#প্রণয়ের_পরিণতি
#অন্তিম_পর্ব
#Writer_Sadia_afrin_nishi
অবাক চোখে চেয়ে আছে তনিমা। কী করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সবকিছু কেমন জানি মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে তার। তার সামনে কাব্য এটা তার বিশ্বাসই হচ্ছে না………….
ফ্ল্যাশব্যাক___
প্রিন্স তনিমাকে সুন্দর একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে রেস্টুরেন্টটা পুরোই ফাঁকা আর খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা।দেখে মনে হচ্ছে এটা প্রি-প্ল্যানিং করা।তনিমা ঘুরে ঘুরে ডেকোরেশন দেখছিল।এমন সময় প্রিন্স একগুচ্ছ গোলাপ হাতে তনিমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপগুলো তনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যায়।কিন্তু প্রিন্স কিছু বলার আগেই অন্য কেউ এসে ফুলগুলো টেনে নিয়ে তনিমাকে আই লাভ ইউ বলে দেয়। এমন ঘটনায় সামনের লোকটিকে দেখে তনিমা পুরো অবাক।এই লোক নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে নয়তো তনিমাকে কেন আই লাভ ইউ বলছে এসবই ভাবছে তনিমা।
প্রিন্স__এই আপনি কে বলুন তো? আর এসব কী বলছেন?
কাব্য__আমি তনিমার উডবি হাসবেন্ড
তনিমা প্রিন্স দুজনেই অবাক
প্রিন্স__তনু কী বলছে এই লোক, তুই আমাকে আগে কেন কিছু বলিস নি?
তনিমা__আরে আমি নিজেই তো কেবল জানলাম
প্রিন্স__মানে
কাব্য __মানে আমরা এখন নিজেদের মতো টাইম স্পেন্ড করতে চাই। আপনি এখন আসতে পারেন
প্রিন্স অপমানিত হয়ে চলে গেল।
তনিমা__এসব কী বললেন আপনি?পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি?
কাব্য__চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসো। বেশি কথা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু
তনিমা বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে চেপে বসে এই লোককে দিয়ে বিশ্বাস নেই কখন কী করে বসে।
________
ভোরের স্নিগ্ধ আলো চোখে পড়তেই চোখ মেলে তাকালো তনয়া।পাশেই রিশান ঘুমিয়ে আছে। কাল রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে তনয়া।মানুষের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কখন যে কার জীবনে কেমন পরিবর্তন ঘটে কেউ বলতে পারে না। তনয়া এখন বুঝতে পেরেছে সব বড়লোক সমান হয় না। তনয়ার বাবা আর রিশানের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তনয়ার মা গরিব ছিল তাই তনয়ার বাবা তার মাকে পছন্দ করত না। তনয়ার দাদার পছন্দ তাদের বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তনয়ার দাদা মারা যাওয়ার পরই তনয়ার মাকে তনয়ার বাবা ডিভোর্স দেয়।তনয়ার তখন দশ বছর। তনিমা তৃপ্তি ছিল তখন খুবই ছোটো তাই ওদের কিছুই মনে নেই।তনয়া অবশ্য এসব কিছু ওদের বলতেও চায় না। ওদের কাছে ওদের বাবা মৃত্যু হয়েই থাকুক আজীবন।হাসান কোম্পানির এমডিই হলো ওদের বাবা। কিন্তু রিশান আর তার পরিবার একেবারেই ভিন্ন। সেদিনের পর প্রিসাকে আর দেখা যায়নি।প্রিসা জেদি হলেও অতটাও খারাপ না। রিশানকে সে ভালোবেসেছে। সেই ভালোবাসার মর্যাদাও সে দিতে জানে। তাই সে তার দেশে ফিরে গেছে। জোর করে ভালোবাসা হয়না। ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।
