#প্রণয়ের_পরিণতি
#পর্ব_৪
#লেখিকা_সাদিয়া_আফরিন_নিশি
হাতের ফাইলগুলো জমা দিয়ে ভয়ার্ত মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তনয়া।তার সামনে চেয়ারে বসে ফাইলগুলো চেক করছে রিশান।
তনয়ার খুব চিন্তা হচ্ছে না জানি ফাইলগুলো দেখে রিশান কী বলে।
রিশান ফাইলগুলো চেক করে তনয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
রিশান:হুম মিস তনয়া আপনার কাজ তো দেখছি বেশ পরিপাটি। আই লাইক ইট।এভাবেই কাজ করে যান।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে রিশানকে ধন্যবাদ জানালো তার কাজের প্রশংসা করার জন্য।তারপর ফাইলগুলো নিয়ে চলে গেল তনয়া।
এদিকে রিশানের পাশে দাড়িয়ে ইমা রাগে ফুসতে লাগলো।সে ভেবেছিল এই সুযোগে নতুন এমডিকে দিয়ে তনয়াকে কিছু কথা শুনাবে।কিন্তু তাতো আর হলো না।
এরই মধ্যে রিশান ইমাকে ডেকে বললো মিস ইমা কাল আমাদের কোথায় কোথায় মিটিং আছে আমাকে নোট করে দিন।
ইমা:Yes sir,আমি এখনি দিচ্ছি।
ইমা মিটিং লিস্টটা রিশানের কাছে দিতেই সে পরদিনের সিডিউল তৈরী করে ফেললো।
আর ইমাকে বলে দিলো পরদিন কী কী করতে হবে আর কোথায় কোথায় যেতে হবে। আরও বললো পরদিন সকাল নয়টার আগে অফিসে ঢুকতে। এক মিনিট লেট হলে তাকে বরখাস্ত করা
হবে।
এটা বলে রিশান অফিস থেকে চলে গেল।
ইমা:ধুর কোথায় ভাবলাম ওই মিডেল ক্লাস মেয়েটাকে কথা শুনাবো তা না এখন নিজেই বেশি কথা শুনে বসে আছি😡
************
এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে তনিমা। উদ্দেশ্য বাড়ি যাবে।কাল তার নতুন অফিসে জয়েনিং সবকিছুর পুর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে
তাই কোথাও না গিয়ে সোজা বাসায় যাবে।না জানি কাল থেকে এই নিম ফল(কাব্য)ওর সাথে কী কী করবে।
এসব ভাবতে ভাবতে একটা রিকশা পেয়েও গেল তারপর সে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।
থাই গ্লাস সরিয়ে তিন তলার উপর দিয়ে এতোক্ষণ কাব্য তনিমাকে নজরে রাখছিল। তনিমার চিন্তিত মুখ দেখতে তার ভালোই লাগছিল। মনে এক আলাদা প্রশান্তি কাজ করছিলো।মনে হচ্ছিল তার ইজ্জত হননের কিছুটা প্রতিশোধ হয়তো নিতে পেরেছে সে।
*********
তৃপ্তি কলেজ ফাংশন শেষ করে নীতির সঙ্গে রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে এলো।নীতিদের বাসা তৃপ্তি দের বাসার থেকে বেশি দুর না। তাই দু’জনে একসাথে রিকশায় এলো তৃপ্তিদের বাসা পর্যন্ত তারপর ওখান থেকে বাকিটা রাস্তা নীতি হেটে হেঁটে চলে গেল।
