#প্রণয়ের_আসক্তি
১০.
#WriterঃMousumi_Akter
চোখ মুখ মেঘের ন্যায় কালো করে দাঁড়িয়ে আছে মৃথিলা।মুনতাহার কথা গুলো তার শরীরের রক্ত চাঙ্গা করে তুলেছিলো।ছুটে এসছিলো নিরব কে তার অধিকারের কথা বলতে।মুনতাহার কথা গুলো মৃথিলার ভেতরের ঘুমন্ত ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।কিন্তু রুমে এসেই এমন কিছু শুনবে সে ভাবতেই পারে নি।মেধার সাথে কথা বলতে দেখে মৃথিলার মনে হলো তার অধিকার নিরবের প্রতি শুণ্য।মৃথিলা গুমট কালো মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো নিরবের দিকে।এখন ই কি এমন হওয়ার ছিলো।
নিরব ফোনটা কানে নিয়ে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে আছে।মৃথিলাকে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না।হঠাত করে কিছু বোঝানো ও সম্ভব নয়।নিজের ফোন ই ভেঙে ফেলতে মন চাইছে নিরবের।নিরব অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।এমনইতেই মৃথিলার মন নিরব কে মেনে নিচ্ছে না মেধার জন্য।মৃথিলার ধারণা নিরব মেধাকে ভুলে মৃথিলাকে ভালবাসতে পারবে না তার উপর এসে এই জঘন্য মিথ্যা কথা টায় শুনতে হলো মৃথিলাকে।এর পর কিভাবে মৃথিলাকে বোঝাবে নিরব।
মৃথিলার ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে।কিন্তু নিরবের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না।রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে গেলো মৃথিলা।ছাদে গিয়ে দুই হাঁটু ভাজ করে মাথা গুজে ভীষণ ভাবে কাঁদছে সে।আজ প্রথমবার মৃথিলার ভাল লাগে নি নিরবকে মেধার সাথে।বেশ কিছুক্ষণ কাঁন্নার পর চোখ মুখ ফুলে উঠেছে মৃথিলার।ছাদের নিচেই মেইন রোড গাড়ির রং বেরঙের আলো রাস্তার দুই সাইড দিয়ে যাচ্ছে আর আসছে।আনমনে মৃথিলা দেখছে বাইরের যান্ত্রিক শহরের কোলাহল।এত কোলাহলের মাঝে মৃথিলার নিজেকে একা লাগছে।কেনো কেউ কোনদিন তাকে ভীষণ ভালবাসলো না।প্রতিটি সম্পর্কের মানুষ তাকে নিয়ে অভিনয় করেছে।নিজের মা ই তাকে ভীষণভাবে ভালবাসে নি বাইরের মানুষ কিভাবে ভালবাসবে।
আকাশে চাঁদ ও উঠেছে গোলাকার চাঁদ।চাঁদের নরম আলোতে ছাঁদ বাগানের সব ফল আর ফুলের গাছ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট ।দূর থেকে সাইতন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ভেষে আসছে।
‘এরই মাঝে মুনতাহা প্রবেশ করে ছাদে।মৃথিলাকে বলে ভাবি ভাই এর সাথে কি কিছু নিয়ে ঝগড়া হয়েছে।’
‘মৃথিলা স্পষ্ট উত্তর দিলো কই নাতো?’
‘তাহলে ভাই এমন পাগলের মতো খুজছে কেনো আপনাকে?ভাই ভেবেছে রাগ করে আপনি কোথাও চলে গিয়েছেন।আপনাকে কোথাও না পেয়ে কাঁচের গ্লাস খুব জোরে চাপ দিয়ে ভেঙে হাত বিশ্রি ভাবে কেটে নিয়েছে।’
‘আমাকে এত খুজছেন কেনো উনি?.’
