প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৪২

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪২
_______________________________
–‘এত সেজেছ কেন?

সূচনার ভাষ্যমতো ভ্রু কুচকে প্রশ্ন টা করলো প্রণয়।সূচনা প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের পানে।ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়নে প্রণয়ের।সে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে এসেছে বোধহয়,গলায় তোয়ালে ঝোলানো যে।পুনরায় প্রণয়ের প্রশ্ন কানে আসতেই চ*কিত তাকালো সূচনা।জড়ানো কণ্ঠে বললো-

–‘মা..মামী জোর করে..

–‘ওহ।

আর কিছু বলল না প্রণয়।দাড়িয়ে রইলো চুপচাপ,দৃষ্টি তার সামনে এখন। সূচনার কপাল কুচকে এলো,মে*জাজ ও খা*রাপ হলো অনেকটা।সে এত সুন্দর করে তৈরী হয়ে এসেছে আর প্রণয় বিনাবাক্য ব্যয়ে চলে যাচ্ছে।একটু প্রশংসা করলে কী হত?প্রণয় ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতেই কুচকানো কপাল নিয়ে সূচনা সেধেই জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমাকে কেমন লাগছে?

প্রণয়ের পা থামলো,দৃষ্টি শান্ত হলো তার কিন্তু বু*কের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে।সে পালাতে চাচ্ছে, এই মুহুর্তে দুজন একসাথে থাকলে ভুল একটা হয়ে যাবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই প্রণয়ের।

–‘বলছেন না কেন?

নিজেকে ধাতস্থ করলো প্রণয়,সূচনার দিকে ঘুরে তাকালো।গাড় কণ্ঠে শোধালো-

–‘নীল রঙা শাড়ি পড়নে,খোলা চুলের,চোখে কাজল পড়া এক রমনীর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব আমার মনের ক্যানভাসে একে নিয়েছি,একদম আপাদমস্তক।

সূচনা শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক।সুন্দর না বলেও কত সুন্দর তার প্রশংসা করে দিল প্রণয়।

–‘তুমি কাজল পড়ো না কেন?

ভ্রু নাড়িয়ে সূচনাকে জিজ্ঞেস করলো প্রণয়।

–‘পড়েছি তো।

–‘দেখছি না তো এত হালকা করে কাজল পড়ো কেন?

সূচনা আমতাআমতা করে বললো-

–‘আসলে গাঢ় করে কাজল দিলে আমাকে মঞ্জুলীকার মতো দেখায় এজন্য হালকা করে দেই।

সূচনার এমন বাচ্চামো কথায় প্রণয় শব্দ করে হেসে দিল।তা দেখে সূচনা মুখ বা/কিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘হাসছেন কেন?এটা সত্যি কথা গাঢ় করে দিতে গেলে আমি আগেই কাজল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলি তারপর কিছুক্ষণ পেরোলে তো একদম লেপ্টে যেয়ে…মঞ্জুলীকার মতো দেখায়।

–‘এখন থেকে মোটা করে দিবে।

–‘আমি পারি না,ভয় করে।

–‘শোনো..হুমায়ুন আহমে স্যারের একটা ছোট্ট উক্তি আছে -‘কাজল ছাড়া মেয়ে, দুধ ছাড়া চায়ের মত’।বুঝেছো?এখন থেকে আমি দিয়ে দিব?

