প্রণয়প্রেমিকের নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব -০৮

#প্রণয়প্রেমিকের_নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৮

‘ওহে ডালিং পাপ্পি হাগ তো দেতি যাও।’
‘তোর গোষ্ঠি কিলাই। ন্যাকামী ঢং।’

কথা শেষে আহিফা চট করে গাড়িতে উঠে পড়ে। ড্রাইভার কাকাকে বলে,

‘কাকা চলেন।’

তবে কাকার সাড়া শব্দ না পেয়ে আহিফা খেয়াল করে ড্রাইভিং সিটে আশফি বসা। নানান ভঙ্গিতে হেয়ার স্টাইল করে চুলগুলো এপাশ ওপাশ করছে। আহিফা ভয়ে চুপছে গেল। ধীরস্থিরভাবে গাড়ির দরজা খুলতে নিলে চট করে তার কোমল হাতে পুরুষেলী হাত স্পর্শ করে। আশফি গানের সুর তুলে গেয়ে উঠে।

‘মোহাব্বাত কি রাত হে জানেমান,
এসে কেসে ছোড় দুম।’
‘দেখেন ভালো হচ্ছে না। হাত ছাড়েন না হলে!’
‘না হলে হোয়াট তোমার সো কল্ড বিএফকে জানাবে, যে জানু দেখো আমাকে এই ছেলে নিয়ে যাচ্ছে।’

ব্যঙ্গ ভঙ্গিতে বলে উঠে আশফি। তার কথায় আহিফা মুখ ভেটকিয়ে বলে,

‘দরকার হলে সেটাই করব।’

সে তার ফোন বের করে তার এক বন্ধুকে কল করতে নিলে আশফি ছুঁ মেরে ফোনটাই ছিনিয়ে নেয়। ফোনটা নিয়ে সে তৎক্ষণাৎ জুতো খুলে দুর্গন্ধযুক্ত মোজার ভেতর ঢুকিয়ে নেয়। আহিফা গন্ধের চটে নাক চেপে ধরে। আশফি শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

‘আজ বাসায় গিয়ে এই ফোনকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিও। হাহাহা।’

আহিফা চোয়াল শক্ত করে চুপ মেরে রইল। তার দ্বিগুণ কথা আশফিকে দ্বিগুণ ফাজলামিতে ছড়িয়ে দেবে। ইশ! বেচারী তার ফোনটা এই বদ’মায়েশের মোজার খাদ্য হলো। না জানে কতক্ষণ মোজার খাদ্য বানিয়ে রাখে খচ্চরটা! চোখ-মুখ ফুলিয়ে আড়চোখে আশফিকে দেখছে আর কথাগুলো ভাবছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
বাসার সামনে এসে হাজির হলো। আহিফা একপলক তাকায়। এই বাসায় সে কত বারই না এসেছিল। অথচ কৈশোরের এক ঝড়ো হাওয়ায় সে দূর হয়ে যায়!

মহারাণীকে বসারত দেখে আশফি নিমন্ত্রণহীন তাকে কোলে উঠিয়ে নেয়। আর শিষ বাজিয়ে আহিফাকে ইভটিজিং স্বরুপ মনভাবের গলায় বলে,

‘তোমার অন্যমনস্ক হওয়ার ব্যাপারটা না আমার কাছে সেই লাগে! এককাজ করিও প্রতিদিন নিয়মমাফিক অন্যমনস্ক হবে আমার সামনে। কিন্তু আমার সামনে ছাড়া অন্য কারো সামনে নয়। আমার সামনে প্রতিদিন অন্যমনস্ক হলে উফ আমি আমার প্রতি কাজ সেরে ফেলতে পারব।’

আহিফা ফাটাফাটা দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

‘কিসের কাজ!’
‘এই যে তোমাকে নিয়মমাফিক চুমু খাবো,ছুয়ে দেব,বিছানায় নিয়ে বা….।’

তার কথা সম্পূর্ণ হতে দেয়নি আহিফা। তার পূর্বেই সে কামড়ে দেয় আশফির গলায়। সে মৃদু ব্যথিত কণ্ঠে ‘আহ্’ করে উঠল। ঝাঁঝওয়ালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ডাইনী নাকি যে কামড়ে খেয়ে ফেলছিস!’
‘বেশি বকলে এটাই করব।’
‘রমণী রোমান্সকে তুমি বকা বলো। বিয়েটা হতে দাও কত বকায় কত রোমান্স সব বুঝিয়ে দেব।’