‘আমি তো বললাম ভাই আমি ছাদ দেখে আসি। ভাই বললো মৃথিলা ছাদ চিনে না।ভাই আসলেই আপনাকে ভীষণ ভালবাসে।কত চিন্তিত সামান্য সময় আপনি চোখের সামনে নেই তাই।’
‘কিভাবে বুঝলেন।’
‘দুপুরে দেখলাম নিজে ঘেমে যাচ্ছে কিন্তু আপনাকে বাতাস করছে।বোঝা যায় ভাবি বোঝা যায়।টেনশনে পাগল হবার আগে আমি বলে আসি ভাই ভাবি ছাদে আছে।’
‘মুনতাহা যাবার দুই মিনিট পরে নিরব ছাদে প্রবেশ করলো।ছাঁদের মিষ্টি আলোতে স্পষ্ট নিরবের মুখ।নিরব এগিয়ে আসতেই মৃথিলা উঠে দাঁড়ালো।’
‘নিরব খানিক টা নিঃশ্বাস টেনে বললো,তুমি এখানে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম খুব।’
‘মৃথিলা চুপ হয়ে আছে।’
‘ছাদে আসবে আমাকে নিয়ে আসবে না। আমিও ছাদ দেখতাম কেমন এদের ছাদ।’
‘মৃথিলা তবুও চুপ আছে।’
‘নিরব এগিয়ে এসে মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে বলে কথা যখন বলছো না তাহলে হাগ করি। চুপ করে বোবার মতো বুকের সাথে লেপ্টে থাকো।’
‘মৃথিলা সরে যায় জড়িয়ে ধরতে গেলে।’
‘কি হলো সরে গেলে কেনো?আমি তো কথা বলতে বলছি না শুধু জড়িয়ে ধরছি।বলেই নিরব আবার ও জড়িয়ে ধরতে যায়।’
‘মৃথিলা আবার ও সরে যায়।’
‘নিরব মৃথিলার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে নিজের কাছে এক টানে নিয়ে আসে।আমার শক্ত হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবে তুমি।বৃথা চেষ্টা করছো কেনো?চুপ করে আছো ভালো কথা জড়িয়ে ধরতে গেলে আপত্তি করছো কেনো?’
‘মৃথিলা কোনো কথা না বলে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘নিরব ভ্রু কুচকে বললো রাগ করেছো?রাগ করেছো বুঝলাম জড়িয়ে ধরলে সমস্যা কি?কোনো লেখক কি লিখেছে রাগের সাথে জড়িয়ে ধরার সম্পর্ক আছে।না মানে রাগ করলে আর জড়িয়ে ধরা যাবে না।’
‘মৃথিলা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে কোনো কথা নেই মুখে।’
‘আচ্ছা তুমি রাগ করেছো কেনো সেটাই তো বুঝছি না।আমার সাথে বা কি নিয়ে রাগ করবে।আমি তো আর তোমার বয়ফ্রেন্ড না তোমার আপুর বয়ফ্রেন্ড। রাগ করলে সে রাগ করুক।আমি তো তোমার কিছুই না। যে কিছুই হয় না এমন আজাইরা মানুষের সাথে কি নিয়ে রাগ করলেন।’
‘আপনি যখন কিছু হন না আমার হাত ধরেছেন কেনো?যান গিয়ে আপুর হাত ধরেন।’
‘নিরব এবার হাফ ছেড়ে বাঁচলো।জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক অবশেষে মুখ খুলেছে।তোমার আপুর হাত ধরলে তো তুমি রাগ করবে।’
‘আমি কি কখনো আপুকে নিয়ে কিছু বলেছি, জোর করেছি কিছু নিয়ে তাহলে আমাকে এভাবে মনে করানোর মানে টা কি আপু আপনার ভালবাসা।’
‘নিরব কপাল কুচকে মৃথিলার মুখের বদনখানি খেয়াল করছে।অদ্ভুত পরিবর্তন।নিরবের প্রতি এক রাশ ভীষণ অভিমান, সেই সাথে রাগ আর রাগের সাথে মিশে আছে জেলাসি।সব মিলে নিরবের কাছে বিষয় টা ভীষণ চমৎকার আর আনন্দের লাগছে।নিরব ঠিক এমন টায় চায়।মৃথিলা তার প্রতি তীব্র অভিমান করুক আর সে অভিমানের দেওয়াল ভাঙ্গার চেষ্টার করুক।মৃথিলা ভীষণ জেলাস ফিল করুক অন্য কেউ নিরবের পাশে আসলে।এই জেলাস ফিল ই তো প্রকাশ পাবে মৃথিলার নিরবের প্রতি ভালবাসা।অতি আনন্দে নিরব ভীষণ এক্সসাইটেড।আর একটু গভীরে যাওয়ার জন্য নিরব আবার ও প্রশ্ন করলো মৃথিলাকে!
কিছু না বললেও চোখে মুখে রাগ বিরক্তি অভিমান দেখা যাচ্ছে হুয়াই মৃথিলা।দ্যাটস মিন ইউ লাভ মি রাইট।কথাটা বলেই নিরব ভ্রু যুগল কুচকে তাকালো ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে মৃথিলার দিকে।’
‘আমার বয়েই গিয়েছে আমি আপনাকে ভালবাসবো।কেনো ভালবাসতে যাবো আমি আপনাকে।আমি এসব ভালবাসা বুঝি না।’
‘মিথ্যা তো ঠিক ঠাক গুছিয়ে বলতে পারো না।অন্য কেউ মিথ্যা বললেও সেটাও বুঝতে পারো না।’
‘আমি কোনো মিথ্যা বলছি না।আমি কেনো মিথ্যা বলতে যাবো। মিথ্যা বলে লাভ টা কি আমার।’
‘তার মানে আমাকে ভালবাসো না। তাকাও আমার দিকে। চোখ তুলে তাকাও।মিথ্যা যখন বলছো না, আমাকে যখন ভালবাসো না তাহলে তোমার শরীর কাঁপছে কেনো?ঠোঁট কাঁপছে কাঁন্না পাওয়ার জন্য।নিজেকে সামলাতে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছো।কলঙ্কীনী চাঁদের শুভ্র আলোতে মুখের অদলে ভীষণ বদলের আভা ফুটে আছে।চোখের কোয়া ফুলে উঠেছে, সেই সাথে চোখ রক্ত জবার মতো হয়ে আছে।এগুলো কি মানে?’