বিনাবাক্য ব্যয়ে শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিল সূচনা।হালকা হেসে ব্যালকনি তে চলে গেল প্রণয়।সূচনা বুঝে উঠতে পারলনা তার কি করা উচিত।ঠায় দাড়িয়ে রইলো দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। টিকটিক শব্দ হচ্ছে ঘড়িতে,সময় পেরোচ্ছে,দাড়িয়ে থেকে অতিক্রম হলো মিনিট দশেক। অতঃপর কোনো রকম ভাবনা বা পরিকল্পনা ছাড়াই রুমের ফ্যান অফ করে সে ও পা বাড়ালো,উদ্দেশ্য ব্যালকনিই।দু হাত গ্রিলে রেখে বড় বড় শ্বাস টান*ছে প্রণয়।অস্থির লাগছে,প্রচন্ড রকমের,বড় অদ্ভুত অনুভূতি। লাগার ই কথা শত হলেও সে পুরুষ আর নিজের বিয়ে করা স্ত্রী কে এমন মোহময়ী,আকর্ষণীয় রূপে দেখলে তার সান্নিধ্য পেতে না চাইবে কোন স্বামী?তাদের তো আর হারাম সম্পর্ক না,কিন্তু সমস্যা একটাই।সে জানে না সূচনা কী চায়?তার মনে কী?তার কোনো ব্যবহারে যদি সূচনা তাকে ভুল বুঝে?হিতে বিপরীত হবে তখন।

–‘ব্যালকনি তে কেন আসলেন?

আচমকা প্রশ্ন,ঘাবড়ায় নি প্রণয়।তার পাশেই দাড়িয়ে আছে সূচনা,প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে। নিজেকে স্বাভাবিক করে স্বাভাবিক গলায় ই উত্তর দিল-

–‘এমনি, চলে যাব এখন।

প্রণয় চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই সূচনা তেতে উঠলো, চওড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘ইগনোর কেন করছেন?

প্রণয় থামলো,সে তো দূরে থাকতে চাইছে তারই ভালোর জন্য আর মেয়ে বলছে তাকে ইগনোর কেন করছে?একেই বলে কপাল।প্রণয় কপাল কুচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘কয়টা বাজে এখন?

শাড়ির আচল আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে সূচনার জবাব-

–‘দশটা বাজে বোধহয়,, তো?

–‘হোয়াট তো?দশটা বাজে এমনিতেই আজকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে সো আই নিড টু টেক রেস্ট।

–‘তার মানে আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন এখন? রাতে খাবেন না?

–‘না খাবোনা…আগেই তো বলেছিলাম।

–‘হুম।

ব্যালকনির দরজার সামনে আসতেই পেছন থেকে প্রণয়ের হাত ধরে ফেললো সূচনা।আবারও থামলো প্রণয়,হুট করে রা*গ জেকে বসলো কিন্তু প্রকাশ করলো না সরাসরি।শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি হয়েছে তোমার?কী চাই?

–‘এটেনশন।

–‘মানে?

–‘মা..মানে মামী বলেছে যে নিজের জিনিস নিজেকে আগলে রাখতে।

–‘হ্যা তো?

–‘তো তাই করছি।

–‘হ্যা?

–‘আব..ব.. মানে..কিছু না।

–‘বুঝিয়ে বলো।

–‘কি..কিছু না তো।

–‘কিছু না হলে কা*পছো কেন?আশ্চর্য!আচ্ছা কালকে তো চলে যাবে তাই না?

পরপর কথাগুলো বললো প্রণয়।সূচনা রেগে গিয়ে বললো-

–‘কোথায় যাব?

–‘কেন তোমার বাপের বাড়ি আর আমার শশুর আব্বার বাড়িতে।

–‘কেন যাব?আমার বাড়ি এখন এটাই।

–‘যাওয়ার কথা বলেছিল কে?তুমিই তো।

–‘বলেছিলাম তো।

–‘তো এখন যাবে।

–‘যাবনা।

–‘যাবে।

–‘বললাম না যাবনা।

–‘যেতে হবে।

–‘আশ্চর্য আপনি আমাকে এত জোর করছেন কেন?

–‘করছি তো?

–‘বাড়াবাড়ি হচ্ছে?

–‘হোক।

–‘বিচার দিব আমি,আপনাকে ব*কা খাওয়াব তবুও যাবনা। হুহ।কি করবেন?

–‘দেখতে চাও?

–‘দে..দেখান।ভ*য় পাইনা আমি।

–‘সত্যি?

