প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৪১

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪১
__________________________
–‘আমরা হেটে হেটে কেন যাচ্ছি?এসেছি তো গাড়ি দিয়ে।

প্রণয়ের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ই প্রশ্ন করলো সূচনা।তার বাম হাত এখন ও আকড়ে ধরে রেখেছে প্রণয়ের ডান হাতটা।ছাড়েনি আসলে ছাড়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।এ কয়দিনে এতটুকু সে ভালোই বুঝতে পেরেছে যে আর যাই হোক প্রণয় তার জন্য নিরাপদ আর ভরসার একজন।তার সাথে থাকলে নিজেকে নিয়ে একদম চিন্তা হয় না।তার প্রশ্নে প্রণয় কা’ঠ কা’ঠ গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমরা কী দিয়ে এসেছি?

–‘আপনার গাড়ি দিয়ে।

–‘কার সাথে এসেছো?

–‘আপনার আর ইরার সাথে।

–‘এখানে ইরা আছে?

–‘না কারণ সে তো মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে।

–‘তো ইরাকে কী ফেলে রেখে যাবে এখানে?

–‘আশ্চর্য কথাবার্তা ফেলে রেখে যাব কেন?আর আপনি একের পর এক কী সব প্রশ্ন করে যাচ্ছেন বাচ্চাদের মতো।

–‘কারণ আমি বাচ্চা,আমার বাসায়,আমার রুমে, আমার জীবনে ইন ফেক্ট পুরো আমিটাতে একটা বাচ্চা মেয়ের পদার্পণ হয়েছে।তার প্রভাবে আমিও বাচ্চা হয়ে গেছি।বুঝেছো?শান্তি?

–‘না বুঝিনি পরে বুঝব তার আগে এটা বলুন আপনি বাচ্চা কাকে বলেছেন?

–‘তুমি আমি ছাড়া এখানে আর কেউ আছে?

–‘না।

–‘আমাকে দেখলে নিশ্চয়ই বাচ্চা বাচ্চা লাগে না।

–‘না বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো লাগে।

প্রণয় রিয়েক্ট করতে নিয়েও করলো না।পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই,আমি বয়স্ক তো বাচ্চা টা কে?

–‘কেন আমি

সূচনা কথার জ্বালে ফে’সে কথাটা বলে ফেলতেই প্রণয় দাত কে*লিয়ে হাসলো।সূচনার ঘটনা বোধগম্য হতে ই দাঁতে দাত চে/পে জিজ্ঞেস করলো-

–‘হচ্ছে টা কি হ্যা?আমাকে বাচ্চা, মোটা এসব বলে বলে অপমান করছেন, ঠিক আছে আজকে বাসায় যেয়ে আমি কালকেই আব্বুর বাসায় চলে যাব,আপনার বাসায় থাকবনা।আপনি একটা ভালো বয়স্ক ভদ্রমহিলা দেখে বিয়ে করে নিবেন তারপর তার সাথেই থাকিয়েন।

প্রণয় হাসি থামিয়ে বলল-

–‘আরে রা*গ কেন করছো জান?

–‘ধরবেন না হাত ছাড়ুন।

–‘ছাড়বনা কিন্তু আগে বলো আজকে বাসায় যেয়ে কালকে আব্বুর বাসায় কেন যাবে?অন্য কেউ হলে বলতো আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি।

সূচনা মুখ বা/কিয়ে উত্তর দিল-

–‘ কারণ আমি একা যেতে পারিনা আর এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কালকে সকাল সকাল রওনা হয়ে চলে যাব আর আসবনা।

–‘ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে যেও।

সূচনা রে*গে মে*গে আ*গুন হয়ে গেল একদম।সে একবার বলেছে চলে যাবে আর প্রণয় রাজিও হয়ে গেল।সে ক্ষী*প্ত গলায় বলল-

–‘হ্যা আপনি তো সেই সুযোগেই থাকেন কখন আমি ঘাড় থেকে নামব আর আপনি আরেকটা বিয়ে করবেন।

–‘ছি*হ ছি*হ এসব কী বলো?আমি তো কল্পনায় ও এসব কল্পনা করিনি আর তুমি মুখে বলছো।

–‘ ওভারএক্টিং হ’য়ে যাচ্ছে।

–‘উহুম..উহুম…আচ্ছা এবার চলো।

–‘যান আপনি আমি আপনার সাথে যাবনা।আপনি আগে যান আমি পেছন পেছন আসব।

–‘একটু আগে না চি/ৎকার করছিলে একা কেন রেখে যাচ্ছি?