ভেংচি কেটে আহিফা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। পরন্তু সে মনেমনে লাজুক হাসে। তার ভীষণ ভালো লাগে আশফির ছোটখাটো কেয়ারগুলো।

‘আরে বাপ বউমাকে এভাবে কোলে নিয়ে সেহের করছিস কেন বাসার ভেতরেও আয়।’

মায়ের কণ্ঠে ধ্যান ভাঙ্গে দুজনের। আশফি গলা খাঁকড়ি দিয়ে বানোয়াট জবাব দেয়।

‘মা আহুপঙ্খির নাকি পা মোচকে গিয়েছে।’
‘কি বলিস তাড়াতাড়ি আয় স্প্রে করে দেয়!’

মিসেস আনজুমা দরজা খুলে দেয়। আশফিরা ভেতরে চলে আসে। আজীব তখন শার্ট সটান করে বই গুছাচ্ছিল। ভাই ও ভাবীর আগমনে সেও আপাতত বইয়ের টার্চ থেকে সরে যায়। আশফি আহিফাকে সোফায় রেখে দাঁড়িয়ে যায়। মিসেস আনজুমা স্প্রে নিয়ে এসে জোরপূর্বক আহিফার পায়ে স্প্রে করে দেয়। আহিফা বেকুব দৃষ্টিতে আশফিকে চোখ রাঙায়। সে তা দেখে ঠোঁট চুমুর মত করে চুমু খেল।
আরভীক সাহেব ছেলের প্রেমমূলক ভাব দেখে তার পিঠে হাত রাখে। বাবার আচরণে সে হকচকে গেল। তিনি মৃদু কণ্ঠে ছেলেকে বলে,

‘মিথ্যে বুঝি আমার থেকে শিখে বড় হয়েছিস।’
‘ইয়েস বাবা। তুমি না বললে কি আর আমি বলতে পারতাম!’

আরভীক সাহেব মাথা নেড়ে নিজেকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভান দেখায়। অথচ তিনি তো মনপ্রান্তে লাড্ডু ফুটিয়ে বসে আছে। একে তো ছেলের হাবভাব বাপের মত, দ্বিতীয় সেও তার মত নিঃশব্দে খেলার ইতি টানতে শিখে নিয়েছে।
মিসেস আনজুমা আহিফার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘একবার যোগাযোগও করলি না আহুমা। এতটা খারাপ ভাবলি কি করে আমায়! তোর যোগাযোগের আশায় কতবছর পেড়িয়ে গেল ভাবতে পারছিস। সেদিন যা বলে ছিলাম রাগের বশে ছেলের দূর্দশা দেখে নিজেকে স্বার্থ,পাষাণ্ড বানিয়ে বলে ফেললাম। সেই কথাকে কেমনে তুই সত্য মনে করে ফেললি। আশফি তোকে বলেনি জানি যে আমি কতটা অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি। আশফি চারটা বছর বন্ধুসুলভ আচরণ অব্দি করতে ভুলে গিয়ে ছিল। কথাবার্তায় মিষ্টান্ন তো দূর হাসি অব্দি তার ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠেনি। জাস্ট বিকজ অফ মি। ঠিক চার বছর সেও স্বাভাবিক হয়। তোকে নানান প্রান্তে খোঁজ লাগায় । তবে যে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায় তাকে খোঁজে পাওয়া কঠিন। একদিন তুই তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলে দেখে আশফি ফোনের ট্রাকশন সার্চ করে দেখে তার গোপন ডিপার্টমেন্টে। তখন জেনে যায় তুই কোথায় আছিহ! ব্যস সে চলে যায়। এ বার কোনো ছাড়াছাড়ি হতে দেব না তোদের মাঝে। তোর আম্মুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো আমি। এবাড়ির বড় বউ হবে তুই।’

বড় চাচীর কথা শুনে আহিফা আবেগীয় হয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। ‘সরি বড় চাচী’ বলে জড়িয়ে ধরে। মিসেস আনজুমা তার মাথায় হাত বুলিয়ে চাটি মেরে বলে,

