন?

ভাবিকে খুব পছন্দ করতেন?

আচ্ছা এই কাহিনী? কে কি বলছে?

কে কি বলছে এটা মূখ্য নয়। আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।

হ্যাঁ করতাম।

ভালোবাসতেন?

একদম নাহ বলে শুভ বিষয়টার সারসংক্ষেপ লিখে দিল খাতায়। এবং শেষে লিখলো,
আশাকরি এতটুকু কমনসেন্স তোমার রয়েছে। এরপরেও ভুল বুঝলে আর কিছুই করার নেই।

আলিশা তবুও মুখ গোঁজ করে রইলো। কোন রিপ্লাই লিখলনা।

শুভ আবার ও লিখে দিল। শুনো,
সন্দেহ আর অবিশ্বাস হলো বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর। জীবনটাকে তিলে তিলে বিষময় করে তোলে কার্বলিক এসিডের মতো।

তুমি চাইলে একে মনের ভিতর পুষতে পার। চাইলেই ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিতে পারো। এটা একান্তই নিজের ব্যাপার। তবে কোন কিছু আগে পরে বিস্তারিত না জেনে কাউকে এভাবে ভুল বোঝা একদম অনুচিত। অতি ঠুনকো একটা বিষয়কে তুমি বিশাল করে তুললে৷ মশা মারতে কামান দাগানোর মতো।

আলিশা চুপ হয়ে রইলো। লিখে দিল স্যার, আজ আর অংক করতে ইচ্ছে করছেনা।

শুভ কোন রিপ্লাই দিলনা। দুই চুমুক চা খেয়েই উঠে চলে গেল।

আলিশা মুচকি হেসে শুভ’র খাওয়া অবশিষ্ট চা খেয়ে নিলো। গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলো,
” টিপ টিপ বরষা পানিইই..
পানি নে আগ লাগায়ী..
আগ লাগি দিল মেয়নে তু..
দিল তো তেরি ইয়াদ আয়ী।”

চলবেঃ ২৬#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৭ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
সময় তার আপন নিয়মেই বয়ে যায় প্রবাহমান নদীর স্রোতধারার ন্যায়৷ সেই সাথে সমান্তরালে এগিয়ে যায় চলমান মানব জীবন।

আলিশার কলেজ জীবনের ইতি ঘটল। পৌঁছে গেল শিক্ষা জীবনের আরেক ধাপ উঁচু সিঁড়িতে। তার পিতার অগাধ স্বপ্ন ছিল প্রিয় দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করে আত্মমর্যাদার সাথে বাঁচতে শেখাবে। বাবার সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে ভাইয়ের মতো আলিশাও বদ্ধপরিকর।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নব দ্বারে পা দিয়েই সে আপ্লুত। উল্লসিত। বাবাকে মনে করে চোখের কোনে চিকচিক করে জড়ো হলো দুফোঁটা নোনাজল। টুপ করে ঝরে পড়ল ভোরের কুয়াশার মতো।

বাবার সাথে তার অমলিন জ্বলজ্বলে স্মৃতি একটাই। এক দুপুরে ভাত খেতে বসেছিল বাবার সাথে আলিশা । মা মুরগী রান্না করেছিল। বাবাকে তার হাতে মুরগীর কলিজা খাইয়ে দিচ্ছিল।

অমনি ভুলক্রমে বাবার কামড় বসে যায় তার কচি আঙ্গুলের ডগায়। সেই আফসোসে বাবার চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। সে নিজের আঙুল একহাত দিয়ে চেপে ধরেছিল। আরেক হাতের আঙুল দিয়ে বাবার চোখ মুছে দিয়েছিল। মা বাবাকে খুব বকেছিল। ভাবতেই বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে আলিশার কন্ঠ।

তাকে বাসায় গিয়ে পড়ানোর পালার ইতি ঘটল শুভ’র। তাই তারা এখন বাইরেই খোলা প্রাঙ্গণে দেখা করে। শুভ’র সাথে তার প্রণয় এগিয়ে যাচ্ছে নানা পর্বে। কখনো সংঘাতে। কখনো রঙিন মধুরতায়। কখনো দুষ্ট মিষ্টি খুনসুটিতে। কখনো বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য জীবনের লেনাদেনা নিয়ে।

পিয়াসা আয়মানকে শুভ আর আলিশার বিষয়ে বুঝিয়ে পজেটিভ করলো। শ্বাশুড়িকেও। তারা এক দুপুরে শুভকে ডেকে বলল,
আলিশা শহরে জন্ম। শহরেই বেড়ে উঠা। গ্রামে গিয়ে থাকতে পারবেনা।

শুভ জানাল তার মা বাবা এতে আপত্তি করলেও সে ম্যানেজ করে নিবে তাদের। আলিশাকে ঢাকায় তার সাথেই রাখবে৷

রায়হান ফোন দিল অনেক দিন পর আয়মানকে।

হ্যালো আয়মান। ভুলেই গেলি মনে হয়?

উল্টো ফাঁফর নিচ্ছিস নাকি গা বাঁচানোর জন্য? বলল আয়মান।

নারে দোস্ত। ভোলা যায় তোকে? ও হ্যাঁ। সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছি সামনের মাসেই। দোয়া করিস। তুই কবে এমন সুসংবাদ দিবি?