সারা রাস্তা তৃপ্তির ওই অসভ্য ছেলেটাকে মনে পড়েছে। মনে হচ্ছিল ওই ছেলেটার চুল না ছিঁড়তে পারলে তৃপ্তির শান্তি নেই। কলেজেই এর একটা ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল তৃপ্তি কিন্তু তারপর থেকেই ছেলেটাকে আর একবারও চোখে পরে নি।তাই তো কিছু না বলে চলে আসতে হলো তাকে।
**********
বাড়িতে ফিরে তিন বোন খাওয়া দাওয়া শেষ করে সিদ্ধান্ত নিলো আজকে সন্ধ্যায় চিকেন পাকড়া বানাবে। আর এখন সবাই মিলে ⚀ লুডু খেলবে।
তিনজন মিলে ওদের মায়ের কাছে গেল।
মায়ের ঘরে,
তৃপ্তি:মা কী করছো
মা:এই তো বই পড়ছি (ওদের মা অবসর সময়ে নানারকম বই পড়েন। উনি একজন বই প্রেমী মানুষ)
তনিমা:মা চলো লুডু খেলি
মা:নাহ তোরা খেল আমার ভালো লাগছে না।
তনয়া:মা প্লিজ চলো সবাই একসাথে খেলবো।
মা:তুই ও শুরু করলি, আচ্ছা চল তাহলে সবাই।
সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত লুডু খেললো।তারপর চিকেন পাকড়া তৈরী করলো তনয়া আর তনিমা মিলে। তৃপ্তিকে তারা একদমই কোনো কাজে হাত দিতে দেয়না।
সবাই মিলে চিকেন পাকড়া খেয়ে তৃপ্তি গেল একটু পড়তে বসতে। নতুন কলেজ নতুন বই সবকিছুই নতুন তাই তার এক্সাইটমেন্ট একটু বেশি। এজন্য বই পড়তে চলে গেল। আর তনয়ার অফিসের কিছু কাজ আছে সেগুলো তৈরী করতে গেল।আর তনিমা গেল বিশ্রাম নিতে তার আবার কাল থেকে কাজ শুরু এজন্য আজকে বিশ্রাম করে নিচ্ছে।
*********
চৌধুরী মেনশন,
রাতে খাবার টেবিলে,
আতিক চৌধুরী, রেহানা চৌধুরী (রিশানের মা),রিশান সবাই উপস্থিত। সবাই রিশির জন্য ওয়েট করছে। কিন্তু তার কোনো খোঁজ নেই।
রিশান বিরক্ত হয়ে রিশিকে চেচিয়ে ডাকলো।ভাইয়ের ডাকে রিশি আর এক মুহুর্ত লেট করলো না। সে এতোক্ষণ ভুলেই গিয়েছিল দশটা বেজে গেছে।
রিশি:এই তো আমি এসে গেছি
রিশান:তোকে প্রতিদিন কেন ডাকতে হয় রিশি।তুই
তো জানিস দশটার সময় সবাই ডাইনিংয়ে থাকে।তাহলে তোকে কেন ডাকতে হয়?
রিশি:সরি ভাইয়া আর হবে না আমি আসলে খেয়াল করিনি।
রিশান:নেক্সট টাইম এমন যেন না হয়। মনে থাকে যেন
রিশি:ওকে ভাইয়া আর হবে না
আতিক চৌধুরী:তো রিশান নতুন অফিস কেমন চলছে। সবকিছু সামলাতে পারবে তো
রিশান:হ্যাঁ,বাবা সবকিছু ঠিকঠাক। সবাই খুব ভালো কাজ করে। এর মধ্যে মিস তনয়ার কাজ একদম পরিপাটি। আর মিস ইমা একটু ডিস্টার্ব। ইমার কাজ অতটা সন্তোষজনক নয়।
আতিক চৌধুরী:হুম তনয়া মেয়েটা যেমন কাজে ভালো তেমনি স্বভাব ও সুন্দর।
আর ইমা একদমই তনয়ার বিপরীত
রেহানা চৌধুরী:আরে তোমরা কী শুরু করলে বলো তো।বাড়িতে এসেও অফিস অফিস। ছেলেটা তো আমার কাজ কাজ করে এই বয়সেই বুড়ো হয়ে গেল।
রিশান:মা আমি এখনো বি স্ট্রং। আর তুমি আমাকে বুড়ো বলছো। দিস ইজ নট ফেয়ার, মা। আর এখন করবো না তো কাজ কখন করবো সত্যি সত্যি বুড়ো হলে?