‘পাগলী মা আজ থেকে চাচী না বড় আম্মু বলে ডাকবি।’

আহিফা যেন সাত ধনের সুখ হাতে পেয়ে গেল। আকস্মিক নিজের মায়ের কণ্ঠ পেয়ে চমকে উঠে। মিসেস নাইফা আদাফাত সাহেবের সঙ্গে প্রথম থেকেই আশফির আসার অপেক্ষা করছিল। রুম থেকে প্রতিটা কথাই শুনেছে মিসেস নাইফা। বিনিময়ে তিনি প্রাপ্তির হেসে মিসেস আনজুমার হাত আকঁড়ে বলে,

‘ভাবী পূর্বের সব কথা ভুলে যান। সে এক কালো ঝড় ছিল। এখন থেকে সবাই একসঙ্গেই থাকবো।’

আহিফা নিজের মা-বাবাকে দেখে কান্না আঁটকে রাখতে পারল না। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে একেকটা বছরের জমানো কান্না বিসর্জন দেয়। মিসেস নাইফা ও আদাফাত সাহেব মেয়েকে আগলে কিঞ্চিৎ সময় জড়িয়ে রইল। আশফি হামি দিয়ে বলে,

‘শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এত আদর করিলে জামাইয়ের আদর কখন দেওয়ার সুযোগ হইবে গো!’

বাবা-মার সামনে লাগামহীন কথা বলেও তার দশা ভাবলেশনহীন। অথচ আহিফা শুনে লজ্জার চটে দৌড়ে আয়েশার রুমে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে বাকিরা হেসে দেয়। আজীব চলে যেতে নিলে নাঈমের কথা শুনে থেমে যায়। কদম যেন তার এগোয় না। আতঙ্ক নজরে পিছু মোড়ে সে। নাঈম লাজুক হেসে তার বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আমিও মেয়ে পছন্দ করে রেখেছি বাবাইয়ি। মেয়ে অন্য কেউ না আপুর বান্ধবী ফারিন।’

‘ফারিন’ নামটা শুনে আজীব শুকনো ঢোক গিলল। সে আড়ালে সবার মাঝে এসে হাজির হয়। নাঈমের কথা শুনে বিষম খায় আদাফাত সাহেব ও মিসেস নাঈমা। কেননা ফারিন আহিফার বান্ধবী নামেমাত্র। বরঞ্চ সে তো আজীবের সমবয়সী। তার ও নাঈমের বয়সের মাঝে বিস্তৃত তফাৎ। আদাফাত সাহেব ইতস্ততঃ বোধ করছে দেখে আরভীক সাহেব গলা খাকড়ি দিয়ে উঠে। নাঈম তার বড় আব্বুর দিকে তাকায়। তিনি নাঈমকে নিজের সঙ্গে বসিয়ে বলে,

‘বাবা তুই যা বলছিস সেটা সম্ভব হবে যদি ফারিন চাই। তবে তোর আর তার মধ্যে দুবছরের ব্যবধান বিয়ের কথা ভেবে বলছিস তা জানি আমি। কনফিডেন্স তোর চেহারায় লক্ষ হচ্ছে।’

বড় আব্বুর কথা শুনে নাঈম উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,

‘আরে বড়আব্বু ফারিনও আমাকে বিয়ে করতে চাই। ইনফ্যাক্ট গতকালকেই সে আমার প্রপোজালে রাজি হয়েছে।’

আজীব যেন টাস্কি খেল। গতকালকে সে রিজেক্ট করেছে বলে মেয়েটা হোচট খেয়ে তার হবু ভাবীর ভাইয়ের উপর পড়ল। ইশ! সে তো অবুঝ হয়ে করেছে তাই বলে মেয়েটা সত্যি ছাড়বে নাকি! রাগে কটমট করে সে তার রুমে গিয়ে ধড়াম করে দরজা আঁটকে দেয়। ড্রয়িং রুমের সবাই ঠোঁট কামড়ে হাসি নিয়ন্ত্রণ করল। আজীবের দরজার দিকে তাকিয়ে সকলে মিটমিটিয়ে হেসে দেয়। আরভীক সাহেব নাঈমের কাঁধে হাত বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে ‘শাবাশ বেটা’ বলে। মিসেস আনজুমা নিচু কণ্ঠে বলে,