ওয়াও! গ্রেট নিউজ দিলিতো। এমন কিছুইতো ভাবিনিরে। বরং কেয়ারফুল্লি থাকি। কারণ পিয়াসার অনার্স শেষ হোক অন্তত।

তাও ঠিক বলছিস। খালাম্মা, আলিশা কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ। আম্মু ভালো আছে। আলিশাও ভালো আছে। দেশে আসবি কবে?

আসবো কিছুদিন পরেই। অনেকক্ষণ মুঠোফোনে দুই বন্ধু নানা স্মৃতি বিজড়িত আলাপনে মেতে রইলো।

সেদিনে রাতেই আয়মান পিয়াসার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলো,
এই শুননা কামাঙিনী, তুমি মা হবে কবে?

পিয়াসা ঝট করেই কাঁথার নিচে নিজেকে আবৃত করে ফেলল। লজ্জায় দুগাল রক্তিম হয়ে গেল। ক্ষানিক পরেই আয়মান ও নিজেকে কাঁথার নিচে আবৃত করে ফেলল।

পিয়াসা কাঠিন্যতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আয়মানের চোখে, শাণিত ছুরির ফলার মতো।

অদ্ভুত তো। বিয়ে হলো কতকাল হয়ে গেল। তবুও এত লজ্জা তোমার? আজ রায়হান ফোন করেছে। সে বাবা হতে যাচ্ছে। দেখলে কতটা এগিয়ে আছে সে যুগের সাথে। আর আমি পিছিয়ে আছি তোমার জন্য। এখন আর এত মেনেটেনে চলতে পারবোনা। শুধুই উড়াধুড়া খেলাধুলা হবে। কি বল?

আপনি আমার কাঁথার নিচ থেকে বের হন বলছি। বদের হাড্ডি কোথাকার। কটমট চোখে চেয়ে বলল পিয়াসা।

ওকেহ ভ্যানিলা! বের হচ্ছি বলেই আয়মান পিয়াসাকে টেনে নিজের গায়ের উপর তুলে নিল টানটান করে । দুই হাত দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। পিয়াসার মাথাকে বুকের উপর চেপে ধরল। কান পেতে শোন, কিসের ধ্বনি?

স্বরধ্বনির আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে। কোন ধ্বনির সাহায্য নিচ্ছেনা। চাপা স্বরে হেসে বলল পিয়াসা।

এইনা হলে আমার খাঁটি প্রণয়ীনি। ধরতে পারলে তাহলে । দেখলে ভালোবাসি কতো। আচ্ছা বলনা,
কবে বাবু নিবে? তোমার কোন নিজস্ব প্ল্যান আছে?

আমার একদম ভালো লাগছেনা এসব শুনতে। প্ল্যান করার ও উপযুক্ত সময় এখনো হয়নি। সো এই টপিক বাদ। বেশরম পুরুষ। ছাড়ুন না। পায়ের তালুতে মশা কামড়াচ্ছে কুটকুট করে।

কাঁথার নিচে মশা কিভাবে ঢুকল?

কাঁথা আছে নাকি পায়ের পাতার উপরে ? সরে গিয়েছেনা আপনার জন্য। সিঙ্গেল কাঁথার নিচে ডাবল ঢুকলে এমনিই হবে। নাকি নাকি স্বরে বলল পিয়াসা।

এইই মধুবালা কিসের সিঙ্গেল? ডাবল সব। ডাবল।

আর মশা হলো আমার চোখে দেখা খুব শক্তিশালী একটা প্রাণী। আস্ত একটা মানুষকে সে কিভাবে নাস্তানাবুদ করে ফেলতে পারে। দেখছেন?

তা দেখার প্রয়োজন মনে করিনা। দেখিতো তোমার পায়ে কোথায় মশা কামড়াচ্ছে। আয়মান পিয়াসাকে চিৎ করে শুইয়ে দিল নিজের গায়ের উপর থেকে নামিয়ে।

পায়ের কাছে গিয়ে, আসলেইতো তোমার পা খালি। পিয়াসার পরনের শাড়িও একটু উপরে উঠে গিয়েছে। মশার কামড়ের স্থানে লাল হয়ে আছে। আয়মান উঠে গিয়ে সেভিং লোশন নিলো হাতে। পিয়াসার পায়ের লাল হওয়া স্থানে লোশন লাগিয়ে দিল।

কি করছেন আমার পায়ে?

আরেহ উপকার করছি রাণী।

তা ভালো কথা উপকার করছেন। কিন্তু হাত এদিক ওদিক যাচ্ছে কেন?

