প্রতিশোধ পর্ব -০১

বেস্ট ফ্রেন্ডের সুইসাইড নোটে স্পষ্ট অক্ষরে লিখা “আমার মৃত্যুর জন্য মেঘা দায়ী” ওর মৃত্যু সংবাদ শুনে যতটা না শকড হয়েছি,তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি সুইসাইড নোটে আমার নিজের নাম দেখে।আমি মেঘা।আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে অধরা।সেই ছোট বেলা থেকে আমরা এক সাথে বড় হয়েছি।কত ভালো সম্পর্ক আমাদের।দুজন দুজনকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারিনা আমরা।
খেলাধুলা থেকে শুরু করে পড়াশোনা সব কিছুই এক সাথে আমাদের।
ও সব সময় বলতো,মেঘা শোন!
আমরা দুজন বিয়ে কিন্তু এক বাড়ীতে করবো।
যেই বাসায় দুই ভাই আছে সেই বাড়ীতে।
তাহলেই আমরা সারাজীবন এক সাথে থাকতে পারবো।আমাদের আর আলাদা হতে হবেনা কোন দিন।
আমি কিন্তু তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

জবাবে বলেছিলাম,দুই ভাই যদি এক বাসায় না থাকে?ছেলে যদি একাই হয়।এমন ছেলে পক্ষ থেকে যদি আমাদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে?
আর ভাই থাকলেও সেই ভাই যদি পিচ্চি হয়,তখন কি করবি?

অধরা হাসতে হাসতে বলেছিলো তখন ওই এক ছেলেকেই আমরা বিয়ে করবো।সতীন হয়ে থাকবো,তবুও তোকে আমি হারাতে পারবোনা।

আমরা দুজন সব সময় এক রকম ড্রেস বানিয়েছি।
আমাদের বাসার সবাই থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের সবাই জানতো,আমাদের দুটি দেহ একটি প্রাণ।
আমরা এত টা ক্লোজ ফ্রেন্ড।

কখনো আমাদের একজনকে একা দেখলে, সবাই জিজ্ঞেস করতো,
কিরে একা কেন?কবুতরের জোরা কই?

আন্টি বাসায় কোন কিছু রান্না করলে ও আমার জন্য টিফিনে করে ঠিক নিয়ে আসতো।
কোন কিচ্ছু আমাকে ছাড়া খেতোনা।
এমনকি ঈদেও আমরা এক রকম ড্রেস কিনতাম।

আমরা দুজন দুজনের সব কথা জানতাম।
কে কাকে প্রপোজ করলো,আজ কি হলো কাল কি হলো,সব দুজন দুজনকে জানাতাম।

কলেজ শেষ হলে যখন বাসায় চলে যেতাম তখন আবার ফেসবুকে মেসেঞ্জারে কিংবা কলে কথা বলতাম।

এইতো গত কালই তো আমরা শপিং করেছি দুজন।
এক রকম দুই টা করে ড্রেস কিনেছি।
তারপর দর্জির দোকানে বানাতেও দিয়ে এসেছি।
কিছু দিন পর আমাদের আরেক বান্ধবীর বিয়ে বলে কিনেছি ড্রেস গুলো।

দুজন কত কত কিছু প্ল্যান করলাম।
গায়ে হলুদে কিভাবে সাজবো,কি রঙের শাড়ী পরবো।
কিভাবে চুল বাধবো কত কি।

আজ কলেজেও আমাদের দেখা হলো,দুজন মিলে চটপটি খেলাম।
ক্লাস করলাম।
এক সাথে বাড়ী ফিরলাম।

আমরা যখন যে যার বাড়ীতে চলে যাচ্ছিলাম,ঠিক তখন ও আমায় পিছু ডেকে বল্লো,

মেঘা!
আমি ফিরে তাকাতেই আমাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বল্লো।
আমি তোকে খুব ভালবাসি রে।

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
আমি কি বাসি না নাকি?

অধরা কোন কথা বল্লোনা,
হঠাৎ টের পেলাম আমার ঘাড়ে ওর চোখের পানি পড়ছে।

আমি অবাক হলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,অধরা!কি হয়েছে তোর?
কাঁদছিস তুই?বল আমাকে কি হয়েছে?

অধরা কোন কথা বল্লোনা।
আমাকে ছেড়ে দিয়ে বল্লো,দেরি হয়ে যাচ্ছে,বাসায় যা।

অধরা চলে যাচ্ছে,
আমি অধরাকে ডেকে বললাম,
অধরা!
আমিও তোকে ভীষণ ভালবাসি।

অধরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওদের বাসার গেইটে ঢুকলো।

আমাদের দুজনের বাসা পাশাপাশিই।
অল্প একটু খানি দূরত্ব।

বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করলাম।

কিন্তু মন আমার অধরার কাছেই পড়ে ছিলো।
বার বার মনে হচ্ছিলো,ও কাঁদছিলো কেন।

কিছু ক্ষণ পর ওকে ফোন দিলাম।
দুই তিন বার রিং বাজার পর ও রিসিভ করলো।

ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
খেয়েছিস?
কি করছিস?