_________
আজ তৃপ্তি দেশে ফিরছে। সবার মনে আজ খুবই আনন্দ আবার চিন্তাও হচ্ছে। তৃপ্তি তো দেশে ফিরেই মা কে দেখতে চাইবে তখন কী হবে। এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। তৃপ্তির ফিরলেই কাব্য তনিমার বিয়েটাও দিয়ে দিবে।সেদিন কাব্য সোজাসুজি তনয়াকে গিয়ে বলে যে সে তনিমাকে বিয়ে করতে চায়।সবাই এই প্রস্তাবে খুবই খুশি হয় শুধু তনিমা ছাড়া। কিন্তু কাব্যের সাথে না পেরে আবার মত দিতে বাধ্য হয় আর মনে মনে কাব্যকে হাজারটা গালি দেয়। কাব্যর বাড়ির সবাই ও তনিমাকে খুব পছন্দ করে। কণা তো সেই খুশি তনিমা ওর ভাবি হবে।
_________
এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে সবাই। দু পরিবারের সবাই এসেছে শুধু রিশি বাদে। তার অতো ক্ষমতা নেই। এতো বছর পর তৃপ্তির সাথে দেখা হবে ভেবে তার আত্মা কাঁপছে। রিশি চলে গেল সেই নদীর পাড়ে।যেখানে তাদের সুখ দুঃখের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
তৃপ্তি ফিরে এসে আগে তনয়াকে জড়িয়ে ধরল।অনেকক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখল।তনয়ার কাছে মনে হচ্ছে সে তার হারানো ধন ফিরে পেয়েছে। তনিমাও এসে বোনকে বুকে জড়িয়ে নিলো।তারপর একএক করে সবার সাথে পরিচয় হলো তৃপ্তির। কিন্তু তনয়ার বিয়ে হয়েছে আর তৃপ্তি জানেনা এটা শুনে তৃপ্তি অনেক রেগে গেল।রাগ করে একাই কোথাও একটা চলে গেল কেউ তাকে আটকাতে পারল না।
সবাই রিশানদের বাড়িতে গেল।আজ এখানে থেকেই সবাই কাব্য তনিমার বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে।তনয়ার একটু চিন্তা হচ্ছে বোনটা রাগ করে চলে গেল তাই। রিশান ওকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল যে,তৃপ্তি ঠিক রাগ কমলে চলে আসবে নয়তো রিশান গিয়ে নিয়ে আসবে।
________
এই নদীটা বড্ড পরিচিত তৃপ্তির। অনেক বছর পর আবার সেই জায়গায় এলো।অনেক পুরোনো স্মৃতি মনে পরছে তৃপ্তির। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে খুব পরিচিত একটা কন্ঠ শুনে ঘোর কাটল তৃপ্তির……
রিশি__কেমন আছো
তৃপ্তি__ভালো
রিশি__ভুলে গেছো
তৃপ্তি __চোখের আড়াল করলেই কী মনের আড়াল করা যায়
রিশি__এভাবে কেন গেলে
তৃপ্তি __কার জন্য থাকতাম
রিশি__সেদিনের সবটা ছিল সাজানো নিল,নিশা আর সামিরের প্ল্যান
তৃপ্তি __মানে (অবাক হয়ে)
রিশি সবটা খুলে বলল তৃপ্তিকে।সবটা শুনে তৃপ্তি নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হলো।শুধু শুধু ভুল বুঝে এতো কষ্ট পেয়েছে এতোদিন সাথে রিশিকেও রেখেছে।
তৃপ্তি __আই’ম সরি।আমার সবটা শোনা উচিত ছিল। প্লিজ ক্ষমা করে দেও।তোমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়াটা উচিত হয়নি(জড়িয়ে ধরে)
রিশি__হুম তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছো এটাই অনেক(জড়িয়ে ধরে)
রিশি__এবার চলো বাড়ি যাই আমাদের বিয়ের কথা টা বলতে হবে তো নাকি?
তৃপ্তি__এই এসব কী বলছো হ্যাঁ
রিশি__তো কী বলবো?এই শুনো অনেক বছর দুরে থেকেছি আর পারবো না।। আজই আমি সবাইকে বলে দিবো।
এই বলে তৃপ্তিকে টেনে নিয়ে গেল।
_______
তৃপ্তি আর রিশিকে একসাথে বাড়িতে ঢুকতে দেখে সবাই অবাক।তারচেয়েও বেশি অবাক রিশির ব্যবহারে আগের মতো সেই চাঞ্চল্যতা দেখে।এ যেই সেই আগের রিশি।
রিশি_দাদা গো তোমার হাত ধরিয়া কই
এবার বিয়া না করাইলে দেশে থাকবার নই
(রিশানের হাত ধরে)
সবাই তো হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর তৃপ্তির তো মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে লজ্জায়।
এদিকে রিশির এমন ব্যবহারে সবাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে একসঙ্গে হেসে দিলো।
রিশান __তো পাত্রীটা কে
রিশি তৃপ্তিকে দেখিয়ে দেয়…..
রিশান __কীভাবে কী
রিশি তারপর সবাইকে সবটা খুলে বলল…..