মশার বাচ্চা মশা যেন আমার বউয়ের দেহের আর কোন স্থান লাল না করতে পারে। তাই সব স্থানে অগ্রিম লোশন দিচ্ছি। লাল করার দায়িত্ব ওকে দিয়েছি। সেই গুরু দায়িত্ব একান্তই আমার।
এই তোমার পা এত সুন্দর বউ। উফফস! আয়মান গ্রামের পুকুরে ডুবিয়ে থাকা পিয়াসার পা নিয়ে বিষয়টা বলল।

পিয়ায়া আলতো হেসে বলল,
আপনি একটা চোর। লুকিয়ে লুকিয়ে যুবতী মেয়ের পা দেখেছেন।

আয়মান সেই হাসিতে প্রশ্রয় খুঁজে পায়। পিয়াসার হাঁটু অবধি উদাম পা দুটোকে টেনে নিজের কোলের উপর নিয়ে নেয় । দুষ্টমি করতে থাকে দুপা নিয়ে। পিয়াসার পায়ের আঙ্গুলগুলো ফোটাতে থাকে একটা একটা করে।

পিয়াসা একটু ব্যথা পেয়ে,
উহু এত জোরে ফোটায় কেউ?

কেউ না ফোটাক। তোমার বর ফোটাবে। তোমার সকল ব্যথায় যে আমার বিশ্ব সুখ। তোমার শরীরে ব্যথা যত বেশী। আমার মনে স্বর্গসুখ ও বেশী। আচ্ছা যাও। হাতের কাজ শেষ। ঠোঁটের কাজ শুরু করিই?

একদম নাহ বলছি। রোজ রাতে এত কিসের মাখামাখি আমার সাথে?

কোথায় তোমার সাথে কি করি। আমি যা করিই। আমার বউয়ের সাথে করিই। নেশাতুর চোখে আয়মান কথাটা বলেই পিয়াসার পায়ে হাত বোলাতে লাগলো মসৃণ করে।
একটা মজার ছবি দেখ বলে, মোবাইলের গ্যালারি থেকে একটা ছবি জুম করে পিয়াসার নাকের সামনে ধরল।

ওমাগো কি জটিল ভয়াবহ দৃশ্য।

কিসের জটিল? কিসের ভয়াবহ? এক ললনা বধুর পেট থেকে এক রোমান্টিক স্বামী মধু চেটে চেটে খাচ্ছে। বিষয়না দারুণ মনোরঞ্জনের নাহ?

ঘোড়ার ডিম। ফালতু।

মানলাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে পিয়াসা। বলেই পিয়াসার পা নামিয়ে দিল কোল থেকে। শাড়ি টেনে দিল নিচের দিকে গোড়ালি পর্যন্ত। কাঁথা দিয়েও পায়ের দুপাতা ঢেকে দিল ভালো করে৷ পিয়াসাকে কাত করে নিজের দিকে ধরলো।

নিজের শুষ্ক ঠোঁট দুটি পিয়াসার দুই ঠোঁটের উপর বসিয়ে দিল। তার আগে কৌশল করে বলল,
তোমার জিভটা একটু দেখি। বের কর।

কেন?
দরকার আছে জরুরী।

পিয়াসা তার গোলাপি জিভটা সামান্য বের করতেই আয়মান টুপ করে মুখের ভিতর পুরে নিল।

পিয়াসা শব্দ করার ও সুযোগ পেলনা আর। আসামীর রিমান্ডের মতো চুপচাপ হজম করা ছাড়া তার আর কোন গতি রইলোনা। বেশ সময় পর আয়মান নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিল।

এটাও আপনার রোমান্টিসিজমের পার্ট?

অফকোর্স৷ আসলে আমার ঠোঁটের চামটা টানটান হয়ে আছে৷ তাই ভাল করে ভিজিয়ে নিলাম।

ভ্যাসলিন দিতে পারেন না তাহলে। পঁচা৷

তোমার কাছেইতো নির্ভেজাল বিশুদ্ধ ভ্যাসলিন রয়েছে। ভেজালযুক্ত নকল টা দিব কেন?

পিয়াসা মনে মনে,
একটা সঠিক মানুষকেই হৃদয় দিয়েছি। লাভ ইউ আয়মান। লাভ ইউ সো মাচ। তোমার এত এত রোমান্টিসিজমে আমি কতটা সুখ পাই গোপনে। কতটা শিহরিত হয় আমার অঙ্গের প্রতিটি ভাঁজ। তা কেবলমাত্র আমিই জানি। উপর দিয়ে তোমাকে যা বলি তা শুধু বলার বলা। আমি তোমায় ভালোবাসি এক দরিয়াসম।

আয়মানের বুকে পিয়াসা ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো আদুরে ভঙ্গিতে। গভীর সুখ নিদ্রায় তলিয়ে গেল দুজন।

পরের দিন সকালে আয়মানের মা বিষন্ন মনে আয়মানকে বলল,
বাবা গত রাতে মা খুউব একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। তাই একটা সদকা মানত করেছি।

কি স্বপ্ন আম্মু?

তুই শুনিসনা বাবা। মন খারাপ হবে তোর।

আহ! বলনা প্লিইইজ।

আমাদের কাছের কেউ মারা গিয়েছে।

কে আম্মু? তা দেখনি?

না বাবা। ধর আমিই মরে গিয়েছি।

আয়মান মাকে বুকে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে। নাহ আম্মু। ওমন বলোনা। তুমি আলিশা, পিয়াসা আমার বেঁচে থাকার উৎস। ভালো থাকার অবলম্বন। আনন্দে থাকার কেন্দ্রবিন্দু।

আমিই আজই তোমার মানত ছাড়াব।

বল কি করতে হবে আমাকে?