–‘করেছিলাম কিন্তু এখন আমি একা যাব কারণ..

–‘কারণ আমি তোমাকে বাচ্চা বলেছি।

–‘আবারও বললেন

–‘আহা আমি তোমাকে বাচ্চা বলেছি আর তুমি আমাকে বয়স্ক, শেষ কা/টাকা’টি করো আর চলো।

–‘আমি আপনাকে একবার বলেছি আর আপনি পুরো তিনবার বলেছেন।

–‘মোটেও না। একবার বলেছি।

–‘তার মানে আমি মিথ্যা বলছি?

–‘আরে না না সত্যি তিনবার ই বলেছি।তুমি গুনে ও রেখেছো দেখা যায়। ইশশশ কত ভালো একটা বউ পেয়েছি যার কাছে আমার কথার এত দাম।বাহ!

–‘মজা করছেন আমাকে নিয়ে।

–‘এক চি*মটি পরিমান ও না।আমার তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

–‘তাহলে দাত কে*লিয়ে হাসছেন কেন?

–‘এমনি জান।আর হাসবনা খুশি!

–‘হাসবেন না কেন?হাসতে নিষেধ কে করেছে? কিন্তু আমি যাবনা আপনার বাসায় আমি আব্বুর বাসায় যাব।

–‘এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

–‘না।

–‘তুমি যাবে না?

–‘ না..না..না..আমি যা…..

বাক্যে দাড়ি পড়তে পারলো না আর,সূচনাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো প্রণয়।সূচনা চোখ গোল গোল করে তাকালো প্রণয়ের মুখপানে।কিছু বলার জন্য সবে দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ দূরত্ব হয়েছিল তার সাথে সাথেই প্রণয় ধমকা*নোর স্বরে বললো-

–‘খবরদার আর একটা কথা বলেছো তো। আই এম টেলিং ইউ একদম ছুড়ে ফেলে দিব।তারপর ভা*ঙা হাত পা নিয়ে ঘরে শুয়ে থাকবে তখন ওয়াশরুমে যেতেও আমাকে ডাকবে।সো কিপ কোয়াইট,গট ইট?

ছু*ড়ে ফেলে দিবে শুনে প্রণয়ের গলা আরও চেপে ধরলো।

–‘গলা টি*পে মা*রার প্ল্যান করেছো নাকি?

–‘সরি..

–‘মুখে আঙুল দাও।

ভদ্র মেয়ের মতো একহাতে গলা জড়িয়ে ধরে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে রইলো। হাফ ছাড়লো প্রণয় তার গলার অবস্থা বেহাল।এত জোরে আর এত বেশি কথা জীবনে একবারে বলেছে কিনা সে নিজেও জানেনা।বাসায় যেয়ে মিসেস আফিয়াকে জিজ্ঞেস করবে আজ।এই মেয়ের সাথে থাকতে থাকতে পাগলে পরিণত হচ্ছে দিনকে দিন।মিনিট পাচেক হাটার পর থেমে গেল প্রণয়।এই পাচ মিনিট প্রণয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিল সূচনা।প্রথমভাগে মুখ বা/কিয়ে রেখেছিল সূচনা আর এখন মুখে র/ক্তিম আভা ফুটে উঠেছে তার।আশেপাশে গুটি কয়েক মানুষ জন আছে, সবার দৃষ্টি তাদের দুজনের ওপর।লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফা*ক করে ভেতরে ঢুকে যায়।ইশশশ লজ্জা।

–‘গলা ছাড়ো না কেন? আর কতক্ষণ কোলে নিয়ে রাখব?

ঘোর ভা*ঙলো সূচনার।প্রণয় কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছে, সে ই গলা ধরে রেখেছে প্রণয়ের। লজ্জায় পড়লো খানিক, গলা ছেড়ে দিল তৎক্ষনাৎ। সামনে তাকাতেই দ্বিগুণ হলো এবার লজ্জার পরিমান।সামনে ইরা আর মুগ্ধ দাড়িয়ে আছে।সূচনা একপলক তাকালো প্রণয়ের দিক।কেমন ব*জ্জাত তাদের সামনেই এভাবে কথা বলছে।এর মধ্যে ই মুগ্ধ বলে উঠলো-