উত্তরে বল্লো,
খেয়েছি।শুলাম একটু।
শরীর টা ভালো লাগছেনা।
দেখি একটু ঘুমাবো।

_তোর কি মন খারাপ?
কি হয়েছে আমাকে কি একটু বলবি?
_কিছু হয়নিতো।কি হবে?
_আবির ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?
_একটু ঘুমাই হুম?রাতে ফোন দিবোনে।

এই বলে ও লাইন টা কেটে দেয়।

আমিও ফোন টা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।
হঠাৎ আম্মুর চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে,
আম্মু চিৎকার করে আমাকে ডেকে বলছে,
মেঘা, এই মেঘা তাড়াতাড়ি এদিকে আয়।

আমি জোরে আম্মুকে ডেকে বললাম,কি হয়েছে?
এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?ঘুমাচ্ছিতো আমি।

আম্মু তখন দৌড়ে এসে আমাকে বলে,
অধরা সুইসাইড করেছে।

আমি আমার দু চোখ বন্ধ করে আবার দুচোখ খুলে তাকালাম আম্মুর দিকে।

নাহ আমিতো স্বপ্ন দেখছিনা।
জেগেই আছি।

এই মেঘা কি হলো শুনছিস?
আম্মু আমার গায়ে হাত রেখে ডেকে বলছে।

_আম্মু তুমি না পাগল হয়ে গেছো বুঝছো?
এই তো দুই আড়াই ঘন্টা আগে আমার ওর সাথে কথা হয়েছে।
ও ঘুমাচ্ছে গিয়ে দেখো।
আর তুমি এখন এসব কি আবোল তাবোল বকছো?

_মেঘা!আমি ঠিকই বলছি।
অধরা সুইসাইড করেছে।
তুই একটু স্বাভাবিক হ মা।কিন্তু মেয়েটা এমন কেন করলো, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।

আমি আম্মুর কান্নাজড়িত কথা গুলো শুনছি।

আম্মু আমাকে এবার জড়িয়ে ধরেছে।
কান্না করছে আম্মু।
কিন্তু আমার তো কান্না আসছেনা।
আমি কেন কান্না করবো?
আমি তো বিশ্বাসই করিনা আমার অধরার যে কিছু হয়েছে।

আমি বিছানা থেকে উঠে এক দৌড়ে অধরাদের বাসায় চলে গেলাম।

কিন্তু একি ওদের বাড়ী ভর্তি এত মানুষ কেন?
কি হয়েছে এ বাড়ীতে?

আমি ধীরেধীরে ওদের বাসার ভেতরে ঢুকছি।

এ কি,ওটা কে?
এ তো দেখছি অধরা।
অধরা এভাবে শুয়ে আছে কেন?
আন্টিরা এভাবে কান্না করছে কেন?

আমি চিৎকার করে বলছি,
অধরা এই অধরা!কি হয়েছে তোর?
এভাবে শুয়ে আছিস কেন তুই?
দেখিস না আন্টিরা কান্না করছে?
উঠ প্লিজ।

আমার কথা শুনে আশেপাশের সবাই আরো জোরে কান্না শুরু করলো।

আন্টি এবার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,অধরা আর উঠবেনা রে মা।
অধরা চিরদিনের মত ঘুমিয়ে গেছে।

আন্টির কথা টা শুনে আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার বুকের ভেতর থেকে আমার প্রাণ পাখিটা বের করে নিয়ে যাচ্ছে।

আমার দম বন্ধ লাগছে।
আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা।
আমি চিৎকারও করতে পারছিনা।
এত ক্ষণে আমার আম্মুও এসে গেছে,
আমাকে আম্মু এসে ধরে রেখেছে।

আমার মনে হচ্ছে আমি এখনই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।

আমার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে,
আমি ঝাপসা চোখে অধরাকে দেখছি,

_অধরা এই অধরা,উঠ না প্লিজ।
দেখ না আমি এসেছি।
উঠবিনা তুই আর কত ঘুমাবি?
উঠ প্লিজ উঠ।

আমি অধরার কাছে বসে চিৎকার করে কান্না করছি।
কিন্তু অধরা উঠছেনা।
চোখ ও খুলছেনা।

হঠাৎ কে যেন আমার পাশে এসে বসলো,আমার হাতের উপর হাত রাখলো।
আমি ঘুরে তাকাতেই দেখি তার হাতে একটা কাগজ,যেটাকে সুইসাইড নোট বলে।
যেখানে লিখা ছিলো “আমার মৃত্যুর জন্য মেঘা দায়ী”

লিখাটা পড়ে আমি কিছু বলতে যাবো ,আর তখনই সে আমার মুখ টা তার হাত দিয়ে আটকে ধরে বলে…..

চলবে?

#প্রতিশোধ
#রাইটার_মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#প্রথম_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here