এখানে এতিম খানার বাচ্চাদের শুক্রবার দুপুরের বেলা আমরা খাওয়াবো।

তাই হবে আম্মু। আমি সেই মসজিদে গিয়েই ইমামকে বলে দিব যেন শুক্রবার দুপুরে তারা রান্না না করে। তুমি মন খারাপ করোনা প্লিজ। এই সংসারের প্রাণ প্রদ্বীপ একমাত্র তুমিই। আল্লাহ ভরসা। তুমি অমন ভেঙ্গে পড়না।

শুভ আলিশাকে নিয়ে আজ বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসল। আলিশা অনেকদিন ধরেই এখানে আসার বায়না ধরেছে। কখনো আসেনি সে। বন্ধুদের কাছে শুনেছে গাছগাছালিতে ভরা এই নির্জন পার্ক নাকি প্রেম করার জন্য উৎকৃষ্ট লোকেশন।

একটু ভিতরে চলে গেল দুজনে। ঘনিষ্ঠ হলো একে অপরের। শুভ পিয়াসাকে বলল,
কিছুদিন পরই কাবিনটা সেরে ফেলতে চাই। কি বল? তোমার অনার্স শেষ হলে একবারে তুলে নিব। ততদিনে আমিও নিজেকে ভালো করে গুছিয়ে নিই।

আলিশা শুভ’র পাচ আঙ্গুল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
আমি দুপায়ে রাজী। তাহলে আমরা একান্ত মুহুর্ত কাটাতে পারব। কোন গুনাহ হবেনা তখন।

শুভ হেসে ফেলল। আলিশার নাক টেনে বলল,
কি জামানা। প্রেমিকারাই দেখি এডভান্স প্রেমিকের চেয়ে। চক্ষু শরম নেই।

খবরদার বলছি। নিজে মনে হয় চাননা কিছু। সাধু। আমি বুঝিনা?

তারা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।

পিছন দিয়েই দুজন পুলিশ এসে দাঁড়ালো তাদের সামনে। এই যে স্যার ম্যাডাম। একটু মাল ছাড়ুন। নয়তো সোজা থানায় নিয়ে যাব। আপনাদের কাছে ইয়াবা পেয়েছি এই মর্মে।

আলিশা ভয়ার্ত নিষ্পলক চোখে পুলিশের দিকে চেয়ে রইলো। শুভ’র মেজাজাটাই বিগড়ে গেল।

চলবে ঃ২৭#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৮ ( শেষ পর্ব )
#লেখিকা_রেহানা_পুতুল
আলিশা ভয়ার্ত নিষ্পলক চোখে পুলিশের দিকে চেয়ে রইলো। শুভ’র মেজাজটাই বিগড়ে গেল।

হালকা মেজাজে ভরাট গলায় পুলিশদের উদ্দেশ্যে বলল,

আচ্ছা ভাই আপনাদের সমস্যাটা কি?
বিয়ে ঠিক হওয়া হবু বউ নিয়ে একটু ঘুরতে এলাম। তাও শান্তি দিবেন না আপনারা?

ফাজলামো হচ্ছে পুলিশের সাথে? হবু বউ না অন্যের বউ। তা প্রমাণ হবে থানায় গেলেই। থানায় চলেন দুজনে। আর নয়তো মাল ছাড়েন মানে মানে রক্ষা পেতে হলে।

শুভ পুলিশের সাথে আর একটি কথাও বললনা। ফোন দিল তার এক বড় ভাইকে। সেও রমনা থানার ওসি। শুভ পুলিশ একজনের হাতে ফোন দিলো সেই ওসির সাথে কথা বলার জন্য।

পুলিশ বিরক্ত চোখে ফোন কানে নিলো চার কদম পা সরিয়ে। দু চার মিনিট শুভ’র বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলল। তারপর এগিয়ে এসে নম্রতার সাথে শুভ’র হাতে মোবাইল দিয়ে দিল। বলল সর‍্যি ফর ডিস্টার্ব। বেস্ট অফ লাক দুজনের জন্য।

শুভ ভ্রুকুটি হেসে, আপনাদের জন্যও শুভকামনা রইলো। তারা দুজন চলে গেল।

আলিশা বলল,
কি ম্যাজিক দেখালেন স্যার। আমিতো পুরাই ফিদা।

শুভ আলিশার দিকে গম্ভীরভাবে তাকালো।
তুমি একটা কুফা মেয়ে। আমার বাকি জিন্দেগী যে কিভাবে কি হবে। তা উপর ওয়ালাই জানে মাত্র।

আলিশার মুড অফ হয়ে গেল। অনুযোগ মিশ্রিত ধমকের সুরে,
আমি আবার কি করলাম?

কি করনাই তুমি? তোমাকে যখন পড়াতাম। বলছি বাইরে এত ঘনঘন দেখা করোনা। নাহ। কে শুনে কার কথা। যার ফলস্বরূপ আয়মান ভাই জেনে গেল।
বলছি এই সব স্থানে ঝামেলা আছে। অন্য পার্কে যাই। অন্য গাছতলায় যাই। না এখানেই আসা চাই তোমার। এখন দেখলে?