–‘হু..হুম

সূচনার ‘হুম’ বলতেই আকস্মিক এক ঘটনা ঘটলো তার কিছু বুঝে ওঠার আগেই।প্রণয় ঝট করে কোলে তুলে নিল সূচনাকে।কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে বললো-

–‘চলো তাহলে।লেট’স প্লে।

বিছানায় এনে নামিয়ে দিয়ে চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো-

–‘একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে তোমার ওয়েট কম হওয়ায়।হুটহাট কোলে নিতে সমস্যা হবে না।কথা না শুনলে কোলে করে ছাদে নিয়ে যাব।হয় আমি যা বলি তা শুনবে না হয় ছাদ টু নিচে।গুড আইডিয়া না?হ্যা।

প্রণয়ের দিকে খেয়ে ফেলবে ফেলবে লুক নিয়ে তাকিয়ে সূচনা বললো-

–‘এজন্য ই সেদিন বলেছিলেন যে আপনি ইনোসেন্ট না।ঠিক ই বলেছেন আপনি ইনোসেন্ট হতেই পারেননা, কোনো এঙ্গেল দিয়েই না,ভুল করেও না। আপনি.. আপনি.. আপনি তো…

–‘কী আমি?

–‘ব*জ্জাতের বড় ভাই।

–‘ছিহ এটা কেমন কথা বউজান? নিজের বরকে এসব বলো সাহস তো কম না।

কথাটুকু নরম স্বরে শুরু হলেও শেষ হলো কঠিন গলায়।সূচনা কিঞ্চিৎ ভ*য় পেয়ে গেল,কী বলতে কী বলে ফেলেছে।না জানি কি করে আবার।আমতা আমতা করে বললো-

–‘সরি স্লিপ অফ টাঙ আর হবে না।

–‘আমাকে কেমন মনে হয় তোমার?

হঠাৎ প্রণয় এমন প্রশ্ন করতেই সূচনা থমকে গেল, চুপ হয়ে গেল, মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারলনা, করার চেষ্টা টুকুও করতে পারলনা যেন সে জানে চেষ্টা করলেও শব্দ বের হবে না।

–‘বললে না।

কণ্ঠে অনেক খানি পরিবর্তন।সূচনা এবার মুখ না খুলে পারলনা।মুখ খোলার পাশাপাশি অবাক করা কিছু কান্ড ঘটালো।সে বিছানায় বসেছিল আর বিছানার পাশে তার গা ঘেষে দাড়িয়ে ছিল প্রণয়।সূচনা চট করে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।প্রণয়ের এক হাত ধরে বসিয়ে দিল বিছানায়। অতঃপর টুস করে বসে পড়লো তার কোলে।ভড়কে গেল প্রণয়।নিজের বাম হাত টা প্রণয়ের গালে স্পর্শ করালো সূচনা।একদম প্রণয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো-

–‘আপনি এমন একজন পুরুষ যার মতো পুরুষকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চাইবে প্রতিটা মেয়ে।যে পাবে সে ভাগ্যবতী ছাড়া অন্য কিছু না।আর সেই ভাগ্যবতী একজন আমি,আপনার জীবনের অংশ হতে পেরে,আপনাকে পেয়ে সত্যি ই ভাগ্যবতী আমি।

প্রণয় বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলো সূচনার দিক।প্রণয় ভাবেও নি এত সহজে আর এত তাড়াতাড়ি নিজের মনের কথা প্রকাশ করবে সূচনা।সূচনা আবারও ফিসফিসানো কণ্ঠে বললো-

