#প্রথম_প্রেম
২য় পর্ব।
আজ উদয়ের বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সকাল-বিকাল দুই বেলা পরীক্ষা, কেন্দ্র বেশ দূরে। সকালে উর্মিকে স্কুলে দিয়ে গিয়েছেন রুনা খানম। আনবেন উর্মির বাবা।
স্কুল ছুটির পর তোফায়েল সাহেব মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আবার অফিসে চলে গিয়েছেন। আজ উর্মির খুব আনন্দ হচ্ছে। উর্মি দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে।
ঘরে ঢুকতেই যেন বুকের ভেতরে ড্রাম বাজা শুরু হয়েছে। উর্মি টেবিলে বসেই কাগজ নিয়ে ছোট্ট চিরকুট লিখতে বসে গিয়েছে,
শাওন ভাই,
আমি বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ছাদে থাকবো। আপনি আসবেন, অবশ্যই আসবেন, আর যদি না আসেন আমি হাত কাটবো। এবং আপনার জন্য কেটেছি এটা লিখে যাবো।
আর হ্যা আমি জানি সজিব আংকেল এখন অফিসে, আর আপনি বাসায় একা। দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। আপনি আসবেন আর না আসলে…
একবার তো বলেছি….
ইতি।
আপনার উর্মি।
উর্মি কাদে ব্যাগ ঝুলিয়ে এতোক্ষণ ধরে লিখেছে, খেয়াল পর্যন্ত করেনি। উর্মি তাড়াতাড়ি করে চিরকুট ভাঁজ করে, দরজা খুলে, শাওনের বাসার কলিং বেল বাজিয়ে, দরজার নিচ দিয়ে চিরকুট দিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে এলো।
ঘরে এসে দরজা হালকা ফাঁক করে দেখলো শাওন দরজা খুলে কাউকে না পেয়ে লাগিয়ে দিয়েছে।
ঘড়িতে সাড়ে তিন টা বাজে, উর্মির খেতে ইচ্ছে করছেনা, মনে হচ্ছে খাবার গলা দিয়ে নামবেনা। তার কত কিছু মাথায় আসছে! কি করবে সে সামনাসামনি এসে! কথা বলতে পারবে? শাওন কি রাজী হবে? নাকি আজ ও ভাব ধরবে।
ঠিক চারটার সময় ঘরে তালা দিয়ে ছাদে গেল উর্মি। এই সময় প্রচন্ড রোদ ছাদে। তাছাড়া এই ছাদে তেমন কেউ আসেনা। সবাই বিকেলে ব্যস্ত থাকে। উর্মির একবার মনে হচ্ছে শাওন আসবে, আবার মনে হচ্ছে আসবেনা!
ঠিক পাঁচ মিনিট পর উর্মি দেখলো শাওন এসেছে, তার তখন ভিতরে কি যে আনন্দ হচ্ছিল! আনন্দ আর টেনশন এক হয়ে তার হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গিয়েছিল।
শাওন এসে বললো কি হয়েছে উর্মি? তুমি কি পাগল?
– হ্যা। আপনি আমাকে পাগল করেছেন।
– শোনো, আমি তোমার আম্মুকে ভাবী ডাকি উদয় আর আমার ভাতিজা নীরব এক সাথে খেলে, আমাকে আংকেল ডাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা, তুমি অনেক ছোট। প্লিজ এরকম করবেনা।
– শুনেন, উদয় ক্লাস ফাইভে পড়ে আর নীরব মাত্র থ্রীতে ওরা কি করে এক বয়েসী হয়?
– উর্মি, দেখো এইখানে আমাকে আর তোমাকে কেউ দেখলে ঝামেলা হবে। প্লিজ পাগলামি কর না। তুমি অনেক সুন্দরী, তোমার জন্য শত শত রাজপুত্র রা লাইন দিবে।
– আপনি এস.এম.এস দিলে উত্তর দেন না কেন?
– আমি জানি সেটা তুমি, এজন্য দেইনা।
– অন্য কেউ হলে দিতেন?
– না। শোনো, পড়াশোনা কর ঠিকমতো। সামনে তোমার কত সুন্দর ভবিষ্যত।
– আমি কি অনেক বিশ্রি? আমাকে পছন্দ হয়না?.