আমার এক কাজিন যদি থানার এসপি না হতো আজ। তাহলে হয় থানায় যেতে হতো দুজনের । নয়তো ভালই টাকা পয়সা এদের হাতে দিতে হতো। হ্যাসেল টা যে কি হতো। ইজ্জত ও পাংচার হয়ে যেতো। ওদের স্বভাবই হলো পার্কে জুটি গুলাকে ফাঁফরে ফেলে নিজের পকেট ভারি করা । ক্লিয়ার?

আপনার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল আমার। অন্য পাত্রী দেখেন আজ থেকে।

সিরিয়াসলি? বলে শুভ হোঃহোঃহোঃ করে উদ্দাম হাসি ছড়িয়ে দিল। উপর দিকে লাফিয়ে ঝুঁকে থাকা আম গাছের শাখা থেকে দুটো সবুজ আমপাতা ছিঁড়ে নিল। পাতা দুটোকে ছিঁড়ে কুচিকুচি করে নিল হাতের তালুতে। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল একটু দূরেই।

কি বুঝলে তুমি? জানতে চাইলো আলিশার কাছে।

বোঝার কি আছে এতে? মুখ গোঁজ করে বলল আলিশা। যদিও শুভর এই দুষ্টমিটা আলিশা বেশ উপভোগ করেছে।

তুমি ছাড়া এই জীবনটা এমন ছিন্নপত্র হয়ে উড়ে গিয়ে ঠেকবে অন্য বৃক্ষ তলায়।

শুভ’র কথার ঢঙে আলিশার মুখ দিয়ে ধুম করে হাসি বেরিয়ে গেল।

শুভ আলিশাকে অন্য একটা মোটা গাছের আড়ালে হাত ধরে নিয়ে গেল। বলল এটা কি গাছ?

বট গাছ। আবার কি গাছ ?

বট বৃক্ষের ছায়াগো যেমন..
প্রাণ ও বন্ধুর মায়াগো তেমন। গানের মানেটা বোঝ কন্যা?

বুঝতে চাইনা। আমি বাসায় যাব।

প্রেম করবানা গাছের তলায় লুকিয়ে?

নাহ! সাধ মিটে গিয়েছে।

শুভ নানাছলে আলিশার মান ভাঙ্গালো। পার্ক থেকে বের হয়ে বেশ কিছুদূর পথ হেঁটে গেল হাত ধরাধরি করে। একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে লাঞ্চ করলো। আলিশা সাদা ভাত খেল। সাথে পছন্দ করে নিল ডাল, কাচকি মাছ চচ্চড়ি, কাঁচকলার ও কচু শাক ভর্তা। শুভ নিল বিফ খিচুড়ি সালাদসহ। শেষে খেল পুডিং ও চা৷ দুজনের জম্পেশ খাওয়া শেষে শুভ আলিশাকে তাদের বাসার পাশে পৌঁছে দিল।

রায়হান দেশে এসেছে। তার মেয়ে সন্তান জন্ম নিয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দকে উজাড় করে বরণ করছে সে। দুহাতে মিষ্টি বিতরণ করছে সবার বাসায়। শুভদের বাসায় নিজেই চলে এলো তিনপদের মিষ্টি নিয়ে । সবার সাথে বেশ সময় গল্প গুজব করলো।

বর্তমানে পিয়াসার প্রতি তার মনে আর কোন আলাদা প্রবল অনভূতি নেই। তবুও একটা সূক্ষ্ম মায়ানুভূতি সদা বিরাজমান তার অন্তরে । যেটা পিয়াসার মুখের হাসি দেখে এই মুহুর্তে পূনরায় জাগ্রত হলো ভোরের উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। জীবনের প্রথম শ্রেষ্ঠ অনুভবের মালা গেঁথেছে এই পিয়াসাকে নিয়েই সে।

আয়মানের মায়ের ডাকে রায়হান ধাতস্থ হলো নিজের উপর। নাস্তা খেয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে লুকানো চোখে পিয়াসাকে দেখে নিল ফের। পিয়াসা দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।

তার দুই মাস পরে আজ শুক্রবার রাতেই শুভ আর আলিশার কাবিন সম্পূর্ণ হলো ঘরোয়া আয়োজনেই। দুই পরিবার নিজেদের মধ্যে জানাশোনা সেরে নিলো কয়দিন আগেই। বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে আলিশা মা ও বড় ভাইকে পা ধরে সালাম দিল। তারা আশীর্বাদ করলো আলিশাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে। গ্রাম থেকে শুভ’র মা বাবা ও ছোট ভাই এলো। ছেলের পছন্দের উপরে তাদের আর কোন আপত্তি নেই। আর তারাও আলাদাভাবে খোঁজ খবর নিয়েছে আলিশা ও তার পরিবার সম্পর্কে। তাই দ্বিমত করার কথাই উঠেনা।

রাতে শুভ চলে যেতে চাইলো। তার সেই এসপি বন্ধু বলল,
গাধা নাকি তুই? কাবিন টা কিরে? কাবিন মানেই বিয়ে। আর কাবিন নামক বিয়ের পরেই আড়াইদিন থাকতে হয় স্বশুর বাড়ি। বুঝলি। তুই থাকবি। আমরা সবাই চলে যাচ্ছি।

