প্রণয়ের_পরনতি পর্ব ৫

#প্রণয়ের_পরিণতি #লেখিকা_সাদিয়া_আফরিন_নিশি
#পর্ব_৫

সকাল সকাল তনিমা আল্লাহ এর নাম যবতে যবতে অফিসে এসে পৌঁছাল।তারপর নিজের কেবিন কোনটা ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো।
ম্যানেজার কাব্যের রুমের পাশের কেবিনটা তনিমাকে দেখিয়ে দিলো।কাব্যের রুমের যে পাশে তনিমার কেবিন সেপাশের দেওয়ালটা পুরোটাই থাই গ্লাসের তৈরী।আর সেখান থেকে স্পষ্ট দুজন দুজনকে দেখতে পারবে।আর তনিমার টেবিলে একটা কলিংবেল সিস্টেম করা।কাব্যের যখন দরকার হবে তখন তনিমাকে ওই বেল বাজিয়ে ডেকে নেবে।
তনিমা:হায় আল্লাহ, ওই নিম ফল তো দেখি আমাকে নজরে রাখার প্ল্যান করছে। এখন আমার কী হবে।
এরই মধ্যে তনিমার কেবিনের বেল বেজে উঠল। তারমানে কাব্য তাকে ডাকছে।সে আস্তে আস্তে কাব্যর কেবিনে ঢুকল।

কাব্য:এই মিস তনিমা। আজ থেকে আপনাকে আমার সব কথা মেনে চলতে হবে। নয়তো আপনার জন্য মোটেও সেটা ভালো হবে না।এখন থেকে আমি আপনার বস আর আপনি আমার পিএ।
তনিমা:আরে হ্যা হ্যা জানি জানি। আর বলতে হবে না আপনাকে।
কাব্য:হোয়াট ইজ দিস?এসব কী হ্যা।বলবেন ইয়েস স্যার।বোঝা গেল?
তনিমা :জী, ইয়েস স্যার
কাব্য :আচ্ছা এখন আপনি আপনার কেবিনে যান
ম্যানেজার আপনার কাজ বুঝিয়ে দেবে।
তনিমা :ইয়েস স্যার
কাব্য :মনে মনে,কাল থেকে বুঝবে তুমি মিস তনিমা😎

**********
ইমা ভয়ে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে। আর বার বার রিশানকে অনুরোধ করছে যাতে তার চাকরীটা না যায়।

রিশান:মিস ইমা আপনাকে তো কাল বলা হয়েছিল ন’টার আগে অফিসে পৌঁছতে। তবে কেন আপনার আসতে এতো লেট হলো?এখন ঘড়িতে কটা বাজে দেখেছেন পৌনে দশটা।
এখন কখন আমরা মিটিং নিয়ে ডিসকাস করবো আর কখনই বা মিটিংয়ে এটেন্ড করবো।আপনার জন্য আমাকে কতটা প্রবলেম ক্রিয়েট করতে হবে ভাবতে পারছেন আপনি।আপনাকে এখনি বরখাস্ত করা হবে।

ইমা:না না স্যার প্লিজ আমাকে বরখাস্ত করবেন না। আসলে জ্যামে আটকে গেছিলাম

রিশান:স্টপ দিস ননসেন্স। জ্যামে আটকে ছিলেন নাকি সাজগোজ করতে আটকে ছিলেন। লিসেন মিস ইমা এখানে কেউ আপনার সাজ দেখতে ইচ্ছুক নয় এখানে সবাই আপনার কাজ দেখতে ইচ্ছুক। আর আপনার জন্য আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে তাই আপনাকে বরখাস্ত করবোই।

ইমা:প্লিজ স্যার প্লিজ আর এমন হবে না (কেঁদে দিয়)

রিশান :আপনাকে রাখতে পারি তব আর পিএ এর পদে না আপনি এখন থেকে মিস তনয়ার পদে কাজ করবেন আর পিএ এর পদটা মিস তনয়া পাবে।

ইমা:এটা কী বলছেন স্যার।

রিশান:ইচ্ছে হলে করবেন নয়তো দরজা খোলা আছে এ্যাজ ইয়র উইস।
এই বলে রিশান চলে গেল।আর ইমা দাড়িয়ে দাড়িয়ে রাগে ফুসতে লাগলো।চাকরিটা তার প্রয়োজন আর এভাবে অপমানিত হয়ে চাকরি সে ছাড়বে না। এদের একটা ব্যবস্থা করে তারপর যাবে সে।

রিশান ম্যানেজার সাহেবকে ডেকে সবটা বুঝিয়ে দিলো।ম্যানেজার সেই মতো তনয়া আর ইমার পোস্ট অদলবদল করে দিলো।

তনয়ার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তাকে পিএ এর পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সে তো মহা খুশি।আবার একটু ভয়ও করছে রিশানের সাথে বেশির ভাগ কাজ থাকতে হবে তাই। তবুও সে খুশি।

এই আতিক সাহেব তনয়ার জীবনে ম্যাজিকের মতো। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে তাদের জীবনটা পাল্টে গেছে। সবকিছু ভালো হচ্ছে। তনিমার চাকরিটাও হয়ে গেছে। জীবনে অনেক কষ্ট করেছে তারা। মায়ের চাকরির টাকায় তিনজনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে অনেক সময় না খেয়েও কাটাতে হয়েছে।তবুও তারা পড়াশোনা ছাড়েনি শুধু এইদিনের অপেক্ষায়। অবশেষে তারা এবার সুখের মুখ দেখলো।

