প্রণয়াসক্ত পর্ব -১০

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১০
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“সারারাত এপাশ-ওপাশ করতে করতেই কে’টে গেছে। ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিলো। ফজরের আযানের ধ্বনি কানে ভেসে আসায় ঘুম ছুটে গেলো। তাড়াতাড়ি উঠে অজু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর ছাঁদে গিয়ে আমার সবগুলো গাছে পানি দিলাম। আমার সবচেয়ে প্রিয় গোলাপ গাছে আরও দু’টো গোলাপ ফুটেছে দেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো। মনটা নিমিষেই ফুরফুরে হয়ে গেলো। আরও বেশি ভালো লাগছে আজকে আরাফ আসবে। আচ্ছা সত্যি কি আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে? আরাফের ফ্যামিলিও কি আমাকে অনেক ভালোবাসবে? আমি কি তাদের মনের মতো হয়ে উঠতে পারবো? এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাতবে নিচে নেমে আসলাম। তারপর রান্নাঘরের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি আম্মু রান্নাবান্না নিয়ে অনেক ব্যস্ত”। আম্মু আমাকে দেখে বলে উঠলো…

‘কিরে কোথায় গেছিলি’?

‘ছাঁদে গেছিলাম আম্মু। কাছে গুলোয় পানি দিয়ে আসলাম’।

‘ঠিক আছে। তাহলে এখন গিয়ে রুম গুলো গুছিয়ে দে। আমি রান্না শেষ করে যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে’।

‘আচ্ছা যাচ্ছি। তারা কখন আসবে কিছু বলেছে’?

‘হ্যা তারা রাতে ফোন দিয়েছিলো। বললো বিকেলে আসবে। তাই আমি ভাবছি তাদের রাতের খাবার একবারে খাইয়ে দিবো। এখন সব কে’টে-কুটে রেডি করছি’।

‘কি কি রান্না করছো আম্মু’?

‘পোলাও, মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, সালাদ, কাবাব, বোরহানি আর খাবার পরে মিষ্টি আইটেম রেখেছি পুডিং আর দই। চলবে না রে’?

‘হ্যা চলবে। আচ্ছা আম্মু পুডিং টা আমি বানাবো’।

‘বাব্বাহ্! এতো দিন তো এক গ্লাস পানি ঢেলেও খাইতেন না। আজকে হঠাৎ কি হলো’?

‘কিছুই না। এমনি বানাতে চাইলাম’।

আচ্ছা ঠিক আছে বানাস’।

“আমি মুচকি হেসে ঘরের কাজ করতে চলে গেলাম। আসলে আজকে আরাফ আসবে, ওকে নিজের হাতে কিছু বানিয়ে খাওয়াতে ইচ্ছে হলো তাই আর কি! আমার ঘরের কাজ শেষ করতে করতে যোহরের আযান দিয়ে দিলো। আমি সব কাজ করে গোসল করে নামাজ আদায় করে নিলাম। সময় যত যাচ্ছে আমার উত্তেজনা তত বাড়ছে। কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। দুপুর বেলা খেতে বসেছি কিন্তু খেতেও পারছি না। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কোনোরকম একটু খেয়ে উঠে চলে গেলাম। আমি রুমে গিয়ে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। কখন যে বিকেল হবে, এটা ভেবে অস্থির হয়ে আছি। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে এলো। আম্মু এসে বলে গেলো ‘তারা যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। তুই রেডি হয়ে যা’। আমি আলমারি খুলে আরাফের শাড়ি’টা বের করে দেখতে লাগলাম। পড়বো কি পড়বো না ভাবছি। পড়লে যদি আম্মু বলে এই শাড়ি কোথায় পেলি, তখন কি বলবো? আবার ভাবছি, না পড়লে কি আরাফ কষ্ট পাবে? অনেক ভেবে’চিন্তে সিন্ধান্ত নিলাম যে, আজকে ওর দেওয়া শাড়ি’টা পড়বো না। বিয়ের রাতে পড়বো। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি আম্মুর হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে নিলাম। শাড়িটার উপর স্টোনের কাজ করা। শাড়িটা পড়ে একটু হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে নিলাম, কানে একজোড়া দুল আর হাতে চুড়ি পড়লাম। লম্বা চুলগুলো খোলা রাখলাম। পুরো পিঠ জুড়ে কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লো চুলগুলো। রেডি হয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে লাগলাম। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি, কোথাও কোনো কমতি আছে কি’না। হঠাৎ বসার ঘর থেকে হ’ই’চ’ই ভেসে আসছে। তাহলে সবাই কি চলে এসেছে? আমি একটু আমার রুমের দরজার সামনে থেকে উঁকি দিয়ে বসার ঘরের দিকে তাকালাম। একটা ছেলের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। ছেলেটার পড়নে নীল রঙের একটি পাঞ্জাবি। আমি জানি এটা আরাফ। আমি খুশি মনে একটু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম”। কিছুক্ষণ পর আম্মু রুমে এসে বললো…

‘কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? রেডি হয়েছিস’?

‘আমি কিছু না বলে আম্মুর দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম’।

‘আম্মু আমার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো, মাশাআল্লাহ আমার মেয়েটা’কে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে’।

(আমি শুধু মুচকি হাসলাম)

‘চল চল উনারা চলে এসেছে। জানিস ছেলেটা না বড্ড ভালো। সবার সাথে খুব সুন্দর করে মিশে গেছে। মনেই হয় না ওকে আজ আমরা প্রথম দেখলাম। এমনভাবে কথা বলে যেনো আমরা ওর কতদিনের আপন’।

‘মা কে কে এসেছে’?