–‘আমার কাজ আছে যেতে হবে পুলিশ স্টেশন। আমি আসি।

–‘ঠিক আছে সাবধানে যা।(প্রণয়)

সূচনা ও সৌজন্য পূর্বক হাসি দিয়ে মুগ্ধ কে বিদায় দিল।মুগ্ধ চলে গেল,তারা তিনজন ও রওনা হলো বাড়ির দিকে।ড্রাইভিং সিটে প্রণয়, তার পাশে সূচনা।আর পেছনে ইরা।ইরার সাথে বসতে চেয়েছিল সূচনা কিন্তু প্রণয় চোখ দিয়ে ইশারা করেছে তার পাশে বসতে।আপাদত ইরার সামনে ধ*মক টমক খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তাই চুপচাপ যেয়ে বসে পরেছে।ইরা চোখ তুলে তাকাচ্ছে না ভুলক্রমে ও।তার লজ্জা আর অনুশোচনা দুটোই হচ্ছে। মাথাা নিচু করে বসেছিল পুরো রাস্তা। বাসায় এসেও সোজা নিজের রুমে চলে গেছে।
_______________________________
–‘ইরাপুকে আজকে পরিমান থেকে বেশি খুশি লাগছে না ভাবি?

ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে সূচনা আর তিথি।রাত সাড়ে আটটার মতো বাজে।সূচনার দিকে তাকিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে উক্ত প্রশ্ন টা করলে সূচনা জবাব দিল-

–‘সে সত্যি ই বেশি খুশি হয়তো তাই লাগছে।

–‘কিন্তু এতদিন তো কেমন করে থাকতো আজ হঠাৎ কী হলো?

–‘কী হবে?কিছুই হয়নি।

–‘তুমি জানোনা ভাবি।কিছু তো হয়েছে আমিই বের করব।

–‘পা*কা মেয়ে এতকিছু তোমার বুঝতে হবে না জানতেও হবে না।তুমি কিছু করবে না,সামনে পরীক্ষা আপাদত সেটা নিয়ে ভাবো।বুঝেছ?

–‘খালি পরীক্ষা পরীক্ষা করে সবাই।

–‘এখন তো একটু করবেই।পরীক্ষা শেষ হলে তারপর তো শান্তি পাবে একটু।

–‘হুম।

–‘এখন যাও তাহলে।

–‘আচ্ছা।
_______________________________
–‘মামী উনি ছোটবেলায় কেমন স্বভাবের ছিলেন?

রান্নাঘরে কাজ করতে করতে মিসেস আফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো সূচনা। মিসেস আফিয়া মাথা তুলে তাকালেন সূচনার দিকে।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলানো তার।হাসিমুখে বললেন-

–‘শোন তাহলে,প্রণয় ছোটবেলা থেকে না পা’জি স্বভাবের ছিল।জ্বা*লিয়ে মা*রতো সবাইকে,এত দুষ্টুমি করতো কী বলব,আপা তো রে*গে যেতেন আর তোর মামার কাছে নালিশ করতে আসতেন।আর প্রণয় আপার আগে এসেই তোর মামা আর আমাকে সবকিছু বলে দিত।আর বলতো ‘আম্মু আসলে আম্মুকে একটু ব*কে দিও কারণ আম্মু বাসায় নিয়ে তো আমাকে ব*কবে।তাই তোমরা আগেই ব*কে দিবে।’সারাদিন পড়ালেখা না করলেও রেজাল্ট ভালো আসতো।যখনই আসতো এত এত প্রশ্ন নিয়ে বসতো আমার আর তোর মামার কাছে।

মিসেস আফিয়া থামলেন।কথাগুলো বলার সময় ওনাকে কেমন চঞ্চল লাগছিলো ওনার কণ্ঠে ই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু তার মুখটা মলিন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সূচনা বুঝতে পারলো মিসেস আফিয়ার পরবর্তী বাক্য কী হবে।তার ধারণামতো তাই হলো।মিসেস আফিয়া মলিন কণ্ঠে বললেন-

–‘সব ঠিকই ছিল কিন্তু আপার এমন হঠাৎ মৃত্যু তে প্রণয় আর আগের প্রণয় থাকেনি,বদলে গিয়েছে,আগের মতো কথা বলা,হাসাহাসি করা আর নেই তার মধ্যে।আমার প্রণয় আর আগের মতো প্রাণোচ্ছল নেই।তবে একটা জিনিস কী জানিস?

–‘কী?