‘কোনো মানে নেই আমার বাড়ির জন্য খারাপ লাগছে?’
‘বাট আমার তোমার জন্য খারাপ লাগছে?ক্লিয়ার করে বলে দাও তুমি আমায় ভালবাসো।’
‘মৃথিলা নিরবের হাতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো কেনো বলতে যাবো আমি আপনাকে ভালবাসি।আপনি তো ফোনে আপনার এক্স এর সাথে কথা বলেন।বলেই ছাদ থেকে দৌড় দিলো মৃথিলা।’
‘হাতে ধাক্কা দিতেই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো নিরব।আচমকা মৃথিলা বলে ডাক দিলো নিরব।’
‘নিরব কে কোকাতে শুনে মৃথিলা পেছন থেকে ঘুরে তাকিয়ে নিরবের কাছে ছুটে এলো।এলো মেলো চুলে কাঁন্না ভেজা চোখের এক তরুনির এক তরূনের ডাকে বজ্রের ন্যায় ছুটে আসা।দৃশ্য টা ছবির ন্যায় অপূর্ব সুন্দর। নিরব এর হাত গড়িয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে ছাদে পড়েছে।মৃথিলা নিরবের হাত দুই হাতের মুঠোয় ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো।এবার বোধহয় কাঁন্নার বিশাল সুযোগ পেয়ে ছাত ছাড়া করলো না মৃথিলা।নিরবের হাতে মাথা নিচু করে কপাল ঠেকিয়ে ভীষণ আবেগের সাথে কাঁদছে।অস্পষ্ট কন্ঠে বললো, কি হয়েছে আপনার হাতে এত র -র-রক্ত কেনো?আপনার খুব ব্যাথা লেগেছে তাইনা?সাথে সাথে মনে পড়লো মুনতাহার বলা কথা।নিরব গ্লাস ভেঙে হাত কেটেছে।’
‘নিরব বললো এটা কিছুই না।এর জন্য এভাবে কাঁদছো কেনো মিথু?আমার জন্য তোমার চোখে পানি আসে। ‘
‘আপনার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারি নাহ।আমার ভীষণ কষ্ট হয়।’
‘এর পরেও প্লিজ বলো না আমাকে ভালবাসো না।আমি কি তখন বলেছি তোমার আপু আমার ভালবাসা।বলেছি আমার গার্লফ্রেন্ড।তুমি সেটাকে ভালবাসা ভাবলে কেনো?যেটা বুঝায় সেটা বুঝো না।কিন্তু যেটা বুঝাতে চাইনা সেটা ঠিক ই ভুল বুঝে যাও।আমি জাস্ট এটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম ইউ লাভ মি অর নট।’
নিরবের হাতের ব্যাথার কোনো অনুভব নেই।নিরবের খেয়াল মৃথিলার মুখে কখন শুনবে ভালবাসি।হাতের ভীষণ ব্যাথা নিয়েও মৃথিলাকে কোলে তুলে নিলো নিরব।এবার আর মৃথিলা না করতে পারলো না।নিরবের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।মৃথিলাকে নিয়ে ঘরে যাওয়ার পর নিরব বললো এবার আমার হাত বেঁধে দাও।নতুন জায়গা এক্সট্রা কাপড় না পেয়ে নিজের একটা ওড়না থেকে খানিক টা ছিড়ে নিরবের হাত বেঁধে দিতে দিতে বললো এভাবে গ্লাস ভাঙলেন কেনো?চলুন ডাক্তারের কাছে যদি আপনার হাতের কিছু হয়।নিরব হেসে বললো কিছুই হবে না। মৃথিলা বললো রক্ত বেরিয়েছে তো অনেক খানিক।
নিরব প্রশ্ন ছুড়ে বললো চোখের পানির থেকে কি রক্তের মূল্য বেশী মৃথিলা।আমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হলে তো তোমাকে আগে নিতে হবে।আমার চোট টা সামান্য।আর তোমার চোট টা হৃদয় ক্ষরনের।
চলবে,,,
(