আলিশার রুমের খাটে নতুন বেড শিট বিছানো হলো। বেড সাইড টেবিলের ফুলদানির আর্টিফিশিয়াল ফুল সরিয়ে কাচাঁফুল রাখা হলো। হালকা সাজে বাসর ঘর সাজানো হলো। মিষ্টি শরবত রাখা হলো। এ সবই আয়োজন করেছে পিয়াসা নিজ হাতে।

শুভ রুমে ঢুকলে পিয়াসা একগাল হেসে শুভকে আস্তে করে বলল,
এই যে.. হ্যালো। শুভ ভাই,
বিয়ে করতে চেয়েছেন আমাকে। এখন আমার পরিবর্তে আমার ননদকে দিলাম। প্রায় একই কথা। হৃদয়ের সংরক্ষিত আসনে হেফাজতে রাখবেন তাকে। এই বলে দিচ্ছি। তাসের ঘর পছন্দ হয়েছে?

পছন্দ না হয়ে যাবে কই। পিয়াসার হাতের ছোঁয়া আছে যে। আচ্ছা আমি কি এখন তোকে তুই বলব? না ভাবি বলব পিয়াসা? হেসে জিজ্ঞেস করলো শুভ।

আপনার ইচ্ছে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই।

কিন্তু বাকিরা কি ভাববে? বা আলিশা?

সেটাতো আর আমি জানিনা। তারা ‘ তুই ‘ এড্রেস করে বলা ডিজলাইক করলে, ভাবী বলবেন।

কি বলিস? তুই আমার কত ছোট। এখন ভাবি বলতে হবে আমার ?

হ্যাঁ হবে। বলে পিয়াসা চলে গেল আলিশাকে শুভর কাছে রুমে এনে দিয়ে।

পিয়াসা শাশুড়ীর রুমে গেল। লক্ষ্য করল তিনি নিরবে অশ্রুপাত করছেন। শাশুড়ীর পিঠের উপর ভরসার হাত রাখল পিয়াসা৷ স্বান্তনা দিয়ে বলল,
মা কাঁদবেন না। দোয়া করেন ও যেন সুখে থাকে। আর এখনতো ও আমাদের কাছেই আছে।

আয়মানের মা শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক মুখ মুছে নিলেন। আদ্রপূর্ণ গলায় বললেন,
সেজন্য কাঁদছিনা মা। আজ যদি তোমার শ্বশুর বেঁচে থাকতো কত যে খুশী হতো। কত বড় আয়োজন করতো। আলিশা জন্ম নেওয়ার পরে প্রায় তাকে কোলে নিয়ে আদর করতো আর বলতো,
আমার ছোট্ট রাজকন্যা। দেখে শুনে তুলে দিব আরেক রাজপুত্তুর হাতে। এই বলে আয়মানের মা থেমে গেল।

আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি মা। শুভ ভাই রাজপুত্রর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। অর্থ সম্পদ জীবনকে সুখী করে তুলতে পারেনা। জীবনকে সুখী আর আনন্দময় করে তুলতে চাই পারষ্পরিক বোঝাপড়া আর চিন্তা ভাবনার সমমিল। ব্যাস জীবনে ভালো থাকতে আর কিছুই চাইনা। নুন পান্তা খেয়েও দিব্যি ভালো থাকা যায়। নয়তো কোর্মা কাবাবকেও তেতো লাগবে।

তাতো তোমাকে দেখেই আমি আঁচ করতে পেরেছি মা। বিয়ের সময় তোমার গলার এই চেইন ছাড়া আর কোন গহনাই আমরা দিতে পারিনি। বউ সাজের দিন আমার সিম্পল গহনা দিয়েই তোমাকে বরণ করে নিলাম। তার পর কতমাস পরেও তোমার কান খালি ছিল। তুমি মুখ ফুটে কখনোই স্বামীর কাছে কিছু আবদার করনি। চাওনি।

পিয়াসা শাশুড়ীর কথার মাঝখানে বলে বসল,
এসব আমার চিন্তায় ও আসেনা মা। বাদ দেন। ভাবছি শুভ ভাইকে কাল কয়েক পদের ভর্তা দিয়েই লাঞ্চ করাব।

হেসে আয়মানের মা বলল,
নতুন জামাই শুধু ভর্তা দিয়ে ভাত খাবে? কি বল? এটা বেমানান লাগবে। ফ্রিজে সবই আছে৷ পছন্দমতো রান্না করে নিও।

আচ্ছা মা দিব। আমি মজা করে বলছি।

শুভ দরজা বন্ধ করে দিল। লাজুক ভঙ্গিতে নত মাথায় বসে আছে আলিশা। সে বুঝে উঠতে পারছেনা কেন তার এত সংকোচ লাগছে। এতদিনের পুরোনো চেনা মানুষটাকে নতুন অচেনা লাগছে কেন আজ? সমস্ত লজ্জারা তাকে এত ঘিরে ধরেছে কেন? বুকের ভিতর ধুকপুকানি ক্রমাগত হারে বেড়েই যাচ্ছে কেন? শুভ তার প্রেমিক। কত দেখেছে এই মুখ। কত ছুঁয়েছে এই হাত। কত দুষ্টমি করেছে। করেছে কত প্রণয়ালাপ।