রিশি:মা ভাইয়াকে একটা বিয়ে দিয়ে দেও। দেখবে বউ পেলে আর কাজ কাজ করবে না তখন শুধু বউ বউ করবে😁
রিশান:(রিশির কান টেনে ধরে) খুব পেঁকে গেছিস তাই না।
রিশি:আ্যাহহহহ ভাইয়া লাগছে তো ছাড়ো।
রিশান:এবারের মতো ছেড়ে দিলাম আর কখনো বললে তোর একদিন কী আমার একদিন।
রেহানা চৌধুরী:আরে আরে থাম থাম তোরা। বউ তো আমি অবশ্যই আনবো। সময় হলে দুই ভাইয়ের জন্যই বউ আনবো।আর মেয়ে আমার পছন্দ মতোই আনবো
রিশান:মা তুমিও আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবো না।আগে ভালো ভাবে নিজের পায়ে দাড়াই তারপর দেখা যাবে।
রিশি:মা আমার কিন্তু কোনো আপত্তি নেই। আমি কিন্তু এক পায়ে খাড়া বিয়ে করতে। একটা কেন তুমি চাইলে আমাকে দশটাও বিয়ে দিতে পারো।
কিন্তু আমি কোনো কাজ করতে পারবো নাহ। সবগুলো বউ বাবা খাওয়াবে।
রিশির কথা শুনে সবাই ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে পড়লো
রিশি তো ছোট্ট একটা ডোক গিললো সবার রিয়াকশন দেখে।
তারপর আমি কীছু এতটুকু বলতে বলতে দেখলো ওর মা চামুচ নিয়ে এগিয়ে আসছে। এটা দেখে রিশি এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো।
এদিকে খাবার টেবিলে হাসির রোল পড়ে গেল রিশির কান্ড দেখে।
***********
সকাল সকাল কলেজে পৌঁছে গেল নীতি আর তৃপ্তি। আজ ওরা একসাথে এসেছে।
ক্লাসে যাওয়ার সময় আজও তৃপ্তি ওই ছেলেটাকে দেখতে পেল।আজও ঠিক কালকের মতোই মেয়েদের গাঁ ঘেঁষে আছে। কালকের কথা মনে পড়তেই তৃপ্তি ওখানে চলে গেল ছেলেটিকে কিছু বলতে। ওর সাথে সাথে নীতিও এলো।
তৃপ্তি:এই আপনি আমাকে কালকে কী বলেছিলেন যেন? ও হ্যাঁ আমি দেখতে খুব হট।
আপনার এতো বড় সাহস হলো কী করে হ্যা আমাকে এসব কথা বলেন?
রিশি:Who are u??
তৃপ্তি:😳আমি কে মানে। কাল আমাকে ওসব বাজে কমেন্ট করে আজকে বলছেন আমি কে?
আচ্ছা বদমাশ ছেলে তো আপনি।
নিশা:এই মেয়ে তোমার সাহস কী করে হয় আমার রিশিকে এসব বলার।হট কাকে বলে জানো?
তোমাকে রিশি হট বলেছে। তোমার মতো একটা মিডেল ক্লাস মেয়েকে রিশি হট বলেছে এটাও এখন আমাদের মানতে হবে নাকি।যেখানে এতো সুন্দর ভাবে থেকেও রিশি কখনো গুড পর্যন্ত বললো না সেখানে তোমার এই গেটআপ দেখে রিশি তোমাকে হট বলেছে? সত্যিই জোকস করার একটা লিমিট আছে।
রিশিকে দেখে ক্রাশ খেয়েছো বললেই হয় তাতে এতো নাটকের কী আছে। যদিও রিশি শুধু আমার। ক্রাশ খেলেও কোনো লাভ নেই।
তৃপ্তি:এইযে শুনুন আমরা আপনাদের মতো বড় লোক না ঠিক আছে । কিন্তু আমাদের আত্নসম্মান আছে। যাকে তাকে দেখে আমরা ক্রাশ খাই না। আর এরকম দুঃস্বচরিত্র ছেলেকে দেখে ক্রাশ খাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।শুধু বাহিরে সুন্দর হলে হয় না মানুষের মনটাই আসল।যদিও আপনাদের মতো বড়লোকেরা সেটা বুঝবেন না। এজন্যই বড় লোকদের আমি ঘৃণা করি।
রিশি:হেই পিচ্চি তুমি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বললে।তোমার এতো সাহস।তা তোতাপাখির মতো ভালোই কথা জানো দেখছি।তোমাকে এই কথার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
তৃপ্তি:আমি কাউকে ভয় পাই না। আপনার যা খুশি করতে পারেন
নীতি আর তৃপ্তিকে ওখানে থাকতে দিলোনা।টেনে ক্লাসে নিয়ে গেল।
আর রিশি মনে মনে বলছে তোতাপাখি তোমাকে তো পড়ে দেখে নেবো।
চলবে,