#প্রণয়ের_পরিণতি
#লেখিকা_সাদিয়া_আফরিন_নিশি
#পর্ব_৭
তনয়ার অবস্থা দেখে তনিমা দৌড়ে এলো।
আপু তুমি ঠিক আছো তো।কি হয়েছে তোমার?
তনয়া:আমি ঠিক আছি কিছু হয়নি আমার।
কাব্য আর রিশান তো অবাক
তোমরা একে অপরকে চিনো(কাব্য)
তনিমা:হুমম ও আমার বড় বোন।
কাব্য:ওহ
রিশান:ওহ আচ্ছা, তনয়া তুমি ঠিক আছো তো?
তনয়া:জ্বী স্যার ঠিক আছি।
মিটিং শুরু করতে পারেন।
তারপর তারা হাসান গ্রুপের এমডির সাথে মিটিংয়ে মন দিল।
খুব ভালো ভাবেই তাদের কাজ শেষ হলো।
পুরোটা সময় তনয়া চেয়েছে নিজেকে স্ট্রং রাখতে। তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল সামনে থাকা লোকটির জন্য। কিন্তু সামনে থাকা লোকটির সেদিকে কোনোই ভাবান্তর নেই। সে তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত।
মিটিং শেষে সবাই যার যার মতো বাড়ি চলে যায়।
______
তনয়া ঘরের দরজা বন্ধ করে খুব কাঁদছে। কেন এতো বছর পর ওই লোকটার সঙ্গে দেখা হতে হলো।পুরোনো ক্ষতগুলো আবার মাথা চারা দিয়ে উঠতে চাইছে।
এমন সময় তনয়ার মা দরজায় টোকা দিয়ে তনয়াকে ডাকল।
তনয়া সাথে সাথে চোখের পানি মুছে নিলো। তার মা কে কিছুতেই এসব জানতে দেওয়া চলবে না তাহলে তার মা ও তার মতো অতীত মনে করে কষ্ট পাবে।তাই সে তার মা কে বললো তার শরীর ভালো লাগছে না পরে আসতে।
তার মা অনেক জোর করার পরও তনয়া দরজা খুলল না।
এতক্ষণ তনিমা সবকিছু দে খছিল তারপর সে তার মাকে তনয়ার ঘরের সামনে থেকে এনে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বললো।
তনয়ার মা তো সব শুনে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। মেয়ের কী এমন হলো সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
তনয়া ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ল।
______
এদিকে রিশি আজকেও সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও তৃপ্তির নাগাল পেল না। তাই সে এবার অন্য প্ল্যান করল।
______
পরদিন সকাল,
তৃপ্তি নীত্যদিনের মতো কলেজে গেল বন্ধুদের সাথে। কলেজে ঢুকে দেখলো সবাই কলেজের মাঠে হইচই করছে।
নীল:এই কী হচ্ছে রে এখানে?
নীতি:তুই ও যেখানে আমরাও সেখানে কী করে জানবো বল।
ইতু:চল তো সবাই গিয়ে দেখি
সবাই সেদিকে গেল।নীল গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করতে জানতে পারল।কেউ একজন পার্টি দিচ্ছে। কিন্তু কে দিচ্ছে কেন দিচ্ছে সেসব জানতে পারল না।
কলেজের সবার ইনভিটেশান আছে সেখানে। নীলদেরও কার্ড দেওয়া হলো।
তৃপ্তি আগেই না করে দিলো সে যাবেনা বলে।কিন্তু নীল, নীতি আর ইতুর জোড়াজুড়িতে তাকে রাজি হতে হলো।
এই পার্টির এরেন্জ করেছে রিশি।তৃপ্তিকে সরি বলার জন্য কিন্তু রিশির থ্রো করা পার্টি জানলে তৃপ্তি আসত না তাই এই কথাটা সে গোপন রেখেছে।
সন্ধ্যায় পার্টি
________
তনয়া অফিসে গিয়ে নিজের কাজ করছে। কালকের কথা সে আর ভাবছে না।
এর মধ্যে রিশান ডেকে পাঠালো তনয়াকে।
রিশান:তনয়া দুদিন পর আমাদের চিটাগাং যেতে হবে কালকের ডিলটার জন্য। সেখানে আহমেদ গ্রুপ,চৌধুরী গ্রুপ আর হাসান গ্রুপের সাথে চায়না থেকে মি:কংসটাইন আসবে। আমরা একসাথে মিট করে ডিলটা প্রপার করবো।
তনয়া:আবার ওই লোকটার সামনে পরতে হবে।
রিশান :তনয়া কিছু ভাবছ
তনয়া:না না স্যার কিছু না
রিশান :তোমার বোন ও যাচ্ছে আমাদের সাথে। তো তোমরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিও।
তনয়া:জ্বী স্যার
________
কাব্যও তনিমাকে ডেকে চিটাগাং যাওয়ার জন্য বললো।
তনিমা :জ্বী স্যার আমি রেডি থাকবো।
_______
সন্ধ্যায় পার্টিতে,
তৃপ্তি একটা কালো গাউন পরে এসেছে সাথে মেচিং গলার সেট,কানের দুল,চুলগুলো স্টাইলিসভাবে খোপা করা, হাতে ব্রেসলেট, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক
