প্রণয়ের রং,পর্ব:৫

প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৫

বাসায় এসেই রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। মেঝেতে বসে বসে কাঁদছে আর খুব করে বকেও দিচ্ছে শুভ্রকে…

___” আপনি আস্ত একটা গন্ডার। আমার সাথেই কেন এমন করেন আপনি? ”

এর মাঝেই নিতু আর মেধা আসে ওর বাসায়। অনেক ডেকে তবেই দরজা খুললো নিমিতা।

___” তুই ঠিক আছিস বান্ধবী?”
জিজ্ঞেস করলো মেধা।

___” কি করে ঠিক থাকবো? তোরা দেখলি না লোকটা কি করলো.. সবার সামনে থেকে কেমন করে টেনে আনলো আমায়..”
বলেই আবার কাঁদতে লাগলো।

___” হ্যা রে দোস্ত। আমরাও ভাবিনি শুভ্র ভাই ওই জন্যে ওভাবে রিয়্যাক্ট করবে.. ”
মুখ ঝুলিয়ে চিন্তা চিন্তা ভাব করে বললো নিতু..

নিমিতা এবার কান্না থামিয়ে নিতুর দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো__

___” ওই জন্যে মানে? কি জন্যে?”

___” তুই টের পাস নি?”
বিশাল একটা হা করে জিজ্ঞেস করলো মেধা।

___” তুই যখন গান গাইছিলি তখন বাতাসে তোর শাড়ির আঁচল অনেকটা সরে গিয়েছিল। তোর পেটের বেশ খানিকটা দেখা যাচ্ছিল। ওই জন্যেই হয়তো বা…..”
এক নিঃশ্বাসে বলেই থামলো নিতু।

এবার নিমিতার মুখ হা হয়ে গেল। বন্ধই হচ্ছে না যেন।

___” এই কারণে উনি এতো রেগে গেলেন? ”

নিমিতার কেন যেন খুব খুশি খুশি লাগছে এবার। এমন দুর্ঘটনার জন্যে খারাপ লাগছেই। তবে শুভ্র যে এতে রেগে গিয়ে এমন করলো তার জন্যে খুশিটাই বেশি লাগছে ওর।
আনমনেই মুচকি মুচকি হাসছে সে।

ওর হাসি দেখে নিতু আর মেধা মুখ চাওয়া – চাওয়ি করছে। মেধা জিজ্ঞেস করেই ফেললো__

___” ওই ছেমড়ি..এক্ষুণি তো কাঁদছিলি হিচকি তুলে.. এখন হাসছিস যে?”

নিমিতা চুপ করে তবু হেসেই যাচ্ছে…

মেধা এবার লাফিয়ে নিমিতার গা ঘেসে বসলো। হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো —

___ “ওওও…. শুভ্র ভাই যে এত কেয়ার করে তোর এটা জেনেই বুঝি এমন খুশি হচ্ছিস… ”

___” না না.. খুশি কেন হবো? ঐ লোকটা কি বাজে ব্যবহার করলো আমার সাথে। রাগ হচ্ছে খুব। ”
কোনোমতে নিজেকে শক্ত করে বললো সে।

___” না না.. হালকা হালকা আভাস পাচ্ছি। বসন্ত মনে হয় চলেই এলো রে নিতু। ”

বলেই হাসিতে লুটিয়ে পড়লো মেধা।

একটানা তিনদিন ভার্সিটিতে যায় নি নিমিতা। ইচ্ছে করেই যায়নি সে। শুভ্রের প্রতি হালকা অভিমানেই হয়তো…

আজ ভার্সিটিতে এসেছে নিমিতা। ক্লাস শেষে রুম থেকে বের হতেই দেখলো শুভ্র দাড়িয়ে।

তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিচ্ছিল সে।
তখনই..

___” নিমপাতা..” বলে ডাকলো শুভ্র।

নিমিতা ডাক শুনে থামলো। কিন্তু পেছন না ফিরে আবার হাঁটা ধরলো সে।

শুভ্র এবার পথ আগলে দাড়ালো।

___” ডাকছি যে শুনতে পাও নি? ”

নিমিতা মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। কিচ্ছু বলছে না সে।

___” রাগ করেছো নিমপাতা? তুমি জানো সেদিন কেন এমন করেছি?”

___” জানি। আমাকে একবার বললেই পারতেন। সবার সামনে ওমন করে টেনে আনার কি খুব দরকার ছিল?”

রাগে শুভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। হাত মুঠো করে শুনে যাচ্ছে শুধু।

___” ভাইয়া আপনি আমার সিনিয়র.. ফ্রেন্ড নন.. আমার হাত ধরার অধিকার আপনার নেই.. ”

____ ” অধিকার দেখানো এখনো শুরু করিনি নিমপাতা..”

___” আমায় যেতে দিন। আমার তাড়া আছে..”

কথাগুলো বলে চলে আসবে হঠাৎ পা মুচড়ে পরে যেতে নেয় নিমিতা। অমনি শুভ্র ওর কোমড় জরিয়ে ধরে ফেলে ওকে।

দূরে কেউ একজন ঈর্ষার আগুনে জলছিল তা দেখে। লুকিয়ে ছবি তুলে নেয় সে। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে যায় ওখান থেকে।

…………….

নিমিতা ঘুম থেকে উঠেইনি এখনো। নিতু ধরফর করে ওর রুমে ঢুকে পরলো।

এসে দেখে নিমিতা এলোমেলো হয়ে সুয়ে আছে। ওর চুল পুরো বিছানায় ছড়িয়ে আছে। প্যালাজো হাঁটুর উপরে উঠে আছে। টি-শার্ট উপরে উঠে পেট বেরিয়ে আছে।

___” আমি মরি টেনশনে। আর এই ছেরি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। নিম্মি ওঠ। উঠেক রে দোস্ত।”
বলে জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলো।

নিমিতা একেবারে হুরমুর করে উঠে বসলো। সক্কাল সক্কাল নিতুকে দেখে ভীষণ অবাক সে।

___” তুই!! কয়টা বাজে? কখন এলি?”

___” ঘড়ি দেখে আর কাজ নাই। জীবনের বারো টা অলরেডি বেজেই গেছে..”

দাঁত পিষে পিষে উত্তর দিল সে।

___” কি বলিস!!! ১২ টা বাজে? এতো বেলা করে ঘুমিয়েছি!! আম্মু ডাকে নি কেন? আমার ফোন কই?”

এক নিঃশ্বাসে সব বলে নিমিতা জলদি জলদি ফোন খুঁজতে লাগলো।

___” উফফ.. চুপ যা। এই ১২ সেই ১২ না। ”

___” কি বলতেছোস? বুঝায়ে ক ”

___” এই দেখ এটা কি.. ”

নিমিতার সামনে ওর ফোন বের করে ধরলো সে।

ফেসবুকের একটা পোস্ট.. কারও ছবি সহ। ছবির মানুষ দুটোকে খুব চেনা চেনা লাগছে তার। কোথায় যেন দেখেছে..

ভালো করে ছবিটা দেখে আর পোস্ট পরে তার মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখে ঝাপসা দেখছে যেন..

চলবে..
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here