আলিশা শুভকে পা ছুঁয়ে সালাম দিতেই,
শুভ আলিশাকে টেনে দাঁড় করালো।
তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বুকে। চিবুক উঁচিয়ে ধরে রোমাঞ্চিত হাসি দিলো শুভ। বলল রাতদিন এত চটপটানো মেয়েটা আজ এই মুখর রজনীতে চুপ কেন? শাড়িতে বেশ কমনীয় লাগছে তোমাকে। যেন পমত্ত অঙ্গনা। আসো এই নিশিকে করি উতলা। অবগাহন করি সুখের প্রণয় রাজ্যে।

আলিশা চুপ হয়ে আছে।

শাড়ি চেঞ্জ করবেনা?

করবো বলে আলিশা ওয়াশরুমে গিয়ে পরিহিত সব বস্র বদলে নতুন একটা নাইটি পরে নিল। চলে এলো বিছানায়। শুয়ে গেল কাত হয়ে। শুভ আলিশার নাইটির গলা একটু টেনে নিচে নামালো। বিরামহীনভাবে বেহিসেবী চুমুতে ভরিয়ে দিল আলিশার খোলা বুক। একটু থেমে বলল তুমি এত শুকনো কেন? এর আগে আর তোমার গলা চোখে পড়েনি আমার। বুকের উপরের দুপাশের হাড়গুলো কেমন খাড়া হয়ে আছে মরা গাছের শেকড়ের মতো । যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

আলিশার রাঙা অধর দুটো কাঁপছে তিরতির করে বৃদ্ধ মানুষের শরীরের মতো। ভিতরে ভিতরে সে খুন হয়ে যাচ্ছে শুভর হাতের স্পর্শ’র অসহ্য সুখে। দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। দুহাত দিয়ে দুপাশের চাদর খামচি দিয়ে ধরলো।
শুভ আলিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। বলল ঘুমাও চুপটি করে লাজরাঙা বধুয়া।

বাসায় নতুন জামাই। সে উপলক্ষে ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। সবাই মিলে দুপুরে একসাথে খেল। পিয়াসা সাইড ডিস হিসেবে দুই পদের ভর্তা রাখল। কুচো চিংড়ি ভর্তা তিসি দানা দিয়ে। সজনে পাতার হাতে মাখা ভর্তা ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে। দুর্দান্ত স্বাদ হয়েছে বলে শুভ পিয়াসার রান্নার প্রসংশা করলো।

বিকেলে পিয়াসা শাশুড়ীর সাহায্য নিয়ে কয়েক পদের নাস্তা তৈরি করল। ঘন দুধ দিয়ে স্পেশাল চা বানাল। আলিশা তার আর শুভর জন্য রুমে নাস্তা নিয়ে গেল।

পিয়াসা ছোট একটি ট্রেতে করে আয়মানের জন্য চা নাস্তা নিয়ে রুমে গেল। এই যে মিস্টার। হায়দ্রাবাদি চা পান করেন। দুধের সর দেয়া হয়েছে। উপরে ভেসে আছে দেখুন।

খাবনা তোমার দুধের সর। নিয়ে যাও।

কি বেশরম পুরুষ। কিসের আমার দুধের সর?

তোমার দুধের সর মানে,
তোমার হাতে বানানো চায়ের দুধের সর মিন করছি। ননদের বিয়ে নিয়ে তুলকালাম মোজে আছ। জামাইর দিকে কোন খেয়াল আছে তোমার?

ওরেব্বাপস! জামাই কি নয়া? কিসের খেয়াল করব। শুধু এক জামাই নিয়ে পড়ে থাকলে আমার চলবে? সংসারের আর দায়িত্ব নেই আমার?

কি সংসারীরে আমার। আম্মু আছেনা এসবের জন্য?

আম্মু আছেনা? আম্মু আর কত করবে সংসারে? মুখ ভেংচি দিয়ে পূর্ণ অধিকার নিয়ে বলল পিয়াসা।

কিরে তোরা ঝগড়া করছিস কেন? আয়মানের মা দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো। পিয়াসা, মা আসেন বলে দরজার পর্দা সরিয়ে দিল। ঝগড়া করছিনা মা। কথা হচ্ছে চা নিয়ে।

ওহ। আমার কাছে ঝগড়ার মতই মনে হলো।

তিনজনে কিছুক্ষণ পারিবারিক নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনা করলো। আসরের আযান শুরু হলে নামাজ পড়ার জন্য আয়মানের মা উঠে গেল। পিয়াসাও অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।

তারপর উঠে গিয়ে প্রসংগক্রমে বলল আয়মানকে,
মা মনে হয় ব্যংক লোনটা নিয়ে চিন্তিত। তাইনা?