‘ডোজ কাজে দিয়েছে। এবার শুধু দেখার পালা।’

আশফি শার্টের হাতা ফোল্ড করতে থেকে আহিফার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। যা দেখে আদাফাত সাহেব থামিয়ে বলে,

‘বাবা বিয়ে অব্দি থেমে যাও।’
‘কি যে বলেন শ্বশুরমশাই! হবু বউয়ের সঙ্গে ইটিস পিটিস না করলে বিয়ের বাসরে লজ্জা ভাঙ্গবে না। তখন আপনাকে নাতী-নাতনীর মুখ দেখাবো কেমনে হুম!’

কথাগুলো আওড়ে আপনমনে আশফি আয়েশার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে উড়নচুন্ডী ক্ষেপে বলে,

‘বে’হা’য়া,লাজহীন,হতচ্ছাড়া আব্বু-আম্মুর সামনে ঠোঁটকাটা কথা বললি কেন! আজ তোর মুখ অব্দি দেখব না যাহ্ ভাগ।’

শুনে আদাফাত সাহেব অট্টহাসি দিয়ে উঠে। আশফি ভোতা দৃষ্টিতে নির্বোধের মত তার শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে সূক্ষ্ম ভাবে দরজার দিকে চেয়ে বলে,

‘তুই দরজা খুলবি না!’
‘নো,নেভার,কাভি নেহি।’
‘ওকে টাটা।’

আশফির বিদায়জনক বার্তা শুনে আদাফাত সাহেব ও আহিফা থতমত খেল। তবুও আহিফা ভাবল বেটা নিশ্চয় প্রাঙ্ক করছে, সে দরজা খুলবে না। অপরপাশ্বে আদাফাত সাহেব ছেলের প্রস্থান করা দেখে তিনিও চোখ পিটপিটিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আশফি রাস্তা মোড়ে পিছু ঘুরে শ্বশুর ও শ্বশুরের মেয়ের মতিগতি বুঝে শয়তানি হেসে জানালার থেকে বেরিয়ে পড়ে। আয়েশার রুমের জানালার মধ্যে যেতে পাইপলাইন দিয়ে অগ্রসর হয়। আয়েশার জানালা আলতো করে খোলা থাকে। আহিফা দরজার সামনে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে নিজ ভাবনায় মগ্ন। ততক্ষণে আশফি জানালা ভেদ করে আস্তে ধীরে আহিফার পেছনে এসে হাজির। তার চুলের শ্যাম্পুর ঘ্রাণে মুখ ডুবিয়ে দেয়। আহিফা চমকে যায় হাত মুঠো করে কাপড়ের অংশ চেপে ধরে।
নিবিঘ্নে দুজন দুজনার নিশ্বাস গুণতে লাগল।

_____

আজীব পায়চারী করছে পার্কে। বারংবার ঘড়ি দেখছে আর অপেক্ষা করছে। ফারিনকে কল দিয়ে তাকে কথাহীন আদেশ দেয় যে, ‘সোজা পার্কে দেখা করতে আয়!’
শুনে ফারিন প্রত্যত্তুর করারও সময় পায়নি। কল কেটে দেয় আজীব। সে বাসার কাউকে কিছু না বলে বাইক নিয়ে পার্কে এসে পড়ে। এসেছে প্রায় একঘণ্টা হবে। ফারিনের আসার নামগন্ধ নেই! ঠোঁট নেড়ে বকে চলছে সে।

‘আমাকে ঠেংগা দেখিয়ে তুমি নাঈমকে বিয়ে করবে। তা তো হতেই দেব না। এত বড় সাহস তোমার! উফ যন্ত্রণা প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি অপেক্ষা করিয়ে করিয়ে। কেন যে মন পূর্বে ধারণা জাগায়নি! শেষ মুহুর্তে এসে কেন জাগাল। তাও ঠিক আছে বিখ্যাত মহীয়সীরাও শেষমুহুর্তে আবিষ্কার করতে পারছিল। আমি আজীব হয়ে একটা মেয়ের মন ভুলিয়ে দিতে পারব না। হাহ্ আজীব ফাওয়াজও কম কিসে হ্যান্ডসাম,সাইনিং বয় সেও।’