সবাই তো সেই খুশি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তনিমা আর তৃপ্তির বিয়েটা একসাথে হবে।
বিকেলে তৃপ্তি তনয়াকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করল। তনয়া অনেক কষ্টে বোনকে সবটা বুঝিয়ে বলল।তৃপ্তি তো যেন পাথর হয়ে গেছে এসব শুনে। তারপর তনয়া রিশিকে ডেকে দিয়ে চলে যায়। রিশিই সবটা বুঝিয়ে শুনিয়ে তৃপ্তিকো ম্যানেজ করে।
_______
বিয়ে বাড়ি চারিদিকে খুশির আমেজ।সারাদিন হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে কেটে গেল দিনটি।সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হলো বিয়ের কাজ।সবার মনে আজ আনন্দ। তনিমাকে নিয়ে গেল কাব্যদের বাড়ি।তনিমা রাগ করে চলে গেল দুবোন একসাথে থাকবে আর ওকে পর করে দিল এজন্য।তনিমা তো রিশানের মাকে বলেই দিল আন্টি আর একটা প্রোডাকশন দিতে পারলেন না তাহলে আমিও এখানে থেকে যেতাম।সবাই তো ওর কথায় হাসতে হাসতে শেষ। প্রিন্স ও সেদিন রাতেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। যার জন্য এসেছিল তাকেই যখন পাবে না তাহলে এখানে থেকে কী করবে।তাই বাবা মায়ের কাছে চলে গেছে।
________
তনয়া__ভাবছি একটা কথা বলবো কিন্তু বলতে পারছি না
রিশান __আরে বলে ফেলো
তনয়া__নাহহহ লিখে দেই
রিশান __আচ্ছা
তনয়া কিছু একটা লিখে দিল
রিশান__সত্যি আই কান্ট বিলিভ দিস(তনয়াকে জড়িয়ে ধরে)
তনয়া__হুম (লজ্জা পেয়ে)
রিশান __আজ আমার খুবই খুশির দিন। চলো ছাদে যাই।
এই বলে তনয়াকে কোলে করে নিয়ে গেল ছাঁদে।ছাঁদে গিয়ে দেখল রিশি আর তৃপ্তিও ছাঁদে।
রিশান __তোরাও এখানে ভালোই হয়েছে। তোদের জন্য একটা গুড নিউজ আছে
রিশি__কী নিউজ
রিশান __তুই বাবা থুড়ি চাচ্চু হতে যাচ্ছিস
রিশি তৃপ্তি দুজনেই খুশিতে লাফিয়ে উঠে তনয়াকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
তারপর রিশান সবাইকে ডেকে নিয়ে সব পায়রা গুলোকে মুক্ত করে দেয়।আজ তাদের জীবনে প্রকৃত সুখ এসেছে তাই সব পায়রারা আজ মুক্ত হবে।
কাব্য বাসর ঘরে ঢুকে তনিমাকে সব জায়গায় খুঁজছে কিন্তু তনিমা কোথাও নেই।
লে তনিমা টেবিলের তলায় লুকিয়ে বসে__সারা রাত খুজলেও পাবি না ব্যাটা নিমফল। আমাকে বিয়ে করা তাই না। এবার তোকে বোঝাব মজা।
তনিমাকে না পেয়ে কাব্য সারারাত বেলকনিতে বসেই কাটিয়ে দিল।ও ভালোভাবেই জানে এই মেয়ে শুধরাইবার না।তনিমাও লুকিয়ে থাকতে থাকতে টেবিলের তলেই ঘুমিয়ে পরে।
_______
চার বছর পর আজ আবার বিয়ে লেগেছে আহমেদ বাড়িতে। কণার সাথে বিশিষ্ঠ শিল্প প্রতির একমাত্র ছেলে সাইফ খানের বিয়ে। তনয়ার একটা ছেলে হয়েছে।নাম তার রিদওয়ান চৌধুরী সবাই আদর করে রিদ বলে ডাকে।তনিমার ুকটা মেয়ে হয়েছে তার নাম কানন।তৃপ্তি এই ছমাসের প্রেগন্যান্ট। সবাই খুব সুখে আছে। কারোও জীবনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই।
সবার জীবনে #প্রণয়ের_পরিণতি-তে সুখের ছোঁয়া লেগেছে
সমাপ্তি….
(এই গল্পটা আমার প্রথম গল্প তাই অনেক ভুল আছে গল্পে।এজন্য গল্পটা বেশি দুর নিলাম না। সংক্ষেপে শেষ করে দিলাম। তবে গল্পটা ডিলিট করবো না। প্রথম গল্প অন্যরকম ভালোবাসা আছে এটার প্রতি।নিউ গল্প খুব শীঘ্রই লিখবো।আর অনেক মনোযোগ দিয়ে লিখব।ইনশাআল্লাহ এবার থেকে নিয়মিত গল্প দিবো।সবাই পাশে থাকবেন আশা করছি)
খুব ভালো হয়েছে বিশ্বাস কর 😍অনেক ভালো লেগেছে 💕🤩আমার সামনে এগিয়ে যাও আমরা পাশে আছি 😍