– তুমি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে। কিন্তু এটা আমাদের মধ্যে হয়না।
– আপনি যদি রাজী না হোন, আজ থেকে আমি ভাত খাবো না শেষ। এটা আমি জানি আপনিও আমাকে পছন্দ করেন। কিন্তু ভাব ধরেন।
– এরকম করবেনা।
– করবো, এবং এখন থেকে। বাই।
উর্মি হন হন করে হেঁটে বাসায় চলে যাচ্ছে। শাওন এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি করবে? এই অবুঝ মেয়েটা কেন বুঝেনা? এতো সুন্দরী এবং ভালো মেয়েটার ভালবাসা প্রত্যাখান করার দুঃসাহস কারো নেই। কিন্তু এই আগুন নিয়ে খেলার ফলাফল নিয়ে খুবই চিন্তা করে শাওন। তার মতো হত দরিদ্র পরিবারে প্রেম-ভালবাসা হয়না! হবেনা! শাওন চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। এই মেয়ে কি করবে? ভাইজান জানলে বাসা থেকে বের করে দিবে। কি করবে সে?
উর্মি সত্যি সত্যি দুপুর এবং রাতে ভাত খায়নি, ভাত খাবে বলে রুমে নিয়ে গিয়ে সব ফেলে দিয়েছে। প্রচন্ড জিদ করে আছে উর্মি। কেন তাকে ভালবাসবেনা? সে কি খুব বিশ্রি?
পরের দিন শুক্রবার ও সারাদিন ভাত খায়নি উর্মি। রুনা খানম বললেন কিরে রুমে বসে খাওয়া কি? এগুলি আমি পছন্দ করিনা, সবার সাথে বসে খাবি। মনে যেন থাকে।
শনিবার দুপুর বেলা রুনা খানম বাসায় বসে উদয় কে পড়াচ্ছেন কাল বিজ্ঞান পরীক্ষা। তখন ল্যান্ডলাইনে কল এসেছে, উর্মি মাথা ঘুরিয়ে স্কুলে পরে গিয়েছে। তিনি পাগলের মতো ছুটে বেরিয়ে গেলেন আর উদয়কে বুয়ার কাছে রেখেই চলে গেলেন। তিনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে সময় শাওন সালাম দিয়ে বললো ভাবী কেমন আছেন?
– আমার উর্মি মাথা ঘুরে পরে গিয়েছে। স্কুলে যাচ্ছি ভাই, দোয়া রেখো।
– ভাবী আমি আসি?
– সময় থাকলে, তাড়াতাড়ি আসো, একটা সি.এন.জি ডাকো প্লিজ।
তোফায়েল সাহেব ও স্কুলে পৌছে মেয়েকে নিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার বললেন রোগীর প্রেশার এতো কম কেন? শরীর দূর্বল হয়ে গিয়েছে। এখনই স্যালাইন দিতে হবে।
উর্মি এক দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই হাসপাতালে চিরদিন থেকে যেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে শাওন পাশে থাকলে হাসপাতাল ও তার অতি প্রিয় জায়গা হয়ে যাবে।
তোফায়েল সাহেব দৌড়ে স্যালাইন আনতে গেলেন, রুনা খানম কেবিনের বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন, মহিলা চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছেন।
শাওন কেবিনে বসে আছে,মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে বার বার, এমন পাগল মানুষ হয়?
উর্মি হঠাৎ বললো শুনুন আপনি ইয়েস না বললে আমি কিন্তু বাসায় গিয়েও ভাত খাবো না। গত তিন দিন খাইনি। মনে রাখবেন। কালকেই কল দিব, আপনার উত্তর শুনে খাওয়া শুরু করবো।
শাওন বললো তুমি খাও, সুস্থ হও, আমি আছি। প্লিজ পাগলামি করবেনা৷
রুনা খানম তখন রুমে এসে বলছেন শাওন তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম ভাই।
– জি না ভাবী, ঠিক আছে। ওর যত্ন নিয়েন ভাবী।
– হ্যা, নিব ভাই। তুমি ও বলে যাও।
– আমি আসি ভাবি।
– আচ্ছা আচ্ছা।
উর্মি তখন বললো আপনি কিছু বললেন না?
– তুমি সুস্থ হও তাড়াতাড়ি।
রুনা খানম বললেন কি বলবে শাওন?
– তুমি না বললে আমাকে বুঝাতে!
শাওন আবারও বললো তুমি সুস্থ হও, সব ঠিক হবে।
রাস্তা দিয়ে শাওন হাঁটছে, কেমন যেন লাগছে মেয়েটার জন্য! তবে কি সেও এই পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পরেছে? তবে তার মলিন মুখ দেখে ভিতরে খুব কষ্ট দিয়েছিল। এতো সুন্দর একটা পিচ্চি মেয়ে কেন তাকে ভালবাসবে? কি করবে শাওন কিছুই বুঝতে পারছেনা। তবে মেয়েটার জন্য তার মনে জায়গা আছে, এটা আজই সে টের পেল। আগামী কাল সকালে কি উত্তর দিবে এই পাগল মেয়ের! তাই ভাবছে শাওন…
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী।
০২.০৮.২০২১