ফারিন ও নাঈম গাছের পেছনে আড়াল হয়ে আজীবের নাজেহাল দশা দেখে পাগলের মত হাসছে। নাঈমকে শিখিয়ে দেয় সে।

‘শোন এখন যাব তুইও দশমিনিট পর রাস্তা দিয়ে যাবি। আমাকে দেখে চমকে যাওয়ার ভান করে খুশিতে এসে জড়ায় ধরবি বুঝছিস!’
‘ইয়েস আপু তুমি যাও।’

ফারিন মুখ গম্ভীর করে এগিয়ে আসল। আজীব যেন সর্বশেষে প্রাণ ফিরে পেল। মুগ্ধ নেত্রপল্লবের ন্যায় দেখতে থেকে বলে,

‘আজ কেনো যেনো তোমাকে অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।’

কেঁপে উঠল ফারিন আনমনে। তবে প্রতিক্রিয়া করল না। মৌনতা ভেঙ্গে বলে,

‘কেনো ডাকছেন বলেন!’
‘আব আসলে তুমি কি সত্যি নাঈমকে বিয়ে করছো কিনা জানতে চেয়ে ছিলাম।’
‘হে করছি।’

সোজা জবাব শুনে যেন আজীবের উৎফুল্ল চেহারায় কালো আঁধার ফুটে উঠল। সে করুণ গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘তুমি না আমায় ভালোবাসা!’
‘তো আবিয়াত্তা থেকে যাবো ভাবছেন! উহুম বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন গঠনের মাধ্যম। হে, নাঈমকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখতাম তবে সে ভালোবাসি কথাটা জানানোর পর বিয়ের প্রস্তাব রাখলে ভাবার জন্য সময় চাইছি। সেও দিল তখন আপনার কথা মনে আসল। ভালো আপনাকে বাসলেও সংসারটা নাঈমের সঙ্গে করা হবে। কারণ আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমি জীবন কাটাব। বিয়ে তো কাউকে না কাউকে করতে হবেই। সেখানে নাঈম একজন হলে প্রব্লেম কি! আপনি তো সুযোগ পেয়েও হারালেন।’

মুখ লটকে গেল আজীবের। কথার উপর জবাব দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না। তার পক্ষ থেকে নিরবতা পেয়ে ফারিন নিঃশব্দে হতাশার শ্বাস ফেলল। আপনমনে আজীবকে বিশ্রী গালি দিয়ে বিড়বিড়ে বলে,

‘শঠবাজ একখান! ভালোবাসি বললে কি তোর উপর মহাভারত অতিষ্ঠ হবে গাধা একটা। যত কষ্ট দিলি না ভোগ এবার। হু যতক্ষণ ধরে আই লাভ ইউ না বলছিস ততক্ষণ ধরে জেলাসির আগুনে পুড়ে ছাই হবি।’

ফারিন আড়চোখে নাঈমের দিকে তাকিয়ে নাটক করার জন্য ইশারা করে। এতে সেও রাস্তার মধ্যে নেমে এলো। হেঁটে যাওয়ার ভান করে ফারিনকে দেখে উচ্চ আওয়াজে ডাক দেয়। আজীব তাকে দেখে মুখ ফুলিয়ে বিড়বিড়ে বলে,

‘চুইংগামের মত পিছেই পড়ছে দেখছি ছেলেটা। আক্কেল জ্ঞান কি সব বেছে আসছে! বেয়াই বেয়াইয়ের মত থাকবি তা না উল্টো বেয়াইয়ের হবু ভালোবাসার দিকে নজর দিস। তোকে তো ভাজা মাছ করে গিলে ফেলতে মন চাচ্ছে।’

‘আরে আজীব ভাই আপনি এখানে!’
‘হ্যা তো কেন এখানে কি আমার আসা বারণ!’
‘তা কবে বললাম আপনি তো সারাক্ষম বইয়ে মুখ গুজে থাকেন। পার্কে টার্কে সেহের করার মত পাবলিক তো আপনি নয়। তাও আবার কাপল’স পার্ক।’
‘একা কই সেহের করছি ফারিনও আছে আমার সঙ্গে।’
‘ওহ থ্যাংকস ভাইয়া আপনি কত ভালো! আমার হবু বউকে দেখে দেখে রাখছেন। আমার আর কোনো টেনশন নেই আপনি দেখে রাখলেন নিশ্চিতে আমি বিয়ের পিরীতে বসতে পারব। আমি তো ভাবি ফারিন আপনার সাথে থাকলেও সেইফ কারণ এক ভাই তো বোনকেই আগলে রাখতে জানে ভালোমত।’