এতো কষ্টের মধ্যেও একজনের কথা মনে পরত তনয়ার। তাদের এ কষ্টের জন্য সে শুধু তাকেই দায়ী মনে করে। সেই ব্যক্তিকে সে এই জীবনে সবথেকে বেশি ঘৃণা করে। আর সারা জীবন করবে। কখনো তাকে ক্ষমা করতে পারবে না।

রিশান:মিস তনয়া আপনার কাজ খুব পরিপাটি। আমি আশা করছি আপনি এই পদের যথাযথ মর্যাদা রাখবেন।

তনয়া :ইনশাল্লাহ আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।

রিশান:বেস্ট অফ লাক
তনয়া:tnq স্যার

***********

তৃপ্তি আর নীতি খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলো।ক্লাসে তাদের আরও দুজন নিউ ফ্রেন্ড হলো নীল আর ইতু।সবাই ক্লাস শেষে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে গেল।হঠাৎই তৃপ্তির মনে পরল সে তার কলমটা ক্লাসে ফেলে এসেছে। সবাইকে এগোতে বলে সে ক্লাসের গিয়ে ফিরে যাচ্ছিল।

হঠাৎ কেউ তাকে মুখ চেপে ধরে একটা ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে গেল।তৃপ্তিকে সেই ব্যক্তি ক্লাসে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিলো।অন্ধকার হওয়ায় তৃপ্তি সামনের লোকটির মুখ দেখতে পারছে না। ছেলেটি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগল।

তৃপ্তি :কে আপনি? আমাকে কেন এখানে এনেছেন? কী চান আমার কাছে? আর সামনে এগোচ্ছেন কেন?
ওখানেই থামুন একদম কাছে আসবেন না বল দিলাম(ভয়ে ভয়ে)

সামনের লোক:তোতাপাখি, চিনতে পারছ না আমায়।

তৃপ্তি : কে কে আপনি আর এসব তোতা (এতটুকু বলেই থেমে গেল তৃপ্তি) তারমানে আপনি ওই বদমাশ ছেলেটা।এখানে কেন এনেছেন আমাকে?

রিশি:কেন এনেছি বুঝতে পারছ না? খুব তো আমাকে চরিত্রহীন বলছিলে। এখন এই চরিত্রহীনের নমুনাটা তো তোমাকে দেখাতেই হচ্ছে।

তৃপ্তি:মানে কী বলতে চাইছেন আপনি?

রিশি:খুব সোজা এখন আমি তোমাকে দেখাবো চরিত্রহীনরা ঠিক কী কী করে।

তৃপ্তি :একদম আমার কাছে আসবেন না বলছি।তাহলে কিন্তু

রিশি:তাহলে কিন্তু কী? ভয় দেখাচ্ছ আমাকে? কী করবে তুমি তাহলে বলো

তৃপ্তি : দেখুন প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন

রিশি:দিতে পারি তবে এক শর্তে

তৃপ্তি :কী শর্ত

রিশি:তোমাকে সবার সামনে বলতে হবে যে, আমি খুব ভালো ছেলে। তুমি আমাকে যা যা বলেছ তা সব মিথ্যে। তুমি আমার এটেনশন পাবার জন্য এসব বলেছ আমার নামে।

এগুলো বলতে পারলে তোমাকে ছেড়ে দেব নয়তো না।এবার তুমি ঠিক করো তুমি কী করবে।

তৃপ্তি :অসম্ভব আমি এগুলো কিছুতেই বলতে পারব না।

রিশি:তাহলে আমি আমার কাজটা শুরু করি।
এই বলে রিশি আবার তৃপ্তির দিকে এগোতে লাগল।

তৃপ্তি :প্লিজ স্টপ আর এগোবেন না।আমি রাজি আপনার শর্তে।

রিশি:ওকে তাহলে চলো।কিন্তু একটু যদি চালাকি করেছ তবে নেক্সট টাইম কিন্তু আর সুযোগ দিবো না।

তৃপ্তি :ওকে

ক্যান্টিনে,
নীতি,নীল আর ইতু বসে বসে তৃপ্তির অপেক্ষা করছিলো।অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও তৃপ্তি যখন এলো না তখন ওরা আবার তৃপ্তিকে খুঁজতে গেল।কলেজের মাঠে গিয়ে সবাই তো অবাক তৃপ্তির কান্ড দেখে।

কলেজের মাঠে দাড়িয়ে সবার সামনে তৃপ্তি রিশির
শেখানো কথা গুলো বলছে।
আর সবাই ওর কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যার যেভাবে খুশি সেভাবে ওকে কথা শোনাচ্ছে।

নিশা তো এসে ওকে মিডেল ক্লাস, ফকিন্নি, লোভী,বাজে মেয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তৃপ্তিকে অনেক অপমান করলো।
তৃপ্তি আর সইতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেল।তার বন্ধুরা সবাই তাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু সে কারো ডাক শুনলো নাহ।

রিশি:মনে মনে, একটু বেশি হয়ে গেল নাকি।রিশির একটু খারাপ লাগল তৃপ্তির কান্না দেখে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here