–‘ও আগের মতো কথা বলে এখন।যেমন তাড়াহুড়ো করে কথা বলা,বাচ্চাদের মতো কথার রিপিট করে,মজা করে এমনকি ঝ*গড়া ও।সেদিন বলছিল আমাকে ‘মামী বাচ্চা এক মেয়েকে বিয়ে করে ঝামেলা তে পড়েছি।তার সাথে সারাক্ষণ আমার চিল্লাতে হয়।এটা করো না,ঔ টা করো,খেয়ে নাও,খাবে না তাকে জোর করো,রাত জেগে ফেবুতে গল্প পড়বে,গল্পের বই পড়বে, নিষেধ করলেও শুনবে না। আচ্ছা মুসি*বত তো।তুমি ব*কে দিবে যেন রাত না জাগে,ঠিকঠাক মতে খাওয়া দাওয়া করে আর আমাকে যেন না জ্বা*লায়।’
জানিস ওর ঐ রূপ দেখে মনে হচ্ছিল এটা আমার সেই ছোট্ট প্রণয় যে আমার কাছে নালিশ করতো তার মায়ের নামে। পার্থক্য এটাই তখন মায়ের নামে করেছে আর এখন স্ত্রীর নামে করছে।এই ছেলেকে নিয়ে বড় চিন্তায় ছিলাম যে ওর জন্য কেমন মেয়েকে ওর বউ হিসেবে আনব। ওর যা অবস্থা, একদম তারছি/ড়া বলা যায়।ওকে সামলাবে,আগের মতো করতে পারবে এমন মেয়ে খোজা চারটে খানে কথা না।যেখানে খোজা ই ক*ঠিন সেখানে খুজে পাওয়া তে মুশকিল বোধহয় আর তার ওপর বিয়ে করতেই রাজি হচ্ছিল না।কিন্তু তোদের দুজনের ভাগ্য দুজনকে টে*নে নিয়ে এসেছে দুজনের কাছাকাছি, জুড়ে দিয়েছে অদৃশ্য, শক্তিশালী এক বন্ধনে।অদ্ভুত না?

–‘ হ্যা,,অনেক অদ্ভুত।

সূচনা আনমনা হয়ে বললো কথাটুকুৃ।মিসেস আফিয়া সূচনার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলেন।অতি কোমল গলায় বললেন-

–‘শোন বাচ্চা, চাইলে সবকিছু ই সম্ভব।যেটা তোর সেটা হাজার বা’ধা পেরিয়ে হলেও তোর ই হবে কিন্তু যেটা তোর না সেটা দিনরাত এক করে চেষ্টা করলেও তুই নিজের করে পাবিনা।ভেবে নিবি সেটা তোর জন্য তৈরীই হয়নি।কিন্তু যেটা তোর সেটা তোর হবেই আর সেটাকে নিজের করে সবসময় আগলে রাখতে হয়,মুখ থেকে বের হওয়া কথা আর সময় দুটোই কিন্তু একই রকম। মানুষের মুখ থেকে একবার যেই কথাটা বের হয় সেটা সে হাজার চাইলে ও ফেরাতে পারেনা।আর সময়, সময় যা একবার চলে যায় তা আর কখনোই ফেরে না কারো জন্য। সময় থাকতে নিজের জিনিস নিজের করে রাখতে শিখে নেয়,সময় চলে গেলে তখন কেঁদে ও কুল পায় না মানুষ। বুঝতে পারছিস কী বলছি আমি?

সূচনার খুব ভালো করে ই কথাগুলো বোধগম্য হয়েছে।সে মাথা ঝা*কাতে ঝা*কাতে বললো-

–‘বুঝেছি মামী, খুব ভালো করে ই বুঝেছি।

মিসেস আফিয়া সূচনার থুতনিতে এক হাত রেখে বললেন-

–‘সাবাশ বাচ্চা, আমি জানি তুই বুদ্ধি মতি এজন্য বিশ্বাস আছে তোর ওপর যথেষ্ট পরিমানে।এখন আমার সাথে রুমে আয় তো খানিক।