–‘দুজন মানুষ যখন একসাথে বসবাস করে,তখন তাদের মধ্যে আর কিছু হোক আর না হোক মায়া জন্মায়।মায়া নামক অদৃশ্য এক শি*কলে বাঁধা পড়ে যায় তারা।আপনি আর আমি তো হালাল সম্পর্কে আছি,একই ছাদের নিচে,একই কামরাতে বসবাস করছি।আর তারওপর অপর প্রান্তের ব্যক্তিটা যদি হয় আপনার মতো তাহলে তার মায়ায় পড়া টা আমার জন্য অস্বাভাবিক কিছু না।আপনার ছোট থেকে ছোট বিষয় গুলোও আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে।দোটানায় ছিলাম,বুঝে উঠতে পারছিলামনা নিজের মনের অবস্থা।কিন্তু আজকে মামীর কথাগুলো শোনার পরে বোঝা হয়ে গেছে।আপনি যখন চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন ঔ চারটা দিনে আমি বুঝতে পেরেছি আমার আপনাকে লাগবে,আমি আপনার মায়ায় পড়েছি,যেই সেই মায়া না।ভ*য়ংকর, ক*ঠিন মায়া।আপনার আমার শুধু শরীরের দূরত্ব আত্মার না।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চুপ করলো সূচনা।প্রণয় সাথে সাথে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না।চুপ করে রইলো,সূচনা ও প্রণয়ের কোলেই চুপটি মেরে বসে আছে তার অপেক্ষায়।প্রণয় হুট করে ঝারি দিয়ে কোল থেকে নামিয়ে দিল সূচনাকে।তার হেন কান্ডে সূচনা ‘থ’ হয়ে গেল একদম।বিছানা থেকে উঠে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ব্যালকনিতে চলে গেল প্রণয়। তার যাওয়ার দিকে টলমলে চোখ নিয়ে সূচনা তাকিয়ে রইলো। তার মাথা আপাদত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।বুঝতে পারছেনা কোনোভাবে ই প্রণয়ের এমন ব্যবহারের কারণ।তার এই দশা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।একজোড়া শক্তপোক্ত হাত তার দু বাহু ধরে তাকে দাড় করিয়েছে।কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে।একদম যেন নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে চাইছে তাকে,দম আটকে যাওয়ার উপক্রম, থম মে’রে গেছে সূচনা আবার।প্রায় দশ মিনিটের মাথায় সেই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেয়েছে সূচনা।সূচনার দু গালে হাত রেখে মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাড়ালো প্রণয়। দু জোড়া চোখ আবদ্ধ হয়েছে,ওষ্ঠাধর
জোড়ার ও দূরত্ব ক্রমেই কমছে তাদের, সাথে ক্রমেই বাড়ছে শ্বাস।ওষ্ঠাধরের দূরত্ব কমতে কমতে প্রণয়ের ওষ্ঠ সূচনার অধর স্পর্শ করলো।কে*পে উঠলো দুজনই।সূচনার সমস্ত শরীরে তীব্র ঝাঁ*কুনির সৃষ্টি হলো।হালকা হতে স্পর্শ গভীর হলো,দুজনের মধ্যে উন্মা*দনা ছেয়ে গেল যেন একে অপরকে কাছে পাওয়ার।ক্রমেই অধর হতে ওষ্ঠ,গ্রীবা,চিবুকে নেমেছে প্রণয়ের স্পর্শ।সূচনার শরীরের প্রতিটা ভাজে কম্পন তুলছে প্রণয়ের একেকটা স্পর্শ। নিজেকে বদ্ধ উন্মাদ লাগছে সূচনার।প্রণয়ের অবস্থা ও তাই,নিজেকে কন্ট্রোল করার কথাটা তার মাথায় আসছেইনা।সে ব্যস্ত এখন সূচনা তে ডুবতে,নতুন সূচনা ঘটাতে।অন্ধকার রুম আরও অন্ধকার হলো,ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো,পর্দাও নামিয়ে দেয়া হলো।বাইরে থেকেও আলোর ছিটেফোঁটা ও আসার কথা না।আবারও দুজন মত্ত হলে দুজনায়,ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ,দুজন মানব মানবীর শ্বাসপ্রশ্বাস আর অস্পষ্ট সুখময় অনুভূতি প্রকাশের শব্দে মুখরিত হলো পুরো কামড়া।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম।এইবার দিলাম দুজনকে এক করে সেই খুশিতে কমেন্ট করুন প্রচুর🫣।আর কিছু বলবনা,সরম করে 🙈🔪।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here