শুনে যেন আজীবের কানের বারোটা বাজল। ফারিন নিশ্চুপ তবুও তার অন্তঃস্থলে হাসিটা দমফাটা হয়ে আসছে। আজীব সময় বিলম্ব না করে প্রস্থান করে। কারণ সে যদি আর কিঞ্চিৎ সময় পার্কে থাকে। তবে নাঈম তাকে তার হবু বাচ্চাদের চাচাও বানিয়ে দিতে দু’সেকেন্ড ভাববে না। আজীবের যেতেই ফারিন ও নাঈম হাসিতে ফেটে পড়ল।

_____

দুদিন পর….

ইলেকশন হেরে মোকলেস মাহতাব যেন দিশাহারা হয়ে গেল। তার এসিস্ট্যান্ট রহিম সুযোগের ফায়দা লুটে বলে,

‘স্যার আর কেউই আপনার সঙ্গে কনটাক্ট করতে ইচ্ছে পোষণ করছে না। আপনার হেরে যাওয়া যেন তাদের জন্য বিরাট লসের মুখে ফেলছে বলে অবগত করছে।’

মোকলেস তার নামের পূর্বের উপাধি হারিয়ে ফেলল। সে এখন সাধারণ সভাপতি! তার আসন অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারছে না। তার ভোট তো বেশি ছিল তাহলে অন্য কেউ কেমনে দখল করল। সভাপতির আসনও বা পেল কেমনে! আজ দুপুরে ইলেকশন জয়ের তালিকা পাবলিস্ট হলে মোকলেস দেখল তার নাম মন্ত্রী পদ থেকে বিতাড়িত করা এবং তার নামের সঙ্গে শুধু সভাপতি যোগ করা হয়েছে। রহিমকে দিয়ে তদন্ত করতে পাঠায়। কিন্তু ফলাফল শূন্য!
আকস্মিক ফোন কল আসায় সে ফোনটি হাতে নিয়ে কানে ধরল।

‘কি গো ফেলটুস মন্ত্রী থুক্কু পতি সাহেব! উচ্চ থেকে নিচুতে হুট করে পড়তে কেমন অনুভূতি হচ্ছে! ফিলিং নাইস হাহ। কি মনে করিস নিজেকে! এতটা কেয়ারলেস হবো আমি যে শত্রুর আর্জি কিরুপ বুঝব না। না মুন্না না, ইহা আপনার গলদফেমি হেয়।’

‘তোকে আমি ছাড়ব না।’
‘ছিঃ পতি তুই কি গে নাকি যে আমাকে জড়িয়ে রাখবি। চিন্তে নেই তোকে গেখানায় ভর্তি করিয়ে দেব।’
‘সেটআপ রা’স’কেল!’
‘আমি আবার ভদ্র ছেলে গা’লি’গা’লাজ করি না! ইহা আমার মুখের শোভা পায় না। বাই দ্যা ওয়ে একদিন শোক পালন করে নে তুই। পরের দিন শোক করার জন্য জীবিত নাও থাকতে পারিস।’

কথার সমাপ্তি টেনে ফোনটা টেবিলের উপর রকিং চেয়ারে আয়েশে হেলান দেয় আশফি। হামি দিয়ে রোদ্দুরের দিকে চাই। সে ফাটাবাঁশের মত চেয়ে আছে। বাঁকা হেসে বলে,

‘মুখটা বন্ধ কর না হলে মাছি ঢুকে যাবে। এমন হা-কর দৃশ্য দেখলে মন চাই তোকে সাগরে ধাক্কা দেয়। তখন যত ইচ্ছে হা করে সাগরের পানি খাবি। যখন ইচ্ছে অগ্রাহ্য মনে হবে তারপর যেয়ে তোকে জ্যান্ত করব।’

রোদ্দুর হ্যাবলার মত মুখ করে ‘না না’ বলে আশফির কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here