‘ছেলের বাবা, মা, ভাই, ভাবি আর ছেলে’।

‘ওহ্ আচ্ছা’।

‘হুম। এখন চল আর শোন সবাইকে সুন্দর করে সালাম দিস’।

‘ঠিক আছে’।

“তারপর আম্মু আমাকে সবার সামনে নিয়ে এলো। আমি আস্তে করে সবাইকে সালাম দিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম। একটু আঁড়চোখে সবার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আরাফ আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আমি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম”। হঠাৎ একজন মহিলা বলে উঠলো….

‘মাশাআল্লাহ মেয়ে আমাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এই মেয়েকেই আমি আমার বাড়ির বউ করবো। এরকম একটা মেয়েই তো আমার ছেলের জন্য খুঁজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। এখন পেয়ে গেছি, আমার ছোট বউমাকে বাড়ি নিয়ে গেলে আমার দুই বউমা মিলে সংসারের হাল ধরবে আর আমি বিশ্রাম নিবো’।

‘পাশ থেকে এক ভদ্রলোক বলে উঠলো, তোমার বিশ্রাম নেই। তুমি আর দুই বউমা মিলেই পুরো সংসার সামলাবে’।

‘আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ থাক। নাতাশা মা তুমি আমার কাছে এসো তো’।

‘আমি আস্তে করে উঠে গিয়ে উনার পাশে বসলাম’। উনি উনার গলা থেকে স্বর্ণের চেইন খুলে আমার গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললেন, আজ থেকে আমার ছেলের সব দায়িত্ব তোমার। আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো মা। পারবে না?

‘আমি আস্তে করে বললাম, পারবো আন্টি’।

‘আন্টি! আন্টি কি? না, না একদম আন্টি বলবে না। শুধু মা বলে ডাকবে কেমন’?

‘আমি মুচকি হেসে বললাম, আচ্ছা’।

“উনিও মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। হঠাৎ আরাফের বাবা বলে উঠলেন, ‘আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকলে আমরা আজকেই ওদের আকদ পড়িয়ে ফেলতে চাচ্ছি। আসলে আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের সম্পর্ক হালাল করে দিতে’। এতো ভালো পাত্র আমার আব্বুও হাতছাড়া করতে চান নি তাই সবাই আলোচনা করে সিন্ধান্ত নিলো আজকেই তারা আমাদের আকদ পড়িয়ে ফেলবে। আমার ভেতরে তো’ল’পা’ড় শুরু হয়ে গেলো। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ’টিকে আজকে একদম নিজের করে পাবো। আরাফের দিকে একটু আঁড়চোখে চোখে তাকিয়ে দেখি, আরাফ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সবার চোখের আড়ালে আমাকে একটা চোখ মা’র’লো। আমি রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম”।

“আমি এখন মেকাপের অ’ত্যা’চা’রে ম’রে যাচ্ছি। বিয়ের কথা হওয়ার সাথে সাথেই আম্মু আমার কিছু আত্নীয়দের ফোন দিয়ে আসছে বলেছেন। আমার বিয়ের কথা শুনে সব কাজিন’রাও চলে এসেছে। এখন ওরাই আমাকে জোড় করে বিয়ের জন্য সাজাচ্ছে। আমি মেকাপ করতে পছন্দ করি না কিন্তু ওরা কথাই শুনছে না। ওদের কথা নতুন বউকে মেকাপ ছাড়া মানায় না। তাই আর কি? চুপ করে বসে আছি। মেকাপ শেষ হতেই আরাফের দেওয়া শাড়ি’টা পড়ে নিলাম। শাড়ি, ভারি মেকাপ, কানে ঝুমকো, হাতে চুড়ি, খোলা চুলে নিজেকে অপূর্ব লাগছে। আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি না। আমার কাজিনরা বলছে ‘বাহ্ বাহ্ কি লাগছে রে তোকে? দুলাভাই দেখলে তো সেখানেই ফিদা হয়ে যাবে’। আর এদিকে এমন কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর বাহিরে থেকে ডাক পড়লে সবাই মিলে আমাকে নিয়ে গিয়ে আরাফের পাশে বসিয়ে দিলো। আমি একটু আঁড়চোখে চোখে তাকিয়ে দেখি আরাফ আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। আমি আবারও লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। এর মধ্যে সবাই কাজী সাহেবকে নিয়ে চলে এসেছে। কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। সবার সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। সবাই হাসি-আনন্দ করতে করতেই রাত ১১.৩০ বেজে গেছে। আমাকে সবাই নিয়ে গিয়ে রুমে বসিয়ে দিলো। আরাফের বাবা-মা’কে আজকে সবাই থাকার জন্য বলেছিলো। কিন্তু উনারা শুধু আরাফকে রেখে সবাই চলে গেছেন”।

“এখন আমি রুমে বসে আছি। আরাফকে এখনো ওরা ছাড়ে নি। আমি এখনো যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছি। সত্যি আমি আমার ভালোবাসার মানুষ’টিকে পেয়ে গেছি সেটা আমার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না”।

#চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here