জবাবে আলতো হেসে মিসেস আফিয়ার পিছু নিল সূচনা।
.
.
মিসেস আফিয়ার রুমে বিছানায় বসে আছে সূচনা। মিসেস আফিয়ার হাতে একটা শাড়ি।ওনার ঠোঁটের কোণে হাসি।শাড়ির দিকে তাকিয়ে হাত বুলাচ্ছেন শাড়ির ওপর।হয়তো স্মৃতিচারণ করছেন পুরোনো কোনো মুহুর্তের,হয়তো প্রিয় কোনো মুহুর্ত। কে জানে,সূচনা বুঝতে পারছেনা।কিন্তু নিশ্চয়ই স্পোশাল কিছু এই শাড়ির সাথে জড়িত।মিসেস আফিয়া নিজ হাতে শাড়িটাকে সূচনার কোলের ওপর রাখলেন।তারপর বললেন-

–‘বিয়ের পর প্রথমবারের মত যেদিন ওনার সাথে আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল,আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন উনি সেদিন এই শাড়িটাই পড়েছিলাম।একদম অন্য রূপে আবিষ্কার করেছিলাম দুজন দুজনকে।আমাদের এত বছরের পথচলায় সবচেয়ে সুন্দর আর মনে রাখার দিনগুলোর মধ্যে একটা মুহুর্ত। এটা নেয় তুই, আজকে এটা পড়বি।

–‘এ,এখন?

–‘হ্যা।

–‘কিন্তু মামী?

–‘কোনো কিন্তু না,এদিকে আয়।
______________________________
সূচনার পরনে তাতের শাড়ি।রেশমি সুতোর মিশ্রণে হালকা নীল রঙের শাড়িটির পাড়ে কারুকাজ করা।পুরোনো হওয়া সত্ত্বেও বেশ শৌখিন এবং আরামদায়ক লাগছে সূচনার কাছে।পুরোনো সময়ের তাতের শাড়ি হওয়ায় এর বুনন ধরন নকশা সবকিছু আলাদা।নিজেকে নিজের কাছেই অন্যরকম ঠেকছে সূচনার।লজ্জায় আর ভ/য়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।সে জানেনা কী হবে বা কী হতে চলেছে আজ।মিসেস আফিয়ার কথায় বা’ধ্য হয়ে শাড়িটা পড়েছে। কিন্তু প্রণয়ের সামনে যেতেই লজ্জা করছে তার।প্রণয় যখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করবে -এত সেজেছ কেন?তখন কী জবাব দিবে সে?সেই চিন্তায় অন্তরাত্মা পালাই পালাই করছে।কাজলের শেষ রেখা টেনে,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে সরে দাড়ালো।মিসেস আফিয়ার নজরে পড়লে উনি পূর্বের ন্যায় হেসে বললেন –

–‘একদম মিষ্টি একটা পরীর মতো লাগছে।এখন তাড়াতাড়ি যা।আয়।

কোনোরকমে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো সূচনা।
_______________________
দুরুদুরু বু*কে পা টিপে টিপে ভেড়ানো দরজা খুললো সূচনা।রুমে প্রবেশ করলে শীতল বাতাস যেন শরীরকে জমিয়ে দিল একদম।এমনিতেই হাত-পা শীতল হয়ে গিয়েছিল আর এখন এই ঠান্ডা বাতাসে বরফ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।রুম অন্ধকার করে রাখা,ব্যালকনির গ্লাস লাগানো কিন্তু পর্দা সরানো থাকায় বাইরের আলো এসে পড়েছে রুমে।বাতাসের উৎস খুজতে বেগ পেতে হয় নি।মিনিটেই বোঝা হয়ে গেছে সূচনার যে এই ঠান্ডার মধ্যে প্রণয় আবারও ফ্যান ছেড়ে রেখেছে। এই কাজ তো আজকে প্রথম না,আগেও করেছে। বু*কের ধুকপুকানির কথা এতক্ষণে ভুলে গেলেও আবার শুরু হলো সেই শব্দ। পূর্বের হতে দ্বিগুণ, না তার থেকেও বেশি।মনে হচ্ছে সে বাইরেও শুনতে পাচ্ছে।এমন অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দনের কারণ তার ঠিক পাচ কি সাত কদম সামনে দাড়িয়ে আছে প্রণয়।তার দৃষ্টি সূচনার ওপর, সূচনা ও তা বুঝতে পারছে তাই তো এই অবস্থা। নত মস্তকে স্টিলের ন্যায় দাড়িয়ে আছে সূচনা।অন্ধকারে,বদ্ধ রুমে দু প্রান্তে দু’জন মানব মানবী, ক্রমেই ভারি হচ্ছে তাদের হৃদ কোমল।কী হবে সামনে?নতুন কিছুর শুরু?নতুন #প্রণয়ের_সূচনা নাকি কিছুই না?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here