মায়ের মন যে। সকল সমস্যা নিয়ে উনার চিন্তার অন্ত নেই। কত বলি আম্মুকে, দুঃখ-বেদনা হলো জীবনেরই অঙ্গ বা অংশ । এর ভিতর থেকেই মানুষের সুখ অন্বেষণ করতে হয় । আসল কথাটা হলো হাসি-কান্নার মধ্যেও জীবনের মধুর স্মৃতিটাকে স্মরণীয় করার নামই জীবন।

এই ধরো, বলে আয়মান চাবি দিয়ে টেবিলের ড্রয়ারটা খুলল। তার ডায়েরিটা বের করল। পিয়াসাকে নিয়ে নানা সময়ে লিখা কবিতা, গান,অবক্ত প্রণয়ের পংক্তিমালাগুলো দেখাল।
বলল এই সুখস্মৃতিগুলো আমাদের দুজনকে ভালো রাখবে জীবনের পড়ন্তবেলায়। অফুরন্ত ভালোলাগায় ভরিয়ে দিবে দুজনার দুটি মনকে।

পিয়াসা আয়মানের হাতের পিঠে নরম চুমু খেল। বলল অনেক ভালোবাসি তোমাকে আয়মান।

আয়মান পিয়াসার দিকে জ্বলজ্বল চোখে চেয়ে, মাই গড!
কি বললা? এই প্রথম তুমি বলে ডাকলে তোমার প্রেমিকটাকে । কি যে সুখ লাগছে। বোঝাতে পারবনা। পিয়াসাকে সামনে দাঁড় করিয়ে কোমরের দুই পাশ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলে। সব সময় শাড়ি পরবে। বুঝলে। শাড়ি পরলে নানান সুবিধা ভোগ করা যায়, আমার মতো প্রণয়ের জলসাঘরে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা প্রেমিকের।

তুমি আমার পূর্ণতা। তুমিই আমার শূন্যতা। তুমি আমার প্রণয়ের জলসাঘরের একমাত্র আরাধ্য কামিনী।

পিয়াসা দুইহাত দিয়ে আয়মানের কাঁধকে পেঁচিয়ে ধরেছে। বলল। তোমার এ ডায়েরি আমি একদিন লুকিয়ে দেখেছিগো। হিহিহিঃ।

কিহ? তার মানে জেনেও পরে ইচ্ছে করে আমার থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছ?

ইয়েস বস!

এটার প্রতিশোধ আজ রাতেই নিব আমি। ঘুমাতে দিবনা। আমাকে আনন্দ দান করবে সারারাত্রি জেগে জেগে। বুঝলে সখী ।

পিয়াসা মৃদু হেসে বলল,
যা আমার। সবই তোমার। যা তোমার। সবই আমার।

আয়মান পিয়াসার চোখে প্রেমাচ্ছন্ন চাহনিতে চাইলো। গুনগুনিয়ে গাইতে লাগল,
” তুমিই শুধু তুমি নও, আরো যে কত কি।
ফাগুনের ফুল তুমি, চাঁদনিই রাতি।
তুমি জীবনেএএ তুমি মরণেএএ
তুমি যে শুধু আমারিইই। ”

ভালোবাসা আছে বলেই জগৎ আজো এত সুন্দর। কাননে ফুল ফোটে। পাখিরা করে রব। শিশুরা মেতে উঠে পুতুল পুতুল খেলায়।

ভালোবাসা স্বাশ্বত! চিরন্তন! ভালোবাসা অম্লান নক্ষত্র ! ভালোবাসার বিশালতা আকাশের চেয়েও বিশাল। সমুদ্রের চেয়েও গভীর। পাহাড়ের চেয়েও মজবুত।

ভালোবাসার অনন্ত অসীমে হারিয়ে যাক আলিশা শুভ, আয়মান পিয়াসার সুপ্ত অনুভূতিগুলো । ভালোবাসার মুক্ত আকাশে তারা ঝান্ডা উড়াক চিরসবুজ হয়ে। বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সারথি হয়ে বেঁচে থাকুক তাদের প্রেম যুগের পর যুগ৷

#সমাপ্ত
[ ” প্রণয়ের জলসাঘরে ” উপন্যাসটি ফুরিয়ে গেলেও আমি রয়ে যেতে চাই আপনাদের হৃদয়ে। যেসব শুভাকাঙ্ক্ষী পাঠকগণ শুরু থেকে শেষ অবধি পাশে থেকে প্রেরণা দিয়েছেন। সেই আপনাদের সবার জন্য রইলো আমার হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা । ইতি টানলাম বলে অভিমান পুষে রাখবেন না আমার উপর। এটা চাইলেই আরো বাড়াতে পারতাম। কিন্তু অপত্যাশিতভাবে উপন্যাসটির সমাপ্তি টানলাম কারণবশতই। ১ দিন পর পর দিই বলে বহু পাঠক গ্রুপে বিরক্ত হচ্ছে। আর আমিও সংসার, সন্তান,সামাজিকতা সামলে সময় বের করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। গল্প/ উপন্যাস যেদিন থেকে রোজ দিতে পারব। ঠিক সেদিনই দিব। তার আগে শুধু একক গল্প দিব মাঝে মাঝে। যদি বেঁচে আর সুস্থ রই। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ ও হেফাজতে রাখুক।)

#তুমি_আছো_তুমি_রবে লিংক ( যারা চমৎকার এই উপন্যাসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্য।) https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/662409592147483/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here