সব মিলিয়ে অপুর্ব সুন্দর লাগছে তৃপ্তিকে।
এমনিতে তার সাজগোজ পছন্দ না হলেও সেজেছে কারণ কেউ যাতে তাকে মিডেল ক্লাস বলে অপমান করতে না পারে তাই।
তৃপ্তি, নীতি,নীল ইতু,সবাই একসাথে পার্টিতে এসেছে।
রিশি আড়াল থেকে তৃপ্তিকে দেখে যাচ্ছে।এই মেয়ের মাঝে কী আছে সে নিজেও জানেনা। ওকে দেখলেই রিশির মনে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
সবাই পার্টিতে ইনজয় করছে। তৃপ্তির এসব একদমই ভালো লাগছে না। তাই সে নীতির সাথে একসাইডে দাড়িয়ে আছে।
হঠাৎই সব আলো নিভে গেল।চারদিক অন্ধকার। একটা আলোর রশ্মি এসে পরল তৃপ্তির উপর। সাথে সাথে তৃপ্তি চোখে হাত দিলো। তারপর আস্তে আস্তে চারদিক দিয়ে সরি সরি ধ্বনি ভেসে আসছিলো।নিচে, দেওয়ালে সব জায়গায় সরি সরি লেখা ভাসতে লাগল।তৃপ্তি তো অবাক এগুলো হচ্ছেটা কী এটা ভেবে।
ওই আলোর পথ ধরে হেঁটে হেঁটে আসছে এক যুবক।
তৃপ্তি মনে মনে ভাবছে এটা কে আসছে তারদিকে।
ছেলেটি ঠিক তৃপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে। সাথে সাথে সব আলো জ্বলে উঠল।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
তৃপ্তি আর সামনের ছেলেটির দিকে।
তৃপ্তির সামনে দাড়ানো ছেলেটিই হলো রিশি।
রিশি তৃপ্তির দিকে ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে বারবার সরি বলে চলেছে।
তৃপ্তি কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না।
নীতি পাশ থেকে তৃপ্তিকে হালকা ধাক্কা মেরে বললো ফুল গুলো নিতে।
তৃপ্তি একটা ঘোরের মধ্যে আছে। সে আস্তে আস্তে ফুল গুলো যেই না নিতে যাবে অমনি নীশা এসে ফুল গুলো রিশির হাত থেকে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিলো।
সবাই আরেক দফা অবাক হলো নীশার কাজে।
রিশি তো প্রচন্ড রেগে গিয়ে নীশাকে চড় মেরে দিলো।
নীশা :রিশিইইইই এই রাস্তার মেয়ের জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুললে।
রিশি:আর একবার ওকে রাস্তার মেয়ে বললে তোর জ্বিব টেনে ছিড়ে ফেলবো।
নীশা:রিশিইইইইইই তোমার এতো বড় সাহস
রিশি:হ্যা আমার সাহস এমনই। এমনিতে তোদের আমি এখানে ইনভাইট করতাম না কিন্তু সেদিন সবার সামনে আমি তৃপ্তিকে ছোটো করেছি আর তুই ও তৃপ্তিকে অপমান করেছিস তাই সবার সামনে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করলাম
রিশি:সেদিন তৃপ্তিকে আমি ব্ল্যাকমেইল করে ওগুলো বলিয়েছি।তাই আমি তৃপ্তির কাছে ক্ষমা চাইবো(সবাইকে উদ্দেশ্য করে)
তৃপ্তির হাত ধরে, প্লিজ তৃপ্তি ক্ষমা করে দেও প্লিজ।আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।আমি আর ওসব নোংরা মেয়েদের সাথে ঘুরবো না।প্লিজ আমাকে শোধরাবার একটা সুযোগ দেও প্লিজ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ তৃপ্তি প্লিজ।
তৃপ্তি ওর ফ্রেন্ডদের দিকে তাকালো। সবাই ওকে ইশারায় বলছে রাজি হয়ে যেতে।
তৃপ্তি আস্তে আস্তে রিশির হাতে হাত রেখে বললো সে রিশিকে ক্ষমা করেছে।
নীশা আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না ওখানে। আর নীশার সাথে সাথে যেসব মেয়েরা রিশির কাছে কাছে থাকত তারাও চলে গেল।
রিশি তো মহা খুশি। তারপর সবাই একসাথে অনেক ইনজয় করে পার্টি সম্পন্ন করলো।
পার্টি শেষ হলে রিশি বলছিলো তৃপ্তিকে সে ড্রপ করে দিবে কিন্তু তৃপ্তি রাজি হয়নি।
সে তার বন্ধুদের সাথে চলে যায়।
আজ রিশি অনেক খুশি। কেন জানি এতোদিন পর তার মনটা অনেক খুশি লাগছে অনেক হালকা লাগছে। সে আজকে সারা রাত ঘুরবে।লং ড্রাইভে যাবে। একা একাই যাবে। আজকে সে প্রকৃতিকে অনুভব করবে নিজের মতো করে। বহুদুরে হারিয়ে যাবে।
চলবে,